'' জননী জন্মভূমিশ্চ '' কবিতার বিষয়বস্তু।

by - June 06, 2022

'' জননী জন্মভূমিশ্চ '' কবিতার বিষয়বস্তু। 

বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের '' জননী জন্মভূমিশ্চ '' কবিতার বিষয়বস্তু আলোচনা। 

'' জননী জন্মভূমিশ্চ '' কবিতায় কবির জীবন দর্শন। 




জননী জন্মভূমিশ্চ কবিতার বিষয়বস্তু :- 


জননী জন্মভূমিশ্চ কবিতাটি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের স্বদেশ , মানবতা ও জীবন দর্শনমূলক কবিতা।  কবিতার প্রতিটি অংশে ফুটে উঠেছে কবির একান্ত অসহায়তা। এখানে কবি সমাজের প্রতিটি সংবেদনশীল মানুষের প্রতিনিধিত্ব করছেন। কিছুটা হতাশা , কিছুটা অসহায়তা , কিছুটা মানবতাবোধ - এই তিনের সংমিশ্রণে কবিতাটি পাঠকবর্গের নিকট এক সংবেদনশীল আবেদন রেখেছে। 


কবিতার শুরুতেই , প্রথম অংশে , কবিতা শুরু হয়েছে মৃত্যুর পদধ্বনির মধ্যে দিয়ে। প্রিয় মানুষের মৃত্যু মানুষের অসহায় অবস্থাকে চূড়ান্তভাবে প্রকট করে। তাই মৃত্যু ঘটলেও তা সকলকে ম্লানমুখে মেনে নিতে হয়। চলে যাওয়া মানুষটির জন্য বেদনাবোধ তৈরি হলেও দৈনন্দিনের ব্যস্ততা , দৈনন্দিন জীবনযাত্রার দাবীটা এতটা প্রবল থাকে যে সেই বেদনাবোধ যেন ধীরে ধীরে মুছে যেতে থাকে। বাস্তবের প্রবল দাবি মানসিক চাহিদাগুলির পথে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়। 

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে তিনি মানুষের দিকে তাকিয়েছেন। বাস্তব - বর্তমান জীবনে মানুষ আত্মকেন্দ্রিক , স্বার্থকেন্দ্রিক হতে বাধ্য হয়েছেন। চূড়ান্ত আত্মকেন্দ্রিকতা মানুষের মধ্যে আপোষের মনোভাব জাগ্রত  করেছে। মানুষ যেন একেবারে পাথর হয়ে গেছে। কবির ভাষায় , '' মানুষ নামের এক রকম পাথর , '' ।পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন ঘটনা , ঘাত-প্রতিঘাত , হিংসাত্মক আচরণ , বৈষম্য , পরাধীনতা ইত্যাদি কোনো  কিছুতেই মানুষ যেন আজ বিচলিত হয় না। নিজের স্বার্থ বাদ দিলে কোনো কিছুই যেন তাকে প্রভাবিত করতে পারে না। 

তাই তৃতীয় অনুচ্ছেদে কবি আত্মদর্শন করতে চেয়েছেন। কবির ভাষায় -
'' আয়নার সামনে কেউ দাঁড়ালে 
শুধু আয়নাটাই কথা বলে। 
কী যে বলে , তা জানার মানুষ 
আজ আর আমি খুঁজে পাই না। ''
নিজের দিকে দৃষ্টি দিয়ে কবি উপলব্ধি করেছেন - মানুষ আজ নিজের সাথে পরিচিত নয়। নিজের চাহিদা - প্রত্যাশা সবকিছুই যেন বাস্তবের প্রবল দাবীতে কোথায় যেন উবে গেছে। নিজের কথা শোনার ক্ষমতা আর মানুষের মধ্যে অবশিষ্ট নেই। 

চতুর্থ অনুচ্ছেদে তিনি স্বদেশের কথা বলেছেন। মানুষের মধ্যে স্বাদেশিকতা আজ বিলুপ্ত। মানুষ আজ নিজের চারপাশের গন্ডি ছাড়িয়ে সমাজের বৃহত্তর অংশের খবর রাখেনা। রাষ্ট্রের অচল ব্যবস্থাকে তিনি কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকা মানুষের সঙ্গে তুলনা করেছেন। 

কিন্তু কবি স্মৃতির দিকে তাকিয়ে উজ্জ্বল দিনের সন্ধান পান। যেখানে এক সময় পাখি ডাকতো , ফুল ফুটত। ছোটবেলার অসীম আকাঙ্ক্ষা , ভবিষ্যৎ জীবনের পরিকল্পনা - জীবন বসন্তের দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করে। কিন্তু যৌবনে পা দিয়েই সে উন্মাদনাপূর্ণ ও আশা-আকাঙ্খায় পরিপূর্ণ মানসিকতা বাস্তবের প্রবল চাপে কোথায় যেন হারিয়ে যায়। শৈশব ও কৈশোরের জগৎজোড়া স্বপ্ন বিলুপ্ত হয়। কবির  ভাষায় - 
'' তারপর বাঘের মত এক দুপুর এসে আমার মায়ের 
পাড়া জ্বালানো ছোট ছেলেটাকে  ......................
তার কোন চিহ্নই আর পাওয়া গেল না , '' 
কিন্তু জীবনের শেষ প্রান্তে এসে মানুষের প্রতিনিধিস্বরূপ কবি আবার সেই স্বপ্নে পরিপূর্ণ , উন্মাদনাপূর্ণ   দিন গুলোকে মনে করার চেষ্টা করেন। পারিপার্শ্বিক অবস্থা অনুকূল হলেও শৈশব ও কৈশোরের সেই উন্মাদনাকে আর ফিরে পাওয়া যায় না। জীবন সায়াহ্নে এসে মানুষ উপলব্ধি করে আগত মৃত্যু তার সকল উন্মাদনার বসন্তের অবসান ঘটায়। 

You May Also Like

0 comments