পরিবারের কার্যাবলিগুলি আলোচনা কর।

by - May 16, 2022

পরিবারের কার্যাবলিগুলি আলোচনা কর। 

পরিবারের অপরিহার্য কার্যাবলীগুলি কী কী ? 

Duties of Family . ( In Bengali ) . 




পরিবারের কার্যাবলি :- 


পরিবারের কার্যাবলিগুলিকে দুইভাগে ভাগ করা যায় ; যথা - অপরিহার্য কার্যাবলি ও অপরিহার্য নয় - এমন কার্যাবলি। 

পরিবারের অপরিহার্য কার্যাবলি :- 


১. যৌন চাহিদার পরিতৃপ্তি :- পরিবারের মধ্যে নর - নারী তথা স্বামী - স্ত্রী -র যৌন চাহিদার বৈধ পরিতৃপ্তি সাধন ঘটে। প্রতিটি সমাজেই প্রায় প্রতিটি নর - নারীর যৌন চাহিদার পরিতৃপ্তি সাধনের ক্ষেত্রে এই সামাজিক নিয়ম প্রচলিত। এই সামাজিক নিয়ম নর নারীর সম্পর্ককে বৈধতা প্রদান করে এবং সমাজে ব্যাভিচার , যৌন সম্পর্কের বিশৃঙ্খলা - ইত্যাদি দূর করে সমাজকে সুশৃঙ্খল পথে পরিচালিত করতে সাহায্য করে। 

২. সন্তান প্রজনন ও প্রতিপালন :- পরিবারের একটি অন্যতম প্রধান গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল - সন্তান প্রজনন ও সন্তান প্রতিপালন। পরিবার জন্ম নেওয়া প্রতিটি শিশুকে বৈধতা প্রদান করে। তার সঙ্গে সঙ্গে মাতা ও পিতার বৈধ অধিকার প্রতিষ্ঠা করে। এর সঙ্গে সঙ্গে সন্তান প্রতিপালন করা পরিবারের অন্যতম কর্তব্য। জন্ম থেকে স্বাবলম্বী হওয়া পর্যন্ত প্রতিটি শিশুকে প্রতিপালন করে পরিবার তাকে ভবিষ্যৎ সমাজ জীবনের উপযুক্ত করে তোলে। 


৩. সামাজিকীকরণ :- পরিবারের একটি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল সামাজিকীকরণ সংগঠন। মানব শিশুর সামাজিকীকরণের প্রধান ক্ষেত্র হল পরিবার। ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকে শিশু সমাজের সঙ্গে একীভূত হওয়ার অনুশীলনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে পরিবারের মধ্যেই। পরিবার প্রতিটি শিশুর সামাজিকীকরণ ঘটিয়ে তাকে সমাজের নিয়ম - বিধি , আচার আচরণগুলির সঙ্গে পরিচিত করে তোলে। তাই সামাজিকীকরণের একটি প্রধান মাধ্যম হল পরিবার। 

৪. অর্থনৈতিক দায়ভার প্রতিপালন :-  প্রতিটি পরিবারের সকল সদস্যদের ভরণ পোষণের জন্য অর্থের প্রয়োজন হয়। পরিবারের উপার্জনকারী সদস্যগণ পরিবারের সকল সদস্যদের অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা বিধান করেন। বর্তমানে পরিবারের অর্থনৈতিক ভূমিকার পরিবর্তন ঘটেছে। ইতিপূর্বে শুধুমাত্র পরিবারের পুরুষ সদস্যরাই অর্থনৈতিক উৎপাদনশীলতার সঙ্গে যুক্ত থাকতেন ; কিন্তু বর্তমানে পুরুষদের সঙ্গে সঙ্গে নারীরাও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করেন। 

৫. দৈহিক ও মানসিক নিরাপত্তা প্রদান :- পরিবার তার প্রতিটি সদস্যের দৈহিক ও মানসিক নিরাপত্তা বিধানের কাজ করে। তাই পরিবারের সদস্যগণ পরিবারের অভ্যন্তরে স্বাচ্ছন্দ্য উপলব্ধি করে। পরিবারের প্রতিটি সদস্যগণ মনে প্রাণে বিশ্বাস করে যে সে পরিবারের মধ্যে নিরাপদ। এই নিরাপত্তার আশ্বাস পরিবারের সদস্যদের স্বাভাবিক বিকাশে সহায়তা করে। 

৬. সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা :- প্রতিটি ব্যক্তির প্রাথমিক পরিচয় ও সামাজিক মর্যাদা নির্ধারিত হয় তার পরিবারের সামাজিক অবস্থান ও ভূমিকাকে কেন্দ্র করে। ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব গঠন , শিক্ষালাভ , অর্থনৈতিক কর্মকান্ড - প্রতিটি ক্ষেত্রেই পরিবার ব্যক্তির উপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব বিস্তার করে থাকে। পরিবারের মধ্যেই প্রতিটি ব্যক্তির সামাজিক স্তরবিন্যাসের মর্যাদা সিঁড়ি নির্ধারিত হয়। 

