Pages

Powered by Blogger.
1ST SEMESTER SUGGESTION 2 ND YEAR SUGGESTION 2ND SEMESTER 3RD SEMESTER BENGALI NOTES CU suggestion. EDUCATION NOTES ENGLISH COMPULSORY GBU Suggestion. HISTORY EUROPE & WORLD HISTORY NOTES POL SC NOTES SOCIOLOGY NOTES WBCS 2020

NANDAN DUTTA

A new approach for exam notes .

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সনেটের ( চতুর্দশপদী কবিতা ) বিষয়বস্তু

মাইকেল মধুসূদন দত্তের ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সনেটের ( চতুর্দশপদী কবিতা ) বিষয়বস্তু আলোচনা কর।  



ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সনেটের ( চতুর্দশপদী কবিতা ) বিষয়বস্তু :- 

'' ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর '' সনেট বা চতুর্দশপদী কবিতাটিতে মাইকেল মধুসূদন দত্ত বিদ্যাসাগরকে একই সঙ্গে বিদ্যার সাগর ও করুণার সাগর হিসেবে অভিহিত করেছেন। কবি বলেছেন -
'' বিদ্যার সাগর তুমি বিখ্যাত ভারতে।
করুণার সিন্ধু তুমি, সেই জানে মনে, '' 
ঠিক তারপর কবি বিদ্যাসাগরকে '' দীনের বন্ধু '' বলে সম্বোধন করেছেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের চরিত্রের মহান গুণগুলি এই সনেটের মাধ্যমে কবি উপস্থাপিত করেছেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের সামগ্রিক জীবন আলোচনা করলে আমরা খুব সহজেই জানতে পারি , তাঁর সমুদ্রের ন্যায় তুলনীয় জ্ঞান , দীন - দরিদ্রের প্রতি অপার করুণা , ক্ষমার আধার , অসীম মাতৃস্নেহ - ইত্যাদি বৈশিষ্টগুলি তাঁর চরিত্রকে মহিমান্বিত করেছে এবং এই মহিমার সুফল পেয়েছে আপামর ভারতবাসী। মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখা সনেটটির প্রথম কয়েকটি চরণে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়কে তাঁর প্রকৃতরূপেই প্রকাশ করেছেন কবি। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

পর্বত যেমন সূর্যের আলো গায়ে মেখে গলিত সোনার মত দ্যুতি বিকিরণ করে , আপন সৌন্দর্য দ্বারা মানবজাতিকে মোহাবিষ্ট করে ; তখন যে ব্যক্তি সেই পর্বতের সান্নিধ্যলাভ করে , কেবল সেই জানে - পর্বতের কী অসীম সৌন্দর্য , কী অসীম গাম্ভীর্য , কত গুনের অধিকারী ; ঠিক তেমনভাবেই মাইকেল মধুসূদন দত্ত তাঁর সনেটে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের মহিমাকে তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন - 
হেমাদ্রির হেম-কান্তি অম্লান কিরণে।
কিন্তু ভাগ্য-বলে পেয়ে সে মহা পর্বতে,
যে জন আশ্রয় লয় সুবর্ণ চরণে,
সেই জানে কত গুণ ধরে কত মতে
গিরীশ। কি সেবা তার সে সুখ সদনে !

সনেটটিতে কবি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়কে হিমালয় পর্বতের বিশালতা ও ব্যাপকতার সঙ্গে তুলনা করেছেন। হিমালয় পর্বতকে রূপক অর্থে ব্যবহার করে তিনি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের মহিমান্বিত চরিত্র তুলে ধরেছেন। হিমালয় যেমন তার সবকিছু দিয়ে মানব ও প্রকৃতির সেবা করে - তার নদী জল প্রদান করে , বৃক্ষরাজি সুস্বাদু ফল প্রদান করে , ফুলের তাদের দৈবিক সুগন্ধে প্রকৃতিকে মোহাচ্ছন্ন করে ; বিদ্যাসাগর মহাশয় ঠিক তেমন ভাবেই নিজের সবটুকু দিয়ে মানব সমাজের সেবা করছেন - জ্ঞানের বিকাশ ঘটিয়েছেন , নারীশিক্ষার বিস্তার ঘটিয়েছেন , সামাজিক কুসংস্কার প্রতিরোধে আজীবন আন্দোলন করেছেন , নিজের অর্থে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেছেন। তাই মাইকেল মধুসূদন দত্ত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়কে হিমালয় পর্বতের অপার মহিমার সঙ্গে তুলনা করেছেন।            
   
পরিশেষে বলা যায় , সারা বিশ্বজগতে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয় জ্ঞানের অসীম আধার হিসেবে পরিচিত। কিন্তু , তাঁর চরিত্রের মধ্যে যে অন্যান্য মহামানবের গুণগুলি আছে , তা বিশ্বজগতের কাছে পরিচিত নয়। কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত তাঁর সনেটে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের বহুমুখী মানবিক গুণগুলি অসাধারণ কৃতিত্বের সঙ্গে পাঠকবর্গের সঙ্গে পরিচয় ঘটিয়েছেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয় সারা জীবন ধরেই আর্তের সেবা করেছেন , অসহায়কে সাহায্য করেছেন , দরিদ্রের মুখে অন্ন জুগিয়েছেন। এমনকি , মাইকেল মধুসূদন দত্ত নিজেও চরম দারিদ্রতা ও অসহায়তার মধ্যে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের কৃপা ও সান্নিধ্যলাভ করেছিলেন। তাই তাঁর পক্ষে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের বহুমুখী গুণাবলীর বর্ণনা তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে।   

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো
   
Share
Tweet
Pin
Share
No comments

নীলদর্পণ নাটকের অপ্রধান চরিত্রগুলি আলোচনা কর। 

দীনবন্ধু মিত্রের নীলদর্পণ নাটকের অপ্রধান চরিত্রগুলির পরিচয় দাও। 




নীলদর্পণ নাটকের অপ্রধান চরিত্রের বর্ণনা :- 


দীনবন্ধু মিত্রের নীলদর্পণ নাটকটি বাংলা সাহিত্য ও সংগ্রামশীলতার ইতিহাসে একটি অমর সৃষ্টি। যেকোনো ধরণের নাটকের ক্ষেত্রে প্রধান চরিত্রগুলি পূর্ণতা লাভ করে অপ্রধান চরিত্রগুলির যথাযথ উপস্থাপনের মাধ্যমে। নাটকের ঘটনাক্রম , ঘটনার উপস্থাপন , চরিত্রের বিশিষ্টতা নির্মাণ , ক্লাইম্যাক্স - ইত্যাদি সর্বক্ষেত্রে অপ্রধান চরিত্রগুলি অপরিহার্য হয়ে পরে। দীনবন্ধু মিত্রের নীলদর্পন নাটকে অপ্রধান চরিত্রগুলি নাটকের ধারাবাহিকতা রক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রসঙ্গতঃ বলা যায় , দীনবন্ধু মিত্রের নীলদর্পণ নাটকে চরিত্রের বহুলতা লক্ষ্য করা যায়। নীচে নীলদর্পণ নাটকের অপ্রধান চরিত্রগুলির বর্ণনা ও নিশিষ্টতা উল্লেখ করা হল। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

গোলক বসু :- 
স্বরপুর গ্রামের বসু পরিবারের কর্তা হলেন গোলক বসু। তাঁর চরিত্রটি অত্যন্ত সহজ , সরল , ধর্মনিষ্ঠ ও প্রীতিপরায়ণ হিসাবে উপস্থিত করেছেন নাট্যকার দীনবন্ধু মিত্র। বর্তমানে তিনি সাংসারিক দায় - দায়িত্ব থেকে অবসর নিয়েছেন এবং সকল দায়িত্ব বর্তেছে পুত্র নবীনমাধবের উপর। গোলক বসু পুত্র নবীনমাধবের জন্য গর্বিত এক পিতা। নিজের গ্রামের প্রতিটি ধূলিকণার প্রতি অগাধ ভালোবাসা থাকলেও তাঁর চরিত্রের মধ্যে সংগ্রামী মানসিকতার অভাব চোখে পড়ে। এই ক্ষেত্রে তিনি একজন দুর্বলচিত্ত মানুষ। মিথ্যা মামলায় আদালতে নিয়ে যাওয়া হলে তিনি যেকোনো উপায়ে মুক্তি পেতে চেয়েছিলেন এবং নীলকর সাহেবের প্রতি আনুগত্যের প্রতিজ্ঞা করেন। গোলক বসু চরিত্রটির মাধ্যমে নাট্যকার উপস্থাপন করেছেন সেই সকল মানুষদের যেসকল মানুষেরা জীবনপ্রেমী হলেও অত্যাচারীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন। 

বিন্দুমাধব :- 
নাটকে বিন্দুমাধব চরিত্রটি ম্রিয়মান। পুরো নাটকে তার ভূমিকা নগন্য। তাই চরিত্রটি তেমন উজ্জ্বল নয়। কোনো দৃশ্যেই তাঁর কোনো সক্রিয় ভূমিকা নেই। পিতার মৃত্যুর পর তাঁর সংলাপগুলি অনেক বেশি কৃত্রিম বলে মনে হয়। তবে তাঁর চরিত্রের মধ্যে পিতার প্রতি অগাধ ভক্তি , দাদাকে পিতৃজ্ঞানে শ্রদ্ধা , মায়ের প্রতি নিদারুন স্নেহ , স্ত্রী সরলতার প্রতি ভালোবাসা - প্রকাশ পেয়েছে। বিন্দুমাধব ধীর , স্থির ও সংযত ; তবে কর্মে তৎপর। পিতার বন্দীত্বের সংবাদ পেয়েও বিন্দুমাধব বিচলিত হয়নি এবং ধীর , স্থিরভাবে পিতাকে মুক্ত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। বিন্দুমাধবের চরিত্রের মধ্যে দিয়ে বুদ্ধিমত্তা ও হৃদয়বৃত্তির এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটেছে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

সাবিত্রী :- 
নীলদর্পণ নাটকে সাবিত্রী চরিত্রটি বিশেষভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। তিনি জমিদার গৃহিনী। স্বামীর প্রতি অবিচল শ্রদ্ধা , পুত্রের প্রতি গভীর স্নেহ , পুত্রবধূদের প্রতি উদার স্নেহ - সাবিত্রীর চরিত্রকে মহিমান্বিত করেছে। জমিদার গৃহিনী হলেও সকল বিষয়ে তাঁর সজাগ দৃষ্টি। এছাড়াও , পরিবারের বাইরেও প্রতিবেশীদের প্রতিও তাঁর ভালোবাসা পরায়ণতা লক্ষ্য করা যায় এবং খবর - ঘটনা - ইত্যাদির প্রতিও তাঁর আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়। ঈশ্বরের প্রতি তাঁর রয়েছে অগাধ বিশ্বাস। সাবিত্রী চরিত্রটির মধ্যে দিয়ে নাট্যকার ট্রাজিক আবেদন উপস্থাপন করেছেন। 

