Pages

Powered by Blogger.
1ST SEMESTER SUGGESTION 2 ND YEAR SUGGESTION 2ND SEMESTER 3RD SEMESTER BENGALI NOTES CU suggestion. EDUCATION NOTES ENGLISH COMPULSORY GBU Suggestion. HISTORY EUROPE & WORLD HISTORY NOTES POL SC NOTES SOCIOLOGY NOTES WBCS 2020

NANDAN DUTTA

A new approach for exam notes .

আরবদের সিন্ধু অভিযানের গুরুত্ব ও ফলাফল।  

ভারত ইতিহাসে আরব আক্রমণের প্রভাব। 



আরবদের সিন্ধু অভিযানের গুরুত্ব ও ফলাফল :- 


ঐতিহাসিক স্ট্যানলি লেনপুল আরবদের সিন্ধু অভিযানকে ভারত ও ইসলামের ইতিহাসে একটি ফলাফলবিহীন ঘটনা বলে উল্লেখ করেছেন। ডক্টর শ্রীবাস্তব আরবদের সিন্ধু অভিযানকে একটি গুরুত্বহীন ঘটনা বলে উল্লেখ করেছেন। বস্তুতঃপক্ষে আরবরা সিন্ধু বিজয় করলেও তাদের সীমানা ছিল সিন্ধু এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ ; তাই বৃহত্তর ভারতে আরবদের সিন্ধু বিজয়ের কোনো প্রভাব পড়েনি। ৬৩৬ খ্রিস্টাব্দে খলিফা ওমর এর শাসনকালে আরবরা সর্বপ্রথম ভারতের পশ্চিম উপকূল ও সিন্ধু এলাকায় আক্রমণ করে। কিন্তু এইসকল সফল হয়নি। অবশেষে ৭১২ খ্রিস্টাব্দে মহম্মদ বিন কাশেমের নেতৃত্বে আরবরা সিন্ধু অভিযানে সফলতা লাভ করে। আরবদের সিন্ধু অভিযানের ফলাফলগুলি নিম্নরূপ - 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

১. আরবদের আধিপত্য কেবলমাত্র সিন্ধু প্রদেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। তাই কোনোরূপ রাজনৈতিক বা আর্থ -সামাজিক প্রভাব বৃহত্তর ভারতে রেখাপাত করতে পারেনি। এমনকি , আরবরা শাসনপ্রণালীর দিক দিয়েও ভারতের অন্য কোনো অঞ্চলকে প্রভাবিত করতে পারেনি। 

২. আরবদের সিন্ধু বিজয়ের পর কিছু মানুষ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলেও সেই এলাকায় ভারতীয় ভাষা , শিল্প , সংস্কৃতি , জীবনযাত্রা - ইত্যাদি সর্বক্ষেত্রেই আরব শাসনের কোনো প্রভাব পড়েনি। ভারতীয় মৌলিকত্ব সেখানে বজায় ছিল। 

৩. সামাজিক ক্ষেত্রেও আরবদের সিন্ধু অভিযানের প্রভাব ছিল নগন্য বা ছিলনা বললেই চলে। আরবরা সিন্ধু অঞ্চল দখল করলেও তথাকার সামাজিক রীতিনীতির উপর কোনো প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। শুধুমাত্র সিন্ধু এলাকায় সামান্য কিছু ক্ষেত্রে সামাজিক রীতিনীতির উপর আরব আক্রমণের প্রভাব পড়েছিল - যা উল্লেখযোগ্য নয়। 

৪. তবে ব্যবসা - বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আরব বিজয়ের প্রভাব পড়েছিল। কেননা , সিন্ধু অঞ্চলকে কেন্দ্র করে আরব প্রদেশগুলিতে ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় আরবদের ব্যবসা বাণিজ্য সম্প্রসারিত হতে থাকে। বিশেষ করে আরব দেশের প্রায় প্রতিটি শহরে সিন্ধুর বণিকদের সফলতা উল্লেখযোগ্য। 

৫. সিন্ধু এলাকার প্রাকৃতিক সম্পদ আরব বাণিজ্যকে বিশেষভাবে উৎসাহিত করে। সিন্ধু এলাকার বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদ সিন্ধুর বণিকদের দ্বারা ইউরোপ , দক্ষিণ - পূর্ব এশিয়া ও আরব দেশগুলিতে রপ্তানি হতে থাকে ;ফলে সিন্ধুর বণিকরা সমৃদ্ধশালী হয়ে ওঠে। ইউরোপ ও আরবের বিভিন্ন শহরে সিন্ধুর বণিকদের বাণিজ্য কেন্দ্র স্থাপিত হয়। 

৬. ডক্টর শ্রীবাস্তব অভিমত ব্যক্ত করেছেন যে , আরবদের সিন্ধু অভিযান প্রকৃতপক্ষে পরবর্তীকালের তুর্কি অভিযানের ভিত রচনা করে এবং ইসলাম ধর্মের প্রসার ঘটে। তুর্কিরা আরবদের দ্বারা সরাসরি প্রভাবিত না হলেও তা পরোক্ষভাবে তুর্কিদের উৎসাহিত করে। এর পেছনে মূল উপাদান ছিল ভারতের সম্পদ। 

৭. ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতির উৎকর্ষতা আরবদের বিস্মিত করে। তাঁরা ভারতীয় শাস্ত্র , হিন্দু দর্শন , চিকিৎসাশাস্ত্র , আয়ুর্বেদশাস্ত্র , গণিত , জ্যোতিষ , সঙ্গীত ও চিত্রকলা - ইত্যাদি বিষয়ে ভারতীয় সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত হয়। আরবদের হাত ধরে এই সমৃদ্ধশালী সংস্কৃতি আরবদেশসমূহ , ইউরোপ ও দক্ষিণ - পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। 

৮. সাহিত্যক্ষেত্রে আরবদের অবদান সামান্য হলেও উল্লেখযোগ্য। ব্রহ্মগুপ্তের ' ব্রহ্মসিধান্ত ' ও ' খন্ড - খাদ্য ' - এই সংস্কৃত গ্রন্থদুটি খলিফা মনসুরের পৃষ্ঠপোষকতায় আরবি ভাষায় অনুবাদ করা হয়। এর মধ্যে দিয়ে ভারতীয় সংস্কৃতি আরব দেশসমূহে ছড়িয়ে পড়ে। 

৯. ভারত থেকে বহু পন্ডিত , চিত্রশিল্পী , সংগীতজ্ঞ , কারিগর - আরবের রাজসভায় আমন্ত্রিত হন। তাঁদের হাত ধরে ভারতীয় সঙ্গীত , সাহিত্য ও সংস্কৃতি আরব দেশগুলিতে প্রসারের সুযোগলাভ করেছিল। 

১০. আরব ও সিন্ধুপ্রদেশে যে সাংস্কৃতিক সংমিশ্রণ তৈরী হয় তার মাধ্যমে আরবের চিকিৎসাক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব পড়ে। বাগদাদের চিকিৎসালয়গুলিতে বহুসংখ্যক ভারতীয় চিকিৎসক নিযুক্ত ছিলেন। 

১১. অধ্যাপক হ্যাভেল মন্তব্য করেছেন - ভারতীয় সভ্যতার সঙ্গে যোগাযোগের ফলে আরব দেশসমূহ ,ইউরোপ ও দক্ষিণ - পূর্ব এশিয়ার দেশগুলি সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে সমৃদ্ধ হয়েছিল। ভারতে ইসলামের সূচনার আদিপর্বে ভারতীয়রাই ছিল প্রকৃত শিক্ষক। সেকারণেই ভারতীয় ইসলাম স্বতন্ত্র ও মৌলিক ধারায় আবর্তিত হয়। 

১২. সিন্ধু বিজয়ের হাত ধরেই আরবীয়রা ভারতীয় জ্ঞান বিজ্ঞানের অমূল্য সম্পদ আরোহন করে।    

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো   

Share
Tweet
Pin
Share
No comments

গুপ্তযুগের আর্থ - সামাজিক অবস্থার পরিচয় দাও। 

গুপ্তযুগের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার পরিচয় দাও। 

গুপ্তযুগের সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈশিষ্টগুলি আলোচনা কর।  




গুপ্তযুগের আর্থ - সামাজিক অবস্থা :- 

মৌর্য পরবর্তী যুগে রাজনৈতিক ঐক্য বিনষ্ট হয়। এর ফলে অর্থনৈতিক ও সামাজিক সর্বক্ষেত্রেই অরাজকতা লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু গুপ্ত যুগে রাজনৈতিক ঐক্যের ফলে অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনে ঐক্য ও শৃঙ্খলা ফিরে আসে এবং সুদীৰ্ঘদিন ধরে এই স্থিতাবস্থা বজায় থাকে। বিভিন্ন মুদ্রা , লিপি ও ফা হিয়েনের বিবরণী , বিভিন্ন স্মৃতিশাস্ত্র - যেমন - যাজ্ঞবল্ক্য স্মৃতি , নারদ স্মৃতি , বৃহস্পতি স্মৃতি - ইত্যাদি থেকে গুপ্তযুগের অর্থনীতি ও সমাজ সম্পর্কে জানা যায়। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

