ভারতে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ।

by - April 27, 2022

ভারতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ। 

ভারতে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ। 

ভারতে জনবিস্ফোরণের কারণ। 

The reason for the rapid population growth in India. ( In Bengali ) . 




ভারতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ :- 


কোনো একটি দেশের সার্বিক জনগণের উপস্থিতিকে সংখ্যাতত্ত্বের পরিভাষায় জনসংখ্যা হিসাবে ধরা হয়। জনসংখ্যা প্রতিটি দেশের সম্পদ। কিন্তু ভারতে যেভাবে দ্রুত হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি ঘটছে তা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। ভারতে প্রতি বছর জনসংখ্যা বৃদ্ধির পরিমাণ গোটা অস্ট্রেলিয়ার মোট জনসংখ্যার সমান। পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ১৬% চাপ ভারত একাই বহন করে। অথচ রাশিয়া ভারতের চেয়ে ১৩ গুণ বড় হয়েও বিশ্ব জনসংখ্যার মাত্র ৩% ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের চেয়ে আকৃতিতে ৭ গুণ বড় হয়েও বিশ্ব জনসংখ্যার মাত্র ৫% চাপ বহন করে। ভারতে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণগুলি হল - 


১. জন্মহার ও মৃত্যুহারের মধ্যে পার্থক্য :- 
১৯৯৩ সালের হিসাবে ভারতে জন্মহার ২৮.৭% এবং মৃত্যুহার ৯.৩%  । আবার ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী জন্মহার ২০.৯৭% কিন্তু মৃত্যুহার ৭.৪৮%  । জন্মহার ও মৃত্যুহারের মধ্যে এই বিরাট পার্থক্য থাকার জন্য ভারতের জনসংখ্যার মধ্যে ভারসাম্য বজায় থাকছে না। ফলে অত্যন্ত দ্রুত হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

২. যথার্থ পরিবার পরিকল্পনার অভাব :- 
ভারতে ১৯৭৬ সালে জাতীয় জনসংখ্যা নীতি ঘোষিত হলেও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের পক্ষে তা সর্বাংশে কার্যকর হয়নি। এমনকি একবিংশ শতকের শুরু পর্যন্তও ভারতীয়রা পরিবার পরিকল্পনার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারেনি। এর জন্য দায়ী মানুষের অসচেতনতা ও সরকারি ঔদাসীন্য। ফলে ২০১১ সালের জনগণনায় ভারতের জনসংখ্যা ১২১ কোটি ছাড়িয়ে যায়। বর্তমানে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁচেছে যে অতি দ্রুত পরিবার পরিকল্পনা নীতিকে বাস্তবায়ন না করতে পারলে ভারতে অর্থনীতি অচিরেই ধ্বংস হয়ে যাবে। 


৩. বাল্য বিবাহ :- 
বর্তমানে প্রচার ও সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে বাল্য বিবাহের হার কিছুটা কমলেও তা আজও প্রচলিত। আজও গোপনে প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে অবাধে বাল্য বিবাহের ঘটনা ঘটেই চলেছে। বাল্য বিবাহ ও অধিক পরিমাণে সন্তান ধারণের বিষয়টি সরাসরি সম্পর্কিত। প্রাপ্তবয়স্কা নারীর বয়স যত বাড়তে থাকে ততই তার সন্তান ধারণের ক্ষমতা কমতে থাকে। কিন্তু , বয়ঃসন্ধির পর থেকে প্রাপ্তবয়স্কার নীচে বিবাহ দিলে নারীর সন্তান ধারণের ক্ষমতা অতিমাত্রায় থাকে। যেহেতু ভারতীয় সমাজে মেয়েদের অল্প বয়সে বিবাহ দেওয়ার রীতি প্রচলিত - তাই স্বাভাবিকভাবেই জনসংখ্যা বৃদ্ধি ঘটেছে। 

৪. নিরক্ষরতা :- 
২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী ভারতের সাক্ষরতার হার ৭৪.০৪% ; অর্থাৎ ভারতে এখনো ২৫% এর বেশি মানুষ নিরক্ষর। এই বিপুল সংখ্যক মানুষ নিরক্ষর থাকার জন্য তারা পরিবার পরিকল্পনার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারেন না। অধিক পরিমাণে সন্তানের জন্ম দেওয়া কীভাবে তার শিশুর ভবিষ্যৎ ও জাতীয় সমাজ ও অর্থনীতির ক্ষতি করে - সে সম্পর্কে তারা অবগত হতে পারেন না। 

