Pages

Powered by Blogger.
1ST SEMESTER SUGGESTION 2 ND YEAR SUGGESTION 2ND SEMESTER 3RD SEMESTER BENGALI NOTES CU suggestion. EDUCATION NOTES ENGLISH COMPULSORY GBU Suggestion. HISTORY EUROPE & WORLD HISTORY NOTES POL SC NOTES SOCIOLOGY NOTES WBCS 2020

NANDAN DUTTA

A new approach for exam notes .

গুপ্তযুগের প্রশাসনিক ব্যবস্থার বিবরণ দাও। 

অথবা , সাম্রাজ্যবাদী গুপ্তদের শাসন ব্যবস্থা আলোচনা করো। 




গুপ্তযুগের প্রশাসনিক ব্যবস্থা : - 


ঐতিহাসিক উপাদান / তথ্যের উৎস :- 
(ক ) গুপ্ত রাজাদের ইতিহাস রচনায় পুরাণ হল উল্লেখযোগ্য উপাদান। যেমন - বায়ু পুরাণ , মৎস পুরাণ , ভগবৎ পুরাণ , বিষ্ণু পুরাণ - ইত্যাদি। 
(খ ) দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের প্রধানমন্ত্রী শিখর কর্তৃক রচিত '' কমন্দক - নীতিসার '' গ্রন্থ। 
(গ ) বিশাখ দত্ত কর্তৃক রচিত ' মুদ্রারাক্ষস ' নাটক। 
(ঘ ) ফা - হিয়েন , ইৎসিং - প্রমুখ বৈদেশিক পর্যটকদের বিবরণী। 
(ঙ ) বিভিন্ন অনুশাসনলিপি , যেমন - এলাহাবাদ স্তম্ভলিপি , উদয়গিরির গুহালিপি , ভিতরী স্তম্ভলিপি , সাঁচীর শিলালিপি - ইত্যাদি। 
(চ ) গুপ্তরাজগন কর্তৃক প্রচারিত মুদ্রা। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।

১. কেন্দ্রীয় শাসন , রাজা ও রাজার ক্ষমতা :- 
মৌর্যদের সাম্রাজ্যবাদী শাসনব্যবস্থা সংশোধিত অবস্থায় দেখা যায় গুপ্ত শাসন ব্যবস্থায়। গুপ্ত শাসনতন্ত্রে রাজতন্ত্র ও প্রজাতন্ত্র উভয়ই প্রচলিত থাকলেও রাজতন্ত্রই ছিল প্রধান। রাজা ছিলেন রাষ্ট্রের সর্বময় কর্তা। গুপ্ত সম্রাটরা রাজার দৈবস্বত্ত্বে বিশ্বাসী ছিলেন। তারা মহারাজাধিরাজ , পরমেশ্বর , সম্রাট - ইত্যাদি উপাধি ধারণ করতেন। এলাহাবাদ স্তম্ভলিপিতে সমুদ্রগুপ্তকে কুবের , ইন্দ্র , বরুন - প্রভৃতি দেবতাদের সমতুল্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে। 
রাজপদ ছিল বংশানুক্রমিক এবং রাজার ক্ষমতা ছিল সীমাহীন। তিনি ছিলেন সামরিক , বিচার , শাসন বিভাগের সর্বময় কর্তা। রাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ , আইন প্রণয়ন , যুদ্ধ পরিচালনা ছিল রাজার অন্যতম দায়িত্ব। প্রাদেশিক শাসনকর্তা ও উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারীরা রাজা কর্তৃক নিযুক্ত ও পদচ্যুত হতেন। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।

২. মন্ত্রিপরিষদ :- 
রাজা শাসন সংক্রান্ত ব্যাপারে মন্ত্রিপরিষদের পরামর্শ গ্রহণ করতেন। রাজপুত্র , উচ্চপদস্থ কর্মচারী ও সামন্তদের নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ গঠিত হত। অবশ্য সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা একমাত্র রাজার ছিল। মন্ত্রিপরিষদের কাজ ছিল রাজাকে পরামর্শ দান করা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নাবালক রাজার অভিভাবক হিসেবে মন্ত্রিপরিষদ রাজ্য শাসন করতেন। 
কালিদাস তিনপ্রকার মন্ত্রীর কথা উল্লেখ করেছেন। যথা - পররাষ্ট্র মন্ত্রী , রাজস্ব মন্ত্রী , বিচার মন্ত্রী। মন্ত্রীপদ কোনো কোনো ক্ষেত্রে বংশানুক্রমিক ছিল। শাসন বিভাগের সর্বোচ্চ কর্মচারী ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। 