গুপ্তযুগের অর্থনৈতিক অবস্থা :- 


১. বহু নগরীর প্রতিষ্ঠা :- গুপ্তযুগে ভারতে বহুসংখ্যক নগরীর প্রতিষ্ঠা সেযুগের অর্থনৈতিক উৎকর্ষতার পরিচয় প্রদান করে। প্রতিটি নগর ছিল সুসজ্জিত এবং প্রতিটি নগর নির্দিষ্ট পরিকল্পনাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল। গুপ্তযুগের নগরগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল - অযোধ্যা , ইন্দ্রপুর , পাটলিপুত্র ও চন্দ্রপুর। নগরগুলির সাজসজ্জা , পরিকল্পনা , অট্টালিকা , স্থাপত্য নির্মাণ - ইত্যাদি সবকিছুই গুপ্তযুগের অর্থনৈতিক উৎকর্ষতার প্রমান দেয়। 

২. কৃষিজ উৎপাদন :- গুপ্তযুগের অর্থনীতি ছিল কৃষি নির্ভর। কৃষি জমিকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছিল - (ক ) রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন অনাবাদি জমি , (খ ) রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন আবাদি ও নিয়মিত জমি এবং (গ) ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জমি। তবে তত্ত্বগতভাবে রাজাই ছিলেন জমির প্রকৃত মালিক। রাষ্ট্রের প্রধান ভূমিরাজস্ব আয় হত রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন আবাদি জমি ও ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জমি থেকে। 

৩. শিল্পগত উৎকর্ষতা :- গুপ্তযুগের সাহিত্যে মোট ৬৪ রকমের শিল্পের কথা জানা যায়। দিল্লিতে অবস্থিত লৌহ স্তম্ভটি গুপ্তযুগের লৌহ শিল্পের চরম উৎকর্ষতার পরিচয় প্রদান করে। এছাড়াও রেশমশিল্প ও কার্পাস বয়ন শিল্প ছিল প্রধান। অন্যান্য শিল্পগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল - চর্মশিল্প , কাষ্ঠশিল্প , ধাতুশিল্প - ইত্যাদি। 

৪. বণিক সংঘ বা গিল্ড :- গুপ্তযুগের অর্থনীতিতে আধুনিককালের চেম্বার অব কমার্স এর মত বণিক সংঘ বা গিল্ডের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। গিল্ডগুলি একদিকে কারিগর বা উৎপাদক শ্রেণীর এবং অন্যদিকে ক্রেতার স্বার্থরক্ষা করত। এমনকি , এই বণিকসভা স্থানীয় শাসন কার্যেও অংশগ্রহণ করত। এছাড়াও স্থানীয় বণিক ও ব্যবসায়ীদের নিয়ে ' পরামর্শক সভা ' গঠিত হত। 

৫. ব্যাংকের অস্তিত্ব :- গুপ্তযুগের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ব্যাংকের অস্তিত্বের কথা জানা যায়। বৈশালী , কোটিবর্ষ - ইত্যাদি বাণিজ্যকেন্দ্রগুলিতে ব্যাংক বিশেষভাবে প্রাধান্যলাভ করেছিল। এই ব্যাঙ্কগুলি পরিচালনা করতেন ব্যবসায়িক নিগমগুলি। ব্যাঙ্কগুলিতে নগদ অর্থ , মূল্যবান সম্পদ , জামানত জমা রাখার ব্যবস্থা ছিল। 

৬. মুদ্রা ব্যবস্থা :- গুপ্তযুগে স্বর্ণ , রৌপ্য ও তাম্র মুদ্রার প্রচলন ছিল। গুপ্তযুগে স্বর্ণমুদ্রার ব্যাপক প্রচলন লক্ষ্য করা যায়। গুপ্তযুগে স্বর্ণমুদ্রার ব্যাপক প্রচলন সেই যুগের চরম অর্থনৈতিক উৎকর্ষতার পরিচয় বহন করে। 

৭. রাজস্ব ব্যবস্থা :- গুপ্তযুগে বিভিন্ন ধরণের রাজস্ব প্রচলিত ছিল। যেমন - ভাগ বা ভূমিকর , উৎপন্ন ফসলের ১/৬ অংশ রাজস্ব , শিল্পজাত দ্রব্যের উপর কর - ইত্যাদি। এছাড়াও বিনা পারিশ্রমিকে শ্রমদান বা বিষ্টি , ফেরি কর , লবণ কর , বৈদেশিক আক্রমণ ও যুদ্ধের সময় মল্লকর - ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণের করের কথা জানা যায়। 

৮. ব্যবসা - বাণিজ্য :- গুপ্তযুগে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উভয়প্রকার বাণিজ্য প্রচলিত ছিল। বৈদেশিক ক্ষেত্রে রোমান সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে , জাভা , সুমাত্রা , আফগানিস্তান , পারস্য - ইত্যাদি রাষ্ট্রের সঙ্গে গুপ্তদের ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল। মালব , সৌরাষ্ট্র , উজ্জয়িনী , কোঙ্কন উপকূল , ব্রোচ - ইত্যাদি বন্দর দিয়ে বৈদেশিক বাণিজ্য পরিচালিত হত। অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে নদী ও সড়কপথে বারাণসী , মথুরা , সারনাথ , পাটলিপুত্র , নাসিক , পৈথান - ইত্যাদি অঞ্চলের সঙ্গে বাণিজ্য চলত। বাণিজ্য থেকে ১/৫ অংশ কর আদায় করা হত। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

গুপ্তযুগের সামাজিক অবস্থা :- 


১. বর্ণপ্রথার প্রাধান্য :- সমাজে ব্রাহ্মণ , ক্ষত্রিয় , বৈশ্য ও শুদ্র - এই চারবর্ণের ভেদাভেদ প্রকট হয়ে ওঠে।বিভিন্ন বর্ণের মধ্যে সংমিশ্রণ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ছিল এবং বর্ণ সংমিশ্রণ প্রতিরোধ করা ছিল প্রাদেশিক শাসনকর্তাদের অন্যতম কর্তব্য। সমাজ ছিল পিতৃতান্ত্রিক এবং পরিবারের প্রধান কর্তা ছিলেন পিতা। 

২. সমাজে ব্রাহ্মণদের প্রাধান্য :- সমাজে বর্ণশ্রেষ্ঠ ব্রাহ্মণদের ক্ষমতা ও অধিকার ছিল সর্বাধিক। ব্রাহ্মণরা 'দ্বিজ' নামে পরিচিত হতেন। বিভিন্ন স্মৃতিশাস্ত্রগুলিতে ব্রাহ্মণদের পবিত্রতার কথা জানা যায়। ব্রাহ্মণরা পূজা - অর্চনা , বিদ্যা - শিক্ষা , তপস্যা ও বৈদিক শাস্ত্র অধ্যয়ন করতেন। ব্রাহ্মণরা রাজসভাতে নিযুক্ত হতেন এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় রাজাকে উপদেশ প্রদান করতেন। 

৩. শূদ্রদের অবস্থা :- গুপ্তযুগে শূদ্রদের অবস্থা অন্যান্য যুগের তুলনায় অনেক ভালো ছিল। ক্রীতদাস ও শূদ্রদের মধ্যে পার্থক্য ছিল। বৈশ্যদের দুর্দশা পূর্বের তুলনায় বৃদ্ধি পাওয়ায় দরিদ্র বৈশ্যদের সঙ্গে শূদ্রদের পার্থক্য কমে এসেছিল। হিউয়েন সাং উল্লেখ করেছেন কৃষি ক্ষেত্রে শূদ্রদের নিয়োগ করা হত। 

৪. বিবাহ ব্যবস্থা :- গুপ্তযুগে বর্ণভেদ প্রথা কঠোর হলেও ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়দের মধ্যে বিবাহের উল্লেখ পাওয়া যায়। সমাজে বহুবিবাহ প্রচলিত ছিল। গুপ্ত রাজবংশে বহুবিবাহের উল্লেখ পাওয়া যায়। তবে বহুবিবাহ প্রচলিত থাকলেও সামাজিক কর্মকান্ডে কেবলমাত্র প্রধানা মহিষী অংশগ্রহণের সুযোগ পেতেন। সাধারণতঃ স্বজাতির মধ্যে বিবাহ প্রচলিত থাকলেও অনুলোম ও প্রতিলোম বিবাহও প্রচলিত ছিল। 

৫. সমাজে নারীর স্থান :- গুপ্ত সমাজে স্ত্রী - ধনের উল্লেখ পাওয়া যায়। সমাজে নারীশিক্ষার বহুল প্রচলন ছিল। সমাজে সতীদাহ প্রথা ও বিধবা বিবাহ উভয়ই প্রচলিত ছিল। রাজপরিবার ও অভিজাত পরিবারের নারীরা উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ লাভ করতেন। নারীরা স্বাধীন জীবন - যাপন করলেও পুরুষের অনুমতিসাপেক্ষে তারা পারিবারিক ও পরিবারের বাইরের কর্মকান্ডে অংশগ্রহন করতে পারতেন। 

