­
আমলাতন্ত্রের কার্যাবলী আলোচনা কর। - NANDAN DUTTA

আমলাতন্ত্রের কার্যাবলী আলোচনা কর।

by - April 09, 2025

আমলাতন্ত্রের কার্যাবলী আলোচনা কর। 



আমলাতন্ত্রের কার্যাবলী :-  


আধুনিক প্রতিটি রাষ্ট্রে আমলাতন্ত্র বহুবিধ দায়িত্ব পালন করে। আমলাতন্ত্র শাসন বিভাগ পরিচালনার গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হিসাবে বিবেচিত। আমলাতন্ত্রের কার্যাবলী বহুমুখী। সরকারি নীতি বাস্তবায়ন থেকে শুরু করে দৈনন্দিন প্রশাসন পরিচালনা , জনকল্যাণ , নীতি নির্ধারণে সরকারকে সহায়তা - ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণের কাজে আমলাগণ নিযুক্ত থাকেন। আমলাতন্ত্রের বিভিন্ন কার্যাবলীগুলি হল - 

১. নীতি প্রণয়নে সহায়তা :- 
সরকারি নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে সরাসরি যুক্ত থাকেন শাসন বিভাগের রাজনৈতিক অংশ অর্থাৎ , নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণ। কিন্তু নীতি নির্ধারণের জন্য যে জ্ঞান , অভিজ্ঞতা ও জনগণের সমস্যার সমাধানের জন্য যে দক্ষতার প্রয়োজন হয় , অনেক ক্ষেত্রেই তা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে থাকেনা। ফলে তাঁদেরকে আমলাতন্ত্রের উপর নির্ভর করতে হয়। আমলাগণ তাঁদের শিক্ষা , জ্ঞান , অভিজ্ঞতা ও দূরদৃষ্টি দ্বারা সরকারকে নীতি প্রণয়নে সহায়তা করেন। 

২. সরকারি নীতি ও কর্মসূচি রূপায়ণ :- 
সরকারি নীতি , সিদ্ধান্ত ও কর্মসূচি রূপায়ণ করা হল আমলাতন্ত্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। সরকারি যাবতীয় নীতি ও কর্মসূচি আমলাতন্ত্রের মাধ্যমেই বাস্তবায়িত হয়। এইসকল নীতি ও কর্মসূচিগুলির সফলতা নির্ভর করে আমলাদের সততা ও দক্ষতার উপর। কর্মসূচি রূপায়ণের ক্ষেত্রে বিকেন্দ্রীকরণের নীতি অনুসৃত হয়। জাতীয় স্তর থেকে প্রাদেশিক স্তর এবং সেখান থেকে জেলা ও ব্লক স্তর পর্যন্ত আমলাগণ নির্দিষ্ট দায়িত্ব পালনের সঙ্গে যুক্ত থাকেন। 

৩. প্রশাসন পরিচালনা :- 
দৈনন্দিন প্রশাসন পরিচালনার শীর্ষ স্তরে থাকেন আমলাগণ। তাঁদের মাধ্যমেই প্রশাসনিক যাবতীয় কর্মকান্ড সংগঠিত হয়। শিক্ষার প্রসার , পঞ্চায়েত উন্নয়ন , নারী ও শিশু কল্যাণ , সরকারি নীতির সুবিধা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া , নগর উন্নয়ন , দুর্নীতি প্রতিরোধ - ইত্যাদি বিভিন্ন দায়িত্ব আমলাদের পালন করতে হয়। এছাড়াও নির্দিষ্ট দপ্তরকেন্দ্রিক দায়িত্বও থাকে। 

৪. সমন্বয়সাধন :- 
যেহেতু প্রশাসনের শীর্ষস্তরে আমলাগণ থাকেন তাই আমলাতন্ত্রের অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল বিভিন্ন দপ্তরের মধ্যে সমন্বয়সাধন। যেমন একজন শিক্ষা অধিকর্তা নতুন শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করলে তাঁকে অর্থ দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয়সাধন করতে হবে। এছাড়াও উর্দ্ধতন ও অধঃস্তন কর্মচারীদের মধ্যে যথাযথ সমন্বয়সাধন ঘটছে কি'না সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখাও আমলাতন্ত্রের কাজ। 


৫. প্রশাসনিক নিরবচ্ছিন্নতা বজায় রাখা :- 
শাসন বিভাগের রাজনৈতিক অংশের সদস্যরা হলেন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। অনেক সময় সরকার ভেঙে গেলে , নির্বাচন পর্যায়ে , রাজনৈতিক উত্থান - পতন ঘটলে - শাসনকার্যে অনিশ্চয়তা দেখা যায়। এই সকল ক্ষেত্রে প্রশাসনিক নিরবচ্ছিন্নতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে আমলাতন্ত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেমন একটি নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ শেষ হলে পরবর্তী সরকার গঠন না হওয়া পর্যন্ত রাজনৈতিক প্রশাসকেরা জনমত , ভোট - ইত্যাদি নিয়েই ব্যাস্ত থাকেন। সেইসময় প্রশাসনের নিরবচ্ছিন্নতা বজায় রাখে আমলাতন্ত্র। 

