বিবাহের সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট।

by - May 17, 2022

বিবাহের সংজ্ঞা দাও। বিবাহের বৈশিষ্টগুলি আলোচনা কর। 

বিবাহের সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট।   

Definition and features of marriage. ( In Bengali ). 



বিবাহের সংজ্ঞা :- 


বিবাহ হল একটি প্রাথমিক সামাজিক প্রতিষ্ঠান। বিবাহের মাধ্যমে নর - নারীর সম্পর্ক বৈধতা লাভ করে ও সামাজিক স্বীকৃতি পায়। পৃথিবীর প্রতিটি সমাজে বিবাহের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। বিবাহের মাধ্যমেই পিতৃত্ব বৈধতা লাভ করে। পরিবার ও বিবাহ হল একে অপরের পরিপূরক। বর্তমান যুগে বিবাহ ব্যবস্থায় বহু পরিবর্তন সাধিত হলেও তার মৌলিক চরিত্র ও বৈশিষ্ট এক থেকে গেছে। 

বিবাহের সংজ্ঞা প্রদান করতে গিয়ে ওয়েস্টার মার্ক বলেছেন - বিবাহ হল নিয়ন্ত্রিত যৌন আচরণ অপেক্ষা অধিক কিছু। 

হর্টন ও হান্ট বলেছেন - বিবাহ হল এমন একটি সমাজ স্বীকৃত ব্যবস্থা যা দুই বা ততোধিক ব্যাক্তির বৈবাহিক সম্পর্কের মাধ্যমে পরিবার গড়ে তোলে। 

ম্যালিনোস্কি বলেছেন - বিবাহ হল নর - নারীর মধ্যে এমন এক ধরণের সম্পর্ক যার মধ্যে দিয়ে যৌন সংসর্গ স্থাপনের উর্দ্ধেও পিতৃত্ব বা মাতৃত্ব লাভের সুযোগ হয়। 

উইল ডুরান্ট বলেছেন - বিবাহ শুধুমাত্র যৌন সম্ভোগের ছাড়পত্র নয় ; বিবাহ হল পিতা - মাতা ও সন্তানের সম্পর্ক যা পরিবার গঠন করে সমাজ গঠনের প্রাথমিক এককের ভূমিকা পালন করে। 

 সুতরাং , বিবাহ হল এক বা একাধিক পুরুষের সঙ্গে এক বা একাধিক নারীর মিলন , যা সমাজ দ্বারা স্বীকৃত। বিবাহের মাধ্যমেই নর - নারীর সম্পর্ক বৈধতা প্রাপ্ত হয় এবং সন্তান প্রজনন ও প্রতিপালনের অধিকার লাভ করে। 


বিবাহের বৈশিষ্ট :- 


১. বিবাহ একটি বিশ্বজনীন ব্যবস্থা :- বিশ্বের প্রতিটি সমাজেই বিবাহের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। ভিন্ন ভিন্ন সমাজে ও ভিন্ন ভিন্ন সময়ে বিবাহের বৈশিষ্টের পার্থক্য থাকলেও তার মৌলিক কাঠামো সর্বত্র ও সর্বদা এক থাকে। বিবাহবিহীন সমাজের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায়না। যেহেতু বিবাহ পরিবার তৈরী করে এবং পরিবার হল সমাজ গঠনের মূল একক - তাই বিবাওকেও প্রতিটি সমাজ গঠনের অন্যতম উপাদান বলা যেতে পারে। 

২. নর - নারীর সম্পর্কের বৈধতা :- বিবাহ নর নারীর যৌনতার সম্পর্কের বৈধতা প্রদান করে। বিবাহের মাধ্যমে নর নারীর যৌন সম্পর্ক নিয়ন্ত্রিত ও সুব্যবস্থিত উপায়ে পরিচালিত হয়। বিবাহ নামক সুব্যবস্থিত কাঠামোটি সমাজে না থাকলে নর - নারীর সম্পর্ক ব্যাভিচারে ভরে উঠত। 


