­
আধুনিক রাষ্ট্রে আইনসভার কার্যাবলী আলোচনা কর। - NANDAN DUTTA

আধুনিক রাষ্ট্রে আইনসভার কার্যাবলী আলোচনা কর।

by - April 13, 2025

আধুনিক রাষ্ট্রে আইনসভার কার্যাবলী আলোচনা কর।  




আধুনিক রাষ্ট্রে আইনসভার কার্যাবলী আলোচনা কর।  

যেকোনো রাষ্ট্রে আইনসভার প্রধান কাজ হল আইন প্রণয়ন ও আইন সংশোধন। আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলিতে আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে আইনসভা পূর্ণাঙ্গ ক্ষমতা উপভোগ করে। আইনসভা এককক্ষ বিশিষ্ট বা দ্বি - কক্ষ বিশিষ্ট উভয়ই হতে পারে এবং উভয় ক্ষেত্রেই আইনসভা আইন প্রণয়ন ও সংশোধন সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে আধুনিক রাষ্ট্রে আইন প্রণয়ন ছাড়াও আইনসভাকে আরও বিভিন্ন কাজ করতে হয়। আধুনিক রাষ্ট্রে আইনসভার প্রধান কাজগুলি হল - 

১. আইন প্রণয়ন :- 
আইন প্রণয়ন করা হল আইনসভার প্রধান কাজ। আইন প্রণয়নের সময় জনগণের ইচ্ছা - অনিচ্ছা , আশা - আকাঙ্খা - ইত্যাদি বিষয়গুলির প্রতি আইনসভার সদস্যরা বিশেষ দৃষ্টি রাখেন। এছাড়াও পরিবর্তনশীল জনমত এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির কথা মাথায় রাখতে হয়। 

২. আইন সংশোধন :- 
পরিবর্তনশীল সমাজ ও গতিশীলতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিভিন্ন আইনকে সময়ে সময়ে সংশোধন করতে হয়। আইন সভায় প্রস্তাব উপস্থাপন , আলোচনা , ভোটাভুটি - ইত্যাদির মাধ্যমে আইনসভা আইন সংশোধন করে। 

৩. জনগণের চাহিদার বাস্তবায়ন :- 
আইনসভার মাধ্যমেই জনগণের ইচ্ছা - অনিচ্ছা , আশা - আকাঙ্খা , ও বিভিন্ন চাহিদার বাস্তবায়ন ঘটে। জনপ্রতিনিধিগণ জনগণের চাহিদার বিষয়গুলি আইনসভায় উপস্থাপন করেন এবং তার ভিত্তিতে আইন প্রণীত হলে জনগণের চাহিদার বাস্তবায়ন ঘটে। 

৪. শাসন বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ :- 
সংসদীয় শাসন ব্যবস্থায় শাসন বিভাগ নির্বাচিত হয় আইনসভার মধ্যে থেকেই। তাই শাসন বিভাগের অস্তিত্ব ও কার্যকাল নির্ভর করে আইন বিভাগের সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থনের উপর। শাসনবিভাগকে সরাসরি আইনবিভাগের প্রতি দায়িত্বশীল থাকতে হয়। শাসন বিভাগের কোনো সিদ্ধান্ত আইন সভায় সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন না পেলে তা বাতিল হয়ে যায়। 


৫. সদস্যদের আচরণ নিয়ন্ত্রণ :- 
আইনসভা তার সকল সদস্যদের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে। অনৈতিকতা , দুর্নীতি , শৃঙ্খলাভঙ্গ - ইত্যাদি ঘটনা ঘটলে আইনসভা অভিযুক্ত সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। 

৬. বাজেট সংক্রান্ত কাজ :- 
সরকারি আয় - ব্যয়ের সমস্ত হিসাব , পরবর্তী অর্থবর্ষের জন্য বিভিন্ন ব্যয় - বরাদ্দ - ইত্যাদি বিষয় বা বাজেট আইনসভাতেই উপস্থাপন করা হয় এবং আইনসভার সমর্থনের ভিত্তিতে সেই সকল ব্যয় - বরাদ্দ নিয়ন্ত্রিত হয়। 

৭. কর সংক্রান্ত কাজ :-
যেকোনো ধরণের নতুন কর প্রবর্তন করতে বা প্রচলিত করের পুনর্বিন্যাস করতে আইনসভার অনুমতি প্রয়োজন হয়। আইনসভার অনুমতি ছাড়া কোনো নতুন কর ধার্য্য করা যায়না। 

