উচ্চশিক্ষা বিষয়ে হান্টার কমিশনের সুপারিশ hunter commission

by - August 10, 2021

উচ্চশিক্ষা বিষয়ে হান্টার কমিশনের সুপারিশগুলি আলোচনা কর। 



উচ্চশিক্ষা বিষয়ে হান্টার কমিশনের সুপারিশ :- 

1882 খ্রিস্টাব্দের 3 ফেব্রুয়ারী তদানীন্তন ভাইসরয় লর্ড রিপন তাঁর কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য স্যার উইলিয়াম উইলসন হান্টার - কে সভাপতি নিযুক্ত করে প্রথম ভারতীয় শিক্ষা কমিশন গঠন করেন। হান্টার কমিশনকে কেবলমাত্র প্রাথমিক শিক্ষা সম্পর্কেই সুপারিশ করার অধিকার দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু , কমিশনের সভাপতি স্যার হান্টার পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে প্রাথমিক শিক্ষা থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত স্তরগুলি সম্পর্কে বিভিন্ন সুপারিশ করেছিলেন। উচ্চশিক্ষা সম্পর্কে হান্টার কমিশনের সুপারিশগুলি নীচে আলোচনা করা হল। 


১. বেসরকারি কলেজ গঠনে উৎসাহদান :- 
উচ্চশিক্ষার বিষয়ে সরকারকে কিছুটা নিষ্ক্রিয় থাকতে হবে। দেশে বেসরকারি উদ্যোগে যাতে কলেজ গড়ে ওঠে , সে বিষয়ে সরকার প্রয়োজনীয় উৎসাহদানের কাজ করবে। 

২. কলেজ স্তরে শিক্ষার জন্য অনুদানের ব্যবস্থা :- 
সরকার বেসরকারি সংস্থাকে বা প্রচেষ্টাকে উৎসাহদানের উদ্দেশ্যে কলেজ স্তরে শিক্ষার জন্য যথেষ্ট পরিমান অনুদান বরাদ্দ করবে। 

৩. মডেল কলেজ স্থাপন :- 
কতকগুলি আদর্শ কলেজ সরকারি পরিচালনায় গড়ে তুলতে হবে। এই আদর্শ কলেজগুলি বেসরকারি কলেজের সামনে মডেল হিসেবে কাজ করবে। 

৪. সরকারি অনুদান পাওয়ার শর্তাবলী :- 
সরকারি অনুদান পেতে হলে প্রতিটি কলেজকে কতকগুলি শর্ত পূরণ করতে হবে। শর্তগুলি হল - 
(i) কলেজটি স্থানীয় মানুষের উচ্চশিক্ষার প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম হবে। 
(ii) ওই কলেজে উপযুক্ত সংখ্যক এবং যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক থাকবেন। 
(iii) শিক্ষার গুনগত মান বজায় থাকবে - ইত্যাদি। 

৫. সরকারি বৃত্তির ব্যবস্থা :- 
দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারি বৃত্তি চালু করতে হবে। 

৬. মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য বিদেশে শিক্ষার ব্যবস্থা :- 
উচ্চশিক্ষা শেষ করে মেধাবী শিক্ষার্থীরা যাতে উচ্চতর শিক্ষার জন্য বিদেশে যেতে পারে , তার জন্য সরকারকে উপযুক্ত ব্যবস্থা করতে হবে। 

৭. কলেজের পাঠক্রমে বিভিন্ন ঐচ্ছিক বিষয় পাঠের ব্যবস্থা :- 
উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে আগ্রহী শিক্ষার্থীরা যাতে তাদের মানসিক ক্ষমতা ও পছন্দ অনুযায়ী বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে , তার জন্য বিভিন্ন কলেজের পাঠক্রমে বিভিন্ন ঐচ্ছিক বিষয় পঠনপাঠনের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। 

৮. চাহিদা অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন :- 
চাহিদা অনুসারে ও কমিশনের সমীক্ষা অনুযায়ী সরকারকে দেশের উত্তর - পশ্চিম সীমান্ত অঞ্চলে একটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে। 

৯. বেসরকারি কলেজের শিক্ষার মান :- 
বেসরকারি কলেজগুলিতে উপযুক্ত শিক্ষার মান বজায় রাখতে , পরিকাঠামোগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে কোনো নিয়ন্ত্রণ সরকারি তরফে না থাকলেও পরিদর্শনের ব্যবস্থা থাকা উচিত। সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে থাকলে বেসরকারি কলেজগুলির পঠন - পাঠনের উপযুক্ত মান বজায় রাখতে সমস্যা হতে পারে। 

১০. প্রযুক্তি ও বৃত্তিশিক্ষা :- 
কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে যথাসম্ভব প্রযুক্তি শিক্ষার বিস্তার ঘটাতে হবে এবং বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বৃত্তিশিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।    

পরিশেষে বলা যায় , উচ্চশিক্ষা সম্পর্কে সুপারিশ করে কমিশন তাঁর কর্মপরিধির সীমা লঙ্ঘন করেছিল। সরকার যেহেতু উচ্চশিক্ষা বিষয়ে পর্যালোচনার জন্য হান্টার কমিশন গঠন করেননি , তাই সেই সুপারিশগুলিকে কার্যকর করার কোনো দায়ও সরকারের ছিল না। তবে উচ্চশিক্ষা সম্পর্কে কমিশনের সুপারিশগুলি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ছিল তা পরবর্তীকালে স্যাডলার কমিশনের ( 1918 ) সুপারিশগুলি পর্যালোচনা করলেই বোঝা যায়। তৎকালীন সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে স্যার হান্টার যে সকল সুপারিশ করেছিলেন সেগুলি পরবর্তীকালের শিক্ষা কমিশনগুলিতে এবং উচ্চশিক্ষার বিস্তারের ইতিহাসে বিশেষ গুরুত্বের দাবিদার।  


You May Also Like

0 comments