­
কর্মকেন্দ্রিক বা সক্রিয়তাভিত্তিক পাঠক্রম কাকে বলে ? কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের গুরুত্ব বা উপযোগিতা আলোচনা কর। কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের সীমাবদ্ধতাগুলি কী কী ? - NANDAN DUTTA

কর্মকেন্দ্রিক বা সক্রিয়তাভিত্তিক পাঠক্রম কাকে বলে ? কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের গুরুত্ব বা উপযোগিতা আলোচনা কর। কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের সীমাবদ্ধতাগুলি কী কী ?

by - March 21, 2025

কর্মকেন্দ্রিক বা সক্রিয়তাভিত্তিক পাঠক্রম কাকে বলে ? কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের গুরুত্ব বা উপযোগিতা আলোচনা কর। কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের সীমাবদ্ধতাগুলি কী কী ? 


কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের সুবিধা ও অসুবিধাগুলি আলোচনা কর। 




কর্মকেন্দ্রিক বা সক্রিয়তাভিত্তিক পাঠক্রমের ধারণা :- 


কর্মকেন্দ্রিক বা সক্রিয়তাভিত্তিক পাঠক্রমের মূলকথা হল শিক্ষার্থীর সক্রিয়তা। কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমে শিক্ষার্থীর সামনে বিভিন্ন সমস্যামূলক পরিস্থিতি তৈরী করা হয়। শিক্ষার্থী নিজ আগ্রহ অনুযায়ী সেই সকল সমস্যামূলক পরিস্থিতির সাপেক্ষে সক্রিয় হয়ে অংশগ্রহণ করে। এর ফলে 
(ক ) শিক্ষার্থীর মধ্যে সমস্যা সমাধানের দক্ষতা তৈরী হয় এবং এই অভিজ্ঞতা শিক্ষার্থী নিজের বাস্তব জীবনে কাজে লাগাতে পারে। 
(খ ) শিক্ষার্থীর মধ্যে লুকিয়ে থাকা সুপ্ত সম্ভাবনাগুলির বিকাশ ঘটে। 
(গ ) শিক্ষার্থী সমস্যামূলক পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে শেখে। 
(ঘ ) কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমে শিক্ষার্থী মূলতঃ কাজের মাধ্যমে শেখে। এর ফলে শিক্ষার্থীর আগ্রহ ও দক্ষতার দিকগুলি প্রকাশিত হয় এবং অন্যদিকে , শিক্ষার্থীর দুর্বলতার দিকগুলির প্রতিও বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়। 

কর্মকেন্দ্রিক বা সক্রিয়তাভিত্তিক পাঠক্রমের উপযোগিতা / সুবিধা :-


১. শিক্ষার্থীর সক্রিয়তা বৃদ্ধি :- 
কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রম যেহেতু শিক্ষার্থীর সক্রিয়তার উপর নির্ভরশীল তাই কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর সক্রিয়তা অনিবার্যভাবে বৃদ্ধি পায়। শিক্ষার্থীর মধ্যে বিভিন্ন শিক্ষামূলক কর্মকান্ডে আত্মসক্রিয়তার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। 

২. সমস্যা সমাধানে দক্ষতা বৃদ্ধি :- 
কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমে শিক্ষার্থীর সামনে বিভিন্ন সমস্যমূলক পরিস্থিতি উপস্থাপন করা হয়। এই সমস্যাগুলির প্রতি শিক্ষার্থীকে সক্রিয় হতে হয় এবং সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে হয়। এইভাবে শিক্ষার্থীর মধ্যে সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। 


৩. বৌদ্ধিক বিকাশ :- 
কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমে শিক্ষার্থী নিজেই সক্রিয় হয়ে অংশগ্রহণ করে। এই শিক্ষা থেকে শিক্ষার্থী যে অভিজ্ঞতা লাভ করে তা শিক্ষার্থীর বৌদ্ধিক বিকাশে সহায়তা করে। 

৪. অন্তর্দৃষ্টিমূলক শিখনের সম্ভাবনা বৃদ্ধি :- 
কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর মধ্যে অন্তর্দৃষ্টিমূলক শিখনের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। বিভিন্ন সমস্যামূলক পরিস্থিতির সমাধানসূত্র খুঁজতে গিয়ে শিক্ষার্থী সমস্যাকে সার্বিকভাবে উপলব্ধি করতে শেখে। এরফলে শিক্ষার্থীর মধ্যে অন্তর্দৃষ্টিমূলক বৌদ্ধিক দক্ষতার বিকাশ ঘটে। 

