Pages

Powered by Blogger.
1ST SEMESTER SUGGESTION 2 ND YEAR SUGGESTION 2ND SEMESTER 3RD SEMESTER BENGALI NOTES CU suggestion. EDUCATION NOTES ENGLISH COMPULSORY GBU Suggestion. HISTORY EUROPE & WORLD HISTORY NOTES POL SC NOTES SOCIOLOGY NOTES WBCS 2020

NANDAN DUTTA

A new approach for exam notes .

ভারতে নিরক্ষরতার কারণগুলি আলোচনা কর। 

ভারতে নিরক্ষরতার জন্য দায়ী উপাদানগুলি সম্পর্কে লেখ। 

Causes of  Illiteracy in India . ( In Bengali ) .




ভারতে নিরক্ষরতার কারণ :- 


ভারতে নিরক্ষরতার বিষয়টি একটি অন্যতম সামাজিক সমস্যা। স্বাধীনোত্তর ভারতে নিরক্ষরতা দূরীকরণের জন্য বহু পদক্ষেপ ও কর্মসূচি গৃহীত হলেও ভারত আজও নিরক্ষরতার সমস্যায় জর্জরিত। ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী ভারতে সাক্ষরতার হার ৭৪.০৪ শতাংশ ; অর্থাৎ ২৫ শতাংশের বেশি মানুষ আজও নিরক্ষর। নিরক্ষরতা এমন একটি সামাজিক সমস্যা যা অন্যান্য বহুবিধ সামাজিক সমস্যার জন্ম দেয়। ভারতে নিরক্ষরতার কারণগুলি হল - 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

১. ব্রিটিশদের ভূমিকা :- ব্রিটিশরা ভারতে প্রায় ২০০ বছর রাজত্ব করে। এই সময়কালে তারা নিজেদের প্রশাসনিক স্বার্থে শিক্ষামূলক কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও গণশিক্ষা প্রসারের জন্য কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। শিক্ষা ছিল শহুরে শিক্ষিত ও মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ। ফলে গ্রামীণ ভারতের বিরাট সংখ্যক মানুষ সাক্ষরতার সুযোগ থেকে বহু দূরে ছিলেন। তাই স্বাধীনতা লাভের সময় জনগণের সিংহভাগই ছিলেন নিরক্ষর। 

২. ঐতিহাসিক পটভূমিকা :- সামান্য কিছু ব্যাতিক্রম বাদ দিলে ব্রিটিশদের পূর্বে সুলতানি ও মোগল যুগে প্রশাসকেরা ব্যাস্ত ছিলেন যুদ্ধ - বিগ্রহ , সাম্রাজ্য বিস্তার ও সামরিক উন্নয়নের দিকে দৃষ্টি দিয়ে। কিছু ক্ষেত্রে মক্তব , মাদ্রাসা ও হিন্দু শিক্ষার প্রচলন থাকলেও তা সামগ্রিক জনগণের প্রয়োজনের নিরিখে ছিল নিতান্তই নগন্য। প্রায় ৬০০ বছর ধরে চলা ইসলামি শাসন ছিল ভারতের শিক্ষা ক্ষেত্রে এক অন্ধকার যুগ। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৩. বর্ণভেদ ও জাতিভেদের প্রভাব :- ভারতে চিরাচরিতভাবে বর্ণভেদ ও জাতিভেদ প্রথা প্রচলিত ছিল। এই প্রথা অনুসারে সমাজের নিচু বর্ণভুক্ত মানুষেরা শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল। কয়েক হাজার বছর ধরে চলা বর্ণভেদ ও জাতিভেদ প্রথা এক বিরাট অংশের মানুষকে নিরক্ষর থাকতে বাধ্য করেছিল। 

৪. জনবিস্ফোরণ :- ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী ভারতের জনসংখ্যা ১২১ কোটি ছাড়িয়ে গেছে এবং প্রতি বছর অস্ট্রেলিয়ার মোট জনসংখ্যার সমসংখ্যক জনসংখ্যা ভারতে জন্ম নিচ্ছে। এই বিপুল সংখ্যক জনসংখ্যার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়ে তোলা এখনো সম্ভব হয়নি। 

৫. অর্থনৈতিক কারণ :- ভারতের বহু সংখ্যক মানুষ দারিদ্র সীমার নীচে বসবাস করেন। এছাড়াও ভারতে মাথাপিছু গড় আয় অত্যন্ত কম। এই সকল মানুষদের ক্ষেত্রে শিক্ষা গ্রহণের তুলনায় রুজি - রোজগার ও বৃত্তিমূলক কর্মে অংশগ্রহণ করা অধিক প্রয়োজনীয় বলে বিবেচিত হয়। তাই সর্বজনীন শিক্ষার জন্য বহুবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও আশানুরূপ সফলতা অর্জন করা সম্ভব হয়নি। 

৬. বিভিন্ন শিক্ষা কর্মসূচির ব্যর্থতা :- ভারতে সাক্ষরতার প্রসারের লক্ষ্যে বহুবিধ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। যেমন - অপারেশন ব্ল্যাকবোর্ড , জাতীয় সাক্ষরতা মিশন , সর্বশিক্ষা অভিযান - ইত্যাদি। এই সকল কর্মসূচীগুলি গ্রহণ করা হলেও কোনো কর্মসূচিই সম্পূর্ণ সফলতা অর্জন করতে পারেনি। বহু ক্ষেত্রেই কর্মসূচীগুলি শুধুমাত্র খাতায় - কলমে থেকে গেছে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৭. অর্থ - বরাদ্দের অভাব :- ভারত সর্বজনীন শিক্ষার বিস্তারের ক্ষেত্রে খুব সামান্য অর্থ বরাদ্দ করে - জাতীয় আয়ের মাত্র ৩ শতাংশ। বিভিন্ন পিছিয়ে পড়া ও উন্নয়নশীল দেশগুলিও শিক্ষা খাতে জাতীয় আয়ের ৬ শতাংশ ব্যয় করে। এমনকি , নেপাল , শ্রীলংকা , বাংলাদেশ - এইসকল পিছিয়ে পড়া দেশগুলিও শিক্ষাখাতে ৩ শতাংশের বেশি ব্যয় করে। 

৮. বয়স্ক শিক্ষার অভাব :- ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়স্ক যেসকল ব্যক্তি শিক্ষা গ্রহণ থেকে বিরত আছেন - তাদের বয়স্ক বলে। ভারতে প্রাথমিক শিক্ষা বিস্তারে বহু পদক্ষেপ ও কর্মসূচি গ্রহণ করা হলেও বয়স্ক শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। যদিও ১৯৭৮ সালে জাতীয় বয়স্ক শিক্ষা কর্মসূচি বা NAEP গ্রহণ করা হলেও - সেই কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে উদাসীনতা , বয়স্কদের অসহযোগিতা লক্ষ্য করা গেছে। 

৯. সুচিন্তিত পরিকল্পনার অভাব :- স্বাধীন ভারতে একের পর এক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলেও - সেগুলি কতটা বিজ্ঞানসম্মত ও সুচিন্তিত ছিল - তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে। প্রতিটি কর্মসূচি রূপায়িত হওয়ার এক দশকের মধ্যে তা সমালোচিত হয়েছে। একটি শিক্ষা নীতির ভুল সংশোধনের জন্য আরেকটি শিক্ষা নীতি গৃহীত হয়েছে। ফলে শিক্ষা কর্মসূচীগুলি সার্থকভাবে কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। 

১০. মানুষের সার্বিক সচেতনতার অভাব :- ভারতের এক বিরাট অংকের মানুষ নিরক্ষর। এইসকল নিরক্ষর মানুষেরা অনেক সময় সাক্ষরতার সুফল সম্পর্কে অবহিত থাকেন না। শিক্ষা যে মানুষের জন্মগত অধিকার - সে বিষয়েও তারা অসচেতন। সার্থক জীবন যাত্রার জন্য শিক্ষা যে কতটা অপরিহার্য তা তারা অনুভব করতে পারেন না। ফলে মানুষের সচেতনতার অভাব ভারতে নিরক্ষরতার একটি অন্যতম কারণ। 

১১. নারীশিক্ষার অভাব :- ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী ভারতে নারীশিক্ষার হার মাত্র ৬৫.৪৬ শতাংশ। অর্থাৎ প্রায় ৩৫ শতাংশ নারী নিরক্ষর। নারীশিক্ষার এই করুন চিত্র ভারতের সাক্ষরতা বিকাশের পক্ষে একটি বড় বাধা। বহুদিন যাবৎ নারীদের শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছিল। বর্তমানেও বহু সংখ্যক নারীকে কেবলমাত্র বিবাহের উদ্দেশ্যে শিক্ষা প্রদান করা হয়। উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে বহু নারীকে আজও বঞ্চিত রাখা হয়। 

১২. উপকরণ ও পরিকাঠামোর অভাব :- সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা কার্যকর করতে যে পরিমান উপকরণ ও পরিকাঠামো প্রয়োজন - তার ঘাটতি রয়েছে। বেশিরভাগ বিদ্যালয়গুলিতেই প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি ছাত্রসংখ্যা রয়েছে। এর ফলে যথার্থ পঠন - পাঠন ব্যাহত হচ্ছে। উপযুক্ত শ্রেণীকক্ষ , পুস্তক , প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত শিক্ষকের অভাব - ইত্যাদি শিক্ষার ধারাকে ব্যাহত করছে। 

পরিশেষে বলা যায় , ভারতের মত জনবহুল দেশে প্রকৃত অর্থে নিরক্ষরতা দূর করতে হলে রাজনৈতিক সদিচ্ছা , কার্যকর নীতি প্রণয়ন , যথেষ্ট আর্থিক বরাদ্দ এবং জনগণের মধ্যে সচেতনতা বিস্তারের প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক শিক্ষানীতি গুলির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এবং ভারতীয় সমস্যার বাস্তবতার বিচারে পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।   

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো
                      

Share
Tweet
Pin
Share
No comments

ভারতে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ ও কর্মসূচি। 

Various measures and programs taken for population control in India. ( In Bengali ) .




