চোল শাসনব্যবস্থা :-

স্থানীয় শাসনব্যবস্থাকে বিশেষভাবে উল্লেখ করে চোল শাসন ব্যবস্থার মূল বৈশিষ্টগুলি আলোচনা করো। 

চোল শাসনব্যবস্থা :-

চোল শাসন ব্যবস্থার প্রকৃতি নিয়ে ইতিহাস চর্চায় পার্থক্য চোখে পড়ে।  নীলকন্ঠ শাস্ত্রী , টি ভি মহালিঙ্গম প্রমুখ লেখকরা চোল রাজ্যের ইতিহাস রচনায় আখ্যানের ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন এবং রাজনৈতিক , অর্থনৈতিক ও সামাজিক ইতিহাসের বিভিন্ন দিকগুলিকে বিচ্ছিন্নভাবে আলোচনা করেছেন। অন্যদিকে বার্টন স্টেইন ( Peasant State and Society in Medieval South India ) চোলরাষ্ট্রকে স্তরবিন্যস্ত   ব্যবস্থা বলে অভিহিত করেছেন। তার মতে নাড়ু ছিল কৃষিকেন্দ্রিক ব্যবস্থা এবং স্বচ্ছল  ভূস্বামী সম্প্রদায় রাজনীতি ও অর্থনীতির নিয়ন্ত্রক ছিলেন। এর বিপরীতে ''কেনেথ আর হল ''                  ( Trade and State craft in the Age of the Colas .)   চোল রাষ্ট্রব্যবস্থায় নগরের ভূমিকা তুলে ধরেছেন। তার মতে বণিক সমাজ রাষ্ট্রব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য স্থান অধিকার করে।
 বিজেতারূপে নন , সংগঠকরূপেই চোল  রাজারা ভারতীয় ইতিহাসে কালজয়ী অবদান রেখে গেছেন। চোল রাজাদের অনুশাসন লিপি ও আরব গ্রন্থকারের বিবরণ থেকে চোল  শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়।



কেন্দ্রীয় শাসন :-
 দক্ষিণ ভারতে বিভিন্ন রাজবংশের প্রসার ঘটায় অনেক কেন্দ্রীয় শাসন পদ্ধতি প্রবর্তন করা সম্ভব ছিলনা। চালুক্য , রাষ্ট্রকূট , হোয়সল প্রভৃতি রাজবংশের   নৃপতিদের রাজতন্ত্রের আদর্শ যাই হোক না কেন , তাদের শাসন ক্ষমতা সামন্তদের দ্বারা সীমিত ছিল। একমাত্র চোল নৃপতিরাই সামন্তদের ক্ষমতা বিশেষভাবে খর্ব করে কেন্দ্রীয় শাসন শক্তিশালী করে তুলতে সমর্থ হয়েছিল। শাসন ব্যবস্থায় রাজ্যের কৃষককুলের সঙ্গে প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। চোল নৃপতিরা ''চক্রবর্তীগণ '' প্রভৃতি উপাধি গ্রহণ করতেন। চোল নৃপতিরা  রাজার দৈবশক্তি বিশ্বাসী ছিলেন। রাজগুরু অর্থাৎ রাজ পুরোহিত ও অন্যান্য কর্মচারীদের পরামর্শ অনুসারে রাজা রাজ্য শাসন করতেন। কেন্দ্রীয় শাসনের সকল বৈশিষ্ট্য চোল শাসন ব্যবস্থায় লক্ষ্য করা যায়।

