Pages

Powered by Blogger.
1ST SEMESTER SUGGESTION 2 ND YEAR SUGGESTION 2ND SEMESTER 3RD SEMESTER BENGALI NOTES CU suggestion. EDUCATION NOTES ENGLISH COMPULSORY GBU Suggestion. HISTORY EUROPE & WORLD HISTORY NOTES POL SC NOTES SOCIOLOGY NOTES WBCS 2020

NANDAN DUTTA

A new approach for exam notes .

জাতি কী ? তুমি কি মনে করো যে , সাম্প্রতিক সময়ে ভারতীয় গ্রামীণ সমাজে জাতিপ্রথা পরিবর্তিত হচ্ছে ? উপযুক্ত উদাহরণসহ আলোচনা কর।  


জাতি : ধারণা ও সংজ্ঞা :- 


জাতি বা Caste কথাটির উৎপত্তি স্প্যানীয় শব্দ Casta থেকে। এর অর্থ হল জাতি , কূল - প্রভৃতি। ভারতের জাতিব্যবস্থার বিষয়টিকে বোঝাবার জন্য পর্তুগিজগন প্রথম এই শব্দটি ব্যবহার করেন। 

কুলি : যখন কোনো শ্রেণী সুদৃঢ়ভাবে বংশানুক্রমিক তখন তাকে বলা যেতে পারে জাতি। 

ম্যাকাইভার ও পেজ : যখন ব্যক্তিবর্গ কোনো পূর্বনির্ধারিত মর্যাদা গোষ্ঠীতে জন্মগ্রহণ করে এবং সেটি পরিবর্তনের কোনো আশা থাকেনা , তখন সেই শ্রেণীকে বলা হয় জাতি। 

মজুমদার ও মদন : জাতি হল এক বদ্ধ গোষ্ঠী। 

আরনল্ড গ্রীন : জাতি হল সামাজিক স্তরবিন্যাসের এক ব্যবস্থা , যাতে মর্যাদা সিঁড়িতে ওপর - নীচ ওঠানামা বিষয়টি প্রায় দেখা যায়না। 

শ্রীনিবাস : জাতিপ্রথা হল এক সর্বভারতীয় প্রথা , যার মধ্যে সকলের স্থান জন্মসূত্রে নির্ণীত হয়। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

ভারতীয় গ্রামীণ সমাজে জাতি ব্যবস্থায় সাম্প্রতিক পরিবর্তন :- 


জাতিভেদ প্রথার বৈশিষ্ট্যগুলি পর্যালোচনা করলে একে একটি অনড় , অচল ও বদ্ধ প্রথা হিসাবে মনে করা হয়। তবে বিভিন্ন সমীক্ষা ও গবেষণাকার্যে দেখা গেছে , এই প্রথা কোনোকালেই একটি সম্পূর্ণ নিশ্চল ব্যবস্থা ছিলনা ; বরং এর পরিবর্তনের বীজটি প্রথম থেকেই সুপ্ত অবস্থায় ছিল , যত দিন গড়িয়েছে তার বিকাশ ঘটেছে। অর্থাৎ পরিবর্তন ক্রমশ তার ব্যাপ্তিলাভ করেছে। যে বিষয়গুলির দ্বারা ভারতীয় গ্রামীণ সমাজে জাতিভেদপ্রথার পরিবর্তন সূচিত হয় , সেগুলি হল - 

১. ধর্মীয় ব্যাখ্যায় :- 
জাতিভেদ প্রথার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল এর সাথে সংযুক্ত ধর্মীয় ধারণাটি। বর্তমানে এ জাতীয় ধারণাটি আর নেই। আসলে বর্তমানের বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ এই কথার কোনো যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা খুঁজে পাননি।  ব্রহ্মার মুখ থেকে ব্রাহ্মণের কিংবা পা থেকে শুদ্রের উৎপত্তি - এজাতীয় ধর্মীয় বিশ্বাস আজ আর সেই রূপে গ্রামীণ সমাজেও স্বীকৃত নয়। 

২. খাদ্যাভ্যাসের ক্ষেত্রে :- 
খাদ্যাভাসের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি এখন আর নেই বললেই চলে। পাক্কা ও কাচ্চা খাদ্যের মধ্যে যে পার্থক্য ছিল তাও উধাও। গ্রামীণ সমাজে নিতান্ত গোঁড়া ব্রাহ্মণ ছাড়া অন্যান্য সকলেই পেঁয়াজ , রসুন , মাছ , মাংস , ডিম - ইত্যাদি আমিষ খাদ্য গ্রহণ করে থাকেন। স্বপাক খাওয়ার বিষয়টিরও  খুব কষ্টসাধ্য প্রমাণ মেলে। খাদ্যাভাস বর্তমানে ব্যক্তিগত রুচি ও অর্থনৈতিক সামর্থের উপর নির্ভরশীল। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৩. পেশাগ্রহণের ক্ষেত্রে :- 
বর্তমানে কোনো ব্যক্তির পেশা গ্রহণের বিষয়টি জাতি কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত নয়। বাস্তবে গ্রামীণ সমাজগুলিতে পূজার্চ্চনার বিষয়টিতে এখনো ব্রাহ্মণদের একাধিপত্য থাকলেও বহু ব্রাহ্মণ অন্যান্য পেশাতেও যুক্ত।তাছাড়া ক্ষত্রিয়ের রাজ্য শাসন বা বৈশ্যদের ব্যবসা - বাণিজ্য - এগুলির আর তেমন গুরুত্ব ভারতীয় গ্রামীণ সমাজগুলিতেও নেই। 

৪. বিবাহের ক্ষেত্রে :- 
জাতি এখন আর সেই অর্থে অন্তর্বিবাহ গোষ্ঠী নয়। বর্তমানে কোনো কোনো সনাতন হিন্দু পরিবার গুলোতে এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হলেও গ্রামীণ সমাজে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পাত্র-পাত্রীর নির্বাচনের সময় এটিকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। অনুলোম ও প্রতিলোম বিবাহ অনেক আগে থেকেই প্রচলিত ছিল , কিন্তু বর্তমানে ভারতীয় গ্রামীণ সমাজের রোমান্টিক বিবাহ ব্যবস্থায় স্ববর্ণে বিবাহ বিষয়টি বেশ উপেক্ষিত। তাছাড়া স্বগোত্র ও স্বপিন্ড বিবাহের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি আজ প্রায় মানা হয়না বললেই চলে। 

৫. অসাম্যের ক্ষেত্রে :- 
জাতিভেদ প্রথায় উচ্চতম স্থানে অবস্থিত ব্রাহ্মণগণ যেভাবে বিভিন্ন সামাজিক সুযোগ - সুবিধা লাভ করত কিংবা নিম্নবর্গের মানুষজন যেভাবে উপেক্ষিত হত , আজ তার ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। গ্রামীণ সমাজে ব্রাহ্মণদের দেখে কেউ কেউ প্রণাম জানালেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেই আচরণটি পালন করা হয় না। আবার শুদ্র বলে কাউকে জোর করে দূরে সরিয়ে দেওয়াটাও আর খুব বেশি দেখা যায় না।  অযৌক্তিক ও সাম্যনীতির পরিপন্থী এই জাতীয় আচরণ আজ আইনের চোখে দন্ডনীয় অপরাধ। 

৬. জাতি পঞ্চায়েতের ক্ষেত্রে :- 
গ্রামীণ এলাকায় জাতি পঞ্চায়েত জাতির বৈশিষ্ট্যগুলি ও জাতিগত নিয়মবিধি যথার্থরূপে পালিত হয় কি'না সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখত। কিন্তু বর্তমানে জাতি - পঞ্চায়েত নামক প্রতিষ্ঠানটি একেবারেই অচল হয়ে পড়েছে। গ্রামাঞ্চলের কোনো কোনো সমাজের উপর এর প্রাধান্য ও  প্রভাব থাকলেও বেশিরভাগ গ্রামীণ অঞ্চলে এর কোনো ভূমিকা নেই। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৭. অস্পৃশ্যতার ক্ষেত্রে :- 
জাতিভেদ প্রথার সঙ্গে সংযুক্ত অস্পৃশ্যতার বিষয়টি ক্ষেত্রেও বহু পরিবর্তন ঘটেছে। শুদ্ধাশুদ্ধি , ছোঁয়াছুয়িকে কেন্দ্র করে যে সামাজিক সম্পর্কের অবনতি হতে দেখা যেত , তা আজ অনেকখানি বিলুপ্ত। সংবিধানের ভূমিকার পাশাপাশি আধুনিক ,  শিক্ষিত , যুক্তিনির্ভর , গণতান্ত্রিক মানবতাবাদে বিশ্বাসী মানুষএই নক্কারজনক বিষয়টির অবলুপ্তি ঘটনার ক্ষেত্রে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। 

৮. পবিত্রতা রক্ষার ক্ষেত্রে :- 
জাতিভেদ প্রথার সাথে যুক্ত ধর্মীয় আচরণ বা পবিত্রতা রক্ষার বিষয়ে ক্রিয়া-কলাপ ও পদ্ধতিরও ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। গ্রামাঞ্চলগুলিতেও কোনো জাতি আজ শাস্ত্র নির্ধারিত বিধান পদ্ধতি হুবহু পালন করেনা। 

৯. পদবির ক্ষেত্রে :- 
পদবি দেখে জাতি চেনা এখন খুবই শক্ত। কারণ কোনো ব্যক্তি ইচ্ছা করলে কোর্টে গিয়ে নাম - পদবি  পরিবর্তন করে নিতে পারে। সে ক্ষেত্রে কোনো শুদ্র যদি ব্রাহ্মণের পদবী ধারণ করে তখন তাকে শুদ্র  বলে চেনা যায়না। ভারতের গ্রামাঞ্চলগুলিতেও বর্তমান সময়ে পদবিভিত্তিক মর্যাদা প্রদানের বিষয়টিও আজ উপেক্ষিত। 

সর্বোপরি , আধুনিক সমাজ - ব্যবস্থায় কোনো ব্যক্তির স্থান নির্ধারিত হয় তার অর্জিত মর্যাদার উপর ভিত্তি করে , জাতির মত আরোপিত মর্যাদার উপর ভিত্তি করে নয়। এই বিষয়টি ভারতীয় গ্রামসমাজ গুলিতেও  জাতিভেদ প্রথার প্রধান পরিবর্তন সূচিত করে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

Share
Tweet
Pin
Share
No comments

সুফিবাদ কাকে বলে ? সুফিবাদের উদ্ভব ও প্রসার আলোচনা কর। 

অথবা , সুফিবাদ সম্পর্কে লেখ।  




সুফিবাদ :- 

সুলতানি যুগে ইসলামীয় সংস্কার আন্দোলন ' সুফি আন্দোলন ' নামে পরিচিত। সুলতানি যুগে উত্তর ভারতের ধর্মীয় ইতিহাসে এর গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। সুফি মতবাদের উদ্ভবের পেছনে বিভিন্ন মতবাদ প্রচলিত আছে। 
ইউসুফ হোসেন - এর মতে , সুফিবাদ হল ইসলামের রূপান্তর। ইসলাম ধর্মের সূচনা পর্বেই সুফিবাদের অস্তিত্ব পরিলক্ষিত হয়। হজরত মহম্মদের ইসলাম ধর্ম প্রচারকালে একদল জ্ঞানী ও ভাববাদী মানুষ এই ধর্মমত গ্রহণ করেন। কোরানের শিক্ষা ও হজরত মহম্মদের জীবন তাঁদের মূল আদর্শ হলেও , তাঁরা ইসলাম নির্দিষ্ট ধর্মপালন পদ্ধতি ও আচার - অনুষ্ঠানের বিরোধী ছিলেন। বাহ্যিক অনুষ্ঠানের পরিবর্তে তাঁরা ঈশ্বরের করুণা লাভের জন্য অন্তরের পবিত্রতার ওপর জোর দিতেন। তাঁরা বিশ্বাস করতেন যে , পবিত্র অন্তরের মধ্যেই ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্ভব। প্রেম ও ভক্তিই ঈশ্বর লাভের প্রধানতম উপায় এবং সর্বভূতে ঈশ্বরের সাথে মিলন সম্ভব। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

ভারতীয় ঐতিহাসিকদের মতে , এই মতবাদের উপর বৌদ্ধ প্রভাব বিদ্যমান। মধ্য এশিয়ায় বৌদ্ধ ধর্ম বিস্তারলাভ করেছিল এবং এই অঞ্চলের মানুষেরা ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হলে ইসলাম ধর্মের উপর বৌদ্ধ প্রভাব পড়ে। হিন্দু ও বৌদ্ধদের অহিংসা , ত্যাগ , বৈরাগ্য , ঈশ্বরের প্রতি আত্মসমর্পণ , উপবাস , যোগসাধনা - প্রভৃতি আদর্শের প্রভাব সুফিবাদের ওপর পড়ে। তাই বলা যায় , বৌদ্ধ ধর্ম , হিন্দু বেদান্ত দর্শন ও অন্যান্য নানা ধর্মীয় আদর্শের সমন্বয়ে সুফিবাদের উৎপত্তি। 

