Discuss the career and achievements of Chandragupta II .
Do you consider Chandragupta II and Vikramaditya of ancient folk tales as one and the same ?

 দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের রাজনৈতিক জীবন ও শাসক হিসেবে কৃতিত্ব :-

সমুদ্রগুপ্তের পরবর্তী উত্তরাধিকারী কে ছিলেন সে বিষয়ে ঐতিহাসিক মহলে মতভেদ রয়েছে। রামচন্দ্র - গুণচন্দ্র কর্তৃক রচিত নাটক '' নাট্যদর্শন '' থেকে জানা যায় যে , সমুদ্রগুপ্তের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র সিংহাসনারোহন করেন। বিশাখাদত্ত কর্তৃক রচিত '' দেবীচন্দ্রগুপ্তম '' , বাণভট্ট রচিত '' হর্ষচরিত '' এবং রামগুপ্তের নামাঙ্কিত কতকগুলি তাম্রমুদ্রার ওপর নির্ভর করে  Dr A S Altekar মন্তব্য করেছেন - সমুদ্রগুপ্তের পর রামগুপ্ত সিংহাসনে বসেন , দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত নয়। রামগুপ্ত ছিলেন দুর্বল ও অযোগ্য শাসক। এই সুযোগে এক শকরাজ রামগুপ্তকে পরাজিত করে তাঁর মহিষীকে বন্দী করে বিবাহ করেন এবং তিনিই ছিলেন প্রথম কুমারগুপ্ত ও গোবিন্দগুপ্তের মাতা।



তবে Dr Majumder প্রমুখ ঐতিহাসিক উপরোক্ত ঘটনার ঐতিহাসিকতা অগ্রাহ্য করে বলেছেন যে , সমুদ্রগুপ্ত কর্তৃক স্থাপিত সাম্রাজ্যের ভিত এতটা দুর্বল হয়ে পড়েনি যে তার উত্তরাধিকারীকে এক শকরাজ পরাজিত করবেন। দ্বিতীয়ত , সমুদ্রগুপ্তের অনুশাসনলিপিতে দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের মনোনয়নের উল্লেখ পাওয়া যায় ; তৃতীয়ত , গুপ্তবংশের ইতিহাস সম্পর্কে '' দেবীচন্দ্রগুপ্তম '' ততটা নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ নয়। চতুর্থতঃ গুপ্তরাজদের অনুশাসনলিপিতে কোথাও রামগুপ্তের উল্লেখ নেই।

উপরোক্ত যুক্তি প্রদর্শন করে ডক্টর মজুমদার প্রমুখ ঐতিহাসিক দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তকেই সমুদ্রগুপ্তের পরবর্তী গুপ্তরাজা বলে অভিহিত করেছেন। বিভিন্ন নামে দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত অভিহিত হতেন ; যথা - বিক্রমাদিত্য , নরেন্দ্রচন্দ্র , সিংহচন্দ্র , দেবরাজ , দেবশ্রী - ইত্যাদি। তাঁর মাতার নাম ছিল দত্তাদেবী এবং দুই রানীর নাম ছিল - ধ্রুবদেবী ও কুবেরনাগ। তাঁর দুই পুত্র ও এক কন্যার নাম হল যথাক্রমে - কুমারগুপ্ত , গোবিন্দগুপ্ত ও প্রভাবতীগুপ্ত।



দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের বৈবাহিক সম্বন্ধ :-
গুপ্তরাজাদের বিদেশনীতির ক্ষেত্রে বৈবাহিক সম্বন্ধ এক বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে আছে। প্রথম চন্দ্রগুপ্ত লিচ্ছবি বংশের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করে নিজ মর্যাদা ও প্রতিপত্তি বৃদ্ধি করেছিলেন। সমুদ্রগুপ্ত শক , কুষাণ ও অন্যান্য রাজপরিবারের রাজকন্যাদের উপহারস্বরূপ গ্রহণ করেছিলেন। দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত নিজের সাম্রাজ্য সুদৃঢ় ও শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যে মধ্য ভারতের পরাক্রান্ত নাগবংশের রাজকন্যা কুবের নাগ কে বিবাহ করেন। তিনি নিজ কন্যা প্রভাবতীকে বিদর্ভের বকাটকরাজ দ্বিতীয় রুদ্রসেনের সঙ্গে বিবাহ দেন। রুদ্রসেনের সঙ্গে বৈবাহিক সম্বন্ধ দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তকে গুজরাট ও সৌরাষ্ট্রের শকদের বিরুদ্ধে সহায়তা করে।
এছাড়া কুন্তলের কদম্বরাজ ককুতস্থবর্মনের অনুশাসনলিপি থেকে জানা যায় , গুপ্ত বংশে তাঁর দুই কন্যার বিবাহ হয়। ভোজ ও ক্ষেমেন্দ্রের রচনা থেকে জানা যায় , দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত কুন্তলরাজের নিকট দূত পাঠিয়েছিলেন।

দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের সাম্রাজ্যবিস্তার ও রাজনীতি :-
দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত পিতার মত প্রতাপশালী শাসক ও পরাক্রান্ত যোদ্ধা ছিলেন। তবে তাঁর আমলে সাম্রাজ্যের সম্প্রসারণের তুলনায় সংহতির পরিচয়ই বেশি পাওয়া যায়।
দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের আমলে সাম্রাজ্যের পূর্ব সীমান্ত প্রায় অক্ষুন্ন ছিল। কামরূপের রাজা সমুদ্রবর্মন ও বলবর্মন তাঁর বশ্যতা স্বীকার করেছিলেন। পশ্চিমে এই সাম্রাজ্য যমুনা পর্যন্ত বিস্তারিত ছিল। মথুরায় প্রাপ্ত দুটি লিপি থেকে প্রমাণিত হয় যে , মথুরা তাঁর সাম্রাজ্যভুক্ত ছিল। তবে ডক্টর গয়াল বলেছেন , উত্তরাধিকার সূত্রেই দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত মথুরা লাভ করেছিলেন।

দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য সামরিক কৃতিত্ব হল পশ্চিমে সৌরাষ্ট্র অধিকার করে আরব সাগর পর্যন্ত সাম্রাজ্য বিস্তার করা। তিনি সৌরাষ্ট্রের শকরাজ তৃতীয় রুদ্রসেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করেন। সেই সময় শকরাজ্যে অভ্যন্তরীণ গোলযোগ চলছিল। সাঁচী ও উদয়গিরির অনুশাসনলিপি থেকে জানা যায় যে , দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত পূর্ব মালবে তাঁর বিরাট সেনাবাহিনী , মন্ত্রীবর্গ , সেনাপতি ও করদ মিত্র রাজ্যগুলিকে সমবেত করে পশ্চিম ভারতের শেষ শকরাজ তৃতীয় রুদ্রসেনের বিরুদ্ধে অগ্রসর হন। তৃতীয় রুদ্রসেন পরাজিত হয়ে নিহত হলে তাঁর সাম্রাজ্য গুপ্ত সাম্রাজ্যভুক্ত হয়। শকদের উচ্ছেদসাধন করে দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত '' শকারি '' উপাধি গ্রহণ করেন। দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের সৌরাষ্ট্র অধিকারের ফলে -
(১) ভারতের শেষ শকবংশের অবসান ঘটে এবং গুপ্ত সাম্রাজ্য পশ্চিমে আরব সাগর পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে।
(২) গুপ্ত ভারতের সঙ্গে পাশ্চাত্য দেশগুলির বাণিজ্যিক যোগাযোগ সহজ হয়।
(৩) পশ্চিম উপকূলের কয়েকটি বন্দর এবং গুজরাট ও সৌরাষ্ট্র গুপ্ত সাম্রাজ্যভুক্ত হওয়ায় সাম্রাজ্যের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথ প্রশস্ত করে।