৬. জাতীয় স্বার্থ রক্ষা :- 
আমলাগণ রাজনৈতিক বিশ্বাস , মতাদর্শ - ইত্যাদির উর্দ্ধে উঠে নিরপেক্ষভাবে কার্য সম্পাদন করেন। একজন আদর্শ আমলা রাজনৈতিক সংকীর্ণতার উর্দ্ধে উঠে জনকল্যাণমূলক কার্য পরিচালনা করেন ও সরকারকে সঠিক নীতি প্রণয়নের পরামর্শ প্রদান করেন। এইভাবে জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষিত হয়। 

৭. দৃঢ় সাংগঠনিক প্রশাসন গঠন :- 
আমলাতন্ত্রের সফলতা নির্ভর করে সাংগঠনিক দক্ষতা , কর্মকুশলতা ও ঐক্যের উপর। প্রশাসনের উঁচু স্তর থেকে নীচু স্তর পর্যন্ত সকল প্রশাসকের ইতিবাচক অংশগ্রহণ , কর্মসূচি রূপায়ণের ক্ষেত্রে সাংগঠনিক কাঠামোকে কাজে লাগানো , সাংগঠনিক ক্ষেত্রের সকল দুর্বলতাগুলিকে চিহ্নিত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ - ইত্যাদি বিভিন্ন কর্মকান্ডের মধ্যে দিয়ে একটি শক্তিশালী আমলাতান্ত্রিক সংগঠন তৈরী হয়। 

৮. রাজনৈতিক ব্যবস্থার সংরক্ষণ :- 
বর্তমান সময়ে প্রায় প্রতিটি রাষ্ট্র জাতিগত ভিন্নতা , দারিদ্রতা , নিরক্ষরতা , জনবিস্ফোরণ , রাজনৈতিক অস্থিরতা - ইত্যাদি বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত। সুগঠিত আমলাতন্ত্র এই সকল সমস্যাগুলি ও জনকল্যাণ - এই দুয়ের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে রাজনৈতিক ব্যবস্থার সংরক্ষণ করেন। সুগঠিত আমলাতন্ত্র না থাকলে উক্ত যেকোনো একটি সমস্যা যেকোনো রাষ্ট্রকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যেতে পারে। 


৯. আধুনিকীকরণ :- 
আমলাতন্ত্র আধুনিকীকরণের অন্যতম মাধ্যম হিসাবে কাজ করে। প্রসাশনিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন আধুনিক কলাকৌশলকে কাজে লাগিয়ে আমলাতন্ত্র প্রশাসনকে আধুনিক করে তোলে। আমলাতন্ত্র বিভিন্ন প্রগতিশীল কর্মসূচি গ্রহণ করে রাষ্ট্রকে আধুনিক ও প্রগতিশীল করে তোলে। তাই আমলাতন্ত্রকে বলা হয় - '' Agency of Modernization ''  ।  

১০. অর্থনৈতিক উন্নয়ন : - 
উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলিতে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমলাতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। রাষ্ট্রকে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে প্রগতিশীল করে তোলার লক্ষ্যে আমলাগণ সরকারকে বিভিন্ন প্রগতিশীল সংস্কার প্রবর্তনের পরামর্শ প্রদান করেন। আবার সরকারি নীতি প্রবর্তিত হওয়ার পর আমলাতন্ত্র সেগুলিকে বাস্তবায়ন করে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন। 

১১. স্বার্থগোষ্ঠী নিয়ন্ত্রণ :- 
আমলাতন্ত্র বিভিন্ন রাজনৈতিক দল , বিভিন্ন স্বার্থগোষ্ঠী , চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী প্রভৃতির চাহিদা , আশা - আকাঙ্খা - ইত্যাদির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে প্রশাসন পরিচালনা করেন। ফলে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে সকল স্বার্থগোষ্ঠীর ভূমিকা নিয়ন্ত্রিত হয়। 

১২. তথ্য প্রদান সংক্রান্ত কাজ :- 
বর্তমান গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলিকে সরকারি নীতি , প্রকল্প ও বিভিন্ন জনহিতকর কর্মসূচি সম্পর্কে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল , সাংবাদিক , সাধারণ মানুষ , উপভোক্তা শ্রেণী - প্রমুখের নিকট তথ্য সরবরাহের সুবন্দোবস্ত করে দেওয়া আমলাতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। 

পরিশেষে বলা যায় , আমলাতন্ত্রের কাজ বহুমুখী। এই বহুমুখী কার্যের সফলতা নির্ভর করে আমলাদের সততা , দক্ষতা ও কর্মকুশলতার উপর। রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ থেকে জনকল্যাণমূলক কর্মসূচিকে বাস্তবায়ন - ইত্যাদির মাধ্যমে শাসন বিভাগের সফলতা বহুলাংশে আমলাতন্ত্রের উপর নির্ভরশীল। 

You May Also Like

0 comments