'' সুফি '' কথাটির ব্যাখ্যা :- 

'' সুফি '' শব্দটিকে নানাভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। 
(i) '' সাফা '' বা পবিত্রতা থেকে সুফি কথাটি এসেছে। সুফিবাদীরা দেহ , মন ও আচরণের পবিত্রতার ওপর জোর দিতেন। তাই তাঁরা সুফি নামে পরিচিত। 
(ii) '' সাফ '' বা সারিবদ্ধভাবে দন্ডায়মান মানুষের মধ্যে শীর্ষ বা প্রধান কথাটি থেকে সুফি কথাটি এসেছে। আল্লাহের কাছে উপনীত হওয়ার জন্য তাঁর ভক্তদের মধ্যে শীর্ষে আছেন সুফিরা। এজন্যই তাঁরা সাফ বা সুফি। 
(iii) '' সুফা '' থেকে সুফি কথাটির উৎপত্তি। এইসকল সাধকেরা তাঁদের পবিত্র ও ধর্মীয় জীবনের জন্য হজরত মহম্মদের অতি বিস্বস্ত ও ঘনিষ্ঠ সহচর '' অসাব - উল - সুফ '' - এর সমকক্ষ ছিলেন। তাই তাঁরা সুফি নামে পরিচিত। 
(iv) '' সুফ '' কথার অর্থ হল পশম। সুফিরা মোটা পশমের বস্ত্র দ্বারা নিজেদের আচ্ছাদিত রাখতেন বলে তাঁদের সুফি বলা হত। 
প্রাতিষ্ঠানিক সংগঠন :- 
আরবদের সিন্ধু বিজয়ের সময় থেকে ভারতে সুফিধর্মের প্রসার শুরু হয়। ইসলাম ধর্মের গোঁড়ামির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবেই সুফিবাদের উতপত্তি হয়। অন্যান্য ভারতীয় ধর্মের মতই সুফিবাদেও গুরু - শিষ্যের সম্পর্ক ছিল গুরুত্বপূর্ণ। গুরুকে বলা হত '' পীর '' বা '' শেখ '' বা '' খাজা '' । পীরের কর্মকেন্দ্রকে বলা হত '' দরগা '' বা '' খানকা '' । সুফি ধর্মের অনুগামীদের বলা হত '' ফকির '' বা '' দরবেশ '' ।  গুরুকে কেন্দ্র করেই সুফি সন্যাসীর জীবন আবর্তিত হয়। গুরুর প্রতি অখন্ড আনুগত্য , সকল জীবের প্রতি অকৃত্তিম প্রেম , ঈশ্বরের প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পণ - এগুলি ছিল সুফিবাদের মূল আদর্শ। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

সুফি সাধনার দশটি স্তর :- 

সুফিবাদীদের মতে , সাধনার দশটি স্তর অতিক্রম করতে পারলে ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভ করা যায়। এই দশটি স্তর হল - 
(i) তওবা অর্থাৎ অনুশোচনা ,
(ii) ওয়ারা বা তৃষ্ণা দমন ,
(iii) ফকর বা আনন্দের সঙ্গে দারিদ্র বরণ ,
(iv) সরব বা সহনশীলতা অর্জন ,
(v) শুকর বা কৃতজ্ঞতা প্রদর্শন ,
(vi) খুফ বা অন্যায় ও পাপকে ভয় করা , 
(vii) রজা বা আল্লাহর করুণা লাভের আকাঙ্খা ,
(viii) তওয়াকুল বা ভালো - মন্দ সবকিছুকে হৃষ্টমনে গ্রহণ ,
(ix) রিজা বা ঈশ্বরের প্রতি আত্মসমর্পণ ,
(x) জুহুদ বা নৈতিক নিয়মবিধি পালন। 

চিস্তি সম্প্রদায় :- 

দ্বাদশ শতকের মধ্যেই এদেশে সুফিরা অন্তত চৌদ্দটি সম্প্রদায়ে বিভক্ত হয়ে পড়ে। খাজা মইনুদ্দিন চিস্তি হলেন ভারতে চিস্তি সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা। দ্বাদশ শতকের শেষ দিকে তিনি আজমিরে বসবাস শুরু করেন এবং সেখানে চিস্তি সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি নিম্নবর্গের হিন্দুদের মধ্যে ধর্মপ্রচার করতেন। তাঁর অন্যতম ব্যক্তিত্ব ও ধর্মভাবে আকৃষ্ট হয়ে হিন্দু - মুসলিম নির্বিশেষে বহু মানুষ তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। 
মইনুদ্দিন চিস্তির অন্যতম শিষ্য শেখ কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকি ইলতুৎমিসের শ্রদ্ধা আকর্ষণ করেছিলেন। এই সম্প্রদায়ের অপর উল্লেখযোগ্য সন্ত ছিলেন নিজামউদ্দিন আউলিয়া। তাঁর শিষ্যদের মধ্যে বিখ্যাত ছিলেন - আমির খসরু , লেখক আমির হাসান এবং ঐতিহাসিক জিয়াউদ্দিন বরণী। স্বয়ং সুলতান আলাউদ্দিন খলজিও তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। ভারতে ধর্ম সমন্বয়ের ইতিহাসে নিজামুদ্দিন আউলিয়ার অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাঁর শিষ্য নাসিরউদ্দিন চিরাগ '' চিরাগ - ই - দিল্লি '' বা দিল্লির আলো বলে পরিচিত ছিলেন। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

সুহরাবর্দি সম্প্রদায় :- 

সুহরাবর্দি সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রবক্তাগণ ছিলেন - শেখ শিহাবউদ্দিন সুহরাবর্দি ও হামিদউদ্দিন নাগোরি। এই মতবাদীদের কার্যকলাপ মূলত উত্তর - পশ্চিম ভারতের পাঞ্জাব , মুলতান ও বাংলার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। চিস্তি সম্প্রদায়ের সাথে সুহরাবর্দি সম্প্রদায়ের আদর্শগত পার্থক্য ছিল। 
প্রথমতঃ চিস্তি সম্প্রদায়ের মানুষ ধর্মকর্ম নিয়ে দিনপালন করতেন এবং অতি সাধারণ জীবনযাত্রা করতেন। কিন্তু সুহরাবর্দি সম্প্রদায় আড়ম্বর ও আভিজাত্যপূর্ণ জীবনযাত্রায় বিশ্বাসী ছিলেন। 
দ্বিতীয়তঃ চিস্তি সম্প্রদায় রাজনীতি ও সরকারি কাজকর্ম থেকে নিজেদের বিরত রাখত। কিন্তু সুহরাবর্দিরা প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতিতে অংশগ্রহণের পক্ষপাতী ছিলেন। 

অন্যান্য সম্প্রদায় :- 
খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ শতকের মধ্যে ভারতে আরো পাঁচটি সুফি সম্প্রদায়ের উদ্ভব হয়। যথা - 
(i) কাদিরি , 
(ii) ফিরদৌসি 
(iii) শাত্তারি 
(iv) নকশবন্দী 
(v) মাদরি - সম্প্রদায়। 
ফিরদৌসি গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সমরখন্দের শেখ বদরুদ্দীন। দিল্লিতে প্রথম এই সিলসিলা গড়ে উঠলেও পরে তা বিহারেও প্রসার লাভ করে। ওপর একটি গোষ্ঠী কাদিরি যা ছিল মরমিয়া গোষ্ঠী। এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন শাহ নিয়ামাতুল্লাহ। তবে সৈয়দ মখদুম গিলানি দৃঢ়ভাবে এই সিলসিলাকে প্রতিষ্ঠিত করেন। সকল সম্প্রদায়ই সাধারণভাবে শরিয়ত - বিধিকে মান্য করত। তবে অপর একটি গোষ্ঠী , যা কালন্দর নামে পরিচিত , তারা শরিয়তকে অগ্রাহ্য করত।

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো  

Share
Tweet
Pin
Share
No comments

নগরায়ণের বৈশিষ্টগুলি আলোচনা কর। 

Discuss the features / characteristics of urbanization ( In Bengali ) . 




নগরায়ণের বৈশিষ্ট :- 


১. Lewis Wirth কর্তৃক প্রদত্ত নগরায়ণের বৈশিষ্ট :- Lewis Wirth নগরায়ণের কয়েকটি বৈশিষ্টের কথা উল্লেখ করেছেন। যেমন - 
(i) নগর অঞ্চলের সামাজিক সম্পর্কগুলি স্বল্পস্থায়ী হয়। প্রয়োজনের ভিত্তিতে তাঁরা অন্যের সাথে অল্প সময়ের জন্য সম্পর্ক গড়ে তোলেন। 
(ii) প্রতিবেশীদের সাথে সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখা , সামাজিক গোষ্ঠীগুলিতে অংশগ্রহণ করা - ইত্যাদি বিষয়গুলি নগরজীবনে উপেক্ষিত থাকে। 
(iii) শহরকেন্দ্রিক মানুষ খুব অল্পসংখ্যক মানুষের সাথে মিথস্ক্রিয়া গড়ে তোলেন। মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক এখানে আনুষ্ঠানিক। 
(iv) নগরবাসীদের মধ্যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পারস্পরিক সম্পর্কের গভীরতা থাকেনা। 
(v) নগরজীবনে ব্যক্তিবর্গ ব্যক্তিস্বার্থকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

২. Ruth Glass কর্তৃক প্রদত্ত নগরায়ণের বৈশিষ্ট :- রুথ গ্লাস নগরায়ণের কতকগুলি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট হিসেবে - সচলতা , অনামিয়তা , ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদ , আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক , সামাজিক পৃথকীকরণ , ক্ষণস্থায়িত্ব , সামাজিক ঐক্যের জৈবিক প্রকৃতি - ইত্যাদিকে গুরুত্ব দিয়েছেন। 

৩. K. Dewis কর্তৃক প্রদত্ত নগরায়ণের বৈশিষ্ট :- K. Dewis নগরায়নের মোট ৮ টি বৈশিষ্টের কথা উল্লেখ করেছেন। সেগুলি হল - (i) সামাজিক বিষমতা , (ii) গৌণ প্রতিষ্ঠানসমূহ ,  (iii) সামাজিক সচলতা ,  (iv) ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদ , (v) সামাজিক সহনশীলতা , (vi) গৌণ নিয়ন্ত্রণবিধি , (vii) স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানসমূহ  - ইত্যাদি। 

৪. S.C. Dube কর্তৃক প্রদত্ত নগরায়ণের বৈশিষ্ট :- S.C. Dube তাঁর '' Indian Society '' শীর্ষক গ্রন্থে নগরায়ণের কয়েকটি বৈশিষ্টের কথা উল্লেখ করেছেন। সেগুলি হল - 
(i) নাগরিক জীবনধারায় সাবেকি সমাজ কাঠামো শিথিল হয়ে পড়ে এবং সামাজিক অনুশাসনসমূহ হীনবল হয়ে পড়ে। 
(ii) মানবিক সম্পর্কসমূহ প্রকৃতিগতভাবে আনুষ্ঠানিক হয়ে পড়ে। 
(iii) সম্পর্কের ক্ষেত্রে ব্যক্তিস্বার্থ প্রাধান্য পেয়ে থাকে। 
(iv) সনাতন আচার অনুষ্ঠান এবং আত্মীয় স্বজন সম্পর্কিত দায়বদ্ধতা হ্রাস পেতে থাকে। 
(v) অর্থনৈতিক স্বার্থ ও ব্যক্তিস্বার্থের কাছে জাতপাত ও সাম্প্রদায়িক বিচার গুরুত্ব হারায়। ফলে ধর্মনিরপেক্ষ পরিবেশের সূচনা হয়। 
(vi) নগরায়ণের ফলে শ্রমবিভাজনের বৈচিত্র বৃদ্ধি পায়। 
(vii) স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাসমূহ বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কর্মে অংশগ্রহণ করে। 
(viii) নগরায়ণের সাথে সাথে শিক্ষা , সংস্কৃতি ,বিনোদন - ইত্যাদির ব্যাপক প্রসার ঘটে এবং সেগুলি প্রাতিষ্ঠানিক কেন্দ্রে পরিণত হয়। 
(ix) আধুনিকীকরণ নগরায়ণের একটি অন্যতম উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৫. যান্ত্রিক জীবনযাত্রা :- নগরজীবনে ব্যক্তি সম্পর্কগুলি আনুষ্ঠানিক হওয়ায় তাদের মধ্যে সম্পর্কের গভীরতা খুব কম থাকে। ফলে মানুষ অন্তঃসারশুন্য সামাজিক সম্পর্ক অতিবাহিত করতে থাকে। সম্পর্কগুলি মোটামুটিভাবে ব্যক্তিস্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে পরিচালিত হয়। অর্থনৈতিক কর্মকান্ড , সামাজিক ক্রিয়াকলাপ - ইত্যাদি সর্বক্ষেত্রেই যান্ত্রিকতা লক্ষ্য করা যায়। 