৬. সঙ্কর জাতির উদ্ভব :- গুপ্তযুগে বহু সঙ্কর জাতির উদ্ভব হয়েছিল। যেমন - বাকাটক বংশের বিভিন্ন উপাদান থেকে জানা যায় , ব্রাহ্মণ পিতা ও ক্ষত্রিয় জননীর পুত্ররা ক্ষত্রিয় বলেই বিবেচিত হতেন। এছাড়াও এক শ্রেণীর ক্ষত্রিয় বিদ্যা - শিক্ষা ও শাস্ত্র চর্চায় অংশগ্রহণ করলে তাঁরা কায়স্থ নামে পরিচিত হন। 

৭. সাংস্কৃতিক সংমিশ্রণ :- গুপ্তযুগে উত্তর - পশ্চিম ভারত থেকে বহু সংখ্যক বিদেশিদের আগমন ঘটে। ফলে সমাজে এক ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়। তবে এই সকল বিদেশিরা ভারতীয় ধর্ম , ভাষা , রীতিনীতি - ইত্যাদি গ্রহণ করলে ভারতীয় সমাজে এক মিশ্র সংস্কৃতি জন্ম নেয়। এর ফলে একদিকে যেমন বৈদেশিক বিভিন্ন সমস্যার সমাধান হয় , তেমনি অন্যদিকে ব্যবসা - বাণিজ্যের প্রসার ঘটে। 

৮. দাসপ্রথা :- গুপ্তযুগে দাসত্ব প্রথার বহুল প্রচলন ছিল। মনু স্মৃতি ও নারদ স্মৃতি থেকে জানা যায় যুদ্ধের সময় স্বেচ্ছায় দাসত্বে পরিণত হওয়ার রীতি প্রচলিত ছিল। প্রধানতঃ যুদ্ধবন্দীদের দাসত্বে পরিণত করা হত। দাসদের কোনো আইনগত অধিকার না থাকলেও তাদের প্রতি মানবিক আচরণ করা হত। 

৯. অস্পৃশ্যতা :- গুপ্তসমাজে অস্পৃশ্যতা প্রচলিত ছিল। ফা হিয়েনের বিবরণী থেকে জানা যায় - চন্ডালরা বসবাস করতেন মূল নগরের বাইরে। এছাড়াও অন্যান্য অস্পৃশ্য প্রজাতির মানুষ - যেমন - পুলিন্দ , শবর , কিরাত - রা পাহাড় , অরণ্য অঞ্চল , বিন্ধ্য পর্বতের অরণ্য - ইত্যাদি অঞ্চলে বসবাস করতেন।     

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো            

Share
Tweet
Pin
Share
No comments

গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের কারণগুলি আলোচনা কর। 

গুপ্ত রাজবংশের পতনের জন্য দায়ী কারণগুলি বিশ্লেষণ কর। 

গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের কারণ। 



গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের কারণ। 


গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের জন্য মূলতঃ দুটি উপাদান দায়ী - অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে বিভিন্ন ব্যর্থতা ও বহিরাক্রমণ। আরব ঐতিহাসিক ইবন খালদুন বলেছেন - '' প্রতিটি সাম্রাজ্যের জন্ম আছে , উত্থান আছে ও পতনও আছে। '' প্রথম চন্দ্রগুপ্ত , সমুদ্রগুপ্ত ও দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের রাজত্বকালে গুপ্ত সাম্রাজ্য উৎকর্ষতার শিখরে পৌঁচেছিল ; কিন্তু স্কন্ধগুপ্তের পরবর্তী সময়কালে খ্রিস্টীয় পঞ্চম থেকে ষষ্ঠ শতকের মধ্যে গুপ্ত সাম্রাজ্য সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত হয়। গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের জন্য দায়ী বিভিন্ন উপাদনগুলি ছিল - 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

১. আর্থিক বিপর্যয় :- স্কন্ধগুপ্তের পরবর্তী সময়কালে গুপ্ত রাজাদের অর্থনৈতিক অবক্ষয়ের পরিচয় পাওয়া যায় লিপি ও মুদ্রায়। স্বর্ণমুদ্রা বহুগুণে হ্রাস পায়। রৌপ্যমুদ্রাও সীমিত আকারে প্রচলিত ছিল। মূলতঃ পরবর্তী গুপ্ত সম্রাটদের আমলে বাণিজ্যিক অবক্ষয়ের কারণেই রৌপ্যমুদ্রা তীব্রভাবে হ্রাস পায় ও স্বর্ণমুদ্রা প্রায় বিলুপ্ত হয়ে পড়ে। সেই আমলে অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও তীব্র অবনতি ঘটেছিল। গুপ্ত রাজত্বের একেবারে শেষের দিকে বাণিজ্যের মাধ্যমে পণ্যকে নগদে পরিণত করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। এইভাবে অর্থের অভাবে গুপ্ত সাম্রাজ্যের সর্বত্র চরম বিশৃঙ্খলা , প্রশাসনিক অবনতি ও সামরিক বিভাগ দুর্বল হয়ে পড়ে। 

২. অভ্যন্তরীণ অন্তর্দ্বন্দ্ব :- দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের মৃত্যুর পর গুপ্ত রাজবংশে সিংহাসন সংক্রান্ত অন্তর্দ্বন্দ্ব সাম্রাজ্যকে দুর্বল করে তোলে। প্রথম কুমারগুপ্তের মৃত্যুর পর পুরগুপ্ত , স্কন্ধগুপ্ত ও ঘটোৎকচগুপ্তের মধ্যে বিরোধ শুরু হয় ; স্কন্ধগুপ্তের মৃত্যুর পর পুরগুপ্ত ও দ্বিতীয় কুমারগুপ্তের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়  ; এছাড়াও পুরগুপ্তের মৃত্যুর পরও এধরণের অন্তর্দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। সিংহাসন অধিকার নিয়ে গুপ্ত রাজবংশের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রথম থেকেই বর্তমান ছিল। কিন্তু সমুদ্রগুপ্ত, দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত প্রমুখ নৃপতিগণ আপন প্রতিভাবলে সেই দ্বন্দ্বের প্রভাব প্রশাসনে পড়তে দেন নি। কিন্তু পরবর্তীকালের গুপ্ত সম্রাটগণ  এই ধরণের কৃতিত্ব প্রদর্শনে ব্যর্থ হন। 

৩. প্রাদেশিক শাসনকর্তাদের স্বাধীনতা ঘোষণা :- প্রাদেশিক শাসনকর্তাদের মধ্যে মন্দাশোরের শাসক যশোধর্মন গুপ্ত রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রথম বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। মৈত্রক শাসক ভটরক সৌরাষ্ট্র দখল করে নিজেকে স্বাধীন বলে ঘোষনা করেন। এরপর একে একে কনৌজের মৌখরী বংশ , বলভীতে মৈত্রক বংশ , থানেশ্বরের বর্ধন বংশ - ইত্যাদি প্রাদেশিক শাসনকর্তারা গুপ্ত সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বিদ্রোহ ঘোষণা করে এবং নিজেদের স্বাধীন বলে ঘোষণা করে। 

৪. গুপ্তরাজাদের বৌদ্ধধর্মে অনুরাগ :- প্রথমদিকে গুপ্ত রাজারা ব্রাহ্মণ্য ধর্মের অনুরাগী হলেও বুধগুপ্তের আমল থেকে গুপ্ত শাসকেরা বৌদ্ধ ধর্মের অনুরাগী হয়ে ওঠেন। বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি এই আকর্ষণ গুপ্ত রাজাদের সামরিক উৎকর্ষতা বিশেষভাবে খর্ব করে। সামরিক শক্তি এতটাই হীনবল হয়ে পড়েছিল যে , হুণ নেতা মিহিরকুল গুপ্তরাজ বালাদিত্যের বিরুদ্ধে অগ্রসর হলে বালাদিত্য পলাতক হন এবং জঙ্গলে আশ্রয় গ্রহণ করেন। এরপর মিহিরকুল পরাজিত হয়ে বন্দি হলেও বালাদিত্য তাকে মুক্ত করেন। ধর্মীয় উদারতার দিক দিয়ে এমন আচরণ প্রশংসা পেলেও রাজার কর্তব্য হিসাবে তা কাম্য নয় এবং তা রাজতন্ত্রের দুর্বলতাকেই প্রকাশ করে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৫. স্থায়ী সেনাবাহিনীর অভাব :- পরবর্তী গুপ্ত রাজাদের কোনো স্থায়ী সেনাবাহিনী ছিল না। এই সময়কালে গুপ্ত রাজারা সামরিক বিষয়ে প্রাদেশিক শাসক ও সামন্তদের উপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল ছিলেন। ফলে সম্রাটদের তুলনায় প্রাদেশিক শাসক ও সামন্তরাই সামরিক বিভাগের সর্বেসর্বা হয়ে উঠেছিলেন। ফলে সামরিক বিভাগ দুর্বল হয়ে পড়ে এবং প্রাদেশিক শাসক ও সামন্তগণ নিজেদের স্বার্থে কেন্দ্রীয় রাজশক্তির বিরুদ্ধে সামরিক শক্তিকে ব্যবহার করে। 

