­
এককক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা ও দ্বি - কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার পার্থক্য। - NANDAN DUTTA

এককক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা ও দ্বি - কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার পার্থক্য।

by - April 11, 2025

এককক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা ও দ্বি - কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার পার্থক্য।  



এককক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা ও দ্বি - কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার পার্থক্য।  



১. গণতান্ত্রিকতার ক্ষেত্রে পার্থক্য :-  
এককক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা সম্পূর্ণরূপে গণতান্ত্রিক। কেননা , এককক্ষ বিশিষ্ট আইনসভায় সদস্যরা সরাসরি জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হন। 
পক্ষান্তরে দ্বি - কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার উচ্চকক্ষের সদস্যদের নির্বাচনের ক্ষেত্রে জনগণের কোনো ভূমিকা থাকেনা। তাই , গণতন্ত্রের প্রেক্ষিতে বিচার করতে হলে এককক্ষ বিশিষ্ট আইনসভাই কাম্য। 

২. দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে পার্থক্য :- 
আইনসভা এককক্ষ বিশিষ্ট হলে - আইন প্রণয়ন , আইন পরিবর্তন , সিদ্ধান্ত গ্রহণ - ইত্যাদি কাজ খুব দ্রুততার সঙ্গে করা যায়। 
অন্যদিকে , দ্বি - কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভায় নিম্নকক্ষ ও উচ্চকক্ষের মধ্যে মতবিরোধ তৈরী হলে সিদ্ধান্তগ্রহনের ক্ষেত্রে অযথা বিলম্ব হয়। 

৩. জরুরি অবস্থার ক্ষেত্রে পার্থক্য :-  
আপৎকালীন সময়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রয়োজন হয়। এককক্ষ বিশিষ্ট আইনসভায় যেহেতু দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ সম্ভব হয় , তাই জরুরি অবস্থার সময় এককক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা অনেক বেশি কার্যকর। 
কিন্তু , দ্বি - কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভায় আলোচনা , তর্ক - বিতর্ক - ইত্যাদির ফলে সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব হয়। তাই জরুরি অবস্থার ক্ষেত্রে দ্বি - কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা উপযুক্ত নয়।   

৪. যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার প্রেক্ষিতে পার্থক্য :-  
যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় জাতীয় ও প্রাদেশিক স্বার্থ সুরক্ষিত হয় দ্বি - কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা দ্বারা। কিন্তু আইনসভা এককক্ষ বিশিষ্ট হলে প্রাদেশিক স্বার্থগুলি উপেক্ষিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যায়। তাই যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় এককক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা উপযুক্ত নয়। 


৫. ব্যায়ভারের ক্ষেত্রে পার্থক্য :-  
দ্বি - কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার তুলনায় এককক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার ব্যায়ভার অনেকটা কম। আইনসভায় দুটি কক্ষ থাকলে বহুসংখ্যক সদস্যদের জন্য আর্থিক ব্যয় প্রচুর হয়। কিন্তু এককক্ষ বিশিষ্ট আইনসভায় সেই ব্যায়ভার অনেকটা কমিয়ে ফেলা যায় এবং সেই অর্থ জাতীয় উন্নয়ন ও জনকল্যাণমূলক কার্যে ব্যয় করা যেতে পারে। 

৬. সংখ্যালঘু শ্রেণীর স্বার্থরক্ষার প্রশ্নে পার্থক্য :-  
কোনো কোনো রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মতে , আইনসভা দ্বি - কক্ষ বিশিষ্ট হলে উচ্চ কক্ষ সংখ্যালঘু শ্রেণীর স্বার্থরক্ষার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। কেননা , উচ্চকক্ষে সংখ্যালঘু শ্রেণী যথেষ্ট সংখ্যক প্রতিনিধি পাঠাতে পারে। 
কিন্তু এককক্ষ বিশিষ্ট আইনসভায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক সংখ্যালঘু প্রতিনিধি না থাকলে সংখ্যালঘুদের স্বার্থ বিঘ্নিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।   