ভারতে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ ও কর্মসূচি। 


স্বাধীনতার পূর্বে ও বিশেষ করে স্বাধীনতার পর ভারতের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গৃহীত হয়। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য গৃহীত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কর্মসূচি সম্পর্কে নীচে আলোচনা করা হল। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

১. পরিবার পরিকল্পনা ( ১৯৫২ ) :- 

১৯৫২ সালে Population Policy Committee গঠিত হয় এবং এটি একটি পৃথক দপ্তর হিসাবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি লাভ করে। এটি মূলতঃ কেন্দ্রের সাহায্যপ্রাপ্ত রাজ্যের অধীনস্থ একটি সংস্থা। এই পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলি হল - 
(i) প্রতিটি জনসম্প্রদায়ের স্বাস্থ্য উন্নতির জন্য একটি করে স্বাস্থ্যকেন্দ্র। 
(ii) প্রতি দশ হাজার জনসংখ্যার জন্য একটি করে উপ - স্বাস্থ্যকেন্দ্র। 
(iii) কর্মী এবং উপকরণ তৈরির জন্য বিভিন্ন বাধা এবং অভাবকে চিহ্নিত করা। 
(iv) প্রতিটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বার্ষিক ১২০০০ টাকার এবং প্রতিটি উপ - স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বার্ষিক ২০০০ টাকার ঔষধের বন্দোবস্ত করা। 
(v) প্রতি চারটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মধ্যে একটিকে ৩০ শয্যাযুক্ত গ্রামীণ হাসপাতালে পরিণত করা 
(vi) পরিবার কল্যাণ সংক্রান্ত কর্মসূচিগুলিকে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে উপনীত করা। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

২. জাতীয় জনসংখ্যা নীতি ১৯৭৬ ( National Population Policy 1976 ) :- 

১৯৭৬ সালে জাতীয় জনসংখ্যা নীতি গৃহীত হয়। এই জনসংখ্যা নীতির উল্লেখযোগ্য দিকগুলি হল - 
(i) প্রতিটি পরিবারের প্রতিটি সদস্যের স্বাস্থ্য কল্যাণ ও বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান। 
(ii) বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের স্বাস্থ্য ও শিক্ষা সংক্রান্ত বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ। 
(iii) নারীশিক্ষার প্রসারের জন্য সরকরি ও বেসরকারি - উভয় উদ্যোগকে স্বাগত জানানো। 
(iv) মহিলাদের বিবাহের ন্যূনতম বয়স ১৮ ও পুরুষদের ২১ বছর ধার্য করা। 
(v) জনসংখ্যার সার্বিক উন্নয়নের জন্য নীতি নির্ধারণ , শুল্ক সংস্কার এবং উপযুক্ত অনুদানের ব্যবস্থা করা। 
(vi) রাজ্যস্তরে পরিবার পরিকল্পনাগুলি কতটা সাফল্য পাচ্ছে - তার উপর দৃষ্টি রেখে কেন্দ্রীয় সাহায্য ৯% বৃদ্ধি করা। 
(vii) জনসংখ্যার সার্বিক বিকাশের জন্য শিক্ষার প্রয়োজন। তাই সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষার বিস্তারের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া। 
(viii) জনসংখ্যা নীতির বাস্তবায়নের জন্য এবং জনসংখ্যা নীতি সম্পর্কে জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রচার মাধ্যমগুলিকে সর্বোচ্চ পরিমাণে ব্যবহার করা। 
(ix) পরিবার পরিকল্পনা নীতি যথার্থভাবে কার্যকর করতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলিকে কাজে লাগানো এবং তাদের যেকোনো ধরণের উদ্যোগকে স্বাগত জানানো। 
(x) যে সকল সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান জনসংখ্যা নীতিকে কার্যকর করতে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করে - তাদের ব্যবহৃত অর্থের উপর সম্পূর্ণ শুল্ক - ছাড়। 
(xi) জনন সংক্রান্ত বিদ্যা ও গর্ভনিরোধক সম্পর্কিত গবেষণার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ।(xii) সরকারের সমস্ত বিভাগ ও দপ্তরগুলিকে পরিবার পরিকল্পনা কার্যকর করতে কাজে লাগানো। 
(xiii) কেন্দ্রীয় মন্ত্রণালয় দ্বারা রাজ্য ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলিকে উপযুক্ত পরামর্শ ও সাহায্য প্রদান করা। 
(xiv) দুটি সন্তানের জন্মের পর বন্ধ্যাকরণের বিষয়টি সম্পর্কে জনগণকে উৎসাহিত করা।
(xv) ডাক্তার , নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৩. জাতীয় জনসংখ্যা নীতি ২০০০ ( National Population Policy 2000 ) :- 

২০০০ সালে পুনরায় ঘোষিত হয় জাতীয় জনসংখ্যা নীতি। ১৯৭৬ সালের জনসংখ্যা নীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে ২০০০ সালের জনসংখ্যা নীতিতে আরো কয়েকটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বিষয়গুলি হল - 
(i) শিশু স্বাস্থ্য পরিকাঠামো উন্নয়ন ঘটানো। 
(ii) ১৪ বছর পর্যন্ত শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা। 
(iii) সকলের জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবার ব্যবস্থা করা। 
(iv) শিশু মৃত্যু হার প্রতি হাজারে ৩০ এর নীচে নামিয়ে আনা। 
(v) গর্ভনিরোধক ব্যবস্থাগুলি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। 
(vi) সন্তান প্রসব বিষয়টি স্বাস্থ্য কেন্দ্র বা প্রশিক্ষিত কর্মীদের মাধ্যমে সংঘঠিত হয় - তার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি। 
(vii) প্রতিটি শিশুর টীকাকরণ সুনিশ্চিত করা। 
(viii) জন্ম - মৃত্যু - টীকাকরণ - ইত্যাদি বিষয়গুলি নথিভুক্তিকরণ। 

পরিশেষে বলা যায় , জনসংখ্যা নীতিকে সফল করতে গেলে এবং কার্যকরভাবে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে হলে সরকারি কর্মসূচীর সঙ্গে সঙ্গে জনগণকেও সদর্থক ভূমিকা পালন করতে হবে। এ বিষয়ে - জনসাধারণের ইতিবাচক ভূমিকা , সচেতনতা ও শিক্ষার বিস্তার হল একমাত্র পথ।  

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

Share
Tweet
Pin
Share
No comments

ভারতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ। 

ভারতে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ। 

ভারতে জনবিস্ফোরণের কারণ। 

The reason for the rapid population growth in India. ( In Bengali ) . 




ভারতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ :- 


কোনো একটি দেশের সার্বিক জনগণের উপস্থিতিকে সংখ্যাতত্ত্বের পরিভাষায় জনসংখ্যা হিসাবে ধরা হয়। জনসংখ্যা প্রতিটি দেশের সম্পদ। কিন্তু ভারতে যেভাবে দ্রুত হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি ঘটছে তা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। ভারতে প্রতি বছর জনসংখ্যা বৃদ্ধির পরিমাণ গোটা অস্ট্রেলিয়ার মোট জনসংখ্যার সমান। পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ১৬% চাপ ভারত একাই বহন করে। অথচ রাশিয়া ভারতের চেয়ে ১৩ গুণ বড় হয়েও বিশ্ব জনসংখ্যার মাত্র ৩% ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের চেয়ে আকৃতিতে ৭ গুণ বড় হয়েও বিশ্ব জনসংখ্যার মাত্র ৫% চাপ বহন করে। ভারতে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণগুলি হল - 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

১. জন্মহার ও মৃত্যুহারের মধ্যে পার্থক্য :- 
১৯৯৩ সালের হিসাবে ভারতে জন্মহার ২৮.৭% এবং মৃত্যুহার ৯.৩%  । আবার ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী জন্মহার ২০.৯৭% কিন্তু মৃত্যুহার ৭.৪৮%  । জন্মহার ও মৃত্যুহারের মধ্যে এই বিরাট পার্থক্য থাকার জন্য ভারতের জনসংখ্যার মধ্যে ভারসাম্য বজায় থাকছে না। ফলে অত্যন্ত দ্রুত হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

২. যথার্থ পরিবার পরিকল্পনার অভাব :- 
ভারতে ১৯৭৬ সালে জাতীয় জনসংখ্যা নীতি ঘোষিত হলেও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের পক্ষে তা সর্বাংশে কার্যকর হয়নি। এমনকি একবিংশ শতকের শুরু পর্যন্তও ভারতীয়রা পরিবার পরিকল্পনার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারেনি। এর জন্য দায়ী মানুষের অসচেতনতা ও সরকারি ঔদাসীন্য। ফলে ২০১১ সালের জনগণনায় ভারতের জনসংখ্যা ১২১ কোটি ছাড়িয়ে যায়। বর্তমানে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁচেছে যে অতি দ্রুত পরিবার পরিকল্পনা নীতিকে বাস্তবায়ন না করতে পারলে ভারতে অর্থনীতি অচিরেই ধ্বংস হয়ে যাবে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৩. বাল্য বিবাহ :- 
বর্তমানে প্রচার ও সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে বাল্য বিবাহের হার কিছুটা কমলেও তা আজও প্রচলিত। আজও গোপনে প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে অবাধে বাল্য বিবাহের ঘটনা ঘটেই চলেছে। বাল্য বিবাহ ও অধিক পরিমাণে সন্তান ধারণের বিষয়টি সরাসরি সম্পর্কিত। প্রাপ্তবয়স্কা নারীর বয়স যত বাড়তে থাকে ততই তার সন্তান ধারণের ক্ষমতা কমতে থাকে। কিন্তু , বয়ঃসন্ধির পর থেকে প্রাপ্তবয়স্কার নীচে বিবাহ দিলে নারীর সন্তান ধারণের ক্ষমতা অতিমাত্রায় থাকে। যেহেতু ভারতীয় সমাজে মেয়েদের অল্প বয়সে বিবাহ দেওয়ার রীতি প্রচলিত - তাই স্বাভাবিকভাবেই জনসংখ্যা বৃদ্ধি ঘটেছে। 

৪. নিরক্ষরতা :- 
২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী ভারতের সাক্ষরতার হার ৭৪.০৪% ; অর্থাৎ ভারতে এখনো ২৫% এর বেশি মানুষ নিরক্ষর। এই বিপুল সংখ্যক মানুষ নিরক্ষর থাকার জন্য তারা পরিবার পরিকল্পনার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারেন না। অধিক পরিমাণে সন্তানের জন্ম দেওয়া কীভাবে তার শিশুর ভবিষ্যৎ ও জাতীয় সমাজ ও অর্থনীতির ক্ষতি করে - সে সম্পর্কে তারা অবগত হতে পারেন না। 

৫. নারী শিক্ষার অভাব :- 
২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী মাত্র ৬৫.৪৬% নারী সাক্ষর। এই বিপুল পরিমাণ নিরক্ষরতা পরোক্ষভাবে ভারতে জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধির জন্য দায়ী। নিরক্ষর থাকার কারণে নারীরা একদিকে যেমন পরিবার পরিকল্পনার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারেন না ; তেমনই অন্যদিকে গর্ভনিরোধক পদ্ধতিগুলির ব্যবহার সম্পর্কেও তারা জানতে পারেন না। 

