ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সনেটের ( চতুর্দশপদী কবিতা ) বিষয়বস্তু :-

by - May 31, 2022

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সনেটের ( চতুর্দশপদী কবিতা ) বিষয়বস্তু

মাইকেল মধুসূদন দত্তের ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সনেটের ( চতুর্দশপদী কবিতা ) বিষয়বস্তু আলোচনা কর।  



ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সনেটের ( চতুর্দশপদী কবিতা ) বিষয়বস্তু :- 

'' ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর '' সনেট বা চতুর্দশপদী কবিতাটিতে মাইকেল মধুসূদন দত্ত বিদ্যাসাগরকে একই সঙ্গে বিদ্যার সাগর ও করুণার সাগর হিসেবে অভিহিত করেছেন। কবি বলেছেন -
'' বিদ্যার সাগর তুমি বিখ্যাত ভারতে।
করুণার সিন্ধু তুমি, সেই জানে মনে, '' 
ঠিক তারপর কবি বিদ্যাসাগরকে '' দীনের বন্ধু '' বলে সম্বোধন করেছেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের চরিত্রের মহান গুণগুলি এই সনেটের মাধ্যমে কবি উপস্থাপিত করেছেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের সামগ্রিক জীবন আলোচনা করলে আমরা খুব সহজেই জানতে পারি , তাঁর সমুদ্রের ন্যায় তুলনীয় জ্ঞান , দীন - দরিদ্রের প্রতি অপার করুণা , ক্ষমার আধার , অসীম মাতৃস্নেহ - ইত্যাদি বৈশিষ্টগুলি তাঁর চরিত্রকে মহিমান্বিত করেছে এবং এই মহিমার সুফল পেয়েছে আপামর ভারতবাসী। মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখা সনেটটির প্রথম কয়েকটি চরণে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়কে তাঁর প্রকৃতরূপেই প্রকাশ করেছেন কবি। 


পর্বত যেমন সূর্যের আলো গায়ে মেখে গলিত সোনার মত দ্যুতি বিকিরণ করে , আপন সৌন্দর্য দ্বারা মানবজাতিকে মোহাবিষ্ট করে ; তখন যে ব্যক্তি সেই পর্বতের সান্নিধ্যলাভ করে , কেবল সেই জানে - পর্বতের কী অসীম সৌন্দর্য , কী অসীম গাম্ভীর্য , কত গুনের অধিকারী ; ঠিক তেমনভাবেই মাইকেল মধুসূদন দত্ত তাঁর সনেটে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের মহিমাকে তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন - 
হেমাদ্রির হেম-কান্তি অম্লান কিরণে।
কিন্তু ভাগ্য-বলে পেয়ে সে মহা পর্বতে,
যে জন আশ্রয় লয় সুবর্ণ চরণে,
সেই জানে কত গুণ ধরে কত মতে
গিরীশ। কি সেবা তার সে সুখ সদনে !

সনেটটিতে কবি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়কে হিমালয় পর্বতের বিশালতা ও ব্যাপকতার সঙ্গে তুলনা করেছেন। হিমালয় পর্বতকে রূপক অর্থে ব্যবহার করে তিনি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের মহিমান্বিত চরিত্র তুলে ধরেছেন। হিমালয় যেমন তার সবকিছু দিয়ে মানব ও প্রকৃতির সেবা করে - তার নদী জল প্রদান করে , বৃক্ষরাজি সুস্বাদু ফল প্রদান করে , ফুলের তাদের দৈবিক সুগন্ধে প্রকৃতিকে মোহাচ্ছন্ন করে ; বিদ্যাসাগর মহাশয় ঠিক তেমন ভাবেই নিজের সবটুকু দিয়ে মানব সমাজের সেবা করছেন - জ্ঞানের বিকাশ ঘটিয়েছেন , নারীশিক্ষার বিস্তার ঘটিয়েছেন , সামাজিক কুসংস্কার প্রতিরোধে আজীবন আন্দোলন করেছেন , নিজের অর্থে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেছেন। তাই মাইকেল মধুসূদন দত্ত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়কে হিমালয় পর্বতের অপার মহিমার সঙ্গে তুলনা করেছেন।            
   
পরিশেষে বলা যায় , সারা বিশ্বজগতে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয় জ্ঞানের অসীম আধার হিসেবে পরিচিত। কিন্তু , তাঁর চরিত্রের মধ্যে যে অন্যান্য মহামানবের গুণগুলি আছে , তা বিশ্বজগতের কাছে পরিচিত নয়। কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত তাঁর সনেটে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের বহুমুখী মানবিক গুণগুলি অসাধারণ কৃতিত্বের সঙ্গে পাঠকবর্গের সঙ্গে পরিচয় ঘটিয়েছেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয় সারা জীবন ধরেই আর্তের সেবা করেছেন , অসহায়কে সাহায্য করেছেন , দরিদ্রের মুখে অন্ন জুগিয়েছেন। এমনকি , মাইকেল মধুসূদন দত্ত নিজেও চরম দারিদ্রতা ও অসহায়তার মধ্যে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের কৃপা ও সান্নিধ্যলাভ করেছিলেন। তাই তাঁর পক্ষে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের বহুমুখী গুণাবলীর বর্ণনা তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে।   

   

You May Also Like

0 comments