সৈরিন্ধ্রি :- 
সৈরিন্ধ্রি হলেন নবীনমাধবের স্ত্রী ও বসু পরিবারের বড়বৌ। শ্বশুর , শাশুড়ি , স্বামী - সকলের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ; দেবর ও জা - এর প্রতি অপত্য স্নেহ , দাসদাসী , প্রতিবেশী - সকলের প্রতি তাঁর সহৃদয় আচরণ - ইত্যাদির ফলে তাঁর চরিত্রটি বিশিষ্টতা লাভ করেছে। তবে সৈরিন্ধ্রির জীবন যন্ত্রনা ও বেদনায় ভরা। যেমন শিশুকালে পিতৃহীন হয়েছে সে ; আবার শ্বশুর বাড়িতে এসে যখন পিতৃগৃহের কষ্ট যখন সবে কিছুটা লাঘব হয়েছে - তখনি নীলকর সাহেবদের করাল গ্রাস বিপর্যস্ত করে দিয়েছে তার পরিবারকে। সবকিছু পেয়েও সবকিছু হারানোর বেদনা সৈরিন্ধ্রি চরিত্রটির মধ্যে দিয়ে স্পর্শকাতরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন নাট্যকার। 

সরলতা :- 
সরলতা বসু পরিবারের ছোটবৌ তথা বিন্দুমাধবের স্ত্রী। নামের সঙ্গে তাঁর চরিত্রের বিশেষ মিল পাওয়া যায়। সারল্যই তাঁর চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট। আপন চারিত্রিক মাধুর্য্যে , সেবা ও কর্তব্য পালনের মধ্যে দিয়ে সে সবার স্নেহের পাত্রী হয়ে উঠেছে। তাঁর সারল্যের জন্য শাশুড়ি আদর করে তাকে পাগলী বলে সম্মোধন করেন। সে কিছুটা লেখাপড়া জানে এবং অবকাশ সময়ে সে শাশুড়িকে গল্পের বই পাঠ করে শোনায় ও বড় জা - কে বেতাল পাঠ করে শোনায়। সরলতা প্রাণ শক্তিতে উচ্ছল। কিন্তু শ্বশুর জেলে যাওয়ায় সে ভেঙে পড়ে। আবার সাবিত্রী যখন শোকে উন্মাদ হয় তখন সরলতার সেবা তার চরিত্রটিকে মহিমান্বিত করে তোলে।

গোপীনাথ :- 
গোপীনাথ দাস নীলকরের দেওয়ান। দুস্কর্মের সমস্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আজ সে নীলকরদের তোষামোদকারীতে পরিণত হয়েছে। নীলকরদের অত্যাচারকে তাদের সহযোগীদের চোখ দিয়ে দেখানো হয়েছে চরিত্রটির মাধ্যমে। আবার নীলকররা তাদের নিজেদের অনুগত কর্মচারীদের প্রতিও যে অমানুষিক অত্যাচার চালাতো - তা ফুটে উঠেছে গোপীনাথ চরিত্রটির মাধ্যমে ; গোপীনাথের প্রতি উড সাহেবের ব্যবহার তার প্রমান দেয়। অত্যাচারী নীলকরদের আরো বেশি করে অত্যাচারী হয়ে উঠতে সাহায্য করেছে গোপীনাথ। তবে তা স্বত্তেও তার সমস্ত সততার মৃত্যু ঘটেনি। সাহেবদের অত্যাচারের মাত্রা যখন সমস্ত সীমা ছাড়িয়ে গেছে তখন গোপীনাথের মধ্যে আক্ষেপ দেখা যায়। যেমন , গোলক বসুর মৃত্যুতে গোপীনাথের যথেষ্ট আক্ষেপ ছিল। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

সাধুচরণ :- 
ঘোষ পরিবারের কর্তা সাধুচরণ ঘোষ এক সাধারণ রায়ত। নাটকের সূচনাতে দেখা যায় সাধুচরণ একজন বিজ্ঞ ও দূরদর্শী মানুষ। তাঁর সংলাপের মধ্যে ফুটে উঠেছে বর্তমানের যথাযথ বিশ্লেষণ অন্যদিকে নীলকরদের ভবিষ্যত সম্পর্কেও তাঁর মতামত উল্লেখযোগ্য। সাধুচরণ শিক্ষিত বলে সাধারণ কৃষকদের মত সে অল্পেই ভেঙে পড়েনা। তবে সে স্পষ্টবক্তা হলেও প্রতিবাদী চরিত্র নয়। চরিত্রটি পারিপার্শ্বিক সম্পর্কে সচেতন এবং আত্মকেন্দ্রিক নয়। 

তোরাপ :- 
তোরাপ একজন সাধারণ চাষী। নবীনমাধবের দ্বারা উপকৃত হওয়ায় সে তাঁর প্রতি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। বলিষ্ট , সাহসী ও ধর্ম বুদ্ধি পরায়ণ চরিত্রের অধিকারী করে নাট্যকার তাঁকে নাটকে উপস্থিত করেছেন। সে নবীনমাধবের পিতা গোলক বসুর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষী দিতে অস্বীকার করে - এখানেই তাঁর সাহসিকতা ও ধর্ম বুদ্ধির পরিচয় পাওয়া যায়। সত্যের পথ কঠিন - তা সে জানে ; কিন্তু সে সত্যের পথ থেকে সরে আসতে চায় না। নবীনমাধবের মতই সে নীলকরদের প্রাণে না মেরে তাদের বিবেক বুদ্ধি জাগ্রত করতে চায় - এইখানেই চরিত্রটির বিশিষ্টতা। 

আদুরী :- 
বসু পরিবারের বিধবা পরিচারিকা আদুরী। কিন্তু মনিব পরিবারের কারো সাথেই তার প্রভু - ভৃত্যের সম্পর্ক নেই। আদুরীর আন্তরিকতায় সকল বয়সের মানুষের সঙ্গে তার আত্মার আত্মীয়তা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পরিহাস প্রিয়তা তার চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট। বসু পরিবারের চরম দুর্দশার দিনে সে ভেঙে পড়েছে ; তাদের কথা ভেবে ব্যাকুল হয়েছে। এ থেকেই বোঝা যায় মনিব পরিবারের সদস্যদের সে কতটা আপন করে নিয়েছিল। 

রেবতী :- 
রেবতী হল সাধুচরণের স্ত্রী। সে একজন অশিক্ষিত গ্রাম্য রমণী। তবে নাটকে রেবতী চরিত্রটি মাতৃত্বের অসীম মহিমা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কন্যা ক্ষেত্রমণি এমনকি দেবর রাইচরণের প্রতিও তাঁর আচরণে মাতৃত্বের সকল রূপগুলি ফুটে উঠেছে। সে কর্তব্যপরায়ণা , স্নেহশীলা ও বাস্তববোধসম্পন্না। পারিপার্শ্বিক অবস্থা সম্পর্কে তাঁর স্পষ্ট ধারণা রয়েছে। নাট্যকার রেবতী চরিত্রের মধ্যে দিয়ে এক গ্রাম্য রমণীর স্নেহশীলতা তুলে ধরেছেন। 

ক্ষেত্রমণি :- 
সাধুচরণ ও রেবতীর কন্যা ক্ষেত্রমণি। সে সহজ সরল। তাঁর আত্মার আত্মীয় হল বসু পরিবারের ছোটবৌ সমবয়সী সরলতা। নারীর সতীত্ব রক্ষায় ক্ষেত্রমণির সংগ্রাম চোখে পড়ার মত। নবীনমাধব ক্ষেত্রমণিকে কামুক সাহেবের হাত থেকে উদ্ধার করলেও ক্ষেত্রমণি পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়। গর্ভে থাকা সন্তানের প্রতি তাঁর আবেগ নাট্যকার নিপুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। 

উডসাহেব ও রোগসাহেব :- 
দুজনেই নীলকর সাহেব - অত্যাচারী ও মানবতাহীন। দুজনেই শিক্ষিত এবং ইংরেজি ও ভাঙা বাংলায় কথা বলেন। সম্ভবতঃ অত্যাচারী লারমুর সাহেবের অনুকরণে নাট্যকার উডসাহেবের চরিত্রটি নির্মাণ করছিলেন। অর্থের প্রতি অসীম লোভের কারণে তারা অত্যাচারী হয়ে উঠেছেন। অত্যাচার , লুন্ঠন , মিথ্যা মামলা সাজানো , নিজ স্বার্থে প্রশাসনকে ব্যবহার করা - সকল নেতিবাচক বৈশিষ্টের সমন্বয় ঘটেছে চরিত্র দুটির মধ্যে।   

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো            

Share
Tweet
Pin
Share
No comments

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রকৃতিভাবনা আলোচনা কর। 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কীভাবে প্রকৃতি , মানুষ ও শিক্ষার সমন্বয় ঘটিয়েছিলেন - আলোচনা কর। 




রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রকৃতিভাবনা। 


কবি , সাহিত্যিক এবং দার্শনিক হিসেবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বহু সৃষ্টির মধ্যে প্রকৃতির প্রতি তাঁর গভীর অনুরাগের পরিচয় পাওয়া যায়। নিজ আত্মজীবনী '' জীবনস্মৃতি '' তে তিনি লিখেছিলেন - '' আমার শিশুকালেই বিশ্ব প্রকৃতির সাথে আমার খুব একটা সহজ ও নিবিড় যোগ ছিল। '' প্রকৃতির সাথে তাঁর এই সান্নিধ্য তাঁর জীবনের দার্শনিক উপলব্ধিগুলির মধ্যেও ধরা দেয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রকৃতি , মানুষ ও শিক্ষাকে পরস্পর অভিন্ন বলে মনে করতেন। তাঁর দার্শনিক উপলব্ধির অন্যতম বৈশিষ্ট হল প্রকৃতি , মানুষ ও শিক্ষার মেলবন্ধন। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

কবির দর্শনে প্রকৃতির প্রধান উপাদান হিসেবে অরণ্য :- 
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর '' অরণ্য দেবতা '' প্রবন্ধে লিখেছেন - '' অনেক মানুষ অরণ্যকে ধ্বংস করে নিজেরাই ক্ষতি ডেকে এনেছে। বায়ুকে নির্মল করার ভার যে গাছের উপর , যার পত্র ঝরে গিয়ে ভূমিতে উর্বরতা দেয় , তাকেই সে নির্মূল করেছে। বিধাতার যা কিছু কল্যাণের দান , আপনার কল্যাণ বিস্মৃত হয়ে মানুষ তাকেই ধ্বংস করছে। '' তাঁর এই উক্তির মাধ্যমেই প্রকৃতির প্রতি তাঁর গভীর আকর্ষণ প্রমাণিত হয়। তিনি প্রকৃতিকেই মানব কল্যাণের সর্বোৎকৃষ্ট উপাদান ও ঈশ্বরের আশীর্বাদ বলে মনে করেন। সেই প্রকৃতির প্রধান উপাদান অরণ্যকে মানুষ যদি দিনের পর দিন ধ্বংস করতে থাকে ,তাহলে মানব সভ্যতারও পতন সুনিশ্চিত - বলে তিনি মনে করেন। 