৬. সামন্তপ্রথার প্রভাব :- গুপ্তরাজাদের আমলেই ভারতে সামন্ত প্রথা প্রচলিত হয় ও উন্নতির শিখরে ওঠে। কিন্তু প্রথমদিকে গুপ্তসম্রাটরা শক্তিশালী কেদ্রীকরণের নীতির মাধ্যমে সামন্তরাজাদের রাজতন্ত্রের পক্ষে কাজে লাগাতে পারলেও পরবর্তী গুপ্তরাজদের পক্ষে তা সম্ভব হয়নি। পরবর্তী গুপ্ত রাজাদের আমলে সামন্তরাজারা নিজ নিজ এলাকায় প্রায় স্বাধীন হয়ে উঠেছিলেন। যশোবর্মন , সুবন্ধু প্রাদেশিক শাসনকর্তারা গুপ্ত বংশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন - এঁরা সকলেই ছিলেন গুপ্ত রাজত্বের শক্তিশালী সামন্তরাজা। 

৭. প্রশাসনিক ব্যর্থতা :- গুপ্তযুগে প্রশাসনিক ব্যবস্থা বহুলাংশে আমলা নির্ভর ছিল। এই আমলাতন্ত্র বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ছিল বংশানুক্রমিক। এই বংশানুক্রমিক আমলাতান্ত্রিক শাসনে গুপ্তযুগের প্রশাসনিক ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে। রাজকর্মচারীরা দুর্নীতিগ্রস্থ হয়ে পড়েন ও সরকারি কাজকর্ম ধীরগতিসম্পন্ন হয়ে ওঠে। পরবর্তী গুপ্ত রাজাদের আমলে স্থানীয় শাসন ব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ ছিলনা বললেই চলে। 

৮. বংশানুক্রমিক নীতি :- গুপ্ত আমলে বহুসংখ্যক সরকারি কর্মচারীদের পদ ছিল বংশানুক্রমিক। সচিব , অমাত্য , মন্ত্রী এমনকী সামন্তদের পদও ছিল বংশানুক্রমিক। এইভাবে উচ্চপদগুলিতে বংশানুক্রমিক নীতি প্রচলিত হলে কর্মচারীদের দক্ষতা হ্রাস পায় এবং শাসন ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে। 

৯. ভূমিদান প্রথার কুফল :- গুপ্তযুগে ভূমিদান প্রথার বহুল প্রচলন ছিল। কিন্তু এই ভূমিদান প্রথা ছিল ত্রুটিপূর্ণ। দান করা জমিতে রাজার কোনো অধিকার থাকত না। এরফলে একদিকে যেমন রাষ্ট্রীয় জমির পরিমাণ ও সেখান থেকে রাষ্ট্রীয় আয় হ্রাস পায় ও অন্যদিকে দান করা জমির উপর রাজা কর্তৃত্ব হারান। পরবর্তীকালে গুপ্ত রাজাদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে এই সকল জমির প্রাপকরা রাজ কর্তৃত্বকে অস্বীকার করতে শুরু করেন। 

১০. রাজতন্ত্রের বিলাসিতা ও ব্যয়বহুলতা :- দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের আমল থেকেই গুপ্ত রাজাদের ও রাজসভার ব্যয় বৃদ্ধি পায়। যেমন দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের আমলে প্রশাসনিক ও সামরিক ক্ষেত্রের তুলনায় সাহিত্য ও শিল্পচর্চায় অধিক ব্যয় করা হত। কিন্তু পরবর্তী গুপ্তরাজাদের আমলেও এই বিলাসব্যাসন ও ব্যয়বহুলতা বজায় থাকলে তা সাম্রাজ্যের পতনকে ত্বরান্বিত করে। 

১১. দুর্বল ও অযোগ্য উত্তরাধিকার :- গুপ্ত বংশের শেষ শক্তিশালী সম্রাট ছিলেন স্কন্ধগুপ্ত। কিন্তু তাঁর পরবর্তী শাসকেরা ছিলেন দুর্বল ও অযোগ্য। স্কন্ধগুপ্তের পরবর্তী গুপ্ত সম্রাটগণের দুর্বলতার ফলে প্রাদেশিক শাসন ভেঙে পড়ে , কেন্দ্রীয় শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে , আর্থিক ক্ষেত্রে অচলাবস্থা দেখা যায় , সামরিক শক্তি হীনবল হয়ে পড়ে। প্রশাসনিক , অর্থনৈতিক , রাজনৈতিক , কূটনৈতিক - সকল ক্ষেত্রেই তাঁরা দুর্বলতার পরিচয় দেন। 

১২. পুষ্যমিত্র , বাকাটক ও হূণ আক্রমণ :-  প্রথম কুমারগুপ্তের আমলে পুষ্যমিত্রদের আক্রমণ শুরু হলে তা গুপ্ত সাম্রাজ্যের ক্ষতিসাধন করে। স্কন্ধগুপ্ত বীরত্বের সঙ্গে হুণ আক্রমণ প্রতিহত করলেও তা গুপ্ত সাম্রাজ্যের ভিত দুর্বল করে দেয়। এরপর বুধগুপ্তের আমলে বাকাটকরা ক্রমাগত আক্রমণ শুরু করলে তা গুপ্ত রাজবংশকে আর্থিক - সামরিক সকল দিক দিয়েই দুর্বল করে দেয়। 

ডক্টর রমেশচন্দ্র মজুমদার বলেছেন - এই বৈদেশিক শক্তির আক্রমণের ফলে গুপ্ত সাম্রাজ্য হীনবল হয়ে পড়ে , অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঘটে। এই অচলাবস্থার সুযোগ নিয়ে প্রাদেশিক শাসনকর্তা ও সামন্তবর্গ নিজেদের স্বাধীন বলে ঘোষণা করেন ও গুপ্ত বংশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে সামিল হন - যা গুপ্ত বংশের পতনকে সুনিশ্চিত করে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো
                    
Share
Tweet
Pin
Share
No comments

সমুদ্রগুপ্তের সাম্রাজ্যবাদী নীতি সম্পর্কে আলোচনা কর। 

সমুদ্রগুপ্তের উত্তরভারত ও দক্ষিণভারত অভিযানের বর্ণনা দাও।   

সমুদ্রগুপ্তের উত্তর ভারত অভিযান কীভাবে দক্ষিণ ভারত অভিযান থেকে পৃথক ছিল ? 




সমুদ্রগুপ্তের সাম্রাজ্যবাদী নীতি :- 


সমুদ্রগুপ্ত সম্পর্কিত ঐতিহাসিক উপাদান :- 
যেসকল উপাদান থেকে সমুদ্রগুপ্ত এবং তাঁর সাম্ৰাজ্যবাদী নীতি সম্পর্কে জানা যায় , সেগুলি হল - 
(i) হরিষেন কর্তৃক রচিত এলাহাবাদ প্রশস্তি। 
(ii) মধ্যপ্রদেশে প্রাপ্ত এরাণ লিপি। 
(iii) সমুদ্রগুপ্ত কর্তৃক প্রচারিত বিভিন্ন ধরণের পাঁচ প্রকার মুদ্রা। 
(iv) চৈনিক বিবরণ। 
(v) অন্যান্য মুদ্রা , বাগেলখন্ড শিলালিপি - ইত্যাদি। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

সমুদ্রগুপ্তের রাজ্যজয়ের উদ্দেশ্য :- 
মৌর্য পরবর্তী যুগে ভারতের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অনৈক্য ও বিশৃঙ্খলা দেখা যায়। সমুদ্রগুপ্ত ভারতের এক বিরাট অংশ জয় করে ভারতে রাজনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। তবে সমুদ্রগুপ্তের রাজ্যজয়ের উদ্দেশ্য সম্পর্কে ঐতিহাসিক মহলে মতভেদ রয়েছে। যেমন - ডক্টর রোমিলা থাপারের মতে, ব্রাহ্মণ্য ধর্মের প্রসারের জন্যই সমুদ্রগুপ্ত সাম্ৰাজ্যবিস্তারে আত্মনিয়োগ করেন। আবার ডক্টর গয়াল বলেছেন - সমুদ্রগুপ্তের দক্ষিণ ভারত অভিযানের মূল উদ্দেশ্য ছিল দক্ষিণ ভারতের বিপুল সম্পদ লুন্ঠন করা। 
তবে , সমুদ্রগুপ্তের রাজ্যজয়ের উদ্দেশ্য সম্পর্কে ঐতিহাসিক মহলে মতভেদ থাকলেও তাঁর সাম্রাজ্যবাদী নীতির ফলে যে সমগ্র ভারতে রাজনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল - সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। 
সমুদ্রগুপ্তের সাম্রাজ্যবাদী নীতিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যেতে পারে। যেমন - 
(A) উত্তরভারত বা আর্যাবর্ত বিজয়। 
(B) দক্ষিণ ভারত বা দাক্ষিণাত্য জয়। 
(C) আটবিক রাজ্য জয়। 
(D) সীমান্তবর্তী রাজ্যের বিরুদ্ধে অভিযান। 
(E) অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি। 

