Pages

Powered by Blogger.
1ST SEMESTER SUGGESTION 2 ND YEAR SUGGESTION 2ND SEMESTER 3RD SEMESTER BENGALI NOTES CU suggestion. EDUCATION NOTES ENGLISH COMPULSORY GBU Suggestion. HISTORY EUROPE & WORLD HISTORY NOTES POL SC NOTES SOCIOLOGY NOTES WBCS 2020

NANDAN DUTTA

A new approach for exam notes .

'' প্রিয়তমাসু '' কবিতাটি এক সৈনিকের আত্মকথন - কবিতা অবলম্বনে আলোচনা কর। 


সুকান্ত ভট্টাচার্যের '' প্রিয়তমাসু '' কবিতায় এক সৈনিকের আত্মকথা :-     

কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের প্রিয়তমাসু কবিতাটি যুদ্ধ , মানবতা , যুদ্ধের ভয়াবহতা ও ভালোবাসা - এই সকলের টানাপোড়েনকে নিয়ে রচিত একটি কালজয়ী কবিতা। কবিতার প্রতিটি ছত্রে যুদ্ধের ভয়াবহ পরিণাম ও ভালোবাসার আকুল আর্তি ফুটে উঠেছে। মূলতঃ কবি সুকান্তের এই কবিতাটির মধ্যে যুদ্ধাহত এক প্রতিবাদী মানুষের অপরিসীম ভালবাসার গুঞ্জণ ধ্বনি শুনতে পাওয়া যায় । মন যেন কী এক নিগূঢ় ক্রন্দনে বারবার ধরাশায়ী হয়, মনের কোনে হাজারও লুক্কায়িত বেদনার সুর যেন বারবার দৃশ্যপটে ভেসে ওঠে। কবি এখানে প্রতিবাদী এবং ভালোবাসা থেকে দূরে থাকা এক প্রতিবাদী পথিক। এক সৈনিক রূপে কবি যুদ্ধ বিরোধী সকল শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের প্রতিনিধিত্ব করছেন। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

কবি সমাজ ও সামাজিক দায়িত্ব থেকে ছুটে গেছেন দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে। এদেশ থেকে ও দেশে। নিজেকে হারিয়েছেন নিরন্তর মানুষের প্রেমে। তাদের স্বপ্ন রচনা করতে গিয়ে নিজের স্বপ্নকে বলি দিতে চলেছেন। তবুও কবি আশাবাদী যে তার জন্যে কেউ অপেক্ষা করে থাকলেও থাকতে পারেন।
বিশ্বে চলছে আজ নিরন্তর মানুষের অধিকার ফিরিয়ে আনার আন্দোলন। কবি সে আন্দোলনের এক নিবিড় সৈনিক। তিনি এক যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে আর এক যুদ্ধ ক্ষেত্রে ছুটে গেছেন অপ্রহত রাইফেল হাতে, ধূসর তিউনিসিয়া থেকে স্নিগ্ধ ইতালি, ইতালি থেকে তিনি ছুটে গেছেন ফ্রান্সে, সেখানে তিনি জয়, বন্ধুত্ব ও মুক্তির মন্ত্র নিয়ে আবারও ছুটে গেছেন প্রতিবেশী বার্মাতে/ মায়ামমাতে,  সেখানে তিনি পেয়েছেন নিষ্কণ্ঠক ঘরে ফেরার তাগাদা।

যুদ্ধ শেষ হলে প্রতিটা সৈনিকের ঘরে ফেরার তাগাদা চলে আসে, আসে সকল ক্ষয়ক্ষতির হিসেব-নিকেশ। কবিরও চলছে তেমন হিসেবের পালা। প্রতিবেশী দেশে তিনি থাকলেও স্বদেশে তিনি না ফিরে কোন কিছুই মেলাতে পারছেন না। বড়ই ব্যথিত মন, ব্যথিতের যাতনায় তিনি প্রশ্নবিদ্ধ। ভয়ানক দুর্বিষহ যাতনার মধ্যে তিনি ফেলে এসেছেন তার অকৃত্রিম ভালবাসার সবকিছু। কিছুতেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না, কখনো মন ফিরে আসার জন্যে বিদ্রোহী হয়ে উঠছে, এক লহমায় টেনে খুলে ফেলে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে তাঁর সৈনিকের ওই কড়া পোশাক। কিন্তু তিনি তা পারছেন না। তবুও তাকে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা খেলতেই হবে। নিরন্তর মানুষের অধিকার ফিরিয়ে আনতেই হবে।
অবশেষে কবির আত্মসমালোচনামূলক বাণী---
‘আমি যেন সেই বাতিওয়ালা,
যে সন্ধ্যায় রাজপথে-পথে বাতি জ্বালিয়ে ফেরে
অথচ নিজের ঘরে নেই যার বাতি জ্বালার সামর্থ্য,
নিজের ঘরেই জমে থাকে দুঃসহ অন্ধকার’।-------

এ এক অনবদ্য অনুভূতি! এ যুদ্ধ শুধু বাইরের জগতের সঙ্গে নয় , যুদ্ধ কবির নিজের সঙ্গেও। তিনি বলেছেন - 
পরের জন্যে যুদ্ধ করেছি অনেক,
এবার যুদ্ধ তোমার আর আমার জন্যে।
প্রশ্ন করো যদি এত যুদ্ধ ক’রে পেলাম কী? উত্তর তার-
তিউনিসিয়ায় পেয়েছি জয়,
ইতালীতে জনগণের বন্ধুত্ব,
ফ্রান্সে পেয়েছি মুক্তির মন্ত্র;
আর নিষ্কণ্টক বার্মায় পেলাম ঘরে ফেরার তাগাদা।

যুদ্ধ শুধুমাত্র যুদ্ধের বিরোধিতার জন্য নয় , সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতার জন্য নয় - যুদ্ধ মানবতার জন্য , মানুষের অধিকার রক্ষা ও প্রতিষ্ঠার যুদ্ধ। যুগ যুগ ধরে অজস্র মানুষ শোষিত ও বঞ্চিত। সীমাহীন বঞ্চনা ও আপোষ তাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে। আলোর ঠিকানা তাঁদের থেকে বহু দূরে। কবি যেন সেই সকল মানুষের প্রতিনিধিস্বরূপ সৈনিক। মানুষের জীবন , জীবিকা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার তাগিদে কবিকে যুদ্ধ করতে হবে। তাই কবির সংগ্রাম চিরন্তন ও অপ্রতিরোধ্য। 

পরিশেষে বলা যায় , প্রিয়তমাসু কবিতার মধ্যে দিয়ে কবি যুদ্ধাহত এক সৈনিকের প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তুলেছেন - যার বুকে আছে কিছু প্রশ্ন। সেই প্রশ্নের তাগিদে , বঞ্চিত মানুষের প্রতিনিধি হয়ে , কবি সৈনিক রূপে অবতীর্ণ হয়েছেন। এই বিপ্লবাত্মক মনোভাব কবিতাটিকে আদর্শ ও প্রেরণামূলক করে তুলেছে। কবিতাটির মাধ্যমে মানুষের অধিকার রক্ষার লড়াইয়ের আহ্বান শুনতে পাওয়া যায়। এখানেই কবিতাটি বিশিষ্ট হয়ে উঠেছে।   

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো 

Share
Tweet
Pin
Share
No comments

'' শুধু কবিতার জন্য , আরো দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে লোভ হয় '' - উদ্ধৃতাংশে প্রতিফলিত কবির এই মনোভাবের বিশেষত্ব আলোচনা কর। 



'' শুধু কবিতার জন্য , আরো দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে লোভ হয় '' 

''  শুধু কবিতার জন্য , আরো দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে লোভ হয় '' - এই উক্তিটি কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের '' শুধু কবিতার জন্য '' কবিতার অংশ। '' শুধু কবিতার জন্য '' কবিতাটি কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতা প্রেমের এক কালজয়ী সৃষ্টি। কবিতাটিতে কবি কবিতার প্রতি একজন কবির যে মানসিক প্রেষণা সৃষ্টি হয় - সে সম্পর্কে তিনি আলোচনা করেছেন। একজন কবি তাঁর কবিতার মধ্যে দিয়ে অমর হয়ে থাকেন সাধারণ মানুষের কাছে।  কিন্তু , ভারতীয় প্রেক্ষাপটে , বিশেষ করে বাংলায় সাহিত্যিক ও কবিরা তাদের সাহিত্য সৃষ্টি দ্বারা যে আর্থিক উপার্জন করেন তা অত্যন্ত সামান্য এবং উল্লেখযোগ্য নয়। তাহলে প্রশ্ন হল , এই আর্থিক ক্লেশযুক্ত জীবনে কবিরা তাঁদের প্রেষণা লাভ করেন কোথা থেকে ? ঠিক এই প্রশ্নের উত্তর দিতেই যেন কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় '' শুধু কবিতার জন্য '' কবিতাটি রচনা করেছেন। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

কবিতার একেবারে শুরুতেই কবি বলেছেন - ''শুধু কবিতার জন্য এই জন্ম,'' । এই উক্তির মধ্যে দিয়েই কবিতার মূল বিষয়বস্তু মানসপটে উদ্ভাসিত হয়। কবিতার প্রতি একজন কবির নিরলস শ্রম , প্রগাঢ় আন্তরিক শ্রদ্ধা মিশে থাকলেই একজন কবি বলতে পারেন যে শুধু কবিতার জন্যই তাঁর জন্ম। কবিতার প্রতি এই আন্তরিকতা বিশেষ কোনো স্বার্থে নয় , কিছু পাওয়ার আশায় নয় , শুধুমাত্র কবিতাকে ভালোবেসে কবি এ জীবন অতিবাহিত করতে চান। 

শুধু কবিতার জন্যই যেন কবির প্রতিটি জন্ম , শুধু কবিতার জন্যই যেন কবি অন্য কোনো এক জগৎ থেকে এই ভুবনে এসেছেন। প্রকৃতির সমস্ত বৈচিত্র , সমস্ত রূপ - রস - মাধুর্য , সমস্ত সৌন্দর্য - যেন শুধুমাত্র কবিতার জন্যই একজন কবির কাছে জীবন্ত ও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। প্রকৃতির এই রঙিন বৈচিত্রময় সৌন্দর্যের বর্ণনা একমাত্র কবিতার মাধ্যমেই বাঙময় করে তোলা সম্ভব। শুধুমাত্র কবিতার জন্যই যেন প্রকৃতির সকল সৌন্দর্য। 

নারীর প্রতিটি রূপ এবং তার বৈচিত্র যেন কবিতার মধ্যেই বৈচিত্রময় হয়ে ওঠে। একজন কবি হৃদয়ে একজন নারীর প্রতি  গভীর ভাবাবেগ তার কবিতার মাধ্যমেই প্রকাশিত হয়। তাই কবি বলেছেন - '' শুধু কবিতার জন্য তুমি নারী,'' । নারীর নারীসত্তা যেন কবিতার মাধ্যমেই পূর্ণতা প্রাপ্ত হয়। ঠিক যেমন করে একজন প্রেমিক প্রেমিকার মুখশ্রী অবলোকন করার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকেন - কবির সাথে কবিতার সম্পর্ক যেন সেই নারীকে একঝলক দেখতে পাওয়ার বাঁধভাঙা উচ্ছাস।    

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

সমাজ জীবনের বিভিন্ন ওঠানামা , ঘাতপ্রতিঘাত , যুদ্ধ - রক্তপাত - সমস্ত কিছুর মধ্যে কবি যেন কবিতার অস্তিত্বের সন্ধান পেয়েছেন। কবি বলেছেন - ''  কবিতার জন্য এতো রক্তপাত, '' । বর্ণময় ও বৈচিত্রময় সমাজের ছন্দ ও কবিতার মধ্যে যেন সম্পর্কের সূত্র আবিষ্কার করেছেন কবি। সমাজ বয়ে চলেছে তার অনবরত বিবর্তনের ধারায়। অবিরাম চলতে থাকা এই সমাজের বিবর্তনের ধারা লক্ষ্য করে কবি উপলব্ধি করেছেন - '' শুধু কবিতার জন্য কিছু খেলা,'' । কবির মতে , সব কিছুই যেন চলছে কবিতার নিয়মে ; সবকিছুই যেন কিছু খেলা - শুধুই কবিতার জন্য। 

কবিতার প্রতি কবির মমত্ব এতটাই যে , শুধুমাত্র একটি জন্মের সংক্ষিপ্ত পরিসরে তিনি যেন তাঁর কবিতা প্রেমের সম্পূর্ণ উপভোগ করতে পারেন না। তাই তিনি বলেছেন - '' শুধু কবিতার জন্য, আরো দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে লোভ হয় ''। কবি যেন অনন্তকাল বেঁচে থেকে কবিতা প্রেমে নিজেকে নিমজ্জিত রাখতে চান। 