৮. জনকল্যাণমূলক পরিকল্পনা রূপায়ণ :- 
আইনসভার সদস্যরা রাষ্ট্রের বিভিন্ন অংশের বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে নতুন সরকারি নীতি প্রবর্তিত হয়। তাই জনকল্যাণমূলক বিভিন্ন পরিকল্পনা রূপায়ণের ক্ষেত্রে আইনসভা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

৯. বিচারপতিদের পদচ্যুতি সংক্রান্ত কাজ :- 
সংসদীয় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় গুরুতর অভিযুক্ত বিচারপতিদের পদচ্যুতি সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব আইনসভাকেই পালন করতে হয়। যেমন ভারতে , হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের আইনসভায় উপস্থিত দুই - তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থনে পদচ্যুত করা যায়। 


১০. বিভিন্ন কমিটি ও কমিশন গঠন :- 
আধুনিক জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রগুলিতে অর্থনৈতিক , সামাজিক , শিক্ষামূলক , সংখ্যালঘু উন্নয়ন , নারী ও শিশু কল্যাণ , দুর্নীতি প্রতিরোধ - ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম পরিকল্পনা রূপায়ণের জন্য আইনসভা বিভিন্ন কমিটি ও কমিশন নিয়োগ করে। এই কমিটি ও কমিশনগুলি সরাসরি আইনসভার প্রতি দায়বদ্ধ থাকে। 

১১. নির্বাচন সংক্রান্ত ক্ষমতা :- 
সংসদীয় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলিতে রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচন করাও হল আইনসভার অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। যেমন ভারতে রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে আইনসভার ভূমিকাই প্রধান। আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আপদকালীন অবস্থায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করে মার্কিন কংগ্রেস। 

১২. রাজনৈতিক চেতনার বিকাশ :- 
আইনসভাতে যেকোনো খসড়া বিল উপস্থাপনের সময় সদস্যদের মধ্যে সেই খসড়া বিল সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ - আলোচনা , তর্ক - বিতর্ক ইত্যাদি অনুষ্ঠিত হয়। এই তর্ক বিতর্ক সংবাদপত্র , দূরদর্শন - ইত্যাদি গণমাধ্যমে প্রচারিত হলে সাধারণ মানুষের মধ্যে রাজনৈতিক চেতনার বিকাশ ঘটে। 

১৩. শিক্ষামূলক কাজ :- 
বিভিন্ন আইনসভাতে নির্দিষ্ট সময়ে ছাত্র - ছাত্রী , গবেষক ও অনুসন্ধিৎসু মানুষদের জন্য আইনসভাতে প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়। ফলে আইনসভার কার্যপদ্ধতি তাঁরা স্বচক্ষে পর্যবেক্ষণ করতে পারেন এবং সংসদীয় কার্যপদ্ধতি সম্পর্কে তাঁদের অভিজ্ঞতার বিকাশ ঘটে। 

১৪. জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত ক্ষমতা :- 
রাষ্ট্রের আপদকালীন পরিস্থিতিতে শাসন বিভাগ জরুরি অবস্থা জারি করে। কিন্তু একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জরুরি অবস্থা জারি করার সরকারি সিদ্ধান্তকে আইনসভা কর্তৃক অনুমোদিত হতে হয়। তা না হলে জরুরি অবস্থার নির্দেশ বাতিল হয়ে যায়। 

১৫. বিচারালয় সংক্রান্ত্র ক্ষমতা :- 
কোনো নতুন বিচারালয় স্থাপন করা , বিচারালয়ের ক্ষমতার পরিধি সম্প্রসারণ বা সংকোচন করা , অধঃস্তন আদালতকে উর্ধ্বতন আদালতে পরিণত করা - ইত্যাদি দায়িত্বও আইনসভাকে পালন করতে হয়। 

পরিশেষে বলা যায় , পৃথিবীর সকল রাষ্ট্রের আইনসভার  ক্ষমতা ও কার্যাবলী এক প্রকারের নয়। যেমন ভারতের আইনসভা শাসনবিভাগ ও রাষ্ট্রপ্রধানকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেও মার্কিন কংগ্রেস রাষ্ট্রপ্রধানকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনা ; কেননা মার্কিন রাষ্ট্রপতি সরাসরি জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত হন।   

You May Also Like

0 comments