ভারতে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ ও কর্মসূচি।

by - April 28, 2022

ভারতে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ ও কর্মসূচি। 

Various measures and programs taken for population control in India. ( In Bengali ) .




ভারতে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ ও কর্মসূচি। 


স্বাধীনতার পূর্বে ও বিশেষ করে স্বাধীনতার পর ভারতের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গৃহীত হয়। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য গৃহীত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কর্মসূচি সম্পর্কে নীচে আলোচনা করা হল। 


১. পরিবার পরিকল্পনা ( ১৯৫২ ) :- 

১৯৫২ সালে Population Policy Committee গঠিত হয় এবং এটি একটি পৃথক দপ্তর হিসাবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি লাভ করে। এটি মূলতঃ কেন্দ্রের সাহায্যপ্রাপ্ত রাজ্যের অধীনস্থ একটি সংস্থা। এই পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলি হল - 
(i) প্রতিটি জনসম্প্রদায়ের স্বাস্থ্য উন্নতির জন্য একটি করে স্বাস্থ্যকেন্দ্র। 
(ii) প্রতি দশ হাজার জনসংখ্যার জন্য একটি করে উপ - স্বাস্থ্যকেন্দ্র। 
(iii) কর্মী এবং উপকরণ তৈরির জন্য বিভিন্ন বাধা এবং অভাবকে চিহ্নিত করা। 
(iv) প্রতিটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বার্ষিক ১২০০০ টাকার এবং প্রতিটি উপ - স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বার্ষিক ২০০০ টাকার ঔষধের বন্দোবস্ত করা। 
(v) প্রতি চারটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মধ্যে একটিকে ৩০ শয্যাযুক্ত গ্রামীণ হাসপাতালে পরিণত করা 
(vi) পরিবার কল্যাণ সংক্রান্ত কর্মসূচিগুলিকে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে উপনীত করা। 


২. জাতীয় জনসংখ্যা নীতি ১৯৭৬ ( National Population Policy 1976 ) :- 

১৯৭৬ সালে জাতীয় জনসংখ্যা নীতি গৃহীত হয়। এই জনসংখ্যা নীতির উল্লেখযোগ্য দিকগুলি হল - 
(i) প্রতিটি পরিবারের প্রতিটি সদস্যের স্বাস্থ্য কল্যাণ ও বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান। 
(ii) বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের স্বাস্থ্য ও শিক্ষা সংক্রান্ত বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ। 
(iii) নারীশিক্ষার প্রসারের জন্য সরকরি ও বেসরকারি - উভয় উদ্যোগকে স্বাগত জানানো। 
(iv) মহিলাদের বিবাহের ন্যূনতম বয়স ১৮ ও পুরুষদের ২১ বছর ধার্য করা। 
(v) জনসংখ্যার সার্বিক উন্নয়নের জন্য নীতি নির্ধারণ , শুল্ক সংস্কার এবং উপযুক্ত অনুদানের ব্যবস্থা করা। 
(vi) রাজ্যস্তরে পরিবার পরিকল্পনাগুলি কতটা সাফল্য পাচ্ছে - তার উপর দৃষ্টি রেখে কেন্দ্রীয় সাহায্য ৯% বৃদ্ধি করা। 
(vii) জনসংখ্যার সার্বিক বিকাশের জন্য শিক্ষার প্রয়োজন। তাই সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষার বিস্তারের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া। 
(viii) জনসংখ্যা নীতির বাস্তবায়নের জন্য এবং জনসংখ্যা নীতি সম্পর্কে জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রচার মাধ্যমগুলিকে সর্বোচ্চ পরিমাণে ব্যবহার করা। 
(ix) পরিবার পরিকল্পনা নীতি যথার্থভাবে কার্যকর করতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলিকে কাজে লাগানো এবং তাদের যেকোনো ধরণের উদ্যোগকে স্বাগত জানানো। 
(x) যে সকল সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান জনসংখ্যা নীতিকে কার্যকর করতে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করে - তাদের ব্যবহৃত অর্থের উপর সম্পূর্ণ শুল্ক - ছাড়। 
(xi) জনন সংক্রান্ত বিদ্যা ও গর্ভনিরোধক সম্পর্কিত গবেষণার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ।(xii) সরকারের সমস্ত বিভাগ ও দপ্তরগুলিকে পরিবার পরিকল্পনা কার্যকর করতে কাজে লাগানো। 
(xiii) কেন্দ্রীয় মন্ত্রণালয় দ্বারা রাজ্য ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলিকে উপযুক্ত পরামর্শ ও সাহায্য প্রদান করা। 
(xiv) দুটি সন্তানের জন্মের পর বন্ধ্যাকরণের বিষয়টি সম্পর্কে জনগণকে উৎসাহিত করা।
(xv) ডাক্তার , নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। 


৩. জাতীয় জনসংখ্যা নীতি ২০০০ ( National Population Policy 2000 ) :- 

২০০০ সালে পুনরায় ঘোষিত হয় জাতীয় জনসংখ্যা নীতি। ১৯৭৬ সালের জনসংখ্যা নীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে ২০০০ সালের জনসংখ্যা নীতিতে আরো কয়েকটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বিষয়গুলি হল - 
(i) শিশু স্বাস্থ্য পরিকাঠামো উন্নয়ন ঘটানো। 
(ii) ১৪ বছর পর্যন্ত শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা। 
(iii) সকলের জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবার ব্যবস্থা করা। 
(iv) শিশু মৃত্যু হার প্রতি হাজারে ৩০ এর নীচে নামিয়ে আনা। 
(v) গর্ভনিরোধক ব্যবস্থাগুলি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। 
(vi) সন্তান প্রসব বিষয়টি স্বাস্থ্য কেন্দ্র বা প্রশিক্ষিত কর্মীদের মাধ্যমে সংঘঠিত হয় - তার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি। 
(vii) প্রতিটি শিশুর টীকাকরণ সুনিশ্চিত করা। 
(viii) জন্ম - মৃত্যু - টীকাকরণ - ইত্যাদি বিষয়গুলি নথিভুক্তিকরণ। 

পরিশেষে বলা যায় , জনসংখ্যা নীতিকে সফল করতে গেলে এবং কার্যকরভাবে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে হলে সরকারি কর্মসূচীর সঙ্গে সঙ্গে জনগণকেও সদর্থক ভূমিকা পালন করতে হবে। এ বিষয়ে - জনসাধারণের ইতিবাচক ভূমিকা , সচেতনতা ও শিক্ষার বিস্তার হল একমাত্র পথ।  


You May Also Like

0 comments