নির্দেশনার সংজ্ঞা ও পরিধি।

by - May 20, 2022

নির্দেশনার সংজ্ঞা ও পরিধি। 

নির্দেশনা কী ? নির্দেশনার পরিধি আলোচনা কর। 

নির্দেশনার সংজ্ঞা দাও। নির্দেশনার পরিধি আলোচনা কর। 

Definition and Scope of Guidance . ( In Bengali ) .




নির্দেশনার সংজ্ঞা :- 

নির্দেশনা শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ Guidance কথাটির উৎপত্তি ইংরেজি Guide শব্দ থেকে ; যার অর্থ পথপ্রদর্শন করা। পথপ্রদর্শন কথাটি দুইভাবে প্রযুক্ত হতে পারে - নির্দেশ দান করা ও পরিচালনা করা। তবে বিভিন্ন শিক্ষাবিদরা নির্দেশনা শব্দটিকে ভিন্ন ভিন্ন অর্থে প্রয়োগ করেছেন ; যেমন - নির্বাচন করা , সাহায্য করা , পরিচালনা করা , এগিয়ে নিয়ে যাওয়া , নির্দেশ দান , লক্ষ্য স্থির করা - ইত্যাদি। 


মনোবিদ জোনস বলেছেন - কোনো ব্যক্তির জীবনে এগিয়ে যাওয়ার পথে , লক্ষ্য নির্ধারণে , অভিযোজন ও সমস্যা সমাধানে যখন তিনি অপর কোনো ব্যক্তি দ্বারা সাহায্যপ্রাপ্ত হন - তখন তাকে নির্দেশনা বলা যায়। 

এরিকসন নির্দেশনা বলতে বুঝিয়েছেন - নির্দেশনা এমন এক ধরণের প্রক্রিয়া যার সাহায্যে ব্যক্তি ভবিষ্যতের পথ নির্দেশ প্রাপ্ত হন , লক্ষ্য নির্ধারণ করেন , সামাজিক চাহিদা - আগ্রহ - প্রবণতা - ইত্যাদির মাধ্যমে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। 

মনোবিদ ক্রো ( Crow ) বলেছেন - একজন ব্যক্তি নিজের জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করতে , নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি গঠন করতে , সমস্যামূলক পরিস্থিতিকে উপলব্ধি করতে এবং তার সমাধান করতে , বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে যখন কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পরামর্শ ও সাহায্য প্রাপ্ত হন - তখন তাকে বলে নির্দেশনা। 

রুথক্লোন বলেছেন - নির্দেশনা একটি প্রক্রিয়া যার সাহায্যে একজন ব্যক্তি নিজের ভেতর লুকিয়ে থাকা প্রতিভা , সম্ভাবনা - ইত্যাদি বিষয়গুলিকে খুঁজে বের করে নিজের এবং অপরের সমস্যা সমাধানের জন্য প্রচেষ্টা করে। 

সুতরাং নির্দেশনা হল - নির্দেশনা হল এমন এক প্রক্রিয়া যার সাহায্যে ব্যক্তি নিজের জীবন পরিচালনা করতে , লক্ষ্য নির্ধারণ করতে , নিজ সম্ভাবনা খুঁজে বের করতে এবং উপযোগিতা বৃদ্বি করতে পারে এবং নিজ আগ্রহ , কৌতূহল , সামর্থ্য - ইত্যাদির ভিত্তিতে নিজের জীবনকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারে। নির্দেশনা ব্যক্তিকে প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশের সাথে অভিযোজন ঘটিয়ে সার্থক জীবন যাপনের উপযোগী করে তোলে। 


নির্দেশনার পরিধি :- 


নির্দেশনা ব্যক্তি জীবনের কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত নয় ; জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রের সঙ্গে নির্দেশনা সম্পর্কযুক্ত। বর্তমানে নির্দেশনা কেবলমাত্র শিক্ষা ও বৃত্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে জীবনের সর্বক্ষেত্রে - শিল্প , বাণিজ্য , রাজনীতি , আন্তর্জাতিক সম্পর্ক , সামাজিক সমস্যার সমাধান - ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে নির্দেশনার প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। তাই বলা যেতে পারে নির্দেশনা হল বহুমুখী। আধুনিক জীবনযাপনে সমস্যা যত বৃদ্ধি পাচ্ছে , নির্দেশনার পরিধিও সেই অনুপাতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। নির্দেশনার পরিধির বিভিন্ন দিক নীচে আলোচনা করা হল। 

১. শিক্ষাক্ষেত্রে নির্দেশনা :- 
বর্তমান যুগে শিক্ষাক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকতার নীতি গৃহীত হয়েছে। পাঠক্রম , শিক্ষক শিক্ষন , শিক্ষন প্রক্রিয়া - ইত্যাদি বিষয়গুলির পরিধি বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে বিভিন্ন জটিল ও আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি ও সূত্র প্রয়োগ করা হচ্ছে। ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে নির্দেশনার পরিধি বর্তমানে বহুগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। আধুনিক শিক্ষাচিন্তাকে সাফল্যের সঙ্গে কার্যকর করতে নির্দেশনা উক্ত বিষয়গুলির সঙ্গে শিক্ষার্থীর পরিচয় ঘটায় ও বিষয়ের সঙ্গে সার্থকভাবে তাদের অভিযোজন ঘটায়। 