৬. বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক প্রভাব :- 
ভারতীয়দের মধ্যে পুত্রসন্তান অধিক কাম্য। তাই , অনেকসময় পুত্র সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে একাধিক সন্তানের জন্ম হয়। হিন্দুদের মধ্যে , বংশরক্ষার ক্ষেত্রে পুত্র সন্তান কাম্য। আবার মুসলিম সমাজে পরিবার পরিকল্পনা হল ধর্মবিরোধী। ঈশ্বর অবতার রূপে মাতৃগর্ভে জন্মগ্রহণ করবেন - এইরকম বিশ্বাস - বহু ক্ষেত্রে জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৭. গ্রামীণ সমাজে প্রচলিত যৌথ পরিবারতন্ত্রের প্রভাব :- 
একক পরিবার গুলিতে অধিক সংখ্যায় সন্তান প্রজনন ও তাদের লালন পালন একটি সমস্যা হলেও যৌথ পরিবারে এটি কোনো সমস্যা নয়। ভারতে স্বাধীনতার পরও বেশ কয়েক দশক ধরে গ্রামীণ এলাকায় যৌথ পরিবারের একাধিপত্য ছিল। বর্তমানে যৌথ পরিবারগুলোতে ভাঙন ধরলেও আজও ভারতের গ্রামীণ এলাকায় বহু যৌথ পরিবারের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। ভারতীয় যৌথ পরিবারগুলোতে অধিক পরিমাণে সন্তান প্রজননের মানসিকতা জনসংখ্যা বৃদ্ধির একটি অন্যতম কারণ। 

৮. ভারতীয় জলবায়ুর প্রভাব :- 
ভারতীয় জলবায়ু প্রধানতঃ উষ্ণ প্রকৃতির। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে যে অধিক উষ্ণ জলবায়ু নারীর গর্ভধারণের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে খুব অল্প বয়সেই নারীরা গর্ভ সঞ্চারের ক্ষমতা অর্জন করেন। ফলে , ভারতীয় জলবায়ু পক্ষান্তরে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সহায়ক। 

৯. গ্রামীণ জীবন যাত্রার প্রভাব :- 
ভারতে প্রায় ৮০ শতাংশ গ্রাম। গ্রামীণ জীবনে সচেতনতার অভাব , নিরক্ষরতা - ইত্যাদির কারণে পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে তাদের বিশেষ কোনো ধারণা থাকেনা। ছোট পরিবারের প্রয়োজনীয়তা তারা উপলব্ধি করতে পারেন না। 

উপরোক্ত কারণগুলি ছাড়াও আরো বহু বিষয় ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য দায়ী। যেমন - অতিরিক্ত দারিদ্রতার কারণে মানুষ মনে করেন অধিক সংখ্যায় সন্তানের জন্ম দিলে ভবিষ্যতে সেই সন্তানেরা দারিদ্রতা দূর করতে সক্ষম হবে। এছাড়াও , দরিদ্র পরিবারগুলির মধ্যে মনোরঞ্জনের অন্য কোনো উপায় না থাকায় যৌনতাকে মনোরঞ্জনের একমাত্র উপায় হিসাবে গ্রহণ করেন। তাছাড়াও ভারতে প্রচুর মানুষ বিভিন্ন সময়ে , বিভিন্ন কারণে অনুপ্রবেশ করেছেন। অনুপ্রবেশের এই প্রক্রিয়া আজও ক্রিয়াশীল। এইভাবে বিভিন্ন কারণের সমন্বয়ে ভারতে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি ঘটছে।    

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো            
 
Share
Tweet
Pin
Share
No comments

ভারতে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলাফল। 

ভারতে জনাধিক্যের ফলাফল। 

ভারতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কুপ্রভাব। 

Consequences of rapid population growth in India. ( In Bengali ) . 




ভারতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলাফল :- 

স্বাধীনতালাভের পরবর্তীকালে বিভিন্ন পরিকল্পনা ও কর্মসূচির মাধ্যমে ভারতের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হলেও তা আদৌ ফলপ্রসূ হয়নি। ২০১১ সালের জনগণনাতেই তা পরিষ্কার হয়েছে ; ভারতের জনসংখ্যা ১২১ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। স্বাধীনতালাভের পরবর্তীকালে ভারতের অন্যান্য ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হলেও দেশের সামগ্রিক উন্নতি অত্যন্ত নগন্য - এর একমাত্র কারণ হল তীব্র হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি। জনসংখ্যা বৃদ্ধির এই দ্রুত হার ভারতীয় জনজীবনে সর্বদাই কুফল প্রদান করেছে। বর্তমানে ভারতের বহু অংশের মানুষ নিরক্ষরতা , অপুষ্টি , বেকারত্ব , স্বাস্থ্য সমস্যা - ইত্যাদিতে জর্জরিত। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলাফলগুলি হল - 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

১. দুর্বিসহ জীবনযাত্রা :- 
ভারতের প্রায় ২৫ মিলিয়ন মানুষ গৃহহীন , ১৭ কোটি মানুষ পরিশুদ্ধ পানীয় জল থেকে বঞ্চিত , ২৯ কোটি যুবক নিরক্ষর , ৫৩% শিশু রুগ্ন , ১১ লক্ষ পরিবার বিদ্যুৎহীন। এইভাবে জাতীয় জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ জীবনধারণের ন্যুনতম মাত্রা বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন। জনসংখ্যা বৃদ্ধি এর সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সম্পর্কিত। 

২. মানব উন্নয়ন কর্মসূচিতে পিছিয়ে ভারত :- 
তীব্র হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে মানব উন্নয়ন কর্মসূচিগুলির সার্থক রূপায়ণ ভারতে সম্ভব হচ্ছে না। মানব উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের দিক দিয়ে ভারত বর্তমানে ১৩৫ তম স্থান অধিকার করে - যা অত্যন্ত হতাশাজনক। বিপুল সংখ্যক জনসংখ্যার অবস্থানের ফলে ভারতের মত উন্নয়নশীল দেশে মানব উন্নয়ন কর্মসূচীগুলি ব্যাহত হচ্ছে। যেমন আইন করে শিশু শ্রমিক সমস্যা দূর করতে চাইলেও অর্থনৈতিক কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৩. সামগ্রিক উন্নয়ন ব্যাহত :- 
তীব্র হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে ভারতের সামগ্রিক উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। সরকারি অর্থ ব্যয় হলেও সেই অনুপাতে উন্নয়ন ঘটছে না। শিক্ষা , অর্থনীতি , জীবনযাত্রার মান - ইত্যাদি সর্বক্ষেত্রেই উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। ভারতের বিপুল সংখ্যক মানুষের সার্বিক উন্নয়নের জন্য যে বিরাট অংকের অর্থ ও পরিকাঠামো দরকার তার অনুপস্থিতির ফলে সমস্যাগুলি সর্বপ্রকার উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাধা তৈরী করছে। 

৪. অর্থনৈক বিকাশ ব্যাহত :- 
২০১৩ সালের মানব উন্নয়ন সূচক বা HDI অনুযায়ী ভারতের স্থান ১৩৫ - যা অত্যন্ত হতাশাজনক। জাতীয় সঞ্চয় তহবিল থেকে বিপুল পরিমান অর্থ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভর্তুকি , ভরণপোষণ - ইত্যাদি খাতে ব্যয় হয়। অর্থনৈতিক উন্নয়নের থেকে অনেক বেশি প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে তীব্রভাবে অর্থনৈতিক কষ্টে জর্জরিত মানুষদের জন্য অর্থ বরাদ্দ করা। এগুলির ফলে ভারতে সুদূরপ্রসারী ফলদায়ক কোনো অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা সম্ভব হয়না। 

৫. মূল্যবোধের অবক্ষয় :- 
তীব্র জনসংখ্যার ফলে সমগ্র ভারত জুড়ে এক চরম অসহিষ্ণুতা দেখা দিয়েছে। মানুষ ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত - কোনো চাহিদাই পূরণ করতে সক্ষম হচ্ছে না। তাই সার্বিক ক্ষেত্রে নীতি , আদর্শ , মূল্যবোধ , দেশাত্মবোধ - ইত্যাদির চরম অবক্ষয় ঘটছে। এর ফল অত্যন্ত মারাত্মক এবং আগামী দিনগুলিও যে এরজন্য আরও চরম হতাশা ডেকে আনবে - সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। 

৬. কর্মসংস্থানের সুযোগের অভাব ও বেকারত্ব :- 
বেকারত্ব ভারতের বুকে এক অভিশাপ স্বরূপ। ভারতের বিপুল পরিমাণ জনসংখ্যার ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগ তীব্রভাবে সংকুচিত হয়েছে। শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে। চাকুরী ক্ষেত্রে ১০ টি পদের জন্য দশ লক্ষ আবেদন জমা পড়ে - যা ভারতের তীব্র বেকারত্বের বিভীষিকাময় রূপটিকে প্রকাশ করে। বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে কর্মী সংকোচন , ছাঁটাই - ইত্যাদির ফলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। বিরাট সংখ্যক জনসংখ্যার জন্য সরকারি নীতিগুলিও সফলভাবে কার্যকর করা সম্ভব হচ্ছে না। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৭. শিক্ষা সমস্যা ও নিরক্ষরতা :- 
২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী ভারতে সাক্ষরতার হার ৭৪.০৪ শতাংশ। অর্থাৎ প্রায় ২৫ শতাংশের বেশি মানুষ নিরক্ষর। অতিরিক্ত জনসংখ্যার কারণে সর্বজনীন শিক্ষা বিস্তারের নীতিগুলি সার্থকভাবে প্রয়োগ করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলিতে যে বিরাট সংখ্যক ছাত্র ভর্তি হয় - তার ফলে পঠন - পাঠনের আদর্শ পরিবেশ ব্যাহত হয়। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতেও শিক্ষার্থীর সংখ্যা অতিরিক্ত। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁচেছে যে দ্বিগুন পরিমাণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করলেও সমস্যার সমাধান হবেনা। 

৮. চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা :- 
ভারতে অতিরিক্ত জনসংখ্যার দরুন চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য পরিষেবা ভয়াবহ সংকটের সম্মুখীন। বর্তমানে প্রতি ১ লক্ষ রোগী পিছু ডাক্তারের সংখ্যা মাত্র ৬৯ জন। সংখ্যাটি যথেষ্ট হতাশা ও উদ্বেগজনক। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে প্রায় ২০০০ রোগী পিছু শয্যা সংখ্যা মাত্র একটি। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার এই করুণ দশা কোনো দেশের পক্ষেই কাম্য নয়। বহু সংখ্যক রোগী প্রতিদিন শয্যার অভাবে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত থাকেন। 

৯. দুর্নীতি ও অসামাজিক কার্যকলাপ বৃদ্ধি :- 
ব্যাপক হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে মানুষের মধ্যে বেকারত্ব ও অর্থের অভাব অত্যন্ত তীব্র। এর ফলে স্বাভাবিকভাবেই দুর্নীতি ও অন্যান্য অসামাজিক কার্যকলাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। অর্থের অভাবে বহু মানুষ দুর্নীতিমূলক আচরণ ও অসদুপায় বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে একদিকে তারা যেমন অসামাজিকতার অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছেন ; অন্যদিকে তেমন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। 

১০. খাদ্যের যোগান সংক্রান্ত সমস্যা :- 
ভারত খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী মানুষদের একটি বিরাট অংশ উপযুক্ত খাদ্য গ্রহণ থেকে বঞ্চিত থাকেন। সরকারি খাদ্য প্রকল্পগুলির বাইরে সেই সকল মানুষ খাদ্য সংগ্রহ করতে পারেন না। এই সমস্যার সঙ্গেও জনসংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি সম্পর্কিত। জনসংখ্যার উর্দ্ধমুখী প্রকৃতির ফলে সমস্ত স্তরের মানুষ সমানভাবে খাদ্যপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত থাকেন। 

পরিশেষে বলা যায় , তীব্র জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে আজও ভারতের বেশিরভাগ শিশু ও মায়েরা অপুষ্টির শিকার , নাগরিকজীবনে পৌর পরিষেবা সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা , শহরাঞ্চলে বাসস্থানের সমস্যা ও বস্তি অঞ্চলের বিস্তার - ইত্যাদি বিভিন্ন সমস্যা বর্তমান। জনসংখ্যা নীতি সঠিকভাবে কার্যকরী না হলে - এর দ্রুত ও স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়।

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো                            
     
Share
Tweet
Pin
Share
No comments

দারিদ্র দূরীকরণের বিভিন্ন কর্মসূচি ও পরিকল্পনা। 

ভারতে দারিদ্র দূরীকরণের বিভিন্ন কর্মসূচি ও পরিকল্পনাগুলো আলোচনা কর। 

Poverty alleviation Programmes in India . ( In Bengali ) . 