পরিশেষে বলা যায় , মানব জীবন অমূল্য। এই অমূল্য জীবন আরো অমূল্য হয়ে ওঠে যখন নির্দিষ্ট কোনো কাজ বা বস্তু বা লক্ষ্যের দিকে ব্যক্তিজীবন ধাবিত হয়।  '' শুধু কবিতার জন্য , আরো দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে লোভ হয় '' - এই উক্তির মধ্যে দিয়ে কবিতার প্রতি কবির অফুরন্ত ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে। একটি মানব জন্মে কবিতার প্রতি তাঁর অসমাপ্ত দায়িত্বকে তিনি পরবর্তী জীবনে সঞ্চারিত করতে চান ; বা বলা ভালো , এই এক মানব জনমেই তিনি কবিতার প্রতি তাঁর ভালোবাসার টানকে আরো গভীরভাবে ও দীর্ঘ সময় ধরে উপলব্ধি করতে চান।  

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

Share
Tweet
Pin
Share
2 comments

'' ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর '' কবিতায় মাইকেল মধুসূদন দত্তের বিদ্যাসাগরের প্রতি যে শ্রদ্ধার মনোভাব ব্যক্ত হয়েছে তার পরিচয় দাও। 



'' ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ''কবিতায় বিদ্যাসাগরের প্রতি মাইকেল মধুসূদন দত্তের শ্রদ্ধা জ্ঞাপন :- 

মাইকেল মধুসূদন দত্ত তাঁর '' ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর '' কবিতায় বিদ্যাসাগরের প্রতি অসীম শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন। একদিকে তিনি যেমন বিদ্যাসাগর মহাশয়ের চারিত্রিক গুণগুলি প্রকাশ করেছেন , তেমনই অন্যদিকে ভারতের প্রতি বিদ্যাসাগর মহাশয়ের যে অপার ভালোবাসা এবং অবদান - সে বিষয়েও আলোকপাত করেছেন।  ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর '' সনেট বা চতুর্দশপদী কবিতাটিতে মাইকেল মধুসূদন দত্ত বিদ্যাসাগরকে একই সঙ্গে বিদ্যার সাগর ও করুণার সাগর হিসেবে অভিহিত করেছেন। কবি বলেছেন -
'' বিদ্যার সাগর তুমি বিখ্যাত ভারতে।
করুণার সিন্ধু তুমি, সেই জানে মনে, '' 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো 

ঠিক তারপর কবি বিদ্যাসাগরকে '' দীনের বন্ধু '' বলে সম্বোধন করেছেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের চরিত্রের মহান গুণগুলি এই সনেটের মাধ্যমে কবি উপস্থাপিত করেছেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের সামগ্রিক জীবন আলোচনা করলে আমরা খুব সহজেই জানতে পারি , তাঁর সমুদ্রের ন্যায় তুলনীয় জ্ঞান , দীন - দরিদ্রের প্রতি অপার করুণা , ক্ষমার আধার , অসীম মাতৃস্নেহ - ইত্যাদি বৈশিষ্টগুলি তাঁর চরিত্রকে মহিমান্বিত করেছে এবং এই মহিমার সুফল পেয়েছে আপামর ভারতবাসী। মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখা সনেটটির প্রথম কয়েকটি চরণে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়কে তাঁর প্রকৃতরূপেই প্রকাশ করেছেন কবি। 

পর্বত যেমন সূর্যের আলো গায়ে মেখে গলিত সোনার মত দ্যুতি বিকিরণ করে , আপন সৌন্দর্য দ্বারা মানবজাতিকে মোহাবিষ্ট করে ; তখন যে ব্যক্তি সেই পর্বতের সান্নিধ্যলাভ করে , কেবল সেই জানে - পর্বতের কী অসীম সৌন্দর্য , কী অসীম গাম্ভীর্য , কত গুনের অধিকারী ; ঠিক তেমনভাবেই মাইকেল মধুসূদন দত্ত তাঁর সনেটে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের মহিমাকে তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন - 
হেমাদ্রির হেম-কান্তি অম্লান কিরণে।
কিন্তু ভাগ্য-বলে পেয়ে সে মহা পর্বতে,
যে জন আশ্রয় লয় সুবর্ণ চরণে,
সেই জানে কত গুণ ধরে কত মতে
গিরীশ। কি সেবা তার সে সুখ সদনে !

সনেটটিতে কবি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়কে হিমালয় পর্বতের বিশালতা ও ব্যাপকতার সঙ্গে তুলনা করেছেন। হিমালয় পর্বতকে রূপক অর্থে ব্যবহার করে তিনি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের মহিমান্বিত চরিত্র তুলে ধরেছেন। হিমালয় যেমন তার সবকিছু দিয়ে মানব ও প্রকৃতির সেবা করে - তার নদী জল প্রদান করে , বৃক্ষরাজি সুস্বাদু ফল প্রদান করে , ফুলের তাদের দৈবিক সুগন্ধে প্রকৃতিকে মোহাচ্ছন্ন করে ; বিদ্যাসাগর মহাশয় ঠিক তেমন ভাবেই নিজের সবটুকু দিয়ে মানব সমাজের সেবা করছেন - জ্ঞানের বিকাশ ঘটিয়েছেন , নারীশিক্ষার বিস্তার ঘটিয়েছেন , সামাজিক কুসংস্কার প্রতিরোধে আজীবন আন্দোলন করেছেন , নিজের অর্থে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেছেন। তাই মাইকেল মধুসূদন দত্ত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়কে হিমালয় পর্বতের অপার মহিমার সঙ্গে তুলনা করেছেন।            
   
পরিশেষে বলা যায় , সারা বিশ্বজগতে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয় জ্ঞানের অসীম আধার হিসেবে পরিচিত। কিন্তু , তাঁর চরিত্রের মধ্যে যে অন্যান্য মহামানবের গুণগুলি আছে , তা বিশ্বজগতের কাছে পরিচিত নয়। কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত তাঁর সনেটে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের বহুমুখী মানবিক গুণগুলি অসাধারণ কৃতিত্বের সঙ্গে পাঠকবর্গের সঙ্গে পরিচয় ঘটিয়েছেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয় সারা জীবন ধরেই আর্তের সেবা করেছেন , অসহায়কে সাহায্য করেছেন , দরিদ্রের মুখে অন্ন জুগিয়েছেন। এমনকি , মাইকেল মধুসূদন দত্ত নিজেও চরম দারিদ্রতা ও অসহায়তার মধ্যে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের কৃপা ও সান্নিধ্যলাভ করেছিলেন। তাই তাঁর পক্ষে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের বহুমুখী গুণাবলীর বর্ণনা তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এইভাবে '' ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর '' সনেট বা চতুর্দশপদী কবিতায় মাইকেল মধুসূদন দত্ত বিদ্যাসাগরের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো  
Share
Tweet
Pin
Share
No comments

কপোতাক্ষ নদ চতুর্দশপদী কবিতায় কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের স্বদেশপ্রীতির পরিচয় দাও। 

কপোতাক্ষ নদ চতুর্দশপদী কবিতায় বঙ্গভূমির প্রতি কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের যে গভীর অনুরাগ ফুটে উঠেছে - তার পরিচয় দাও। 



কপোতাক্ষ নদ - কবিতায় কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের স্বদেশপ্রীতির পরিচয় :- 

কপোতাক্ষ নদ কবিতাটি মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখা একটি চতুর্দশপদী কবিতা বা সনেট। কপোতাক্ষ নদ কবিতার মধ্যে দিয়ে কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের স্বদেশপ্রীতির পরিচয় পাওয়া যায়। কপোতাক্ষ নদ কবিতার মধ্যে দিয়ে কবি স্বদেশের প্রতি তাঁর আন্তরিকতার পরিচয় দিয়েছেন। ইউরোপীয় সাহিত্যে প্রতিষ্ঠা লাভের ইচ্ছা নিয়ে তিনি পাশ্চাত্যে পাড়ি দিলেও - নিজ স্বদেশের কথা এবং বঙ্গভূমির প্রতিটি  বিষয়ের জন্য তাঁর হৃদয় সর্বদা ব্যাকুল হয়ে উঠেছে। জননী বঙ্গভূমি যেন পরম মাতৃস্নেহে সর্বদা তাকে আহ্বান করছেন। সেজন্য বঙ্গজননীর তীব্র স্নেহ আহ্বানে তিনি বারবার স্বদেশে ফিরে যেতে চেয়েছেন। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

বস্তুতঃপক্ষে কপোতাক্ষ নদ হল কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের সাগরদাড়ি গ্রামের পাশ দিয়ে প্রবাহিত একটি নদ। এই নদকে ঘিরে কবির শৈশবের বিভিন্ন ঘটনা , বিভিন্ন স্মৃতি - কবির স্মরণে ও মননে সদাজাগ্রত। শৈশবের সেই দিনগুলি , কপোতাক্ষ নদের স্মৃতি - ইত্যাদি কবি মনকে আকুল করে তোলে।  সেই সকল স্মৃতি যেন সর্বদা তাঁকে আহ্বান করে। কবির নিজের নিজের ভাষায় - 
'' সতত , হে নদ , তুমি পড় মোর মনে ! 
সতত তোমার কথা ভাবি এ বিরলে ; '' 
এই ছত্রটির মধ্যে দিয়েই কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত স্বদেশের প্রতি তাঁর তীব্র অনুরাগের পরিচয় দিয়েছেন। কপোতাক্ষ নদের স্মৃতি কবির মনে সদা জাগ্রত এবং একাকী সময়কালে সেই স্মৃতি আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। 

শুধু জাগ্রত অবস্থায় নয় - ঘুমের মধ্যে , স্বপ্নের মধ্যে - সর্বদা কপোতাক্ষ নদ এবং তার সাথে জড়িত স্মৃতি কবিমনকে উতলা করে। মানুষ ঘুমের মধ্যে এবং স্বপ্নের মধ্যে তীব্রভাবে কাঙ্খিত বিষয়কে উপলব্ধি করে , তার পেছনে ছুটতে থাকে এবং তাঁকে যেন কাছে পায়। এ যেন এক মায়ামন্ত্র - যা কবিমনকে এক অনাবিল আনন্দে ভরিয়ে তোলে। কবি বলেছেন - 
'' সতত ( যেমনি লোক নিশার স্বপনে 
শশানে মায়া মন্ত্রধ্বনি ) তব কলকলে 
জুড়াই এ কান আমি ভ্রান্তির ছলনে ! '' 
এই ছত্রটির মাধ্যমে একথা পরিষ্কার যে , কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত মায়াময় স্বপ্নের মধ্যে কপোতাক্ষ নদের ধ্বনি শুনতে পান এবং এভাবেই কবি দেশান্তরে নিজের জন্মভুমিকে উপলব্ধি করেন। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

পাশ্চাত্য দেশে কবি বহু নদনদী প্রত্যক্ষ করেছেন। প্রতিটি ভূমিরূপ , প্রতিটি নদনদী আপন সৌন্দর্যে অপরূপ। সকল সৌন্দর্য দর্শনেই হৃদয় ও মন জুড়িয়ে যায়। কিন্তু শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত কপোতাক্ষ নদ যেভাবে কবি মনকে আকুল করে তোলে তা যেন আর কেউই করতে পারে না। কবি বলেছেন - 
'' বহু দেশে দেখিয়াছি বহু নদ - দলে , 
কিন্তু এ স্নেহের তৃষ্ণা মিটে কার জলে ? '' 
এখানে কবি পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করেছেন - পৃথিবীর সকল নদী আপন সৌন্দর্যে মহিমান্বিত হলেও তার মধ্যে যেন স্নেহের ছোঁয়া নেই। কবির শৈশবের সেই কপোতাক্ষ নদ যেন মাতৃরূপে এবং মাতৃস্নেহ ছায়ায় কবিকে বেঁধে রেখেছেন। 

কবি পাশ্চাত্য দেশ গমনের পর সেখানে যেন মাতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এখানে কবির স্বদেশপ্রেম কপোতাক্ষ নদ-কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। এখানে কবি কপোতাক্ষ নদের জলকে মাতৃদুগ্ধের সঙ্গে তুলনা করেছেন। কবির ভাষায় - '' দুগ্ধ-সোতোরূপী তুমি জন্মভূমি - স্তনে। '' প্রবাসের জীবন যন্ত্রণাময় ও হতাশাক্লিষ্ট। সেই হতাশাময় জীবনে কবির স্মৃতিপটে বারবার উপস্থিত হয়েছে শৈশবের সেই কপোতাক্ষ নদের চিত্র। 

