এককেন্দ্রিক ও যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা কর।

by - January 18, 2022

এককেন্দ্রিক ও যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা কর। 

এককেন্দ্রিক ও যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের মধ্যে পার্থক্য। 

এককেন্দ্রিক ও যুক্তরাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থার তুলনা। 

Comparative study of Unitary and Federal political system ( In Bengali ) .

Distinction between Unitary and Federal Government. ( In Bengali ). 



এককেন্দ্রিক শাসন ব্যাবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে কেন্দ্রীভূত থাকে। অঙ্গরাজ্যের জন্য সরকার থাকলেও তারা কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে পরিচালিত হয়। গ্রেট ব্রিটেন , ফ্রান্স , নিউজিল্যান্ড - ইত্যাদি রাষ্ট্রে এককেন্দ্রিক সরকারের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের ক্ষেত্রে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ঘটে। এই ধরণের শাসন ব্যবস্থায় সংবিধান কর্তৃক কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মধ্যে ক্ষমতা বন্টিত হয়। কেন্দ্রীয় সরকার অধিক ক্ষমতা ভোগ করলেও রাজ্য সরকারগুলি কেন্দ্র সরকারের অধীনস্থ থাকে না এবং সংবিধান প্রদত্ত ক্ষমতা অনুযায়ী তারা স্বাধীনভাবে শাসনকার্য পরিচালনা করতে পারে। এককেন্দ্রিক ও যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের পার্থক্যগুলো নিম্নরূপ :- 


১. সরকারের প্রকৃতিগত ক্ষেত্রে পার্থক্য :- এককেন্দ্রিক সরকারের সকল ক্ষমতা একটিমাত্র কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে ন্যাস্ত থাকে। প্রশাসনিক সুবিধার জন্য তারা আঞ্চলিক সরকার গঠন করলেও আঞ্চলিক সরকারগুলি কেন্দ্র সরকারের অধীনে কাজ করে এবং আঞ্চলিক সরকারগুলির অস্তিত্ব নির্ভর করে কেন্দ্র সরকারের ইচ্ছা - অনিচ্ছার উপর। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের ক্ষেত্রে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করা হয় এবং আঞ্চলিক সরকারগুলি সংবিধানিক ক্ষমতার ভিত্তিতে স্বাধীনভাবে শাসনকার্য পরিচালনা করতে পারে। এক্ষেত্রে আঞ্চলিক সরকারগুলির অস্তিত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের উপর নির্ভরশীল নয়। 

২. সংবিধানের প্রকৃতিগত ক্ষেত্রে পার্থক্য :- এককেন্দ্রিক রাষ্ট্রের সংবিধান লিখিত ও অলিখিত উভয়ই হতে পারে। যেমন গ্রেট ব্রিটেনের সংবিধান লিখিত কিন্তু ফ্রান্সের সংবিধান অলিখিত। এককেন্দ্রিক ব্যবস্থায় যেহেতু ক্ষমতার বন্টন হয়না , সেহেতু সংবিধান অলিখিত হলেও কোনো সমস্যা হয়না।  কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থায় সংবিধান অবশ্যই লিখিত হতে হবে। কেননা সংবিধান লিখিত না হলে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যে ক্ষমতার বন্টন সম্ভব হবে না। তাই ভারত , মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র - ইত্যাদি দেশের সংবিধান লিখিত।    


৩. সংবিধানের পরিবর্তনশীলতার ক্ষেত্রে পার্থক্য :- এককেন্দ্রিক রাষ্ট্রগুলিতে সংবিধান সুপরিবর্তনীয় হয়। কেন্দ্রীয় সরকার নিজেদের সুবিধামত সংবিধান পরিবর্তন করতে পারে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থায় সংবিধান দুষ্পরিবর্তনীয় হয়। সংবিধান পরিবর্তনের ক্ষেত্রে রাজ্য বা আঞ্চলিক সরকারগুলিরও সম্মতি প্রয়োজন হয়। এইরকম ব্যবস্থার প্রধান উদ্দেশ্য হল আঞ্চলিক স্বার্থ সুরক্ষিত করা। 

