দারিদ্র দূরীকরণের বিভিন্ন কর্মসূচি ও পরিকল্পনা।

by - April 25, 2022

দারিদ্র দূরীকরণের বিভিন্ন কর্মসূচি ও পরিকল্পনা। 

ভারতে দারিদ্র দূরীকরণের বিভিন্ন কর্মসূচি ও পরিকল্পনাগুলো আলোচনা কর। 

Poverty alleviation Programmes in India . ( In Bengali ) . 




দারিদ্র দূরীকরণের বিভিন্ন কর্মসূচি ও পরিকল্পনা :- 


১. বিভিন্ন পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা :- 
স্বাধীনতা লাভের পরবর্তীকালে ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে পরিকল্পনা কমিশন গঠিত হয়। পরিকল্পনা কমিশনের সভাপতি ছিলেন  প্রথম প্রধানমন্ত্রী পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু। বিভিন্ন পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দারিদ্র দূরীকরণে সহায়তা করে। যেমন - 
 
(ক ) প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ( ১৯৫১ - ১৯৫৬ ) উন্নয়নমূলক পদক্ষেপের দ্বারা জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন , মুদ্রাস্ফীতির হার কমানো , অর্থনৈতিক উন্নয়ন , জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ - ইত্যাদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। 
(খ ) দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ( ১৯৫৬ - ১৯৬১ ) দ্রুত শিল্পায়ন , কর্মসংস্থানের সুযোগ , কৃষিজ উৎপাদন ২৫% বৃদ্ধি - ইত্যাদি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়। 
(গ ) তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ( ১৯৬১ - ১৯৬৬ ) মূল লক্ষ্য ছিল জাতীয় আয় ৩০% ও মাথাপিছু আয় ১৭% বৃদ্ধি ; অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষার প্রবর্তন ; কৃষিক্ষেত্রে ৩৫ লক্ষ ও অন্যান্য ক্ষেত্রে ১ কোটি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা। 
(ঘ ) চতুর্থ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ( ১৯৬৯ - ১৯৭৪ ) পরিবার পরিকল্পনা , রপ্তানি বৃদ্ধি , কৃষিজ উৎপাদন বৃদ্ধি - ইত্যাদি বিষয়গুলিতে জোর দেওয়া হয়। 
(ঙ ) পঞ্চম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার ( ১৯৭৪ - ১৯৭৮ ) মূল লক্ষ্য ছিল দারিদ্র দূরীকরণ ও অর্থনৈতিক স্বয়ংসম্পূর্ণতা এবং এই উদ্দেশ্যে ২০ দফা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। 


২. রাষ্ট্রীয়করণ :- 
১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে রাষ্ট্রীয়করণের নীতি গৃহীত হয়। শুরুতেই ১৪ টি ব্যাংককে রাষ্ট্রীয়করণ করা হয়। এরপর ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দ থেকে কয়লাখনি , লৌহ - ইস্পাত শিল্প ও অন্যান্য বৃহদায়তন শিল্পগুলিকে রাষ্ট্রীয়করণের কাজ শুরু হয়। এই রাষ্ট্রীয়করণ নীতির মূল উদ্দেশ্য ছিল সমাজের দুর্বল ও আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া অংশের জন্য উন্নয়নমূলক নীতি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং সুলভ ঋণ প্রদান। 