৭. স্বৈরাচারের ক্ষেত্রে পার্থক্য :-  
দ্বি - কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা নিম্নকক্ষের নিয়ন্ত্রক রূপে কাজ করে এবং নিম্নকক্ষের স্বৈরাচার প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।  
কিন্তু , আইনসভা এককক্ষ বিশিষ্ট হলে আইনসভার স্বৈরাচারী হয়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকে। যেহেতু আইনসভাতে শাসক দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকে , তাই শাসক দল নিজেদের স্বার্থের অনুকূলে যেকোনো ধরণের আইন প্রণয়ন করতে পারে। সেক্ষেত্রে এককক্ষ বিশিষ্ট আইনসভাকে নিয়ন্ত্রণ করার কোনো উপায় থাকে না। 

৮. সুচিন্তিত আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে পার্থক্য :-  
আইনসভার উচ্চ কক্ষ হল জ্ঞানীগুণী মানুষদের সমাবেশ। তাই যেকোনো ধরণের আইন প্রণয়ন করার সময় উচ্চ কক্ষের বিশেষজ্ঞরা সেই সকল প্রস্তাবিত আইন গুলির চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে পারেন ও প্রয়োজনে তার পরিবর্তন  করতে পারেন। 
কিন্তু আইনসভা এককক্ষ হলে তা সম্ভব হয়না। 


৯. সদস্যদের যোগ্যতা সংক্রান্ত পার্থক্য :- 
এককক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার সদস্যরা জনগণ  কর্তৃক সরাসরি নির্বাচিত হন। তাঁরা দক্ষ রাজনীতিবিদ হলেও আইন প্রণয়নের যে সকল যোগ্যতা ও দক্ষতা দরকার হয় , অনেক সময় তা জনপ্রতিনিধিদের থাকেনা। ফলে তাঁদের তৈরী আইন কতটা জনকল্যাণের কাজে আসবে - তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। 
কিন্তু , উচ্চ কক্ষ হল জ্ঞানীগুণী মানুষদের সমাবেশ। তাঁরা নিজ নিজ ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ে অসামান্য জ্ঞান ও দক্ষতার অধিকারী হয়ে থাকেন। 

১০. রাজনৈতিক শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে পার্থক্য :-  
এককক্ষ বিশিষ্ট আইনসভাতে যেহেতু শুধুমাত্র শাসক দলের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হয় , তাই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তর্ক - বিতর্ক , আলোচনা - ইত্যাদির কোনো অবকাশ থাকেনা। ফলে যেকোনো ধরণের আইন , সিদ্ধান্ত ইত্যাদি বিষয়ে সংবাদ মাধ্যম ও জনসাধারণের কোনো আগ্রহ থাকেনা। ফলে জনসাধারণের মধ্যে রাজনৈতিক শিক্ষার বিস্তার ঘটেনা। 

১১. গঠনগত ক্ষেত্রে পার্থক্য :- 
দ্বি -কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভায় দুটি কক্ষ থাকে - নিম্নকক্ষ ও উচ্চ কক্ষ। নিম্নকক্ষের প্রতিনিধিরা জনগণ কর্তৃক সরাসরি নির্বাচিত হন এবং উচ্চ কক্ষের প্রতিনিধিরা পরোক্ষভাবে রাজনৈতিক দলগুলি কর্তৃক নির্বাচিত হন। 
কিন্তু এককক্ষ বিশিষ্ট আইনসভায় একটিমাত্র কক্ষ থাকে এবং প্রতিনিধিরা জনগণ কর্তৃক সরাসরি নির্বাচিত হন। 

১২. অস্তিত্ব বিষয়ক পার্থক্য :- 
আধুনিক বৃহৎ রাষ্ট্রগুলি সাধারণতঃ যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে অনুসরণ করে এবং সেখানে দ্বি - কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। 
অন্যদিকে এককক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা সাধারণতঃ এককেন্দ্রিক ও ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগুলিতে পরিলক্ষিত হয়। তবে এক্ষেত্রে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন ব্যাতিক্রম। একটি বৃহৎ রাষ্ট্র ও বিপুল জনসংখ্যা বিশিষ্ট রাষ্ট্র হওয়া স্বত্ত্বেও চীনে এককক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা লক্ষ্য করা যায়। 

You May Also Like

0 comments