প্রকৃতি ও শিক্ষার মেলবন্ধন :- 
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন , '' তথাপি খোলা আকাশ , খোলা বাতাস এবং গাছপালা মানব সন্তানের শরীর - মনের সুপরিণতর জন্য যে অত্যন্ত দরকার একথা বোধহয় কেজো লোকেরাও একেবারে উড়াইয়া দিতে পারিবেন না। বালকদের হৃদয় যখন নবীন আছে , কৌতূহল যখন সজীব এবং সমুদয় ইন্দ্রিয় শক্তি যখন সতেজ , তখনি তাহাদিগকে মেঘ ও রৌদ্রের লীলাভূমি অবারিত আকাশের তলে খেলা করিতে দাও - তাহাদিগকে এই ভূমার আলিঙ্গন হইতে বঞ্চিত রাখিয়ো না। সুতরাং তিনি চেয়েছিলেন প্রকৃতির মাঝেই প্রতিটি শিশুর শিক্ষা হোক। নবীন ও সজীব প্রকৃতি শিশুমনকে প্রকৃতির রহস্যগুলি জানতে ও সেগুলির উদঘাটন করতে কৌতূহলী করে তুলবে। এই শিক্ষা শিশুর জীবনকে সার্থক করে তুলবে বলে তিনি উপলব্ধি করেছিলেন। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

প্রকৃতির কোলে গ্রাম উন্নয়ন :- 
পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছ থেকে জমিদারির দায়িত্ব পেয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গ্রাম বাংলার অপরূপ নির্মল প্রকৃতির প্রকৃত স্বরূপ উপলব্ধি করেন। তিনি উপলব্ধি করেন ভারতের গ্রামগুলি যতটা প্রকৃতির কাছাকাছি আছে , শহরগুলি সেইরূপ নয়। আবার গ্রামের উন্নতি ছাড়া জাতির উন্নতি সম্ভব নয়। তাই তিনি গ্রামীণ উন্নয়নের ক্ষেত্রে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। যেমন - শিলাইদহে '' মহর্ষি দাতব্য চিকিৎসালয় '' স্থাপন করেন , পতিসরে হাসপাতাল স্থাপন করেন , বিভিন্ন কুটির শিল্পের উন্নতির জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। 

প্রকৃতি ও কৃষি :- 
কৃষি ও প্রকৃতি পরস্পর সমার্থক। আবার গ্রামীণ জীবন ও কৃষি পরস্পর সমার্থক। তাই গ্রামীণ এলাকায় কৃষির বিকাশের জন্য তিনি বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তিনি শিলাইদহে ৮০ বিঘা জমিতে আধুনিক কৃষি খামার গড়ে তোলেন। প্রাকৃতিকভাবে জৈব সার ব্যবহার করে তিনি সেই এলাকায় কৃষি বিপ্লব সংগঠিত করেন। তিনি মনে করতেন , কৃষি হল প্রকৃতির অপর এক আশীর্বাদ। তাই প্রতিটি শিশুর কৃষি সম্পর্কিত জ্ঞান থাকা আবশ্যিক বলে তিনি মনে করতেন। বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকার অর্থনৈতিক জীবনের মেরুদন্ড হল কৃষি। তাই কৃষিকে মানব কল্যাণের স্বার্থে ব্যবহার করতে কৃষির ক্ষেত্রে বিশেষ যত্নবান হওয়া উচিত বলে তিনি মনে করতেন। 

শান্তিনিকেতনে প্রকৃতিপাঠ :- 
শান্তিনিকেতন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। কিন্তু আক্ষরিক অর্থে শান্তিনিকেতনে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তপোবনকেন্দ্রিক শিক্ষাধারা প্রতিষ্ঠা , শিল্প শিক্ষার জন্য কলাভবন নির্মাণ , ব্যবহারিক শিক্ষার জন্য শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠা , বিনামূল্যে শিক্ষাপ্রদানের জন্য শিক্ষাসত্র প্রতিষ্ঠা - ইত্যাদির মাধ্যমে তিনি শান্তিনিকেতনে প্রকৃতির স্নেহছায়ায় এক অভিনব শিক্ষা ব্যবস্থার সূচনা করেন। তাঁর শান্তিনিকেতনের শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রকৃতির মাঝে শিশুদের শিক্ষার ব্যবস্থা করে শিশুদেরকে উন্মুক্ত পরিসরে জ্ঞান অর্জনে সহায়তা করা। 

শিক্ষার উদ্দেশ্য ও প্রকৃতি :- 
রবীন্দ্রনাথের মতে , শিক্ষার উদ্দেশ্য হল প্রকৃত মানুষ তৈরী করা। শিশুদের প্রকৃত মানুষ তৈরী করতে হলে শিক্ষাকে মুক্ত প্রকৃতির কোলে প্রদান করা প্রয়োজন। তাঁর মতে , মানুষের দুটি পরিবেশ - সমাজ ও প্রকৃতি। সমাজ থেকে মানুষ পায় তার ভাষা , ভাবসম্পদ , রীতিনীতি - ইত্যাদি। অন্যদিকে দেহ ও মনের উন্নতির জন্য মানুষ ঋণী প্রকৃতির কাছে। তিনি বিশ্বাস করতেন , তৃণ - গুল্ম - লতা , জলধারা , বায়ুপ্রবাহ , অনন্ত প্রাণী পর্যায় , জগতের সকল অণু - পরমাণু - সবকিছুর সঙ্গেই মানুষ সরাসরিভাবে সংযুক্ত। তিনি মনে করতেন শিক্ষার উদ্দেশ্য হবে প্রভাতের আলো , শ্যামল প্রান্তর , বৃক্ষরাজি - সবকিছুই হবে শিশুর শিক্ষক। 

মানব মনের মুক্তির পথ : প্রকৃতি :- 
প্রকৃতির আনন্দময় পরিবেশে , সহজ ও উদার প্রান্তরে শিশুমন মুক্তিলাভ করে। তাই শিশু ও প্রকৃতির মধ্যে থাকা সকল ব্যবধানকে দূর করে প্রকৃতিকে তাদের সামনে উন্মুক্ত করে দিতে হবে। শিশুদের সকল জড়তা , সকল অন্ধকার , সকল বাঁধা দূর করতে পারে একমাত্র প্রকৃতি। প্রকৃতির সরলতা শিশুমনকে সরল করে তুলবে। তাই মানব মনকে মুক্তির পথ দেখাতে প্রকৃতির সান্নিধ্য একান্ত আবশ্যিক। 

পরিশেষে বলা যায় যে , রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দার্শনিক উপলব্ধিগুলির মধ্যে বারবার প্রকৃতির সাথে তাঁর সহাবস্থানের প্রমাণ পাওয়া যায়। তাঁর দর্শনে প্রকৃতি ও মানব এক ও অভিন্ন। তাই মানুষের জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে , প্রতিটি কর্মকান্ডে প্রকৃতির সান্নিধ্য উপভোগ করা প্রয়োজন।   

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো 

Share
Tweet
Pin
Share
No comments

সমষ্টি উন্নয়ন বলতে কী বোঝ ? সমষ্টি উন্নয়নের মুখ্য উদ্দেশ্যগুলি আলোচনা কর। 

সমষ্টি উন্নয়নের ধারণা , সংজ্ঞা ও উদ্দেশ্য। 

Community Development : Definition and main objectives. ( In Bengali ) . 




সমষ্টি উন্নয়নের ধারণা :- 


ভারত মূলত গ্রামীণ এলাকাভুক্ত দেশ। এদেশের গ্রামীণ মানুষ দরিদ্র ও রক্ষণশীল। তারা বেকারত্ব এবং কর্মসংস্থান সংক্রান্ত সমস্যায় ভুক্তভোগী এবং জীবনযাত্রার স্বাভাবিক মান অর্জন করতে অক্ষম। 
সমষ্টি উন্নয়নের অর্থ হল গ্রামীণ জনগণকে শিক্ষিত করে তোলা , সমাজের উন্নয়ন সম্পর্কে সচেতন করে তোলা এবং গ্রামীণ পুনর্গঠন এবং গ্রামীণ জীবনের উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রকল্প ও কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। সমষ্টি উন্নয়নের প্রকল্পগুলো গ্রামীণ জীবন ও সমাজের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে পরিকল্পনা করা হয়। সমষ্টি উন্নয়নের সাধারণ অর্থ হল অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক - সকল ক্ষেত্রে জন -  সম্প্রদায়ের উন্নয়নের জন্য প্রচেষ্টা করা।

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

UNO সমষ্টি উন্নয়ন সম্পর্কে ধারণা প্রদান করেছেন যে , সমষ্টি উন্নয়ন বলতে সেই প্রক্রিয়াকে বোঝায় যার মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক , সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থার উন্নতির জন্য এবং জাতীয় অগ্রগতিতে তাদের সম্পূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম করার জন্য জনগণের প্রচেষ্টা সরকারি কর্তৃপক্ষের সাথে সমন্বিত করা হয়।

ভারতের পরিকল্পনা কমিশন সমষ্টি উন্নয়ন সম্পর্কে বলেছেন - সমষ্টি উন্নয়ন হল গ্রামীণ উন্নয়ন সম্প্রসারণের পদ্ধতি যার মাধ্যমে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গ্রামের সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবন পরিবর্তনের প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে।  

ভারত সরকার সমষ্টি উন্নয়ন সম্পর্কে ব্যাখ্যা করেছেন - সমষ্টি উন্নয়ন রাষ্ট্রীয় সাহায্যপ্রাপ্ত স্ব-সহায়তার কর্মসূচি, সরকার শুধুমাত্র প্রযুক্তিগত দিকনির্দেশনা এবং আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। এর উদ্দেশ্য হল ব্যক্তি বা সমষ্টির আত্মনির্ভরশীলতা এবং গ্রাম সম্প্রদায়ের উদ্যোগ। পঞ্চায়েতের মতো জনগণের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সম্প্রদায়ের চিন্তাভাবনা এবং সম্মিলিত পদক্ষেপকে উৎসাহিত করা হয়। 
সমষ্টি উন্নয়নের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হল গ্রামীণ সমাজে পরিবর্তন আনা ; বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকার উন্নয়ন কর্মকান্ডে জনসমষ্টিকে সম্পৃক্ত করা।

এস.কে. দে বলেছেন -  সত্যিকার অর্থে সমষ্টি উন্নয়ন হল গ্রামীণ জীবনের উন্নতির জন্য একটি প্রক্রিয়া এবং একটি কর্মসূচী। এটি মানুষের নিজের প্রচেষ্টার মাধ্যমে গ্রামের জীবনের একটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তন আনার একটি প্রয়াস।

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

সমষ্টি উন্নয়নের উদ্দেশ্য :- 


১. পরিকল্পনা রূপায়ণে সহায়তা :-
সমষ্টি উন্নয়নের প্রকল্পগুলি রচিত হয় গ্রামগুলিকে পরিকল্পনা ও উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে সাহায্য করার লক্ষ্যে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।

২. গ্রামসমাজকে শিল্পে সহায়তা করা এবং তাদের নির্ভরশীল করে তোলা :- 
সমষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হল গ্রামের মানুষকে স্বাবলম্বী করে তোলা এবং জাতীয় পুনর্গঠনের কার্যক্রমে অংশগ্রহণে উৎসাহিত করা। এটি নিম্নলিখিত পদ্ধতির মাধ্যমে করা হয় :-
(ক) গ্রামের মানুষের ঐতিহ্যগত ও রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। 
(খ) উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করা এবং তাদের কল্যাণের ব্যবস্থা করার জন্য যুব ও মহিলাদের সংস্থাগুলিকে সংগঠিত করা। 
(গ) গ্রামের যুবক ও মহিলাদের সমষ্টি উন্নয়নের কর্মকান্ডে অংশগ্রহণের জন্য উৎসাহিত করা। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৩. গ্রামীণ অঞ্চলে শিক্ষার বিস্তার :- 
সমষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পগুলির মাধ্যমে গ্রামীণ এলাকার মানুষের জন্য শিক্ষা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রদানের চেষ্টা করা হয়। এক্ষেত্রে নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলি অবলম্বন করা যেতে পারে। 
(ক) শিক্ষা প্রদানের জন্য সামাজিক শিক্ষা কেন্দ্র এবং স্কুল এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থা করা। 
(খ) বিভিন্ন ধরনের শিক্ষামূলক ও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা। 
(গ) পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কর্মকান্ডে গ্রামের মানুষদের প্রশিক্ষণ দেওয়া।
(ঘ ) পর্যাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা। 