৬. আচরণগত এবং কার্যপ্রনালীগত বিশেষজ্ঞতা :- বিরাট সংখ্যক জনসংখ্যার অভ্যন্তরীণ অসদৃশ্যতা বিশেষীকরণকে গড়ে তুলতে সাহায্য করে। বিশেষীকরণ বহুমুখী জীবনধারা গড়ে তোলে। বহুমুখী পেশাভিত্তিক জীবনধারা , বহুমুখী স্বার্থ ও জীবনদর্শন - এই অসদৃশ্যতাকে পাথেয় করে গড়ে ওঠে। এই বিশেষজ্ঞতার সহজলভ্যতার ফলে মানুষের সামনে নানাবিধ সুযোগ সৃষ্টি হয়। এইভাবে শহরাঞ্চলে গড়ে ওঠে অসদৃশ্য জনসংখ্যা এবং বৈচিত্রপূর্ণ আচরণ। 

৭. অনামিয়তা ও নৈর্ব্যক্তিকতা :- উচ্চ ঘনবসতিযুক্ত জীবন প্রণালীতে ব্যক্তি পরিচিতিকে এড়িয়ে চলে। এরফলে পারস্পরিক সহাবস্থানের ধারণাটি অনুপস্থিত হয়ে পড়ে। এর ফল হিসেবে সামাজিক দায়বদ্ধতা হ্রাস পায় এবং ব্যক্তিস্বাতন্ত্র বৃদ্ধি পায়। মানুষ আত্মকেন্দ্রিক স্বার্থে পরিচালিত হতে থাকে। এই নৈর্ব্যক্তিকতার ফলে ব্যক্তি উচ্চাকাঙ্খী ও উচ্চাভিলাষী হয়ে ওঠে এবং নগরায়নের সুবিধাগুলিকে পাথেয় করে সেই উচ্চাকাঙ্খা চরিতার্থ করতে সচেষ্ট হয়। 

৮. সাংস্কৃতিক পরিবর্তন :- নগরায়ণ প্রক্রিয়ার প্রসারের সাথে সাথে সনাতন সাংস্কৃতিক বৈশিষ্টগুলির পরিবর্তন ঘটে। মানুষ চিরাচরিত সংস্কৃতিকে ধারণ ও বহন করার পরিবর্তে আধুনিক ভোগবাদের স্রোতে ভেসে যেতে অধিক স্বচ্ছন্দবোধ করে। এমনকি নগরজীবনের সাংস্কৃতিক গতিধারা ব্যক্তিস্বার্থে পরিচালিত হয়। ফলে সনাতন সাংস্কৃতিক জীবনের মৃত্যু ঘটে। 

৯. আধুনিকতা ও ভোগবাদের বিকাশ :- নগরায়ণের সাথে সাথে আধুনিকতা ও ভোগবাদের বিকাশ গতিলাভ করে। ভোগবাদের আধুনিক পণ্যগুলিকে নিজেদের করায়ত্ত করতে মানুষ ব্যাকুল হয়ে ওঠে। মানুষের জীবন যন্ত্রনির্ভর ও প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে ওঠে। প্রযুক্তির ব্যবহার একদিকে মানুষের জীবনকে যেমন সরল করে তোলে , তেমনি অন্যদিকে বহুজাতিক বাণিজ্য সংস্থাগুলি তাদের পণ্যের প্রতি মানুষকে আকৃষ্ট করে ও মানুষকে পণ্যের দাসে পরিণত করে। 

১০. বিশ্বায়নের প্রক্রিয়া ও নগরায়ণ :- বিশ্বায়নের প্রক্রিয়া গ্রামাঞ্চলের তুলনায় নগরাঞ্চলে অধিক প্রসার লাভ করে। ফলে সনাতন সংস্কৃতি , জাতীয়তাবোধ - ইত্যাদির পরিবর্তে আধুনিক পাশ্চাত্যবাদী চিন্তা ভাবনা দ্বারা মানুষ অধিক প্রভাবিত হয়। এর ইতিবাচক ফল হিসেবে বিশ্বমানবতার আদর্শের প্রসার ঘটে। 

পরিশেষে বলা যায় , নগরকেন্দ্রিক বৈশিষ্টগুলির মধ্যে ব্যক্তিগত সম্পর্ক , প্রাথমিক গোষ্ঠী এবং সামাজিক নৈকট্য বিশেষ প্রাধান্য পায়নি। কৃত্রিমভাবে গড়ে ওঠা কতকগুলি ব্যক্তিস্বার্থভিত্তিক সংগঠন ব্যক্তির চলার পথকে সচল করে তুললেও ব্যক্তিকে একটি কৃত্রিম ও প্রতিযোগিতামূলক জীবন উপহার দেয়। কিন্তু তা স্বত্তেও বলা যায় , প্রাথমিক গোষ্ঠীগুলির গুরুত্ব নাগরিক জীবনে এখনো পুরোপুরি হারিয়ে যায়নি। তাই কে এম কাপাডিয়া , রামকৃষ্ণ মুখার্জি - প্রমুখেরা গবেষণা করে দেখিয়েছেন যে , গ্রামীণ মানুষ শহরমুখী হয়ে গ্রাম ত্যাগ করলেও সনাতন রীতিনীতি , ঐতিহ্য , সংস্কৃতি - ইত্যাদি প্রাথমিক গোষ্ঠীগুলিতে আজ বিদ্যমান আছে। 

Book Reference :- 
১. ভারতীয় সমাজ - অনাদিকুমার মহাপাত্র। 
২. ভারতীয় সামাজিক সমস্যা - বাণী প্রকাশন।  

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো                         

Share
Tweet
Pin
Share
No comments

নগরায়ণের সংজ্ঞা দাও। নগরায়ণের কারণগুলি লেখ। 

Define Urbanization . Discuss the causes of Urbanization ( In Bengali ) .  




নগরায়ণের ধারণা ও সংজ্ঞা :- 


নগরায়ণ হল একটি প্রক্রিয়া যার দ্বারা গ্রামাঞ্চলের নগরে রূপান্তরকরণ ঘটে। সাধারণভাবে যে জনসমাজের ৭৫% কর্মক্ষম পুরুষ কৃষি ছাড়া অন্যান্য বৃত্তিতে নিযুক্ত থাকেন - সেই জনসমাজকে নাগরিক জনসমাজ বলা হয়। সমাজবিজ্ঞানী Biersted তাঁর '' Social Order '' শীর্ষক গ্রন্থে নগরায়ণকে একটি Process বা প্রক্রিয়া হিসেবে উল্লেখ করেছেন। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

অধ্যাপক S.C. Dube বলেছেন - নগর বা শহর সমাজ কাঠামোর অপরিহার্য অঙ্গসমূহের উপর প্রভাব বিস্তার করে। নাগরিক সভ্যতার নিজস্ব ও পৃথক প্রকৃতির প্রাতিষ্ঠানিক ও সাংগঠনিক বৈশিষ্ট বর্তমান। 

অধ্যাপক কিংসলে ডেভিস তাঁর '' Human Sociology '' গ্রন্থে বলেছেন , নগরায়ণের ফলাফল বা প্রভাব - প্রতিক্রিয়া নগরের সীমাকে অতিক্রম করে যায় এবং পরোক্ষভাবে অন্যান্য অঞ্চলের নগরায়ণের প্রক্রিয়াকে তরান্নিত করে। 

Horton ও Hunt তাঁদের  '' Sociology '' শীর্ষক গ্রন্থে নগরায়ণের সংজ্ঞা প্রসঙ্গে বলেছেন - '' ..... urbanization brings certain inescapable social consequences - population density , anonymity , impersonality , regimentation , segmentation of personality.'' 

Lewis Wirth নগর সভ্যতা প্রসঙ্গে বলেছেন - বৃহত্তর , ঘন জনবসতিপূর্ণ এবং সমাজগতভাবে বিষম জাতি - বর্ণ মিশ্রিত ব্যক্তিসমষ্টি হল নগরসভ্যতা।   

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

নগরায়ণের কারণ :- 


১. নগরায়নের প্রবণতা :- বিশ্বের প্রতিটি জনসমাজের মধ্যেই নতুন নতুন অঞ্চলকে নগরে পরিণত করার একটা স্বাভাবিক প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। বর্তমানে বিশ্বায়নের যুগে এই প্রবণতা অতি দ্রুতগতিসম্পন্ন হয়ে উঠেছে। মূলতঃ গ্রামীণ জীবনের সুযোগ সুবিধার অভাব , বেকারত্ব - ইত্যাদি কারণে মানুষ স্বভাবগতভাবে নগরায়নের পক্ষপাতী। 

২. অর্থনৈতিক সুবিধা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ :- গ্রামীণ কৃষিভিত্তিক সমাজে কর্মসংস্থানের সুযোগ তুলনামূলকভাবে খুব কম। কিন্তু নগরাঞ্চলে মানুষ নিজের যোগ্যতা , বিদ্যা - ইত্যাদি দ্বারা নিজের পছন্দমত কর্মে অংশগ্রহণ করতে পারেন। সরকারি ও বেসরকারি চাকরির সুযোগ নগরাঞ্চলে অনেক বেশি থাকে। এছাড়াও নতুন উদ্যোগ গ্রহণের ক্ষেত্রেও শহরাঞ্চলের পরিকাঠামো সহায়ক হয়। 

৩. উচ্চশিক্ষার সুযোগ :- গ্রামীণ জনজীবনে বিদ্যালয়ের গন্ডি পার হলেই পরিকাঠামোর অভাবে শিক্ষার্থীরা শহরে চলে আসতে বাধ্য হয়। শহরে মহাবিদ্যালয় , বিশ্ববিদ্যালয় - ইত্যাদি উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলি যথেষ্ট সংখ্যায় থাকার ফলে শহরাঞ্চলে উচ্চশিক্ষার সুযোগ - সুবিধা অনেক বেশি পরিমানে বর্তমান। এছাড়াও ভিন্নধর্মী বিভিন্ন রকম শিক্ষা - যেমন - কারিগরি শিক্ষা , ইঞ্জিনিয়ারিং , মেডিক্যাল - ইত্যাদি শিক্ষার ক্ষেত্রে একমাত্র শহরাঞ্চলেই প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায়। 

৪. গ্রামীণ ক্ষেত্রে পেশাগত সচলতার অভাব :- গ্রামীণ সমাজে শ্রমবিভাজন বদ্ধ প্রকৃতির। তাই  পেশাগত সচলতার পথ বন্ধ থাকার জন্য মানুষ নাগরিক জীবনের অভিমুখী হয়ে ওঠেন। শহরাঞ্চলে শ্রমবিভাজনের বৈচিত্রের কারণে মানুষ সেখানে সহজেই নিজের পেশাগত লক্ষ্য পূরণ করতে পারে। 

৫. সরকারি নীতি :- সরকারের উন্নয়নমূলক ব্যয় - বরাদ্দের অধিকাংশই শহরের উন্নয়নমূলক প্রকল্পে ব্যয় করা হয়। কর্মসংস্থান , যোগাযোগ , নাগরিক জীবনের উন্নয়ন - ইত্যাদি বহু ক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য সরকার সর্বদা সজাগ থাকেন। সরকারি নীতি ব্যাপকভাবে শহরের উন্নয়নকল্পে ব্যবহৃত হলে গ্রাম্য জীবন অবহেলিত হয় এবং মানুষ বাধ্য হয়ে শহরাভিমুখী হয়ে ওঠেন। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৬. সরকারের বিমাতৃসুলভ আচরণ :- অনেক সময় সরকারের বিমাতৃসুলভ আচরণ গ্রামীণ জীবনের অবক্ষয়ের প্রধান কারণ হয়ে ওঠে এবং শহরাঞ্চলের শ্রীবৃদ্ধি ঘটে। যেমন সরকার খাদ্যশস্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করেন। এর ফলে শহরের মানুষ সস্তায় খাদ্য পণ্য লাভ করলেও গ্রামীণ কৃষক সমাজ ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। পক্ষান্তরে সরকার কৃষির জন্য প্রয়োজনীয় বীজ , সার - ইত্যাদির মূল্য নিয়ন্ত্রণে ততটা আগ্রহ দেখান না। এইপ্রকার সরকারি নীতি গ্রামাঞ্চলের স্বার্থ বিঘ্নিত করে কিন্তু অপরদিকে নাগরিক জীবন সমৃদ্ধ হয়। 

৭. প্রশাসনিক কেন্দ্র :- কোনো রাষ্ট্র এবং সেই রাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যের প্রশাসনিক কেন্দ্রগুলি স্বাভাবিক কারণেই নগরে পরিণত হয়। এছাড়াও রাজ্যের অন্তর্গত বিভিন্ন জেলাগুলির জেলাসদর প্রশাসনিক কেন্দ্র হওয়ার কারণে তা শহরে পরিণত হয়। প্রত্যেক প্রশাসনিক কেন্দ্রে বিপুল পরিমান মানুষের যোগাযোগ , অংশগ্রহণ , প্রত্যাশা পূরণ - ইত্যাদি কারণে প্রশাসনিক কেন্দ্রগুলি মানুষের স্বার্থ ও উদ্দেশ্য পূরণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। 