দেশান্তরে গিয়ে কবি শৈশবস্মৃতি যন্ত্রণায় কাতর। জীবনে হাজারো ব্যস্ততার মাঝে কবির মনে এ সংশয়ও এসেছে যে আর কখনো তিনি জন্মভূমিতে ফিরে যেতে পারবেন কি'না ! আর কখনো কপোতাক্ষ নদের কোলে তিনি পৌঁছতে পারবেন কি'না ! কবির নিজের ভাষায় - 
'' আর কি হবে দেখা ? '' 
কিন্তু এর সঙ্গে সঙ্গে তিনি জননী মাতৃভূমির কাছে এ প্রার্থনাও করেছেন যে - কপোতাক্ষ নদ যেন কবিকে স্নেহময় পরশে জড়িয়ে রাখে ; বঙ্গভূমির মানব যেন তাকে বন্ধুভাবে মনে রাখে। 

পরিশেষে বলা যায় যে , '' কপোতাক্ষ নদ '' চতুর্দশপদী কবিতাটি কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের স্বদেশপ্রেমের এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ। এই চতুর্দশপদী কবিতাটিতে কবির স্বদেশপ্রেম কেন্দ্রীভূত হয়েছে কপোতাক্ষ নদকে কেন্দ্র করে। স্বদেশ বঙ্গভূমির থেকে দূরে গিয়েই কবি উপলব্ধি করেছেন - স্বদেশ বঙ্গভূমির মাতৃরূপী মহিমা ও স্নেহস্পর্শের। তাই এই চতুর্দশপদী কবিতাকে স্বদেশপ্রেমের এক উৎকৃষ্ট  নিদর্শন বলা যেতে পারে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো
Share
Tweet
Pin
Share
No comments

প্রতিবাদের নাটক হিসাবে নবান্ন নাটকের আলোচনা কর। 

নবান্ন প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের নাটক - বিশ্লেষণ কর। 

'' নবান্ন একই সঙ্গে দুর্গতি ও প্রতিরোধের নাটক '' - আলোচনা কর। 




প্রতিবাদের নাটক নবান্ন :- 


বাংলা নাট্যজগতে এক প্রবাদপ্রতিম মানুষ হলেন বিজন ভট্টাচার্য। তাঁর লেখা নবান্ন নাটকটিকে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের নাটক হিসাবে বিবেচিত করা হয়। গণনাট্য হিসাবে নবান্ন নাটকটি প্রতিবাদের নতুন ভাষা সংযোজন করেছে। নবান্ন নাটকটি যে শুধুমাত্র বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসকেই সমৃদ্ধ করেছে তা নয় , তা সমকালীন বাঙালিদের মধ্যে অত্যাচারী সাম্রাজ্যবাদী শাসকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের এক নতুন প্রেক্ষাপট রচনা করে। বস্তুতঃ নাটকটি তৎকালীন সময়ে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক আলোড়ন সৃষ্টি করে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

নাটকের শুরুতেই নাটকের ঘটনাস্থল দেখা যায় আমিনপুর গ্রাম। এই আমিনপুর গ্রাম হল মেদিনীপুর জেলার অংশ। এই মেদিনীপুর জেলা ছিল তৎকালীন সময়ে বাংলার জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের পীঠস্থান। নাটকে দেখা যায় , সেই সময়ে বিপদ এসেছিল তিন দিক দিয়ে। 
প্রথমতঃ একদিকে ছিল , সাম্রাজ্যবাদী শাসকের প্রবল অত্যাচার ; গ্রামের পর গ্রাম লুঠ করা ; মানুষের সম্পত্তি ও প্রাণ হরণ করা ; মানুষের সকল অধিকার কেড়ে নেওয়া। 
দ্বিতীয়তঃ আবার অন্যদিকে ছিল - প্রাকৃতিক বিপর্যয়। ভয়ঙ্কর বন্যা , ধ্বংসাত্মক ঝড় গ্রামগুলিকে একেবারে তছনছ করে দিয়েছে আর এর হাত ধরে এসেছে দুর্ভিক্ষ ও মহামারী।  
তৃতীয়তঃ দুর্ভিক্ষ ও মহামারীর সুযোগ নিয়ে একদল স্বার্থান্মেষী ও সুযোগসন্ধানী মানুষ কালোবাজারি করে , পণ্যের অবৈধ মজুদ করে সাধারণ মানুষকে অবাধ শোষণ করে চলেছে। 
এই তিন সমস্যার মুখোমুখি হয়ে গ্রাম বাংলার জীবন পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এই দুর্যোগপূর্ণ , অত্যাচারক্লিষ্ট মানুষের প্রতিবাদের স্বরূপ উপস্থাপন করেছেন নাট্যকার বিজন ভট্টাচার্য তাঁর নবান্ন নাটকে। 

নাটকে দেখা যায় , গ্রামের সমাদ্দার পরিবারকে কেন্দ্র করেই নাটকের যাবতীয় ঘটনাক্রম আবর্তিত হয়েছে। কিন্তু নাটকের বক্তব্য আমিনপুর গ্রাম বা সমাদ্দার পরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি - তা দেশ কালের সীমা অতিক্রম করে শোষিত , দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের জীবন পরিচয় ও প্রতিবাদের ভাষা হয়ে উঠেছিল। নাট্যকার অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সমাদ্দার পরিবারকে সামনে রেখে তৎকালীন সামাজিক , অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চালচিত্রকে উপস্থাপন করেছেন। একদিকে সাম্রাজ্যবাদী শাসকের অত্যাচার ও অন্যদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ - এই দুয়ের যাঁতাকলে পড়েও আমিনপুর গ্রামের মানুষ প্রতিরোধ ও প্রতিবাদের যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা বাংলার জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। 

নাটকের প্রথম তিনটি অঙ্কে দেখা যায় , আমিনপুর গ্রামের অধিবাসীদের জীবন অত্যাচারী শাসকের অত্যাচারে জর্জরিত গ্রামের সচ্ছল পরিবারগুলিও চূড়ান্ত হীন হয়ে পড়েছে। সমাদ্দার পরিবারের মত সচ্ছল পরিবারের অবস্থায় অত্যন্ত সংকটের মধ্যে পড়েছে। আবার দুর্ভিক্ষ , মহামারী ,কালোবাজারি - ইত্যাদি বাংলার গ্রামগুলিকে শ্মশান করে তুলেছে। গ্রাম ছেড়ে মানুষ শহরে চলে আসছে একমুঠো অন্নের আশায়। কালিধনের মত কিছু অসাধু কিছু ব্যবসায়ী কালোবাজারির সঙ্গে সঙ্গে নারী ব্যবসাও শুরু করেছে। এই সময় আবার একদল চিত্র সাংবাদিক সেই দুর্গতির ছবি তুলে ধরে '' বাংলার ম্যাডোনা '' নাম দিয়ে ছাপতে চায়। সবমিলিয়ে এক অসহায় অবস্থার চিত্র তুলে ধরেছেন নাট্যকার নাটকের প্রথম তিনটি অঙ্কে। 

কিন্তু , চতুর্থ অঙ্ক থেকেই প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের চিত্র তুলে ধরেছেন নাট্যকার। অসীম নির্যাতন , মহামারীর যন্ত্রনা , কালোবাজারির প্রকোপ - সমস্ত প্রতিকূল অবস্থা থেকে মানুষের উত্তরণ ঘটে ; মানুষ গ্রামে ফিরে আসে। তাঁরা জোট বাঁধে , নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখে। মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করে সম্মিলিত প্রতিরোধ ছাড়া এই অসহনীয় অবস্থা থেকে মুক্তিলাভ সম্ভব নয়। নিরঞ্জন - প্রমুখের নেতৃত্বে গড়ে ওঠে প্রতিরোধ। প্রতিরোধের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে নতুন করে ধান চাষের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যুধিষ্ঠিরের শেখানো বুলির পরিবর্তে নিজ অভিজ্ঞতা উপর বিশ্বাস রেখে নিজেরাই আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে তাঁরা নিজেরাই নিজেদের ভবিষ্যত কর্মপন্থা স্থির করে। '' ধর্মগোলা '' বা ধানের গোলা তৈরী করে তাতে ধান জমা করে নবান্ন উৎসবের প্রস্তুতি নেয়। 

কিন্তু তার সঙ্গে সঙ্গে আমিনপুর গ্রামের মানুষেরা হঠাৎ করে তৈরী হওয়া প্রতিকূল পরিস্থিতির কথাও ভোলেনা। তারা বুঝতে পারে , শুধু ফসল ফলালেই সমস্যার সমাধান হবেনা। এর জন্য চাই সংঘবদ্ধতা ও ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ। সম্মিলিত প্রতিরোধের মাধ্যমেই ভবিষ্যত সমস্যার সমাধান সম্ভব। মন্বন্তরের বিপর্যয় দিয়ে নাটকের শুরু হলেও নাটকের শেষে নবজীবনের মহামন্ত্রের জয়গান শোনা যায়। বিপর্যস্ত মানুষ গ্রামে ফিরে এসে নতুনকরে সংঘবদ্ধভাবে বাঁচার ও প্রতিরোধের শপথ নিয়েছেন। মন্বন্তরের , শোষণ - ইত্যাদি চরম প্রতিকূল পরিস্থির মধ্যেও মানুষ নতুন ধান উৎপাদন করে নবান্ন উৎসবের আয়োজন করেছে। এইভাবে অসহায়তা , প্রতিকূলতা , দুর্ভিক্ষ ও সমস্যার মধ্যে দিয়ে নাটকের শুরু হলেও পরিণতিতে নাটকটি হয়ে উঠেছে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের নাটক। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো                            

Share
Tweet
Pin
Share
No comments

'' জননী জন্মভূমিশ্চ '' কবিতার বিষয়বস্তু। 

বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের '' জননী জন্মভূমিশ্চ '' কবিতার বিষয়বস্তু আলোচনা। 

'' জননী জন্মভূমিশ্চ '' কবিতায় কবির জীবন দর্শন। 




জননী জন্মভূমিশ্চ কবিতার বিষয়বস্তু :- 


জননী জন্মভূমিশ্চ কবিতাটি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের স্বদেশ , মানবতা ও জীবন দর্শনমূলক কবিতা।  কবিতার প্রতিটি অংশে ফুটে উঠেছে কবির একান্ত অসহায়তা। এখানে কবি সমাজের প্রতিটি সংবেদনশীল মানুষের প্রতিনিধিত্ব করছেন। কিছুটা হতাশা , কিছুটা অসহায়তা , কিছুটা মানবতাবোধ - এই তিনের সংমিশ্রণে কবিতাটি পাঠকবর্গের নিকট এক সংবেদনশীল আবেদন রেখেছে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

কবিতার শুরুতেই , প্রথম অংশে , কবিতা শুরু হয়েছে মৃত্যুর পদধ্বনির মধ্যে দিয়ে। প্রিয় মানুষের মৃত্যু মানুষের অসহায় অবস্থাকে চূড়ান্তভাবে প্রকট করে। তাই মৃত্যু ঘটলেও তা সকলকে ম্লানমুখে মেনে নিতে হয়। চলে যাওয়া মানুষটির জন্য বেদনাবোধ তৈরি হলেও দৈনন্দিনের ব্যস্ততা , দৈনন্দিন জীবনযাত্রার দাবীটা এতটা প্রবল থাকে যে সেই বেদনাবোধ যেন ধীরে ধীরে মুছে যেতে থাকে। বাস্তবের প্রবল দাবি মানসিক চাহিদাগুলির পথে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়। 

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে তিনি মানুষের দিকে তাকিয়েছেন। বাস্তব - বর্তমান জীবনে মানুষ আত্মকেন্দ্রিক , স্বার্থকেন্দ্রিক হতে বাধ্য হয়েছেন। চূড়ান্ত আত্মকেন্দ্রিকতা মানুষের মধ্যে আপোষের মনোভাব জাগ্রত  করেছে। মানুষ যেন একেবারে পাথর হয়ে গেছে। কবির ভাষায় , '' মানুষ নামের এক রকম পাথর , '' ।পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন ঘটনা , ঘাত-প্রতিঘাত , হিংসাত্মক আচরণ , বৈষম্য , পরাধীনতা ইত্যাদি কোনো  কিছুতেই মানুষ যেন আজ বিচলিত হয় না। নিজের স্বার্থ বাদ দিলে কোনো কিছুই যেন তাকে প্রভাবিত করতে পারে না। 