৪. গ্রামীণ জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন :-
সমষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পগুলির মাধ্যমে গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নসহ বিভিন্ন কর্মসংস্থানের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের পাশাপাশি তাদের শিল্প-কারখানা স্থাপন ও কৃষি উৎপাদনের উন্নয়নের সুযোগ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। গ্রামীণ মানুষদের সমবায় সমিতি এবং অন্যান্য সংস্থা স্থাপন করতেও উৎসাহিত করা হয় যার মাধ্যমে তারা উন্নয়ন ও পরিকল্পনার বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারে।

৫. রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রশিক্ষণ প্রদান :- 
সমষ্টি উন্নয়নের মাধ্যমে বিভিন্ন পরিকল্পনার প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামের মানুষকে গণতন্ত্রের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয় এবং অন্যান্য প্রশাসনিক কর্মকাকান্ডের প্রশিক্ষণ দেওয়া যায়। গ্রামীণ নাগরিকদের শহরে পরিযান বন্ধ করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়। যেমন -
(ক) জনগণের প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে স্থানীয় প্রশাসন গড়ে তোলা। 
(খ ) জনগণের মধ্যে বিশেষ করে উন্নয়নমূলক ও পরিকল্পনামূলক কর্মকান্ডের ক্ষেত্রে সমন্বয় ও সহযোগিতা প্রতিষ্ঠিত করা হয়।
(গ) ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প স্থাপন এবং কৃষির উন্নত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গ্রামের লোকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গ্রামে বেকারত্ব ও নিম্ন-কর্মসংস্থান অনেকাংশে প্রশমিত করা যেতে পারে। 
(ঘ) সম্প্রদায়ের উন্নয়ন প্রকল্পগুলির কাজের মাধ্যমে, গণতন্ত্রের ব্যবহারিক কাজে জনগণকে প্রশিক্ষিত করা হয়। এই প্রকল্পগুলির মাধ্যমে, গ্রামের মানুষদের নাগরিক বিষয়ক শিল্পে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। 

৬. জনগণকে সামাজিক ক্ষেত্রে সচেতন করে তোলা :- 
সমষ্টি উন্নয়নের একটি মূল লক্ষ্য হল একটি সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সমস্যা থেকে জনগণকে সচেতন করা। এটি তাদের জ্ঞান প্রদান করতে এবং তাদের সামাজিক জীবনকে প্রভাবিত করে এমন প্রধান কারণগুলি সম্পর্কে জানতে সহায়তা করে এবং সেগুলির সমাধান সম্পর্কে সচেতন করা। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৭. সর্বাঙ্গীন উন্নয়ন :- 
সমষ্টি উন্নয়ন একটি সম্প্রদায়ের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিনোদন ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে সামগ্রিকভাবে যেসব জায়গায় উন্নয়ন প্রয়োজন - সেই সকল ক্ষেত্রে উন্নয়নের পরিকল্পনা করে । এর ফলে জনসমাজের সকল মানুষের উন্নত জীবনযাত্রার জন্য নীতি ও পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। সমাজের সকল ক্ষেত্রে উন্নয়নের উদ্দেশ্যে পরিকল্পনাগুলো গৃহীত হয়। 

৭. মানুষকে অনুপ্রাণিত করা :- 
সমষ্টি উন্নয়ন কর্মসূচীগুলি জন সম্প্রদায়ের মানুষের অনুপ্রেরণার জন্য কাজ করে। সামাজিক , রাজনৈতিক , বৃত্তিগত , অর্থনৈতিক - সর্বক্ষেত্রে গ্রাম সমাজের মানুষদের মধ্যে অনুপ্রেরণার সঞ্চার ঘটানো হল সমষ্টি উন্নয়নের একটি অন্যতম উদ্দেশ্য।  

৮. স্বাবলম্বন অর্জনে সহায়তা :- 
সমষ্টি উন্নয়ন কর্মসূচীগুলি মানুষকে আগ্রহী করে যাতে তারা একে অপরকে এবং তাদের নিজেদের সাহায্য করতে সক্ষম হয় এবং তারা নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে পারে। সম্পদের যথাযোগ্য ব্যবহার করতে পারা , জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করা - ইত্যাদি হল সমষ্টি উন্নয়ন কর্মসূচির প্রধান লক্ষ্য। 

৯. সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা :- 
সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সমষ্টি উন্নয়নের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য। এটি সমাজের সব ধরনের মানুষের ন্যায়বিচার প্রদান করে। শিক্ষা , কর্মসংস্থান , সামাজিক মর্যাদা - ইত্যাদি সর্বক্ষেত্রে সাম্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। 

পরিশেষে বলা যায় , সমষ্টি উন্নয়ন হল একটি সমষ্টিগত ধারণা। এর মাধ্যমে উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলির মাধ্যমে গ্রামীণ মানুষদের উন্নয়ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করিয়ে তাদের জীবনযাত্রার মান ও সর্বাঙ্গীন উন্নতিতে সহায়তা করা হয়। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো
Share
Tweet
Pin
Share
No comments

আদর্শায়িত অভীক্ষা বা সু - অভীক্ষার গুরুত্ব আলোচনা কর। 

আদর্শায়িত অভীক্ষা বা সু - অভীক্ষার শিক্ষামূলক তাৎপর্য আলোচনা কর। 

Importance of Standardised Test . ( In Bengali ) . 



আদর্শায়িত অভীক্ষা বা সু - অভীক্ষার গুরুত্ব আলোচনা কর। 

শিখন - শিক্ষন প্রক্রিয়ায় আদর্শায়িত অভীক্ষা বা সু - অভীক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিমাপক কৌশল। মনোবৈজ্ঞানিক ও শিক্ষামূলক অভীক্ষাগুলি হল এমন এক ধরণের পরিমাপক কৌশল , যার সাহায্যে ব্যক্তির আচরণগত বৈশিষ্টের পরিমাপ করা যায়। সাধারণতঃ যেসকল শিক্ষামূলক ও মনোবৈজ্ঞানিক অভীক্ষায় মনোবিজ্ঞান সম্মত গুন ও বৈশিষ্টের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় - তাকেই আদর্শায়িত অভীক্ষা বা সু - অভীক্ষা বলে। নীচে আদর্শায়িত অভীক্ষা বা সু - অভীক্ষার গুরুত্ব আলোচনা করা হল। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

১. শিক্ষা পরিকল্পনা :- 
আদর্শায়িত অভীক্ষা বা সু - অভীক্ষার দ্বারা শিক্ষার্থীদের ন্যূনতম যোগ্যতা সম্পর্কে ধারণা অর্জন করা সম্ভব। এই ধারণার মধ্যে দিয়ে পরবর্তী পর্যায়ের শিক্ষা পরিকল্পনা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায়। এই শিক্ষা পরিকল্পনা চলাকালীন আদর্শায়িত অভীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানা যায়। 

২. শিক্ষার্থী নির্বাচন :- 
বিভিন্ন বিদ্যালয়ে বিভিন্ন ধরণের পাঠক্রমের জন্য কোন ধরণের শিক্ষার্থীরা উপযুক্ত তা জানতে আদর্শায়িত অভীক্ষা বা সু - অভীক্ষা বিশেষভাবে কার্যকরী। একটি আদর্শায়িত অভীক্ষার মাধ্যমে পাঠক্রমের জন্য উপযুক্ত শিক্ষার্থীকে সহজেই বেছে নেওয়া যায়। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৩. শ্রেণিবিভাজন :- 
কোনো বিদ্যালয়ের কোনো শ্রেণিতে প্রয়োজনের তুলনায় অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি হয়ে গেলে পঠন - পাঠন ও শিক্ষা পরিচালনায় বিশেষ অসুবিধে তৈরী হয়। এই অবস্থায় ঐ শ্রেণির মধ্যে বিভাজন করা আবশ্যক হয়ে পড়ে। এই বিভাজনের সময় আদর্শায়িত অভীক্ষা বিশেষভাবে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। 

৪. শিক্ষা - নির্দেশনা :- 
শিক্ষা নির্দেশনাকে যথার্থভাবে পরিচালনা করতে শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে বিবিধ তথ্যের প্রয়োজন। শিক্ষার্থী সম্পর্কিত এই বিভিন্ন তথ্যগুলি আসলে আদর্শায়িত অভীক্ষার মাধ্যমেই সংগ্রহ করা যায়। তাই আদর্শায়িত অভীক্ষা যথার্থ শিক্ষা নির্দেশনায় সাহায্য করে। 

৫. শিক্ষার্থীর দুর্বলতা চিহ্নিতকরণ :- 
আদর্শায়িত অভীক্ষা বা সু - অভীক্ষার দ্বারা শিক্ষার্থীদের দুর্বলতাগুলিকে সহজেই চিহ্নিত করা যায়। শিক্ষার্থীর দুর্বলতাগুলিকে চিহ্নিত করে সেগুলির সমাধানকল্পে কার্যকরী শিক্ষা পরিকল্পনা গ্রহণ করা সম্ভব হয়। 

৬. যথার্থতা :- 
আদর্শায়িত অভীক্ষা অন্যান্য শিক্ষামূলক অভীক্ষাগুলির তুলনায় অনেক বেশি যথার্থ। আদর্শায়িত অভীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর সামগ্রিক মূল্যায়ণ সম্ভব হয়। যেমন - একজন শিক্ষার্থীর ভূগোল পরীক্ষার মাধ্যমে তার বিষয়জ্ঞানের সঙ্গে সঙ্গে হাতের লেখা , ভাষার ক্ষমতা , শব্দ চয়নের ক্ষমতা , বানান - ইত্যাদি সকল বিষয়গুলি পরিমাপ করা সম্ভব হয়। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৭. নির্ভরযোগ্যতা :- 
আদর্শায়িত অভীক্ষা বা সু - অভীক্ষা আধুনিক বিজ্ঞান সম্মত কৌশলগুলি প্রয়োগ করে। ফলে অভীক্ষার ফলাফল অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য হয়ে ওঠে। এই ধরণের অভীক্ষায় অভিজ্ঞতার পরিবর্তে মনোবৈজ্ঞানিক সূত্র , রাশিবিজ্ঞান - ইত্যাদির ব্যবহারের মাধ্যমে অভীক্ষাকে অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য করে তোলে। 

৮. ব্যক্তি প্রভাব মুক্ত :- 
আদর্শায়িত অভীক্ষায় অভীক্ষা পদ ও মূল্যায়নকে ব্যক্তি প্রভাব মুক্ত করতে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব। অভীক্ষা পদ তৈরী , নম্বর প্রদান - ইত্যাদি বিষয়ে আদর্শমান ধরে রাখার চেষ্টা করা হয়। আদর্শায়িত অভীক্ষায় বার বার অভীক্ষা পরিচালনা করলেও ফলাফল মোটামুটি একই ধরণের থাকে। 