রাষ্ট্রীয় বিভাগ : মন্ডল , কোট্টম , নাড়ু ও কুরম :-

চোল সাম্রাজ্য কয়েকটি প্রদেশে বিভক্ত ছিল। প্রদেশগুলি ''মন্ডল'' নামে পরিচিত ছিল। প্রদেশগুলির কোন নির্দিষ্ট সংখ্যা ছিল না। রাজ্যবিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে প্রদেশ বা মন্ডলগুলির সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছিল। প্রতিটি মন্ডল কয়েকটি ''কোট্টম'' এ বিভক্ত ছিল। প্রতিটি কোট্টম কতগুলি জেলা বা নাড়ুতে বিভক্ত ছিল। কতগুলি গ্রাম সমবায় নিয়ে নাড়ুগুলি গঠিত হয়েছিল। এই গ্রাম্য সমবায় গুলি ''কুরম'' নামে পরিচিত ছিল। প্রতিটি মন্ডলের ভারপ্রাপ্ত ছিলেন একজন রাজপ্রতিনিধি ( Viceroy ) । তাকে রাজার কাছে জবাবদিহি করতে হতো। সাধারণত রাজপুত্রেরাই এই পদে নিযুক্ত হতেন। মন্ডলের অধিপতিকে মণ্ডলেশ্বর বলা হতো। তাঁদের প্রধান কর্তব্য ছিল কেন্দ্রের অনুসরণ করা এবং মন্ডলের  যাবতীয় সংবাদ রাজার দৃষ্টিগোচরে আনা। মণ্ডলেশ্বর এর অধীনে নিযুক্ত ছিলেন একজন কর্মচারী।



রাজা : কর্তব্য ও ক্ষমতা :-
রাজা ছিলেন সর্বোচ্চ শাসক। চোল নৃপতিরা ছিলেন জাঁকজমক প্রিয় এবং নানাবিধ উপাধি ধারণ করে তারা নিজেদের কর্তৃত্ব ঘোষণা করতেন। রাজপদ  ছিল বংশানুক্রমিক। অবশ্য প্রয়োজনবোধে অনেক ক্ষেত্রে এই নিয়মের ব্যাতিক্রম হত। রাজা সকল ক্ষমতার অধিকারী হয়েও স্বেচ্ছাচারী ছিলেন না। এক সুসংবদ্ধ কর্মচারী গোষ্ঠীর দ্বারা প্রশাসন পরিচালিত হত। কর্মচারী নিয়োগের পদ্ধতি কি ছিল তা জানা যায় না। সম্ভবত উত্তর ভারতীয় রীতিনীতি এ ব্যাপারে অনুসরণ করা হতো। তবে যোগ্যতা ,জন্মসূত্র ও সামাজিক মর্যাদা অনুসারেই কর্মচারী নিয়োগ করা হতো। প্রশাসন সম্পর্কিত যাবতীয় আদেশ প্রথমে রাজা মুখে মুখে দিতেন এবং পরে সেগুলি নথিভূক্ত করে তা প্রচার করা হতো। চোল প্রশাসনে রাজাকে সাহায্য করার জন্য নিয়মিত মন্ত্রিপরিষদ ছিল কি'না তা জানা যায়নি , তবে তাকে পরামর্শ দেওয়ার জন্য এক বিশেষ কর্মচারী পরিষদ ছিল। রোমিলা থাপার এর বক্তব্য অনুসারে এমনটাই প্রমাণ পাওয়া যায়।  প্রতিটি শাসন বিভাগের অধিকর্তাই  সর্বদাই  রাজার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখতেন এবং শাসন সংক্রান্ত বিষয়ে পরামর্শ দান করতেন।

প্রাদেশিক শাসন :- 
প্রাদেশিক শাসনে প্রদেশগুলির কয়েকটি প্রত্যক্ষভাবে কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক শাসিত হতো এবং অবশিষ্টগুলি সামন্তগণ কর্তৃক শাসিত হতো। প্রাদেশিক শাসনকর্তারা কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রাখতেন এবং রাজার কাছে সকল বিষয়ে দায়ী থাকতেন।  প্রাদেশিক শাসনকর্তাদের অধীনে বহু কর্মচারী নিযুক্ত থাকতেন।