তাই তৃতীয় অনুচ্ছেদে কবি আত্মদর্শন করতে চেয়েছেন। কবির ভাষায় -
'' আয়নার সামনে কেউ দাঁড়ালে 
শুধু আয়নাটাই কথা বলে। 
কী যে বলে , তা জানার মানুষ 
আজ আর আমি খুঁজে পাই না। ''
নিজের দিকে দৃষ্টি দিয়ে কবি উপলব্ধি করেছেন - মানুষ আজ নিজের সাথে পরিচিত নয়। নিজের চাহিদা - প্রত্যাশা সবকিছুই যেন বাস্তবের প্রবল দাবীতে কোথায় যেন উবে গেছে। নিজের কথা শোনার ক্ষমতা আর মানুষের মধ্যে অবশিষ্ট নেই। 

চতুর্থ অনুচ্ছেদে তিনি স্বদেশের কথা বলেছেন। মানুষের মধ্যে স্বাদেশিকতা আজ বিলুপ্ত। মানুষ আজ নিজের চারপাশের গন্ডি ছাড়িয়ে সমাজের বৃহত্তর অংশের খবর রাখেনা। রাষ্ট্রের অচল ব্যবস্থাকে তিনি কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকা মানুষের সঙ্গে তুলনা করেছেন। 

কিন্তু কবি স্মৃতির দিকে তাকিয়ে উজ্জ্বল দিনের সন্ধান পান। যেখানে এক সময় পাখি ডাকতো , ফুল ফুটত। ছোটবেলার অসীম আকাঙ্ক্ষা , ভবিষ্যৎ জীবনের পরিকল্পনা - জীবন বসন্তের দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করে। কিন্তু যৌবনে পা দিয়েই সে উন্মাদনাপূর্ণ ও আশা-আকাঙ্খায় পরিপূর্ণ মানসিকতা বাস্তবের প্রবল চাপে কোথায় যেন হারিয়ে যায়। শৈশব ও কৈশোরের জগৎজোড়া স্বপ্ন বিলুপ্ত হয়। কবির  ভাষায় - 
'' তারপর বাঘের মত এক দুপুর এসে আমার মায়ের 
পাড়া জ্বালানো ছোট ছেলেটাকে  ......................
তার কোন চিহ্নই আর পাওয়া গেল না , '' 
কিন্তু জীবনের শেষ প্রান্তে এসে মানুষের প্রতিনিধিস্বরূপ কবি আবার সেই স্বপ্নে পরিপূর্ণ , উন্মাদনাপূর্ণ   দিন গুলোকে মনে করার চেষ্টা করেন। পারিপার্শ্বিক অবস্থা অনুকূল হলেও শৈশব ও কৈশোরের সেই উন্মাদনাকে আর ফিরে পাওয়া যায় না। জীবন সায়াহ্নে এসে মানুষ উপলব্ধি করে আগত মৃত্যু তার সকল উন্মাদনার বসন্তের অবসান ঘটায়। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো
Share
Tweet
Pin
Share
No comments

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সনেটের ( চতুর্দশপদী কবিতা ) বিষয়বস্তু

মাইকেল মধুসূদন দত্তের ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সনেটের ( চতুর্দশপদী কবিতা ) বিষয়বস্তু আলোচনা কর।  



ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সনেটের ( চতুর্দশপদী কবিতা ) বিষয়বস্তু :- 

'' ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর '' সনেট বা চতুর্দশপদী কবিতাটিতে মাইকেল মধুসূদন দত্ত বিদ্যাসাগরকে একই সঙ্গে বিদ্যার সাগর ও করুণার সাগর হিসেবে অভিহিত করেছেন। কবি বলেছেন -
'' বিদ্যার সাগর তুমি বিখ্যাত ভারতে।
করুণার সিন্ধু তুমি, সেই জানে মনে, '' 
ঠিক তারপর কবি বিদ্যাসাগরকে '' দীনের বন্ধু '' বলে সম্বোধন করেছেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের চরিত্রের মহান গুণগুলি এই সনেটের মাধ্যমে কবি উপস্থাপিত করেছেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের সামগ্রিক জীবন আলোচনা করলে আমরা খুব সহজেই জানতে পারি , তাঁর সমুদ্রের ন্যায় তুলনীয় জ্ঞান , দীন - দরিদ্রের প্রতি অপার করুণা , ক্ষমার আধার , অসীম মাতৃস্নেহ - ইত্যাদি বৈশিষ্টগুলি তাঁর চরিত্রকে মহিমান্বিত করেছে এবং এই মহিমার সুফল পেয়েছে আপামর ভারতবাসী। মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখা সনেটটির প্রথম কয়েকটি চরণে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়কে তাঁর প্রকৃতরূপেই প্রকাশ করেছেন কবি। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

পর্বত যেমন সূর্যের আলো গায়ে মেখে গলিত সোনার মত দ্যুতি বিকিরণ করে , আপন সৌন্দর্য দ্বারা মানবজাতিকে মোহাবিষ্ট করে ; তখন যে ব্যক্তি সেই পর্বতের সান্নিধ্যলাভ করে , কেবল সেই জানে - পর্বতের কী অসীম সৌন্দর্য , কী অসীম গাম্ভীর্য , কত গুনের অধিকারী ; ঠিক তেমনভাবেই মাইকেল মধুসূদন দত্ত তাঁর সনেটে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের মহিমাকে তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন - 
হেমাদ্রির হেম-কান্তি অম্লান কিরণে।
কিন্তু ভাগ্য-বলে পেয়ে সে মহা পর্বতে,
যে জন আশ্রয় লয় সুবর্ণ চরণে,
সেই জানে কত গুণ ধরে কত মতে
গিরীশ। কি সেবা তার সে সুখ সদনে !

সনেটটিতে কবি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়কে হিমালয় পর্বতের বিশালতা ও ব্যাপকতার সঙ্গে তুলনা করেছেন। হিমালয় পর্বতকে রূপক অর্থে ব্যবহার করে তিনি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের মহিমান্বিত চরিত্র তুলে ধরেছেন। হিমালয় যেমন তার সবকিছু দিয়ে মানব ও প্রকৃতির সেবা করে - তার নদী জল প্রদান করে , বৃক্ষরাজি সুস্বাদু ফল প্রদান করে , ফুলের তাদের দৈবিক সুগন্ধে প্রকৃতিকে মোহাচ্ছন্ন করে ; বিদ্যাসাগর মহাশয় ঠিক তেমন ভাবেই নিজের সবটুকু দিয়ে মানব সমাজের সেবা করছেন - জ্ঞানের বিকাশ ঘটিয়েছেন , নারীশিক্ষার বিস্তার ঘটিয়েছেন , সামাজিক কুসংস্কার প্রতিরোধে আজীবন আন্দোলন করেছেন , নিজের অর্থে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেছেন। তাই মাইকেল মধুসূদন দত্ত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়কে হিমালয় পর্বতের অপার মহিমার সঙ্গে তুলনা করেছেন।            
   
পরিশেষে বলা যায় , সারা বিশ্বজগতে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয় জ্ঞানের অসীম আধার হিসেবে পরিচিত। কিন্তু , তাঁর চরিত্রের মধ্যে যে অন্যান্য মহামানবের গুণগুলি আছে , তা বিশ্বজগতের কাছে পরিচিত নয়। কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত তাঁর সনেটে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের বহুমুখী মানবিক গুণগুলি অসাধারণ কৃতিত্বের সঙ্গে পাঠকবর্গের সঙ্গে পরিচয় ঘটিয়েছেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয় সারা জীবন ধরেই আর্তের সেবা করেছেন , অসহায়কে সাহায্য করেছেন , দরিদ্রের মুখে অন্ন জুগিয়েছেন। এমনকি , মাইকেল মধুসূদন দত্ত নিজেও চরম দারিদ্রতা ও অসহায়তার মধ্যে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের কৃপা ও সান্নিধ্যলাভ করেছিলেন। তাই তাঁর পক্ষে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের বহুমুখী গুণাবলীর বর্ণনা তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে।   

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো
   
Share
Tweet
Pin
Share
No comments

নীলদর্পণ নাটকের অপ্রধান চরিত্রগুলি আলোচনা কর। 

দীনবন্ধু মিত্রের নীলদর্পণ নাটকের অপ্রধান চরিত্রগুলির পরিচয় দাও। 




নীলদর্পণ নাটকের অপ্রধান চরিত্রের বর্ণনা :- 


দীনবন্ধু মিত্রের নীলদর্পণ নাটকটি বাংলা সাহিত্য ও সংগ্রামশীলতার ইতিহাসে একটি অমর সৃষ্টি। যেকোনো ধরণের নাটকের ক্ষেত্রে প্রধান চরিত্রগুলি পূর্ণতা লাভ করে অপ্রধান চরিত্রগুলির যথাযথ উপস্থাপনের মাধ্যমে। নাটকের ঘটনাক্রম , ঘটনার উপস্থাপন , চরিত্রের বিশিষ্টতা নির্মাণ , ক্লাইম্যাক্স - ইত্যাদি সর্বক্ষেত্রে অপ্রধান চরিত্রগুলি অপরিহার্য হয়ে পরে। দীনবন্ধু মিত্রের নীলদর্পন নাটকে অপ্রধান চরিত্রগুলি নাটকের ধারাবাহিকতা রক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রসঙ্গতঃ বলা যায় , দীনবন্ধু মিত্রের নীলদর্পণ নাটকে চরিত্রের বহুলতা লক্ষ্য করা যায়। নীচে নীলদর্পণ নাটকের অপ্রধান চরিত্রগুলির বর্ণনা ও নিশিষ্টতা উল্লেখ করা হল। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

গোলক বসু :- 
স্বরপুর গ্রামের বসু পরিবারের কর্তা হলেন গোলক বসু। তাঁর চরিত্রটি অত্যন্ত সহজ , সরল , ধর্মনিষ্ঠ ও প্রীতিপরায়ণ হিসাবে উপস্থিত করেছেন নাট্যকার দীনবন্ধু মিত্র। বর্তমানে তিনি সাংসারিক দায় - দায়িত্ব থেকে অবসর নিয়েছেন এবং সকল দায়িত্ব বর্তেছে পুত্র নবীনমাধবের উপর। গোলক বসু পুত্র নবীনমাধবের জন্য গর্বিত এক পিতা। নিজের গ্রামের প্রতিটি ধূলিকণার প্রতি অগাধ ভালোবাসা থাকলেও তাঁর চরিত্রের মধ্যে সংগ্রামী মানসিকতার অভাব চোখে পড়ে। এই ক্ষেত্রে তিনি একজন দুর্বলচিত্ত মানুষ। মিথ্যা মামলায় আদালতে নিয়ে যাওয়া হলে তিনি যেকোনো উপায়ে মুক্তি পেতে চেয়েছিলেন এবং নীলকর সাহেবের প্রতি আনুগত্যের প্রতিজ্ঞা করেন। গোলক বসু চরিত্রটির মাধ্যমে নাট্যকার উপস্থাপন করেছেন সেই সকল মানুষদের যেসকল মানুষেরা জীবনপ্রেমী হলেও অত্যাচারীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন। 

বিন্দুমাধব :- 
নাটকে বিন্দুমাধব চরিত্রটি ম্রিয়মান। পুরো নাটকে তার ভূমিকা নগন্য। তাই চরিত্রটি তেমন উজ্জ্বল নয়। কোনো দৃশ্যেই তাঁর কোনো সক্রিয় ভূমিকা নেই। পিতার মৃত্যুর পর তাঁর সংলাপগুলি অনেক বেশি কৃত্রিম বলে মনে হয়। তবে তাঁর চরিত্রের মধ্যে পিতার প্রতি অগাধ ভক্তি , দাদাকে পিতৃজ্ঞানে শ্রদ্ধা , মায়ের প্রতি নিদারুন স্নেহ , স্ত্রী সরলতার প্রতি ভালোবাসা - প্রকাশ পেয়েছে। বিন্দুমাধব ধীর , স্থির ও সংযত ; তবে কর্মে তৎপর। পিতার বন্দীত্বের সংবাদ পেয়েও বিন্দুমাধব বিচলিত হয়নি এবং ধীর , স্থিরভাবে পিতাকে মুক্ত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। বিন্দুমাধবের চরিত্রের মধ্যে দিয়ে বুদ্ধিমত্তা ও হৃদয়বৃত্তির এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটেছে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