৮. রাজনৈতিক কর্মকেন্দ্র :- রাজনৈতিক কর্মকান্ড বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শহরাঞ্চলকে কেন্দ্র করেই সংঘঠিত হয়। যেমন ভারতের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র ছিল - কলকাতা , ঢাকা , বোম্বাই , অমৃতসর - ইত্যাদি শহরগুলি। আধুনিক সময়কালেও বিভিন্ন রাজনৈতিক আন্দোলন , গণতান্ত্রিক দাবীতে আন্দোলন - ইত্যাদি শহরাঞ্চলকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়। ফলে রাজনৈতিক কর্মকান্ডের প্রধান কেন্দ্রগুলি নগরে পরিণত হয়। 

৯. নাগরিক জীবনের সুখ - স্বাচ্ছন্দ :- শহরাঞ্চলে যেরূপ পার্থিব সুখ - স্বাচ্ছন্দ্যের উপস্থিতি দেখা যায় , গ্রামাঞ্চলে তা দেখা যায়না। বিলাস , মনোরঞ্জন , আধুনিক ভোগ্যপণ্য , পাশ্চাত্য সংস্কৃতির তীব্র আকর্ষণ , বৈচিত্রময় শ্রমবিভাজন - ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে মানুষ নাগরিক জীবনকেই অধিক শ্রেয় বলে মনে করেন এবং এই কারণেই গ্রামাঞ্চলগুলিও ধীরে ধীরে শহরাভিমুখী হয়ে উঠছে। 

১০. গ্রামীণ সমাজের বিভিন্ন সমস্যা :- গ্রাম সমাজের বিভিন্ন সমস্যাগুলোও পক্ষান্তরে শহরের বিকাশে সহায়তা করছে। গ্রামীণ জনজীবনে বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। যেমন - জাত প্রথার কড়াকড়ি , বদ্ধ শ্রমবিভাজন , বিভিন্ন কুসংস্কার , বর্ণভেদের অভিশাপ , উচ্চবর্গের শোষণ , অবহেলিত গ্রামোন্নয়ন ও শিক্ষা - ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়গুলি মানুষের স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক জীবনের পরিপন্থী। এই সমস্যাবহুল পরিবেশকে মানুষ তাই সহজেই শহরাঞ্চলে পরিণত করার বা শহরাভিমুখী হয়ে ওঠার প্রয়াস করতে থাকে। 

পরিশেষে বলা যায় , নগরায়নের কারণগুলি দেশ - কাল ভেদে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। তবে পৃথিবীর সমস্ত দেশে , সমস্ত কালে যে সকল নগরায়ন ঘটেছে তার জন্য উপরোক্ত কারণগুলি সাধারণ কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়। উপরোক্ত কারণগুলি ছাড়াও আরো কিছু কারণ নগরায়নের জন্য দায়ী। যেমন - ঐতিহাসিক , সাংস্কৃতিক , ধর্মীয় , শিক্ষামূলক - প্রধান ও বিখ্যাত কেন্দ্র গুলি সহজেই নগরে পরিণত হয়। এছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশগুলিতে বিশ্বায়ন ও পাশ্চাত্যের প্রভাবও নগরায়নের জন্য দায়ী। 

Book Reference :-
ভারতীয় সমাজ : অনাদিকুমার মহাপাত্র। 
ভারতের সামাজিক সমস্যা - বাণী প্রকাশন। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো
   
Share
Tweet
Pin
Share
No comments

জাত - ব্যবস্থার সংজ্ঞা দাও। জাতি - ব্যবস্থার বৈশিষ্টগুলি আলোচনা কর।  

Definition and features of Caste System ( In Bengali ) . 

জাতি - ব্যবস্থার সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট :- 




জাতি ব্যবস্থার ধারণা ও সংজ্ঞা :- 


ভারতীয় হিন্দু সমাজের অতিপ্রাচীনকাল থেকে চলে আসা একটি প্রথা বা সামাজিক প্রতিষ্ঠান হল জাতি ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থা জন্মসূত্রে নির্ধারিত এবং এর সকল প্রকার মর্যাদা আরোপিত। এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক এম এন শ্রীনিবাস '' কর্মের ধারণা '' ও '' ধর্মের ধারণা '' - বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করেছেন। এই দুই ধারণার বশবর্তী হয়ে ভারতে জাতিভেদ প্রথার উৎপত্তি বলে শ্রীনিবাস মনে করেন। ভারতের জাতিভেদ বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করার জন্য পোর্তুগিজরা সর্বপ্রথম Caste শব্দটি ব্যবহার করেন। Caste শব্দটির উৎপত্তি স্প্যানীয় Casta শব্দ থেকে। এর অর্থ হল জাতি বা কুল। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

মজুমদার ও মদন :- জাত হল একটি বদ্ধ , অন্তর্বৈবাহিক ও বংশানুক্রমিক গোষ্ঠী। 

অধ্যাপক এন কে দত্ত : জাত বিন্যাস হল জন্মসূত্রে নির্ধারিত একটি ক্রমোচ্চ বিভাজন এবং ব্যক্তিকে আজীবন অতিবাহিত করতে হয় একই জাতের মধ্যে। 

C.H. Cooley : When a class is somewhat strictly hereditary we may call it a caste. 

আঁদ্রে বেতে : জাত হল একটি প্রথা। এই প্রথার ভিতর বর্তমান থাকে বিভিন্ন নামে পরিচিত এক একটি জনগোষ্ঠী। প্রতিটি জনগোষ্ঠী অন্তর্বৈবাহিক রীতি , বংশগত সদস্যপদ - ইত্যাদি অনুসরণ করে চলে। 

ম্যাকাইভার ও পেজ : ব্যক্তি কোনো না কোনো পূর্ব নির্ধারিত মর্যাদা গোষ্ঠীতে জন্মগ্রহণ করে এবং এই মর্যাদার পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনা থাকে না। এই মর্জাদাগোষ্ঠীকে বলে জাতি। 

আরনল্ড গ্রীন : জাতি হল একটি সামাজিক স্তরবিন্যাস - যাতে মর্যাদা সিঁড়ির সচলতা থাকেনা। 

এম এন শ্রীনিবাস : জাতিভেদ প্রথা হল সর্বভারতীয় এবং এতে জন্মসূত্রে মর্যাদা নির্ধারিত হয়। 

জাতি প্রথার বৈশিষ্টসমূহ :- 


অধ্যাপক জি এস ঘুরে মোট তিনটি গ্রন্থে জাতি প্রথার বৈশিষ্টগুলি আলোচনা করেছেন। এই তিনটি গ্রন্থ হল - (i) Caste and class in India , (ii) Caste, class and occupation , (iii) Caste and Race in India . জাতিভেদ প্রথার বৈশিষ্টগুলি হল - 

১. বংশানুক্রমিতা :- জাতের সদস্যপদ বংশানুক্রমিকভাবে আরোপিত হয়ে থাকে। তাই জাত ব্যবস্থা হল জন্মভিত্তিক। এই জন্মভিত্তিক আরোপিত মর্যাদা পরিবর্তনের কোনো আশা থাকে না। ব্যক্তির শ্রেণীগত মর্যাদা পরিবর্তিত হলেও তার জাতিগত মর্যাদা কোনোভাবেই পরিবর্তিত হয়না। 

২. অন্তর্বৈবাহিকগোষ্ঠী :- জাত ব্যবস্থার মধ্যে অন্তর্বিবাহ প্রচলিত। এখানে জাতের সঙ্গে সঙ্গে স্বগোত্র , স্বপিন্ড - ইত্যাদি বিষয়েও যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ করা হয়। এই ব্যবস্থার মূলকথা হল একই জাতের মধ্যে বিবাহরীতি। তবে বর্তমানে স্বজাতির মধ্যে বিবাহের বিষয়টি তেমন প্রাধান্য না পেলেও এর অস্তিত্ব সম্পূর্ণভাবে বিলীন হয়ে যায়নি। এখনো ব্রাহ্মণ সন্তানের বিবাহ ব্রাহ্মণ পরিবারেই উপযুক্ত বলে মনে করা হয়। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৩. সামাজিক সচলতার অভাব :- জাতি ব্যবস্থার মধ্যে সামাজিক সচলতার বিষয়টিকে লক্ষ্য করা যায়না। ব্যক্তি যে মর্জাদাগোষ্ঠীতে জন্মগ্রহণ করে তাকে সেই আরোপিত মর্যাদা সারাজীবন ধরে বহন করতে হয়। সুতরাং , ব্যক্তির সঙ্গে তার জাতের সম্পর্ক আমৃত্যু অতিবাহিত হয়। ব্যক্তি নিজের যোগ্যতা ,শিক্ষা ইত্যাদি দ্বারা নিজের সামাজিক অবস্থানগত মর্যাদার পরিবর্তন ঘটাতে পারলেও নিজের জাতিগত মর্যাদার পরিবর্তন ঘটাতে পারেনা। 

৪. ক্রমোচ্চ বিভাজন :- জাতিভেদ ব্যবস্থায় ক্রমোচ্চ বিভাজন বিষয়টি লক্ষ্য করা যায়। এই মর্যাদা সিঁড়িতে সবার উপরে থাকেন ব্রাহ্মণরা এবং সবার নীচে থাকেন শূদ্ররা। তবে শূদ্র ছাড়াও যেসকল জাতি বহির্ভুত মর্যাদা গোষ্ঠী আছেন তারা মর্যাদা সিঁড়ির সবার নীচে অবস্থান করেন। এরা অস্পৃশ্য বা হরিজন নামে পরিচিত। 

৫. জাতিগত বিভিন্ন বিধি ও প্রথা :- প্রত্যেক জাতিরই নিজস্ব কিছু প্রথা ও রীতি থাকে। জাতিগোষ্ঠীভুক্ত মানুষেরা নিজেদের এই বিধি - ব্যবস্থা সংরক্ষণে বিশেষ সচেতন থাকেন। এই বিধি - নিয়মের প্রকাশ সর্বাধিক ঘটে থাকে বিবাহ , পারিবারিক অনুষ্ঠান - ইত্যাদির ক্ষেত্রে। তবে বর্তমানে জাতিগত নিয়মগুলি শিথিল হয়ে আসছে। 

৬. খাদ্যাভ্যাসে বিধিনিষেধ :- ভিন্ন ভিন্ন জাতিতে খাদ্যাভ্যাসের ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু বিধিনিষেধ আরোপিত থাকে। যেমন - উত্তর ভারতের ব্রাহ্মণগণ অন্য জাতের মানুষের কাছে শুধুমাত্র ঘি দ্বারা প্রস্তুত পাক্কা খাদ্য গ্রহণ করতে পারবে। কিন্তু ব্রাহ্মণ দ্বারা প্রস্তুত খাদ্য যেকেউ গ্রহণ করতে পারবে। বর্তমানে এই নিয়ম তার কার্যকারিতা হারালেও তার অস্তিত্ব আজও বর্তমান। 

৭. বৃত্তিগত বিভাগ :- অধিকাংশ জাতই হল বৃত্তিভিত্তিক। এই বৃত্তিভিত্তিক জাতির বৃত্তি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বংশানুক্রমিক। যেমন ব্রাহ্মণদের কাজ পূজা আর্চা , বিদ্যাচর্চা। ক্ষত্রিয়দের কাজ শাসন ও দেশরক্ষা। বৈশ্যদের কাজ উৎপাদন। শূদ্রদের কাজ উপরোক্ত তিন শ্রেণীর সেবা প্রদান করা। তবে বর্তমানে এই বৃত্তিগত বিভাগের প্রভাব সমাজে খুব সামান্য। বৃত্তির সাথে বংশানুক্রমিকতার কঠোরতাও ক্রমহ্রাসমান। 

৮. জাতসূচক পদবি :- নির্দিষ্ট পদবীর ভিত্তিতে নির্দিষ্ট ব্যক্তির জাতের পরিচয় পাওয়া যায়। যেমন চক্রবর্তী , ভট্টাচার্য , ব্যানার্জি , মুখার্জি - ইত্যাদি পদবি ব্রাহ্মণদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। আবার সেনগুপ্ত , দাসগুপ্ত - ইত্যাদি পদবি বদ্যিদের জাতসূচক। আবার বিভিন্ন জাতের মধ্যে বৃত্তিসূচক পদবি পরিলক্ষিত হয়। যেমন - কর্মকার , বণিক , গোপ - ইত্যাদি। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৯. বিশেষ জাতির জাতিগত সুযোগ সুবিধা ও কর্তৃত্ব :- ভারতীয় সমাজে বিশেষ বিশেষ জাতির বিশেষ বিশেষ সুযোগ সুবিধা ও কর্তৃত্বের বিষয়টি লক্ষ্যনীয়। যেমন দীর্ঘকাল ধরে ব্রাহ্মণরা শ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে সমাজের সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করে এসেছেন। আজও শ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে তাদের সামাজিক মর্যাদা ক্ষুন্ন হয়নি। ক্ষত্রিয়রা নিজেদের জাতিগত মর্যাদার ফলে দেশ শাসন ও পরিচালনার অধিকার পেয়ে এসেছেন। 

