বিবাহের প্রকারভেদ আলোচনা কর।

by - May 17, 2022

বিবাহের প্রকারভেদ আলোচনা কর। 

বিভিন্ন প্রকার বিবাহের পরিচয় দাও। 

নর - নারীর সংখ্যার ভিত্তিতে বিবাহের প্রকারভেদ আলোচনা কর। 

রীতিনীতির ভিত্তিতে বিবাহের প্রকারভেদ আলোচনা কর। 

Discuss the different types of marriage. ( In Bengali ) . 




বিবাহের প্রকারভেদ :- 


নর নারীর সংখ্যার ভিত্তিতে ও রীতিনীতির ভিত্তিতে বিবাহকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। নীচে বিবাহের প্রকারভেদ সম্পর্কে আলোচনা করা হল। 


১. একগামিতা ( Monogamy ) :- 


একগামি বৈবাহিক ব্যবস্থায় একজন পুরুষ ও একজন নারীর মধ্যে বিবাহ সংঘঠিত হয়। বিশ্বের সর্বাধিক প্রচলিত , জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য বিবাহ ব্যবস্থা হল একগামিতা। একগামিতা বিষয়টি সুপ্রাচীন। ওয়েস্টার মার্ক বলেছেন একগামিতা বিষয়টি মানব সভ্যতার মতই সুপ্রাচীন। সর্বদেশে , সর্বকালে একগামিতাকে সর্বশ্রেষ্ঠ বলে মনে করা হয়। 

একগামিতার বিশেষ কিছু সুবিধা রয়েছে। যেমন - 
(ক ) একগামি বৈবাহিক ব্যবস্থায় পরিবার ছোট হওয়ার ফলে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে তার ব্যায়ভার কম। 
(খ ) উত্তরাধিকার সংক্রান্ত বিষয়ে একগামিতা প্রায় সমস্যামুক্ত। 
(গ ) নারীদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একগামিতা কার্যকরী। বহুবিবাহের ক্ষেত্রে কখনোই নারীদের সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। 
(ঘ ) স্বামী - স্ত্রী - র মধ্যে যথার্থ দাম্পত্য বন্ধন সৃষ্টি করতে একগামিতাই শ্রেষ্ঠ। 
(ঙ ) বিভিন্ন যৌনরোগ প্রতিরোধ করতেও একগামিতা কাম্য। 
(চ ) একগামি বৈবাহিক সম্পর্ক অনেক বেশি স্থায়ী প্রকৃতির। 
(ছ ) একগামী পরিবারে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সম্পর্কের বন্ধন দৃঢ় হয়। 
(জ ) সন্তানের লালন - পালন ও সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রেও একগামি পরিবার অধিক উৎকৃষ্ট। 


২. বহুগামিতা ( Polygamy ) :- 


বহুগামিতা হল একাধিক পত্নীগ্রহণ বা একাধিক পতিগ্রহন। বহুগামিতা দুই প্রকার। যথা - (i) বহুপতিত্ব ও (ii) বহুপত্নীত্ব। 

(i) বহুপতিত্ব ( Polyandry) :- 


একজন নারী একাধিক পতি গ্রহণ করলে তাকে বলে বহুপতিত্ব। বহুপতিত্ব আবার দুই প্রকারের হয় - 
ভাতৃত্বমূলক বহুপতিত্ব ও অভাতৃত্বমূলক বহুপতিত্ব। 

ভাতৃত্বমূলক বহুপতিত্ব ( Fraternal Polyandry ) :- যখন একজন নারী একজন পুরুষ ও সেই পুরুষের অন্যান্য ভ্রাতাদের বিবাহ করেন তখন তা হল ভাতৃত্বমূলক বহুপতিত্ব। ভারতের টোডা উপজাতিদের মধ্যে ভাতৃত্বমূলক বহুপতিত্ব লক্ষ্য করা যায়। 

অভাতৃত্বমূলক বহুপতিত্ব ( Non - Fraternal Polyandry ) :- যখন একজন নারী একাধিক পতি গ্রহণ করেন এবং তার পতিদের মধ্যে ভাতৃত্বমূলক কোনো সম্পর্ক থাকেনা - তখন তাকে বলে অভাতৃত্বমূলক বহুপতিত্ব। ভারতের নায়ার সম্প্রদায়ের মধ্যে অভাতৃত্বমূলক বহুপতিত্ব লক্ষ্য করা যায়। 

(ii) বহুপত্নীত্ব ( Polygyny ) :- 


একজন পুরুষ একাধিক নারীকে বিবাহ করলে তাকে বলা হয় বহুপত্নীত্ব। প্রাচীন ভারতে বহুপত্নীত্বের বহুল প্রচলন দেখা যায়। সমাজের প্রভাবশালী ও সম্পদশালীরা অধিকাংশই এই রীতি অনুসরণ করতেন। তবে বর্তমানেও মুসলিম সমাজের মধ্যে এবং কিছু পার্বত্য উপজাতির মধ্যে আজও এই প্রথা লক্ষ্য করা যায়। তবে ভারতে হিন্দুদের ক্ষেত্রে হিন্দু বিবাহ আইনের মাধ্যমে এই জাতীয় বিবাহকে নিষিদ্ধ করা হয়। 

