সংঘ কাকে বলে ? সংঘের বৈশিষ্টগুলি লেখ।
সংঘ কাকে বলে ? সংঘের বৈশিষ্টগুলি লেখ।
সংঘের সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট।
Definition and features of Association.
সংঘের ধারণা / সংজ্ঞা।
জিসবার্ট বলেছেন - মানুষ নির্দিষ্ট কিছু উদ্দেশ্য পূরণের তাগিদে সমবেত হয়। এই নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে সমবেত জনসমষ্টিকে বলা হয় সংঘ।
ম্যাকাইভার ও পেজ সংঘ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যের উপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তাঁর মতে , সংঘ গড়ে ওঠে জনগণের দ্বারা এবং স্বেচ্ছায়।
এছাড়া , মরিস জিনসবার্গও সংঘ গড়ে ওঠার পেছনে মানুষের নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যের বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন।
সুতরাং বলা যেতে পারে , সংঘ হল মানুষের দ্বারা তৈরী হওয়া এক প্রকার সংগঠন যা বিশেষ বিশেষ উদ্দেশ্য পূরণের তাগিদে গঠিত হয়।
সংঘের বৈশিষ্ট : -
১. উদ্দেশ্যভিত্তিক :-
প্রতিটি সংঘ গড়ে ওঠে নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করে। সমজাতীয় উদ্দেশ্যযুক্ত ব্যক্তিবর্গ সম্মিলিত হয়ে সংঘের জন্ম দেয়। সদস্যদের আচার - আচরণ , সংঘের লক্ষ্য ও কর্মসূচি , সংঘের নিজস্ব বিধি - ব্যবস্থা - সবকিছুই সেই নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করে পরিচালিত হয়।
২. সামাজিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যম :-
সংঘগুলি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সামাজিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যম হিসাবে কাজ করে। প্রতিটি সংঘের নিজস্ব নিয়ম - বিধি থাকে। সেই নির্দিষ্ট নিয়ম - বিধি দ্বারা তার সদস্যদের নিয়ন্ত্রণ করে। সংঘের নিয়মগুলি কোনো ক্ষেত্রে লিখিত আকারে থাকে আবার কোনো ক্ষেত্রে অলিখিত আকারে থাকে। সংঘের প্রতিটি সদস্যকে সেই সকল নিয়ম - বিধি মেনে চলতে হয়। এইভাবে সংঘ সামাজিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যম হিসাবে কাজ করে।
৩. সংঘ একপ্রকার জনগোষ্ঠী :-
সমজাতীয় উদ্দেশ্যযুক্ত মানুষ সম্মিলিত হয়ে সংঘের জন্ম দেয়। যেহেতু মানুষ সংগঠিত হয়ে সংঘের জন্ম দেয় , সেহেতু সংঘকে জনগোষ্ঠী বলা যেতে পারে। তবে সকল জনগোষ্ঠীকেই সংঘ বলা যাবেনা। কেননা , জনগোষ্ঠী হতে গেলে যে বিশেষ ধরণের বৈশিষ্ট থাকা উচিত তা সংঘের নেই। তবে বলা যেতে পারে , সকল সংঘই একপ্রকার জনগোষ্ঠী।
৪. সদস্যপদ :-
সংঘের সদস্যপদ ব্যক্তির ইচ্ছাধীন। ব্যক্তি ইচ্ছা করলে কোনো সংঘের সদস্য হতেও পারে , আবার না'ও পারে। আবার কোনো ব্যক্তি একই সঙ্গে একাধিক সংঘের সদস্য হতে পারে। আবার সদস্যপদ ত্যাগ করাও ব্যক্তির ইচ্ছাধীন।
৫. কৃত্রিম ও পরিকল্পিত :-