দারিদ্র দূরীকরণের বিভিন্ন কর্মসূচি ও পরিকল্পনা :- 


১. বিভিন্ন পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা :- 
স্বাধীনতা লাভের পরবর্তীকালে ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে পরিকল্পনা কমিশন গঠিত হয়। পরিকল্পনা কমিশনের সভাপতি ছিলেন  প্রথম প্রধানমন্ত্রী পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু। বিভিন্ন পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দারিদ্র দূরীকরণে সহায়তা করে। যেমন - 
 
(ক ) প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ( ১৯৫১ - ১৯৫৬ ) উন্নয়নমূলক পদক্ষেপের দ্বারা জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন , মুদ্রাস্ফীতির হার কমানো , অর্থনৈতিক উন্নয়ন , জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ - ইত্যাদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। 
(খ ) দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ( ১৯৫৬ - ১৯৬১ ) দ্রুত শিল্পায়ন , কর্মসংস্থানের সুযোগ , কৃষিজ উৎপাদন ২৫% বৃদ্ধি - ইত্যাদি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়। 
(গ ) তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ( ১৯৬১ - ১৯৬৬ ) মূল লক্ষ্য ছিল জাতীয় আয় ৩০% ও মাথাপিছু আয় ১৭% বৃদ্ধি ; অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষার প্রবর্তন ; কৃষিক্ষেত্রে ৩৫ লক্ষ ও অন্যান্য ক্ষেত্রে ১ কোটি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা। 
(ঘ ) চতুর্থ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ( ১৯৬৯ - ১৯৭৪ ) পরিবার পরিকল্পনা , রপ্তানি বৃদ্ধি , কৃষিজ উৎপাদন বৃদ্ধি - ইত্যাদি বিষয়গুলিতে জোর দেওয়া হয়। 
(ঙ ) পঞ্চম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার ( ১৯৭৪ - ১৯৭৮ ) মূল লক্ষ্য ছিল দারিদ্র দূরীকরণ ও অর্থনৈতিক স্বয়ংসম্পূর্ণতা এবং এই উদ্দেশ্যে ২০ দফা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

২. রাষ্ট্রীয়করণ :- 
১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে রাষ্ট্রীয়করণের নীতি গৃহীত হয়। শুরুতেই ১৪ টি ব্যাংককে রাষ্ট্রীয়করণ করা হয়। এরপর ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দ থেকে কয়লাখনি , লৌহ - ইস্পাত শিল্প ও অন্যান্য বৃহদায়তন শিল্পগুলিকে রাষ্ট্রীয়করণের কাজ শুরু হয়। এই রাষ্ট্রীয়করণ নীতির মূল উদ্দেশ্য ছিল সমাজের দুর্বল ও আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া অংশের জন্য উন্নয়নমূলক নীতি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং সুলভ ঋণ প্রদান। 

৩. বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচি :- 
স্বাধীনতার পর থেকেই গ্রামীণ এলাকার উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গৃহীত হয় যেগুলি পরোক্ষভাবে দারিদ্রতা দূরীকরণের সহায়ক হয়। এইসকল কর্মসূচিগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হল - 
(ক ) NREGS বা , National Rural Employment Gurantee Scheme প্রকল্পটি গৃহীত হয় ২০০৬ সালে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ এলাকায় বসবাসকারী কর্মক্ষম ব্যক্তিদের বছরে ১০০ দিনের কাজের নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়। এটি ১০০ দিনের কাজ প্রকল্প নামেও পরিচিত। 
(খ ) জওহর রোজগার যোজনা বা JRY প্রকল্পটি চালু হয়। এই প্রকল্পের মাধ্যমে দরিদ্র পরিবারগুলির ১ জনকে বছরে ১০০ দিনের কাজের সুযোগ প্রদান করা হয়। এর মধ্যে ৩০% মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত। 
(গ ) প্রধানমন্ত্রী কর্মসংস্থান প্রকল্প বা PMEGP প্রকল্পটির মাধ্যমে গ্রামীণ যুবকদের স্বনির্ভর করার চেষ্টা করা হয়। 
(ঘ ) স্বর্ণজয়ন্তী গ্রাম স্বরোজগার যোজনা বা SGSY প্রকল্পটি চালু হয় ১৯৯৯ সালে। মূলতঃ দরিদ্র পরিবারগুলিকে বৃত্তিমূলক ও পেশাগত প্রশিক্ষণ , ব্যাংক ঋণ - ইত্যাদির মাধ্যমে স্বনির্ভর করে তোলা ছিল এই প্রকল্পের লক্ষ্য। 
(ঙ ) ভারত নির্মাণ প্রকল্প চালু হয় ২০০৫ সালে। এর মাধ্যমে গ্রামীণ জীবনের প্রধান ৬ টি উপাদান - সেচ , পানীয় জল , রাস্তা , আবাসন , টেলিফোন , বিদ্যুৎ - ইত্যাদি সুনিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে কাজ শুরু হয়। 
(চ ) গ্রামীণ ভূমিহীনদের নিয়োগ নিশ্চয়তা প্রকল্প বা RLEGP প্রকল্পটি চালু হয় ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে। এই প্রকল্পে ভূমিহীন পরিবারের অন্ততঃ ১ জনকে ১০০ দিনের কাজের নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৪. দারিদ্র দূরীকরণের প্রত্যক্ষ কর্মসূচি :- 
উপরোক্ত কর্মসূচীগুলি ছাড়াও দারিদ্র দূরীকরণের জন্য কিছু প্রত্যক্ষ ও বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। যেমন - 
(ক ) অন্তদয় কর্মসূচি চালু হয় ১৯৭৭ সালে। এর লক্ষ্য ছিল প্রতি বছর পাঁচটি করে দরিদ্র পরিবারের উন্নতিসাধন করা। 
(খ ) অন্তদয় অন্ন যোজনা প্রকল্পটি চালু হয় ২০০০ সালে। এর লক্ষ্য ছিল দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী পরিবারগুলিতে ৩০ কেজি চাল বা গম প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়। 
(গ ) সুসংহত গ্রামীণ উন্নয়ন প্রকল্প বা IRDP প্রকল্পটি ১৯৭৬ সালে চালু হয়। প্রথমে ২০ টি জেলাকে নির্বাচন করে উন্নয়নের কাজ শুরু হয়। বর্তমানে সারা ভারতের প্রতিটি গ্রাম এই প্রকল্পের আওতাভুক্ত। 
(ঘ ) গরিবি হঠাও এবং বেকারি হঠাও কর্মসূচি :- ১৯৭১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এই শ্লোগান তোলেন। 
(ঙ ) গ্রামীণ যুবকদের স্বনিযুক্তি কর্মসূচিভিত্তিক প্রশিক্ষণ বা TRYSEM প্রকল্পটি চালু হয় ১৯৭৯ সালে। এর প্রধান লক্ষ্য ছিল গ্রামীণ যুবকদের মধ্যে প্রযুক্তিগত দক্ষতার বিকাশ ঘটিয়ে কৃষি , শিল্প , পরিষেবা ও বাণিজ্য ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি। 
(চ ) শহরভিত্তিক দরিদ্রদের জন্য স্বনিযুক্তি কর্মসংস্থান প্রকল্প বা SEPUP প্রকল্পটি চালু হয় ১৯৮৬ সালে। এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল শহরাঞ্চলে বসবাসকারী বেকার যুবকদের ব্যবসা শুরু করার জন্য ঋণ প্রদান এবং ২৫% ভর্তুকির ব্যবস্থা। 

এছাড়াও দারিদ্রতা দূরীকরণের লক্ষ্যে অন্যান্য বিভিন্ন কর্মসূচি গৃহীত হয়। যেমন - ICDS , JNNURM , রাষ্ট্রীয় মহিলা কোষ , ক্রেস বা শিশু লালনাগার , সুসংহত শিশু কল্যাণ প্রকল্প - ইত্যাদি।  

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো   
   
Share
Tweet
Pin
Share
No comments

ভারতে দারিদ্রতার বিভিন্ন কারণগুলি আলোচনা কর। 

Causes of poverty in India . ( In Bengali ). 




ভারতে দারিদ্রতার কারণ :- 


২০১৩ সালের একটি হিসেব অনুযায়ী ভারতে দারিদ্রসীমার নীচে বসবাস করেন প্রায় ৩০% মানুষ। International Poverty Line অনুযায়ী ভারতে প্রায় ৩২ শতাংশ মানুষ দারিদ্রসীমার নীচে বসবাস করেন। ভারতে প্রতি ৫ জন যুবকের মধ্যে ১ জন দারিদ্রতার শিকার এবং ৪ জন কৃষকের মধ্যে ১ জন চরম দারিদ্রের শিকার। 
ভারতে দারিদ্রতার কারণগুলি মূলতঃ ব্যক্তিগত , সামাজিক , অর্থনৈতিক , রাজনৈতিক। গিলিন ও গিলিন দারিদ্রতার কারণগুলোকে পাঁচ ভাগে ভাগ করেছেন। সেগুলি হল - ব্যক্তির অসামর্থ্য , ভৌগোলিক পরিবেশের বৈপরীত্য , অর্থনৈতিক কারণ , সামাজিক সংগঠনের ত্রুটি এবং যুদ্ধ। মার্কসবাদীরা দারিদ্রতার কারণকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। মার্কসবাদীদের মতে , শ্রেণি শোষণ ; যেখানে রাষ্ট্রযন্ত্রের সাহায্যে এক শ্রেণির মানুষ অপর শ্রেণীকে শোষণ করে। 
ভারতে দারিদ্রতার মৌলিক কারণগুলোকে নীচে আলোচনা করা হল। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