১০. জাতি - পঞ্চায়েত :- প্রত্যেক জাতি তার নির্দিষ্ট আচরণ করছে কি'না এবং আরোপিত বিধিনিয়মগুলি রক্ষিত হচ্ছে কি'না তা দেখার জন্য জাতি পঞ্চায়েত নামক একপ্রকার সংগঠনের অস্তিত্ব ছিল। আরোপিত বিধিনিষেধগুলি উল্লঙ্ঘন করলে জাতি পঞ্চায়েত কর্তৃক শাস্তির বিধান ছিল। 

১১. আরোপিত মর্যাদা :- একজন ব্যক্তি নিজের জাত ব্যবস্থায় যে মর্যাদা লাভ করে তা আরোপিত প্রকৃতির। এই ব্যবস্থা জন্মসূত্রে নির্ধারিত হয় এবং এই মর্যাদা কোনোভাবেই পরিবর্তন করা সম্ভব নয় বা মর্যাদা সিঁড়িতে ওঠানামা করা সম্ভব নয়। 

১২. সমপাঙক্তেয়তা :- এই রীতি অনুযায়ী উচ্চজাতির ব্যক্তিবর্গ শুধুমাত্র নিজেদের জাতিগোষ্ঠীভুক্ত মানুষদের সাথেই সম্পর্ক স্থাপন করবে ও পংক্তি ভোজন করবে। উচ্চশ্রেনীর ব্রাহ্মণ কখনই নীচু শ্রেনীর মানুষদের সাথে পংক্তিভোজন করবে না। 

১৩. বিশেষ বিশেষ জাতির সামাজিক ও ধর্মীয় অক্ষমতা :- ভারতে কোনো কোনো জাতিগোষ্ঠীভুক্ত মানুষদের মনে করা হত অপবিত্র ও অশুচি। তাই তাদের সামাজিক ও ধর্মীয় ক্ষেত্রে কোনোরূপ ক্ষমতা ও অধিকার স্বীকৃত হত না। যেমন - পেশোয়া রাজত্বকালে মহাড় ও মঙ - রা পুনা গেটে সকাল ৯ টার আগে ও বিকাল তিনটার পর প্রবেশ করতে পারতো না। এছাড়াও হরিজনেরা বহুদিন ধরে মন্দির , বিদ্যালয় - ইত্যাদি স্থানে প্রবেশ করতে পারতো না। 

১৪. সামাজিক নিয়ন্ত্রণ :- অধ্যাপক দুবে সামাজিক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে জাত ব্যবস্থার ভূমিকার কথা বলেছেন। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীভুক্ত মানুষদের নিজস্ব রীতি , বিধি নিষেধ - ইত্যাদির দ্বারা মানুষের জীবন পরিচালিত হত। মানুষের বিভিন্ন সমস্যা ও বিবাদ - ইত্যাদির সমাধান ও সামাজিক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে জাত ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতো। 

পরিশেষে বলা যায় , বর্তমান ভারতে জাত প্রথার প্রভাব ক্রমশঃ শিথিল হয়ে এলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে তার প্রভাব আজও বর্তমান। তবে সামাজিক মর্যাদা নির্ধারণের ক্ষেত্রে জাত প্রথার তুলনায় মানুষের দক্ষতা , যোগ্যতা - ইত্যাদি বিষয়গুলি বর্তমানে অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক। 

Book Reference :- 
১. ভারতীয় সমাজ - অনাদিকুমার মহাপাত্র। 
২. উচ্চমাধ্যমিক সমাজতত্ত্ব - অরুনাংশু প্রধান। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

Share
Tweet
Pin
Share
No comments

ভিয়েনা সম্মেলনের নীতিগুলি আলোচনা কর।  

Discuss the principles of the Vienna Conference. ( In Bengali ) 



ভিয়েনা সম্মেলনে গৃহীত নীতি :- 


নেপোলিয়নের চূড়ান্ত পতনের পর বিজয়ী রাষ্ট্রবর্গ ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দের নভম্বের মাসে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনা নগরীতে এক সম্মেলনে মিলিত হন। ১৮১৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত সম্মেলনটি চলে। এই সম্মেলনে ইউরোপের বিভিন্ন শক্তিবর্গ অংশগ্রহণ করলেও মূলতঃ চার বিজয়ী রাষ্ট্র - অস্ট্রিয়া , রাশিয়া , প্রাশিয়া ও ইংল্যান্ডের ভূমিকাই ছিল প্রধান। এই চার রাষ্ট্রকে একত্রে Big Four বলা হত। তৎকালীন ইউরোপের প্রধান রাজনৈতিক চালিকা শক্তি এই চার রাষ্ট্র কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত ছিল। এই সম্মেলনের উদ্যোক্তাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ভবিষ্যতে ফ্রান্সের আক্রমণাত্মক নীতি থেকে ইউরোপকে রক্ষা করা। এই সম্মেলনে যোগদানকারী নেতৃবর্গের মধ্যে প্রধান ছিলেন - অস্ট্রিয়ার রাজা প্রথম ফ্রান্সিস , প্রাশিয়ার রাজা তৃতীয় ফ্রেডারিক উইলিয়াম ও রাশিয়ার জার প্রথম আলেকজান্ডার। তবে এই সম্মেলনের মূল নিয়ন্ত্রক ও নীতি নির্ধারক ছিলেন অস্ট্রিয়ার প্রধানমন্ত্রী প্রিন্স মেটারনিখ। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

ভিয়েনা সম্মেলনে মূলতঃ তিনটি নীতি গৃহীত হয়। এই তিনটি নীতি ছিল - 
(1) ন্যায্য অধিকার নীতি ,
(2) ক্ষতিপূরণ নীতি ও 
(3) শক্তি সাম্য নীতি। 

(1) ন্যায্য অধিকার নীতি :- 

ন্যায্য অধিকার নীতির মূল উদ্দেশ্য ছিল বিপ্লব পূর্ববর্তী রাজনৈতিক ব্যবস্থায় ফ্রান্স তথা ইউরোপকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া। এই নীতির প্রস্তাব করেছিলেন তাঁলেরা। পূর্বতন রাজতন্ত্রের সমর্থক , প্রতিক্রিয়াশীল ও বিপ্লব বিরোধী মেটারনিখ এই প্রস্তাব গ্রহণ করে বিপ্লব পরবর্তীকালে নেপোলিয়ন কর্তৃক গৃহীত সকল ব্যবস্থাকে অবৈধ বলে ঘোষনা করেন। ঘোষণা করা হয় যে , প্রাক নেপোলিয়ন যুগের সকল বংশানুক্রমিক রাজারা , যারা নেপোলিয়ন কর্তৃক ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন তাদের সিংহাসন ফিরিয়ে দেওয়া হবে। এই নীতি অনুসারে ইউরোপের পুরোনো রাজবংশগুলি রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তাঁদের পুরোনো অধিকার ফিরে পায়। যেমন - 
(i) এই নীতির প্রয়োগের মাধ্যমে ফ্রান্সের রাজনৈতিক ক্ষমতা পূর্বতন বুরবোঁ রাজবংশের হাতে তুলে দেওয়া হয় এবং ষোড়শ লুইয়ের ভ্রাতা অষ্টাদশ লুইকে ফ্রান্সের সিংহাসনে বসানো হয়। 
(ii) অরেঞ্জ রাজবংশকে হল্যান্ডের সিংহাসন ফিরিয়ে দেওয়া হয়। 
(iii) সার্ডিনিয়া - পীয়েডমন্টে স্যাভয় পরিবারের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। 
(iv) পোপকে তাঁর মধ্য ইতালির রাজ্য ফিরিয়ে দেওয়া হয়। 
(v) উত্তর ইতালি ও জার্মানিতে অস্ট্রিয়ার প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়। 
(vi) সিসিলি ও নেপলস -এ অযোগ্য ফার্দিনান্দকে অধিকার দেওয়া হয়। 
(vii) স্যাক্সনির একাংশ প্রাশিয়াকে প্রদান করা হয় - ইত্যাদি। 
তবে ন্যায্য অধিকার নীতি সকলক্ষেত্রে কার্যকর করা হয়নি। যেমন ভেনিস ও জেনোয়ার রাজনৈতিক স্বাতন্ত্র্য বিনষ্ট করা হয়েছিল। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

(2) ক্ষতিপূরণ নীতি :- 

নেপোলিয়নের রাজত্বকালে ইউরোপের বহু রাষ্ট্র ; যেমন - সুইডেন , ইংল্যান্ড , প্রাশিয়া , রাশিয়া ও অস্ট্রিয়া বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ক্ষতিপূরণ নীতির মূল উদ্দেশ্য ছিল এই সকল ক্ষতিগ্রস্থ রাষ্ট্রগুলিকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের লক্ষ্যে ফ্রান্সের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করা হয় ও ইউরোপের বিভিন্ন রাষ্ট্রগুলির কিছু অংশ নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেওয়ার নীতি গ্রহণ করে। এই নীতি অনুসারে - 
(i) ফ্রান্সের কাছ থেকে ৭০ কোটি ফ্রাঁ ক্ষতিপূরণ দাবী করা হয়। 
(ii) নেপোলিয়ন যেসকল মূল্যবান সামগ্রী বিভিন্ন দেশ থেকে ফ্রাসে নিয়ে এসেছিলেন - সেগুলি ফেরৎ দিতে হয়। 
(iii) ফিনল্যান্ড , পোল্যান্ডের কিছু অংশ এবং বেসারবিয়া রাশিয়াকে প্রদান করা হয়। 
(iv) স্যাক্সনির অর্ধেকাংশ , ওয়েস্টফেলিয়ার কিছু অংশ , পোল্যান্ডের কিছু অংশ , ডানজিগ ও থর্ন - প্রাশিয়াকে দেওয়া হয়। 
(v) বেলজিয়ামে হল্যান্ডের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। 
(vi) ভেনেসিয়া , লোম্বার্ডি লাভ করে অস্ট্রিয়া। 
(vii) হেলিগোল্যান্ড , মাল্টা ও আইওনিয়ান দ্বীপপুঞ্জ - ইত্যাদির অছি ক্ষমতা লাভ করে ইংল্যান্ড। 
(viii) এছাড়াও মরিশাস , সিংহল , ত্রিনিদাদ - ইত্যাদির উপরেও ইংল্যান্ডের আধিপত্য প্রতিষ্টিত হয়। 
(ix) ডেনমার্ক থেকে নরওয়েকে বিচ্ছিন্ন করে তা সুইডেনকে প্রদান করা হয়। ইত্যাদি। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

(3) শক্তিসাম্য নীতি :- 

শক্তিসাম্য নীতির দ্বারা ইউরোপীয় শক্তিগুলি যাতে পুনরায় বল প্রদর্শনে লিপ্ত না হতে পারে সেজন্য ইউরোপীয় শক্তিবর্গকে বিপ্লব পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। মূলতঃ ফ্রান্সের শক্তি চরমভাবে বিনষ্ট করাই ছিল শক্তিসাম্য নীতির উদ্দেশ্য। শক্তিসাম্য নীতি বাস্তবায়ন করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় ; যেমন - 
(i) ফ্রান্সের সেনাবাহিনী ভেঙে দেওয়া হয়। 
(ii) ফ্রান্সে পাঁচ বছরের জন্য মিত্রপক্ষের সেনা মোতায়েন করা হয়। 
(iii) মিত্রপক্ষের সেনার ভার ফ্রান্সের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়। 
(iv) ফ্রান্স যাতে পুনরায় শক্তিশালী না হতে পারে বা ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলিকে আক্রমণ না করতে পারে সেজন্য ফ্রান্সের চতুর্দিকে মিত্রপক্ষের বেষ্টনী রচিত হয়। 
(v) বেলজিয়ামকে হল্যান্ডের সাথে যুক্ত করে অরেঞ্জ বংশকে শক্তিশালী করা হয়। 
(vi) সার্ডিনিয়া - পিডমন্টকে জেনোয়া প্রদান করে ফ্রান্সের দক্ষিণ - পশ্চিম সীমান্তে শক্তিশালী রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়। 
(vi) উত্তর - পশ্চিম জার্মানিতে প্রাশিয়ার প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়। 
(vii) দক্ষিণ জার্মানিতে ও উত্তর ইতালিতে অস্ট্রিয়ার প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়। 

পরিশেষে বলা যায় , ভিয়েনা সম্মেলনে গৃহীত নীতিগুলি সমালোচনার উর্দ্ধে নয়। ভিয়েনা সম্মেলনের প্রধান নেতৃবর্গ , বিশেষকরে মেটারনিখ ছিলেন চরম প্রতিক্রিয়াশীল ও রক্ষণশীল। ভিয়েনা সম্মেলনের সকল নীতির একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল ইউরোপকে বিপ্লব পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং রাজতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা। প্রকৃতপক্ষে ভিয়েনা সম্মেলন ইউরোপকে প্রগতিশীলতার পরিবর্তে পশ্চাদমুখী করে তোলে।   

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো
   
Share
Tweet
Pin
Share
No comments

এককেন্দ্রিক ও যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা কর। 

এককেন্দ্রিক ও যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের মধ্যে পার্থক্য। 

এককেন্দ্রিক ও যুক্তরাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থার তুলনা। 

Comparative study of Unitary and Federal political system ( In Bengali ) .

