Discuss the career and achievements of Samudragupta .

Discuss the career and achievements of Samudragupta .


      শাসক ও বিজেতা হিসেবে সমুদ্রগুপ্তের কৃতিত্ব 


সমুদ্র গুপ্ত সম্পর্কিত প্রধান ঐতিহাসিক উপাদান হলো তার সভাকবি হরিষেণ  কর্তৃক রচিত এলাহাবাদ প্রশস্তি এবং বর্তমান মধ্যপ্রদেশের এড়ান শিলালেখ। এছাড়া সমুদ্রগুপ্তের অন্তত পাঁচটি বিভিন্ন ধরনের মুদ্রা তার জীবন ও রাজত্বকালের অন্যতম বৈশিষ্ট্যরূপে  বিবেচিত হয়। এছাড়া চৈনিক ঐতিহাসিকদের রচিত গ্রন্থ থেকে সমুদ্রগুপ্তের রাজত্বের বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায়। এছাড়া আর্যমন্জুশ্রীমূলকল্প এবং তান্ত্রিকামন্ডক  নামক এক ধর্মীয় গ্রন্থে সমুদ্রগুপ্তের উল্লেখ পাওয়া গেছে।



সিংহাসনারোহন :- এলাহাবাদ স্তম্ভ লিপিতে ঐতিহাসিকরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে সম্ভবত প্রথম চন্দ্রগুপ্তের মৃত্যুর পর রাজপরিবারে উত্তরাধিকার সংক্রান্ত বিরোধের সূত্রপাত হয়। কয়েকটি স্বর্ণমুদ্রায় কচ নামক রাজার  উল্লেখ পাওয়া যায়। স্মিথ মন্তব্য করেছিলেন যে কচ ছিলেন সমুদ্রগুপ্তের প্রতিদ্বন্দ্বী অপর এক ভ্রাতা এবং সমুদ্রগুপ্ত তাকে হত্যা করে সিংহাসন দখল করেন। কিন্তু সম্ভবত সমুদ্রগুপ্ত ও কচ অভিন্ন। সমুদ্রগুপ্তের পূর্বনাম ছিল কচ এবং তিনি রাজ্য জয়ের পর সমুদ্রগুপ্ত নাম ধারণ করেন ; কেননা কচ কর্তৃক প্রচারিত স্বর্ণমুদ্রার অপরদিকে '' সর্বরাজচ্ছেতা ''  উপাধিটি একমাত্র সমুদ্রগুপ্তের ক্ষেত্রে প্রযুক্ত করা হয়েছে।
 Dr R.K. Mukherjee  এর মতে সমুদ্রগুপ্তের রাজত্ব আনুমানিক 325 থেকে 380 অব্দ পর্যন্ত ছিল এবং 380 খ্রিস্টাব্দে তার উত্তরাধিকারী দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের রাজত্বকাল শুরু হয়।

রাজ্যজয় :- '' শক্তিমান মাত্র যুদ্ধ করিবে এবং শত্রূ নিপাত করিবে '' - কৌটিল্যের এই নীতি সমুদ্রগুপ্ত অনুসরণ করেছিলেন তিনি রাজ্য জয়ের মাধ্যমে গুপ্তরাজ্যকে সর্বভারতীয় সাম্রাজ্যে পরিণত করে রাষ্ট্রীয় ঐক্য স্থাপন করেছিলেন। তাই Smith তাকে '' ভারতের নেপোলিয়ান '' বলে অভিহিত করেছেন।