১. নিরক্ষরতা :- নিরক্ষরতা ও দারিদ্রতা বিষয়দুটি প্রায় সমার্থক। কোনো ব্যক্তি নিরক্ষর হলে স্বাভাবিকভাবেই সে কর্মক্ষেত্রে নিজেকে উপযুক্ত বলে প্রমান করতে পারেনা। ফলে খুব সহজেই নিরক্ষর ব্যক্তিরা দারিদ্রতার শিকার হয়ে পড়ে। নিরক্ষরতার ফলে ব্যক্তি যেমন একদিকে উপযুক্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ পান না ; তেমনি অন্যদিকে নিজ উদ্যোগে অর্থের সংস্থান করতেও বিভিন্ন সমস্যা হয়। ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী ভারতে সাক্ষরতার হার ৭৪.০৪% ; অর্থাৎ প্রায় ২৫ শতাংশের বেশি মানুষ নিরক্ষর।  

২. বেকারত্ব :- বর্তমানে ভারতে প্রায় ৭.৪% মানুষ বেকারত্বের শিকার। তীব্র বেকারত্বের ফলে স্বাভাবিকভাবেই নিজেদের এবং নিজেদের উপর নির্ভরশীল মানুষদের ন্যুনতম চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হন। বর্তমানকালে শিক্ষাগত বেকারত্বের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। কর্মী সংকোচন , কর্মসংস্থানের সুযোগ হ্রাস , যথাযথ নীতির অভাব , রাজনৈতিক অসাধুতা - ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে বেকারত্বের সমস্যার কোনো স্থায়ী সমাধান হচ্ছে না এবং দারিদ্রতার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো


৩. ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থা :- বর্তমানে প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা ও পাঠক্রম ব্যক্তির সর্বাঙ্গীন বিকাশে সহায়ক হলেও কর্মসংস্থান ও বৃত্তিগত ক্ষেত্রে তা কার্যকরী নয়। ফলে উচ্চশিক্ষিত হয়েও বহু মানুষ কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছেন না। পেশাদারি ও বৃত্তিগত শিক্ষার ব্যবস্থা থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত কম। কার্যকরী ও কর্মমুখী পাঠক্রমের অভাব ভারতে দারিদ্রতার একটি অন্যতম কারণ। 

৪. মুদ্রাস্ফীতি :- মুদ্রাস্ফীতি কথাটির অর্থ হল অর্থের মূল্য কমে যাওয়া। এর ফলে প্রতিটি পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পায়। নিত্যব্যবহার্য সামগ্রী ক্রয় করতেই মানুষের সমস্যা তৈরী হয়। ফলে নির্দিষ্ট আয়যুক্ত মানুষের ক্ষেত্রে ব্যায়ভার দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। এর ফলে একদিকে যেমন , সরকারের বাজেট সংকুচিত হচ্ছে ও উন্নয়নমূলক কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে এবং অন্যদিকে মানুষ জীবনধরণের জন্য ন্যুনতম সামগ্রী সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। এইভাবে মুদ্রাস্ফীতি দারিদ্রতা বৃদ্ধি করছে। 

৫. কৃষিক্ষেত্রের সমস্যা :- ভারতীয় অর্থনীতির মেরুদন্ড হল কৃষি। অতিমাত্রায় কৃষি নির্ভরতা ভারতে দারিদ্রতা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। আবার কৃষকদেরও বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। যেমন - বীজ , সার ইত্যাদির মূল্যবৃদ্ধি , কৃষি শিক্ষার অভাব , আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা , মৌসুমী বায়ুর উপর নির্ভরশীলতা - ইত্যাদি কারণে ভারতীয় কৃষি উৎপাদন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ফলে কৃষির সঙ্গে যুক্ত মানুষদের প্রতি ৪ জনের মধ্যে একজন চরম দারিদ্রের শিকার। 

৬. প্রাকৃতিক সম্পদের অভাব :- ভারতে এমন বহু এলাকা রয়েছে যেখানে প্রাকৃতিক সম্পদ অপ্রতুল এবং ভূমিরূপ ও আবহাওয়া কৃষির পক্ষে উপযুক্ত নয়। এই সমস্ত এলাকায় বসবাসকারী মানুষেরা খুব সহজেই দারিদ্রতার শিকার হয়ে পড়েন। রাজস্থানের বিস্তীর্ণ মরু মৃত্তিকা অঞ্চল , উপকূলীয় বালুকাময় বিস্তীর্ণ অঞ্চল - ইত্যাদি অঞ্চল কৃষি , পশুপালন - এসবের পক্ষে উপযুক্ত নয়। ফলে এই সমস্ত এলাকায় তীব্রভাবে কর্মসংস্থানের অভাব পরিলক্ষিত হয়। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো


৭. প্রাকৃতিক বিপর্যয় :- ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকায় আবহাওয়া ও জলবায়ুর খামখেয়ালিপনার দরুন কৃষি সহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক কার্যাবলী তীব্রভাবে ব্যাহত হয়। বন্যা , খরা , অতিবৃষ্টি , ভূমিকম্প , নিম্নচাপ , ঘূর্ণিঝড় - ইত্যাদি প্রাকৃতিক ঘটনাগুলি অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপগুলিকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করে। বহু মানুষ এইসকল প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কবলে পড়ে সর্বশান্ত হয়ে যান। ফলে খুব সহজেই তাদের জীবনে দারিদ্রতা নেমে আসে। 

৮. জমির উপর চাপ বৃদ্ধি :- ভারতে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে ; সেই সঙ্গে বাড়ছে কৃষি জমির উপর চাপ। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে মাথাপিছু জমির পরিমান কমে যায়। বর্তমানে ভারতীয় নাগরিকদের মাথাপিছু চাষযোগ্য জমির পরিমান এক একরের থেকেও কম। ফলে মাথাপিছু জমির পরিমান যত কমছে জমি থেকে আয় তত কমছে। জমি থেকে ক্রমাগত আয় কমার ফলে জমির উপর নির্ভরশীল মানুষদের মধ্যে দারিদ্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

৯. মূলধনের অভাব :- শিল্পের প্রসারের জন্য প্রয়োজন মূলধন। দেশীয় ও বৈদেশিক শিল্প সংস্থাগুলি সীমিত হারে মূলধন বিনিয়োগ করে। এইসকল শিল্পসংস্থার একমাত্র উদ্দেশ্য থাকে মুনাফা অর্জন। তাই , এই সকল শিল্পসংস্থায় অধিক পরিমানে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরী হয়না। এছাড়াও ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প সংস্থার পুঁজি এতটাই কম থাকে যে তাদের পক্ষে নতুন করে বিনিয়োগ সম্ভব হয়না। অনেক দেশীয় শিল্প সংস্থা মূলধনের অভাবে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ফলে বেকারত্ব ও দারিদ্রতার পরিমান বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

১০. উৎপাদিত পণ্যের অসম বন্টন :- উৎপাদিত শিল্পজাত ও কৃষিজাত পণ্যের অসম বন্টন দারিদ্রতা সৃষ্টি করে। উৎপাদিত পণ্যের অসম বন্টনের জন্য সম্পদ , খাদ্যসামগ্রী - ইত্যাদি সবকিছু এক শ্রেণির মানুষের হস্তগত হয় এবং এক বিরাট অংশের মানুষ সেগুলি থেকে বঞ্চিত থাকে। ফলে সমাজে তীব্র বৈষম্য ও দারিদ্রতা সৃষ্টি হয়। 

১১. অপর্যাপ্ত আর্থিক নীতি :- ভারতে দারিদ্রতা দূরীকরণে যেসকল আর্থিক নীতি গৃহীত হয় তা সামগ্রিক পরিস্থিতির বিচারে পর্যাপ্ত নয়। এছাড়াও সেইসকল নীতিগুলি যথাযথভাবে প্রয়োগ করা হয়না। এছাড়াও স্বাধীনতার পূর্ববর্তী সময়ে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন ভ্রান্ত ও সাম্রাজ্যবাদী নীতি ভারতীয় অর্থনীতিকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিয়েছিল। স্বাধীনতার পর আজ এত বছর পার হয়ে গেলেও তীব্র জনসংখ্যা বৃদ্ধি , রাজনৈতিক অসাধুতা - ইত্যাদির কারণে দারিদ্রতা মোচনের জন্য কোনো যথার্য ও কার্যকরি নীতি প্রবর্তন করা সম্ভব হয়নি। 

১২. ব্যক্তিগত কারণ :- দারিদ্রতার ব্যক্তিগত কারণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণগুলি হল - শ্রমবিমুখতা , অমিতব্যয়িতা , নৈতিক অবনমন , ঋণগ্রস্থতা , অসুস্থতা , বিভিন্ন দুর্ঘটনা , অসুস্থতা , মানসিক রোগ ইত্যাদি। এইসকল ব্যক্তিগত কারণগুলির ফলে মানুষ উৎপাদনশীলতা হারিয়ে ফেলেন এবং অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করতে পারেন না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই দারিদ্রতা বৃদ্ধি পায়। 

এছাড়াও , অনুপ্রবেশ , যুদ্ধ - বিগ্রহ , রাজনৈতিক অস্থিরতা , রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গি , জাতিভেদ প্রথা , ধর্মীয় বিশ্বাস , বিচ্ছিন্নতাবাদ - ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়গুলি ভারতীয় সমাজে দারিদ্রতা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।    

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো
   
Share
Tweet
Pin
Share
No comments

লিঙ্গ বৈষম্য বলতে কী বোঝ ? লিঙ্গ বৈষম্যের কারণগুলি লেখ। 

লিঙ্গ বৈষম্যের সংজ্ঞা ও কারণ। 

লিঙ্গ বৈষম্য কাকে বলে ? ভারতে লিঙ্গ বৈষম্যের কারণগুলি উল্লেখ কর। 

What is gender inequality? Mention the causes of gender inequality in India. ( In Bengali ).




