বেকারত্ব কাকে বলে ? ভারতে বেকারত্বের কারণগুলি আলোচনা কর।

by - April 21, 2022

বেকারত্ব কাকে বলে ? ভারতে বেকারত্বের কারণগুলি আলোচনা কর। 

বেকারত্বের সংজ্ঞা ও কারণ। 




বেকারত্বের সংজ্ঞা / ধারণা :- 


সাধারণভাবে বলা যায় , ব্যক্তির যা আছে ও যা পাওয়ার দরকার আছে তার মধ্যে পার্থক্য তৈরী হলে তাকে বলে বেকারত্ব। বেকারত্বের সংজ্ঞা প্রসঙ্গে ডি ম্যালী বলেছেন , বেকারত্ব হল এমন একটি পরিস্থিতি যেখানে ব্যক্তি তার ইচ্ছা এবং কর্মপ্রবণতা থাকা স্বত্তেও কর্মহীন অবস্থায় থাকে। এই সংজ্ঞা অনুসরণ করে বেকারত্বের কয়েকটি নির্দিষ্ট উপাদানকে চিহ্নিত করা যায়। যেমন - 
(ক ) ব্যক্তি কর্মক্ষম হবেন। 
(খ ) ব্যক্তির কর্মপ্রাপ্তির যোগ্যতা থাকবে। 
(গ ) ব্যক্তির কর্মপ্রাপ্তির ইচ্ছা থাকবে। 
(ঘ ) ব্যক্তি তার পরিশ্রম দ্বারা কর্মপ্রাপ্তির চেষ্টা করবে। 
উক্ত সবকটি উপাদান থাকা স্বত্তেও যদি কোনো ব্যক্তির কর্মপ্রাপ্তি না ঘটে , তাহলে সেই ব্যক্তিকে বেকার  বলা যেতে পারে। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য , সন্ন্যাসী , দেউলিয়া , ভবঘুরে , মানসিক ভারসাম্যহীন - এইসকল ব্যক্তিবর্গকে বেকারত্বের অংশ বলে ধরা হয়না। 


ভারতে বেকারত্বের কারণ :- 


১. তীব্র জনস্ফীতি :- 
ভারতের তীব্র জনসংখ্যা বৃদ্ধি বেকারত্বের একটি অন্যতম প্রধান কারণ। তীব্রভাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে একদিকে বেড়েছে নিরক্ষরতার সমস্যা - যার ফলে বেকারত্ব জন্ম নেয় ; এবং অন্যদিকে ব্যাপক হারে কমেছে কর্মসংস্থানের সুযোগ। 

২. জনসংখ্যার অসম বন্টন :- 
ভৌগোলিকভাবে দেখলে ভারতের জনসংখ্যা অসমভাবে বন্টিত। যেমন - পশ্চিমবঙ্গ , বিহার , মহারাষ্ট্র - ইত্যাদি রাজ্যগুলি অতিনিবিড় জনবসতিযুক্ত অঞ্চল ; আবার সিকিম , মণিপুর , মিজোরাম - ইত্যাদি অঞ্চলগুলি স্বল্প জনবসতিযুক্ত অঞ্চল। জনবসতির এই অসম বন্টনের ফলে অতিনিবিড় বসতি এলাকায় বেকারত্বের সমস্যা তৈরী হয়। 


৩. মূলধন ও পুঁজির অভাব :- 
ভারতীয় শিল্পপতি , সরকার একদিকে যেমন অধিক উৎপাদনের আশা রাখে ; অন্যদিকে তেমনি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কার্পণ্য প্রদর্শন করে। এর ফলে নতুন নতুন কর্মসংস্থান তৈরির সুযোগ কমে যায়। উৎপাদন ক্ষেত্র পরিচালিত হয় শুধুমাত্র মালিকের স্বার্থের কথা মাথায় রেখে। 

৪. ভৌগোলিক গতিহীনতা :- 
ভারতীয় নাগরিকদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের মধ্যে ভৌগোলিক গতিহীনতা লক্ষ্য করা যায়। অর্থাৎ তারা নিজের যোগ্যতা ও সামর্থ্য অনুযায়ী অন্য স্থানে গিয়ে কাজ খুঁজে নেওয়ার প্রবণতা দেখান না। ফলে একদিকে কাজের জন্য শ্রমিক পাওয়া যায়না ; আবার অন্যদিকে শ্রমিকেরা কাজের অভাবে বেকার হয়ে পড়েন। 