Dr. R.C. Mazumder বলেছেন , শকদের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের জয়লাভের প্রমান মুদ্রাতেও পাওয়া যায়। যেমন - ৩৯৭ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে শকদের মুদ্রার প্রচলন বন্ধ হয়ে যায় এবং ওই সময় থেকে ওখানে গুপ্তরাজদের মুদ্রার প্রচলন ঘটে।

দিল্লির কুতুবমিনারের সন্নিকটে অবস্থিত মেহরাউলি গ্রামে প্রাপ্ত একটি লৌহ স্তম্ভে উৎকীর্ণ লিপি থেকে জানা যায় যে , চন্দ্র নাম এক রাজা বঙ্গের নৃপতিবর্গের সম্মিলিত বাহিনীকে পরাজিত করেন এবং সপ্তসিন্ধু অতিক্রম করেন। ঐতিহাসিকদের মতে , স্তম্ভে উল্লিখিত রাজা চন্দ্র এবং দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত ছিলেন অভিন্ন ব্যাক্তি এবং সেই যুগে তিনি ছাড়া অন্য কোনো নৃপতি পূর্ব ও পশ্চিম ভারতে যুদ্ধবিগ্রহ করে এতগুলি রাজ্য জয় করেন নি। সম্ভবতঃ বাংলাদেশের ক্ষুদ্র সামন্তদের বিদ্রোহ দমন করার উদ্দেশ্যেই চন্দ্রগুপ্ত বাংলাদেশ আক্রমণ করেন। এর ফলে সমগ্র বাংলাদেশের ওপর গুপ্ত সম্রাটের প্রত্যক্ষ শাসন স্থাপিত হয়।
তিনি আফগানিস্তানের কুষাণদের বিরুদ্ধেও যুদ্ধযাত্রা করেন। তবে সামরিক দিক দিয়ে তিনি সাফল্যলাভ করলেও তাঁর যুদ্ধের ফলাফল বা বিবরণ কিছুই জানতে পারা যায় না।     



     দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের কৃতিত্ব :-
দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের রাজত্বকালেই গুপ্ত সাম্রাজ্য গৌরবের চরম শিখরে পৌঁছায়। সমুদ্রগুপ্ত বাহুবলে ভারতের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ঐক্য স্থাপন করেছিলেন সত্য , কিন্তু সমগ্র ভারতে একচ্ছত্র আধিপত্য স্থাপন করতে পারেন নি। পাঞ্জাব ও পশ্চিম ভারতের শক রাজ্যের বিলুপ্তি ঘটিয়ে এবং সমসাময়িক বকাটক , কদম্ব ও নাগ বংশের সঙ্গে বৈবাহিক সম্বন্ধ স্থাপন করে দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত পূর্ব , পশ্চিম ও উত্তর - পশ্চিম ভারতে এক সার্বভৌম রাজশক্তি স্থাপন করতে সক্ষম হন। চৈনিক পরিব্রাজক ফা - হিয়েন তাঁর শাসন ব্যবস্থার উচ্ছসিত প্রশংসা করেছেন।
অনেকে মনে করেন যে , কিংবদন্তীর বিক্রমাদিত্য ও দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত ছিলেন অভিন্ন ব্যাক্তি। কিংবদন্তীর বিক্রমাদিত্য '' শকারি '' ছিলেন এবং তাঁর রাজসভা কালিদাস প্রমুখ নবরত্ন কর্তৃক অলংকৃত ছিল। ঐতিহাসিক সত্য এই যে , দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত পশ্চিম ভারতের শক - ক্ষত্রপদের পরাভূত করেছিলেন। এও সম্ভব যে তাঁর রাজসভায় মহাকবি কালিদাস পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেছিলেন ; তবে নবরত্নদের সকলেই যে তাঁর রাজসভায় ছিলেন সেরকম কোনো প্রমান পাওয়া যায়নি।
সংস্কৃত সাহিত্যে উল্লেখ আছে , বিক্রমাদিত্য তাঁর দুটি রাজধানী পাটলিপুত্র ও উজ্জয়িনী থেকে রাজ্যশাসন করতেন। আবার দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের রাজধানী ছিল পাটলিপুত্র এবং শক - ক্ষত্রপদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনার জন্য তিনি উজ্জয়িনীতে অস্থায়ী রাজধানী স্থাপন করেছিলেন। এরূপ কথিত আছে , দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত '' বিক্রম সম্বৎ '' নামে একটি অব্দের প্রচলন করেছিলেন। কিন্তু এটি যে দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তই প্রচলন করেছিলেন এরূপ কোনো প্রমান পাওয়া যায়  নি। তবে উভয়ের মধ্যে সাদৃশ্য এত বেশী যে , এই কথা নিশ্চিতভাবে বলা কঠিন নয় - যে , দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত স্বয়ং কিংবদন্তীর বিক্রমাদিত্য ছিলেন অথবা কিংবদন্তির কাহিনীর অনুকরণে তিনি  '' বিক্রমাদিত্য '' অভিধা গ্রহণ করেছিলেন। Dr. R.C. Mazumder  এর মতে , বিক্রম সম্বৎ ও রাজা বিক্রমাদিত্যের যথার্থ সম্পর্ক ও পরিচয় ভারত ইতিহাসে আজও অমীমাংসিত প্রশ্ন।


