ভারতে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলাফল।

by - April 27, 2022

ভারতে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলাফল। 

ভারতে জনাধিক্যের ফলাফল। 

ভারতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কুপ্রভাব। 

Consequences of rapid population growth in India. ( In Bengali ) . 




ভারতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলাফল :- 

স্বাধীনতালাভের পরবর্তীকালে বিভিন্ন পরিকল্পনা ও কর্মসূচির মাধ্যমে ভারতের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হলেও তা আদৌ ফলপ্রসূ হয়নি। ২০১১ সালের জনগণনাতেই তা পরিষ্কার হয়েছে ; ভারতের জনসংখ্যা ১২১ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। স্বাধীনতালাভের পরবর্তীকালে ভারতের অন্যান্য ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হলেও দেশের সামগ্রিক উন্নতি অত্যন্ত নগন্য - এর একমাত্র কারণ হল তীব্র হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি। জনসংখ্যা বৃদ্ধির এই দ্রুত হার ভারতীয় জনজীবনে সর্বদাই কুফল প্রদান করেছে। বর্তমানে ভারতের বহু অংশের মানুষ নিরক্ষরতা , অপুষ্টি , বেকারত্ব , স্বাস্থ্য সমস্যা - ইত্যাদিতে জর্জরিত। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলাফলগুলি হল - 


১. দুর্বিসহ জীবনযাত্রা :- 
ভারতের প্রায় ২৫ মিলিয়ন মানুষ গৃহহীন , ১৭ কোটি মানুষ পরিশুদ্ধ পানীয় জল থেকে বঞ্চিত , ২৯ কোটি যুবক নিরক্ষর , ৫৩% শিশু রুগ্ন , ১১ লক্ষ পরিবার বিদ্যুৎহীন। এইভাবে জাতীয় জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ জীবনধারণের ন্যুনতম মাত্রা বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন। জনসংখ্যা বৃদ্ধি এর সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সম্পর্কিত। 

২. মানব উন্নয়ন কর্মসূচিতে পিছিয়ে ভারত :- 
তীব্র হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে মানব উন্নয়ন কর্মসূচিগুলির সার্থক রূপায়ণ ভারতে সম্ভব হচ্ছে না। মানব উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের দিক দিয়ে ভারত বর্তমানে ১৩৫ তম স্থান অধিকার করে - যা অত্যন্ত হতাশাজনক। বিপুল সংখ্যক জনসংখ্যার অবস্থানের ফলে ভারতের মত উন্নয়নশীল দেশে মানব উন্নয়ন কর্মসূচীগুলি ব্যাহত হচ্ছে। যেমন আইন করে শিশু শ্রমিক সমস্যা দূর করতে চাইলেও অর্থনৈতিক কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। 


৩. সামগ্রিক উন্নয়ন ব্যাহত :- 
তীব্র হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে ভারতের সামগ্রিক উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। সরকারি অর্থ ব্যয় হলেও সেই অনুপাতে উন্নয়ন ঘটছে না। শিক্ষা , অর্থনীতি , জীবনযাত্রার মান - ইত্যাদি সর্বক্ষেত্রেই উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। ভারতের বিপুল সংখ্যক মানুষের সার্বিক উন্নয়নের জন্য যে বিরাট অংকের অর্থ ও পরিকাঠামো দরকার তার অনুপস্থিতির ফলে সমস্যাগুলি সর্বপ্রকার উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাধা তৈরী করছে। 

৪. অর্থনৈক বিকাশ ব্যাহত :- 
২০১৩ সালের মানব উন্নয়ন সূচক বা HDI অনুযায়ী ভারতের স্থান ১৩৫ - যা অত্যন্ত হতাশাজনক। জাতীয় সঞ্চয় তহবিল থেকে বিপুল পরিমান অর্থ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভর্তুকি , ভরণপোষণ - ইত্যাদি খাতে ব্যয় হয়। অর্থনৈতিক উন্নয়নের থেকে অনেক বেশি প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে তীব্রভাবে অর্থনৈতিক কষ্টে জর্জরিত মানুষদের জন্য অর্থ বরাদ্দ করা। এগুলির ফলে ভারতে সুদূরপ্রসারী ফলদায়ক কোনো অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা সম্ভব হয়না। 

৫. মূল্যবোধের অবক্ষয় :- 
তীব্র জনসংখ্যার ফলে সমগ্র ভারত জুড়ে এক চরম অসহিষ্ণুতা দেখা দিয়েছে। মানুষ ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত - কোনো চাহিদাই পূরণ করতে সক্ষম হচ্ছে না। তাই সার্বিক ক্ষেত্রে নীতি , আদর্শ , মূল্যবোধ , দেশাত্মবোধ - ইত্যাদির চরম অবক্ষয় ঘটছে। এর ফল অত্যন্ত মারাত্মক এবং আগামী দিনগুলিও যে এরজন্য আরও চরম হতাশা ডেকে আনবে - সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। 

