লিঙ্গ বৈষম্য বলতে কী বোঝ ? লিঙ্গ বৈষম্যের কারণগুলি লেখ।

by - April 22, 2022

লিঙ্গ বৈষম্য বলতে কী বোঝ ? লিঙ্গ বৈষম্যের কারণগুলি লেখ। 

লিঙ্গ বৈষম্যের সংজ্ঞা ও কারণ। 

লিঙ্গ বৈষম্য কাকে বলে ? ভারতে লিঙ্গ বৈষম্যের কারণগুলি উল্লেখ কর। 

What is gender inequality? Mention the causes of gender inequality in India. ( In Bengali ).




লিঙ্গ বৈষম্য :- 


ভারতীয় সংবিধানের ১৪ নং ধারায় যে সাম্যের অধিকার স্বীকৃত হয়েছে তাতে নারী , পুরুষ - সকলের সমানাধিকার স্বীকৃত হয়েছে। এছাড়াও , ১৯৭৯ সালে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ নারীদের বিরুদ্ধে সংঘঠিত সমস্ত রকমের বৈষম্যমূলক আচরণের অবসানকল্পে যে দাবিসনদ গ্রহণ করে - ভারত সরকার তার প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ। কিন্ত তাতে সমস্যার আশানুরূপ সমাধান হয়নি। 

লিঙ্গ বৈষম্য কথাটি সাধারণতঃ নারীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণকে বোঝাতে ব্যবহার করা হয়। নারী অধিকার সুরক্ষার জন্য বিভিন্ন সাংবিধানিক আইন , অধিকার অর্জনের জন্য বিভিন্ন আন্দোলন , কর্মক্ষেত্রে নারীদের সমতা প্রতিষ্ঠা , নিরাপত্তা ও মর্যাদা বৃদ্ধি - ইত্যাদি সকল বিষয় স্বত্তেও বিশ্বের প্রতিটি সমাজে লিঙ্গ বৈষম্য আজও বিরাজমান। 

যখন শুধুমাত্র লিঙ্গের ভিত্তিতে কারো প্রতি যেকোনো ধরণের বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয় বা কেউ শুধুমাত্র লিঙ্গের কারণে অসাম্যের শিকার হন - তখন তাকে লিঙ্গ বৈষম্য বলা হয়। লিঙ্গ বৈষম্যের বিভিন্ন কারণগুলি আলোচনায় করা হল - 


লিঙ্গ বৈষম্যের কারণ :- 


১. ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট :- 
লিঙ্গ বৈষম্যের সূচনা হয় আদিম মানব সমাজ থেকেই। আদিম সমাজে পুরুষেরা শিকার ও খাদ্যসংগ্রহের সাথে যুক্ত থাকত এবং নারীরা নিজেদের বাসস্থানের কাজ করত। তাই পুরুষদের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়। আবার অন্যদিকে , হিংস্র জন্তু ও শত্রুদের হাত থেকে বাঁচার জন্য তুলনামূলক বলশালী পুরুষদের উপরেই সকলে নির্ভর করত। ফলে আদিম মানব সমাজ থেকেই লিঙ্গ বৈষম্যের সূত্রপাত হয়। 

২. শ্রেণী - বিভাজন :- 
ভারতীয় সমাজে শ্রেণী বিভাজন লিঙ্গ বৈষম্যের একটি অন্যতম কারণ। সমাজে শ্রেণী বিভাজন করা হয়েছিল কেবলমাত্র পুরুষদের কর্মের ভিত্তিতে। নারীরা এক্ষেত্রে ছিলেন উপেক্ষিত। সেই সময় থেকেই কর্মের ক্ষেত্রে নারীদের উপর কম গুরুত্ব আরোপ করা হয়।


৩. সামাজিক প্রেক্ষাপট :- 
ভারতীয় সমাজে প্রতিটি মহিলার সামাজিক মর্যাদা স্থির করা হয় তার পিতা বা স্বামীর সামাজিক অবস্থান ও মর্যাদার বিচারে। এক্ষেত্রে নারীদের নিজস্ব ভূমিকা , যোগ্যতা - ইত্যাদিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়না। ভারতে বংশমর্যাদা কেবলমাত্র পুরুষতান্ত্রিক। 