লিঙ্গ বৈষম্য :- 


ভারতীয় সংবিধানের ১৪ নং ধারায় যে সাম্যের অধিকার স্বীকৃত হয়েছে তাতে নারী , পুরুষ - সকলের সমানাধিকার স্বীকৃত হয়েছে। এছাড়াও , ১৯৭৯ সালে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ নারীদের বিরুদ্ধে সংঘঠিত সমস্ত রকমের বৈষম্যমূলক আচরণের অবসানকল্পে যে দাবিসনদ গ্রহণ করে - ভারত সরকার তার প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ। কিন্ত তাতে সমস্যার আশানুরূপ সমাধান হয়নি। 

লিঙ্গ বৈষম্য কথাটি সাধারণতঃ নারীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণকে বোঝাতে ব্যবহার করা হয়। নারী অধিকার সুরক্ষার জন্য বিভিন্ন সাংবিধানিক আইন , অধিকার অর্জনের জন্য বিভিন্ন আন্দোলন , কর্মক্ষেত্রে নারীদের সমতা প্রতিষ্ঠা , নিরাপত্তা ও মর্যাদা বৃদ্ধি - ইত্যাদি সকল বিষয় স্বত্তেও বিশ্বের প্রতিটি সমাজে লিঙ্গ বৈষম্য আজও বিরাজমান। 

যখন শুধুমাত্র লিঙ্গের ভিত্তিতে কারো প্রতি যেকোনো ধরণের বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয় বা কেউ শুধুমাত্র লিঙ্গের কারণে অসাম্যের শিকার হন - তখন তাকে লিঙ্গ বৈষম্য বলা হয়। লিঙ্গ বৈষম্যের বিভিন্ন কারণগুলি আলোচনায় করা হল - 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

লিঙ্গ বৈষম্যের কারণ :- 


১. ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট :- 
লিঙ্গ বৈষম্যের সূচনা হয় আদিম মানব সমাজ থেকেই। আদিম সমাজে পুরুষেরা শিকার ও খাদ্যসংগ্রহের সাথে যুক্ত থাকত এবং নারীরা নিজেদের বাসস্থানের কাজ করত। তাই পুরুষদের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়। আবার অন্যদিকে , হিংস্র জন্তু ও শত্রুদের হাত থেকে বাঁচার জন্য তুলনামূলক বলশালী পুরুষদের উপরেই সকলে নির্ভর করত। ফলে আদিম মানব সমাজ থেকেই লিঙ্গ বৈষম্যের সূত্রপাত হয়। 

২. শ্রেণী - বিভাজন :- 
ভারতীয় সমাজে শ্রেণী বিভাজন লিঙ্গ বৈষম্যের একটি অন্যতম কারণ। সমাজে শ্রেণী বিভাজন করা হয়েছিল কেবলমাত্র পুরুষদের কর্মের ভিত্তিতে। নারীরা এক্ষেত্রে ছিলেন উপেক্ষিত। সেই সময় থেকেই কর্মের ক্ষেত্রে নারীদের উপর কম গুরুত্ব আরোপ করা হয়।

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৩. সামাজিক প্রেক্ষাপট :- 
ভারতীয় সমাজে প্রতিটি মহিলার সামাজিক মর্যাদা স্থির করা হয় তার পিতা বা স্বামীর সামাজিক অবস্থান ও মর্যাদার বিচারে। এক্ষেত্রে নারীদের নিজস্ব ভূমিকা , যোগ্যতা - ইত্যাদিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়না। ভারতে বংশমর্যাদা কেবলমাত্র পুরুষতান্ত্রিক। 

৪. কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য :- 
কর্মক্ষেত্রে কাজের বা চাকরির সুযোগ , পারিশ্রমিক - ইত্যাদি সর্বক্ষেত্রে নারীরা বঞ্চনার শিকার হন। অনেক ক্ষেত্রেই সমপরিমাণ শ্রমের পরিবর্তেও তারা কম মজুরি পান। শারীরিক শক্তিযুক্ত কাজগুলিতে নারীদের তুলনায় পুরুষদের অধিক কাম্য বলে মনে করা হয়। এমনকী , বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষপদগুলিতে পুরুষদের স্থান দেওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। 

৫. পুরুষ প্রধান সমাজ :- 
ভারতীয় সমাজ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পুরুষতান্ত্রিক। নারীর স্বাধীনতা এখানে পুরুষের সম্মতির উপর নির্ভরশীল। শিক্ষাক্ষেত্র , কর্মক্ষেত্র , বিবাহ - ইত্যাদি সর্বক্ষেত্রেই নারীকে পুরুষের সম্মতির উপর নির্ভর করতে হয়। পরিবারের যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন পরিবারের কর্তা বা পুরুষ। এই ধরণের সমাজে লিঙ্গ বৈষম্য তাই অবধারিত। 

৬. শিক্ষার অভাব :- 
সাক্ষরতার দিক দিয়ে নারীরা আজও পুরুষদের তুলনায় অনেকটা পিছিয়ে আছে। ফলে খুব সহজেই তারা শোষণ , বঞ্চনা - ইত্যাদির শিকার হচ্ছেন। বহু পরিবারে আজও নারীদের শিক্ষা প্রদান করা হয় বিবাহের উদ্দেশ্যে। যথেষ্ট শিক্ষার অভাব থাকার ফলে বহু নারী তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে পারছেন না। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৭. সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি :- 
ভারতে লিঙ্গ বৈষম্যের পেছনে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিও সমানভাবে দায়ী। ভারতীয় সমাজে আজও নারীদের উচ্চশিক্ষা , পরিবার ও সামাজিক কর্তৃত্ব , রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন - ইত্যাদি বিষয়গুলিকে ভালো চোখে দেখা হয়না। আজও মনে করা হয় নারীদের প্রধান কর্তব্য হল সন্তান প্রতিপালন ও সংসার পরিচালনা। 

৮. অর্থনৈতিক কারণ :- 
উচ্চ শিক্ষা ও বৃত্তিশিক্ষার অভাব , সামাজিক প্রথা ও দৃষ্টিভঙ্গি - ইত্যাদির কারণে বেশিরভাগ ভারতীয় নারী অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে স্বাবলম্বী নন। ফলে তাদের বিরুদ্ধে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন অন্যায় , শোষণ , বঞ্চনা - ইত্যাদিকে তারা মুখ বুজে সহ্য করে নেন। নারীরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী না হলে এই সমস্যার সমাধান অসম্ভব। 

৯. নারীদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি :- 
আবার , বহুক্ষেত্রে এমনটাও দেখা যায় , নারীরা নিজেরাই পুরুষের কর্তৃত্বকে শ্রেয় মনে করেন। পিতা বা স্বামীর অধীনে থাকাকেই নারীরা কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্বচ্ছন্দবোধ করেন। ফলে একদিকে খুব সহজেই তারা বৈষম্য ও বঞ্চনার শিকার হয়ে পড়েন এবং অন্যদিকে সমাজের পুরুষতান্ত্রিক চরিত্র বজায় রাখতে সহায়তা করেন। 

পরিশেষে বলা যায় , শহরাঞ্চলের নারীদের তুলনায় গ্রামাঞ্চলের নারীরা আরো বেশি করে লিঙ্গ বৈষম্যের শিকার। শিকার বিস্তার , রাজনৈতিক সদিচ্ছা , সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন , নারীদের সচেতনতা বৃদ্ধি , কার্যকরী নীতি প্রবর্তন - ইত্যাদির মাধ্যমে লিঙ্গ বৈষম্যের অবসান সম্ভব।    

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো              
 
Share
Tweet
Pin
Share
No comments

বেকারত্ব কাকে বলে ? ভারতে বেকারত্বের কারণগুলি আলোচনা কর। 

বেকারত্বের সংজ্ঞা ও কারণ। 




বেকারত্বের সংজ্ঞা / ধারণা :- 


সাধারণভাবে বলা যায় , ব্যক্তির যা আছে ও যা পাওয়ার দরকার আছে তার মধ্যে পার্থক্য তৈরী হলে তাকে বলে বেকারত্ব। বেকারত্বের সংজ্ঞা প্রসঙ্গে ডি ম্যালী বলেছেন , বেকারত্ব হল এমন একটি পরিস্থিতি যেখানে ব্যক্তি তার ইচ্ছা এবং কর্মপ্রবণতা থাকা স্বত্তেও কর্মহীন অবস্থায় থাকে। এই সংজ্ঞা অনুসরণ করে বেকারত্বের কয়েকটি নির্দিষ্ট উপাদানকে চিহ্নিত করা যায়। যেমন - 
(ক ) ব্যক্তি কর্মক্ষম হবেন। 
(খ ) ব্যক্তির কর্মপ্রাপ্তির যোগ্যতা থাকবে। 
(গ ) ব্যক্তির কর্মপ্রাপ্তির ইচ্ছা থাকবে। 
(ঘ ) ব্যক্তি তার পরিশ্রম দ্বারা কর্মপ্রাপ্তির চেষ্টা করবে। 
উক্ত সবকটি উপাদান থাকা স্বত্তেও যদি কোনো ব্যক্তির কর্মপ্রাপ্তি না ঘটে , তাহলে সেই ব্যক্তিকে বেকার  বলা যেতে পারে। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য , সন্ন্যাসী , দেউলিয়া , ভবঘুরে , মানসিক ভারসাম্যহীন - এইসকল ব্যক্তিবর্গকে বেকারত্বের অংশ বলে ধরা হয়না। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো


ভারতে বেকারত্বের কারণ :- 


১. তীব্র জনস্ফীতি :- 
ভারতের তীব্র জনসংখ্যা বৃদ্ধি বেকারত্বের একটি অন্যতম প্রধান কারণ। তীব্রভাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে একদিকে বেড়েছে নিরক্ষরতার সমস্যা - যার ফলে বেকারত্ব জন্ম নেয় ; এবং অন্যদিকে ব্যাপক হারে কমেছে কর্মসংস্থানের সুযোগ। 

২. জনসংখ্যার অসম বন্টন :- 
ভৌগোলিকভাবে দেখলে ভারতের জনসংখ্যা অসমভাবে বন্টিত। যেমন - পশ্চিমবঙ্গ , বিহার , মহারাষ্ট্র - ইত্যাদি রাজ্যগুলি অতিনিবিড় জনবসতিযুক্ত অঞ্চল ; আবার সিকিম , মণিপুর , মিজোরাম - ইত্যাদি অঞ্চলগুলি স্বল্প জনবসতিযুক্ত অঞ্চল। জনবসতির এই অসম বন্টনের ফলে অতিনিবিড় বসতি এলাকায় বেকারত্বের সমস্যা তৈরী হয়। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো


৩. মূলধন ও পুঁজির অভাব :- 
ভারতীয় শিল্পপতি , সরকার একদিকে যেমন অধিক উৎপাদনের আশা রাখে ; অন্যদিকে তেমনি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কার্পণ্য প্রদর্শন করে। এর ফলে নতুন নতুন কর্মসংস্থান তৈরির সুযোগ কমে যায়। উৎপাদন ক্ষেত্র পরিচালিত হয় শুধুমাত্র মালিকের স্বার্থের কথা মাথায় রেখে। 

৪. ভৌগোলিক গতিহীনতা :- 
ভারতীয় নাগরিকদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের মধ্যে ভৌগোলিক গতিহীনতা লক্ষ্য করা যায়। অর্থাৎ তারা নিজের যোগ্যতা ও সামর্থ্য অনুযায়ী অন্য স্থানে গিয়ে কাজ খুঁজে নেওয়ার প্রবণতা দেখান না। ফলে একদিকে কাজের জন্য শ্রমিক পাওয়া যায়না ; আবার অন্যদিকে শ্রমিকেরা কাজের অভাবে বেকার হয়ে পড়েন। 

৫. বাজার অর্থনীতির অস্থায়িত্ব :- 
বর্তমান সময়ে বাজারের ওঠাপড়া , শ্রমিক অসন্তোষ , শ্রমিক ছাঁটাই , ধর্মঘট , লক - আউট - ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে বেশিরভাগ শ্রমিকের কর্মসংস্থান অনিশ্চয়তার সম্মুখীন। এর ফলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ - উভয় ক্ষেত্রেই বেকারত্ব সৃষ্টি হয়। 

৬. শিক্ষাগত বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি :-  
শিক্ষিত যুবসমাজ অতিমাত্রায় চাকুরীর প্রতি নির্ভরশীল হওয়ায় শিক্ষাগত বেকারত্বের সংখ্যা উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে। বিশ্বায়নের পরবর্তীযুগে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধির পরিবর্তে প্রতিটি সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা কর্মী সংকোচন করেছে। ফলে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ বন্ধ হয়েছে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো


৭. কৃষি জোতের পরিমান হ্রাস :- 
আধুনিককালে ভারতের যৌথ পরিবারগুলি ভেঙে একক পরিবারে পরিণত হয়েছে। কৃষিজমি ভাগাভাগি হওয়ার কারণে মাথাপিছু জমির পরিমান ব্যাপকভাবে কমে গেছে। ফলে বেকারত্বের সৃষ্টি হয়েছে। 

৮. আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার :- 
একবিংশ শতকে বিশ্বায়ন , আধুনিকীকরণ ও উদারীকরণের হাত ধরে ভারতীয় অর্থনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার বেড়েছে। এর ফলে উৎপাদন ক্ষেত্রগুলিতে ব্যাপকভাবে কর্মীসংকোচন হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি সংস্থায় কম্পিউটারের ব্যবহার , কৃষি ক্ষেত্রে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার - ইত্যাদি কর্মী সংকোচনের পথ প্রশস্ত করেছে। 

৯. অর্থনৈতিক পরিকাঠামো :- 
লিওনেল এডি মনে করেন , ভেঙে পড়া অর্থনীতির উপর কখনোই বেকারত্ব দূর করার বিশেষ সুযোগ থাকেনা। ভারতের অর্থনীতি যদিও গতিশীল তবুও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যেসকল নীতি প্রণীত হয় তা বেকারত্বের সমস্যার সমাধান করতে কোনোভাবেই সমর্থ হয়না। 

১০. ব্যক্তিগত কারণ :- 
এমন কিছু ব্যক্তি থাকেন যারা নিজেদের শ্রম দ্বারা কর্ম খুঁজে নেওয়ার মানসিকতা দেখান না। আবার অনেকে নির্দিষ্ট কিছু কাজকে '' ছোট কাজ '' মনে করে সেই সকল কর্ম থেকে নিজেদের বিরত রাখেন। এইভাবে একশ্রেণীর মানুষ ব্যক্তিগত কারণে বেকারত্বের শিকার হন।    

১১. রাজনৈতিক অসাধুতা :- 
রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অসাধুতা , স্বজন - পোষণ ইত্যাদির কারণে কিছু অযোগ্য ব্যক্তির কর্মসংস্থান হলেও বৃহত্তর সামাজিক ক্ষেত্রে এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। 

১২. নিরক্ষরতা ও শিক্ষার ভূমিকা :- 
ভারতে সর্বজনীন শিক্ষার বিস্তার ঘটানো এখনো সম্ভব হয়নি। ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী ভারতে এখনো এক - চতুর্থাংশ মানুষ নিরক্ষর। এই বিপুল নিরক্ষর জনসংখ্যা বেকারত্ব সৃষ্টির একটি অন্যতম কারণ। আবার বর্তমান শিক্ষার পেশাদারিত্বের অভাবে শিক্ষিত মানুষদের মধ্যেও বেকারত্বের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

এছাড়াও স্ব - নিযুক্তি প্রকল্পগুলির ব্যর্থতা , কার্যকর সরকারি নীতির অভাব , বৃত্তিশিক্ষার স্বল্পতা , অসংগঠিত ক্ষেত্রের সংখ্যা বৃদ্ধি , বহুজাতিক সংস্থাগুলির সর্বগ্রাসী মনোভাবের ফলে খুচরো ব্যবসার অবলুপ্তি - ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে বেকারত্ব ভারতের একটি জ্বলন্ত সমস্যায় পরিণত হয়েছে।     

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

Share
Tweet
Pin
Share
No comments

সামাজিক অসাম্যের প্রকৃতি আলোচনা কর। 

বিভিন্ন ধরণের সামাজিক অসাম্য সম্পর্কে আলোচনা কর। 

Nature and different types of Social Inequality . ( In Bengali ).




সামাজিক অসাম্যের প্রকৃতি :- 

বিভিন্ন ধরণের সামাজিক অসাম্য :- 


১. নীতিগত ক্ষেত্রে অসাম্য :- 
রাষ্ট্র বা সরকার সমাজের জন্য বিভিন্ন প্রকার নীতি প্রবর্তন করে। এই সকল নীতির মধ্যে শাস্তি ও পুরস্কার প্রদানের নীতিও থাকে। মানুষের প্রত্যাশা , জনকল্যাণ - ইত্যাদির জন্য বিভিন্ন নীতি প্রণীত হলেও তা পক্ষান্তরে অসাম্যের জন্ম দেয়। কিন্তু সমাজের যে সকল অংশে উন্নয়ন যথার্থভাবে হয়না - সেই সকল অঞ্চলে জন্ম নেয় অসাম্য এবং এই অসাম্য থেকেই জন্ম নেয় বিচ্ছিন্নতাবাদ - ইত্যাদি রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি। এছাড়াও সরকার নীতি প্রণয়নের সময় সমাজের সকল অংশের কথা মাথায় রেখে নীতি প্রণয়ন করেন না। এই নীতিগত অসাম্য মানুষকে বাধ্য করে বিপ্লব ও আন্দোলনের পথে চালিত হতে। 

২. সামাজিক গতিশীলতার ক্ষেত্রে অসাম্য :- 
সমাজে প্রচলিত বিধি - নিয়মগুলিকে কেউ কেউ মান্য করেন নিজেদের স্বার্থ পূরণের তাগিদে। আবার কেউ কেউ সেগুলিকে অমান্য করেন প্রত্যাশা পূরণ না হলে। সমাজের গতিশীলতা সমাজের সকল অংশে সমানভাবে বাস্তবায়িত হয়না। অনুন্নত , অনগ্রসর সম্প্রদায় - প্রচলিত সমাজ - ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে নতুন সমাজ গড়ে তুলতে চান। সমাজের প্রচলিত নিয়ম - বিধি সমাজের বিশেষ অংশের স্বার্থ পূরণে সক্ষম হলেও সমাজের সকল অংশের গতিশীলতার পক্ষে কার্যকরী হয়না। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো


৩. স্বাধীনতা ও অসাম্য :- 
দার্শনিক কান্ট মনে করেন , সামাজিক অসাম্য থেকে সমাজে ইতিবাচক ও নেতিবাচক - উভয় প্রকার শক্তি জন্ম নেয়। প্রতিটি সমাজে অসাম্য থাকে এবং সেই অসাম্যের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধাচারণও থাকে। সমাজের প্রতিটি অসাম্য যন্ত্রনাদায়ক ঠিকই ; কিন্তু এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথে মানুষের সংগঠিত আচরণ সামাজিক গতিশীলতার জন্ম দেয়। 

৪. সমাজের চালিকা শক্তি হিসাবে অসাম্য :- 
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সামাজিক অসাম্যকে সমাজের মূল চালিকাশক্তি হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। তাঁর মতে , সমাজে অসাম্য না থাকলে সমাজ গতিহীন হয়ে পড়ত। সামাজিক অসাম্য এক শ্রেণীর স্বার্থ সুরক্ষিত করে অপর শ্রেণীর স্বার্থ বিঘ্নিত করে। ফলে বঞ্চিত মানুষ সেই ব্যবধান দূর করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তাই সমাজে অসাম্য আছে বলেই সমাজ সাম্যের পথে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। 

৫. অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অসাম্য :- 
অর্থনৈতিক অসাম্যের মূলে থাকে উৎপাদন পদ্ধতি ও বন্টন ব্যবস্থা। উৎপাদন সংগঠিত হয় মূলত দুই শ্রেণীর মাধ্যমে। এই দুই শ্রেণী হল - মালিক ও শ্রমিক। মালিক হল অধিকারভোগী শ্রেণী এবং শ্রমিক হল অধিকারহীন শ্রেণী। তাই স্বাভাবিকভাবেই মালিক শ্রেণী শ্রমিকের উপর কর্তৃত্ব আরোপ করে এবং তাদের শোষণ করতে চায়। সাম্রাজ্যবাদের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে ধনতন্ত্রবাদের প্রসার ঘটেছে এবং তার ফলে মালিক ও শ্রমিকের মধ্যবর্তি বৈষম্য আরো প্রকট হয়েছে। এছাড়াও রাষ্ট্রীয় নীতি সমাজের আর্থিক দিক দিয়ে দুর্বল মানুষদের আর্থিক সুরক্ষা দেওয়ার ব্যাপারে কার্যকরী নীতি প্রবর্তন করতে পারেনা। 

৬. রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অসাম্য :- 
রাজনীতির মূল কথা হল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করা। তাই , রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল ও সাম্য নীতির প্রতিষ্ঠা উভয়ই বিপরীতমুখী। কোনো গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত থাকলেও অসাম্য সর্বদা বিরাজমান। প্রতিনিধি নির্বাচন , নীতি নির্ধারণ , রাষ্ট্র পরিচালনা - সর্বক্ষেত্রেই অসাম্য পরিলক্ষিত হয়। গণতন্ত্র ছাড়াও একনায়ক বা সামরিক শাসনে অসাম্য তীব্ররূপ ধারণ করে। সেখানে সকল ক্ষমতা শুধুমাত্র শাসকের হাতে ন্যাস্ত থাকে ; অন্যান্য সকলকে অনুগত প্রজার ন্যায় আচরণ করতে হয়। ভারতের মত দেশ , যেখানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত , সেখানেও ক্ষমতাশীল ব্যক্তি ও সাধারণ মানুষের মধ্যে বিস্তর অসাম্য লক্ষণীয়। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো


৭. বর্ণগত অসাম্য :- 
বর্ণগত অসাম্য বা বর্ণবিদ্বেষ পৃথিবীর সর্বত্র লক্ষ্য করা যায়। এমনকি প্রথম বিশ্বের আধুনিক দেশগুলিও এর বাইরে নয়। শুধুমাত্র বর্ণের কারণে এক শ্রেণীর মানুষ অপর এক শ্রেণীর সকল প্রকার অধিকার , মর্যাদা , ক্ষমতা , মানবাধিকার - ইত্যদি নস্যাৎ করে দিয়ে তাদের শাসন করতে চান। হিটলারের হেরেনভেক তত্ত্ব , দক্ষিণ আফ্রিকায় কৃষ্ণাঙ্গ বিদ্বেষ , ভারতে দলিত সম্প্রদায়ের সামাজিক অধিকারহীনতা - ইত্যাদি বিষয়গুলিকে এপ্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায়। 