রাজস্ব ব্যবস্থা :-
রায়তী স্বত্ব ছিল দু - ধরণের - কোথাও গ্রামের গোষ্ঠিগত মালিকানা যেখানে গ্রামবাসী চুক্তিবদ্ধ রাজস্ব প্রদান করতো ; আবার কোথাও কৃষক মালিকানা স্বীকৃত ছিল এবং কৃষকরা সরাসরি রাজাকে রাজস্ব প্রদান করত। সকল ক্ষেত্রেই রাজস্বের পরিমাণ ছিল নির্দিষ্ট এবং রাজস্ব যা উদ্বৃত্ত থাকতো তাই রায়তের  ভাগে আসতো।  অর্থ বা শস্য প্রদানের বিনিময়ে শ্রমদানও রাজস্ব বলে পরিগণিত হতো ; যদিও এই  রীতি খুবই সীমিত ছিল।

রাজাকে রাজস্ব দেওয়া ছাড়াও অনেক ক্ষেত্রে ভূমিস্বত্ব নিয়োগী ও মন্দিরকেও  রাজস্ব দেওয়ার রীতি চোল সাম্রাজ্যে প্রচলিত ছিল। ক্ষুদ্র কৃষক বা রায়ত মন্দিরে জল সরবরাহ করার বিনিময়ে খাজনা দেওয়া থেকে অব্যাহতি লাভ করত। ব্রাহ্মণকে দান হিসাবে প্রদত্ত ভূমি দেবতার উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত ভূমি করমুক্ত ছিল।  এই দুই ধরনের দান ''ব্রম্মদেয়'' ও ''দেবদেয়'' দান নামে পরিচিত ছিল।যাঁরা রাজস্ব প্রদান করতেন অর্থাৎ প্রজা এবং যারা দিতেন না অর্থাৎ কৃষি মজুর এই দুই শ্রেণীর মধ্যে সুনির্দিষ্ট পার্থক্য ছিল। পার্থক্যটি হলো এই যে কৃষি মজুর গ্রামীণ সভার সদস্য হওয়ার অধিকার ছিল না এবং স্থানীয় প্রশাসনে কোন দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারত না। প্রকৃতপক্ষে ভূমিহীন কৃষকদের অবস্থা ছিল প্রায় ভূমি দাসদের মত এবং তাদের আর্থিক উন্নয়নের কোন আশা ছিল না। এদের অনেকে মন্দিরের জমিদারিতে অত্যন্ত নিম্ন কাজে নিযুক্ত হত এবং নিম্ন বর্গভুক্ত হওয়ার অভিশাপে মন্দিরে প্রবেশ করাও তাদের পক্ষে নিষিদ্ধ ছিল।
অনাবাদী জমির সংস্কার ও জঙ্গল পরিষ্কার করা কৃষক মজুরদের প্রধান কাজ ছিল। কারণ জমির সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে  রাজস্ব বৃদ্ধির সম্ভাবনাও জড়িত ছিল। জমির খাজনা এবং গ্রামীণ সভা ও মন্দির গুলির দ্বারা আরোপিত আঞ্চলিক কর কৃষকদের ওপর বোঝাস্বরুপ ছিল। এই করের ভার থেকে মুক্তি পাবার মাত্র দুটি উপায় ছিল ; যথা - কর ছাড়ের জন্য রাজার কাছে আবেদন করা অথবা গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়া। অবশ্য একমাত্র নিরুপায় হয়েই তারা গৃহত্যাগী ও গ্রামত্যাগী হত।
 ভূমি রাজস্ব ছিল রাষ্ট্রের প্রধান আয়। সাধারণত উৎপাদিত ফসলের এক তৃতীয়াংশ রাজস্ব হিসাবে গৃহীত হতো। রাজস্বের হার অত্যধিক হলেও বিশেষ বিশেষ পরিস্থিতিতে আংশিক বা সামগ্রিক মুকুব করা হতো। ভূমিরাজস্ব ছাড়াও লবণকর , বনসম্পদ , খনি ও বৃত্তিকর থেকেও রাষ্ট্রের প্রচুর আয় হতো। গ্রাম্য সভাগুলি কর আদায় করতো। জমি জরিপ করে ভূমি রাজস্ব নির্ধারণ করার রীতি সাম্রাজ্যে প্রচলিত ছিল। আবাদি জমি, মন্দির , পুস্করিণী , সেচ খাল ইত্যাদি করমুক্ত ছিল এবং জলসেচের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখা হতো।