সংঘ মানুষের দ্বারা কৃত্রিমভাবে তৈরী হয়। মানুষ নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে কৃত্রিমভাবে সংঘের জন্ম দেয়। সংঘের জন্ম হয় নির্দিষ্ট পরিকল্পনার ভিত্তিতে। নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যযুক্ত হয়ে মানুষ পরিকল্পনার ভিত্তিতে সংঘের জন্ম দেয়।
৬. স্থায়িত্ব :-
সংঘগুলির স্থায়িত্ব নির্ভর করে সংঘের উদ্দেশ্যের উপর। উদ্দেশ্যের উপর ভিত্তি করে সংঘগুলি দীর্ঘস্থায়ী বা ক্ষণস্থায়ী উভয়ই হতে পারে। যেমন , করোনা অতিমারীর সময় বহু প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে মানবকল্যাণের স্বার্থে। কিন্তু মহামারীর প্রভাব কালক্রমে কমে এলে সেই সকল সংঘগুলির প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যায়।
৭. আঞ্চলিক বিস্তার :-
সংঘ নির্দিষ্ট অঞ্চলভিত্তিক হতে পারে , আবার না'ও পারে। কোনো কোনো সংঘের ক্ষেত্রে ভৌগোলিক অঞ্চল একটি নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট হিসাবে বিবেচিত হয়। যেমন - নির্দিষ্ট কোনো পাড়ার ক্লাব। আবার কোনো কোনো সংঘের ক্ষেত্রে ভৌগোলিক অঞ্চল বিষয়টি অর্থহীন। যেমন - রোটারী ক্লাব , লায়ন্স ক্লাব , রেড ক্রস - এই সকল সংঘের বিস্তার সারা বিশ্বজুড়ে।
৮. আইনগত ভিত্তি :-
বেশিরভাগ সংঘের আইনগত ভিত্তি থাকে। এর অর্থ হল আইনের দৃষ্টিতে সংঘের কর্তব্য , দায়বদ্ধতা , স্বীকৃতি , অধিকার - ইত্যাদি সবকিছুই আছে। অন্যভাবে বলা যায় , সংঘের আইনগত ভিত্তি থাকার জন্য এর বিরুদ্ধে মামলা করা যায়।
৯. নির্দিষ্ট - নিয়ম বিধি :-
প্রতিটি সংঘের নিজেস্ব নিয়ম বিধি থাকে। সংঘের প্রতিটি সদস্য সেই সকল নিয়ম বিধিগুলি মেনে চলতে বাধ্য থাকে। এই নিয়ম বিধিগুলি অমান্য করলে সংঘের সদস্যদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়।
১০. স্বয়ংসম্পূর্ণ নয় :-
সমাজের কোনো সংঘই স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। তাই সংঘগুলি অন্যান্য সংঘের সাথে বা সমাজের সাথে পারস্পরিকভাবে নির্ভরশীল। সংঘকে তার উদ্দেশ্য পূরণ করতে অন্যান্য সংঘ বা প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভর করতে হয়।
১১. দায়বদ্ধতা :-
প্রতিটি সংঘ নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে গঠিত হয়। এই উদ্দেশ্য পূরণ করতে গিয়ে সংঘকে তার সদস্যদের প্রতি দায়বদ্ধ থাকতে হয়। সদস্যদের প্রতি এই দায়বদ্ধতা সংঘের সদস্যদের সংঘের প্রতি দায়বদ্ধ করে তোলে। অর্থাৎ সংঘের যেমন সদস্যদের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকে , তেমনই সদস্যরাও সংঘের প্রতি দায়বদ্ধ থাকে।
১২. পারস্পরিক সহযোগিতা :-
যেহেতু সমজাতীয় উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে মানুষ সংগঠিত হয়ে সংঘের জন্ম দেয় , তাই সেই উদ্দেশ্য পূরণের তাগিদে সংঘের সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক মনোভাব লক্ষ্য করা যায়। সদস্যদের এই পারস্পরিক সহযোগিতার মনোভাব সংঘের উদ্দেশ্য পূরণ করতে অপরিহার্য।
0 comments