এলাহাবাদ প্রশস্তি তে সমুদ্রগুপ্ত কর্তৃক রাজ্যগুলিকে চারটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে প্রথম শ্রেণীতে দক্ষিণ ভারতের 12 টি রাজ্যের নাম ;দ্বিতীয় শ্রেণীতে আর্যাবর্তের নয়জন রাজার নাম ; তৃতীয় শ্রেণী ভুক্ত ছিল মধ্য ভারতের অরণ্যময় আটবিক রাজ্যের নৃপতিরা , পাঁচটি প্রত্যন্ত রাজ্যের নৃপতিরা এবং নয়টি উপজাতীয় প্রজাতন্ত্র। সমুদ্রগুপ্ত আটবিক রাজ্যের নৃপতিদের দাসত্বে  পরিণত করেছিলেন অন্যান্য নৃপতিদের করদানে বাধ্য করা হয়।   চতুর্থ শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত ছিল কিছুসংখ্যক ক্ষুদ্র স্বাধীন ও অর্ধস্বাধীন রাজ্য যার নৃপতিরা সমুদ্রগুপ্তের সন্তোষ বিধানে সর্বদা সচেষ্ট থাকতেন। আর্যাবর্তের প্রায় সকল রাজ্যেই গুপ্ত সাম্রাজ্যভুক্ত করে সমুদ্রগুপ্ত ''সর্বরাজচ্ছেতা ''   উপাধি গ্রহণ করেছিলেন।
সমুদ্র গুপ্ত উত্তর ভারতের যে নয় জন রাজাকে পরাজিত করে তাদের সাম্রাজ্য নিজ রাজ্যভুক্ত করেছিলেন তাঁরা হলেন রুদ্রদেব ( বকাটক বংশ ) , মতিল , নাগদত্ত , চন্দ্রবর্মন ( শুশুনিয়া বা পশ্চিমবঙ্গ ) , গণপতিনাগ ( মথুরা ) , অচ্যুত ( অহিচ্ছত্র রাজ্য ) , নাগসেন ( পদ্মাবতীর নাগবংস ) , নন্দীন , বলবর্মন  -প্রমুখ। দক্ষিন ভারতে সমুদ্রগুপ্ত কর্তৃক বিজিত বারোটি রাজ্য এবং তাদের রাজার নাম হল - কোশলের মহেন্দ্র , মহাকান্তারের ব্যঘ্ররাজা , কৌরোলের মন্তরাজ , কোত্তরের স্বামীদত্ত , এরন্ডের দমন , কাঞ্চীর বিষ্ণুগোপ , অভমুক্তার নীলরাজ , কুস্থলাপুরের ধনঞ্জয় , হস্তিবর্মন , উগ্রসেন , কুবের - প্রমুখ।
এলাহাবাদ প্রশস্তি থেকে জানা যায় , দক্ষিণ ভারতের ঐ বারোটি রাজ্য সম্পর্কে সমুদ্রগুপ্ত '' গ্রহণ - মোক্ষ - পরিগ্রহ '' - এই অভিনব নীতি গ্রহণ করেছিলেন। তিনি বিজিত রাজন্যবর্গের কাছ থেকে কেবলমাত্র আনুগত্যের শপথ নিয়েই সন্তুষ্ট ছিলেন। সম্ভবতঃ সুদূর পাটলিপুত্র থেকে দক্ষিণ ভারতের ওপর নিরঙ্কুশ আধিপত্য বজায় রাখা সম্ভব হত না বলেই তিনি ঐরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন। এ তাঁর রাজনৈতিক দূরদর্শিতার পরিচায়ক।
এলাহাবাদ প্রশস্তিতে উল্লেখ আছে যে , রাজ্যজয় সমাধা করে সমুদ্রগুপ্ত       
 '' অশ্বমেধ যজ্ঞ '' করেন এবং '' পরাক্রম '' শব্দ সমন্বিত এক বিশেষ মুদ্রার প্রচলন করেন। 

 এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।


সীমান্ত রাজন্যবর্গের আনুগত্য লাভ :- 
সমুদ্রগুপ্তের দিগ্বিজয়ে আতঙ্কিত হয়ে পূর্ব ও পশ্চিম ভারতের সীমান্ত অঞ্চলের - যথা - সমতাত , কামরূপ , নেপাল , মালব , অর্জুনয়ন , আভীর - ইত্যাদি রাজ্যের নৃপতিরা তাঁর প্রতি আনুগত্য স্বীকার করেন এবং কর প্রদানে সম্মত হন। এমনকী , উত্তর - পশ্চিম ভারতের কুষাণ ও গুজরাটের শক রাজাও তাঁর বশ্যতা স্বীকার করেন।

বৈদেশিক রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক :-
সমুদ্রগুপ্তের সামরিক খ্যাতি কেবলমাত্র ভারতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। ভারতীয় উপমহাদেশের বাইরেও তাঁর প্রভাব বিস্তার লাভ করে। চৈনিক সূত্র থেকে জানা যায় যে ,  সিংহলের রাজা শ্রীমেঘবর্মন বুদ্ধগয়ায় একটি বৌদ্ধ সংঘরাম প্রতিষ্ঠা করার অনুমতি চেয়ে প্রচুর উপঢৌকনসহ সমুদ্রগুপ্তের নিকট দূত পাঠিয়েছিলেন। সমুদ্রগুপ্তের অনুমতিক্রমে উক্ত সংঘরাম টি নির্মিত হয়। হিউ - এন - সাং এই সংঘরামটিকে '' মহাবোধি সংঘরাম '' বলে অভিহিত করেছেন। প্রায় এক হাজার মহাজন বৌদ্ধ মতালম্বী বৌদ্ধ ভিক্ষুরা এই সংঘরামে বসবাস করতেন। এর উল্লেখ এলাহাবাদ প্রশস্তিতেও রয়েছে।
এছাড়া দক্ষিণ - পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশ , যথা - মালয় , সুমাত্রা , যবদ্বীপ প্রভৃতি হিন্দু রাষ্ট্রগুলির ওপরেও সমুদ্রগুপ্ত আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন। এর পূর্বে বা পরে কোনো নরপতি এই সকল উপনিবেশগুলির ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। 
 
