­
প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলি আলোচনা কর। - NANDAN DUTTA

প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলি আলোচনা কর।

by - March 24, 2025

প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলি আলোচনা কর।  




প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য :- 


জীবনবিকাশের বিভিন্ন পর্যায়গুলির মধ্যে বাল্যকাল একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়। বাল্যকালের জন্য নির্ধারিত শিক্ষাস্তর হল প্রাথমিক শিক্ষাস্তর। প্রাথমিক শিক্ষাস্তর শিশুর জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়। প্রাথমিক শিক্ষাস্তরকে দুটি পর্যায়ে ভাগ করা হয় - নিম্নপ্রাথমিক ও উচ্চপ্রাথমিক। সাধারণতঃ প্রথম শ্রেণী থেকে চতুর্থ বা পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত নিম্নপ্রাথমিক শিক্ষাস্তর এবং পঞ্চম বা ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত উচ্চ প্রাথমিক শিক্ষাস্তর। প্রাথমিক শিক্ষার বিভিন্ন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলি হল - 

১. শিক্ষার্থীর মধ্যে সুঅভ্যাস গঠন :- 
প্রাথমিক শিক্ষার একটি প্রধান উদ্দেশ্য হল - শিশুদের মধ্যে গঠন করে তোলা। এই সুঅভ্যাসগুলির মধ্যে অন্যতম হল - নিয়মিত নখ ও দাঁত পরিষ্কার , হাত ধোয়া , বইপত্র গুছিয়ে রাখা , পারিপার্শ্বিক পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা - ইত্যাদি। এইসকল সুঅভ্যাসগুলি শিশুর পরবর্তী জীবনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। 

২. সামাজিকতার বিকাশ :- 
প্রাথমিক বিদ্যালয় হল শিশুর জীবনের প্রথম দিকের বিদ্যালয়। যেহেতু বিদ্যালয় সমাজের একটি ক্ষুদ্র সংস্করণ - তাই বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া এবং পঠন পাঠনে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে শিশু বৃহত্তর সমাজ জীবনের সঙ্গে পরিচিত হয়। সমাজের আদব - কায়দা , রীতিনীতি , সমাজ স্বীকৃত আচার - আচরণ - ইত্যাদি বিষয়গুলির সঙ্গে পরিচিত হয়। তাই শিশুর মধ্যে সামাজিকতার বিকাশ ঘটানো প্রাথমিক শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য। 


৩. নৈতিকতার বিকাশ :- 
প্রাথমিক শিক্ষার অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হল শিশুর মধ্যে নৈতিকতার বিকাশ ঘটানো। প্রাথমিক শিক্ষায় শিশুর মধ্যে ন্যায় - নীতির বোধ , ঠিক - ভুলের বিচার - ইত্যাদি সম্পর্কে পরিচিত করানো হয়। এইভাবে শিশুর মধ্যে নৈতিকতার বিকাশ ঘটে। 

৪. সাংস্কৃতিক বিকাশ :- 
সংস্কৃতি শিক্ষাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। শিক্ষা ও সংস্কৃতি পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত। তাই শিশুকে তার সংস্কৃতি সম্পর্কে পরিচিত করানো প্রাথমিক শিক্ষার একটি অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য। নিজ সংস্কৃতি সম্পর্কে অবগত না হলে কোনো শিক্ষাই সম্পূর্ণ হতে পারেনা। 

৫. পরিবেশ সচেতনতা :- 
প্রাথমিক শিক্ষা শিশুকে তার পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন করে তোলে। বর্তমান পরিবেশের গতি - প্রকৃতি , পরিবেশের অবনমন , পরিবেশের অবনমন প্রতিরোধে শিশুর ভূমিকা - ইত্যাদি সম্পর্কে প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যমে শিশু সচেতন হয়ে ওঠে। পৃথিবীর বর্তমান সমস্যাগুলির মধ্যে অন্যতম প্রধান হল পরিবেশের বিপর্যয়। তাই শিশুকে পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন করে তোলা - প্রাথমিক শিক্ষার একটি অন্যতম উদ্দেশ্য। 

৬. ভাষার বিকাশ :- 
শিশুর মধ্যে ভাষার ভাষার বিকাশ ঘটানো হল - প্রাথমিক শিক্ষার একটি অন্যতম উদ্দেশ্য। ভাষা হল ভাবপ্রকাশের অন্যতম মাধ্যম। তাই ভাষার প্রতি দক্ষতা তৈরী না হলে শিশুর পরবর্তী শিক্ষালাভের ক্ষেত্রে বিঘ্ন ঘটবে। প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে মূলতঃ মাতৃভাষাকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়। 