Distinction between Unitary and Federal Government. ( In Bengali ). 



এককেন্দ্রিক শাসন ব্যাবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে কেন্দ্রীভূত থাকে। অঙ্গরাজ্যের জন্য সরকার থাকলেও তারা কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে পরিচালিত হয়। গ্রেট ব্রিটেন , ফ্রান্স , নিউজিল্যান্ড - ইত্যাদি রাষ্ট্রে এককেন্দ্রিক সরকারের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের ক্ষেত্রে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ঘটে। এই ধরণের শাসন ব্যবস্থায় সংবিধান কর্তৃক কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মধ্যে ক্ষমতা বন্টিত হয়। কেন্দ্রীয় সরকার অধিক ক্ষমতা ভোগ করলেও রাজ্য সরকারগুলি কেন্দ্র সরকারের অধীনস্থ থাকে না এবং সংবিধান প্রদত্ত ক্ষমতা অনুযায়ী তারা স্বাধীনভাবে শাসনকার্য পরিচালনা করতে পারে। এককেন্দ্রিক ও যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের পার্থক্যগুলো নিম্নরূপ :- 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

১. সরকারের প্রকৃতিগত ক্ষেত্রে পার্থক্য :- এককেন্দ্রিক সরকারের সকল ক্ষমতা একটিমাত্র কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে ন্যাস্ত থাকে। প্রশাসনিক সুবিধার জন্য তারা আঞ্চলিক সরকার গঠন করলেও আঞ্চলিক সরকারগুলি কেন্দ্র সরকারের অধীনে কাজ করে এবং আঞ্চলিক সরকারগুলির অস্তিত্ব নির্ভর করে কেন্দ্র সরকারের ইচ্ছা - অনিচ্ছার উপর। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের ক্ষেত্রে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করা হয় এবং আঞ্চলিক সরকারগুলি সংবিধানিক ক্ষমতার ভিত্তিতে স্বাধীনভাবে শাসনকার্য পরিচালনা করতে পারে। এক্ষেত্রে আঞ্চলিক সরকারগুলির অস্তিত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের উপর নির্ভরশীল নয়। 

২. সংবিধানের প্রকৃতিগত ক্ষেত্রে পার্থক্য :- এককেন্দ্রিক রাষ্ট্রের সংবিধান লিখিত ও অলিখিত উভয়ই হতে পারে। যেমন গ্রেট ব্রিটেনের সংবিধান লিখিত কিন্তু ফ্রান্সের সংবিধান অলিখিত। এককেন্দ্রিক ব্যবস্থায় যেহেতু ক্ষমতার বন্টন হয়না , সেহেতু সংবিধান অলিখিত হলেও কোনো সমস্যা হয়না।  কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থায় সংবিধান অবশ্যই লিখিত হতে হবে। কেননা সংবিধান লিখিত না হলে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যে ক্ষমতার বন্টন সম্ভব হবে না। তাই ভারত , মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র - ইত্যাদি দেশের সংবিধান লিখিত।    

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৩. সংবিধানের পরিবর্তনশীলতার ক্ষেত্রে পার্থক্য :- এককেন্দ্রিক রাষ্ট্রগুলিতে সংবিধান সুপরিবর্তনীয় হয়। কেন্দ্রীয় সরকার নিজেদের সুবিধামত সংবিধান পরিবর্তন করতে পারে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থায় সংবিধান দুষ্পরিবর্তনীয় হয়। সংবিধান পরিবর্তনের ক্ষেত্রে রাজ্য বা আঞ্চলিক সরকারগুলিরও সম্মতি প্রয়োজন হয়। এইরকম ব্যবস্থার প্রধান উদ্দেশ্য হল আঞ্চলিক স্বার্থ সুরক্ষিত করা। 

৪. সংবিধানের গুরুত্বের ক্ষেত্রে পার্থক্য :- এককেন্দ্রিক ব্যবস্থায় সংবিধান গুরুত্বহীন। সরকার ইচ্ছেমতো খুব সহজেই সংবিধান পরিবর্তন করতে পারে। ফলে এককেন্দ্রিক সংবিধান মর্যাদাহীন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় সংবিধান সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী। সকল ব্যক্তি , প্রতিষ্ঠান , কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার - সকলকেই সংবিধানের নির্দেশ পালন করে চলতে হয়। যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় সকল ক্ষমতার উৎস হল সংবিধান। 

৫. আদালতের গুরুত্বের ক্ষেত্রে পার্থক্য :- এককেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থায় যেহেতু কেন্দ্রীয় সরকার সকল ক্ষমতা ভোগ করে সেহেতু এককেন্দ্রিক আদালতের গুরুত্ব তুলনামূলকভাবে কম। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় আদালত অনেক বেশি ক্ষমতা ভোগ করে। যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত সংবিধানের প্রধান ব্যাখ্যাকর্তা হিসেবে কাজ করে। সংবিধানের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ আইন অবৈধ বলে ঘোষণা করতে পারে। সকল প্রকার বিরোধের মীমাংসা করতে পারে এবং নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের রক্ষাকর্তা হিসেবে কাজ করে। 

৬. নাগরিকত্বের প্রশ্নে পার্থক্য :- এককেন্দ্রিক ব্যবস্থায় সাধারণতঃ এক - নাগরিকত্ব স্বীকৃত থাকে এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় দ্বৈত - নাগরিকত্ব স্বীকৃত থাকে। যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দ্বৈত - নাগরিকত্ব স্বীকৃত। কিন্তু এর ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যায়। যেমন ভারত যুক্তরাষ্ট্র হলেও এখানে এক - নাগরিকত্ব স্বীকৃত। 

৭. অঙ্গরাজ্যের সংবিধানের অস্তিত্ত্বগত ক্ষেত্রে পার্থক্য :- এককেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থায় সাধারণত একটিমাত্র সংবিধান থাকে। অঙ্গরাজ্যগুলির জন্য কোনো পৃথক সংবিধান থাকেনা। কিন্তু বর্তমানে এমন বহু যুক্তরাষ্ট্রের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায় , যাদের অঙ্গরাজ্যগুলির জন্যও পৃথক ও স্বতন্ত্র সংবিধান আছে। তবে অঙ্গরাজ্যের জন্য স্বতন্ত্র সংবিধানগুলিও কেন্দ্রীয় সংবিধানের সাথে সামঞ্জস্য রেখে রচনা করতে হয়। 

৮. আঞ্চলিক স্বার্থ সংক্রান্ত পার্থক্য :- এককেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থায় আঞ্চলিক স্বার্থ উপেক্ষিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। শুধুমাত্র কেন্দ্র সরকারের হাতে সমস্ত ক্ষমতা অর্পিত হওয়ার ফলে আঞ্চলিক স্বার্থগুলি ক্ষুন্ন হতে পারে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থায় আঞ্চলিক সরকারগুলিও স্বাধীনভাবে কর্মপরিচালনা ও নীতি নির্ধারণ করতে পারে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় আঞ্চলিক স্বার্থ পূরণের নিশ্চয়তা থাকে। 

পরিশেষে বলা যায় , কোন রাষ্ট্রে কোন ধরণের শাসনব্যবস্থা প্রবর্তিত হবে তা নির্ভর করে সেই রাষ্ট্রের ইতিহাস , রাজনৈতিক অবস্থা , প্রথা , রীতিনীতি , জনমত , সংস্কৃতি - ইত্যাদি বিভিন্ন 
বিষয়ের উপর। সর্বক্ষেত্রে কোনো এক ধরণের ব্যবস্থা সুফল বা কুফল প্রদান করবে - এমনটা নয়। তবে বর্তমান বিশ্বের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় দেখা যায় বৃহৎ রাষ্ট্রগুলিতে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা প্রচলিত। যেমন - ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আবার চীন বৃহৎ রাষ্ট্র হওয়া স্বত্ত্বেও সেখানে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

   
Share
Tweet
Pin
Share
No comments

সংসদীয় শাসনব্যবস্থা কাকে বলে ? সংসদীয় শাসনব্যবস্থার / মন্ত্রিপরিষদ চালিত শাসন ব্যবস্থার বৈশিষ্টগুলি লেখ। 

Features of parliamentary system ( In Bengali ) 




সংসদীয় শাসনব্যবস্থা :- 


সরকারের মূল তিনটি বিভাগ - আইন , শাসন ও বিচার। সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগের মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরশীলতার সম্পর্ক থাকে। শাসন বিভাগের সদস্যরা আইন বিভাগ থেকেই নির্বাচিত হন এবং তারা আইন বিভাগের নিকট দায়িত্বশীল থাকেন। শাসন বিভাগের স্থায়িত্বও আইন বিভাগের ওপর নির্ভরশীল। 

এই ধরণের শাসন ব্যবস্থায় কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে সংবিধান দ্বারা ক্ষমতার বন্টন করা হয়। কেন্দ্রীয় শাসন ব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকারের সকল ক্ষমতা একজন নিয়মতান্ত্রিক প্রধানের হাতে অর্পিত থাকলেও সরকারের প্রকৃত ক্ষমতা প্রয়োগ করেন প্রধানমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিপরিষদ। তাই সংসদীয় শাসনব্যবস্থাকে মন্ত্রিপরিষদ পরিচালিত শাসন ব্যবস্থাও বলা হয়। 

সংসদীয় বা , মন্ত্রিপরিষদ চালিত বা , ক্যাবিনেট শাসন ব্যবস্থা লক্ষ্য করা যায় ভারত , গ্রেট ব্রিটেন , জাপান , সুইডেন , নিউজিল্যান্ড , অস্ট্রেলিয়া - ইত্যাদি রাষ্ট্রে।    

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

সংসদীয় শাসনব্যবস্থার বৈশিষ্ট :- 


সংসদীয় শাসনব্যবস্থার বৈশিষ্টগুলি হল - 

১. নিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্রপ্রধান :- যে সকল রাষ্ট্রে সংসদীয় শাসনব্যবস্থা প্রচলিত থাকে সেই সকল রাষ্ট্রে নিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্রপ্রধানের হাতে তত্ত্বগতভাবে সমস্ত ক্ষমতা অর্পিত থাকে। কেন্দ্রীয় সরকারের সকল কাজ ও নীতি তাঁর নামেই পরিচালিত হয়। বাস্তবে প্রকৃত ক্ষমতা উপভোগ করেন প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিপরিষদ। সরকার রাষ্ট্রপ্রধানের নামে পরিচালিত হলেও তাঁর হাতে সরকার পরিচালনার কোনো ক্ষমতা থাকে না এবং তিনি নিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্রপ্রধানের ভূমিকা পালন করেন। 

২. সরকারের প্রকৃত প্রধান : প্রধানমন্ত্রী :- সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় সরকার পরিচালনার সমস্ত ক্ষমতার প্রয়োগকারী হলেন প্রধানমন্ত্রী। মন্ত্রিসভা গঠন , দপ্তর বন্টন , নীতি নির্ধারণ ও প্রয়োগ , বৈদেশিক সম্পর্ক পরিচালনা , আর্থিক নীতি পরিচালনা - ইত্যাদি সমস্ত ধরণের কার্যাবলী প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বেই পরিচালিত হয়। সুতরাং , সংসদীয় শাসনব্যবস্থার প্রকৃত প্রধান হলেন প্রধানমন্ত্রী। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৩. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির সম্পূর্ণ প্রয়োগ সম্ভব নয় :- ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ নীতি অনুসারে সরকারের তিনটি বিভাগ - আইন , শাসন ও বিচার কার্যক্ষেত্রে পরস্পরের থেকে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থাকবে। কিন্তু সংসদীয় শাসন ব্যবস্থায় ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির সম্পূর্ণ প্রয়োগ সম্ভব নয়। এই ব্যবস্থায় প্রতিটি বিভাগ একে অপরকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। যেমন শাসন বিভাগের সদস্যরা নির্বাচিত হন আইন বিভাগ থেকে। 

৪. আইন ও শাসন বিভাগের মধ্যে ঘনিষ্ট সম্পর্ক :- সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় আইন বিভাগের মধ্যে থেকেই শাসন বিভাগ গঠিত হয় এবং শাসনবিভাগ আইনসভার কাছে যৌথভাবে দায়িত্বশীল থাকে। একদিকে শাসন বিভাগের স্থায়িত্ব আইন সভার উপর নির্ভরশীল আবার অন্যদিকে শাসন বিভাগ আইন সভার কার্যাবলীকে অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করে।    