(A) উত্তরভারত বা আর্যাবর্ত বিজয় :- 
সমুদ্রগুপ্ত উত্তর ভারতের নয়জন রাজাকে পরাজিত করে তাদের সাম্রাজ্য নিজ রাজ্যভুক্ত করেন। এই নয়জন রাজা হলেন - 
১. অহিচ্ছত্র অধিপতি অচ্যুত। 
২. মধ্য ভারতের নাগসেন। 
৩. মথুরার নাগ বংশীয় রাজা গণপতিনাগ। 
৪. বকাটক বংশীয় রুদ্রদেব। 
৫. বুন্দেলশহরের মতিল। 
৬. বিদিশার শাসক নাগদত্ত। 
৭. গোকর্ণের শাসক চন্দ্রবর্মন। 
৮. কামরূপের রাজা বলবর্মন। 
৯. নাগবংশীয় রাজা নন্দীন। 

উত্তর ভারতের এই নয়জন রাজাকে পরাজিত করে সমুদ্রগুপ্ত তাদের রাজ্য নিজ সাম্রাজ্যভুক্ত করেন। এইভাবে সমগ্র আর্যাবর্ত তথা উত্তর উত্তর ভারতে রাজনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

(B) দক্ষিণ ভারত বা দাক্ষিণাত্য জয় :- 
দক্ষিণ ভারতে তিনি মোট বারোটি রাজ্য জয় করেন। এই বারোটি রাজ্য হল - ১. কোশলের মহেন্দ্র , ২. মহাকান্তারের ব্যাঘ্ররাজ , ৩. কৌরলের মন্তরাজ , ৪. পিষ্ঠপুরমের মহেন্দ্রগিরি , ৫. কুস্থলপুরের ধনঞ্জয় , ৬. দেবরাষ্ট্রের কুবের , ৭. কোট্টুরের স্বামীদত্ত , ৮. পলাক্কের উগ্রসেন , ৯. এরণ্ডপল্লের দমন , ১০. অবমুক্তার নীলরাজ , ১১. কাঞ্চির বিষ্ণুগোপ , ১২. বেঙ্গির হস্তিবর্মন। 

দক্ষিণ ভারতের এই বারোজন রাজাকে পরাজিত করলেও সমুদ্রগুপ্ত তাদের রাজ্যগুলিকে নিজ সাম্রাজ্যভুক্ত করেননি। শুধুমাত্র কর গ্রহণ ও আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করেই সমুদ্রগুপ্ত তাঁর দাক্ষিণাত্য নীতিকে সীমাবদ্ধ রেখেছিলেন। এই রাজনৈতিক নীতির মাধ্যমে সমুদ্রগুপ্ত তাঁর অগাধ কূটনৈতিক দূরদৃষ্টিতার পরিচয় প্রদান করেন। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে , সুদূর মগধ থেকে সমগ্র দাক্ষিণাত্যের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব নয়। এই নীতি '' গ্রহণ - মোক্ষ - পরিগ্রহ '' নামে পরিচিত।    

(C) আটবিক রাজ্য জয় :-    
সমুদ্রগুপ্তের দিগ্বিজয়ের তৃতীয় স্তর ছিল আটবিক রাজ্যসমূহের বিরুদ্ধে অভিযান। দক্ষিণ ভারতে সেনা অভিযান করতে এই আটবিক রাজ্যসমূহকে জয় করার প্রয়োজনীয়তা তিনি উপলব্ধি করেন। আটবিক রাজ্যসমূহের অরণ্যময় অঞ্চলগুলিকে জয় করতে না পারলে দক্ষিণ ভারত অভিযানে প্রতিবন্ধকতা তৈরী হত। তাই সমুদ্রগুপ্ত আটবিক রাজ্যসমূহের বিরুদ্ধে অভিযান করেন এবং আটবিক রাজ্যসমূহকে প্রায় সম্পূর্ণ গুপ্ত সাম্রাজ্যের অধীনস্ত করে আটবিক নৃপতিদের দাসত্বে পরিণত করেন। 

(D) সীমান্তবর্তী রাজ্যের বিরুদ্ধে অভিযান ও তাঁদের আনুগত্যলাভ :- 
সমুদ্রগুপ্তের দিগ্বিজয়ে আতঙ্কিত হয়ে পূর্ব ও পশ্চিম সীমান্তবর্তী অঞ্চলের প্রায় প্রতিটি রাজ্য এবং তাদের রাজারা বিনাশর্তে সমুদ্রগুপ্তের আনুগত্য স্বীকার করেন। সমতট , কামরূপ , নেপাল , দাভক ও কর্তৃপুর - এই পাঁচটি সীমান্তবর্তী রাজ্য সমুদ্রগুপ্তের বশ্যতা স্বীকার করেন। এছাড়াও সমগ্র ভারতের প্রায় নয়টি উপজাতি শাসিত রাজ্যগুলিও সমুদ্রগুপ্তের বশ্যতা স্বীকার করেন। এই উপজাতি শাসিত রাজ্যগুলি হল - মালব , অর্জুনায়ন , মদ্রক , প্ৰাৰ্জুন , কাক - ইত্যাদি।       

(E) অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি :- উপরোক্ত রাজ্যগুলি ছাড়াও বেশ কিছু রাজ্য সমুদ্রগুপ্তের সঙ্গে অধীনতামূলক মিত্রতা নীতিতে আবদ্ধ হন। এই সকল রাজ্যগুলি হল - সিংহলরাজ মেঘবর্ণ , মালবরাজ , কাথিয়াওয়ারের শক শাসক , সুমাত্রা , মালয় ও যবদ্বীপের শাসক। এছাড়াও পশ্চিম পাঞ্জাব ও আফগানিস্তানের কুষাণ শাসক পারসিক আক্রমণে ভীত হয়ে সমুদ্রগুপ্তের সাহায্য প্রার্থনা করেন। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

সমুদ্রগুপ্তের সাম্রাজ্যের বিস্তার :- 
উপরোক্ত পাঁচটি দিগ্বিজয় নীতি অনুসরণ করে সমুদ্রগুপ্ত এক বিরাট সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন এবং এর দ্বারা ভারত একটি অখন্ড সাম্রাজ্যে পরিণত হয় ও রাজনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়। সমুদ্রগুপ্তের সাম্রাজ্যসীমা উত্তরে কাশ্মীর ; পশ্চিমে পশ্চিম পাঞ্জাব , রাজপুতানা , সিন্ধু ও গুজরাট ; পূর্বে ব্রহ্মপুত্র নদ , দক্ষিণে নর্মদা নদী পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছিল। এছাড়াও ছিল বহুসংখ্যক করদ রাজ্য , অনুগত রাজ্য মিত্র রাজ্য। সমুদ্রগুপ্তের সফল দিগ্বিজয় নীতির কারণে ঐতিহাসিক স্মিথ সমুদ্রগুপ্তকে ' ভারতের নেপোলিয়ন ' বলে অভিহিত করেছেন।  

সমুদ্রগুপ্তের উত্তরভারত ও দক্ষিণভারতে সাম্রাজ্যবাদী নীতির পার্থক্য :- 
সমুদ্রগুপ্ত উত্তর ভারতের নয়জন রাজাকে পরাজিত করে তাদের রাজ্য নিজ সাম্রাজ্যভুক্ত করেন ; কিন্তু দক্ষিণভারতের বারোজন রাজাকে পরাজিত করলেও তাদের রাজ্য তিনি নিজ সাম্রাজ্যভুক্ত করেন নি। শুধুমাত্র কর গ্রহণ ও আনুগত্যের শপথ নিয়েই তিনি সন্তুষ্ট ছিলেন। এই ঘটনা ঐতিহাসিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা - 
১. অসামান্য কূটনৈতিক ক্ষমতার অধিকারী সমুদ্রগুপ্ত উপলব্ধি করেছিলেন সুদূর মগধ থেকে দাক্ষিণাত্যে নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা সম্ভব নয়।  
২. দাক্ষিণাত্য সরাসরি দখল করলে গুপ্ত সাম্রাজ্যের আয়তন বিশাল হয়ে পড়তো। ফলে সাম্রাজ্যের দুর্বলতা অবশ্যম্ভাবী ছিল। 
৩. আর্যাবর্ত ও দাক্ষিণাত্যের জীবন - যাত্রা ও সংস্কৃতি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাই দাক্ষিণাত্য সাম্রাজ্যভুক্ত করলেও তাদের সঙ্গে সাংস্কৃতিক সামঞ্জস্যবিধান করা সম্ভব হত না। 
৪. দাক্ষিণাত্যের প্রাদেশিক শাসক ও নৃপতিরা বিদ্রোহ ঘোষণা করলে তা অযথা গুপ্ত সাম্রাজ্যের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠতো। 
৫. দাক্ষিণাত্যের নৃপতিদের নিজ রাজ্য ফিরিয়ে দিয়ে সমুদ্রগুপ্ত তাদেরকে নিজের মিত্রে পরিণত করেন। এই ঘটনা গুপ্ত সাম্রাজ্যকে শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। 