একজন পুরুষ যখন একজন নারীকে এবং সেই নারীর ভগ্নীদেরকে বিবাহ করেন তখন তাকে বলে Sororal Polygyny ; এবং একজন পুরুষের স্ত্রীদের মধ্যে ভগ্নীগত সম্পর্ক না থাকলে তাকে বলে  Non Sororal Polygyny  । এছাড়া একজন পুরুষ তার মৃত দাদা বা ভাইয়ের স্ত্রীকে বিবাহ করলে তাকে বলে Levirate এবং মৃত স্ত্রীর দিদি বা বোনকে বিবাহ করলে তাকে বলে Sororate । 

৩. গোষ্ঠীবিবাহ ( Group marriage ) :- 


যখন একই সঙ্গে একাধিক পুরুষ একাধিক পত্নী গ্রহণ করেন তখন তাকে বলে গোষ্ঠী বিবাহ। এই গোষ্ঠীর সকল পুরুষদের সঙ্গে সকল স্ত্রীদের দাম্পত্য সম্পর্ক থাকে এবং জন্ম নেওয়া প্রতিটি সন্তান সকলের সন্তান বলে বিবেচিত হয়। এই ধরণের বিবাহ রীতির অস্তিত্ব বর্তমানে নেই বললেই চলে। কিন্তু Mardak বলেছেন ব্রাজিলের কাইগং উপজাতিদের মধ্যে , সাইবেরিয়ার চুপসি উপজাতিদের মধ্যে গোষ্ঠীবিবাহ কিছু ক্ষেত্রে আজও প্রচলিত।  


উপরোক্ত প্রকারভেদগুলি ছাড়াও বিবাহ পদ্ধতি , রীতিনীতি - ইত্যাদির ভিত্তিতেও বিবাহকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা - 

১. সমসংস্থ বিবাহ :- স্বামী ও স্ত্রীর বয়স , বংশমর্যাদা , শিক্ষাগত যোগ্যতা , সামাজিক অবস্থান - ইত্যাদি মোটামুটি একই ধরণের হলে তাকে বলে সমসংস্থ বিবাহ। 

২. অসমসংস্থ বিবাহ :- স্বামী ও স্ত্রীর বয়স , বংশমর্যাদা , শিক্ষাগত যোগ্যতা , সামাজিক অবস্থান - ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যাপক পার্থক্য থাকলে তাকে বলে অসমসংস্থ বিবাহ।

৩. অনুলোম :- প্রাচীন ভারতে উচ্চ বর্ণের পুরুষের সাথে নিম্নবর্ণের নারীর বিবাহকে বলা হত অনুলোম। 

৪. প্রতিলোম :- প্রাচীন ভারতে নিম্নবর্ণের পুরুষের সঙ্গে উচ্চ বর্ণের নারীর বিবাহকে বলা হত প্রতিলোম। 

৫. আয়োজিত বিবাহ :- পরিবার কর্তৃক পাত্র - পাত্রী চয়ন করে বিবাহের প্রথা হল আয়োজিত বিবাহ। 

৬. রোমান্টিক বিবাহ :- পাত্র পাত্রী নিজেরাই পরস্পরকে জীবনসঙ্গী হিসাবে বেছে নিলে তা হল রোমান্টিক বিবাহ। 

৭. বিনিময় বিবাহ :- অস্ট্রেলিয়া ও মেলানেশিয়ার কিছু উপজাতিদের মধ্যে স্বামীরা তাদের স্ত্রীদের পরস্পরের সাথে বিনময় করেন। এটিই হল বিনিময় বিবাহ। 

৮. স্বগোষ্ঠী বিবাহ :- দম্পতি একই গোষ্ঠীভুক্ত হলে তাকে বলে স্বগোষ্ঠী বিবাহ। 

৯. গোষ্ঠী বহির্ভুত বিবাহ :- এই ধরণের বিবাহে পাত্র পাত্রী ভিন্ন ভিন্ন গোষ্ঠীর সদস্য হয়ে থাকেন। 

১০. ক্রয় বিবাহ :- এই ধরনের বিবাহে পাত্র - অর্থ বা অন্যান্য সম্পত্তির ভিত্তিতে কন্যাকে ক্রয় করে বিবাহ করেন। 

এছাড়াও প্রাচীন ভারতে আরো বহু ধরণের বিবাহের অস্তিত্ব ছিল ; যেমন - কন্যা হরণ করে বিবাহ , বীণা ও মোট্টা বিবাহ , স্বয়ম্বর , বীর্যশুক্লা , দাস বিবাহ। এছাড়াও কামসূত্রে আটপ্রকার বিবাহের উল্লেখ পাওয়া যায় - ব্রাহ্ম বিবাহ , দৈব বিবাহ , প্রজাপত্য বিবাহ , আর্য বিবাহ , রাক্ষস বিবাহ , পৈশাচ বিবাহ , গান্ধর্ব বিবাহ ও অসুর বিবাহ। 



You May Also Like

0 comments