৯. শ্রম , সময় ও অর্থের সাশ্রয় :- 
আদর্শায়িত অভীক্ষার মাধ্যমে খুব অল্প সময়ে , অল্প অর্থের বিনিময়ে প্রচুর সংখ্যক শিক্ষার্থীর মূল্যায়ন সম্ভব হয়।  ফলে দরিদ্র ও উন্নয়নশীল সমাজে আদর্শায়িত অভীক্ষা বা সু - অভীক্ষা বিষেশভাবে গ্রহণযোগ্য। 

১০.  তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে নির্ভুলতা :- 
আদর্শায়িত অভীক্ষা বা সু - অভীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে যেসকল তথ্য সংগ্রহ করা হয় - তা অনেক বেশি নির্ভুল হয়ে থাকে। শিক্ষার্থী সংক্রান্ত এই নির্ভুল তথ্য শিক্ষা পরিকল্পনা গ্রহণে সহায়তা করে। 

পরিশেষে বলা যায় , অন্যান্য শিক্ষামূলক ও মনোবৈজ্ঞানিক অভীক্ষাগুলির মধ্যে আদর্শায়িত অভীক্ষা বা সু - অভীক্ষা অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য। অভীক্ষা পদ গঠন , নম্বর প্রদান , মূল্যায়ন ইত্যাদি সর্বক্ষেত্রে আদর্শায়িত অভীক্ষা বিশেষভাবে উপযোগী। তাই আধুনিক সময়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আদর্শায়িত অভীক্ষা পরিচালনা করা হয়।  

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো             

Share
Tweet
Pin
Share
No comments

আদর্শায়িত ও অ-আদর্শায়িত অভীক্ষার পার্থক্য।

আদর্শায়িত ও অ - আদর্শায়িত অভীক্ষার পার্থক্যগুলো আলোচনা কর। 

আদর্শায়িত ও অ - আদর্শায়িত অভীক্ষার তুলনামূলক আলোচনা কর।  

Difference between Standardised test and Non - Standardised test . ( In Bengali ) .  



আদর্শায়িত ও অ-আদর্শায়িত অভীক্ষার পার্থক্য।

১. নৈর্ব্যক্তিকতার ক্ষেত্রে পার্থক্য :- 
আদর্শায়িত অভীক্ষাকে সম্পূর্ণরূপে নৈর্ব্যক্তিক করে গড়ে তোলা যায়। এই ধরণের অভীক্ষায় বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে অভীক্ষাকে প্রায় বা সম্পূর্ণরূপে ব্যক্তি - প্রভাব মুক্ত করা যায়। 
অন্যদিকে , অ - আদর্শায়িত অভীক্ষায় কোনো অবস্থাতেই সম্পূর্ণরূপে ব্যক্তি - প্রভাব মুক্ত করা সম্ভব নয়। তাই এই ধরণের অভীক্ষায় নৈর্ব্যক্তিকতা তুলনামূলকভাবে কম থাকে। 

২. নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে পার্থক্য :- 
আদর্শায়িত অভীক্ষাকে এবং অভীক্ষার পদগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। অভীক্ষাপদ চয়নের সময় পদ বিশ্লেষণ পদ্ধতি প্রয়োগ করে সুনিয়ন্ত্রিতভাবে অভীক্ষাপদ প্রস্তুত করা হয়। 
কিন্তু , অ - আদর্শায়িত অভীক্ষাকে সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণ করা যায়না ; কেননা এই ধরণের অভীক্ষায় পদ - বিশ্লেষণ পদ্ধতি প্রয়োগ করা সম্ভব নয়। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৩. নির্ভরযোগ্যতার ক্ষেত্রে পার্থক্য :- 
আদর্শায়িত অভীক্ষার নির্ভরযোগ্যতা অনেক বেশি। বিভিন্ন আধুনিক কৌশল প্রয়োগ করে আদর্শায়িত অভীক্ষাকে নির্ভরযোগ্য করে তোলা হয়। 
পক্ষান্তরে , অ - আদর্শায়িত অভীক্ষার নির্ভরযোগ্যতা তুলনামূলকভাবে কম। এই ধরণের অভীক্ষায় আধুনিক কৌশলের পরিবর্তে অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। 

৪. যথার্থতার ক্ষেত্রে পার্থক্য :- 
আদর্শায়িত অভীক্ষার ক্ষেত্রে উপযুক্ত যথার্থতা হল একটি অপরিহার্য বৈশিষ্ট। উপযুক্ত যথার্থতার জন্যই আদর্শায়িত অভীক্ষার গ্রহণযোগ্যতা বেশি। 
অন্যদিকে , অ - আদর্শায়িত অভীক্ষায় যথার্থতা তুলনামূলকভাবে কম থাকে। কেননা এই ধরণের অভীক্ষায় শিখন - শিক্ষনের আধুনিক গবেষণালব্ধ সূত্রগুলি প্রয়োগ করা হয়না। 

৫. পরিসংখ্যান প্রয়োগের ক্ষেত্রে পার্থক্য :- 
আদর্শায়িত অভীক্ষায় পরিসংখ্যান প্রয়োগ করা সম্ভব। পরিসংখ্যান প্রয়োগ করে শিক্ষা প্রক্রিয়াকে সূক্ষ্মভাবে বিশ্লেষণ করা সম্ভব হয়। 
কিন্তু , অ - আদর্শায়িত অভীক্ষায় পরিসংখ্যান প্রয়োগের ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরী হয় এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পরিসংখ্যান প্রয়োগ করা যায়না। 

৬. নর্ম - গত পার্থক্য : - 
আদর্শায়িত অভীক্ষায় নির্দিষ্ট নর্ম থাকে। নির্দিষ্ট নর্মের ভিত্তিতে আদর্শায়িত অভীক্ষা পরিচালনা করা হয় এবং নর্ম - এর উপস্থিতি আদর্শায়িত অভীক্ষার একটি অন্যতম বৈশিষ্টরূপে বিবেচিত হয়। 
অপরদিকে , অ - আদর্শায়িত অভীক্ষায় নির্দিষ্ট নর্মের উপস্থিতি আশা করা যায়না। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৭. প্রয়োগের ক্ষেত্রে পার্থক্য :- 
যেহেতু আদর্শায়িত অভীক্ষা তুলনামূলকভাবে গ্রহণযোগ্য , নির্ভরযোগ্য ও যথার্থ - তাই আদর্শায়িত অভীক্ষার প্রয়োগ ব্যাপকভাবে হয়ে থাকে। 
কিন্তু , অ - আদর্শায়িত অভীক্ষার প্রয়োগ তুলনামূলকভাবে কম। 

৮. নমনীয়তার ক্ষেত্রে পার্থক্য :- 
আদর্শায়িত অভীক্ষার ক্ষেত্রে অভীক্ষাপদ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় এবং প্রয়োগের ক্ষেত্রেও কঠোরতা অবলম্বন করা হয়। 
অন্যদিকে , অ - আদর্শায়িত অভীক্ষায় অভীক্ষাপদ গঠন ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে নমনীয়তা অবলম্বন করা হয়। 

৯. পুনঃপ্রয়োগের ক্ষেত্রে পার্থক্য :- 
আদর্শায়িত অভীক্ষায় অভীক্ষাপদ পুনঃপ্রয়োগ করা যেতে পারে। 
কিন্তু , অ - আদর্শায়িত অভীক্ষায় অভীক্ষাপদ সাধারণতঃ পুনঃপ্রয়োগ করা সম্ভব হয়না। 

১০. প্রকৃতিগত ক্ষেত্রে পার্থক্য :- 
আদর্শায়িত অভীক্ষা হল সাধারণধর্মী। 
অপরদিকে , অ - আদর্শায়িত অভীক্ষা হল বিশেষধর্মী। বিশেষ বিশেষ পরিস্থিতিতে এই ধরণের অভীক্ষা গঠিত হয় ও প্রয়োগ করা হয়। 

পরিশেষে বলা যায় , আদর্শায়িত অভীক্ষা হল এমন এক ধরণের পরিমাপক পদ্ধতি যার প্রয়োগবিধি পূর্বনির্দিষ্ট। এই ধরণের অভীক্ষার মধ্যে দিয়ে একই পরিস্থিতিতে সকল শিক্ষার্থীর পারদর্শিতার তুলনামূলক বিচার করা যায় ; কিন্তু অ - আদর্শায়িত অভীক্ষার ক্ষেত্রে তা সম্ভব নয়।   

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো          

Share
Tweet
Pin
Share
No comments

নির্দেশনার সংজ্ঞা ও পরিধি। 

নির্দেশনা কী ? নির্দেশনার পরিধি আলোচনা কর। 

নির্দেশনার সংজ্ঞা দাও। নির্দেশনার পরিধি আলোচনা কর। 

Definition and Scope of Guidance . ( In Bengali ) .




নির্দেশনার সংজ্ঞা :- 

নির্দেশনা শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ Guidance কথাটির উৎপত্তি ইংরেজি Guide শব্দ থেকে ; যার অর্থ পথপ্রদর্শন করা। পথপ্রদর্শন কথাটি দুইভাবে প্রযুক্ত হতে পারে - নির্দেশ দান করা ও পরিচালনা করা। তবে বিভিন্ন শিক্ষাবিদরা নির্দেশনা শব্দটিকে ভিন্ন ভিন্ন অর্থে প্রয়োগ করেছেন ; যেমন - নির্বাচন করা , সাহায্য করা , পরিচালনা করা , এগিয়ে নিয়ে যাওয়া , নির্দেশ দান , লক্ষ্য স্থির করা - ইত্যাদি। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

মনোবিদ জোনস বলেছেন - কোনো ব্যক্তির জীবনে এগিয়ে যাওয়ার পথে , লক্ষ্য নির্ধারণে , অভিযোজন ও সমস্যা সমাধানে যখন তিনি অপর কোনো ব্যক্তি দ্বারা সাহায্যপ্রাপ্ত হন - তখন তাকে নির্দেশনা বলা যায়। 

এরিকসন নির্দেশনা বলতে বুঝিয়েছেন - নির্দেশনা এমন এক ধরণের প্রক্রিয়া যার সাহায্যে ব্যক্তি ভবিষ্যতের পথ নির্দেশ প্রাপ্ত হন , লক্ষ্য নির্ধারণ করেন , সামাজিক চাহিদা - আগ্রহ - প্রবণতা - ইত্যাদির মাধ্যমে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। 

মনোবিদ ক্রো ( Crow ) বলেছেন - একজন ব্যক্তি নিজের জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করতে , নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি গঠন করতে , সমস্যামূলক পরিস্থিতিকে উপলব্ধি করতে এবং তার সমাধান করতে , বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে যখন কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পরামর্শ ও সাহায্য প্রাপ্ত হন - তখন তাকে বলে নির্দেশনা। 

রুথক্লোন বলেছেন - নির্দেশনা একটি প্রক্রিয়া যার সাহায্যে একজন ব্যক্তি নিজের ভেতর লুকিয়ে থাকা প্রতিভা , সম্ভাবনা - ইত্যাদি বিষয়গুলিকে খুঁজে বের করে নিজের এবং অপরের সমস্যা সমাধানের জন্য প্রচেষ্টা করে। 