৩. পরিবর্তনশীলতা :- যেহেতু বিবাহ একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান , তাই সমাজ বিবর্তনের প্রতিটি স্তরে বিবাহেরও পরিবর্তন ঘটে চলেছে। আদিম মানব সমাজ , প্রাচীন ও মধ্যযুগের সমাজের বিবাহ ব্যবস্থার মধ্যে বিস্তর পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। উত্তর আধুনিক সময়ে বিবাহ ব্যবস্থার মধ্যে চরম পরিবর্তনশীলতা লক্ষ্য করা যায়। 

৪. সামাজিক প্রথা ও রীতিনীতি :- বিবাহ ব্যবস্থার সঙ্গে সামাজিক প্রথা ও রীতিনীতির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। ভিন্ন ভিন্ন সমাজে বিবাহের সঙ্গে জড়িত প্রথাগুলিও ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। সামাজিক প্রথা ও রীতিনীতিগুলি বিবাহের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সামাজিক ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির জন্ম দেয়। 

৫. ধর্মীয় প্রভাব : - ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের মানুষদের মধ্যে বিবাহের ক্ষেত্রে তাদের নিজ নিজ ধর্মের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। যেমন হিন্দু ও মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে বিবাহের ক্ষেত্রে বিস্তর পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। এমনকি , সংবিধানেও ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের মানুষদের জন্য বিবাহের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন আইন ও ব্যবস্থা সংযোজিত রয়েছে। 

৬. স্থায়ী প্রতিষ্ঠান :- বিবাহ সাধারণতঃ একটি স্থায়ী প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে বহু ক্ষেত্রে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটলেও তা শতকরা হিসাবে নগন্য। আদিম সমাজ থেকে বিবাহ ব্যবস্থার বিবর্তন হতে হতে উত্তর আধুনিক যুগেও বিভাগের অস্তিত্ব বর্তমান। আগামী দিনেও বিবাহ ব্যবস্থার বিলুপ্তির সেরকম কোনো আশঙ্কা পরিলক্ষিত হয়না। তাই বিবাহ হল একটি স্থায়ী সামাজিক প্রতিষ্ঠান। 


৭. দায়বদ্ধতা :- বিবাহের মাধ্যমে নর নারীর মধ্যে দাম্পত্য জীবনের সূত্রপাত ঘটে। ফলে বিবাহিত জীবনের শুরু থেকেই স্বামী - স্ত্রী - র মধ্যে বেশ কিছু দায় - দায়িত্ব ও কর্তব্যের সূচনা হয়। এই দায়িত্ব ও কর্তব্যগুলিকে সুচারুরূপে পালন করতে পারলেই বৈবাহিক জীবন সুখের হয় ও পারিবারিক জীবনে সমৃদ্ধি আসে। 

৮. পরিবার গঠনের প্রধান মাধ্যম :- পরিবার গঠনের প্রধান মাধ্যম হল বিবাহ। নর নারীর বিবাহের ভিত্তিতে পরিবার তৈরী হয়। এই ব্যবস্থা বিশ্বের সর্বত্র এক ও অভিন্ন। পরিবার গঠন ছাড়াও বিবাহ অন্যান্য বিভিন্ন আত্মীয়তার সম্পর্কের জন্ম দেয়। যেমন - ভাসুর , ননদ , দেবর , শ্যালক - শ্যালিকা - ইত্যাদি। 

৯. বংশবৃদ্ধি :- বিবাহের একটি অন্যতম উদ্দেশ্য হল সন্তানের জন্ম দেওয়া ও তার প্রতিপালন করা। এইভাবে বিবাহ বংশবৃদ্ধির মাধ্যমে উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সম্পত্তির বন্টন ঘটানোর সুবন্দোবস্ত করে। 

১০. বিবাহের প্রকারভেদ :- বর্তমান সমাজে বিভিন্ন ধরণের বিবাহ ব্যবস্থার অস্তিত্ব রয়েছে। যেমন - একগামিতা , গোষ্ঠীবিবাহ , বহুপতিত্ব , বহুপত্নীত্ব। এছাড়াও বিবাহের ধরণ হিসাবেও আয়োজিত বিবাহ , রোমান্টিক বিবাহ - ইত্যাদি ধরণের বিবাহ লক্ষ্য করা যায়।    


You May Also Like

0 comments