৪. কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য :- 
কর্মক্ষেত্রে কাজের বা চাকরির সুযোগ , পারিশ্রমিক - ইত্যাদি সর্বক্ষেত্রে নারীরা বঞ্চনার শিকার হন। অনেক ক্ষেত্রেই সমপরিমাণ শ্রমের পরিবর্তেও তারা কম মজুরি পান। শারীরিক শক্তিযুক্ত কাজগুলিতে নারীদের তুলনায় পুরুষদের অধিক কাম্য বলে মনে করা হয়। এমনকী , বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষপদগুলিতে পুরুষদের স্থান দেওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। 

৫. পুরুষ প্রধান সমাজ :- 
ভারতীয় সমাজ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পুরুষতান্ত্রিক। নারীর স্বাধীনতা এখানে পুরুষের সম্মতির উপর নির্ভরশীল। শিক্ষাক্ষেত্র , কর্মক্ষেত্র , বিবাহ - ইত্যাদি সর্বক্ষেত্রেই নারীকে পুরুষের সম্মতির উপর নির্ভর করতে হয়। পরিবারের যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন পরিবারের কর্তা বা পুরুষ। এই ধরণের সমাজে লিঙ্গ বৈষম্য তাই অবধারিত। 

৬. শিক্ষার অভাব :- 
সাক্ষরতার দিক দিয়ে নারীরা আজও পুরুষদের তুলনায় অনেকটা পিছিয়ে আছে। ফলে খুব সহজেই তারা শোষণ , বঞ্চনা - ইত্যাদির শিকার হচ্ছেন। বহু পরিবারে আজও নারীদের শিক্ষা প্রদান করা হয় বিবাহের উদ্দেশ্যে। যথেষ্ট শিক্ষার অভাব থাকার ফলে বহু নারী তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে পারছেন না। 


৭. সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি :- 
ভারতে লিঙ্গ বৈষম্যের পেছনে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিও সমানভাবে দায়ী। ভারতীয় সমাজে আজও নারীদের উচ্চশিক্ষা , পরিবার ও সামাজিক কর্তৃত্ব , রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন - ইত্যাদি বিষয়গুলিকে ভালো চোখে দেখা হয়না। আজও মনে করা হয় নারীদের প্রধান কর্তব্য হল সন্তান প্রতিপালন ও সংসার পরিচালনা। 

৮. অর্থনৈতিক কারণ :- 
উচ্চ শিক্ষা ও বৃত্তিশিক্ষার অভাব , সামাজিক প্রথা ও দৃষ্টিভঙ্গি - ইত্যাদির কারণে বেশিরভাগ ভারতীয় নারী অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে স্বাবলম্বী নন। ফলে তাদের বিরুদ্ধে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন অন্যায় , শোষণ , বঞ্চনা - ইত্যাদিকে তারা মুখ বুজে সহ্য করে নেন। নারীরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী না হলে এই সমস্যার সমাধান অসম্ভব। 

৯. নারীদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি :- 
আবার , বহুক্ষেত্রে এমনটাও দেখা যায় , নারীরা নিজেরাই পুরুষের কর্তৃত্বকে শ্রেয় মনে করেন। পিতা বা স্বামীর অধীনে থাকাকেই নারীরা কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্বচ্ছন্দবোধ করেন। ফলে একদিকে খুব সহজেই তারা বৈষম্য ও বঞ্চনার শিকার হয়ে পড়েন এবং অন্যদিকে সমাজের পুরুষতান্ত্রিক চরিত্র বজায় রাখতে সহায়তা করেন। 

পরিশেষে বলা যায় , শহরাঞ্চলের নারীদের তুলনায় গ্রামাঞ্চলের নারীরা আরো বেশি করে লিঙ্গ বৈষম্যের শিকার। শিকার বিস্তার , রাজনৈতিক সদিচ্ছা , সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন , নারীদের সচেতনতা বৃদ্ধি , কার্যকরী নীতি প্রবর্তন - ইত্যাদির মাধ্যমে লিঙ্গ বৈষম্যের অবসান সম্ভব।    

 

You May Also Like

0 comments