সামরিক বিভাগ :-
চোল রাজাদের সামরিক বিভাগ ছিল সুগঠিত ও সুনিয়ন্ত্রিত। তারা একটি বিশাল স্থায়ী সেনাবাহিনী পোষণ করতেন। সামরিক বাহিনী তিনটি ভাগে বিভক্ত ছিল - পদাতিক , অশ্বারোহী  ও হস্তিবাহিনী। সেনাদের উপযুক্ত সমর  শিক্ষা দেওয়া হতো। সমরনায়কগণ ''নায়ক'' ,  ''সেনাপতি ''ও ''মহাদন্ডনায়ক'' প্রভৃতি নামে পরিচিত ছিলেন। চোল শিলালিপি থেকে জানা যায় যে 70 টি রেজিমেন্ট নিয়ে চোল সেনা বাহিনী গঠিত ছিল। সমগ্র সেনাবাহিনী 1 লক্ষ 50 হাজার সেনা নিয়ে গঠিত ছিল। এদের মধ্যে হাতির সংখ্যা ছিল 60 হাজার।  চোলদের অশ্বারোহী বাহিনীও ছিল সুগঠিত। উন্নত মানের ঘোড়া সংগ্রহ করার ব্যাপারে রাষ্ট্র সচেতন ছিল। পেশাদারী সৈনিক ছাড়াও প্রয়োজনের সময় তীরন্দাজ ও রণ সেনা সংগ্রহ করা হতো। সেনাপতি ও মহাদন্ডনায়ক যুদ্ধক্ষেত্রে যুদ্ধ পরিচালনা করতেন ; যদিও রাজাই  ছিলেন সর্বোচ্চ সমরনায়ক।  চোল রাজাদের নৌবাহিনীও  শক্তিশালী ছিল। করমন্ডল ও মালাবার উপকূল রক্ষা করার ব্যাপারেই  নৌ-বাহিনী নিযুক্ত থাকতো। সেনা স্থানান্তর করার ব্যাপারে পণ্যবাহী জাহাজ গুলিও যথেষ্ট সাহায্য করত। এই নৌবাহিনী সাহায্যেই চোলরাজারা বৃহত্তর ভারতে রাজ্য জয় করতে সক্ষম হয়েছিলেন।



চোলদের স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থা :-
চোল সাম্রাজ্যের শাসন পদ্ধতির প্রধান বৈশিষ্ট্য হল গ্রাম্য স্বায়ত্তশাসন। কয়েকটি গ্রাম নিয়ে স্বায়ত্তশাসনমূলক প্রতিষ্ঠান গঠিত ছিল। চোল কর্মচারীরা গ্রামের সকল ব্যাপারে নিয়মিত অংশগ্রহণ করতেন পরামর্শক হিসেবে। এর ফলে উচ্চমহলে রাজনৈতিক পরিবর্তন সত্ত্বেও গ্রামীণ জীবনধারা ছিল অক্ষুন্ন। গ্রামীণ স্বায়ত্তশাসনের আদর্শ ছিল গ্রামীণ প্রশাসনে গ্রামবাসীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ করা। এই উদ্দেশ্যে প্রতিটি গ্রামে গ্রামীণ সভা বা পরিষদ ছিল এবং সভার ওপর প্রশাসনের দায়িত্ব ন্যস্ত থাকতো। আয়তনে বড় বড় গ্রামগুলিতে একাধিক গ্রামীণ সভা ছিল এবং একজন গ্রামবাসী নিজের প্রয়োজন অনুসারে এক বা একাধিক গ্রামীণ সভার সদস্য হতে পারতো। একটি গ্রাম কয়েকটি ওয়ার্ড বা পল্লীতে বিভক্ত ছিল।  প্রতিটি পল্লীর নিজস্ব সভা ছিল। বিভিন্ন বৃত্তিধারী লোকেরা পল্লীসভায় সভায় যোগ দিত।  বিভিন্ন বৃত্তিধারী  গোষ্ঠী পল্লীসভা  গঠন করলেও তাদের সামাজিক জীবনধারায় মধ্যে মূলগত ঐক্য ছিল।