সুতরাং নির্দেশনা হল - নির্দেশনা হল এমন এক প্রক্রিয়া যার সাহায্যে ব্যক্তি নিজের জীবন পরিচালনা করতে , লক্ষ্য নির্ধারণ করতে , নিজ সম্ভাবনা খুঁজে বের করতে এবং উপযোগিতা বৃদ্বি করতে পারে এবং নিজ আগ্রহ , কৌতূহল , সামর্থ্য - ইত্যাদির ভিত্তিতে নিজের জীবনকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারে। নির্দেশনা ব্যক্তিকে প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশের সাথে অভিযোজন ঘটিয়ে সার্থক জীবন যাপনের উপযোগী করে তোলে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

নির্দেশনার পরিধি :- 


নির্দেশনা ব্যক্তি জীবনের কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত নয় ; জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রের সঙ্গে নির্দেশনা সম্পর্কযুক্ত। বর্তমানে নির্দেশনা কেবলমাত্র শিক্ষা ও বৃত্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে জীবনের সর্বক্ষেত্রে - শিল্প , বাণিজ্য , রাজনীতি , আন্তর্জাতিক সম্পর্ক , সামাজিক সমস্যার সমাধান - ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে নির্দেশনার প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। তাই বলা যেতে পারে নির্দেশনা হল বহুমুখী। আধুনিক জীবনযাপনে সমস্যা যত বৃদ্ধি পাচ্ছে , নির্দেশনার পরিধিও সেই অনুপাতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। নির্দেশনার পরিধির বিভিন্ন দিক নীচে আলোচনা করা হল। 

১. শিক্ষাক্ষেত্রে নির্দেশনা :- 
বর্তমান যুগে শিক্ষাক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকতার নীতি গৃহীত হয়েছে। পাঠক্রম , শিক্ষক শিক্ষন , শিক্ষন প্রক্রিয়া - ইত্যাদি বিষয়গুলির পরিধি বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে বিভিন্ন জটিল ও আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি ও সূত্র প্রয়োগ করা হচ্ছে। ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে নির্দেশনার পরিধি বর্তমানে বহুগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। আধুনিক শিক্ষাচিন্তাকে সাফল্যের সঙ্গে কার্যকর করতে নির্দেশনা উক্ত বিষয়গুলির সঙ্গে শিক্ষার্থীর পরিচয় ঘটায় ও বিষয়ের সঙ্গে সার্থকভাবে তাদের অভিযোজন ঘটায়। 

২. বৃত্তিগত ক্ষেত্রে নির্দেশনা :- 
বর্তমানে বৃত্তিগত ক্ষেত্রে বৈচিত্রময় সম্ভাবনা ও প্রতিযোগিতা তৈরী হয়েছে। পেশাগত ক্ষেত্রে দ্রুত পরিবর্তনশীলতা , নতুন ধরণের পেশার উৎপত্তি ও পুরোনো বহু ধরণের পেশার অবলুপ্তি - ইত্যাদি বিষয়গুলি বৃত্তিগত ক্ষেত্রে লক্ষণীয়। বৃত্তিগত ক্ষেত্রে যথার্থ নির্দেশনা একজন শিক্ষার্থীকে পরিবর্তনশীল বৃত্তিজগতের সাথে পরিচয় ঘটাতে সাহায্য করে এবং বৃত্তির সাথে তার সার্থক অভিযোজন ঘটায়। 

৩. অবসরযাপন কালীন নির্দেশনা :- 
অবসরযাপন ব্যক্তিজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। ব্যক্তির অবসরযাপন যদি গঠনমূলক , ইতিবাচক ও শিক্ষামূলক হয় - তাহলে তা ব্যক্তিজীবনে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। নির্দেশনা ব্যক্তিকে অবসরযাপন সংক্রান্ত নির্দেশনা প্রদান করে তার জীবন গঠনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। তাই অবসরযাপনকালীন নির্দেশনা - নির্দেশনার পরিধিভুক্ত। 

৪. ব্যক্তিত্বের বিকাশসাধনে নির্দেশনা :- 
প্রতিটি ব্যক্তির মধ্যে লুকিয়ে থাকে কিছু অন্তর্নিহিত সম্ভাবনা। নির্দেশনা ব্যক্তির মধ্যে লুকিয়ে থাকা সম্ভাবনাগুলির সঙ্গে ব্যক্তির পরিচয় ঘটায় এবং সেইমত তাকে অভিযোজনে সাহায্য করে। তাই ব্যক্তিত্বের বিকাশ সাধন নির্দেশনার পরিধির অন্তর্ভুক্ত। 

৫. স্বাস্থ্যক্ষেত্রে নির্দেশনা :- 
দৈহিক ও মানসিক স্বাস্থ্য প্রতিটি ব্যক্তির সার্থক অভিযোজনের ক্ষেত্রে অপরিহার্য। তাই ব্যক্তির দৈহিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি বর্তমানে নির্দেশনার পরিধির অন্তর্ভুক্ত। নির্দেশনার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি সফল স্বাস্থ্যের অধিকারী হয়ে সমাজ জীবনে সার্থকভাবে অভিযোজন ঘটাতে পারে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৬. সমস্যা সমাধান সংক্রান্ত নির্দেশনা :- 
ব্যক্তিজীবন সমস্যাবহুল। ব্যক্তির কর্তব্য হল সমস্যাগুলিকে যথাযথভাবে উপলব্ধি করে তার সমাধানে সহায়ক আচরণে প্রবৃত্ত হওয়া। এইজন্য সমস্যা সমাধানের বিভিন্ন কৌশলগুলি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা আবশ্যক। নির্দেশনার মাধ্যমে ব্যক্তি সমস্যাগুলিকে উপলব্ধি করে তার সমাধানের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে পারে। তাই সমস্যা সমাধান সংক্রান্ত বিষয় নির্দেশনার পরিধির অন্তর্ভুক্ত। 

৭. সামাজিক ক্ষেত্রে নির্দেশনা :- 
পারস্পরিক সামাজিক মেলামেশা , সামাজিক আদান - প্রদান , সামাজিক সম্পর্কের বিন্যাস , আত্মীয়তার বন্ধন ও বন্ধুত্ব , সামাজিক পরিষেবামূলক কর্মসূচিগুলিতে অংশগ্রহণ , উৎপাদনশীলতার সঙ্গে যুক্ত হওয়া - ইত্যাদি বিভিন্ন সামাজিক বিষয়গুলি নির্দেশনার পরিধির অন্তর্ভুক্ত। 

৮. বার্ধক্য নির্দেশনা :- 
জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ব্যক্তির নির্দেশনা প্রয়োজন। বার্ধক্যে উপনীত হওয়া ব্যক্তিদের কর্মক্ষমতা ও উৎপাদনশীলতা হ্রাস পায় ; কিন্তু তার সঙ্গে বহুবিধ সমস্যা বার্ধক্য জীবনের অঙ্গীভূত হয়। এই পরিস্থিতিতে বার্ধক্য নির্দেশনা ব্যক্তিকে বার্ধক্যের সমস্যাগুলি কাটিয়ে উঠে তুলনামূলক স্বাচ্ছন্দময় জীবন যাপনের উপযুক্ত করে তোলে। তাই বার্ধক্য সংক্রান্ত বিষয়গুলি নির্দেশনার পরিধির অন্তর্ভুক্ত। 

পরিশেষে বলা যায় , নির্দেশনার পরিধি বর্তমানে জীবনের সর্বক্ষেত্রে বৃদ্ধি পেয়েছে। গতিশীল সময়ের বিবর্তনের সাথে সাথে অভিযোজন ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়তার পরিবর্তন ঘটে। ফলে নির্দেশনার পরিধিও পরিবর্তনশীল। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো    

Share
Tweet
Pin
Share
No comments

ব্যক্তিগত ও দলগত পরামর্শদানের মধ্যে পার্থক্য আলোচনা কর।  

ব্যক্তিগত ও দলগত পরামর্শদানের তুলনামূলক আলোচনা। 

Difference between Individual Counselling and Group Counselling. ( In Bengali ) . 




ব্যক্তিগত ও দলগত পরামর্শদানের পার্থক্য :- 


১. সংখ্যাগত পার্থক্য :- 
ব্যক্তিগত পরামর্শদানের ক্ষেত্রে ব্যক্তিকে এককভাবে পরামর্শ প্রদান করা হয়। 
কিন্তু দলগত পরামর্শদানের ক্ষেত্রে একসঙ্গে একাধিক ব্যক্তিকে পরামর্শ প্রদান করা হয়।  

২. পরিধিগত ক্ষেত্রে পার্থক্য :- 
ব্যক্তিগত পরামর্শদানের পরিধি অনেক ব্যাপক। যেকোনো বিষয়ে ব্যক্তিগত পরামর্শ প্রদান করা যেতে পারে। 
কিন্তু দলগত পরামর্শদানের পরিধি ততটা ব্যাপক নয় ; যেকোনো বিষয়ে দলগত পরামর্শ প্রদান করা যায়না। কেবলমাত্র যেসকল সমস্যা সকলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য - কেবলমাত্র সেই সকল বিষয়ে দলগত পরামর্শ প্রদান করা যেতে পারে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৩. প্রকৃতিগত ক্ষেত্রে পার্থক্য :- 
ব্যক্তিগত পরামর্শ প্রদান সাধারণতঃ প্রতিকারমূলক। নির্দিষ্ট ব্যক্তির নির্দিষ্ট সমস্যার সমাধানে ব্যক্তিগত পরামর্শ প্রদান করা হয়। 
অন্যদিকে , দলগত পরামর্শ প্রদান সাধারণতঃ প্রতিরোধমূলক। একাধিক ব্যক্তির ভবিষ্যৎ সমস্যার প্রতিরোধে দলগত পরামর্শ প্রদান করা হয়। 

৪. পদ্ধতিগত ক্ষেত্রে পার্থক্য :- 
ব্যক্তিগত পরামর্শদানের ক্ষেত্রে সাধারণতঃ প্রত্যক্ষ , পরোক্ষ ও ঐচ্ছিক পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। 
অন্যদিকে , দলগত পরামর্শদানের ক্ষেত্রে সাধারণতঃ কর্ম সম্মেলন , বক্তৃতা , নাটক , প্রশ্নোত্তর , সেমিনার - ইত্যাদি পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। 

৫. নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে পার্থক্য  :- 
ব্যক্তিগত পরামর্শদানের ক্ষেত্রে পরামর্শ গ্রহীতা থাকেন মাত্র একজন। ফলে তার ইচ্ছা ও মতামত , চিন্তাভাবনা - ইত্যাদি স্বাধীনভাবে প্রকাশের সুযোগ থাকে। যিনি পরামর্শ প্রদান করেন - তাঁর নিয়ন্ত্রণ এক্ষেত্রে কম থাকে। 
পক্ষান্তরে , দলগত পরামর্শপ্রদানের ক্ষেত্রে পরামর্শ গ্রহীতা থাকেন সংখ্যায় একাধিক। ফলে ব্যক্তিগত সমস্যাগুলির উপস্থাপনের ক্ষেত্রে সকলকে সমান সুযোগ দেওয়া সম্ভব হয়না। পরামর্শপ্রদানকারী সাধারণ সমস্যাগুলির পরামর্শ প্রদান করেন প্রধান নিয়ন্ত্রক হিসাবে। 