৫. প্রচেষ্টা ও ভুলের শিখনের দক্ষতা বৃদ্ধি :- 
সমস্যামূলক পরিস্থিতির সমাধানে অন্তর্দৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে প্রচেষ্টা ও ভুলের মাধ্যমে শিখনও একটি কার্যকরি উপায়। কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থী সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে প্রচেষ্টা ও ভুলের শিখনের নীতি প্রয়োগ করে এবং ধীরে ধীরে শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রচেষ্টা ও ভুলের নীতি প্রয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী দক্ষ হয়ে ওঠে। 

৬. সৃজনশীলতার বিকাশ :- 
কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রম শিক্ষার্থীর সামনে যেসকল সমস্যামূলক পরিস্থিতি উপস্থাপন করে তা সমাধান করতে শিক্ষার্থীকে ভিন্ন ভিন্ন অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে হয় , ভিন্ন ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করতে হয়। এইভাবে  শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটে। 

৭. শিক্ষার্থীর সার্বিক বিকাশ :- 
কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের মধ্যে দিয়ে শিক্ষার্থীর নৈতিক , প্রাক্ষোভিক , সামাজিক , কৃষ্টিমূলক , সাংস্কৃতিক , বৃত্তিমূলক , দৈহিক , বৌদ্ধিক - ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিকাশ ঘটে। এইভাবে কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রম শিক্ষার্থীর সার্বিক বিকাশে সহায়তা করে। 


৮. শিক্ষকের ভূমিকা :- 
একটি আদর্শ কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রম শিক্ষার্থীর সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষকদেরও সক্রিয় করে তোলে। শিক্ষক এক্ষেত্রে পথ প্রদর্শকের ভূমিকা পালন করেন। 

৯. শিক্ষার্থীর আগ্রহ বৃদ্ধি :- 
কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমে শিক্ষার্থী বহুল স্বাধীনতা উপভোগ করে। নিজের মত করে শেখার সুযোগ পায় ও নিজের আগ্রহের বিষয়গুলিকে শিখতে পারে। ফলে কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমে শিক্ষার্থীর আগ্রহ স্বাভাবিকভাবেই বৃদ্ধি পায়। 

কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের সীমাবদ্ধতা / ত্রুটি / অসুবিধা :- 


(ক ) কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমে শিক্ষার্থী অতিমাত্রায় আগ্রহী হয়ে পড়লে বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পঠন - পাঠন ব্যাহত হয়।     

(খ ) কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমে শিক্ষার্থী যেহেতু স্বাধীনতা লাভ করে , তাই বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পঠন - পাঠনের প্রতি সে আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে। 

(গ ) কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমে বিমূর্ত চিন্তনের সেরকম কোনো সুযোগ না থাকায় শিক্ষার্থী বিমূর্ত চিন্তনের অনুশীলন থেকে বঞ্চিত হয়। 

(ঘ ) যেহেতু বিমূর্ত চিন্তনের খুব বেশি অবকাশ কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের মধ্যে নেই , তাই এই ধরণের শিক্ষা উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে উপযুক্ত নয়। 

(ঙ ) কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের একটি বড় সমস্যা হল আর্থিক বিষয়। কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রম পরিচালনা করতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়। অনেক সময়ই প্রতিষ্ঠান বা শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে প্রচুর অর্থের যোগান সম্ভব হয়না। 

(চ ) কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমে শিক্ষার্থীর জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। শিক্ষার্থী কেবলমাত্র সেইসকল বিষয়ের প্রতিই জ্ঞান অর্জন করে যাতে সে স্বেচ্ছায় অংশগ্রহণ করে। ফলে পঠন পাঠনের অন্যান্য বিষয়গুলিতে শিক্ষার্থীর জ্ঞান সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। 

(ছ ) কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রম পরিচালনার জন্য যোগ্য ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকের অভাব - কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের অপর একটি প্রধান সমস্যা। 

(জ ) কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রম পরিচালনার জন্য বিশেষ ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন। সাধারণ বিদ্যালয়গুলিতে এই ধরণের শিক্ষার ব্যবস্থা করা যথোচিত নয়। 

(ঝ ) কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমে সংস্কৃতি , ঐতিহ্য , মূল্যবোধ - এইসকল বিষয়গুলি অবহেলিত হয়। 

(ঞ ) কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রম সকল প্রকার শিক্ষার্থীর জন্য উপযুক্ত না'ও হতে পারে। 

(ট ) কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রম যদি  বাস্তব জীবনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ না হয় - তাহলে শিক্ষার্থী সহজেই পাঠক্রমের উপর আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। 

(ঠ ) কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমগুলিকে যদি সফলভাবে পরিচালনা না করা হয় তাহলে সময় , অর্থ , শ্রম - ইত্যাদির অযথা অপব্যয় হয়। 

You May Also Like

0 comments