৬. কর্মসংস্থানের সুযোগের অভাব ও বেকারত্ব :- 
বেকারত্ব ভারতের বুকে এক অভিশাপ স্বরূপ। ভারতের বিপুল পরিমাণ জনসংখ্যার ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগ তীব্রভাবে সংকুচিত হয়েছে। শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে। চাকুরী ক্ষেত্রে ১০ টি পদের জন্য দশ লক্ষ আবেদন জমা পড়ে - যা ভারতের তীব্র বেকারত্বের বিভীষিকাময় রূপটিকে প্রকাশ করে। বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে কর্মী সংকোচন , ছাঁটাই - ইত্যাদির ফলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। বিরাট সংখ্যক জনসংখ্যার জন্য সরকারি নীতিগুলিও সফলভাবে কার্যকর করা সম্ভব হচ্ছে না। 


৭. শিক্ষা সমস্যা ও নিরক্ষরতা :- 
২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী ভারতে সাক্ষরতার হার ৭৪.০৪ শতাংশ। অর্থাৎ প্রায় ২৫ শতাংশের বেশি মানুষ নিরক্ষর। অতিরিক্ত জনসংখ্যার কারণে সর্বজনীন শিক্ষা বিস্তারের নীতিগুলি সার্থকভাবে প্রয়োগ করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলিতে যে বিরাট সংখ্যক ছাত্র ভর্তি হয় - তার ফলে পঠন - পাঠনের আদর্শ পরিবেশ ব্যাহত হয়। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতেও শিক্ষার্থীর সংখ্যা অতিরিক্ত। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁচেছে যে দ্বিগুন পরিমাণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করলেও সমস্যার সমাধান হবেনা। 

৮. চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা :- 
ভারতে অতিরিক্ত জনসংখ্যার দরুন চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য পরিষেবা ভয়াবহ সংকটের সম্মুখীন। বর্তমানে প্রতি ১ লক্ষ রোগী পিছু ডাক্তারের সংখ্যা মাত্র ৬৯ জন। সংখ্যাটি যথেষ্ট হতাশা ও উদ্বেগজনক। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে প্রায় ২০০০ রোগী পিছু শয্যা সংখ্যা মাত্র একটি। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার এই করুণ দশা কোনো দেশের পক্ষেই কাম্য নয়। বহু সংখ্যক রোগী প্রতিদিন শয্যার অভাবে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত থাকেন। 

৯. দুর্নীতি ও অসামাজিক কার্যকলাপ বৃদ্ধি :- 
ব্যাপক হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে মানুষের মধ্যে বেকারত্ব ও অর্থের অভাব অত্যন্ত তীব্র। এর ফলে স্বাভাবিকভাবেই দুর্নীতি ও অন্যান্য অসামাজিক কার্যকলাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। অর্থের অভাবে বহু মানুষ দুর্নীতিমূলক আচরণ ও অসদুপায় বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে একদিকে তারা যেমন অসামাজিকতার অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছেন ; অন্যদিকে তেমন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। 

১০. খাদ্যের যোগান সংক্রান্ত সমস্যা :- 
ভারত খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী মানুষদের একটি বিরাট অংশ উপযুক্ত খাদ্য গ্রহণ থেকে বঞ্চিত থাকেন। সরকারি খাদ্য প্রকল্পগুলির বাইরে সেই সকল মানুষ খাদ্য সংগ্রহ করতে পারেন না। এই সমস্যার সঙ্গেও জনসংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি সম্পর্কিত। জনসংখ্যার উর্দ্ধমুখী প্রকৃতির ফলে সমস্ত স্তরের মানুষ সমানভাবে খাদ্যপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত থাকেন। 

পরিশেষে বলা যায় , তীব্র জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে আজও ভারতের বেশিরভাগ শিশু ও মায়েরা অপুষ্টির শিকার , নাগরিকজীবনে পৌর পরিষেবা সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা , শহরাঞ্চলে বাসস্থানের সমস্যা ও বস্তি অঞ্চলের বিস্তার - ইত্যাদি বিভিন্ন সমস্যা বর্তমান। জনসংখ্যা নীতি সঠিকভাবে কার্যকরী না হলে - এর দ্রুত ও স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়।

     

You May Also Like

0 comments