ভাষাতত্ত্ব

 মধ্য ভারতীয় আর্য ভাষা :-
মধ্য ভারতীয় আর্যভাষার সময়সীমা আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ অব্দ থেকে ৯০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ব্যাপ্ত।
মধ্য ভারতীয় আর্যভাষার ধ্বনিগত ও রূপগত নানা স্তরের বিবর্তনের মধ্যে দিয়েই নব্য ভারতীয় আর্যভাষার জন্ম হয়। এই মধ্য ভারতীয় আর্যভাষার স্তরকে মূলত প্রাকৃত ভাষার স্তর বলা হয় , তবে তার সঙ্গে আংশিকভাবে পালি ভাষাও যুক্ত। প্রাকৃত ভাষা সংস্কৃত থেকে বিবর্তিত সহজতর ভাষা , এটি জনসাধারণের মুখের ভাষা। এই ভাষাটিই জনসাধারণের ব্যবহৃত ভাষা রূপে সর্বভারতীয় স্তরে নানাভাবে , নানারূপে গড়ে ওঠে। কার্যকারণ সূত্রে এই মধ্য ভারতীয় আর্যভাষার বিভিন্ন কালপর্বে বিভিন্ন আঞ্চলিক রূপ লক্ষ্য করা যায়। তাই ভাষাবিজ্ঞানীরা এইসব আঞ্চলিক রূপ বা আঞ্চলিক আঞ্চলিক উপভাষাকে ভিন্ন ভিন্ন প্রাকৃত রূপে চিহ্নিত করতে চেয়েছেন।


যেহেতু , মধ্য ভারতীয় আর্যভাষা আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ অব্দ থেকে ৯০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত নানাভাবে বিবর্তিত হয়েছে সেহেতু ভাষাবিজ্ঞানীরা তাঁদের বিস্তারিত ভাষাতাত্ত্বিক গবেষণায় এই মধ্য ভারতীয় আর্যভাষার বিবর্তনের স্বরূপকে তিনটি স্তরে বিভক্ত করেছেন -

প্রথম স্তর :- 
এর সময়কাল আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ অব্দ থেকে ১০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। এই স্তরে আঞ্চলিক ভাষারূপের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে -
(১) উত্তর - পশ্চিমা
(২) দক্ষিণ - পশ্চিমা
(৩) প্রাচ্য - মধ্যা
(৪) প্রাচ্যা।
এই আঞ্চলিক ভাষাগুলির নিদর্শন পাওয়া যায় - অশোকের কালসী , ধৌলি ও জৌগড় অনুশাসনে।



দ্বিতীয় স্তর :-
এর আনুমানিক সময়কাল খ্রিস্টীয় ১ম শতাব্দী থেকে খ্রিস্টীয় ৬ষ্ঠ শতাব্দী পর্যন্ত। এই স্তরে আঞ্চলিক ভাষারূপের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে -
(১) পৈশাচী প্রাকৃত
(২) মহারাষ্ট্রী প্রাকৃত
(৩) শৌরসেনী প্রাকৃত
(৪)  মাগধী প্রাকৃত
(৫) অর্ধমাগধী প্রাকৃত।
এদের সাহিত্যিক নিদর্শন পাওয়া যায় - জৈন ধর্মসাহিত্য , সংস্কৃত নাটকের নারী ও ভৃত্যের সংলাপ , নীতিকাব্য , ছন্দশাস্ত্র - ইত্যাদিতে।

তৃতীয় স্তর :- 
এই স্তরের সময়কাল আনুমানিক খ্রিস্টীয় ৬ ষ্ঠ শতক থেকে ৯ ম শতাব্দী পর্যন্ত। এই স্তরে আঞ্চলিক ভাষারূপের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে -
(১) পৈশাচী অপভ্ৰংশ
(২) মাহারাষ্ট্রী অপভ্ৰংশ
(৩) শৌরসেনী অপভ্ৰংশ
(৪) মাগধী অপভ্ৰংশ
(৫) অর্ধ - মাগধী অপভ্ৰংশ।

এই ঐতিহাসিক বর্গীকরণের সূত্রানুযায়ী অনুমান করা হয় মধ্য ভারতীয় আর্যভাষার উত্তর - পশ্চিমা শাখা থেকে জন্ম নিয়েছে পৈশাচী - প্রাকৃত , দক্ষিণ -পশ্চিমা শাখা থেকে শৌরসেনী প্রাকৃত ও মহারাষ্ট্রী প্রাকৃত , প্রাচ্য - মধ্যা থেকে অর্ধমাগধী প্রাকৃত ও প্রাচ্যা থেকে মাগধী প্রাকৃত। এদেরই অপভ্ৰংশ স্তর থেকে আধুনিক ভাষাগুলির জন্ম।

পালি ভাষার মধ্যে কোনো বিশেষ অঞ্চলের কথ্য ভাষার বৈশিষ্ট প্রাধান্য পায়নি বলে এই ভাষাকে সাহিত্যিক ভাষা বলাই ভালো। পালির অপর নাম মাগধী। তাই অনেকেই বলে থাকেন - মগধই হল পালি ভাষার উৎপত্তিস্থল। অবশ্য , পালি ভাষার সঙ্গে মাগধী প্রাকৃতের নয় শৌরসেনী প্রাকৃতের সাদৃশ্য লক্ষ্য করেছেন সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়। পালি ভাষায় রচিত নিদর্শনগুলোর মধ্যে ''ত্রিপিটক '' এবং বুদ্ধের জীবনকাহিনী নিয়ে লেখা '' জাতকের গল্প '' উল্লেখযোগ্য। পালি ভাষায় লেখা উৎকৃষ্ট কবিতা কবিতা সংকলন গ্রন্থ হল - '' সুত্তনিপাত '' এবং '' থেরগাথা '' ।         


      
   

Share
Tweet
Pin
Share