­
বিচারবিভাগের ক্ষমতা ও কার্যাবলী। - NANDAN DUTTA

বিচারবিভাগের ক্ষমতা ও কার্যাবলী।

by - April 14, 2025

বিচারবিভাগের ক্ষমতা ও কার্যাবলী। 




বিচারবিভাগের ক্ষমতা ও কার্যাবলী। 


বিচারবিভাগ সমাজে ন্যায় - বিচার প্রতিষ্ঠা করে , মানুষের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার রক্ষা করে , সরকারের স্বৈরাচারিতা রোধ করে। লর্ড ব্রাইস বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতাকে সরকারের উৎকর্ষতা বিচারের মানদন্ড বলে মন্তব্য করেছেন। অ্যালান বল বিচারবিভাগের কার্যাবলীকে চারভাগে ভাগ করেছেন ; যথা - (ক ) সাংবিধানিক ব্যাখ্যা ও বিচারবিভাগীয় আলোচনা , (খ ) বিভিন্ন ব্যক্তি , প্রতিষ্ঠান , সরকার ও রাজনৈতিক - সামাজিক সংস্থাগুলির বিরোধের মীমাংসা করা , (গ ) রাজনৈতিক ব্যবস্থার সংরক্ষণ ও (ঘ ) মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা। 

আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলিতে গণতন্ত্রের প্রকৃতি নির্ভর করে বিচারবিভাগের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতার উপর। বিচারবিভাগ যদি স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কর্তব্য পালন করতে না পারে বা দুর্নীতিগ্রস্থ হয় , তাহলে নাগরিক অধিকার ও গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ উভয়ই বাধাপ্রাপ্ত হয়। তবে শুধুমাত্র মামলার বিচার করাই বিচার বিভাগের একমাত্র কাজ নয়। বিচারবিভাগের কাজ বহুমুখী। সেগুলি হল - 

১. সংবিধানের ব্যাখ্যা :- 
বিভিন্ন আদালতে বিভিন্ন মামলায় সংবিধানের ব্যখ্যা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন জড়িত থাকে। সেইরকম পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটলে সাংবিধানিক ব্যাখ্যার গুরুদায়িত্ব বিচারবিভাগকেই পালন করতে হয়। 

২. সংবিধানের রক্ষাকর্তা :- 
অনেকসময় আইনসভা শাসন বিভাগের চাপে বাধ্য হয়ে জনস্বার্থ বিরোধী আইন প্রণয়ন করতে হয়। কিন্তু বিচারবিভাগ এই সকল জনস্বার্থ বিরোধী আইনগুলির প্রতি সচেতন থাকে এবং সেগুলিকে বাতিল করে দেয় বা পরিবর্তন করার পরামর্শ প্রদান করে। সংবিধানের মৌলিক নীতি ও আদর্শ যাতে ক্ষতিগ্রস্থ না হয় - সেদিকে বিচারবিভাগ সর্বদা নজর রাখে। 


৩. গণতন্ত্রের সদা জাগ্রত প্রহরী :- 
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার বুনিয়াদ বিচারবিভাগের উপর নির্ভরশীল। নিরপেক্ষ বিচারব্যবস্থা সরকারের স্বৈরাচারিতা রোধ করে , ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করে , মানুষের মৌলিক অধিকার সুরক্ষিত করে - বিচারবিভাগ গণতন্ত্রকে রক্ষা করে। 

৪. ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা :- 
বিশ্বের প্রতিটি দেশের প্রতিটি বিচারালয়ে সারা বছর প্রচুর মামলা জমা হয়। বিচারবিভাগ সেই সকল মামলাগুলির নিরপেক্ষ নিস্পত্তি করে সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে ও বিচারব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা বজায় রাখে। রাজনৈতিক ও শাসনবিভাগের চাপের কাছে মাথা নত না করে বিচার বিভাগ সমাজে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করে।     

৫. বিরোধের মীমাংসা :- 
মামলার বিচার ছাড়াও বিচারবিভাগকে বিভিন্ন ধরণের বিরোধের মীমাংসা করতে হয়। যেমন - কেন্দ্র সরকারের সঙ্গে এক বা একাধিক রাজ্যের বিরোধ , এক রাজ্যের সঙ্গে অপর এক বা একাধিক রাজ্যের বিরোধ , একাধিক রাজ্যের সঙ্গে একাধিক রাজ্যের বিরোধ , আইনবিভাগ ও শাসন বিভাগের মধ্যে বিরোধ - ইত্যাদি। 