এই সকল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর ছাড়াও কয়েকটি গ্রাম নিয়ে সাধারণ গ্রামীণ সভা বা পরিষদ ছিল। সাধারণ সভার অন্তর্ভুক্ত ছিল স্থানীয় অধিবাসী বৃন্দ। সাধারণ সভা ছিল তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত যথা -  ''উর'' ,  ''সভা '' ও ''নগরম''।

 গ্রামীণ শাসনকার্যে গ্রামীণ সভাগুলো ছিল সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। সরকারি খাজনা আদায়ের দায়িত্ব পালন করত গ্রামীণ সভাগুলি। কোনো কোনো সময় বিশেষ প্রয়োজনে সভাগুলি নতুন কর ধার্য করার অধিকারী ছিল , কৃষির জল সেচের জন্য কূপ খনন ইত্যাদি। রাষ্ট্রীয় কর থেকে এ বিশেষ করগুলি  পৃথক করে রাখা হতো। সভাগুলি প্রশাসনের সকল নথিপত্র রক্ষা করত। বৃহদাকার সভাগুলি নিজস্ব বেতনভুক্ত কর্মচারী নিযুক্ত করার অধিকারী ছিল। অবশ্য অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গ্রামীণ কর্মচারীরা  ছিল অবৈতনিক স্বেচ্ছাসেবী।

 গ্রামের কৃষি জমির জরিপ , রাজস্ব আদায় , বিরোধ নিষ্পত্তি ও শিক্ষা বিস্তারের ভার  সভার উপর ন্যস্ত ছিল। কৃষি ছাড়া কুটির শিল্পগুলি  গ্রামবাসীদের অর্থনৈতিক জীবনে এক গুরুত্বপূর্ণ অংশগ্রহণ করত।  কুটির শিল্পগুলি গ্রামবাসীদের চাহিদা মেটাত। এককথায় গ্রামগুলি ছিল স্বয়ংসম্পূর্ণ স্বশাসিত। চাষাবাদ , বস্ত্রবয়ন ইত্যাদি প্রয়োজনীয় সকল কিছুই গ্রামবাসীরা নিজেরাই  করত। পণ্যসামগ্রী উদ্বৃত্ত না হওয়ার জন্য অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে লেনদেনের কোন সমস্যা ছিল না। অবশ্য একাদশ শতক থেকে ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসারের ফলে বহু নগরের উৎপত্তি হয়। নগরবাসীর প্রয়োজনে গ্রামে পণ্যসামগ্রীর উৎপাদনের মাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং নগদ মূল্যের বিনিময়ে এই সকল পণ্য সামগ্রী নগরে পাঠানোর রীতি প্রচলিত হয়। এর ফলে চোল  সাম্রাজ্যে মুদ্রার বহুল প্রচলন শুরু হয়।

চোল যুগের ইতিহাসে নগরের  ভূমিকা ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। চোল বংশের ইতিহাসের মধ্যবর্তী পর্যায়ে ( ৯৮৫ - ১১২০ খ্রিস্টাব্দ ) নগরের সংখ্যা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পায়। সমুদ্র উপকূল, চোল  রাজ্যের অভ্যন্তরে নগরায়ন শুরু হয়। তবে  ইউরোপের মধ্যযুগের শেষদিকে নগরায়নের মূলে ছিল ধর্মীয় ও বণিক শ্রেণীর পরস্পর বিরোধী ভূমিকা। কিন্তু চোলযুগে নগরায়নের সার্বিক চরিত্র ছিল শ্রীরঙ্গম , তিরুপতি , তিরুভান্নামালাই প্রভৃতি নগরগুলি ধর্মীয় কেন্দ্র রূপে খ্যাতি লাভ করলেও এগুলি অর্থনৈতিক কার্যকলাপের কেন্দ্রস্থল ছিল। বস্তুতপক্ষে , রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক মর্যাদাকে বৈধতা দানের জন্য ধর্মীয় আদল ব্যবহৃত হতো।

Share
Tweet
Pin
Share