২. বৃত্তিগত ক্ষেত্রে নির্দেশনা :- 
বর্তমানে বৃত্তিগত ক্ষেত্রে বৈচিত্রময় সম্ভাবনা ও প্রতিযোগিতা তৈরী হয়েছে। পেশাগত ক্ষেত্রে দ্রুত পরিবর্তনশীলতা , নতুন ধরণের পেশার উৎপত্তি ও পুরোনো বহু ধরণের পেশার অবলুপ্তি - ইত্যাদি বিষয়গুলি বৃত্তিগত ক্ষেত্রে লক্ষণীয়। বৃত্তিগত ক্ষেত্রে যথার্থ নির্দেশনা একজন শিক্ষার্থীকে পরিবর্তনশীল বৃত্তিজগতের সাথে পরিচয় ঘটাতে সাহায্য করে এবং বৃত্তির সাথে তার সার্থক অভিযোজন ঘটায়। 

৩. অবসরযাপন কালীন নির্দেশনা :- 
অবসরযাপন ব্যক্তিজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। ব্যক্তির অবসরযাপন যদি গঠনমূলক , ইতিবাচক ও শিক্ষামূলক হয় - তাহলে তা ব্যক্তিজীবনে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। নির্দেশনা ব্যক্তিকে অবসরযাপন সংক্রান্ত নির্দেশনা প্রদান করে তার জীবন গঠনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। তাই অবসরযাপনকালীন নির্দেশনা - নির্দেশনার পরিধিভুক্ত। 

৪. ব্যক্তিত্বের বিকাশসাধনে নির্দেশনা :- 
প্রতিটি ব্যক্তির মধ্যে লুকিয়ে থাকে কিছু অন্তর্নিহিত সম্ভাবনা। নির্দেশনা ব্যক্তির মধ্যে লুকিয়ে থাকা সম্ভাবনাগুলির সঙ্গে ব্যক্তির পরিচয় ঘটায় এবং সেইমত তাকে অভিযোজনে সাহায্য করে। তাই ব্যক্তিত্বের বিকাশ সাধন নির্দেশনার পরিধির অন্তর্ভুক্ত। 

৫. স্বাস্থ্যক্ষেত্রে নির্দেশনা :- 
দৈহিক ও মানসিক স্বাস্থ্য প্রতিটি ব্যক্তির সার্থক অভিযোজনের ক্ষেত্রে অপরিহার্য। তাই ব্যক্তির দৈহিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি বর্তমানে নির্দেশনার পরিধির অন্তর্ভুক্ত। নির্দেশনার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি সফল স্বাস্থ্যের অধিকারী হয়ে সমাজ জীবনে সার্থকভাবে অভিযোজন ঘটাতে পারে। 


৬. সমস্যা সমাধান সংক্রান্ত নির্দেশনা :- 
ব্যক্তিজীবন সমস্যাবহুল। ব্যক্তির কর্তব্য হল সমস্যাগুলিকে যথাযথভাবে উপলব্ধি করে তার সমাধানে সহায়ক আচরণে প্রবৃত্ত হওয়া। এইজন্য সমস্যা সমাধানের বিভিন্ন কৌশলগুলি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা আবশ্যক। নির্দেশনার মাধ্যমে ব্যক্তি সমস্যাগুলিকে উপলব্ধি করে তার সমাধানের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে পারে। তাই সমস্যা সমাধান সংক্রান্ত বিষয় নির্দেশনার পরিধির অন্তর্ভুক্ত। 

৭. সামাজিক ক্ষেত্রে নির্দেশনা :- 
পারস্পরিক সামাজিক মেলামেশা , সামাজিক আদান - প্রদান , সামাজিক সম্পর্কের বিন্যাস , আত্মীয়তার বন্ধন ও বন্ধুত্ব , সামাজিক পরিষেবামূলক কর্মসূচিগুলিতে অংশগ্রহণ , উৎপাদনশীলতার সঙ্গে যুক্ত হওয়া - ইত্যাদি বিভিন্ন সামাজিক বিষয়গুলি নির্দেশনার পরিধির অন্তর্ভুক্ত। 

৮. বার্ধক্য নির্দেশনা :- 
জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ব্যক্তির নির্দেশনা প্রয়োজন। বার্ধক্যে উপনীত হওয়া ব্যক্তিদের কর্মক্ষমতা ও উৎপাদনশীলতা হ্রাস পায় ; কিন্তু তার সঙ্গে বহুবিধ সমস্যা বার্ধক্য জীবনের অঙ্গীভূত হয়। এই পরিস্থিতিতে বার্ধক্য নির্দেশনা ব্যক্তিকে বার্ধক্যের সমস্যাগুলি কাটিয়ে উঠে তুলনামূলক স্বাচ্ছন্দময় জীবন যাপনের উপযুক্ত করে তোলে। তাই বার্ধক্য সংক্রান্ত বিষয়গুলি নির্দেশনার পরিধির অন্তর্ভুক্ত। 

পরিশেষে বলা যায় , নির্দেশনার পরিধি বর্তমানে জীবনের সর্বক্ষেত্রে বৃদ্ধি পেয়েছে। গতিশীল সময়ের বিবর্তনের সাথে সাথে অভিযোজন ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়তার পরিবর্তন ঘটে। ফলে নির্দেশনার পরিধিও পরিবর্তনশীল। 


You May Also Like

0 comments