৫. নিম্নকক্ষের ভূমিকা : - সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদ গঠনে নিম্নকক্ষের প্রধান ভূমিকা থাকে। নিম্নকক্ষ একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য গঠিত হলেও তার কার্যকালের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নিম্নকক্ষ ভেঙে দেওয়া যায়। যেমন ভারতে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি নিম্নকক্ষ ভেঙে দিতে পারেন। 

৬. মন্ত্রিসভার দ্বৈত দায়িত্ব :- সংসদীয় শাসন ব্যবস্থায় মন্ত্রীগণ দ্বৈত ভূমিকা পালন করে থাকেন। একদিকে তাকে মন্ত্রী হিসেবে নিজের দপ্তর পরিচালনা করতে হয় এবং অন্যদিকে আইন সভার সদস্যরূপেও দায়িত্ব পালন করতে হয়। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৭. আইনসভার নির্বাচন :- সংসদীয় শাসন ব্যবস্থায় আইনসভা একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্বাচিত হয়। যেমন ভারতে লোকসভার কার্যকালের মেয়াদ পাঁচ বছর , গ্রেট ব্রিটেনের কমন্স সভা পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হয়। 

৮. মন্ত্রিসভার আস্থাশীলতা :- সংসদীয় শাসন ব্যবস্থায় মন্ত্রীপরিষদকে আইনসভার নিকট আস্থাশীল থাকতে হয়। কোনো কারণে একটি দলের কোনো মন্ত্রী নির্দিষ্ট আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হলে তাকে পদত্যাগ করতে হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী আস্থা প্রমাণ না করতে পারলে সম্পূর্ণ মন্ত্রিসভার নীতিগতভাবে পতন ঘটে। 

৯. বিরোধী দলের কার্যকারিতা :- সংসদীয় শাসন ব্যবস্থায় একটি শক্তিশালী ও কার্যকরী বিরোধী দলের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। সরকারের জনবিরোধী নীতির তীব্র সমালোচনা , উপযুক্ত পদক্ষেপের মাধ্যমে সরকারের জনবিরোধী নীতির বাস্তবায়ন রোধ করা , জনগণের দাবী সরকারের নিকট তুলে ধরা , ঘোষিত কর্মসূচীগুলি সম্পূর্ণ করতে সরকারকে বাধ্য করা - এসকল ভূমিকা বিরোধী দলকে গ্রহণ করতে হয়। 

১০. গণতন্ত্রের সাথে সম্পর্ক :- সংসদীয় শাসন ব্যবস্থায় গণতন্ত্র সুরক্ষিত থাকে বলে মনে করা হয়। যেহেতু এই ধরণের ব্যবস্থায় ক্ষমতা একজনের হাতে কেন্দ্রীভূত থাকেনা , সেহেতু শাসকের স্বৈরাচারী হওয়ার আশঙ্কা খুব কম থাকে। প্রধানমন্ত্রী কার্যক্ষেত্রে সর্বেসর্বা হলেও তাকেও আইনসভা পদচ্যুত করতে পারে। 

১১. ধনতন্ত্রের সাথে কার্যকারণ সম্পর্ক :- সংসদীয় শাসনব্যবস্থা ধনতন্ত্রের সাথে কার্যকারণ সম্পর্ক স্থাপন করে বলে রজনীপাম দত্ত সমালোচনা করেছেন। তাঁর মতে , সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় গণতন্ত্রের মূলনীতিগুলিকে তুলে ধরা হলেও কার্যক্ষেত্রে এমন একটি ব্যবস্থার সৃষ্টি হয় , যার ফলে ধনতন্ত্রের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা হয়। 

১২. বহুদলীয় ব্যবস্থা :- সাধারণত সংসদীয় শাসন ব্যবস্থায় একাধিক দলের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। যেমন ভারতে জাতীয় ও আঞ্চলিক স্তরে প্রচুর পরিমাণে দলের অস্তিত্ত্ব লক্ষণীয়। বহুদলীয় ব্যবস্থার অস্তিত্বের কারণে সরকার গঠনের সময় অনেক ক্ষেত্রে জোট গঠনের প্রবণতা দেখা যায়। ভারতীয় সংসদীয় রাজনীতিতে এধরণের বহু ঘটনার উদাহরণ রয়েছে। 

পরিশেষে বলা যায় , দেশ ও কালের পরিপ্রেক্ষিতে বৈশিষ্টগুলি পরিবর্তনশীল। যেমন ভারত ও ব্রিটেনে সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা প্রচলিত থাকলেও উভয় দেশের শাসন ব্যবস্থা হুবহু এক ধরণের নয়। যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে মন্ত্রিসভা এবং ক্যাবিনেটের ক্ষমতা উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে এবং শাসন ও আইন বিভাগ ধীরে ধীরে ক্যাবিনেটের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণাধীনে চলে আসছে।     

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো    

Share
Tweet
Pin
Share
No comments

বাংলা গদ্য সাহিত্যের বিকাশে রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা আলোচনা করো। 

বাংলা গদ্য সাহিত্যের বিকাশে রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা :- 



বাংলা গদ্য সাহিত্যের আকাশে এক অসাধারণ পুরুষ , আধুনিকতার অগ্রদূত , ভারতীয় জীবনচেতনার উন্মেষস্বরূপ হলেন রাজা রামমোহন রায়। তিনি সম্পূর্ণ সংস্কারবিহীন হয়ে হিন্দু , মুসলিম ও খ্রিস্টান ধর্মগ্রন্থ পাঠ করে স্বকীয় চিন্তায় ও মননে , লেখনীর দ্বারা যুক্তি গ্রাহ্য বিশ্লেষণে ভারতের সংস্কার আন্দোলনে ও গদ্য সাহিত্যের বিকাশে এক নতুন যুগের সূচনা করেন। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

রাজা রামমোহন রায় বাংলা গদ্যের বিকাশে লেখনী ধারণ করেননি। বাংলা গদ্যে তাঁর অংশগ্রহণের মূল কারণ ছিল সমাজ সংস্কার ও সমাজ সচেতনতা। তাঁর প্রধান পরিচয় - তিনি একজন সমাজ সংস্কারক , নবজাগরণের অগ্রদূত।সতীদাহ প্রথা নিবারণকল্পে তাঁর প্রধান অস্ত্র ছিল বাংলা গদ্য ভাষা। বহুবছর ধরে লালিত শাস্ত্রাদির বাংলা গদ্যে রূপান্তর ও সমালোচনা দ্বারা সনাতন ব্রাহ্মণ্য - দম্ভের মূলে কুঠারাঘাতের মধ্যে দিয়ে তাঁর সমাজ সংস্কারের প্রথম নান্দীপাঠ। তারপর শুরু হয় বিধবা বিবাহ আন্দোলন। এক্ষেত্রেও তৎকালীন রক্ষণশীল সমাজের বিরুদ্ধে লেখনীকেই তিনি প্রধান অস্ত্ররূপে ব্যবহার করেছিলেন। ''সম্বাদ কৌমুদী '' নামে তাঁর প্রকাশিত একটি পত্রিকাতে নিজ মত সমর্থনে তিনি নানা যুক্তি ও তর্কের উপস্থাপনা করেন। এই তর্ক-বিতর্ক এবং স্বাধীন যুক্তি - যুক্ত মতামত প্রকাশ ও উত্তর - প্রত্যুত্তরের মাধ্যমে সদ্যোজাত বাংলা গদ্য যেন শৈশব থেকে যৌবনে উত্তীর্ণ হলো।   

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

রামমোহনের সাহিত্য সৃষ্টি :-


 রামমোহনের সাহিত্য কীর্তির প্রধান উদাহরণ হলো সম্বাদ কৌমুদী। এই পত্রিকার মাধ্যমে তিনি রক্ষণশীল সমাজের মূলে কুঠারাঘাত করেছিলেন। এছাড়াও ছিল - বেদান্ত গ্রন্থ (১৮১৫) ; বেদান্তসার (১৮১৫) ; বিভিন্ন উপনিষদের অনুবাদ - ইত্যাদি।

সমাজ সংস্কার সম্পর্কিত বিতর্কমূলক রচনাগুলি রামমোহনের সাহিত্যকীর্তিগুলির মধ্যে অন্যতম। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল -

উৎসবানন্দ বিদ্যাবাগীশের সহিত বিচার ; 
ভট্টাচার্যের সহিত বিচার ;
গোস্বামীর সহিত বিচার ;
সহমরণ বিষয়ক প্রবর্তক - নিবর্তক সম্বাদ ;
কবিতাকারের সহিত বিচার ;
ব্রাহ্মণ সেবধি ;
পথ্য প্রদান ; 
সহমরণ বিষয়ক - ইত্যাদি। 
এছাড়াও তিনি কতকগুলি ব্রহ্মসংগীত রচনা করেছিলেন এবং '' গৌড়ীয় ব্যাকরণ '' নামে একখানি ব্যাকরণ গ্রন্থ রচনা করেছিলেন - যা তাঁর মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয়েছিল। 



রামমোহনের গদ্য সাহিত্য পর্যালোচনা :-


রামমোহনের রচনা শৈলী ও বৈশিষ্ট সম্পর্কে কবি ঈশ্বর গুপ্ত লিখেছিলেন - '' দেওয়ানজী (রামমোহন ) জলের ন্যায় সহজ ভাষায় লিখিতেন , তাহাতে কোনো বিচার ও বিবাদঘটিত বিষয় লেখায় মনের অভিপ্রায় ও ভাবসকল অতিসহজ স্পষ্টরূপে প্রকাশ পাইত , এজন্য পাঠকেরা অনায়াসেই হৃদয়ঙ্গম করিতেন , কিন্তু সে লেখায় শব্দের বিশেষ পারিপাট্য ও তাদৃশ মিষ্টতা ছিল না। 

রামমোহনের গদ্য ভাষায় ঋজুতা থাকলেও মিষ্টতা ছিল না - একথা সত্য। তার কারণ তাঁর সাহিত্য সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য ছিল সমাজ সংস্কার ও সমাজ সচেতনতা। এজন্য তিনি সাহিত্য ক্ষেত্রে শব্দের পারিপাট্যের প্রতি মনোযোগী হতে পারেননি। তবে বাংলা গদ্যের বিকাশে রামমোহনের প্রধান অবদান ছিল তিনি বাংলা গদ্যকে প্রাঞ্জল , স্বচ্ছন্দ ও সাবলীল করে তুলেছিলেন।  

ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের পন্ডিত - মুনশিরা বাংলা গদ্যকে কাহিনী ও গল্প প্রকাশের বাহন করে তুলেছিলেন। কিন্তু রামমোহন তাকে যুক্তিতর্কের নিরিখে বিশ্লেষণ করে এবং গভীর আত্মসংযমের মধ্যে দিয়ে বিষয়কে উপস্থাপিত করেছিলেন। 

তাঁর সাহিত্য কীর্তি সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন - '' কী রাজনীতি , কী বিদ্যাশিক্ষা, কী সমাজ , কী ভাষা - আধুনিক বঙ্গদেশে এমন কিছুই নাই রামমোহন রায় স্বহস্তে যাহার সূত্রপাত করিয়া যান নাই। ''

এছাড়াও রামমোহন ইংরেজির অনুকরণে বাক্যে ছেদচিহ্নের ব্যবহার করেছিলেন। আচার্য সুকুমার সেন বলেছিলেন - '' তিনিই আমাদের প্রথম লিঙ্গুয়িস্ট। ''

শ্রীকুমার বন্দোপাধ্যায় বলেছেন - ''.......... স্বাধীন চিন্তার প্রকাশে তাঁহার জুড়ি নাই। ............... তাঁহার গদ্য লালিত মধুর না হইলেও মননদীপ্ত ও ভাবের সমুন্নতিতে মর্যাদাময়। ''   

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো 
  

Share
Tweet
Pin
Share
No comments

ভার্সাই সন্ধি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য কতটা দায়ী ছিল ? 