বিক্রম সম্বৎ :-
''বিক্রম সম্বৎ'' ও ''শক সম্বৎ'' সম্বন্ধে যে কাহিনী প্রচলিত আছে তার উৎস আজও রহস্যাবৃত। এক গণনা অনুসারে খ্রিস্টপূর্ব ৫৮ অব্দ থেকে বিক্রম সম্বৎ এর সূচনা। বহুকাল পর্যন্ত মধ্য ও পশ্চিম ভারতে শক ও দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। এ কথা ঐতিহাসিকভাবে সত্য যে , দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত '' বিক্রমাদিত্য '' অভিধা গ্রহণ করেন এবং পশ্চিম ভারতের শকশক্তি বিধ্বস্ত করেন। কিন্তু চারশো বছর পূর্বে যে বিক্রমাব্দের প্রচলন হয় তার সাথে দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের কোনো যোগ ছিল না। তথাপি এও সত্য যে , খ্রিস্টীয় অষ্টম শতকে শকারি বিক্রমাদিত্য সম্বন্ধে লোককাহিনী প্রচারিত হলে বিক্রমাদিত্যের সাথে বিক্রম সম্বৎ জড়িয়ে পরে। বিক্রমাদিত্য যথার্থ কে ছিলেন - তা আজও সুস্পষ্ট নয়। বিক্রম সম্বৎ এর উৎস আজও এক অমীমাংসিত সমস্যা ; যদিও এই সম্পর্কে কয়েকটি মতামতের উল্লেখ করা যেতে পারে।

কিংবদন্তী বা লোককাহিনী অনুসারে বিক্রমাদিত্য নামে উজ্জয়িনীর এক রাজা ছিলেন যিনি বিক্রম সম্বৎ এর প্রবর্তক। মারতুঙ্গ নামে এক জৈন লেখক বলেন যে , শকদের বিতাড়িত করে বিক্রমাদিত্য উজ্জয়িনী পুনর্দখল করেন এবং বিজয়ের স্মৃতি রক্ষার্থে তিনি শক অব্দের প্রচলন করেন। এই লোককাহিনী সত্য হলে বলা যায় যে , সেই বিক্রমাদিত্য খ্রিস্টপূর্ব ৫৮ অব্দে জীবিত ছিলেন। অধিকাংশ ইতিহাসবিদ এই জৈন কিংবদন্তীকে অলীক বলে অভিহিত করেন। বিক্রমাদিত্য নামে উজ্জয়িনীর কোনো রাজা ছিলেন এবং তিনি খ্রিস্টপূর্ব ৫৮ অব্দে কোনো সম্বৎ প্রবর্তন করেন - এমন দাবীর ঐতিহাসিক সাক্ষ্য এখনও অজ্ঞাত।      


       
                    

Share
Tweet
Pin
Share