এই সকল কারণে সমুদ্রগুপ্ত দক্ষিণ ভারতে '' গ্রহণ -মোক্ষ - পরিগ্রহ '' নীতি গ্রহণ করেন। এর অর্থ ছিল - শত্রু বিজয় বা গ্রহণ , শত্রুকে মুক্তি প্রদান বা মোক্ষ এবং আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করে শত্রুকে নিজ রাজ্য ফিরিয়ে দেওয়া বা পরিগ্রহ। সমুদ্রগুপ্তের দাক্ষিণাত্য নীতি তাঁর অসামান্য কূনৈতিক জ্ঞানের পরিচায়ক।   

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো        
 
Share
Tweet
Pin
Share
No comments

হোসেনসাহি বংশ : বাংলার ইতিহাসে হোসেনসাহি বংশের অবদান। 

বাংলার রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসে হোসেনসাহি বংশের অবদান। 



 

বাংলার রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসে হোসেনসাহি বংশের অবদান। 

বাংলায় হোসেনশাহি শাসনের সূচনা ছিল দুই ভাবে উল্লেখযোগ্য - অরাজকতার অবসান ও গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা। বাংলায় ইলিয়াসশাহি শাসনের পর হাবসি শাসন শুরু হয়। কিন্তু হাবসি শাসনে বাংলায় রাজনৈতিক , সামাজিক , সাংস্কৃতিক - সর্বক্ষেত্রে অরাজকতা দেখা যায়। প্রায় অর্ধ - শতাব্দীর শাসনকালে ( ১৪৯৩ - ১৫৩৮ খ্রিস্টাব্দ ) হোসেনসাহি সুলতানগন অরাজকতা দমন করে বাংলার সর্বত্র এক শান্তি ও সমৃদ্ধির পরিবেশ রচনা করেছিলেন। হোসেনসাহি শাসকদের মধ্যে আলাউদ্দিন হোসেন শাহের রাজত্বকাল ছিল সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

১. অরাজকতা দমন ও স্থিতিশীল শাসনের প্রতিষ্ঠা :- 
হাবসি শাসনকালে বাংলায় যে অরাজকতা দেখা দিয়েছিল হোসেনসাহি শাসকেরা সেই অরাজকতা দমন করে এক স্থিতিশীল শাসনের প্রতিষ্ঠা করেন। এক্ষেত্রে সুলতান হোসেন শাহের অবদান সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য। আলাউদ্দিন হোসেন শাহ ও নসরৎ শাহের রাজত্বকালকে বি এন রায় মধ্য যুগের বাংলার সর্বাপেক্ষা গৌরবজনক অধ্যায় বলে অভিহিত করেছেন। এই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ফলে বাংলার সর্বত্র অর্থনৈতিক , সাংস্কৃতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে উন্নয়ন বিকশিত হয়।

২. বাংলার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা :- 
হোসেনসাহি শাসকগণ দিল্লির সুলতান ও পার্শ্ববর্তী শক্তিশালী রাজ্যগুলির হাত থেকে বাংলার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সমর্থ হয়েছিলেন। এমনকি সিকান্দার আক্রমণকে সাফল্যের সঙ্গে প্রতিহত করেন হোসেনসাহি শাসকেরা। বাংলাকে দিল্লির সুলতানি শাসনের নিরপেক্ষ শক্তি হিসাবে গড়ে তুলতে হোসেনসাহি শাসকদের অবদান অনস্বীকার্য। 

৩. হিন্দু -মুসলিম সমন্বয়ের নীতি :- 
সাম্রাজ্যের সম্প্রসারণ ও নিরাপত্তাবিধানের জন্য হোসেনসাহি শাসকেরা এক ধর্মনিরপেক্ষ শাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। প্রশাসন ও জনগণের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপনের জন্য হিন্দুদের প্রশাসনিক বিভিন্ন পদে নিয়োগ করা হয়েছিল। সমকালীন বাংলার ইতিহাসে এই নিরপেক্ষতার নীতি ছিল অপরিহার্য। ঐতিহাসিক তরফদার বলেছেন - Such a secular policy was inherent in the logic of Bengal History. । এই প্রসঙ্গে সেনাপতি গৌড় মল্লিক , চিকিৎসক মুকুন্দ , সচিব রূপ গোস্বামী ও সনাতন গোস্বামী - প্রমুখের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। 

৪. সাম্রাজ্যের সম্প্রসারণ :- 
হুসেনসাহি আমলে বাংলার রাষ্ট্রীয় সীমানা পশ্চিমে ত্রিহুত , দক্ষিণ - পশ্চিমে উড়িষ্যার কিছু অংশ , উত্তর - পূর্বে কুচবিহার ও দক্ষিণে চট্টগ্ৰাম পর্যন্ত সম্প্রসারিত ছিল। হোসেন শাহ ও নসরৎ শাহ আফগান শক্তিকে নিয়ে একটি শক্তিসংঘ গঠন করেন যা সাম্রাজ্যের সম্প্রসারণ ও নিরাপত্তাবিধান - উভয় ক্ষেত্রেই কার্যকরী হয়। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৫. জাতীয় চেতনার বিকাশ :- 
হুসেনসাহি আমলে ধর্মনিরপেক্ষ প্রশাসন ও প্রশাসনিক স্থিতাবস্থা জাতীয় চেতনার বিকাশে সহায়ক হয়।হুসেনশাহি শাসকেরা বাংলার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করেছিলেন। এর ফল হিসাবে , বাংলার রাজনৈতিক ক্ষেত্রে হিন্দু - মুসলিম সমন্বয়সাধন তৈরী হয় ; যা বাংলার রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জীবনে জাতীয় চেতনার বিকাশে সহায়ক হয়ে ওঠে। হিন্দু - মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ যৌথভাবে বাংলার বিকাশে আত্মনিয়োগ করেন। 

৬. সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে নবজাগরণ :- 
হোসেনসাহি আমলে বাংলার সাহিত্য ও সংস্কৃতি উত্তর ভারতের প্রভাবমুক্ত হয়ে স্বাধীনভাবে পথ চলা শুরু করে। কেবলমাত্র স্থানীয় মনীষার উপর ভিত্তি করে সাহিত্য ও সংস্কৃতি সমৃদ্ধ হয়। হোসেনসাহি শাসকেরা এই নতুন সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতা করেন। এই সময় বাংলা ভাষা ও ব্রাহ্মণ্য ধর্মের পুনরুত্থান ঘটে। এছাড়াও এই সময়কালের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল চৈতন্যদেবের আবির্ভাব। 

৭. সাহিত্যে উৎকর্ষতা :- 
এই সময়কালে সৈয়দ আলাওল ও দৌলত কাজীর রচনায় ভাববাদের প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়। সংস্কৃত ভাষাও উৎকর্ষতা লাভ করে। মালাধর বসু , যশোরাজ খাঁ ,কবীন্দ্র পরমেশ্বর , শ্রীধর , বিজয় গুপ্ত - প্রমুখের নাম সাহিত্য ক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। হোসেন শাহের পৃষ্ঠপোষকতায় মালাধর বসু ভগবৎ গীতার বাংলা অনুবাদ করেন। এই কাজের জন্য হোসেন শাহ তাঁকে ' গুণরাজ খাঁ ' উপাধি প্রদান করেন। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকীর্তিগুলি হল - কৃষ্ণদাস কবিরাজের ' চৈতন্যচরিতামৃত ' , বিপ্রদাসের ' মনসামঙ্গল ' ও জয়ানন্দের ' চৈতন্যমঙ্গল ' - ইত্যাদি। সংস্কৃত সাহিত্য , দর্শন , স্মৃতিশাস্ত্র , ব্যাকরণ , ন্যায়শাস্ত্র - ইত্যাদি ক্ষেত্রে নবদ্বীপ সেই সময়ে পীঠস্থান হয়ে উঠেছিল। 

৮. স্থাপত্যশিল্পের বিকাশ :- 
হুসেনশাহী আমলে বাংলার স্থাপত্য শিল্প বিশেষ উৎকর্ষতা লাভ করে। গৌড়ের গুণমন্ত মসজিদ ,বড়সোনা মসজিদ , হোসেন শাহের সমাধির উপর এক লক্ষ টাকা ব্যয় করে নির্মিত একলাখি মসজিদ - ছিল এই যুগের স্থাপত্য শিল্পের সর্বশ্রেষ্ঠ নিদর্শন। ঐতিহাসিক ফার্গুসন বড়সোনা মসজিদকে গৌড়ের সর্বোৎকৃষ্ট সৌধ বলে উল্লেখ করেছেন। এছাড়াও এই সময়ে অগণিত মসজিদ , মক্তব , মাদ্রাসা , খানকা , প্রাসাদ , দরগা - ইত্যাদি গড়ে ওঠে। 