সাবিত্রী :- 
নীলদর্পণ নাটকে সাবিত্রী চরিত্রটি বিশেষভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। তিনি জমিদার গৃহিনী। স্বামীর প্রতি অবিচল শ্রদ্ধা , পুত্রের প্রতি গভীর স্নেহ , পুত্রবধূদের প্রতি উদার স্নেহ - সাবিত্রীর চরিত্রকে মহিমান্বিত করেছে। জমিদার গৃহিনী হলেও সকল বিষয়ে তাঁর সজাগ দৃষ্টি। এছাড়াও , পরিবারের বাইরেও প্রতিবেশীদের প্রতিও তাঁর ভালোবাসা পরায়ণতা লক্ষ্য করা যায় এবং খবর - ঘটনা - ইত্যাদির প্রতিও তাঁর আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়। ঈশ্বরের প্রতি তাঁর রয়েছে অগাধ বিশ্বাস। সাবিত্রী চরিত্রটির মধ্যে দিয়ে নাট্যকার ট্রাজিক আবেদন উপস্থাপন করেছেন। 

সৈরিন্ধ্রি :- 
সৈরিন্ধ্রি হলেন নবীনমাধবের স্ত্রী ও বসু পরিবারের বড়বৌ। শ্বশুর , শাশুড়ি , স্বামী - সকলের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ; দেবর ও জা - এর প্রতি অপত্য স্নেহ , দাসদাসী , প্রতিবেশী - সকলের প্রতি তাঁর সহৃদয় আচরণ - ইত্যাদির ফলে তাঁর চরিত্রটি বিশিষ্টতা লাভ করেছে। তবে সৈরিন্ধ্রির জীবন যন্ত্রনা ও বেদনায় ভরা। যেমন শিশুকালে পিতৃহীন হয়েছে সে ; আবার শ্বশুর বাড়িতে এসে যখন পিতৃগৃহের কষ্ট যখন সবে কিছুটা লাঘব হয়েছে - তখনি নীলকর সাহেবদের করাল গ্রাস বিপর্যস্ত করে দিয়েছে তার পরিবারকে। সবকিছু পেয়েও সবকিছু হারানোর বেদনা সৈরিন্ধ্রি চরিত্রটির মধ্যে দিয়ে স্পর্শকাতরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন নাট্যকার। 

সরলতা :- 
সরলতা বসু পরিবারের ছোটবৌ তথা বিন্দুমাধবের স্ত্রী। নামের সঙ্গে তাঁর চরিত্রের বিশেষ মিল পাওয়া যায়। সারল্যই তাঁর চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট। আপন চারিত্রিক মাধুর্য্যে , সেবা ও কর্তব্য পালনের মধ্যে দিয়ে সে সবার স্নেহের পাত্রী হয়ে উঠেছে। তাঁর সারল্যের জন্য শাশুড়ি আদর করে তাকে পাগলী বলে সম্মোধন করেন। সে কিছুটা লেখাপড়া জানে এবং অবকাশ সময়ে সে শাশুড়িকে গল্পের বই পাঠ করে শোনায় ও বড় জা - কে বেতাল পাঠ করে শোনায়। সরলতা প্রাণ শক্তিতে উচ্ছল। কিন্তু শ্বশুর জেলে যাওয়ায় সে ভেঙে পড়ে। আবার সাবিত্রী যখন শোকে উন্মাদ হয় তখন সরলতার সেবা তার চরিত্রটিকে মহিমান্বিত করে তোলে।

গোপীনাথ :- 
গোপীনাথ দাস নীলকরের দেওয়ান। দুস্কর্মের সমস্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আজ সে নীলকরদের তোষামোদকারীতে পরিণত হয়েছে। নীলকরদের অত্যাচারকে তাদের সহযোগীদের চোখ দিয়ে দেখানো হয়েছে চরিত্রটির মাধ্যমে। আবার নীলকররা তাদের নিজেদের অনুগত কর্মচারীদের প্রতিও যে অমানুষিক অত্যাচার চালাতো - তা ফুটে উঠেছে গোপীনাথ চরিত্রটির মাধ্যমে ; গোপীনাথের প্রতি উড সাহেবের ব্যবহার তার প্রমান দেয়। অত্যাচারী নীলকরদের আরো বেশি করে অত্যাচারী হয়ে উঠতে সাহায্য করেছে গোপীনাথ। তবে তা স্বত্তেও তার সমস্ত সততার মৃত্যু ঘটেনি। সাহেবদের অত্যাচারের মাত্রা যখন সমস্ত সীমা ছাড়িয়ে গেছে তখন গোপীনাথের মধ্যে আক্ষেপ দেখা যায়। যেমন , গোলক বসুর মৃত্যুতে গোপীনাথের যথেষ্ট আক্ষেপ ছিল। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

সাধুচরণ :- 
ঘোষ পরিবারের কর্তা সাধুচরণ ঘোষ এক সাধারণ রায়ত। নাটকের সূচনাতে দেখা যায় সাধুচরণ একজন বিজ্ঞ ও দূরদর্শী মানুষ। তাঁর সংলাপের মধ্যে ফুটে উঠেছে বর্তমানের যথাযথ বিশ্লেষণ অন্যদিকে নীলকরদের ভবিষ্যত সম্পর্কেও তাঁর মতামত উল্লেখযোগ্য। সাধুচরণ শিক্ষিত বলে সাধারণ কৃষকদের মত সে অল্পেই ভেঙে পড়েনা। তবে সে স্পষ্টবক্তা হলেও প্রতিবাদী চরিত্র নয়। চরিত্রটি পারিপার্শ্বিক সম্পর্কে সচেতন এবং আত্মকেন্দ্রিক নয়। 

তোরাপ :- 
তোরাপ একজন সাধারণ চাষী। নবীনমাধবের দ্বারা উপকৃত হওয়ায় সে তাঁর প্রতি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। বলিষ্ট , সাহসী ও ধর্ম বুদ্ধি পরায়ণ চরিত্রের অধিকারী করে নাট্যকার তাঁকে নাটকে উপস্থিত করেছেন। সে নবীনমাধবের পিতা গোলক বসুর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষী দিতে অস্বীকার করে - এখানেই তাঁর সাহসিকতা ও ধর্ম বুদ্ধির পরিচয় পাওয়া যায়। সত্যের পথ কঠিন - তা সে জানে ; কিন্তু সে সত্যের পথ থেকে সরে আসতে চায় না। নবীনমাধবের মতই সে নীলকরদের প্রাণে না মেরে তাদের বিবেক বুদ্ধি জাগ্রত করতে চায় - এইখানেই চরিত্রটির বিশিষ্টতা। 

আদুরী :- 
বসু পরিবারের বিধবা পরিচারিকা আদুরী। কিন্তু মনিব পরিবারের কারো সাথেই তার প্রভু - ভৃত্যের সম্পর্ক নেই। আদুরীর আন্তরিকতায় সকল বয়সের মানুষের সঙ্গে তার আত্মার আত্মীয়তা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পরিহাস প্রিয়তা তার চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট। বসু পরিবারের চরম দুর্দশার দিনে সে ভেঙে পড়েছে ; তাদের কথা ভেবে ব্যাকুল হয়েছে। এ থেকেই বোঝা যায় মনিব পরিবারের সদস্যদের সে কতটা আপন করে নিয়েছিল। 

রেবতী :- 
রেবতী হল সাধুচরণের স্ত্রী। সে একজন অশিক্ষিত গ্রাম্য রমণী। তবে নাটকে রেবতী চরিত্রটি মাতৃত্বের অসীম মহিমা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কন্যা ক্ষেত্রমণি এমনকি দেবর রাইচরণের প্রতিও তাঁর আচরণে মাতৃত্বের সকল রূপগুলি ফুটে উঠেছে। সে কর্তব্যপরায়ণা , স্নেহশীলা ও বাস্তববোধসম্পন্না। পারিপার্শ্বিক অবস্থা সম্পর্কে তাঁর স্পষ্ট ধারণা রয়েছে। নাট্যকার রেবতী চরিত্রের মধ্যে দিয়ে এক গ্রাম্য রমণীর স্নেহশীলতা তুলে ধরেছেন। 

ক্ষেত্রমণি :- 
সাধুচরণ ও রেবতীর কন্যা ক্ষেত্রমণি। সে সহজ সরল। তাঁর আত্মার আত্মীয় হল বসু পরিবারের ছোটবৌ সমবয়সী সরলতা। নারীর সতীত্ব রক্ষায় ক্ষেত্রমণির সংগ্রাম চোখে পড়ার মত। নবীনমাধব ক্ষেত্রমণিকে কামুক সাহেবের হাত থেকে উদ্ধার করলেও ক্ষেত্রমণি পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়। গর্ভে থাকা সন্তানের প্রতি তাঁর আবেগ নাট্যকার নিপুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। 

উডসাহেব ও রোগসাহেব :- 
দুজনেই নীলকর সাহেব - অত্যাচারী ও মানবতাহীন। দুজনেই শিক্ষিত এবং ইংরেজি ও ভাঙা বাংলায় কথা বলেন। সম্ভবতঃ অত্যাচারী লারমুর সাহেবের অনুকরণে নাট্যকার উডসাহেবের চরিত্রটি নির্মাণ করছিলেন। অর্থের প্রতি অসীম লোভের কারণে তারা অত্যাচারী হয়ে উঠেছেন। অত্যাচার , লুন্ঠন , মিথ্যা মামলা সাজানো , নিজ স্বার্থে প্রশাসনকে ব্যবহার করা - সকল নেতিবাচক বৈশিষ্টের সমন্বয় ঘটেছে চরিত্র দুটির মধ্যে।   

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো            

Share
Tweet
Pin
Share
No comments

'' শুধু কবিতার জন্য '' - কবিতাটির নামকরণের স্বার্থকতা আলোচনা কর। 

'' শুধু কবিতার জন্য '' - কবিতার নামকরণ কতটা যুক্তিযুক্ত ও প্রাসঙ্গিক - তা আলোচনা কর। 




'' শুধু কবিতার জন্য '' কবিতার নামকরণের তাৎপর্য :-    


'' শুধু কবিতার জন্য '' কবিতাটি কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতা প্রেমের এক কালজয়ী সৃষ্টি। কবিতাটিতে কবি কবিতার প্রতি একজন কবির যে মানসিক প্রেষণা সৃষ্টি হয় - সে সম্পর্কে তিনি আলোচনা করেছেন। একজন কবি তাঁর কবিতার মধ্যে দিয়ে অমর হয়ে থাকেন সাধারণ মানুষের কাছে।  কিন্তু , ভারতীয় প্রেক্ষাপটে , বিশেষ করে বাংলায় সাহিত্যিক ও কবিরা তাদের সাহিত্য সৃষ্টি দ্বারা যে আর্থিক উপার্জন করেন তা অত্যন্ত সামান্য এবং উল্লেখযোগ্য নয়। তাহলে প্রশ্ন হল , এই আর্থিক ক্লেশযুক্ত জীবনে কবিরা তাঁদের প্রেষণা লাভ করেন কোথা থেকে ? ঠিক এই প্রশ্নের উত্তর দিতেই যেন কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় '' শুধু কবিতার জন্য '' কবিতাটি রচনা করেছেন। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

কবিতার একেবারে শুরুতেই কবি বলেছেন - ''শুধু কবিতার জন্য এই জন্ম,'' । এই উক্তির মধ্যে দিয়েই কবিতার মূল বিষয়বস্তু মানসপটে উদ্ভাসিত হয়। কবিতার প্রতি একজন কবির নিরলস শ্রম , প্রগাঢ় আন্তরিক শ্রদ্ধা মিশে থাকলেই একজন কবি বলতে পারেন যে শুধু কবিতার জন্যই তাঁর জন্ম। কবিতার প্রতি এই আন্তরিকতা বিশেষ কোনো স্বার্থে নয় , কিছু পাওয়ার আশায় নয় , শুধুমাত্র কবিতাকে ভালোবেসে কবি এ জীবন অতিবাহিত করতে চান। 

শুধু কবিতার জন্যই যেন কবির প্রতিটি জন্ম , শুধু কবিতার জন্যই যেন কবি অন্য কোনো এক জগৎ থেকে এই ভুবনে এসেছেন। প্রকৃতির সমস্ত বৈচিত্র , সমস্ত রূপ - রস - মাধুর্য , সমস্ত সৌন্দর্য - যেন শুধুমাত্র কবিতার জন্যই একজন কবির কাছে জীবন্ত ও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। প্রকৃতির এই রঙিন বৈচিত্রময় সৌন্দর্যের বর্ণনা একমাত্র কবিতার মাধ্যমেই বাঙময় করে তোলা সম্ভব। শুধুমাত্র কবিতার জন্যই যেন প্রকৃতির সকল সৌন্দর্য। 

