আমলাতন্ত্র কাকে বলে ? আমলাতন্ত্রের বৈশিষ্টগুলি আলোচনা কর।
আমলাতন্ত্র কাকে বলে ? আমলাতন্ত্রের বৈশিষ্টগুলি আলোচনা কর।
আমলাতন্ত্র :-
আমলাতন্ত্র হল শাসনবিভাগের অরাজনৈতিক অংশ। আমলাতন্ত্রের সকল সদস্যগণ স্থায়ীভাবে নিযুক্ত সরকারি কর্মচারী। ব্যুৎপত্তিগত অর্থে আমলাতন্ত্র শব্দের অর্থ টেবিল শাসনব্যবস্থা। আমলাতন্ত্র সরকারি নীতি ও কর্মসূচিগুলিকে বাস্তবে রূপায়িত করার দায়িত্ব পালন করে এবং নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে সরকারকে সহায়তা করে। সরকারি সকল সিদ্ধান্ত আমলাতন্ত্রের মাধ্যমেই কার্যকর হয়।
সাধারণভাবে বলা যায় , আমলাতন্ত্র হল সরকারের অরাজনৈতিক ও স্থায়ী অংশ যাঁরা নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে সরকারকে সহায়তা করে , সরকারি সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন ঘটায় ও কর্মসূচি রূপায়ণ করে।
আমলাতন্ত্রের বৈশিষ্ট :-
১. অরাজনৈতিক :-
আমলাতন্ত্র হল শাসনবিভাগের অরাজনৈতিক অংশ। রাজনীতি , নির্বাচনে অংশগ্রহণ , জনমত গঠন - ইত্যাদির সঙ্গে আমলাতন্ত্রের কোনো সম্পর্ক নেই। চাকরির শর্ত হিসাবে আমলাদের রাজনীতি নিরপেক্ষ থাকতে হয়।
২. স্থায়ী :-
শাসনবিভাগের রাজনৈতিক অংশের সদস্যগণ নির্বাচনের মাধ্যমে নিযুক্ত হন ; তাই তারা স্থায়ী নন ; কিন্তু আমলারা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সাফল্যের মাধ্যমে নির্বাচিত হন এবং অবসর গ্রহণের সময়কাল পর্যন্ত তিনি স্থায়ীরূপে শাসন বিভাগের সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
৩. নিরপেক্ষতা :-
আমলাদের সকল প্রকার রাজনৈতিক আদর্শের উর্দ্ধে উঠে কাজ করতে হয়। সরকারি কর্মসূচি রূপায়ণ , দৈনন্দিন শাসন ব্যবস্থা পরিচালনা , শান্তি - শৃঙ্খলা রক্ষা , নীতি নির্ধারণ - ইত্যাদি ক্ষেত্রে আমলাদের নিরপেক্ষতা বজায় রেখে কাজ করতে হয়।
৪. সরকারি নীতি নির্ধারণে সহায়তা :-
সরকারি নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে আমলাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শাসনবিভাগের রাজনৈতিক অংশের তুলনায় সমাজের সকল ক্ষেত্রের তথ্য ও পরিসংখ্যার ক্ষেত্রে আমলাদের স্পষ্ট ধারণা থাকে। ফলে আমলাদের সহায়তা ছাড়া সরকারের পক্ষে নীতি নির্ধারণ অসম্ভব।
৫. কর্মসূচি রূপায়ণ ও সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন :-
সরকারি সকল কর্মসূচি ও সিদ্ধান্ত আমলাদের মাধ্যমেই বাস্তবায়িত হয়। এক্ষেত্রে বিকেন্দ্রীকরণের নীতি অনুসৃত হয়। আমলাতন্ত্রের শক্তিশালী সংগঠনিক কাঠামোর মাধ্যমে সরকারি যেকোনো সিদ্ধান্ত বা কর্মসূচিকে বাস্তব রূপ দেওয়া হয়।
৬. নিরবচ্ছিন্নতা বজায় রাখা :-