৫. বাজার অর্থনীতির অস্থায়িত্ব :- 
বর্তমান সময়ে বাজারের ওঠাপড়া , শ্রমিক অসন্তোষ , শ্রমিক ছাঁটাই , ধর্মঘট , লক - আউট - ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে বেশিরভাগ শ্রমিকের কর্মসংস্থান অনিশ্চয়তার সম্মুখীন। এর ফলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ - উভয় ক্ষেত্রেই বেকারত্ব সৃষ্টি হয়। 

৬. শিক্ষাগত বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি :-  
শিক্ষিত যুবসমাজ অতিমাত্রায় চাকুরীর প্রতি নির্ভরশীল হওয়ায় শিক্ষাগত বেকারত্বের সংখ্যা উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে। বিশ্বায়নের পরবর্তীযুগে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধির পরিবর্তে প্রতিটি সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা কর্মী সংকোচন করেছে। ফলে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ বন্ধ হয়েছে। 


৭. কৃষি জোতের পরিমান হ্রাস :- 
আধুনিককালে ভারতের যৌথ পরিবারগুলি ভেঙে একক পরিবারে পরিণত হয়েছে। কৃষিজমি ভাগাভাগি হওয়ার কারণে মাথাপিছু জমির পরিমান ব্যাপকভাবে কমে গেছে। ফলে বেকারত্বের সৃষ্টি হয়েছে। 

৮. আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার :- 
একবিংশ শতকে বিশ্বায়ন , আধুনিকীকরণ ও উদারীকরণের হাত ধরে ভারতীয় অর্থনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার বেড়েছে। এর ফলে উৎপাদন ক্ষেত্রগুলিতে ব্যাপকভাবে কর্মীসংকোচন হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি সংস্থায় কম্পিউটারের ব্যবহার , কৃষি ক্ষেত্রে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার - ইত্যাদি কর্মী সংকোচনের পথ প্রশস্ত করেছে। 

৯. অর্থনৈতিক পরিকাঠামো :- 
লিওনেল এডি মনে করেন , ভেঙে পড়া অর্থনীতির উপর কখনোই বেকারত্ব দূর করার বিশেষ সুযোগ থাকেনা। ভারতের অর্থনীতি যদিও গতিশীল তবুও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যেসকল নীতি প্রণীত হয় তা বেকারত্বের সমস্যার সমাধান করতে কোনোভাবেই সমর্থ হয়না। 

১০. ব্যক্তিগত কারণ :- 
এমন কিছু ব্যক্তি থাকেন যারা নিজেদের শ্রম দ্বারা কর্ম খুঁজে নেওয়ার মানসিকতা দেখান না। আবার অনেকে নির্দিষ্ট কিছু কাজকে '' ছোট কাজ '' মনে করে সেই সকল কর্ম থেকে নিজেদের বিরত রাখেন। এইভাবে একশ্রেণীর মানুষ ব্যক্তিগত কারণে বেকারত্বের শিকার হন।    

১১. রাজনৈতিক অসাধুতা :- 
রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অসাধুতা , স্বজন - পোষণ ইত্যাদির কারণে কিছু অযোগ্য ব্যক্তির কর্মসংস্থান হলেও বৃহত্তর সামাজিক ক্ষেত্রে এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। 

১২. নিরক্ষরতা ও শিক্ষার ভূমিকা :- 
ভারতে সর্বজনীন শিক্ষার বিস্তার ঘটানো এখনো সম্ভব হয়নি। ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী ভারতে এখনো এক - চতুর্থাংশ মানুষ নিরক্ষর। এই বিপুল নিরক্ষর জনসংখ্যা বেকারত্ব সৃষ্টির একটি অন্যতম কারণ। আবার বর্তমান শিক্ষার পেশাদারিত্বের অভাবে শিক্ষিত মানুষদের মধ্যেও বেকারত্বের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

এছাড়াও স্ব - নিযুক্তি প্রকল্পগুলির ব্যর্থতা , কার্যকর সরকারি নীতির অভাব , বৃত্তিশিক্ষার স্বল্পতা , অসংগঠিত ক্ষেত্রের সংখ্যা বৃদ্ধি , বহুজাতিক সংস্থাগুলির সর্বগ্রাসী মনোভাবের ফলে খুচরো ব্যবসার অবলুপ্তি - ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে বেকারত্ব ভারতের একটি জ্বলন্ত সমস্যায় পরিণত হয়েছে।     


You May Also Like

0 comments