আত্মীয়তার বিভিন্ন ধরণগুলি আলোচনা কর।

by - May 19, 2022

আত্মীয়তার বিভিন্ন ধরণগুলি আলোচনা কর। 

আত্মীয়তার শ্রেণীভাগ আলোচনা কর। 

উদাহরণসহ বিভিন্ন ধরণের আত্মীয়তা সম্পর্ক সম্পর্কে লেখ। 

Different types of kinship . ( In Bengali ) .




আত্মীয়তার বিভিন্ন ধরণ :- 


আত্মীয়তার শ্রেণীভাগ :- মূলতঃ দুইভাবে আত্মীয়তার শ্রেণীভাগ করা যেতে পারে। 
(ক) সম্পর্কের গভীরতা , দূরত্ব বা নৈকট্যের ভিত্তিতে শ্রেণীভাগ ও 
(খ ) পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্কের ভিত্তিতে শ্রেণিভাগ। 


(ক)সম্পর্কের গভীরতা , দূরত্ব বা নৈকট্যের ভিত্তিতে আত্মীয়তা তিন প্রকার। যথা :- 
১. প্রথম শ্রেণীর আত্মীয় ,
২. দ্বিতীয় শ্রেণীর আত্মীয় ও 
৩. তৃতীয় শ্রেণির আত্মীয়। 

(খ ) পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্কের ভিত্তিতে আত্মীয়তা দুই প্রকার। যথা :- 
১. রক্তের সম্পর্কের ভিত্তিতে আত্মীয়। 
২. বৈবাহিক সম্পর্কের ভিত্তিতে আত্মীয়। 


(ক) ১. প্রথম শ্রেণির আত্মীয় :- 
কোনো ব্যক্তি একক পরিবারের সদস্য হিসাবে ঐ পরিবারের অন্যান্যদের সাথে তার যা সম্পর্ক তাকেই বলে প্রথম শ্রেণীর আত্মীয়। যেমন - স্বামী - স্ত্রী , পিতা - পুত্র , পিতা - কন্যা , মাতা - পুত্র , মাতা - কন্যা , ভাই - বোন - ইত্যাদি। প্রথম শ্রেণীর আত্মীয়রা সকলে পরস্পরের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত। এই ধরণের সম্পর্কে দৃঢ় আবেগ , দায়িত্ব ও কর্তব্য - ইত্যাদি গভীরভাবে দেখা যায়। 

(ক) ২. দ্বিতীয় শ্রেণির আত্মীয় :-
প্রথম শ্রেণীর আত্মীয়দের একক পরিবারের বাইরে তাদের প্রথম শ্রেণীর আত্মীয়দের বলে দ্বিতীয় শ্রেণির আত্মীয়। যেমন - বাবার ভাই বা বোন , মায়ের ভাই বা বোন , ভাইয়ের স্ত্রী , বোনের স্বামী - ইত্যাদি। এই ধরণের আত্মীয়তার সম্পর্ক বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রথম শ্রেণির আত্মীয়ের মতই আবেগ ও সম্পর্কের অনুভূতি বিরাজমান। মূলতঃ বৈবাহিক সম্পর্কের ভিত্তিতেই দ্বিতীয় শ্রেণির আত্মীয় নির্ধারিত হয়। 

(ক)৩. তৃতীয় শ্রেণির আত্মীয় :- 
দ্বিতীয় শ্রেণীর আত্মীয়দের প্রথম শ্রেণীর আত্মীয়রা হল তৃতীয় শ্রেণীর আত্মীয়। যেমন -          স্ত্রীর ভাইয়ের ছেলে , বোনের স্বামীর ভাই - ইত্যাদি। এই ধরণের আত্মীয়রা প্রথম শ্রেণীর আত্মীয়দের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত না হলেও পরোক্ষভাবে সম্পর্কিত হয়। 

উপরোক্ত তিন শ্রেণির আত্মীয়কে একটি উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। যেমন - 
১. অমলবাবুর স্ত্রী অমলবাবুর প্রথম শ্রেণির আত্মীয়।   
২. অমলবাবুর স্ত্রী'র ভাই অমলবাবুর দ্বিতীয় শ্রেণির আত্মীয়। 
৩. অমলবাবুর স্ত্রী'র ভাইয়ের ছেলে অমলবাবুর তৃতীয় শ্রেণির আত্মীয়। 


(খ)১. রক্তের সম্পর্কের ভিত্তিতে আত্মীয় :- 
শুধুমাত্র রক্তের সম্পর্কের ভিত্তিতে যে আত্মীয়তা জন্ম নেয় - তাকে বলে রক্তের সম্পর্কের ভিত্তিতে আত্মীয়। যেমন স্বামী - স্ত্রী'র রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় হল তাদের সন্তানরা। এই ধরণের সম্পর্ককে বলা হয় - Consanguineous Kinship । তবে এক্ষেত্রে কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে। যেমন ধরা যাক ক ও খ এর মধ্যে বিবাহ হল এবং তাদের সন্তান হল গ। এক্ষেত্রে , ক ও খ এর রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় হল গ। কিন্তু এরপর ক ও খ এর বিবাহ বিচ্ছেদ হল এবং তারপর খ বিবাহ করল ঘ এর সাথে। এক্ষেত্রে যদিও গ এর সঙ্গে ঘ এর রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও ; ঘ যদি পিতার সম্পূর্ণ দায়িত্ব ও ভূমিকা পালন করে তাহলে গ ও ঘ এর সম্পর্ককেও রক্তের সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা আত্মীয় বলা হয়। 

(খ)২. বৈবাহিক সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা আত্মীয় :- 
এই ধরণের আত্মীয়তা শুধুমাত্র বৈবাহিক সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে। এই ধরণের আত্মীয়তার সম্পর্ককে বলা হয় - Affinal Kinship  । তবে বৈবাহিক সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা আত্মীয়তার সম্পর্কের ক্ষেত্রেও কিছু ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যায়। অনেক সময় রক্তের সম্পর্কের মধ্যেও বিবাহ হয়ে থাকে। আবার ভারতের নায়ার সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি পরিবারের ভাই , বোন , বোনের সকল সন্তান , তার মা সকলেই একত্রে বসবাস করে। 

পরিশেষে বলা যায় , আত্মীয়তার সম্পর্কের ধরণে আধনিককালে বেশ কিছু পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। রক্তের সম্পর্ক বা বৈবাহিক সম্পর্কের সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা সম্পর্কগুলিকেও উল্লেখযোগ্য মর্যাদা দেওয়া হচ্ছে। বন্ধু গোষ্ঠী , সহকর্মী - সকলেই আজ আত্মীয়তার সূত্রে আবদ্ধ। 

   

You May Also Like

0 comments