৬. আইনের প্রয়োগ সংক্রান্ত কাজ :- 
শুধুমাত্র প্রচলিত আইনের সাহায্যে বিচার কার্য সম্পাদন করাই নয় - তার সঙ্গে সঙ্গে আইনভঙ্গকারীকে আইনানুগ শাস্তি প্রদান করাটাও বিচার বিভাগের কাজ। বর্তমানে বিচারবিভাগ ব্যতীত সরকারের অন্য কোনো বিভাগ বা সংস্থা নাগরিকদের শাস্তি প্রদান করতে পারেনা। 

৭. মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ :- 
শাসন বিভাগ অনেক সময় স্বৈরাচারী মনোভাবাপন্ন হয়ে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার ও অন্যান্য নাগরিক অধিকারগুলি সংকুচিত করতে চায় , বিরোধী কণ্ঠস্বর ধামাচাপা দিতে চায়। এর সঙ্গে জড়িত থাকে ব্যক্তিগত ও দলীয় স্বার্থ ও ফ্যাসিবাদী মানসিকতা। তাই এইসকল ব্যবস্থার বিরুদ্ধে মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে বিচারবিভাগকে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হয়। 


৮. নির্দেশ প্রদান :- 
বিচারবিভাগ যেকোনো ব্যক্তি , সংস্থা , প্রতিষ্ঠান , রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার - সকলকে নিজ নিজ কার্য যথাযথভাবে পালনের জন্য নির্দেশ দান করতে পারে। এমনকী , উর্দ্ধতন আদালত নিম্নতর আদালতকেও এমন নির্দেশ দিতে পারে। আদালতের এই নির্দেশ অমান্য করলে তা আদালত অবমাননার শাস্তিযোগ্য অপরাধে পরিণত হয়। 

৯. পরামর্শ প্রদান :- 
বিচারবিভাগ - আইন ও শাসন বিভাগকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরামর্শ প্রদান করতে পারে। আবার অনেকসময় আইনবিভাগ ও শাসন বিভাগ - বিচারবিভাগের কাছ থেকে পরামর্শ প্রার্থনা করে। তবে , বিচারবিভাগ কর্তৃক প্রদত্ত পরামর্শ আইন বা শাসন বিভাগ মেনে চলতে বাধ্য নয়। 

১০. লেখ জারির ক্ষমতা :- 
লেখ জারির ক্ষমতা হল মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষার্থে বিচারবিভাগের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা। বিচারবিভাগ যেকোনো আটককারী কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিতে পারে আটক হওয়া ব্যক্তিকে বিচারালয়ে উপস্থিত করানোর জন্য। বিচারবিভাগের এই ক্ষমতাটির জন্য মানুষের মৌলিক অধিকার সুরক্ষিত হয় ও সরকারের স্বৈরাচার রোধ করা যায়। 

১১. বিচারক প্রণীত আইন :- 
বিচারালয়ে যে সকল মামলাগুলি জমা হয় তার মধ্যে কোনো কোনো এমন থাকে যে , প্রচলিত আইনের সাহায্যে তার নিস্পত্তি করা সম্ভব হয়না। বিচারপতিগণ সেই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন আইনের ব্যাখ্যার মাধ্যমে , পূর্বে আদালত কর্তৃক প্রদত্ত রায়ের মাধ্যমে সেই মামলাগুলির বিচার করেন। এর ফলে নতুন নতুন আইন সৃষ্টি হয়। এগুলিকে বিচারক প্রণীত আইন বলা হয়। 

১২. নিয়োগ সংক্রান্ত ক্ষমতা :- 
বিচারবিভাগ নিজ কার্যক্ষেত্র পরিচালনার জন্য প্রচুর সংখ্যক কর্মচারী নিয়োগ করে। তাদের নিয়োগ ও পদচ্যুতি সংক্রান্ত সমস্ত ক্ষমতা থাকে বিচারবিভাগের হাতে।     

You May Also Like

0 comments