৬. তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে পার্থক্য :- 
ব্যক্তিগত পরামর্শ প্রদান প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থী বা পরামর্শগ্রহকারীর সম্পর্কে পরামর্শদাতা খুব সহজেই তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন। ফলে তার পক্ষে যথাযথ ও উপযুক্ত পরামর্শ প্রদান করা সম্ভব হয়। 
অন্যদিকে , দলগত পরামর্শদান প্রক্রিয়ায় যেহেতু একাধিক পরামর্শ গ্রহীতা থাকেন সেহেতু সকলের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়না। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৭. শিক্ষার্থীর অবস্থান সংক্রান্ত পার্থক্য :- 
ব্যক্তিগত পরামর্শদান প্রক্রিয়ায় পরামর্শ গ্রহীতা যেহেতু একজন থাকেন সেহেতু অন্যান্য পরামর্শগ্রহীতার সঙ্গে তার অবস্থানগত পার্থক্য স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়না। 
কিন্তু , দলগত পরামর্শপ্রদান প্রক্রিয়ায় যেহেতু একাধিক ব্যক্তি অংশগ্রহণ করেন তাই অন্যান্য পরামর্শ গ্রহীতার তুলনায় প্রতিটি ব্যক্তির অবস্থান স্পষ্টভাবে উপলব্ধি করা যায়। 

৮. সময় ও অর্থ সংক্রান্ত পার্থক্য :- 
ব্যক্তিগত পরামর্শপ্রদান প্রক্রিয়ায় যেহেতু একজন দাতা ও গ্রহীতা থাকেন তাই এই ধরণের প্রক্রিয়ায় সময় ও অর্থ উভয়ই অধিক পরিমাণে ব্যয় হয়। 
অপরপক্ষে , দলগত পরামর্শপ্রদান প্রক্রিয়ায় একাধিক পরামর্শ গ্রহীতা অংশগ্রহন করেন। ফলে ব্যক্তিগত পরামর্শপ্রদান প্রক্রিয়ার তুলনায় সময় ও অর্থ কম ব্যয় হয়।   

৯. পরামর্শদাতা সংক্রান্ত পার্থক্য :- 
ব্যক্তিগত পরামর্শদান প্রক্রিয়ায় পরামর্শদাতাকে পরামর্শ গ্রহণকারীর সমস্যার বিষয়ে অভিজ্ঞ হওয়া প্রয়োজন। সমস্যার বিষয়ে যথাযথ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা না থাকলে পরামর্শ কার্যকর হয়না। 
অন্যদিকে , দলগত পরামর্শপ্রদান প্রক্রিয়ায় যেহেতু ভবিষ্যৎ সমস্যা সম্পর্কে পূর্বনির্ধারিত পরামর্শ প্রদান করা হয় , সেহেতু যেকোনো অভিজ্ঞ শিক্ষকের পক্ষেই পরামর্শ প্রদান করা সম্ভব। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

Share
Tweet
Pin
Share
No comments

আত্মীয়তার বিভিন্ন ধরণগুলি আলোচনা কর। 

আত্মীয়তার শ্রেণীভাগ আলোচনা কর। 

উদাহরণসহ বিভিন্ন ধরণের আত্মীয়তা সম্পর্ক সম্পর্কে লেখ। 

Different types of kinship . ( In Bengali ) .




আত্মীয়তার বিভিন্ন ধরণ :- 


আত্মীয়তার শ্রেণীভাগ :- মূলতঃ দুইভাবে আত্মীয়তার শ্রেণীভাগ করা যেতে পারে। 
(ক) সম্পর্কের গভীরতা , দূরত্ব বা নৈকট্যের ভিত্তিতে শ্রেণীভাগ ও 
(খ ) পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্কের ভিত্তিতে শ্রেণিভাগ। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

(ক)সম্পর্কের গভীরতা , দূরত্ব বা নৈকট্যের ভিত্তিতে আত্মীয়তা তিন প্রকার। যথা :- 
১. প্রথম শ্রেণীর আত্মীয় ,
২. দ্বিতীয় শ্রেণীর আত্মীয় ও 
৩. তৃতীয় শ্রেণির আত্মীয়। 

(খ ) পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্কের ভিত্তিতে আত্মীয়তা দুই প্রকার। যথা :- 
১. রক্তের সম্পর্কের ভিত্তিতে আত্মীয়। 
২. বৈবাহিক সম্পর্কের ভিত্তিতে আত্মীয়। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

(ক) ১. প্রথম শ্রেণির আত্মীয় :- 
কোনো ব্যক্তি একক পরিবারের সদস্য হিসাবে ঐ পরিবারের অন্যান্যদের সাথে তার যা সম্পর্ক তাকেই বলে প্রথম শ্রেণীর আত্মীয়। যেমন - স্বামী - স্ত্রী , পিতা - পুত্র , পিতা - কন্যা , মাতা - পুত্র , মাতা - কন্যা , ভাই - বোন - ইত্যাদি। প্রথম শ্রেণীর আত্মীয়রা সকলে পরস্পরের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত। এই ধরণের সম্পর্কে দৃঢ় আবেগ , দায়িত্ব ও কর্তব্য - ইত্যাদি গভীরভাবে দেখা যায়। 

(ক) ২. দ্বিতীয় শ্রেণির আত্মীয় :-
প্রথম শ্রেণীর আত্মীয়দের একক পরিবারের বাইরে তাদের প্রথম শ্রেণীর আত্মীয়দের বলে দ্বিতীয় শ্রেণির আত্মীয়। যেমন - বাবার ভাই বা বোন , মায়ের ভাই বা বোন , ভাইয়ের স্ত্রী , বোনের স্বামী - ইত্যাদি। এই ধরণের আত্মীয়তার সম্পর্ক বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রথম শ্রেণির আত্মীয়ের মতই আবেগ ও সম্পর্কের অনুভূতি বিরাজমান। মূলতঃ বৈবাহিক সম্পর্কের ভিত্তিতেই দ্বিতীয় শ্রেণির আত্মীয় নির্ধারিত হয়। 

(ক)৩. তৃতীয় শ্রেণির আত্মীয় :- 
দ্বিতীয় শ্রেণীর আত্মীয়দের প্রথম শ্রেণীর আত্মীয়রা হল তৃতীয় শ্রেণীর আত্মীয়। যেমন -          স্ত্রীর ভাইয়ের ছেলে , বোনের স্বামীর ভাই - ইত্যাদি। এই ধরণের আত্মীয়রা প্রথম শ্রেণীর আত্মীয়দের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত না হলেও পরোক্ষভাবে সম্পর্কিত হয়। 

উপরোক্ত তিন শ্রেণির আত্মীয়কে একটি উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। যেমন - 
১. অমলবাবুর স্ত্রী অমলবাবুর প্রথম শ্রেণির আত্মীয়।   
২. অমলবাবুর স্ত্রী'র ভাই অমলবাবুর দ্বিতীয় শ্রেণির আত্মীয়। 
৩. অমলবাবুর স্ত্রী'র ভাইয়ের ছেলে অমলবাবুর তৃতীয় শ্রেণির আত্মীয়। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

(খ)১. রক্তের সম্পর্কের ভিত্তিতে আত্মীয় :- 
শুধুমাত্র রক্তের সম্পর্কের ভিত্তিতে যে আত্মীয়তা জন্ম নেয় - তাকে বলে রক্তের সম্পর্কের ভিত্তিতে আত্মীয়। যেমন স্বামী - স্ত্রী'র রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় হল তাদের সন্তানরা। এই ধরণের সম্পর্ককে বলা হয় - Consanguineous Kinship । তবে এক্ষেত্রে কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে। যেমন ধরা যাক ক ও খ এর মধ্যে বিবাহ হল এবং তাদের সন্তান হল গ। এক্ষেত্রে , ক ও খ এর রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় হল গ। কিন্তু এরপর ক ও খ এর বিবাহ বিচ্ছেদ হল এবং তারপর খ বিবাহ করল ঘ এর সাথে। এক্ষেত্রে যদিও গ এর সঙ্গে ঘ এর রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও ; ঘ যদি পিতার সম্পূর্ণ দায়িত্ব ও ভূমিকা পালন করে তাহলে গ ও ঘ এর সম্পর্ককেও রক্তের সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা আত্মীয় বলা হয়। 

(খ)২. বৈবাহিক সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা আত্মীয় :- 
এই ধরণের আত্মীয়তা শুধুমাত্র বৈবাহিক সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে। এই ধরণের আত্মীয়তার সম্পর্ককে বলা হয় - Affinal Kinship  । তবে বৈবাহিক সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা আত্মীয়তার সম্পর্কের ক্ষেত্রেও কিছু ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যায়। অনেক সময় রক্তের সম্পর্কের মধ্যেও বিবাহ হয়ে থাকে। আবার ভারতের নায়ার সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি পরিবারের ভাই , বোন , বোনের সকল সন্তান , তার মা সকলেই একত্রে বসবাস করে। 

পরিশেষে বলা যায় , আত্মীয়তার সম্পর্কের ধরণে আধনিককালে বেশ কিছু পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। রক্তের সম্পর্ক বা বৈবাহিক সম্পর্কের সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা সম্পর্কগুলিকেও উল্লেখযোগ্য মর্যাদা দেওয়া হচ্ছে। বন্ধু গোষ্ঠী , সহকর্মী - সকলেই আজ আত্মীয়তার সূত্রে আবদ্ধ। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো                 
   
Share
Tweet
Pin
Share
No comments

বিবাহের প্রকারভেদ আলোচনা কর। 

বিভিন্ন প্রকার বিবাহের পরিচয় দাও। 

নর - নারীর সংখ্যার ভিত্তিতে বিবাহের প্রকারভেদ আলোচনা কর। 

রীতিনীতির ভিত্তিতে বিবাহের প্রকারভেদ আলোচনা কর। 

Discuss the different types of marriage. ( In Bengali ) . 