প্রশাসনিক সংস্কারক ও শাসক হিসেবে সমুদ্রগুপ্ত :-
মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের পর সমুদ্রগুপ্তই সর্বপ্রথম সমগ্র ভারতে এক সার্বভৌম রাজশক্তি স্থাপন করেছিলেন। তাঁর সামরিক অভিযানের ব্যাপকতা এবং রাষ্ট্রীয় আধিপত্যের বিস্তার লক্ষ্য করে তাঁকে '' ভারতের নেপোলিয়ন '' বলে অভিহিত করেছেন। দিগ্বিজয়ের আদর্শ অনুসরণ করে তিনি যে বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন তা ইতিপূর্বে কোনো ভারতীয় নৃপতি করতে পারেন নি। বিশাল রাজ্যজয়ের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর '' সমুদ্রগুপ্ত '' নামের সার্থকতা পাওয়া যায়। Dr R. K. Mukherjee - র মতে , '' সমুদ্রগুপ্ত '' অভিধার অর্থ হল - তিনি সমুদ্র দ্বারা সুরক্ষিত বা পরিবেষ্টিত ছিলেন। দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের মথুরা লিপিতে বলা হয়েছে , '' সমুদ্রগুপ্তের খ্যাতি চার সমুদ্র পর্যন্ত ব্যাপ্ত ছিল '' । এলাহাবাদ প্রশস্তিতে তাঁকে '' সর্বরাজচ্ছেতা '' বা বিশ্বের অপ্রতিদ্বন্দী যোদ্ধা বলে বর্ণনা করা হয়েছে। 

তিনি একটি সবল কেন্দ্রীয় শাসনের প্রতিষ্ঠা করে ছোট ছোট রাজ্যের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্বের অবসান ঘটিয়েছিলেন। সম্ভবতঃ এই কারণেই তিনি '' বিক্রমাঙ্ক '' বা '' বিক্রম '' অভিধা গ্রহণ করেছিলেন। 

সামরিক প্রতিভার সঙ্গে সঙ্গে তিনি কূটনৈতিক দূরদর্শিতারও পরিচয় দিয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য তাঁর দাক্ষিণাত্য নীতি। আর্যাবর্তের রাজ্যগুলি জয় করে তিনি নিজ সাম্রাজ্যভুক্ত করেছিলেন। কিন্তু দাক্ষিণাত্যের বারোটি রাজ্য জয় করে শুধুমাত্র আনুগত্যের শপথ নিয়েই তিনি সন্তুষ্ট ছিলেন। কেননা সুদূর পাটলিপুত্র থেকে দাক্ষিণাত্যের ওপর নিরঙ্কুশ আধিপত্য আধিপত্য রাখা সম্ভব হত না। এছাড়া , পশ্চিমের নাগরা ছিলেন গুপ্ত বংশের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী। নাগদের সঙ্গে বকাটকদের মিত্রতার সম্পর্ক ছিল। যাতে নাগবংশ ও বকাটকরা ঐক্যবদ্ধ না হতে পারে তারজন্য সমুদ্রগুপ্ত নাগরাজ্য আক্রমণ করেন। 

শাসক হিসাবেও তিনি সাফল্যলাভ করেন। তিনি বৈদেশিক প্রভাব থেকে শাসন ব্যবস্থাকে মুক্ত করে প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধন করেন। উত্তর ভারতের মুসলিম অভিযানের পূর্ব পর্যন্ত সমুদ্রগুপ্ত কর্তৃক প্রবর্তিত শাসন ব্যবস্থা মোটামুটি অপরিবর্তিত ছিল। 

পরিশেষে বলা যায় , সমুদ্রগুপ্ত যে কেবল দিগ্বিজয়ী বীর ছিলেন তাই নয় ; তিনি একাধারে বিদ্যোৎসাহী , সুকবি , সঙ্গীতজ্ঞ ছিলেন। বীণাবাদনরত সমুদ্রগুপ্তের মুদ্রা তাঁর সঙ্গীত রুচীর পরিচায়ক। হরিষেন তাঁকে একাধারে বৃহস্পতি ও নারদের সাথে তুলনা করেছেন। বহুমুখী প্রতিভার জন্য এলাহাবাদ প্রশস্তিতে তাঁকে '' কবিরাজ '' আখ্যা দেওয়া হয়েছে। সমুদ্রগুপ্তই সর্বপ্রথম সম্পূর্ণ ভারতীয় মুদ্রা প্রচলন করেন। তাঁর শিল্পমন্ডিত স্বর্ণমুদ্রা গুপ্তযুগের গৌরব। এক কথায় তাঁর মুদ্রাগুলি বৈদেশিক প্রভাব থেকে মুক্ত ছিল এবং তাঁর সর্বভারতীয় মনোভাব প্রকাশিত হয়েছিল। এছাড়া , সিংহলরাজ মেঘবর্মণকে  বৌদ্ধগয়ায় বৌদ্ধমঠ নির্মাণের অনুমতি প্রদান ও বৌদ্ধ পন্ডিত বসুবন্ধুকে মন্ত্রীপদে নিয়োগ করা - ইত্যাদি ঘটনার মাধ্যমে তাঁর পরধর্মসহিষ্ণু চরিত্রটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এই সমস্ত দিক বিচার করে বলা যায় , সমুদ্রগুপ্তকে ''রাজচক্রবর্তী '' আখ্যায় ভূষিত করা যথার্থতা লাভ করেছে।


      
        
        

Share
Tweet
Pin
Share