৯. অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি :- 
হোসেনসাহি আমলে স্থানীয় ও বহির্বাণিজ্য বৃদ্ধি পায়। সমুদ্রপথে শ্রীলংকা , ইন্দোচীন , ইন্দোনেশিয়া , ব্রহ্মদেশ , সুমাত্রা - ইত্যাদি দেশের সঙ্গে সমুদ্রপথে বাণিজ্য চলতো। উপকূলবর্তী শহরগুলো পণ্য কেনাবেচার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল। গৌড় , সপ্তগ্রাম , চট্টগ্রাম - ইত্যাদি শহরগুলি স্থানীয় বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল। এছাড়াও এই সময়কালে কৃষির উন্নয়ন সাধিত হয়। এইভাবে ব্যবসা - বাণিজ্য ও কৃষির উন্নতি - উভয়ের সমৃদ্ধির ফলে অর্থনীতি সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। 

১০. ভক্তিবাদের সূচনা ও ভাবজগতে বিপ্লব :- 
বাংলার ভাবজগৎ ও আধাত্মিকতার ক্ষেত্রে হোসেনসাহি যুগ তাৎপর্যপূর্ণ। এই যুগেই চৈতন্যদেবের আবির্ভাব ঘটে। শ্রীচৈতন্যদেব প্রেমধর্মের প্রচার করে বাংলার সাংস্কৃতিক জগতে এক নবজাগরণ সৃষ্টি করেন। সুলতান হোসেন শাহ ছিলেন শ্রীচৈতন্যদেবের মানবধর্ম ও প্রেমধর্ম প্রচারের পরম পৃষ্ঠপোষক। বস্তুতঃ হোসেনসাহি শাসকদের উদার ধর্মীয় নীতির ফলেই বাংলায় ভক্তিবাদের বিশেষ বিস্তার ঘটে। কবীন্দ্র পরমেশ্বর হোসেন শাহকে ' কৃষ্ণের অবতার ' বলে অভিহিত করেছেন। এছাড়াও ধর্মীয় উদারনীতি গ্রহণের কারণে হোসেন শাহকে ' বাংলার আকবর ' রূপেও অভিহিত করা হয়। 

পরিশেষে বলা যায় , হোসেনসাহি রাজত্বকাল প্রায় অর্ধশতাব্দীকাল যাবৎ যে রাজনৈতিক স্থিতাবস্থা ও বাংলার স্বাধীনতা রক্ষা করতে সমর্থ হয়েছিল তার ফলে বাংলার রাজনৈতিক , সামাজিক , সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক জগতে নবজাগরণের সূত্রপাত হয়। হোসেনসাহি শাসকেরা ধর্মীয় উদারনীতি গ্রহণ করে বাংলার নিজস্ব সংস্কৃতি বিকাশে সহায়ক হয়েছিলেন - এটিই ছিল হোসেনসাহি বংশের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান।    

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো                        

Share
Tweet
Pin
Share
No comments

ইলিয়াসশাহি বংশ : বাংলার রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসে ইলিয়াসশাহি বংশের অবদান। 

ইলিয়াসশাহি বংশের রাজনৈতিক গুরুত্ব আলোচনা কর। 

বাংলার ইতিহাসে ইলিয়াসশাহি বংশের গুরুত্ব আলোচনা কর।    




বাংলায় ইলিয়াসশাহি বংশের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ। তিনি দিল্লির নিয়ন্ত্রণমুক্ত এক স্বাধীন শাসনের প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলায় ইলিয়াসশাহি রাজবংশ দুটি ধারায় রাজত্ব করে - প্রথমটি ছিল ১৩৪২ থেকে ১৪১৫ খ্রিস্টাব্দ এবং দ্বিতীয়টি ছিল ১৪৪২ থেকে ১৪৮৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। ইলিয়াসশাহি রাজবংশের এই দেড়শো বছরের শাসনে বাংলার রাজনৈতিক , সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে কিছু বিশেষ পরিবর্তন ও উন্নতি সাধিত হয়। বাংলার রাজনৈতিক , সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ইলিয়াসশাহি শাসনের গুরুত্ব আলোচনা করা হল। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো


বাংলার রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ইলিয়াসশাহি শাসনের অবদান ও গুরুত্ব :- 


১. স্বাধীন শাসনের প্রতিষ্ঠা :- 
ইলিয়াসশাহি আমলে বাংলায় এক স্বাধীন শাসনের প্রতিষ্ঠা হয় , যা প্রায় শতাধিক বছর স্থায়ী হয়েছিল। এই শাসন দিল্লির তুর্কি শাসনের প্রভাব থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত ছিল। এই স্বাধীন সত্তা বজায় ছিল আকবর কর্তৃক বঙ্গদেশ জয় পর্যন্ত। এইভাবে তুর্কি প্রভাবমুক্ত থাকার ফলে বাংলার নিজস্ব সংস্কৃতি স্বাধীনভাবে বিকশিত হওয়ার সুযোগ লাভ করে। 

২. রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধতা :- 
ইলিয়াসশাহি শাসকেরা বারংবার দিল্লির তুর্কি শাসকদের আক্রমণ প্রতিহত করে বাংলার স্বাধীনতা অক্ষুন্ন রাখেন। কিন্তু দিল্লির সুলতানের পক্ষে বাংলার এই স্বাধীনতা মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না। তাই তাঁরা বারবার বাংলা আক্রমণ করলেও বাংলা ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের স্বাধীন সত্তা বজায় রাখে। সমগ্র উত্তর ভারত যখন দিল্লি সুলতানির পদানত হয়েছিল , তখন বাংলার স্বাধীন অস্তিত্ব নিঃসন্দেহে ছিল এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। 

৩. সাম্রাজ্যের সম্প্রসারণ :- 
ইলিয়াসশাহি শাসকেরা বাংলার বাইরেও সাম্রাজ্য সম্প্রসারণ করেন। বিহার , আসাম , উড়িষ্যা , বারাণসী , গোরক্ষপুর - ইত্যাদি প্রদেশেও ইলিয়াসশাহি বংশের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। এমনকি , ইলিয়াস শাহের নেতৃত্বে নেপাল জয় করাও সম্ভব হয়েছিল। যদুনাথ সরকার ইলিয়াসশাহি বংশের রাজনৈতিক গুরুত্ব প্রসঙ্গে নেপাল জয় কে তাৎপর্যপূর্ণ বলে অভিহিত করেছেন। 

৪. সুষ্ঠ শাসন ব্যবস্থা : - 
ইলিয়াসশাহি আমলে বাংলায় এক সুষ্ঠ প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। মুসলিমদের সঙ্গে সঙ্গে যোগ্যতা ও দক্ষতা সম্পন্ন অ - মুসলিম প্রজাদেরকেও শাসনকার্যে সুযোগ দেওয়া হত। হিন্দু নায়ক ও সামন্তরা মর্যাদার আসন লাভ করেন এবং তাঁদের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। বহু হিন্দুকে প্রশাসনের উচ্চপদ প্রদান করা হয়। এপ্রসঙ্গে ইলিয়াস শাহের হিন্দু সেনাপতি সহদেবের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। 

৫. পররাষ্ট্রনীতি :- 
বৈদেশিক রাষ্ট্রগুলির সঙ্গেও ইলিয়াসশাহি বংশের রাজনৈতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। চিন ও পারস্যতে ইলিয়াসশাহি শাসকেরা দূত পাঠিয়েছিলেন এবং চিনের একাধিক দূত বাংলায় আসেন। চৈনিক দূত মা - হুয়ানের রচনা থেকে ইলিয়াসশাহি বংশের বহু ইতিহাস জানা যায়।

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো
 

বাংলার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ইলিয়াসশাহি শাসনের অবদান ও গুরুত্ব :- 


১. হিন্দু - মুসলিম ধর্মীয় সমন্বয় :- 
ইলিয়াসশাহি শাসকেরা বাংলায় হিন্দু মুসলিম সমন্বয় ঘটাতে সমর্থ হয়েছিলেন। হিন্দু ও মুসলিম যৌথভাবে প্রশাসনিক ও রাজরাজনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল। এর ফলে ধর্মীয় ক্ষেত্রে এক অভূতপূর্ব সম্প্রীতির পরিবেশ সৃষ্টি হয় এবং হিন্দুরা ইলিয়াসশাহি শাসকদের সহায়ক শক্তি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। যেমন , ইলিয়াস শাহের আমলে ফিরোজ শাহ তুঘলক বাংলা আক্রমণ করলে হিন্দু জমিদার ও পাইকরা ইলিয়াসশাহের সমর্থনে এগিয়ে আসেন। 

২. হিন্দুদের মর্যাদা বৃদ্ধি :- 
ইলিয়াসশাহি আমলে প্রশাসনের উচ্চপদে বহু হিন্দুকে নিয়োগ করা হয়। যেমন মুকুন্দ দাস ছিলেন রাজপন্ডিত , অনন্ত সেন ছিলেন রাজচিকিৎসক। ইলিয়াসশাহ নিজ প্রতিভাবলে বহু হিন্দুকে নিজপক্ষে আনতে সমর্থ হন। এর ফলে বাংলায় হিন্দুদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং সমাজে পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় সমাজে প্রাধান্য বৃদ্ধি পায়। 