আমলাতন্ত্র সরকারি কাজকর্মের নিরবচ্ছিন্নতা বজায় রাখে। শাসনবিভাগের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে উত্থান - পতন , অনিশ্চয়তা - ইত্যাদি লেগেই থাকে ; এছাড়াও হঠাৎ মন্ত্রিসভার পতন ঘটলে বা সরকার ভেঙে গেলে - সেই সকল সময়ে আমলাতন্ত্র শাসনবিভাগের বিভিন্ন অংশের কাজকর্মে নিরবচ্ছিন্নতা বজায় রাখে।
৭. নিয়ন্ত্রণ :-
আমলাগণ জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত হন না বা সংসদ কর্তৃক মনোনীত হন না। তাই আমলাদের জনগণ বা সংসদের কাছে দায়িত্বশীল থাকতে হয়না। আমলাগণ সাধারণতঃ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মন্ত্রীর নিকট দায়িত্বশীল থাকেন। আমলাদের কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মন্ত্রীর হাতে থাকে।
৮. নিয়মানুবর্তিতা :-
আমলাতন্ত্রের অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট হল কঠোর নিয়মানুবর্তিতা ও শৃঙ্খলা। সরকারি নীতি ও সিদ্ধান্ত রূপায়ণ , দৈনন্দিন প্রশাসন পরিচালনা - ইত্যাদি ক্ষেত্রে যে বিপুল দায় - দায়িত্ব তা পালন করতে নিয়মানুবর্তিতা হল আমলাতন্ত্রের চাকরির একটি অন্যতম শর্ত।
৯. সাংগঠনিক বিষয় :-
প্রতিটি রাষ্ট্রে আমলাতন্ত্রের সাংগঠনিক ক্ষেত্রে ক্রমোচ্চঃ বিভাজন লক্ষ্য করা যায়। সরকারি সকল কাজকর্ম যথাযথভাবে সম্পাদন করতে আমলাতন্ত্রের সাংগঠনিক কাঠামোর সকল স্তরের দক্ষতা ও কর্মকুশলতা একান্তভাবে অপরিহার্য।
১০. চাকুরী সংক্রান্ত শর্ত :-
আমলাদের নিয়োগ হয় নির্দিষ্ট রাষ্ট্রকৃত্যক কমিশনের দ্বারা। তাঁদের বেতন , পদোন্নতি - ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়গুলি পূর্ব হতেই নির্দিষ্ট থাকে। তাঁদের পদচ্যুতির বিষয়গুলিও স্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ থাকে। সাধারণতঃ রাষ্ট্রদ্রোহিতা , অনৈতিকতা - ইত্যাদি ক্ষেত্রে তাঁদেরকে পদচ্যুত করা হয়।
১১. বহুমুখী কার্য সম্পাদন :-
আমলাতন্ত্রের কার্যাবলী বহুমুখী। জনকল্যাণমূলক কাজ থেকে শুরু করে , সরকারি কর্মসূচি রূপায়ণ ; নীতি নির্ধারণে সহায়তা থেকে শুরু করে দৈনন্দিন প্রশাসন পরিচালনা - ইত্যাদি বিবিধ ধরণের কার্যাবলী রূপায়ণের সঙ্গে যুক্ত থাকতে হয় আমলাদের। এই বহুমুখী কার্যাবলীকে সফলভাবে পরিচালনা করতে আমলাদের যথেষ্ট দক্ষতার অধিকারী হতে হয়।
১২. দীর্ঘসূত্রতা ও অন্যান্য নেতিবাচক দিক :-
অনেক সময় আমলাতন্ত্রের মধ্যে দীর্ঘসূত্রতা লক্ষ্য করা যায়। এছাড়াও , ক্ষমতার অপব্যবহার , অনৈতিকতা , জনস্বার্থ সম্পর্কে উদাসীনতা - ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণের নেতিবাচক বৈশিষ্টগুলি আমলাতন্ত্রের গৌরবময় দিকগুলিকে ম্লান করে তোলে।
0 comments