How far was the treaty of Versailles responsible for the Second World War ? ( In Bengali ) 



দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য ভার্সাই সন্ধির দায়িত্ব :- 

আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলির মধ্যে ভার্সাই চুক্তি ছিল একটি অন্যতম বিতর্কিত চুক্তি। এর বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ হল যে , ভার্সাই চুক্তি পরোক্ষভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য দায়ী। ঐতিহাসিকেরা একে জবরদস্তিমূলক সন্ধি বা A dictated peace বলে অভিহিত করেছেন। এই চুক্তির মধ্যে দিয়ে জার্মান জাতির প্রতি যে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়েছিল তা পরোক্ষভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্ম দেয়। ঐতিহাসিক রাইকার মন্তব্য করেছেন - No great nation like Germany can submit indifferently to discrimination in the matter of armament and other things. প্রকৃতপক্ষে ভার্সাই সন্ধির মূল উদ্দেশ্য ছিল জার্মানিকে রাজনৈতিক , অর্থনৈতিক সব দিক দিয়ে দুর্বল করে দিয়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে তাকে অপ্রাসঙ্গিক করে দেওয়া। এই সন্ধির মধ্যে দিয়ে জার্মান জাতির প্রতি যে ঘৃণা ও বিদ্বেষ উদ্রেক করা হয়েছিল তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে হিটলারের উত্থানের পরবর্তীকালের ঘটনাবলীর মধ্যে দিয়ে।

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

১. ভার্সাই সন্ধির প্রণেতাদের রাজনৈতিক দূরদৃষ্টির অভাব :- ভার্সাই সন্ধি স্থাপনের বহু পূর্ব হতেই ইউরোপীয় নেতৃত্ব জার্মানির উপর ঘৃণা ও বিদ্বেষের মনোভাব পোষণ করতেন। ফলে সন্ধিকালে পরাজিত জার্মানিকে কোনোরূপ সৌজন্য প্রদর্শন তাঁরা করেননি। সন্ধি রূপায়ণের কোনো অংশেই জার্মানির কোনো ভূমিকা ছিল না। এই রাজনৈতিক অদূরদৃষ্টি ভার্সাই সন্ধিকে একটি পক্ষপাতমূলক সন্ধিতে পরিণত করে। 

২. জার্মানির প্রতি অসম্মানজনক ব্যবহার :- ভার্সাই সন্ধি মূলতঃ দুটি নীতির ওপর ভিত্তি করে রচিত হয় - (ক ) যুদ্ধের জন্য জার্মানিকে এককভাবে দায়ী করে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং (খ ) ভবিষ্যতে জার্মানি যাতে কোনোরূপ আক্রমণাত্মক ভূমিকা না গ্রহণ করতে পারে - তা নিশ্চিত করা। এই দুই নীতির পরিপ্রেক্ষিতে সন্ধির সকল শর্ত জার্মানিকে পঙ্গু করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে রচিত হয়। এই প্রতিশোধাত্মক মনোভাব ও অপমানজনক ব্যবহার জার্মান জাতির মনে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার করে। হিটলারের উত্থানের মধ্যে দিয়ে সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল মাত্র। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৩. জার্মানির উপর অনৈতিক ও অযৌক্তিক ক্ষতিপূরণের বোঝা :- ভার্সাই সন্ধিতে জার্মানির উপর যে সকল শর্তগুলি আরোপ করা হয়েছিল তা ছিল অনৈতিক ও অযৌক্তিক। যুদ্ধে জার্মানি তীব্রভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হলেও তার উপর যে বিরাট অংকের ক্ষতিপূরণের বোঝা চাপানো হয় - তা কোনোভাবেই জার্মানির পক্ষে পরিশোধ করা সম্ভব ছিল না। সন্ধির প্রণেতাগণ সন্ধি রূপায়নকালে সকল প্রকার আন্তর্জাতিক নীতি ও নৈতিকতা বর্জন করেছিলেন। 

৪. অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক শর্তগুলির প্রভাব :- জার্মানির কাছ থেকে তার সকল সমৃদ্ধ অঞ্চলগুলি কেড়ে নেওয়া হয়। বিভিন্ন খণিজগুলির উপরেও জার্মানির কোনো অধিকার অস্বীকার করা হয়। জার্মানির প্রধান শিল্পসমৃদ্ধ সার অঞ্চল কেড়ে নেওয়া হয়। জার্মানির অধিকাংশ অঞ্চল ও উপনিবেশ কেড়ে নিয়ে তা মিত্রপক্ষের শাসনাধীনে আনা হয়। এই কঠোর ও জবরদস্তিমূলক শর্তগুলির ফলে জার্মান জাতির পুনরায় ঐক্যবদ্ধ হওয়া ও ইউরোপীয় শক্তিবর্গের প্রতি প্রতিশোধের মনোভাব তৈরী হওয়া খুবই স্বাভাবিক ছিল। 

৫. ইউরোপের পুনর্গঠনের নীতিতে জার্মানির প্রতি বৈষম্য :- ভার্সাই সন্ধিতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের পুনর্গঠন করা হলেও এক্ষেত্রে জার্মানির প্রতি তীব্র বৈষম্য করা হয়। জার্মানির বহু অংশকে পোল্যান্ড ও চেকোশ্লোভাকিয়ার সাথে সংযুক্ত করা হয়। এই জবরদস্তিমূলক সংযুক্তি পরবর্তী কালে বহু আন্তর্জাতিক সমস্যার জন্ম দেয়। 

৬. উইলসন কর্তৃক প্রণীত জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বৈষম্য :- ভার্সাই সন্ধিতে মার্কিন রাষ্ট্রপতি জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের কথা বলেছিলেন। কিন্তু এই আদর্শ জার্মানির উপর প্রযুক্ত হয়নি। জার্মান জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষিত ছিল। সন্ধির জার্মানির সার্বভৌমত্ব তীব্রভাবে ক্ষুন্ন করা হয়। ফলে পরবর্তীকালে জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের প্রশ্নে জার্মান জাতি পুনরায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে আত্মনিয়ন্ত্রণের দাবী জানাবে - তা অস্বাভাবিক ছিল না। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৭. সামরিক শর্তগুলির প্রভাব :- ভার্সাই সন্ধি অনুসারে ইউরোপের সকল রাষ্ট্র যুদ্ধাস্ত্র হ্রাস করার নীতি গ্রহণ করে। কিন্তু বিজয়ী শক্তিবর্গ কোনো অবস্থাতেই নিজেদের শক্তি হ্রাস করেনি। কিন্তু এই নীতি জার্মানির উপর কঠোরভাবে প্রযুক্ত হয়েছিল। জার্মানির সেনাদল ও নৌ শক্তি ভেঙে দেওয়া হয় , জার্মানিতে মিত্রপক্ষের সেনা মোতায়েন করা হয়। এই বৈষম্যমূলক নীতি অধিককাল স্থায়ী হওয়া সম্ভব ছিল না। ফলে হিটলারের উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে ১৯৩৬ সালে জার্মানি ভার্সাই চুক্তিকে অমান্য করে। 

৮. জার্মান জাতিকে দমন করে রাখার ব্যর্থ প্রচেষ্টা :- জার্মানির উপর যে বিরাট অংকের ক্ষতিপূরণের বোঝা চাপানো হয়েছিল তা একদিকে যেমন জার্মানির পক্ষে প্রদান করা সম্ভব ছিল না ; তেমনি বিজয়ী শক্তিবর্গের পক্ষে তা আদায় করাও সম্ভব ছিল না। জার্মানির রাইন অঞ্চলসহ বিভিন্ন অঞ্চলে মিত্রপক্ষের সেনা মোতায়েন করলেও তা জার্মানির পুনরুত্থাপনের ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো বাধা তৈরী করতে পারেনি। 

৯. পোল্যান্ড ও বেলজিয়াম নীতি দ্বারা জার্মানির জাতিগত মর্যাদায় আঘাত :- সন্ধির শর্তগুলির দ্বারা পার্শ্ববর্তী ক্ষুদ্র বেলজিয়ামকে জার্মানির থেকে অধিক শক্তিশালী করা হয়েছিল। জার্মানির বিভিন্ন সমৃদ্ধ অঞ্চল পোল্যান্ডের সাথে সংযুক্ত করা হয়েছিল। উপরন্তু জার্মানির ভিতর দিয়ে '' পোলিশ করিডর '' নির্মাণ করে সন্ধির প্রণেতাগণ জার্মান জাতির মর্যাদায় আঘাত হেনেছিলেন। নিজেদের জাতিগত শ্রেষ্ঠত্বের তত্ত্বে বিশ্বাসী জার্মানরা তাই দ্রুত নিজেদের উত্থান ঘটাতে চেষ্টা করেছিল। এরই ফল ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। 

১০. ব্রিটেন ও ফ্রান্সের তোষণ নীতি :- সন্ধির পরবর্তীকালে এক দশকের মধ্যে হিটলারের উত্থান ঘটলে ব্রিটেন ও ফ্রান্স রাজনৈতিক স্বার্থে জার্মান তোষণ শুরু করে। এর ফলে জার্মানি ১৯৩২ সালে ক্ষতিপূরণ প্রদান বন্ধ করে দিলেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি। এরপর ১৯৩৬ সালে রাইন অঞ্চল থেকে সন্ধির সকল শর্ত বাতিল করে। ১৯৩৮ সালে হিটলার অস্ট্রিয়া দখল করে। এইভাবে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের তোষণ নীতি জার্মানিকে অপ্রতিরোধ্য ভূমিকা গ্রহণ করতে উৎসাহিত করে। 

পরিশেষে বলা যায় , সন্ধির শর্তগুলির দ্বারা সাময়িকভাবে জার্মানিকে দুর্বল করে রাখলেও স্থায়ীভাবে তাকে পদানত করে রাখা সম্ভব ছিল না। কেননা একদিকে ছিল জার্মান জাতির জাতিগত শ্রেষ্ঠত্বে বিশ্বাস ও অন্যদিকে ছিল হিটলারের উত্থান। এই দুয়ের প্রভাবে পরবর্তী এক দশকের মধ্যেই জার্মানি কর্তৃক প্রতিশোধের সুপ্ত সম্ভাবনা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। এরই চরম বহিঃপ্রকাশ হল হিটলার কর্তৃক পোল্যান্ড আক্রমণ ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

Share
Tweet
Pin
Share
No comments
Newer Posts
Older Posts

Followers

Pages

  • Home
  • Privacy Policy
  • Disclaimer
  • CONTACT ME
  • About Me

Contact Form

Name

Email *

Message *

About me

Hallow viewers , myself Nandan Dutta [Subhankar Dutta], reside at Maheshpur,Malda.
I made this website for the students of B.A. courses under Gour Banga University. Here you can get suggestions of different subjects like HISTORY , SOCIOLOGY , POLITICAL SCIENCE & EDUCATION.
In future I will add MCQ sections of those subjects.


Categories

  • 1ST SEMESTER SUGGESTION (1)
  • 2 ND YEAR SUGGESTION (1)
  • 2ND SEMESTER (1)
  • 3RD SEMESTER (8)
  • BENGALI NOTES (21)
  • CU suggestion. (1)
  • EDUCATION NOTES (141)
  • ENGLISH COMPULSORY (16)
  • GBU Suggestion. (7)
  • HISTORY EUROPE & WORLD (46)
  • HISTORY NOTES (68)
  • POL SC NOTES (64)
  • SOCIOLOGY NOTES (72)
  • WBCS 2020 (1)

recent posts

Blog Archive

  • May 2025 (3)
  • April 2025 (20)
  • March 2025 (12)
  • February 2025 (8)
  • November 2024 (5)
  • October 2024 (2)
  • September 2024 (2)
  • June 2024 (2)
  • March 2024 (6)
  • February 2024 (4)
  • October 2023 (5)
  • May 2023 (5)
  • April 2023 (1)
  • December 2022 (1)
  • November 2022 (13)
  • September 2022 (2)
  • August 2022 (7)
  • July 2022 (29)
  • June 2022 (10)
  • May 2022 (25)
  • April 2022 (24)
  • March 2022 (16)
  • February 2022 (19)
  • January 2022 (21)
  • December 2021 (46)
  • November 2021 (5)
  • October 2021 (6)
  • September 2021 (5)
  • August 2021 (41)
  • July 2021 (43)
  • June 2021 (31)
  • May 2021 (7)
  • April 2021 (1)
  • July 2020 (1)
  • June 2020 (3)
  • April 2020 (1)
  • November 2019 (1)
  • July 2019 (1)
  • June 2019 (1)
  • May 2019 (1)
  • April 2019 (2)
  • January 2019 (1)

Pages

  • Home
  • 2nd SEM ভাষাতত্ত্ব :
  • বাংলা উপভাষা
  • দ্বিতীয় পুলকেশীর কৃতিত্ব
  • ভারতীয় সংবিধানে বর্ণিত সাম্যের অধিকারগুলি আলোচনা করো।
  • হর্ষবর্ধনের কৃতিত্ব আলোচনা করো। তাকে কি উত্তর পথনাথ বলা যায় ?
  • ভারতীয় সংবিধানের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য :-
  • উদারনীতিবাদ : সংক্ষিপ্ত ধারণা :-
  • চোল শাসনব্যবস্থা :-
  • গুপ্তযুগ সুবর্ণযুগ সম্পর্কিত আলোচনা।
  • ৬. উদাহরণসহ মধ্যযুগের বাংলাভাষার কয়েকটি বৈশিষ্ট আল...
  • 1. Marxism
  • আধুনিক বাংলা ভাষা ও তার বৈশিষ্ট।
  • Discuss the career and achievements of Samudragupta .
  • ভাষাতত্ত্ব

Created with by ThemeXpose | Distributed by Blogger Templates