৭. বৌদ্ধিক বিকাশ :- 
শিশুর মধ্যে বৌদ্ধিক বিকাশ ঘটানো হল প্রাথমিক শিক্ষার অপর একটি প্রধান উদ্দেশ্য। বৌদ্ধিক বিকাশের মধ্যে অন্যতম হল - ভাষার বিকাশ , শব্দ স্বাচ্ছন্দ , কার্য - কারণ সম্পর্ক নির্ধারণ , গাণিতিক জ্ঞান - ইত্যাদি। শিশুকে উক্ত বিষয়গুলি সম্পর্কে জ্ঞান প্রদান করা - প্রাথমিক শিক্ষার একটি অন্যতম উদ্দেশ্য। 


৮. শিশুর সর্বাঙ্গীন বিকাশ :- 
প্রাথমিক শিক্ষার প্রধান লক্ষ্য হল শিশুর সর্বাঙ্গীন বিকাশ। শিশুর মধ্যে - শারীরিক , মানসিক , সামাজিক , নৈতিক , জ্ঞানমূলক - ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণের বিকাশ ঘটিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা তার উদ্দেশ্য পূরণ করে। বর্তমান বিশ্বের প্রায় সকল সচেতন রাষ্ট্র শিশুর সার্বিক বিকাশকেই প্রাথমিক শিক্ষার প্রধান লক্ষ্য হিসাবে বিবেচনা করেছেন। 

৯. সুনাগরিকতার শিক্ষা :- 
প্রতিটি শিশু ভবিষ্যতের নাগরিক। তাই প্রতিটি শিশুকে সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তোলা প্রাথমিক শিক্ষার একটি প্রধান উদ্দেশ্য। একজন সুনাগরিক হিসাবে শিশুকে কোন কোন দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে হবে - সে সম্পর্কে প্রাথমিক শিক্ষা শিশুকে সচেতন করে তোলে। এইভাবে প্রতিটি প্রাথমিক স্তরের শিশুর মধ্যে ভবিষ্যতে সুনাগরিক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।  

১০. মানব সম্পদ উন্নয়ন :- 
জ্ঞান মানুষকে সমৃদ্ধ করে এবং মানুষ সেই জ্ঞান দ্বারা নিরপেক্ষ বস্তুকে সম্পদে পরিণত করে। মানুষ তখনই সম্পদে পরিণত হবে যখন তার মধ্যে উৎপাদনশীলতা তৈরী হবে। তাই প্রাথমিক শিক্ষার অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হল শিশুর মধ্যে প্রয়োজনীয় জ্ঞান সঞ্চালন করে তোলা এবং তার মধ্যে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা। 

১১. সৃজনশীলতার বিকাশ :- 
শিশুকে সৃজনশীল করে তোলা এবং শিশুর মধ্যে লুকিয়ে থাকা কৃষ্টিমূলক সম্ভাবনাগুলোকে প্রকাশিত করা প্রাথমিক শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য। প্রতিটি শিশুর মধ্যে সুপ্ত অবস্থায় থাকা সৃজনশীলতা শিশুর ব্যক্তিত্বকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। তাই প্রাথমিক শিক্ষা শিশুর সৃজনশীল গুণাবলীকে আত্মপ্রকাশ করার সুযোগ প্রদান করে। 

১২. দৈহিক বিকাশ :- 
শিশুর যথাযথ দৈহিক বিকাশ প্রাথমিক শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য। প্রাথমিক শিক্ষা একদিকে যেমন শিশুকে বিভিন্ন অঙ্গসঞ্চালনামূলক কর্মে প্রবৃত্ত করে এবং অন্যদিকে বিভিন্ন স্বাস্থ্যকর অভ্যাসগুলি সম্পর্কে শিশুকে সচেতন করে। 

প্রাথমিক শিক্ষার অন্যান্য উদ্দেশ্যগুলি হল - 

১৩. শ্রমের প্রতি শিশুদের মর্যাদাবোধ গড়ে তোলা। 
১৪. জানার প্রতি কৌতূহল বৃদ্ধি করা। 
১৫. শিশুর মধ্যে সৌন্দর্যবোধের বিকাশ। 
১৬. বোধগম্যতার বিকাশ। 
১৭. ভবিষ্যৎ শিক্ষার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করে তোলা। 
১৮. সকল শিশুর জন্য শিক্ষা ও সামাজিক ক্ষেত্রে সমসুযোগ তৈরী করা। 
১৯. মৌলিক অধিকার সম্পর্কে শিশুদের সচেতন করা। 
২০. জ্ঞানার্জন ও বিদ্যালয়ের প্রতি আগ্রহ তৈরী করা - ইত্যাদি।   

You May Also Like

0 comments