সুফিবাদের বিভিন্ন সম্প্রদায়

by - August 10, 2021

সুফিবাদের বিভিন্ন সম্প্রদায়গুলোর পরিচয় দাও। 

অথবা , সুফিবাদ কতগুলি সম্প্রদায়ে বিভক্ত ছিল ? তাঁদের পরিচয় দাও। 



সুফিবাদের বিভিন্ন সম্প্রদায় :- 


চিস্তি সম্প্রদায় :- 
দ্বাদশ শতকের মধ্যেই এদেশে সুফিরা অন্তত চৌদ্দটি সম্প্রদায়ে বিভক্ত হয়ে পড়ে। খাজা মইনুদ্দিন চিস্তি হলেন ভারতে চিস্তি সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা। দ্বাদশ শতকের শেষ দিকে তিনি আজমিরে বসবাস শুরু করেন এবং সেখানে চিস্তি সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি নিম্নবর্গের হিন্দুদের মধ্যে ধর্মপ্রচার করতেন। তাঁর অন্যতম ব্যক্তিত্ব ও ধর্মভাবে আকৃষ্ট হয়ে হিন্দু - মুসলিম নির্বিশেষে বহু মানুষ তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। 
মইনুদ্দিন চিস্তির অন্যতম শিষ্য শেখ কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকি ইলতুৎমিসের শ্রদ্ধা আকর্ষণ করেছিলেন। এই সম্প্রদায়ের অপর উল্লেখযোগ্য সন্ত ছিলেন নিজামউদ্দিন আউলিয়া। তাঁর শিষ্যদের মধ্যে বিখ্যাত ছিলেন - আমির খসরু , লেখক আমির হাসান এবং ঐতিহাসিক জিয়াউদ্দিন বরণী। স্বয়ং সুলতান আলাউদ্দিন খলজিও তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। ভারতে ধর্ম সমন্বয়ের ইতিহাসে নিজামুদ্দিন আউলিয়ার অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাঁর শিষ্য নাসিরউদ্দিন চিরাগ '' চিরাগ - ই - দিল্লি '' বা দিল্লির আলো বলে পরিচিত ছিলেন। 


সুহরাবর্দি সম্প্রদায় :- 
সুহরাবর্দি সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রবক্তাগণ ছিলেন - শেখ শিহাবউদ্দিন সুহরাবর্দি ও হামিদউদ্দিন নাগোরি। এই মতবাদীদের কার্যকলাপ মূলত উত্তর - পশ্চিম ভারতের পাঞ্জাব , মুলতান ও বাংলার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। চিস্তি সম্প্রদায়ের সাথে সুহরাবর্দি সম্প্রদায়ের আদর্শগত পার্থক্য ছিল। 
প্রথমতঃ চিস্তি সম্প্রদায়ের মানুষ ধর্মকর্ম নিয়ে দিনপালন করতেন এবং অতি সাধারণ জীবনযাত্রা করতেন। কিন্তু সুহরাবর্দি সম্প্রদায় আড়ম্বর ও আভিজাত্যপূর্ণ জীবনযাত্রায় বিশ্বাসী ছিলেন। 
দ্বিতীয়তঃ চিস্তি সম্প্রদায় রাজনীতি ও সরকারি কাজকর্ম থেকে নিজেদের বিরত রাখত। কিন্তু সুহরাবর্দিরা প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতিতে অংশগ্রহণের পক্ষপাতী ছিলেন। 

অন্যান্য সম্প্রদায় :- 
খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ শতকের মধ্যে ভারতে আরো পাঁচটি সুফি সম্প্রদায়ের উদ্ভব হয়। যথা - 
(i) কাদিরি , 
(ii) ফিরদৌসি 
(iii) শাত্তারি 
(iv) নকশবন্দী 
(v) মাদরি - সম্প্রদায়। 
ফিরদৌসি গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সমরখন্দের শেখ বদরুদ্দীন। দিল্লিতে প্রথম এই সিলসিলা গড়ে উঠলেও পরে তা বিহারেও প্রসার লাভ করে। ওপর একটি গোষ্ঠী কাদিরি যা ছিল মরমিয়া গোষ্ঠী। এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন শাহ নিয়ামাতুল্লাহ। তবে সৈয়দ মখদুম গিলানি দৃঢ়ভাবে এই সিলসিলাকে প্রতিষ্ঠিত করেন। সকল সম্প্রদায়ই সাধারণভাবে শরিয়ত - বিধিকে মান্য করত। তবে অপর একটি গোষ্ঠী , যা কালন্দর নামে পরিচিত , তারা শরিয়তকে অগ্রাহ্য করত।       


You May Also Like

0 comments