­
জনসম্প্রদায় ও সংঘের পার্থক্য। - NANDAN DUTTA

জনসম্প্রদায় ও সংঘের পার্থক্য।

by - September 28, 2024

জনসম্প্রদায় ও সংঘের পার্থক্য। 

সংঘ ও জনসম্প্রদায়ের পার্থক্য। 

জনসম্প্রদায় ও সংঘের তুলনামূলক আলোচনা। 

Difference between Community and Association 




জনসম্প্রদায় ও সংঘের পার্থক্য :- 


১. পরিধিগত ক্ষেত্রে : - 
জনসম্প্রদায়ের আকৃতি ও পরিধি তুলনামূলকভাবে বড়। একটি জনসম্প্রদায়ের মধ্যে একাধিক সংঘের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। অন্যদিকে , সংঘ হল জনসম্প্রদায়ের অন্তর্গত একটি অংশ এবং এর পরিধি জনসম্প্রদায়ের তুলনায় অনেকটা ছোট। 

২. সদস্যপদের ক্ষেত্রে :-
জন্মগত সূত্রে প্রত্যেক ব্যক্তি একটি জনসম্প্রদায়ের সদস্য হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে ব্যক্তির ইচ্ছা - অনিচ্ছার কোনো ভূমিকা থাকেনা। কিন্তু সংঘের সদস্যপদ সম্পূর্ণরূপে ব্যক্তির ইচ্ছা - অনিচ্ছার উপর নির্ভরশীল। ব্যক্তি স্বাধীনভাবে , নিজের ইচ্ছা অনুসারে সংঘের সদস্যপদ গ্রহণ করতে পারে আবার না'ও পারে। 


৩. নির্দিষ্ট ভৌগোলিক পরিসীমা :- 
জনসম্প্রদায়ের একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক পরিসীমা থাকে। নির্দিষ্ট ভৌগোলিক পরিসীমা জনসম্প্রদায়ের একটি অন্যতম শর্ত হিসাবে বিবেচিত হয়। কিন্তু সংঘের নির্দিষ্ট ভৌগোলিক পরিসীমা থাকেনা। যেমন - রেড ক্রস সোসাইটির অবস্থান সারা বিশ্বজুড়ে দেখা যায়। 

৪. গঠনগত দিক দিয়ে :- 
গঠনগত দিক দিয়ে জনসম্প্রদায় একটি স্বাভাবিক প্রতিষ্ঠান। পক্ষান্তরে কৃত্রিমভাবে সংঘের জন্ম হয়। 

৫. উদ্দেশ্যগত দিক দিয়ে :- 
জনসম্প্রদায় কোনো উদ্দেশ্যের পরিপেক্ষিতে গঠিত হয়না। এর উদ্দেশ্য বহুবিধ ও ব্যাপক। মানুষের জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্দেশ্যের সমষ্টি হল জনসম্প্রদায়। মানুষ তার জীবনধারণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় উদ্দেশ্যগুলি জনসম্প্রদায় থেকেই পূরণ করে। অন্যদিকে , সংঘ গড়ে ওঠে নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে। মানুষ নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে কৃত্রিমভাবে সংঘ প্রতিষ্ঠা করে। 

৬. আইনগত ভিত্তি :- 
জনসম্প্রদায়ের কোনো নির্দিষ্ট আইনগত ভিত্তি থাকেনা। কিন্তু সংঘের আইনগত ভিত্তি থাকে। 

৭. স্থায়িত্বের দিক দিয়ে :- 
স্থায়িত্বের দিক দিয়ে জনসম্প্রদায় সংঘের তুলনায় অনেক বেশি দীর্ঘস্থায়ী। যেহেতু সংঘগুলি মানুষের নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য পূরণের উদ্দেশ্যে কৃত্রিমভাবে গঠিত হয় , তাই এই প্রয়োজনগুলি পূরণ হয়ে গেলেই সংঘের অবলুপ্তি ঘটে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় , করোনা অতিমারীর সময় বহু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা গড়ে উঠেছিল ; কিন্তু বর্তমানে করোনার প্রকোপ কমে যাওয়াতে সেই সকল সংস্থাগুলির প্রয়োজন ফুরিয়েছে। 

৮. নিয়ম বিধির দিক দিয়ে :- 
জনসম্প্রদায়ের নির্দিষ্ট কোনো লিখিত নিয়ম বিধি থাকেনা। জনসম্প্রদায়গুলি পরিচালিত হয় স্বাভাবিক নিয়ম , প্রথা , ঐতিহ্য , লোকাচার - ইত্যাদির মাধ্যমে। কিন্তু প্রতিটি সংঘের নির্দিষ্ট লিখিত নিয়ম বিধি থাকে। এই নিয়ম বিধি দ্বারা সংঘ তার সদস্যদের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে। 

৯. স্বয়ংসম্পূর্ণতার দিক দিয়ে :- 
জনসম্প্রদায়গুলি সংঘের তুলনায় অনেক বেশি স্বয়ংসম্পূর্ণ। জনসম্প্রদায়গুলি মোটামুটি স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে সদস্যদের চাহিদা পূরণ করে থাকে। কিন্তু সংঘগুলি কোনোভাবেই স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। উদ্দেশ্যপূরণের জন্য প্রতিটি সংঘ পরস্পরের উপর নির্ভরশীল ও পক্ষান্তরে জনসম্প্রদায়ের উপর নির্ভরশীল। 

১০. সদস্যসংখ্যা ও অর্থনৈতিক বিষয় :-  
জনসম্প্রদায়ের সদস্যসংখ্যা সংঘের তুলনায় অনেক বেশি হয়। সংঘের ক্ষেত্রে সদস্যপদ গ্রহণ , সদস্যপদ পুনর্নবীকরণ , বিভিন্ন ফি বা চাঁদা - ইত্যাদি বিষয় জড়িত থাকে। তবে , জনসম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে উক্ত বিষয়গুলির কোনো অস্তিত্ত্ব থাকেনা। জনসম্প্রদায়ের সদস্যপদ স্বাভাবিক ও বংশগতভাবে তার ধারা প্রবাহিত হয়। 

You May Also Like

0 comments