৩. বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচি :- 
স্বাধীনতার পর থেকেই গ্রামীণ এলাকার উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গৃহীত হয় যেগুলি পরোক্ষভাবে দারিদ্রতা দূরীকরণের সহায়ক হয়। এইসকল কর্মসূচিগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হল - 
(ক ) NREGS বা , National Rural Employment Gurantee Scheme প্রকল্পটি গৃহীত হয় ২০০৬ সালে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ এলাকায় বসবাসকারী কর্মক্ষম ব্যক্তিদের বছরে ১০০ দিনের কাজের নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়। এটি ১০০ দিনের কাজ প্রকল্প নামেও পরিচিত। 
(খ ) জওহর রোজগার যোজনা বা JRY প্রকল্পটি চালু হয়। এই প্রকল্পের মাধ্যমে দরিদ্র পরিবারগুলির ১ জনকে বছরে ১০০ দিনের কাজের সুযোগ প্রদান করা হয়। এর মধ্যে ৩০% মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত। 
(গ ) প্রধানমন্ত্রী কর্মসংস্থান প্রকল্প বা PMEGP প্রকল্পটির মাধ্যমে গ্রামীণ যুবকদের স্বনির্ভর করার চেষ্টা করা হয়। 
(ঘ ) স্বর্ণজয়ন্তী গ্রাম স্বরোজগার যোজনা বা SGSY প্রকল্পটি চালু হয় ১৯৯৯ সালে। মূলতঃ দরিদ্র পরিবারগুলিকে বৃত্তিমূলক ও পেশাগত প্রশিক্ষণ , ব্যাংক ঋণ - ইত্যাদির মাধ্যমে স্বনির্ভর করে তোলা ছিল এই প্রকল্পের লক্ষ্য। 
(ঙ ) ভারত নির্মাণ প্রকল্প চালু হয় ২০০৫ সালে। এর মাধ্যমে গ্রামীণ জীবনের প্রধান ৬ টি উপাদান - সেচ , পানীয় জল , রাস্তা , আবাসন , টেলিফোন , বিদ্যুৎ - ইত্যাদি সুনিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে কাজ শুরু হয়। 
(চ ) গ্রামীণ ভূমিহীনদের নিয়োগ নিশ্চয়তা প্রকল্প বা RLEGP প্রকল্পটি চালু হয় ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে। এই প্রকল্পে ভূমিহীন পরিবারের অন্ততঃ ১ জনকে ১০০ দিনের কাজের নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়। 


৪. দারিদ্র দূরীকরণের প্রত্যক্ষ কর্মসূচি :- 
উপরোক্ত কর্মসূচীগুলি ছাড়াও দারিদ্র দূরীকরণের জন্য কিছু প্রত্যক্ষ ও বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। যেমন - 
(ক ) অন্তদয় কর্মসূচি চালু হয় ১৯৭৭ সালে। এর লক্ষ্য ছিল প্রতি বছর পাঁচটি করে দরিদ্র পরিবারের উন্নতিসাধন করা। 
(খ ) অন্তদয় অন্ন যোজনা প্রকল্পটি চালু হয় ২০০০ সালে। এর লক্ষ্য ছিল দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী পরিবারগুলিতে ৩০ কেজি চাল বা গম প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়। 
(গ ) সুসংহত গ্রামীণ উন্নয়ন প্রকল্প বা IRDP প্রকল্পটি ১৯৭৬ সালে চালু হয়। প্রথমে ২০ টি জেলাকে নির্বাচন করে উন্নয়নের কাজ শুরু হয়। বর্তমানে সারা ভারতের প্রতিটি গ্রাম এই প্রকল্পের আওতাভুক্ত। 
(ঘ ) গরিবি হঠাও এবং বেকারি হঠাও কর্মসূচি :- ১৯৭১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এই শ্লোগান তোলেন। 
(ঙ ) গ্রামীণ যুবকদের স্বনিযুক্তি কর্মসূচিভিত্তিক প্রশিক্ষণ বা TRYSEM প্রকল্পটি চালু হয় ১৯৭৯ সালে। এর প্রধান লক্ষ্য ছিল গ্রামীণ যুবকদের মধ্যে প্রযুক্তিগত দক্ষতার বিকাশ ঘটিয়ে কৃষি , শিল্প , পরিষেবা ও বাণিজ্য ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি। 
(চ ) শহরভিত্তিক দরিদ্রদের জন্য স্বনিযুক্তি কর্মসংস্থান প্রকল্প বা SEPUP প্রকল্পটি চালু হয় ১৯৮৬ সালে। এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল শহরাঞ্চলে বসবাসকারী বেকার যুবকদের ব্যবসা শুরু করার জন্য ঋণ প্রদান এবং ২৫% ভর্তুকির ব্যবস্থা। 

এছাড়াও দারিদ্রতা দূরীকরণের লক্ষ্যে অন্যান্য বিভিন্ন কর্মসূচি গৃহীত হয়। যেমন - ICDS , JNNURM , রাষ্ট্রীয় মহিলা কোষ , ক্রেস বা শিশু লালনাগার , সুসংহত শিশু কল্যাণ প্রকল্প - ইত্যাদি।  

   

You May Also Like

0 comments