'' শুধু কবিতার জন্য , আরো দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে লোভ হয় '' - উদ্ধৃতাংশে প্রতিফলিত কবির এই মনোভাবের বিশেষত্ব আলোচনা কর।

by - July 03, 2022

'' শুধু কবিতার জন্য , আরো দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে লোভ হয় '' - উদ্ধৃতাংশে প্রতিফলিত কবির এই মনোভাবের বিশেষত্ব আলোচনা কর। 



'' শুধু কবিতার জন্য , আরো দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে লোভ হয় '' 

''  শুধু কবিতার জন্য , আরো দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে লোভ হয় '' - এই উক্তিটি কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের '' শুধু কবিতার জন্য '' কবিতার অংশ। '' শুধু কবিতার জন্য '' কবিতাটি কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতা প্রেমের এক কালজয়ী সৃষ্টি। কবিতাটিতে কবি কবিতার প্রতি একজন কবির যে মানসিক প্রেষণা সৃষ্টি হয় - সে সম্পর্কে তিনি আলোচনা করেছেন। একজন কবি তাঁর কবিতার মধ্যে দিয়ে অমর হয়ে থাকেন সাধারণ মানুষের কাছে।  কিন্তু , ভারতীয় প্রেক্ষাপটে , বিশেষ করে বাংলায় সাহিত্যিক ও কবিরা তাদের সাহিত্য সৃষ্টি দ্বারা যে আর্থিক উপার্জন করেন তা অত্যন্ত সামান্য এবং উল্লেখযোগ্য নয়। তাহলে প্রশ্ন হল , এই আর্থিক ক্লেশযুক্ত জীবনে কবিরা তাঁদের প্রেষণা লাভ করেন কোথা থেকে ? ঠিক এই প্রশ্নের উত্তর দিতেই যেন কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় '' শুধু কবিতার জন্য '' কবিতাটি রচনা করেছেন। 


কবিতার একেবারে শুরুতেই কবি বলেছেন - ''শুধু কবিতার জন্য এই জন্ম,'' । এই উক্তির মধ্যে দিয়েই কবিতার মূল বিষয়বস্তু মানসপটে উদ্ভাসিত হয়। কবিতার প্রতি একজন কবির নিরলস শ্রম , প্রগাঢ় আন্তরিক শ্রদ্ধা মিশে থাকলেই একজন কবি বলতে পারেন যে শুধু কবিতার জন্যই তাঁর জন্ম। কবিতার প্রতি এই আন্তরিকতা বিশেষ কোনো স্বার্থে নয় , কিছু পাওয়ার আশায় নয় , শুধুমাত্র কবিতাকে ভালোবেসে কবি এ জীবন অতিবাহিত করতে চান। 

শুধু কবিতার জন্যই যেন কবির প্রতিটি জন্ম , শুধু কবিতার জন্যই যেন কবি অন্য কোনো এক জগৎ থেকে এই ভুবনে এসেছেন। প্রকৃতির সমস্ত বৈচিত্র , সমস্ত রূপ - রস - মাধুর্য , সমস্ত সৌন্দর্য - যেন শুধুমাত্র কবিতার জন্যই একজন কবির কাছে জীবন্ত ও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। প্রকৃতির এই রঙিন বৈচিত্রময় সৌন্দর্যের বর্ণনা একমাত্র কবিতার মাধ্যমেই বাঙময় করে তোলা সম্ভব। শুধুমাত্র কবিতার জন্যই যেন প্রকৃতির সকল সৌন্দর্য। 

নারীর প্রতিটি রূপ এবং তার বৈচিত্র যেন কবিতার মধ্যেই বৈচিত্রময় হয়ে ওঠে। একজন কবি হৃদয়ে একজন নারীর প্রতি  গভীর ভাবাবেগ তার কবিতার মাধ্যমেই প্রকাশিত হয়। তাই কবি বলেছেন - '' শুধু কবিতার জন্য তুমি নারী,'' । নারীর নারীসত্তা যেন কবিতার মাধ্যমেই পূর্ণতা প্রাপ্ত হয়। ঠিক যেমন করে একজন প্রেমিক প্রেমিকার মুখশ্রী অবলোকন করার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকেন - কবির সাথে কবিতার সম্পর্ক যেন সেই নারীকে একঝলক দেখতে পাওয়ার বাঁধভাঙা উচ্ছাস।    


সমাজ জীবনের বিভিন্ন ওঠানামা , ঘাতপ্রতিঘাত , যুদ্ধ - রক্তপাত - সমস্ত কিছুর মধ্যে কবি যেন কবিতার অস্তিত্বের সন্ধান পেয়েছেন। কবি বলেছেন - ''  কবিতার জন্য এতো রক্তপাত, '' । বর্ণময় ও বৈচিত্রময় সমাজের ছন্দ ও কবিতার মধ্যে যেন সম্পর্কের সূত্র আবিষ্কার করেছেন কবি। সমাজ বয়ে চলেছে তার অনবরত বিবর্তনের ধারায়। অবিরাম চলতে থাকা এই সমাজের বিবর্তনের ধারা লক্ষ্য করে কবি উপলব্ধি করেছেন - '' শুধু কবিতার জন্য কিছু খেলা,'' । কবির মতে , সব কিছুই যেন চলছে কবিতার নিয়মে ; সবকিছুই যেন কিছু খেলা - শুধুই কবিতার জন্য। 

কবিতার প্রতি কবির মমত্ব এতটাই যে , শুধুমাত্র একটি জন্মের সংক্ষিপ্ত পরিসরে তিনি যেন তাঁর কবিতা প্রেমের সম্পূর্ণ উপভোগ করতে পারেন না। তাই তিনি বলেছেন - '' শুধু কবিতার জন্য, আরো দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে লোভ হয় ''। কবি যেন অনন্তকাল বেঁচে থেকে কবিতা প্রেমে নিজেকে নিমজ্জিত রাখতে চান। 

পরিশেষে বলা যায় , মানব জীবন অমূল্য। এই অমূল্য জীবন আরো অমূল্য হয়ে ওঠে যখন নির্দিষ্ট কোনো কাজ বা বস্তু বা লক্ষ্যের দিকে ব্যক্তিজীবন ধাবিত হয়।  '' শুধু কবিতার জন্য , আরো দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে লোভ হয় '' - এই উক্তির মধ্যে দিয়ে কবিতার প্রতি কবির অফুরন্ত ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে। একটি মানব জন্মে কবিতার প্রতি তাঁর অসমাপ্ত দায়িত্বকে তিনি পরবর্তী জীবনে সঞ্চারিত করতে চান ; বা বলা ভালো , এই এক মানব জনমেই তিনি কবিতার প্রতি তাঁর ভালোবাসার টানকে আরো গভীরভাবে ও দীর্ঘ সময় ধরে উপলব্ধি করতে চান।  


You May Also Like

2 comments

  1. প্রেমের কবিতা গুলি পড়ে খুবই ভালো লাগলো। এত সুন্দর একটি পোষ্ট আমাদেরকে উপহার দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

    ReplyDelete