৭. অন্যান্য অপরিহার্য ভূমিকা :- পরিবারের অন্যান্য অপরিহার্য কার্যাবলিগুলি হল - নির্দিষ্ট বাসস্থানের ব্যবস্থা করা , খাদ্যের সংস্থান করা , পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্যের নিরাপত্তাবিধান করা , স্নেহ - মায়া - মমতা - ভালোবাসা - ইত্যাদি মানবিক গুণগুলির বিকাশ , পারিবারিক ঐক্য বজায় রাখা - ইত্যাদি। 


অপরিহার্য নয় - এমন কার্যাবলি :- 

১. ধর্মীয় বিশ্বাস ও রীতিনীতির ধারক ও বাহক :- প্রতিটি পরিবার তার সদস্যদের মধ্যে ধর্মবিশ্বাস ও ধর্মীয় রীতিনীতির বিকাশ ঘটায়। পরিবারের মধ্যে অনুষ্ঠিত নানাবিধ ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগদানের মাধ্যমে পরিবার তার সদস্যদের মধ্যে ধর্মভাব জাগিয়ে তোলে। পরিবার থেকেই প্রতিটি শিশু ধর্ম সম্পর্কে জ্ঞান , পাপ - পুণ্যের জ্ঞান , বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থের জ্ঞান , দেব - দেবী সম্পর্কে বিশ্বাস - ইত্যাদি লাভ করে। 

২. সদস্যদের শিক্ষার ব্যবস্থা :- প্রতিটি শিশুর প্রথম বিদ্যালয় হল তার পরিবার এবং তার প্রথম শিক্ষক হলেন তার মা। পরিপারে জন্মানো প্রতিটি শিশুর শিক্ষার ব্যবস্থা করে পরিবার। একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে প্রারম্ভিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা , পরবর্তীকালে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষার সঙ্গে শিশুর পরিচয় ঘটিয়ে দেওয়া পরিবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এছাড়াও পরিবারের সদস্যদের জন্য বৃত্তমূলক ধারণা ও পথনির্দেশ প্রদান করে পরিবার। 

৩. মানসিক ও জৈবিক আকাঙ্খার পরিতৃপ্তিসাধন :- পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন ধরনের মানসিক চাহিদা থাকে ; যেমন - সেবা লাভ করা , খাদ্য প্রাপ্তি করা , যৌনতা চরিতার্থ করা - ইত্যাদি। পরিবার তার সকল সদস্যদের জন্য বিভিন্ন প্রকার মানসিক ও জৈবিক চাহিদার পরিতৃপ্তি সাধন করে। মানসিক ও জৈবিক চাহিদাগুলি পূরণের মাধ্যমে ব্যক্তির পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটে। 

৪. সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও সঞ্চালন :- পরিবারের মধ্যে জাতি ও সমাজের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সংরক্ষণ ঘটে এবং তা পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে সঞ্চালিত হয়। একটি প্রজন্ম তার পূর্ববর্তী প্রজন্মের কাছ থেকে সংস্কৃতির ধারণা লাভ করে এবং পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে সঞ্চালিত করে। এইভাবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সংরক্ষিত ও সঞ্চালিত হয়। 

৫. সম্পত্তি সংক্রান্ত ভূমিকা :- পরিবার তার অধীনস্থ সম্পত্তির সংরক্ষণ করে এবং তার বিকাশের প্রয়াস করতে থাকে। এছাড়া , পরিবার তার সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হিসাবে তার উত্তরাধিকারীদের নির্বাচিত করে। এক প্রজন্ম থেকে অপর এক প্রজন্মে সম্পত্তির উত্তরাধিকারের ক্ষমতা হস্তান্তরিত হতে থাকে। এইভাবে সমাজে পরিবারের মাধ্যমেই ব্যক্তিগত সম্পত্তির সুশৃঙ্খল বিন্যাস ঘটে। 

৬. সামাজিক নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত ভূমিকা : - পরিবারের কার্যাবলী সামাজিক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও পরিব্যাপ্ত। সমাজের প্রচলিত রীতিনীতি , আদর্শ - ইত্যাদি চর্চার মাধ্যমে পরিবার ব্যক্তিস্বার্থকে সমষ্টিস্বার্থে রূপান্তরিত করে। পরিবার তার সদস্যদের সমাজ ও প্রতিষ্ঠান বিরোধী কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে। পরিবার তার সদস্যদেরকে সমাজের কাম্য রীতিনীতি মেনে চলতে অনুপ্রাণিত করে। এইভাবে পরিবার সামাজিক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

পরিশেষে বলা যায় , বর্তমানে পরিবারের পরিবারের কার্যাবলিগুলির গঠনমূলক পরিবর্তন এসেছে। পরিবারের বিভিন্ন কাজগুলি বর্তমানে বিভিন্ন সামাজিক সংস্থার অধীনস্থ হয়েছে। পারিবারিক সমষ্টিগত স্বার্থের উর্দ্ধে ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদ ক্রমশঃ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। কিন্তু তবুও বলা যায় , সমাজে পরিবারের বিকল্প অন্য কোনো কিছু হতে পারেনা। কেননা শিশুর জন্ম , প্রতিপালন - ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বগুলি পরিবার ছাড়া অন্য কোনো সামাজিক সংগঠনের পক্ষে সম্ভব নয়।   

 

You May Also Like

0 comments