বিবাহের প্রকারভেদ :- 


নর নারীর সংখ্যার ভিত্তিতে ও রীতিনীতির ভিত্তিতে বিবাহকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। নীচে বিবাহের প্রকারভেদ সম্পর্কে আলোচনা করা হল। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

১. একগামিতা ( Monogamy ) :- 


একগামি বৈবাহিক ব্যবস্থায় একজন পুরুষ ও একজন নারীর মধ্যে বিবাহ সংঘঠিত হয়। বিশ্বের সর্বাধিক প্রচলিত , জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য বিবাহ ব্যবস্থা হল একগামিতা। একগামিতা বিষয়টি সুপ্রাচীন। ওয়েস্টার মার্ক বলেছেন একগামিতা বিষয়টি মানব সভ্যতার মতই সুপ্রাচীন। সর্বদেশে , সর্বকালে একগামিতাকে সর্বশ্রেষ্ঠ বলে মনে করা হয়। 

একগামিতার বিশেষ কিছু সুবিধা রয়েছে। যেমন - 
(ক ) একগামি বৈবাহিক ব্যবস্থায় পরিবার ছোট হওয়ার ফলে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে তার ব্যায়ভার কম। 
(খ ) উত্তরাধিকার সংক্রান্ত বিষয়ে একগামিতা প্রায় সমস্যামুক্ত। 
(গ ) নারীদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একগামিতা কার্যকরী। বহুবিবাহের ক্ষেত্রে কখনোই নারীদের সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। 
(ঘ ) স্বামী - স্ত্রী - র মধ্যে যথার্থ দাম্পত্য বন্ধন সৃষ্টি করতে একগামিতাই শ্রেষ্ঠ। 
(ঙ ) বিভিন্ন যৌনরোগ প্রতিরোধ করতেও একগামিতা কাম্য। 
(চ ) একগামি বৈবাহিক সম্পর্ক অনেক বেশি স্থায়ী প্রকৃতির। 
(ছ ) একগামী পরিবারে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সম্পর্কের বন্ধন দৃঢ় হয়। 
(জ ) সন্তানের লালন - পালন ও সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রেও একগামি পরিবার অধিক উৎকৃষ্ট। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

২. বহুগামিতা ( Polygamy ) :- 


বহুগামিতা হল একাধিক পত্নীগ্রহণ বা একাধিক পতিগ্রহন। বহুগামিতা দুই প্রকার। যথা - (i) বহুপতিত্ব ও (ii) বহুপত্নীত্ব। 

(i) বহুপতিত্ব ( Polyandry) :- 


একজন নারী একাধিক পতি গ্রহণ করলে তাকে বলে বহুপতিত্ব। বহুপতিত্ব আবার দুই প্রকারের হয় - 
ভাতৃত্বমূলক বহুপতিত্ব ও অভাতৃত্বমূলক বহুপতিত্ব। 

ভাতৃত্বমূলক বহুপতিত্ব ( Fraternal Polyandry ) :- যখন একজন নারী একজন পুরুষ ও সেই পুরুষের অন্যান্য ভ্রাতাদের বিবাহ করেন তখন তা হল ভাতৃত্বমূলক বহুপতিত্ব। ভারতের টোডা উপজাতিদের মধ্যে ভাতৃত্বমূলক বহুপতিত্ব লক্ষ্য করা যায়। 

অভাতৃত্বমূলক বহুপতিত্ব ( Non - Fraternal Polyandry ) :- যখন একজন নারী একাধিক পতি গ্রহণ করেন এবং তার পতিদের মধ্যে ভাতৃত্বমূলক কোনো সম্পর্ক থাকেনা - তখন তাকে বলে অভাতৃত্বমূলক বহুপতিত্ব। ভারতের নায়ার সম্প্রদায়ের মধ্যে অভাতৃত্বমূলক বহুপতিত্ব লক্ষ্য করা যায়। 

(ii) বহুপত্নীত্ব ( Polygyny ) :- 


একজন পুরুষ একাধিক নারীকে বিবাহ করলে তাকে বলা হয় বহুপত্নীত্ব। প্রাচীন ভারতে বহুপত্নীত্বের বহুল প্রচলন দেখা যায়। সমাজের প্রভাবশালী ও সম্পদশালীরা অধিকাংশই এই রীতি অনুসরণ করতেন। তবে বর্তমানেও মুসলিম সমাজের মধ্যে এবং কিছু পার্বত্য উপজাতির মধ্যে আজও এই প্রথা লক্ষ্য করা যায়। তবে ভারতে হিন্দুদের ক্ষেত্রে হিন্দু বিবাহ আইনের মাধ্যমে এই জাতীয় বিবাহকে নিষিদ্ধ করা হয়। 

একজন পুরুষ যখন একজন নারীকে এবং সেই নারীর ভগ্নীদেরকে বিবাহ করেন তখন তাকে বলে Sororal Polygyny ; এবং একজন পুরুষের স্ত্রীদের মধ্যে ভগ্নীগত সম্পর্ক না থাকলে তাকে বলে  Non Sororal Polygyny  । এছাড়া একজন পুরুষ তার মৃত দাদা বা ভাইয়ের স্ত্রীকে বিবাহ করলে তাকে বলে Levirate এবং মৃত স্ত্রীর দিদি বা বোনকে বিবাহ করলে তাকে বলে Sororate । 

৩. গোষ্ঠীবিবাহ ( Group marriage ) :- 


যখন একই সঙ্গে একাধিক পুরুষ একাধিক পত্নী গ্রহণ করেন তখন তাকে বলে গোষ্ঠী বিবাহ। এই গোষ্ঠীর সকল পুরুষদের সঙ্গে সকল স্ত্রীদের দাম্পত্য সম্পর্ক থাকে এবং জন্ম নেওয়া প্রতিটি সন্তান সকলের সন্তান বলে বিবেচিত হয়। এই ধরণের বিবাহ রীতির অস্তিত্ব বর্তমানে নেই বললেই চলে। কিন্তু Mardak বলেছেন ব্রাজিলের কাইগং উপজাতিদের মধ্যে , সাইবেরিয়ার চুপসি উপজাতিদের মধ্যে গোষ্ঠীবিবাহ কিছু ক্ষেত্রে আজও প্রচলিত।  

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

উপরোক্ত প্রকারভেদগুলি ছাড়াও বিবাহ পদ্ধতি , রীতিনীতি - ইত্যাদির ভিত্তিতেও বিবাহকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা - 

১. সমসংস্থ বিবাহ :- স্বামী ও স্ত্রীর বয়স , বংশমর্যাদা , শিক্ষাগত যোগ্যতা , সামাজিক অবস্থান - ইত্যাদি মোটামুটি একই ধরণের হলে তাকে বলে সমসংস্থ বিবাহ। 

২. অসমসংস্থ বিবাহ :- স্বামী ও স্ত্রীর বয়স , বংশমর্যাদা , শিক্ষাগত যোগ্যতা , সামাজিক অবস্থান - ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যাপক পার্থক্য থাকলে তাকে বলে অসমসংস্থ বিবাহ।

৩. অনুলোম :- প্রাচীন ভারতে উচ্চ বর্ণের পুরুষের সাথে নিম্নবর্ণের নারীর বিবাহকে বলা হত অনুলোম। 

৪. প্রতিলোম :- প্রাচীন ভারতে নিম্নবর্ণের পুরুষের সঙ্গে উচ্চ বর্ণের নারীর বিবাহকে বলা হত প্রতিলোম। 

৫. আয়োজিত বিবাহ :- পরিবার কর্তৃক পাত্র - পাত্রী চয়ন করে বিবাহের প্রথা হল আয়োজিত বিবাহ। 

৬. রোমান্টিক বিবাহ :- পাত্র পাত্রী নিজেরাই পরস্পরকে জীবনসঙ্গী হিসাবে বেছে নিলে তা হল রোমান্টিক বিবাহ। 

৭. বিনিময় বিবাহ :- অস্ট্রেলিয়া ও মেলানেশিয়ার কিছু উপজাতিদের মধ্যে স্বামীরা তাদের স্ত্রীদের পরস্পরের সাথে বিনময় করেন। এটিই হল বিনিময় বিবাহ। 

৮. স্বগোষ্ঠী বিবাহ :- দম্পতি একই গোষ্ঠীভুক্ত হলে তাকে বলে স্বগোষ্ঠী বিবাহ। 

৯. গোষ্ঠী বহির্ভুত বিবাহ :- এই ধরণের বিবাহে পাত্র পাত্রী ভিন্ন ভিন্ন গোষ্ঠীর সদস্য হয়ে থাকেন। 

১০. ক্রয় বিবাহ :- এই ধরনের বিবাহে পাত্র - অর্থ বা অন্যান্য সম্পত্তির ভিত্তিতে কন্যাকে ক্রয় করে বিবাহ করেন। 

এছাড়াও প্রাচীন ভারতে আরো বহু ধরণের বিবাহের অস্তিত্ব ছিল ; যেমন - কন্যা হরণ করে বিবাহ , বীণা ও মোট্টা বিবাহ , স্বয়ম্বর , বীর্যশুক্লা , দাস বিবাহ। এছাড়াও কামসূত্রে আটপ্রকার বিবাহের উল্লেখ পাওয়া যায় - ব্রাহ্ম বিবাহ , দৈব বিবাহ , প্রজাপত্য বিবাহ , আর্য বিবাহ , রাক্ষস বিবাহ , পৈশাচ বিবাহ , গান্ধর্ব বিবাহ ও অসুর বিবাহ। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো    


Share
Tweet
Pin
Share
No comments
Newer Posts
Older Posts

Followers

Pages

  • Home
  • Privacy Policy
  • Disclaimer
  • CONTACT ME
  • About Me

Contact Form

Name

Email *

Message *

About me

Hallow viewers , myself Nandan Dutta [Subhankar Dutta], reside at Maheshpur,Malda.
I made this website for the students of B.A. courses under Gour Banga University. Here you can get suggestions of different subjects like HISTORY , SOCIOLOGY , POLITICAL SCIENCE & EDUCATION.
In future I will add MCQ sections of those subjects.


Categories

  • 1ST SEMESTER SUGGESTION (1)
  • 2 ND YEAR SUGGESTION (1)
  • 2ND SEMESTER (1)
  • 3RD SEMESTER (8)
  • BENGALI NOTES (21)
  • CU suggestion. (1)
  • EDUCATION NOTES (141)
  • ENGLISH COMPULSORY (16)
  • GBU Suggestion. (7)
  • HISTORY EUROPE & WORLD (46)
  • HISTORY NOTES (68)
  • POL SC NOTES (64)
  • SOCIOLOGY NOTES (72)
  • WBCS 2020 (1)

recent posts

Blog Archive

  • May 2025 (3)
  • April 2025 (20)
  • March 2025 (12)
  • February 2025 (8)
  • November 2024 (5)
  • October 2024 (2)
  • September 2024 (2)
  • June 2024 (2)
  • March 2024 (6)
  • February 2024 (4)
  • October 2023 (5)
  • May 2023 (5)
  • April 2023 (1)
  • December 2022 (1)
  • November 2022 (13)
  • September 2022 (2)
  • August 2022 (7)
  • July 2022 (29)
  • June 2022 (10)
  • May 2022 (25)
  • April 2022 (24)
  • March 2022 (16)
  • February 2022 (19)
  • January 2022 (21)
  • December 2021 (46)
  • November 2021 (5)
  • October 2021 (6)
  • September 2021 (5)
  • August 2021 (41)
  • July 2021 (43)
  • June 2021 (31)
  • May 2021 (7)
  • April 2021 (1)
  • July 2020 (1)
  • June 2020 (3)
  • April 2020 (1)
  • November 2019 (1)
  • July 2019 (1)
  • June 2019 (1)
  • May 2019 (1)
  • April 2019 (2)
  • January 2019 (1)

Pages

  • Home
  • 2nd SEM ভাষাতত্ত্ব :
  • বাংলা উপভাষা
  • দ্বিতীয় পুলকেশীর কৃতিত্ব
  • ভারতীয় সংবিধানে বর্ণিত সাম্যের অধিকারগুলি আলোচনা করো।
  • হর্ষবর্ধনের কৃতিত্ব আলোচনা করো। তাকে কি উত্তর পথনাথ বলা যায় ?
  • ভারতীয় সংবিধানের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য :-
  • উদারনীতিবাদ : সংক্ষিপ্ত ধারণা :-
  • চোল শাসনব্যবস্থা :-
  • গুপ্তযুগ সুবর্ণযুগ সম্পর্কিত আলোচনা।
  • ৬. উদাহরণসহ মধ্যযুগের বাংলাভাষার কয়েকটি বৈশিষ্ট আল...
  • 1. Marxism
  • আধুনিক বাংলা ভাষা ও তার বৈশিষ্ট।
  • Discuss the career and achievements of Samudragupta .
  • ভাষাতত্ত্ব

Created with by ThemeXpose | Distributed by Blogger Templates