৪. সংবিধানের গুরুত্বের ক্ষেত্রে পার্থক্য :- এককেন্দ্রিক ব্যবস্থায় সংবিধান গুরুত্বহীন। সরকার ইচ্ছেমতো খুব সহজেই সংবিধান পরিবর্তন করতে পারে। ফলে এককেন্দ্রিক সংবিধান মর্যাদাহীন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় সংবিধান সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী। সকল ব্যক্তি , প্রতিষ্ঠান , কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার - সকলকেই সংবিধানের নির্দেশ পালন করে চলতে হয়। যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় সকল ক্ষমতার উৎস হল সংবিধান। 

৫. আদালতের গুরুত্বের ক্ষেত্রে পার্থক্য :- এককেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থায় যেহেতু কেন্দ্রীয় সরকার সকল ক্ষমতা ভোগ করে সেহেতু এককেন্দ্রিক আদালতের গুরুত্ব তুলনামূলকভাবে কম। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় আদালত অনেক বেশি ক্ষমতা ভোগ করে। যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত সংবিধানের প্রধান ব্যাখ্যাকর্তা হিসেবে কাজ করে। সংবিধানের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ আইন অবৈধ বলে ঘোষণা করতে পারে। সকল প্রকার বিরোধের মীমাংসা করতে পারে এবং নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের রক্ষাকর্তা হিসেবে কাজ করে। 

৬. নাগরিকত্বের প্রশ্নে পার্থক্য :- এককেন্দ্রিক ব্যবস্থায় সাধারণতঃ এক - নাগরিকত্ব স্বীকৃত থাকে এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় দ্বৈত - নাগরিকত্ব স্বীকৃত থাকে। যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দ্বৈত - নাগরিকত্ব স্বীকৃত। কিন্তু এর ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যায়। যেমন ভারত যুক্তরাষ্ট্র হলেও এখানে এক - নাগরিকত্ব স্বীকৃত। 

৭. অঙ্গরাজ্যের সংবিধানের অস্তিত্ত্বগত ক্ষেত্রে পার্থক্য :- এককেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থায় সাধারণত একটিমাত্র সংবিধান থাকে। অঙ্গরাজ্যগুলির জন্য কোনো পৃথক সংবিধান থাকেনা। কিন্তু বর্তমানে এমন বহু যুক্তরাষ্ট্রের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায় , যাদের অঙ্গরাজ্যগুলির জন্যও পৃথক ও স্বতন্ত্র সংবিধান আছে। তবে অঙ্গরাজ্যের জন্য স্বতন্ত্র সংবিধানগুলিও কেন্দ্রীয় সংবিধানের সাথে সামঞ্জস্য রেখে রচনা করতে হয়। 

৮. আঞ্চলিক স্বার্থ সংক্রান্ত পার্থক্য :- এককেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থায় আঞ্চলিক স্বার্থ উপেক্ষিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। শুধুমাত্র কেন্দ্র সরকারের হাতে সমস্ত ক্ষমতা অর্পিত হওয়ার ফলে আঞ্চলিক স্বার্থগুলি ক্ষুন্ন হতে পারে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থায় আঞ্চলিক সরকারগুলিও স্বাধীনভাবে কর্মপরিচালনা ও নীতি নির্ধারণ করতে পারে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় আঞ্চলিক স্বার্থ পূরণের নিশ্চয়তা থাকে। 

পরিশেষে বলা যায় , কোন রাষ্ট্রে কোন ধরণের শাসনব্যবস্থা প্রবর্তিত হবে তা নির্ভর করে সেই রাষ্ট্রের ইতিহাস , রাজনৈতিক অবস্থা , প্রথা , রীতিনীতি , জনমত , সংস্কৃতি - ইত্যাদি বিভিন্ন 
বিষয়ের উপর। সর্বক্ষেত্রে কোনো এক ধরণের ব্যবস্থা সুফল বা কুফল প্রদান করবে - এমনটা নয়। তবে বর্তমান বিশ্বের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় দেখা যায় বৃহৎ রাষ্ট্রগুলিতে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা প্রচলিত। যেমন - ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আবার চীন বৃহৎ রাষ্ট্র হওয়া স্বত্ত্বেও সেখানে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। 


   

You May Also Like

0 comments