৩. গ্রামাঞ্চলে হিন্দু শাসনের একাধিপত্য :- 
ইলিয়াসশাহি আমলে মুসলিম শাসন মূলত শহরাঞ্চলেই প্রচলিত ছিল। গ্রামাঞ্চলে হিন্দু জমিদার ও স্থানীয় শাসক বর্গের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত ছিল। কর আদায় ও শাসন পরিচালনা উভয়ই ছিল হিন্দুদের হস্তগত। 

৪. নতুন সম্প্রদায়ের উদ্ভব :- 
একদিকে শহরাঞ্চলে হিন্দু আমলাতন্ত্র এবং অন্যদিকে গ্রামাঞ্চলে হিন্দুদের স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন - এই দুইয়ের ফলে বাংলার সমাজে এক নতুন ধরণের হিন্দু মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটে। এই হিন্দু মধ্যবিত্ত সম্প্রদায় সামাজিক , আর্থিক ও সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে সমৃদ্ধশালী ছিলেন। 

৫. ইসলামের প্রসার :- 
ইলিয়াসশাহি শাসনে বাংলার ধর্মীয় ক্ষেত্রে এক উদার ও সমন্বয়ের পরিবেশ সৃষ্টি হয়। গ্রামবাংলায় ইসলামের বাণী প্রচারিত হওয়ার ফলে বহু সাধারণ মানুষ ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হন এবং ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। এই ক্ষেত্রে নিম্নবর্গের হিন্দুদের প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়। ধীরে ধীরে গ্রামাঞ্চলে মক্তব ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হলে সাধারণ মানুষের মধ্যে ইসলাম ধর্মের প্রসার ঘটতে থাকে।  

৬. বাংলা ভাষা ও সাহিত্য ক্ষেত্রে উৎকর্ষতা :- 
ইলিয়াসশাহি আমলে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে বিশেষ উৎকর্ষতা লক্ষ্য করা যায়। এই যুগের ভাষা ও সাহিত্য ক্ষেত্রে সর্বপ্রধান নিদর্শন হল শ্রীকৃষ্ণকীর্তন। শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের হাত ধরেই চর্যাপদ থেকে বাংলা ভাষা রূপান্তরিত হয়। শামসুদ্দিন ইলিয়াসশাহ , সিকান্দার শাহ ও গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদর্শন করেন। 

৭. অনুবাদ সাহিত্যের উৎকর্ষতা : - 
অনুবাদ সাহিত্যও ইলিয়াসশাহি শাসনে বিশেষ উৎকর্ষতা লাভ করে। এই আমলের সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য অনুবাদ সাহিত্যগুলি হল - কৃত্তিবাসের রামায়ণ ও মালাধর বসুর শ্রীকৃষ্ণবিজয়। এই সাহিত্যকীর্তিগুলি আজও বাংলা সাহিত্যে সমান গুরুত্বপূর্ণ। 

৮. অন্যান্য সাহিত্য ও সাহিত্যিক :- 
ইলিয়াসশাহি শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতায় গৌড় , পাণ্ডুয়া , লক্ষণাবতী - ইত্যাদি শহরগুলি শিল্প ও সংস্কৃতির বিশেষ উৎকর্ষ কেন্দ্রে পরিণত হয়। অমরকোষ গ্রন্থের টীকা রচনা করেন বৃহস্পতি মিশ্র। এই টীকা গ্রন্থটির নাম পদচন্দ্রিকা। মালাধর বসু ' গুণরাজ খাঁ ' ও তাঁর পুত্রকে ' সত্যরাজ খাঁ ' উপাধি দেওয়া হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায় , ইলিয়াসশাহি আমলে দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক স্থিতাবস্থা বজায় থাকার ফলে সাহিত্যক্ষেত্রে তা বিশেষ সহায়ক হয়। 

৯. স্থাপত্য ক্ষেত্রে উৎকর্ষতা :- 
ইলিয়াসশাহি শাসনকালে বাংলায় স্থাপত্য শিল্পে বিশেষ উৎকর্ষতা লক্ষ্য করা যায়। এই সময় বিভিন্ন স্থাপত্যকীর্তি নির্মিত হয়। যেমন - আদিনা মসজিদ , কোতওয়ালি দরওয়াজা , জামি মসজিদ , লোটন মসজিদ , চামকাটি মসজিদ , তাঁতিপাড়া মসজিদ - ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই সকল স্থাপত্যকীর্তিগুলি গঠনরীতি ও শিল্প স্বাতন্ত্রতায় আজও বিশিষ্ট হয়ে আছে। এগুলির মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল আদিনা মসজিদ। উত্তর - দক্ষিণ ও পূর্ব - পশ্চিমে এর পরিধি ছিল যথাক্রমে ৫০৭ ফুট ও ২৮৫ ফুট। এছাড়াও ইলিয়াস শাহ হাজিপুর শহর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।  

পরিশেষে বলা যায় , একটি স্বাধীন ও স্থায়ী শাসন ব্যবস্থার অস্তিত্বের ফলে ইলিয়াসশাহি আমলে শিক্ষা , সংস্কৃতি , সমাজ , রাজনীতিও অর্থনীতি - ইত্যাদি সর্বক্ষেত্রেই পরিবর্তন ও উৎকর্ষতা পরিলক্ষিত হয়। বিশেষ করে ধর্মীয় উদারতা ও ধর্ম সমন্বয় বিশেষভাবে উল্লেখের দাবী রাখে। এছাড়াও দিল্লি তুর্কি শাসকদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইলিয়াসশাহি শাসকেরা যে স্বাধীন অস্তিত্ব রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছিলেন তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য। এই স্বাধীন অস্তিত্ব রক্ষার ফলেই বাংলার নিজস্ব সংস্কৃতির বিস্তার সম্ভব হয়েছিল।  

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো
     
Share
Tweet
Pin
Share
No comments
Older Posts

Followers

Pages

  • Home
  • Privacy Policy
  • Disclaimer
  • CONTACT ME
  • About Me

Contact Form

Name

Email *

Message *

About me

Hallow viewers , myself Nandan Dutta [Subhankar Dutta], reside at Maheshpur,Malda.
I made this website for the students of B.A. courses under Gour Banga University. Here you can get suggestions of different subjects like HISTORY , SOCIOLOGY , POLITICAL SCIENCE & EDUCATION.
In future I will add MCQ sections of those subjects.


Categories

  • 1ST SEMESTER SUGGESTION (1)
  • 2 ND YEAR SUGGESTION (1)
  • 2ND SEMESTER (1)
  • 3RD SEMESTER (8)
  • BENGALI NOTES (21)
  • CU suggestion. (1)
  • EDUCATION NOTES (141)
  • ENGLISH COMPULSORY (16)
  • GBU Suggestion. (7)
  • HISTORY EUROPE & WORLD (46)
  • HISTORY NOTES (68)
  • POL SC NOTES (68)
  • SOCIOLOGY NOTES (72)
  • WBCS 2020 (1)

recent posts

Blog Archive

  • August 2025 (4)
  • May 2025 (3)
  • April 2025 (20)
  • March 2025 (12)
  • February 2025 (8)
  • November 2024 (5)
  • October 2024 (2)
  • September 2024 (2)
  • June 2024 (2)
  • March 2024 (6)
  • February 2024 (4)
  • October 2023 (5)
  • May 2023 (5)
  • April 2023 (1)
  • December 2022 (1)
  • November 2022 (13)
  • September 2022 (2)
  • August 2022 (7)
  • July 2022 (29)
  • June 2022 (10)
  • May 2022 (25)
  • April 2022 (24)
  • March 2022 (16)
  • February 2022 (19)
  • January 2022 (21)
  • December 2021 (46)
  • November 2021 (5)
  • October 2021 (6)
  • September 2021 (5)
  • August 2021 (41)
  • July 2021 (43)
  • June 2021 (31)
  • May 2021 (7)
  • April 2021 (1)
  • July 2020 (1)
  • June 2020 (3)
  • April 2020 (1)
  • November 2019 (1)
  • July 2019 (1)
  • June 2019 (1)
  • May 2019 (1)
  • April 2019 (2)
  • January 2019 (1)

Pages

  • Home
  • 2nd SEM ভাষাতত্ত্ব :
  • বাংলা উপভাষা
  • দ্বিতীয় পুলকেশীর কৃতিত্ব
  • ভারতীয় সংবিধানে বর্ণিত সাম্যের অধিকারগুলি আলোচনা করো।
  • হর্ষবর্ধনের কৃতিত্ব আলোচনা করো। তাকে কি উত্তর পথনাথ বলা যায় ?
  • ভারতীয় সংবিধানের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য :-
  • উদারনীতিবাদ : সংক্ষিপ্ত ধারণা :-
  • চোল শাসনব্যবস্থা :-
  • গুপ্তযুগ সুবর্ণযুগ সম্পর্কিত আলোচনা।
  • ৬. উদাহরণসহ মধ্যযুগের বাংলাভাষার কয়েকটি বৈশিষ্ট আল...
  • 1. Marxism
  • আধুনিক বাংলা ভাষা ও তার বৈশিষ্ট।
  • Discuss the career and achievements of Samudragupta .
  • ভাষাতত্ত্ব

Created with by ThemeXpose | Distributed by Blogger Templates