নারীর প্রতিটি রূপ এবং তার বৈচিত্র যেন কবিতার মধ্যেই বৈচিত্রময় হয়ে ওঠে। একজন কবি হৃদয়ে একজন নারীর প্রতি  গভীর ভাবাবেগ তার কবিতার মাধ্যমেই প্রকাশিত হয়। তাই কবি বলেছেন - '' শুধু কবিতার জন্য তুমি নারী,'' । নারীর নারীসত্তা যেন কবিতার মাধ্যমেই পূর্ণতা প্রাপ্ত হয়। ঠিক যেমন করে একজন প্রেমিক প্রেমিকার মুখশ্রী অবলোকন করার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকেন - কবির সাথে কবিতার সম্পর্ক যেন সেই নারীকে একঝলক দেখতে পাওয়ার বাঁধভাঙা উচ্ছাস।    

সমাজ জীবনের বিভিন্ন ওঠানামা , ঘাতপ্রতিঘাত , যুদ্ধ - রক্তপাত - সমস্ত কিছুর মধ্যে কবি যেন কবিতার অস্তিত্বের সন্ধান পেয়েছেন। কবি বলেছেন - ''  কবিতার জন্য এতো রক্তপাত, '' । বর্ণময় ও বৈচিত্রময় সমাজের ছন্দ ও কবিতার মধ্যে যেন সম্পর্কের সূত্র আবিষ্কার করেছেন কবি। সমাজ বয়ে চলেছে তার অনবরত বিবর্তনের ধারায়। অবিরাম চলতে থাকা এই সমাজের বিবর্তনের ধারা লক্ষ্য করে কবি উপলব্ধি করেছেন - '' শুধু কবিতার জন্য কিছু খেলা,'' । কবির মতে , সব কিছুই যেন চলছে কবিতার নিয়মে ; সবকিছুই যেন কিছু খেলা - শুধুই কবিতার জন্য। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

কবিতার প্রতি কবির মমত্ব এতটাই যে , শুধুমাত্র একটি জন্মের সংক্ষিপ্ত পরিসরে তিনি যেন তাঁর কবিতা প্রেমের সম্পূর্ণ উপভোগ করতে পারেন না। তাই তিনি বলেছেন - '' শুধু কবিতার জন্য, আরো দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে লোভ হয় ''। কবি যেন অনন্তকাল বেঁচে থেকে কবিতা প্রেমে নিজেকে নিমজ্জিত রাখতে চান। 

পরিশেষে বলা যায় , নামকরণ প্রতিটি সাহিত্য সৃষ্টির একটি তাৎপর্যপূর্ণ অংশ। নামকরণের মধ্যে দিয়েই প্রতিটি সাহিত্যকীর্তির অন্তর্নিহিত মূলভাবনা ও মূল্যবোধ প্রকাশিত হয়। '' শুধু কবিতার জন্য '' কবিতার নামকরণে কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় গভীরভাবে তার প্রকাশ ঘটিয়েছেন। সুতরাং , কবিতাটির নামকরণ তাৎপর্যপূর্ণ ও কবিতার বিষয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো        
     
Share
Tweet
Pin
Share
No comments

' বঙ্গভাষা ' কবিতায় বাংলা ভাষার প্রতি কবি মধুসূদন দত্তের যে ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে তার পরিচয় দাও। 




বঙ্গভাষা কবিতায় বাংলা ভাষার প্রতি মাইকেল মধুসূদন দত্তর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার প্রকাশ :- 

 
প্রেক্ষাপট :- 

মাইকেল মধুসূদন দত্ত বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে একজন যুগান্তকারী কবি। তাঁর মাধ্যমেই বাংলা সাহিত্যে পাশ্চাত্য আধুনিকতা প্রবেশ করে। পাশ্চাত্যের বহু সাহিত্য রীতির প্রবেশ ঘটে তাঁর মাধ্যমেই। 

মধুসূদন দত্তের জীবন বৈচিত্রময়। পাশ্চাত্য সাহিত্য , দর্শন - ইত্যাদির প্রতি প্রভাবিত হয়ে তিনি ইংরেজি ভাষায় সাহিত্য রচনায় প্রয়াস করেছিলেন। ইংরেজি ভাষাই হল সাহিত্যের ভাব প্রকাশের উপযুক্ত ভাষা -  এমনটা তার ধারণা হয়েছিল। ইংরেজি সাহিত্যে তাঁর রচিত একটি উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ হল -  '' The Visions of the Past . '' 

কিন্তু এরপর কবি মধুসূদন অনুধাবন করেন প্রতিটি সাহিত্যিক , কবি নিজের ভাষাতে সাহিত্যকে যেভাবে সমৃদ্ধ করতে পারেন , যেভাবে নিজের বক্তব্যকে সৃজনশীলভাবে তুলে ধরতে পারেন - অপর কোনো  ভাষাতে সেটা সম্ভব নয়। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

' বঙ্গভাষা ' কবিতায় বাংলা ভাষার প্রতি কবির ভালোবাসা :- 


বঙ্গভাষা কবিতাটি হল বাংলা ভাষার প্রথম সনেট। ইংরেজি সাহিত্যের প্রতি প্রীতির মোহভঙ্গ হওয়ার পর কবি অনুধাবন করেন মাতৃভাষাতেই রয়েছে রত্নের খনি। বাংলা ভাষাকে তিনি রতনের সাথে তুলনা করেছেন। তিনি বলেছেন - 
'' হে বঙ্গ ভান্ডারে তব বিবিধ রতন। ''

একটি খনি থেকে যেরকম মূল্যবান ও বিচিত্র রত্নরাজি লাভ করা যায় - কবির মতে , বাংলা ভাষা ও সাহিত্য তেমনি অজস্র ঐশ্বর্যশালী রত্ন। 

কবিতার এক বিরাট অংশ জুড়ে রয়েছে কবির অনুশোচনা। এই অনুশোচনার কারণ হল তিনি বাংলা ভাষা তুলনায় ইউরোপীয় ভাষাকে সাহিত্য সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ মাধ্যম বলে মনে করেছিলেন এবং ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে বহু চর্চা করার পর তিনি অনুশোচনার অগ্নিতে অগ্নিদগ্ধ হন। কবিতায় তিনি বলেছেন -
''  কাটাইনু বহু দিন সুখ পরিহরি !
অনিদ্রায় , অনাহারে , সঁপি কায় , মনঃ , 
মজিনু বিফল তপে অবরেণ্য বরি ;-
কেলিনু শৈবালে , ভুলি কমল-কানন ! '' 

বঙ্গভাষা কবিতার মাধ্যমে বাংলা ভাষার প্রতি কবির নিজের উপলব্ধিকে কবি সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। ' হে বঙ্গ '  বলতে তিনি বাংলা ভাষাকেই বুঝিয়েছেন এবং বাংলা ভাষাকেই সম্বোধন করেছেন। 

কবিতার প্রতিটি চরণে মাতৃভাষার প্রতি কবির গভীর অনুরাগ ফুটে উঠেছে। কবি বিদেশি ভাষাকে ' পরধন ' বলে সম্বোধন করেছেন এবং সেই ধন লাভ করাকে তিনি ভিক্ষাবৃত্তির সাথে তুলনা করেছেন। তাঁর ভাষায় - 
'' পর - ধন - লোভে মত্ত করিনু ভ্রমণ 
পরদেশে , ভিক্ষাবৃত্তি কুক্ষণে আচরি।  '' 

মাতৃভাষায় কবিতা রচনার দৈবী প্রেরণাকে কবি মাতৃভাষার অধিষ্ঠাত্রী দেবী হিসেবে কল্পনা করেছেন। তাঁর ভাষায় - 
'' স্বপ্নে তব কুললক্ষ্মী কয়ে দিলা পরে ,- 
ওরে বাছা , মাতৃকোষে রতনের রাজি , ''

সেই দৈববাণী অনুধাবন করে কবি উপলব্ধি করেন বাংলা ভাষাতেই রয়েছে শ্রেষ্ঠ সাহিত্য রচনার সকল উপাদান। রত্ন সদৃশ বাংলা ভাষার সাহায্যে সহজেই একজন কবি বা সাহিত্যিক তাঁর উপস্থাপনার সকল মাধুর্যের বর্ণনা করতে পারেন। মাতৃভাষা ছাড়া অন্য কোনো ভাষাতেই কবি মনকে সাহিত্যের কলমে ফুটিয়ে তোলা সম্ভব নয়। কবি নিজের উপলব্ধিকে দৈববাণীর রূপকে প্রকাশ করেছেন। এই উপলব্ধিতে কবি অত্যন্ত আনন্দিত। তিনি বাংলা ভাষাতেই পেয়েছেন প্রকৃত সুখ ; বাংলা ভাষার মধ্যেই  লুকিয়ে আছে প্রকৃত উপলব্ধি। কবির ভাষায় - 
'' পালিলাম আজ্ঞা সুখে ; পাইলাম কালে 
মাতৃ-ভাষা- রূপ খনি , পূর্ণ মণিজালে। ''

পরিশেষে বলা যায় মাইকেল মধুসূদন দত্ত বঙ্গভাষা কবিতার মধ্যে দিয়ে বাংলা ভাষার প্রতি তাঁর আকুল ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা ফুটিয়ে তুলেছেন। বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠত্ব উপলব্ধি করে তিনি যেন ঘরে ফিরে এসেছেন বলে তিনি উল্লেখ করেছেন। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো
Share
Tweet
Pin
Share
No comments

বাংলা গদ্য সাহিত্যের বিকাশে রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা আলোচনা করো। 

বাংলা গদ্য সাহিত্যের বিকাশে রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা :- 



বাংলা গদ্য সাহিত্যের আকাশে এক অসাধারণ পুরুষ , আধুনিকতার অগ্রদূত , ভারতীয় জীবনচেতনার উন্মেষস্বরূপ হলেন রাজা রামমোহন রায়। তিনি সম্পূর্ণ সংস্কারবিহীন হয়ে হিন্দু , মুসলিম ও খ্রিস্টান ধর্মগ্রন্থ পাঠ করে স্বকীয় চিন্তায় ও মননে , লেখনীর দ্বারা যুক্তি গ্রাহ্য বিশ্লেষণে ভারতের সংস্কার আন্দোলনে ও গদ্য সাহিত্যের বিকাশে এক নতুন যুগের সূচনা করেন। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

রাজা রামমোহন রায় বাংলা গদ্যের বিকাশে লেখনী ধারণ করেননি। বাংলা গদ্যে তাঁর অংশগ্রহণের মূল কারণ ছিল সমাজ সংস্কার ও সমাজ সচেতনতা। তাঁর প্রধান পরিচয় - তিনি একজন সমাজ সংস্কারক , নবজাগরণের অগ্রদূত।সতীদাহ প্রথা নিবারণকল্পে তাঁর প্রধান অস্ত্র ছিল বাংলা গদ্য ভাষা। বহুবছর ধরে লালিত শাস্ত্রাদির বাংলা গদ্যে রূপান্তর ও সমালোচনা দ্বারা সনাতন ব্রাহ্মণ্য - দম্ভের মূলে কুঠারাঘাতের মধ্যে দিয়ে তাঁর সমাজ সংস্কারের প্রথম নান্দীপাঠ। তারপর শুরু হয় বিধবা বিবাহ আন্দোলন। এক্ষেত্রেও তৎকালীন রক্ষণশীল সমাজের বিরুদ্ধে লেখনীকেই তিনি প্রধান অস্ত্ররূপে ব্যবহার করেছিলেন। ''সম্বাদ কৌমুদী '' নামে তাঁর প্রকাশিত একটি পত্রিকাতে নিজ মত সমর্থনে তিনি নানা যুক্তি ও তর্কের উপস্থাপনা করেন। এই তর্ক-বিতর্ক এবং স্বাধীন যুক্তি - যুক্ত মতামত প্রকাশ ও উত্তর - প্রত্যুত্তরের মাধ্যমে সদ্যোজাত বাংলা গদ্য যেন শৈশব থেকে যৌবনে উত্তীর্ণ হলো।   

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

রামমোহনের সাহিত্য সৃষ্টি :-


 রামমোহনের সাহিত্য কীর্তির প্রধান উদাহরণ হলো সম্বাদ কৌমুদী। এই পত্রিকার মাধ্যমে তিনি রক্ষণশীল সমাজের মূলে কুঠারাঘাত করেছিলেন। এছাড়াও ছিল - বেদান্ত গ্রন্থ (১৮১৫) ; বেদান্তসার (১৮১৫) ; বিভিন্ন উপনিষদের অনুবাদ - ইত্যাদি।