৮. শিক্ষা ও সংস্কৃতিগত ক্ষেত্রে অসাম্য :- 
সমাজের সর্বত্র যেহেতু অসাম্য বর্তমান , তাই শিক্ষা - সংস্কৃতি ক্ষেত্রেও অসাম্যের বিষয়টি প্রকট হয়ে ওঠে। আজও ভারতে পূর্ণাঙ্গ সাক্ষরতা সম্ভব হয়নি। সরকার একগুচ্ছ পরিকল্পনা গ্রহণ করলেও এক শ্রেণীর মানুষের উদাসীনতা , অসচেতনতা , কিছু সামাজিক বাধ্যবাধকতা - ইত্যাদির জন্য পরিকল্পনাগুলির সম্পূর্ণ সুফল পাওয়া যায়না। ভারতীয় সংস্কৃতি উপাদানগত দিক দিয়ে সমৃদ্ধ হলেও তা আন্তর্জাতিক গুণমান অর্জনে আজও সফল হয়নি। তাই শিক্ষা - সংস্কৃতির রাশ এক শ্রেণীর মানুষ নিজের হাতে রেখে দিয়ে সমাজে আধিপত্য বিস্তার করতে চায়। ফলে সমাজে বৈষম্য প্রকট হয়ে ওঠে। 

৯. লিঙ্গগত অসাম্য :- 
নারী ও পুরুষের মধ্যে লিঙ্গগত বৈষম্য সামাজিক বিবর্তনের প্রতি স্তরে লক্ষ্য করা যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্ববর্তীকাল পর্যন্ত পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশেই সামাজিক , অর্থনৈতিক - ইত্যাদি ক্ষেত্রে নারীদের অধিকারকে সংকুচিত করে রাখা হয়েছিল। তার পর থেকে , বিশেষ করে ৭০-এর দশকে ব্যপক নারী আন্দোলনের ফলে নারীদের কিছু কিছু অধিকার প্রতিষ্টিত হলেও আজও নারীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার। যেমন কর্মক্ষেত্রে নারীদের সমানাধিকার প্রতিষ্ঠিত হলেও - যৌন নির্যাতন , গৃহবধূদের সুরক্ষায় বিভিন্ন আইন প্রবর্তিত হলেও আজও প্রতিদিন বধূ নির্যাতনের খবর পাওয়া যায়। 

পরিশেষে বলা যায় , সমাজে সাম্য ও অসাম্য একই সাথে অবস্থান করে। সমাজে বিভিন্ন অসাম্য থেকেই সাম্যের পথ চলা শুরু হয়। এটি একটি প্রক্রিয়া যা সমাজ বিবর্তনের পথে অনিবার্যভাবে পরিচালিত হচ্ছে। এইভাবে সমাজে এক একটি ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর হয়ে সাম্য প্রতিষ্ঠিত হবে।     

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

  
Share
Tweet
Pin
Share
No comments

সামাজিক অসাম্য কাকে বলে ? সামাজিক অসাম্যের বৈশিষ্ট আলোচনা কর। 

সামাজিক অসাম্যের সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট। 




সামাজিক অসাম্যের সংজ্ঞা :- 


Class and Class Conflict in Industrial Society গ্রন্থে Ralf Dahrendorf সামাজিক অসাম্যের সংজ্ঞা নির্দেশ করতে গিয়ে বলেছেন , সম্পদ , মর্যাদা , ক্ষমতা এবং কর্তৃত্বের উপর ভিত্তি করে ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর মধ্যে যে বৈষম্য তৈরী হয় - তা'ই হল অসাম্য। 

Krisberg তাঁর Social Inequality গ্রন্থে বলেছেন , প্রতিটি সমাজে অসাম্য বর্তমান। অসাম্য হল একপ্রকার উচ্চ - নীচ ভেদাভেদ যা নির্দেশ করে সমাজস্থ কোনো শ্রেণীর ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর তুলনায় অন্য ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কাছে অধিক বস্তুগত বা সমাজগত সম্পদ রয়েছে। 

অগবার্ন ও নিমকফ মনে করেন , সামাজিক স্তরবিন্যাসের মধ্যে সামাজিক অসাম্যের বীজ নিহিত রয়েছে। 

আঁদ্রে বেতেই বলেছেন , শ্রেণী , সামাজিক অসাম্য , সামাজিক স্তরবিন্যাস - প্রতিটি ব্যবস্থা একে অপরের সাথে সম্পর্কিত। 

সুতরাং , সমাজবদ্ধ মানুষের পৃথক অবস্থান , পুরস্কার ও শাস্তিপ্রদান , সম্পত্তি - ক্ষমতা ইত্যাদির অসম বন্টন - ইত্যাদির মধ্যে দিয়ে সমাজবদ্ধ মানুষের যে অসম অবস্থান লক্ষ্য করা যায় - তাকেই সামাজিক অসাম্য বলে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো


সামাজিক অসাম্যের বৈশিষ্ট :- 


১. সামাজিক অসাম্য প্রতিটি সমাজে বর্তমান। প্রতিটি সমাজেই সম্পদ , ক্ষমতা , কর্তৃত্ব , সামাজিক অবস্থান ইত্যাদির ভিত্তিতে সমাজে অসাম্য প্রতিষ্ঠিত হয়। 

২. সামাজিক অসাম্যগুলি দেশ ও কালভেদে ভিন্ন ভিন্ন হলেও তাদের মৌলিক চরিত্র সর্বদা একমুখী হয়। 

৩. সামাজিক অসাম্যগুলি পরস্পর সম্পর্কিত। যেমন , যেসকল ব্যক্তিবর্গের নিকট বস্তুগত সম্পদ কম থাকে তারা স্বাভাবিকভাবেই সমাজের কম কর্তৃত্বের অধিকারী হন। 

৪. সামাজিক অসাম্য সামাজিক সচলতার পথ সৃষ্টি করে। সামাজিক অসাম্যের শিকার একজন ব্যক্তি সর্বদা নিজের সামাজিক অবস্থান পরিবর্তন করে নিজের জীবন থেকে অসাম্য দূর করার চেষ্টা করেন। ফলে সামাজিক সচলতা তৈরী হয়। 

৫. সামাজিক অসাম্য সর্বদা এক শ্রেণীর মানুষের নিকট কুফল প্রদান করে। 

৬. সামাজিক অসাম্য ব্যক্তিগত , সামাজিক , অর্থনৈতিক , শিক্ষা , ধর্ম - ইত্যাদি সর্বক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হয়। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো


৭. রবীন্দ্রনাথ বলেছেন , সামাজিক অসাম্য হল সমাজের মূল চালিকা শক্তি। কেননা , সমাজে অসাম্য না থাকলে সমাজ গতিহীন হয়ে পড়ে। 

৮. সামাজিক অসাম্য বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনের জন্ম দিয়েছে। যেমন - দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণ - বিদ্বেষ বিরোধী আন্দোলন , সারা পৃথিবী ব্যাপী নারী অধিকার আন্দোলন , ভারতে দলিত আন্দোলন - ইত্যাদি। 

৯. সামাজিক অসাম্যের ফলে মানুষের গুণ , বৈশিষ্ট , সক্ষমতা ও সামর্থ্য সমানভাবে বন্টিত হয়না। এগুলির সমাজ বন্টনের অভাবে অর্জিত মর্যাদার ক্ষেত্রে তারতম্য সৃষ্টি হয়। 

১০. সামাজিক অসাম্য সামাজিক বিভেদীকরণের  জন্ম দেয়। যেকোনো ধরণের অসাম্য থেকেই  সমাজস্থ বাক্তিবর্গের মধ্যে বিভেদ তৈরী হয়। 

১১. অধিকার - ভোগ , গুণ বা বৈশিষ্ট , কর্তৃত্ব , কৃতিত্ব বা সম্পাদন - ইত্যাদি সমস্ত বিষয় সামাজিক অসাম্যের সঙ্গে যুক্ত। 

১২. সামাজিক অসাম্য সমাজের সকল অংশের মানুষকে প্রভাবিত করে এবং অধিকার - ভোগ ও বৈষম্যের ধারা অব্যাহত থাকে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

Share
Tweet
Pin
Share
No comments
Newer Posts
Older Posts

Followers

Pages

  • Home
  • Privacy Policy
  • Disclaimer
  • CONTACT ME
  • About Me

Contact Form

Name

Email *

Message *

About me

Hallow viewers , myself Nandan Dutta [Subhankar Dutta], reside at Maheshpur,Malda.
I made this website for the students of B.A. courses under Gour Banga University. Here you can get suggestions of different subjects like HISTORY , SOCIOLOGY , POLITICAL SCIENCE & EDUCATION.
In future I will add MCQ sections of those subjects.


Categories

  • 1ST SEMESTER SUGGESTION (1)
  • 2 ND YEAR SUGGESTION (1)
  • 2ND SEMESTER (1)
  • 3RD SEMESTER (8)
  • BENGALI NOTES (21)
  • CU suggestion. (1)
  • EDUCATION NOTES (141)
  • ENGLISH COMPULSORY (16)
  • GBU Suggestion. (7)
  • HISTORY EUROPE & WORLD (46)
  • HISTORY NOTES (68)
  • POL SC NOTES (68)
  • SOCIOLOGY NOTES (72)
  • WBCS 2020 (1)

recent posts

Blog Archive

  • August 2025 (4)
  • May 2025 (3)
  • April 2025 (20)
  • March 2025 (12)
  • February 2025 (8)
  • November 2024 (5)
  • October 2024 (2)
  • September 2024 (2)
  • June 2024 (2)
  • March 2024 (6)
  • February 2024 (4)
  • October 2023 (5)
  • May 2023 (5)
  • April 2023 (1)
  • December 2022 (1)
  • November 2022 (13)
  • September 2022 (2)
  • August 2022 (7)
  • July 2022 (29)
  • June 2022 (10)
  • May 2022 (25)
  • April 2022 (24)
  • March 2022 (16)
  • February 2022 (19)
  • January 2022 (21)
  • December 2021 (46)
  • November 2021 (5)
  • October 2021 (6)
  • September 2021 (5)
  • August 2021 (41)
  • July 2021 (43)
  • June 2021 (31)
  • May 2021 (7)
  • April 2021 (1)
  • July 2020 (1)
  • June 2020 (3)
  • April 2020 (1)
  • November 2019 (1)
  • July 2019 (1)
  • June 2019 (1)
  • May 2019 (1)
  • April 2019 (2)
  • January 2019 (1)

Pages

  • Home
  • 2nd SEM ভাষাতত্ত্ব :
  • বাংলা উপভাষা
  • দ্বিতীয় পুলকেশীর কৃতিত্ব
  • ভারতীয় সংবিধানে বর্ণিত সাম্যের অধিকারগুলি আলোচনা করো।
  • হর্ষবর্ধনের কৃতিত্ব আলোচনা করো। তাকে কি উত্তর পথনাথ বলা যায় ?
  • ভারতীয় সংবিধানের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য :-
  • উদারনীতিবাদ : সংক্ষিপ্ত ধারণা :-
  • চোল শাসনব্যবস্থা :-
  • গুপ্তযুগ সুবর্ণযুগ সম্পর্কিত আলোচনা।
  • ৬. উদাহরণসহ মধ্যযুগের বাংলাভাষার কয়েকটি বৈশিষ্ট আল...
  • 1. Marxism
  • আধুনিক বাংলা ভাষা ও তার বৈশিষ্ট।
  • Discuss the career and achievements of Samudragupta .
  • ভাষাতত্ত্ব

Created with by ThemeXpose | Distributed by Blogger Templates