৫. নারী শিক্ষার অভাব :- 
২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী মাত্র ৬৫.৪৬% নারী সাক্ষর। এই বিপুল পরিমাণ নিরক্ষরতা পরোক্ষভাবে ভারতে জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধির জন্য দায়ী। নিরক্ষর থাকার কারণে নারীরা একদিকে যেমন পরিবার পরিকল্পনার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারেন না ; তেমনই অন্যদিকে গর্ভনিরোধক পদ্ধতিগুলির ব্যবহার সম্পর্কেও তারা জানতে পারেন না। 

৬. বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক প্রভাব :- 
ভারতীয়দের মধ্যে পুত্রসন্তান অধিক কাম্য। তাই , অনেকসময় পুত্র সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে একাধিক সন্তানের জন্ম হয়। হিন্দুদের মধ্যে , বংশরক্ষার ক্ষেত্রে পুত্র সন্তান কাম্য। আবার মুসলিম সমাজে পরিবার পরিকল্পনা হল ধর্মবিরোধী। ঈশ্বর অবতার রূপে মাতৃগর্ভে জন্মগ্রহণ করবেন - এইরকম বিশ্বাস - বহু ক্ষেত্রে জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে। 


৭. গ্রামীণ সমাজে প্রচলিত যৌথ পরিবারতন্ত্রের প্রভাব :- 
একক পরিবার গুলিতে অধিক সংখ্যায় সন্তান প্রজনন ও তাদের লালন পালন একটি সমস্যা হলেও যৌথ পরিবারে এটি কোনো সমস্যা নয়। ভারতে স্বাধীনতার পরও বেশ কয়েক দশক ধরে গ্রামীণ এলাকায় যৌথ পরিবারের একাধিপত্য ছিল। বর্তমানে যৌথ পরিবারগুলোতে ভাঙন ধরলেও আজও ভারতের গ্রামীণ এলাকায় বহু যৌথ পরিবারের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। ভারতীয় যৌথ পরিবারগুলোতে অধিক পরিমাণে সন্তান প্রজননের মানসিকতা জনসংখ্যা বৃদ্ধির একটি অন্যতম কারণ। 

৮. ভারতীয় জলবায়ুর প্রভাব :- 
ভারতীয় জলবায়ু প্রধানতঃ উষ্ণ প্রকৃতির। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে যে অধিক উষ্ণ জলবায়ু নারীর গর্ভধারণের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে খুব অল্প বয়সেই নারীরা গর্ভ সঞ্চারের ক্ষমতা অর্জন করেন। ফলে , ভারতীয় জলবায়ু পক্ষান্তরে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সহায়ক। 

৯. গ্রামীণ জীবন যাত্রার প্রভাব :- 
ভারতে প্রায় ৮০ শতাংশ গ্রাম। গ্রামীণ জীবনে সচেতনতার অভাব , নিরক্ষরতা - ইত্যাদির কারণে পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে তাদের বিশেষ কোনো ধারণা থাকেনা। ছোট পরিবারের প্রয়োজনীয়তা তারা উপলব্ধি করতে পারেন না। 

উপরোক্ত কারণগুলি ছাড়াও আরো বহু বিষয় ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য দায়ী। যেমন - অতিরিক্ত দারিদ্রতার কারণে মানুষ মনে করেন অধিক সংখ্যায় সন্তানের জন্ম দিলে ভবিষ্যতে সেই সন্তানেরা দারিদ্রতা দূর করতে সক্ষম হবে। এছাড়াও , দরিদ্র পরিবারগুলির মধ্যে মনোরঞ্জনের অন্য কোনো উপায় না থাকায় যৌনতাকে মনোরঞ্জনের একমাত্র উপায় হিসাবে গ্রহণ করেন। তাছাড়াও ভারতে প্রচুর মানুষ বিভিন্ন সময়ে , বিভিন্ন কারণে অনুপ্রবেশ করেছেন। অনুপ্রবেশের এই প্রক্রিয়া আজও ক্রিয়াশীল। এইভাবে বিভিন্ন কারণের সমন্বয়ে ভারতে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি ঘটছে।    

 

You May Also Like

0 comments