সমাজ সংস্কার সম্পর্কিত বিতর্কমূলক রচনাগুলি রামমোহনের সাহিত্যকীর্তিগুলির মধ্যে অন্যতম। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল -

উৎসবানন্দ বিদ্যাবাগীশের সহিত বিচার ; 
ভট্টাচার্যের সহিত বিচার ;
গোস্বামীর সহিত বিচার ;
সহমরণ বিষয়ক প্রবর্তক - নিবর্তক সম্বাদ ;
কবিতাকারের সহিত বিচার ;
ব্রাহ্মণ সেবধি ;
পথ্য প্রদান ; 
সহমরণ বিষয়ক - ইত্যাদি। 
এছাড়াও তিনি কতকগুলি ব্রহ্মসংগীত রচনা করেছিলেন এবং '' গৌড়ীয় ব্যাকরণ '' নামে একখানি ব্যাকরণ গ্রন্থ রচনা করেছিলেন - যা তাঁর মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয়েছিল। 



রামমোহনের গদ্য সাহিত্য পর্যালোচনা :-


রামমোহনের রচনা শৈলী ও বৈশিষ্ট সম্পর্কে কবি ঈশ্বর গুপ্ত লিখেছিলেন - '' দেওয়ানজী (রামমোহন ) জলের ন্যায় সহজ ভাষায় লিখিতেন , তাহাতে কোনো বিচার ও বিবাদঘটিত বিষয় লেখায় মনের অভিপ্রায় ও ভাবসকল অতিসহজ স্পষ্টরূপে প্রকাশ পাইত , এজন্য পাঠকেরা অনায়াসেই হৃদয়ঙ্গম করিতেন , কিন্তু সে লেখায় শব্দের বিশেষ পারিপাট্য ও তাদৃশ মিষ্টতা ছিল না। 

রামমোহনের গদ্য ভাষায় ঋজুতা থাকলেও মিষ্টতা ছিল না - একথা সত্য। তার কারণ তাঁর সাহিত্য সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য ছিল সমাজ সংস্কার ও সমাজ সচেতনতা। এজন্য তিনি সাহিত্য ক্ষেত্রে শব্দের পারিপাট্যের প্রতি মনোযোগী হতে পারেননি। তবে বাংলা গদ্যের বিকাশে রামমোহনের প্রধান অবদান ছিল তিনি বাংলা গদ্যকে প্রাঞ্জল , স্বচ্ছন্দ ও সাবলীল করে তুলেছিলেন।  

ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের পন্ডিত - মুনশিরা বাংলা গদ্যকে কাহিনী ও গল্প প্রকাশের বাহন করে তুলেছিলেন। কিন্তু রামমোহন তাকে যুক্তিতর্কের নিরিখে বিশ্লেষণ করে এবং গভীর আত্মসংযমের মধ্যে দিয়ে বিষয়কে উপস্থাপিত করেছিলেন। 

তাঁর সাহিত্য কীর্তি সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন - '' কী রাজনীতি , কী বিদ্যাশিক্ষা, কী সমাজ , কী ভাষা - আধুনিক বঙ্গদেশে এমন কিছুই নাই রামমোহন রায় স্বহস্তে যাহার সূত্রপাত করিয়া যান নাই। ''

এছাড়াও রামমোহন ইংরেজির অনুকরণে বাক্যে ছেদচিহ্নের ব্যবহার করেছিলেন। আচার্য সুকুমার সেন বলেছিলেন - '' তিনিই আমাদের প্রথম লিঙ্গুয়িস্ট। ''

শ্রীকুমার বন্দোপাধ্যায় বলেছেন - ''.......... স্বাধীন চিন্তার প্রকাশে তাঁহার জুড়ি নাই। ............... তাঁহার গদ্য লালিত মধুর না হইলেও মননদীপ্ত ও ভাবের সমুন্নতিতে মর্যাদাময়। ''   

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো 
  

Share
Tweet
Pin
Share
No comments

'' নবান্ন '' নাটকের নামকরণের সার্থকতা আলোচনা করো। 

অথবা , নবান্ন নাটকটির নামকরণ কতদূর যথার্থ - তা আলোচনা করো। 




সাহিত্যের ক্ষেত্রে নামকরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ নামের মধ্যে দিয়েই লেখক তাঁর রচনার বা সাহিত্যের মূলভাব প্রকাশ করে থাকেন। লেখার বিষয় নামকরণে ফুটে ওঠে। শিল্পী মাত্রেই নামকরণের ব্যাপারে সচেতন থাকেন। নবান্ন নাটকের নাট্যকার বিজন ভট্টাচার্য নাট্য সচেতন শিল্পী। তাঁর নবান্ন নাটকটি হল বাস্তবধর্মী নাটক। নাট্যকারের আশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি , বৃহত্তর শ্রেণীর আশা - আকাঙ্খা নাটকের নাটকের নামকরণে প্রতিফলিত হয়েছে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো
 
নবান্ন নাটকটি যে দেশকালের প্রেক্ষিতে রচিত হয়েছে সেটি একদিকে ছিল দুর্যোগ ও দুর্ভিক্ষের এবং অন্যদিকে ক্রান্তিকালের। নবান্ন নাটক আমাদের মনে স্মৃতির সমুদ্র মন্থন করে তুলে আনে নবান্ন উৎসবের ছবি।  বন্যা , মহাযুদ্ধ , মহামারী - ইত্যাদি আমিনপুরের গ্রাম্য জীবনের সুস্নিগ্ধ দিন যাপন পদ্ধতির বুকে আঘাত হেনে সবকিছু লন্ডভন্ড করে দিয়েছিল। মানুষ হয়ে উঠেছিল জন্তুপ্রায়। অন্নহীন , বস্ত্রহীন , মান-সম্ভ্রমহীন ভিখিরীতে রূপান্তরিত হয়ে মানুষ ভুলতে বসেছিল আপন অস্তিত্ব। সেই রকম এক ভয়ঙ্কর দুর্যোগপূর্ণ দিনের চিত্র ফুটে উঠেছে নবান্ন নাটকে যেখানে মানুষের অস্তিত্বই সংকটে সেখানে নবান্ন উৎসব পালনের কথা ভাবাই যায়না। 

কিন্তু এত ঝড়-ঝাপটা ও দুর্ভিক্ষ সেই মানুষগুলোর মন থেকে মুছে ফেলতে পারেনি নবান্ন উৎসবের স্মৃতিকে। তাই যখন আবার ঘরছাড়া মানুষগুলো ফিরে এসেছে গ্রামে , নতুন ধান তুলেছে ঘরে , তখন নবান্ন উৎসবের আনন্দে মেতে ওঠার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছে তারা। বিগত দিনগুলোর বিভীষিকা মন থেকে মুছে ফেলে আয়োজন করেছে নবান্ন উৎসবের। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

নাটকের তৃতীয় দৃশ্যে প্রাকৃতিক সংকটের ঘনীভূত রূপ দেখা যায়। তৃতীয় দৃশ্যের শেষের দিকে আকস্মিকভাবে প্রচন্ড ঝড় ওঠে , সাইক্লোনে প্রধানের দোচালা বিনোদিনীর মাথার ওপর ভেঙে পড়ে।  বিনোদিনী সেই আঘাতে অচৈতন্য হয়ে পরে। আবার সেই ঝড়ের প্রকোপে তৈরি হওয়া বন্যা ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে। বন্যায় সবকিছু ভেসে যায়। 

চতুর্থ দৃশ্যে দুর্যোগ ও বন্যার পরিপ্রেক্ষিতে ভয়াবহ অভাব ও অর্থসংকট জন্ম নেয়। মানুষের খাদ্যের সংস্থান সংকুচিত হয়ে পড়ে। নাটক অনুসারে বলা যায় ,  '' নিত্যি ঐ এক ডুমুর - কলা সেদ্ধ আর কচুর নাতির ঝোল। '' 

পঞ্চম দৃশ্যে অনাহার , খাদ্য সংকট ও দুর্ভিক্ষের জন্য কিছু মানুষের অমানবিক স্বার্থপরতা কীভাবে দায়ী -  তা বর্ণনা করা হয়েছে। অতিরিক্ত মুনাফার লোভে মজুতদারী ও কালোবাজারি যুদ্ধকালীন ব্যবস্থায় কীভাবে মানুষের অসহায় অবস্থার উপর চরম আঘাত হেনেছে - তার উল্লেখ পাওয়া যায় কালীধন ধাড়া ও হারু দত্ত নামক দুটি চরিত্রের মধ্যে দিয়ে। এরা বিবেকহীন , হৃদয়হীন ও অমানবিক বাণিজ্যকতার জাল সর্বত্র ছড়িয়ে রাখে - সে পরিচয় পাওয়া যায়। এদেরই চক্রান্তে ও রাষ্ট্রশক্তির পৃষ্ঠপোষকতায় '' মনুষ্যসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ '' লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়। 

ষষ্ঠ দৃশ্য দেখা যায় সমাদ্দার পরিবার গ্রাম ছেড়ে শহরের পার্কে আশ্রয় নিয়েছে দুমুঠো খাবারের আশায়।  এরই মধ্যে বিচিত্র ধরনের সুযোগ সন্ধানীরা নানা রূপে ও বেশে জীর্ণশীর্ণ , বস্ত্রহীন - এই নিরন্ন কঙ্কালসার মানুষগুলোকে নিয়ে নির্লজ্জভাবে নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থ চরিতার্থ করতে উদ্যোগী হয়। এদের কেউ ফটোগ্রাফার , কেউ বা টাউট। প্রথমোক্তরা প্রধানের ভাষায় '' কঙ্কালের ছবির ব্যবসাদার। '' 

তৃতীয় ও চতুর্থ দৃশ্যে প্রধান , কুঞ্জ , রাধিকা রাজপথে খাবারের সন্ধানে ঘুরে বেড়ায়। প্রধান বাড়ি বাড়ি ভিক্ষে করেও ক্ষুধার অন্ন জোগাড় করতে পারেনা। কুঞ্জ ডাস্টবিনের খাবার নিয়ে কুকুরে - মানুষে লড়াই করছে। এ দৃশ্য বড়ই মর্মান্তিক। ওদিকে বড়লোকের বাড়িতে পান ভোজনের সমারোহ ; কিন্তু সামান্য উচ্ছিষ্টটুকুও দুর্গত মানুষদের দান করতে এদের হাত সরেনা। চিকিৎসা কেন্দ্রগুলিতে দেখা যায় ক্ষুধার্ত মানুষের মৃত্যু মিছিল। 

অন্যদিকে দুর্দশাগ্রস্ত মানুষদের অসহায়তার সুযোগ নিয়ে হারু একদিকে বিপন্ন মানুষের জমি-বাড়ি সস্তায় কিনে নেয় এবং অপরদিকে গ্রামের দুস্থ মা - বাপ কে ভুল বুঝিয়ে মেয়েদের শহরে চালান দেয়।  কালীধনের সেবাশ্রমে 'সেবা' -  নামের আড়ালে নারীদেহ নিয়ে দেহব্যবসা কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। এমনকি পুলিশ তাদেরকে গ্রেপ্তার করলেও তাদের যে ছাড়া পেতে অসুবিধে হবে না - এ ব্যাপারে তারা নিশ্চিত। 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন মেদিনীপুর ও চব্বিশ পরগনার একাংশ সাইক্লোন , জলোচ্ছ্বাস ও বন্যায় বিপর্যস্ত হয়। খাদ্য সংকট দেশবাসীর জীবনে নিয়ে এসেছিল মন্বন্তর। বাংলায় প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষ এ সময় অনাহারে মৃত্যু বরণ করে। জোতদার , মজুতদাররা এর সুযোগ নিয়ে সাধারণ মানুষের ওপর নির্বিচারে শোষণ করে। নবান্ন নাটকে সমাজের সেই দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের ছবি তুলে ধরা হয়েছে। 

পরিশেষে বলা যায় , নবান্ন নাটকটি হল সংগ্রামের নাটক। আবার এই নাটকের শেষের দিকে নতুন দিনের সূচনার আভাস পাওয়া যায়। সংগ্রামের শেষে জীবনের জয়গান ফুটে উঠেছে এই নাটকে। সব হারানোর শেষে সব প্রাপ্তির যে চেতনা , তার মধ্যে দিয়ে পাওয়া যায় নতুন জীবনের উৎসব। সেই নতুন জীবন আহ্বান জানায় নতুন ভোরের রক্তিম সূর্যকে। মানুষকে অনুপ্রাণিত , উদ্দীপিত করার বার্তা দেওয়া হয়েছে এই নাটকে। নাটকের শেষ দিকে নবান্ন উৎসব পালন , শুধুই উৎসব হয়ে থাকেনি , তা মানুষের মিলনক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। নতুন করে বাঁচার আদর্শকে তুলে ধরা হয়েছে। তাই নবান্ন নাটকের নামকরণ ব্যাঞ্জনাধর্মী এবং যথার্থ।    

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

Share
Tweet
Pin
Share
No comments

বৃন্দাবনকে পন্ডিতমশাই উপন্যাসের নায়ক চরিত্র বলা যায় কি'না আলোচনা কর। 

অথবা , '' পন্ডিতমশাই উপন্যাসের নায়ক বৃন্দাবন '' - এই মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো। 

অথবা , বৃন্দাবন কীভাবে পন্ডিতমশাই উপন্যাসে প্রধান চরিত্র হয়ে উঠেছে - তা আলোচনা করো। 

অথবা , পন্ডিতমশাই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র কে ? যুক্তিসহ আলোচনা করো। 




পন্ডিতমশাই উপন্যাসে প্রধান চরিত্র হল বৃন্দাবন। সাধারণত যে চরিত্র সমস্ত ঘটনা ধারাকে পরিচালিত করে , অথবা যাকে কেন্দ্র করে সমস্ত ঘটনা আবর্তিত হয় , সেই পুরুষ চরিত্রকে নায়ক বলা যায়। এই অর্থে বৃন্দাবনকে পন্ডিতমশাই উপন্যাসের নায়ক বলা যেতে পারে। যেহেতু নায়িকা কুসুমের কার্যকলাপের মধ্যে দিয়ে বৃন্দাবনের জীবনধারা পরিচালিত হয়েছে এবং উপন্যাসের ঘটনা আবর্তিত হয়েছে , সেই কারণে বৃন্দাবনকে এই উপন্যাসের নায়ক চরিত্র হিসেবে মেনে নেওয়া যেতে পারে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

পন্ডিতমশাই উপন্যাসে কুসুম আকর্ষণীয় ও কেন্দ্রীয় চরিত্র হলেও কুসুম চরিত্রের বিকাশে ও প্রকাশে  বৃন্দাবনের ভূমিকা অনস্বীকার্য। অর্থাৎ পন্ডিতমশাই উপন্যাসের কেন্দ্রবিন্দুতে তার জায়গা অনেকখানি।  গ্রামের মানুষ তাকে পন্ডিতমশাই নামে ডাকে। প্রথম জীবনে নয় , পরবর্তীকালে নানানভাবে জ্ঞানচর্চা করে বৃন্দাবন একজন নিষ্ঠাবান পন্ডিতে পরিণত হয়। কুসুম সেই বাল্যে যেদিন বৃন্দাবনের জীবন থেকে সামাজিক অনুশাসনে চলে আসতে বাধ্য হয় , তখন বৃন্দাবনের কোনো জ্ঞানচর্চার কথা তার জানা ছিল না। তাই পরবর্তীকালে সেই সংবাদে কুসুম যেমন বিস্মিত হয় , তেমনি আবার বৃন্দাবনের প্রতি শ্রদ্ধাও  জাগে। 

বৃন্দাবন অত্যন্ত সৎ চরিত্র , স্বল্পবাক এবং স্বভাবধর্মে বিনয়ী ও সংযত মানুষ। তার মধ্যে দেখা যায় যৌবনের উচ্ছল উদ্দামতার থেকে বয়স্ক স্থিতধী সংযমের প্রাধান্য। তাই দীর্ঘদিন যে পূর্ণবয়স্কা  কুসুমকে কলসি কাঁখে সিক্তবসনে দেখে মুগ্ধ হয়েছিল বৃন্দাবন , যুবতী তার কাছে প্রাথমিকভাবে অপরিচিত হলেও সেই যুবতীর পরিচয় আবিষ্কারে বৃন্দাবন দ্রুত উপলব্ধি করেছে যে , সে হচ্ছে তারই  বিবাহিতা স্ত্রী কুসুম। এই পরিচয় আবিষ্কারের সূত্রেই সম্ভবত স্ত্রী কুসুমের উপর তার অধিকারবোধ জন্মায়। বাংলার বৈষ্ণব সমাজের কন্ঠিবদলের প্রথা দৃঢ়চেতা বৃন্দাবনকে প্রভাবিত করেনি। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

গ্রামের একটি সম্পন্ন পরিবারের সন্তান বৃন্দাবন। গ্রামের মাটিতে বাস করলেও বৃন্দাবন শুধুই পারিবারিক অর্থ , গ্রাম্য জীবন ও তার সংস্কার নিয়ে না থেকে শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা কোথায় - তা ভালভাবে উপলব্ধি করেছিল। কৃষিভিত্তিক গ্রাম্যজীবনে বিদ্যার তেমন প্রয়োজন কেউই অনুভব করেনি ; কেননা বিদ্যার্জনের কোনো উপায়ও সেখানে ছিল বলে মনে হয় না। সব গ্রামে ঠিকমতো কোনো পাঠশালা ছিল না।  এই অবস্থায় বৃন্দাবন আপনার ভেতরকার প্রেরণায় বিদ্যার প্রাথমিক পাঠ সমাপ্ত করে। কিছুটা ইংরেজি শিক্ষা লাভ করে আধুনিকতার পাঠ গ্রহণ করে। এক্ষেত্রে তার আধুনিক মনোভাব তাকে বলিষ্ঠ মানুষ হিসাবেই প্রতিষ্ঠিত করে। 

নিজের বিদ্যাশিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে বৃন্দাবন নিরক্ষর গ্রামের অশিক্ষিত কৃষক সন্তানদের শেখানোর চেষ্টা করে। গ্রামে পাঠশালা খোলার কথা ভাবে। কিন্তু পিতা গৌড় দাসের দিক থেকে কোনো সহায়তা সে পায়নি। বিষয়-আশয় , চাষবাস ইত্যাদির প্রতিও তার দুর্বলতা ছিল। আবার নিজেকে যুগোপযোগী করার প্রয়াসও ছিল। এই আধুনিক মানুষকে তাই হঠাৎ দেখে কুসুম বিশ্বাস করে উঠতে পারেনি ; বরং রীতিমত অবাক হয়। আবার বৃন্দাবন সাত বছর বয়সের কুসুমকে দীর্ঘদিন পর পূর্ণ যুবতী হিসেবে দেখে মুগ্ধ হয়।  দুজনের কাছে দুজনেই যেন নব পরিচয় প্রাপ্ত হয় আজ। 

বৃন্দাবন একজন সৎ চরিত্রের মানুষ। সে নির্লোভ। মানুষকে শ্রদ্ধা করতে জানে। তাই তার স্ত্রীকে সে মর্যাদা দেয়। স্ত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা ও প্রেম ছিল অক্ষুন্ন। রুচিশীল , শিক্ষিত এই মানুষটি শেষ পর্যন্ত কুসুমের হৃদয় কুসুমকে প্রস্ফুটিত করে তোলে। তাই উপন্যাসের নায়কের মর্যাদার অধিকারী বৃন্দাবন। 

পন্ডিতমশাই বা বৃন্দাবন বাঙালি পরিবারের একজন সংসারী মানুষ। পৈতৃক জমিজমা , স্ত্রী কুসুম , পুত্র চরণ - ইত্যাদি নিয়েই সে শুধু থাকেনি ; অর্থাৎ আর পাঁচটা বাঙালির মত শুধুমাত্র নিজেকে নিয়ে সে ব্যস্ত থাকতে পারেনা। বৃন্দাবন নিজের পরিধি ছাপিয়ে অপরের কথা ভেবে আপনার মানবধর্মকে সার্থক করার কথা বলেছে। গ্রাম সংগঠনের জন্য দরকার ছিল সৎ ও উদ্যোগী মানুষের। বৃন্দাবন তেমনিই এক সৎ ও  উদ্যোগী মানুষ , যা অনেকটা আদর্শরূপে স্থাপন করতে চেয়েছেন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। 

বৃন্দাবনকে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় একজন ধীর-স্থির , দায়িত্ববান মানুষ হিসেবে চিত্রিত করেছেন। মা ও একমাত্র সন্তান চরণকে হারানোর পরও সে জীবন যুদ্ধে হতাশ হয়নি। সন্নাসীর মতো সবকিছু ত্যাগ করে পথে নেমেছে। যদিও তার পথে নামাতে সঙ্গী হিসাবে শেষ পর্যন্ত পেয়ে যায় স্ত্রী কুসুমকে। বৃন্দাবন শেষ পর্যন্ত উপলব্ধি করেছে সংসার জীবনে নারী বা স্ত্রীকে অস্বীকার করে সাধনা সফল হয়না। পন্ডিতমশাইরুপী বৃন্দাবন হয়ে উঠেছে একটি প্রতীকী চরিত্র। বৃন্দাবন বা পন্ডিতমশাইয়ের মধ্যে দিয়ে শরৎচন্দ্রের জীবনদর্শন প্রকাশিত। তাই , বৃন্দাবনই উপন্যাসের নায়ক এবং সে অবশ্যই একটি আকর্ষণীয় ও যথার্থ চরিত্র। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

     
Share
Tweet
Pin
Share
No comments
Older Posts

Followers

Pages

  • Home
  • Privacy Policy
  • Disclaimer
  • CONTACT ME
  • About Me

Contact Form

Name

Email *

Message *

About me

Hallow viewers , myself Nandan Dutta [Subhankar Dutta], reside at Maheshpur,Malda.
I made this website for the students of B.A. courses under Gour Banga University. Here you can get suggestions of different subjects like HISTORY , SOCIOLOGY , POLITICAL SCIENCE & EDUCATION.
In future I will add MCQ sections of those subjects.


Categories

  • 1ST SEMESTER SUGGESTION (1)
  • 2 ND YEAR SUGGESTION (1)
  • 2ND SEMESTER (1)
  • 3RD SEMESTER (8)
  • BENGALI NOTES (21)
  • CU suggestion. (1)
  • EDUCATION NOTES (141)
  • ENGLISH COMPULSORY (16)
  • GBU Suggestion. (7)
  • HISTORY EUROPE & WORLD (46)
  • HISTORY NOTES (68)
  • POL SC NOTES (68)
  • SOCIOLOGY NOTES (72)
  • WBCS 2020 (1)

recent posts

Blog Archive

  • August 2025 (4)
  • May 2025 (3)
  • April 2025 (20)
  • March 2025 (12)
  • February 2025 (8)
  • November 2024 (5)
  • October 2024 (2)
  • September 2024 (2)
  • June 2024 (2)
  • March 2024 (6)
  • February 2024 (4)
  • October 2023 (5)
  • May 2023 (5)
  • April 2023 (1)
  • December 2022 (1)
  • November 2022 (13)
  • September 2022 (2)
  • August 2022 (7)
  • July 2022 (29)
  • June 2022 (10)
  • May 2022 (25)
  • April 2022 (24)
  • March 2022 (16)
  • February 2022 (19)
  • January 2022 (21)
  • December 2021 (46)
  • November 2021 (5)
  • October 2021 (6)
  • September 2021 (5)
  • August 2021 (41)
  • July 2021 (43)
  • June 2021 (31)
  • May 2021 (7)
  • April 2021 (1)
  • July 2020 (1)
  • June 2020 (3)
  • April 2020 (1)
  • November 2019 (1)
  • July 2019 (1)
  • June 2019 (1)
  • May 2019 (1)
  • April 2019 (2)
  • January 2019 (1)

Pages

  • Home
  • 2nd SEM ভাষাতত্ত্ব :
  • বাংলা উপভাষা
  • দ্বিতীয় পুলকেশীর কৃতিত্ব
  • ভারতীয় সংবিধানে বর্ণিত সাম্যের অধিকারগুলি আলোচনা করো।
  • হর্ষবর্ধনের কৃতিত্ব আলোচনা করো। তাকে কি উত্তর পথনাথ বলা যায় ?
  • ভারতীয় সংবিধানের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য :-
  • উদারনীতিবাদ : সংক্ষিপ্ত ধারণা :-
  • চোল শাসনব্যবস্থা :-
  • গুপ্তযুগ সুবর্ণযুগ সম্পর্কিত আলোচনা।
  • ৬. উদাহরণসহ মধ্যযুগের বাংলাভাষার কয়েকটি বৈশিষ্ট আল...
  • 1. Marxism
  • আধুনিক বাংলা ভাষা ও তার বৈশিষ্ট।
  • Discuss the career and achievements of Samudragupta .
  • ভাষাতত্ত্ব

Created with by ThemeXpose | Distributed by Blogger Templates