৩. বিচার ব্যবস্থা :- 
রাজা বা সম্রাট ছিলেন সর্বোচ্চ বিচারক। কেন্দ্রীয় বিচারালয়ে উচ্চপদস্থ কর্মচারীরাও বিচারকার্যে অংশগ্রহণ করতেন। গ্রামাঞ্চলে গ্রামসভার প্রতিনিধিদের সাহায্যে রাজকর্মচারীরা বিচারকার্য সম্পাদন করতেন। দক্ষিণ ভারতের কোনো কোনো অঞ্চলে জুরি প্রথার প্রচলন ছিল। 
ফা - হিয়েনের মতে , গুপ্তযুগে দন্ডপ্রথা ছিল উদার এবং প্রাণদন্ড বা দৈহিক শাস্তির বিধান ছিল না বললেই চলে। কিন্তু ফা - হিয়েনের এই বিবরণ যথার্থ নয়। কেননা মুদ্রারাক্ষস নাটকে প্রাণদন্ড ও বধ্যভূমির উল্লেখ পাওয়া যায়। স্কন্ধগুপ্তের জুনাগড় প্রস্তরলিপিতে কঠোর শাস্তিদানের উল্লেখ আছে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।

৪. সামরিক সংগঠন :- 
প্রথম চন্দ্রগুপ্ত থেকে স্কন্ধগুপ্ত পর্যন্ত সকল গুপ্ত সম্রাটরা ছিলেন সুদক্ষ যোদ্ধা ও সাম্রাজ্যবাদী। গুপ্ত সম্রাটদের সামরিক বাহিনী - পদাতিক , অশ্ব - বাহিনী , হস্তীবাহিনী , নৌবাহিনী নিয়ে গঠিত ছিল। এছাড়া সামন্তরাও যুদ্ধের সময় সেনা দিয়ে সাহায্য করতেন। উচ্চপদস্থ সামরিক পদগুলি ছিল - মহাদন্ডনায়ক , মহাসন্ধি - বিগ্রহিক , মহাসেনাপতি , মহাবলাধিকৃত - ইত্যাদি। প্রধান যুদ্ধাস্ত্র ছিল - তীর , ধনুক , তরবারি , বর্শা , কুঠার - ইত্যাদি। 
এছাড়া গুপ্ত সম্রাটদের একটি শক্তিশালী নৌবাহিনীরও উল্লেখ পাওয়া যায়। পশ্চিম ও পূর্ব উভয় উপকূলেই গুপ্ত সাম্রাজ্য বিস্তার লাভ করেছিল। এলাহাবাদ স্তম্ভলিপি থেকে জানা যায় , সিংহল ও অন্যান্য বহু দ্বীপপুঞ্জে সমুদ্রগুপ্ত প্রাধান্য বিস্তার করেছিলেন। শক্তিশালী নৌ বাহিনীর সাহায্যেই ওই অঞ্চলগুলি গুপ্ত সম্রাটরা নিজ অধীনস্থ করতে পেরেছিলেন। 

৫. প্রাদেশিক শাসন :- 
গুপ্তযুগে প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা ছিল কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থার ক্ষুদ্র সংস্করণ। প্রাদেশিক প্রশাসনের সর্বোচ্চে থাকতেন প্রাদেশিক শাসনকর্তা। শাসনকার্যের সুবিধার জন্য গুপ্ত সাম্রাজ্য কয়েকটি ভাগে বিভক্ত ছিল , যথা - ভুক্তি , দেশ , রাষ্ট্র ও মন্ডল। উত্তরাঞ্চলে ভুক্তি ও দক্ষিণাঞ্চলে মন্ডল ছিল সাধারণ বিভাগ। ভুক্তি কতকগুলি বিষয় বা জেলায় বিভক্ত ছিল। দক্ষিণাঞ্চলের মন্ডলগুলি নাড়ু ও কোট্টম - এ বিভক্ত ছিল। দেশ ও ভুক্তির শাসনভার যথাক্রমে গোপত্রি ও উপরিকমহারাজ নামক রাজকর্মচারীদের হাতে ন্যাস্ত থাকতো। 
জেলা বা বিষয়ের শাসক ছিলেন বিষয়পতি বা আয়ুক্ত। বিষয়পতিদের সাহায্য করার জন্য - নগরশ্রেষ্ঠী , কুলিক , স্বার্থবাহ , প্রধান কায়স্থ - প্রভৃতি উপাধিধারী রাজকর্মচারীরা নিযুক্ত থাকতেন। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।

৬. রাজস্ব - ব্যবস্থা :- 
রাজস্ব ও পুলিশি শাসনের মধ্যে বিশেষ পার্থক্য ছিল না। প্রায় একই ধরণের কর্মচারীরা এই দুই বিভাগ পরিচালনা করতেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন - উপনিকা , দশপরাধিকা , দন্ডিকা , গৌলমিকা , রাজুক - ইত্যাদি। 
গুপ্ত সাম্রাজ্যে যে সকল কর প্রচলিত ছিল , সেগুলি হল -
(ক ) ভাগ বা ভূমিকর যা ছিল উৎপন্ন ফসলের এক - ষষ্ঠাংশ।  
(খ ) ভূতপ্রত্যয় বা আবগারী শুল্ক। এই শুল্ক  পণ্যের ওপর ধার্য হত। 
(গ ) সরকারি কার্যের জন্য বিনা পারিশ্রমিকে শ্রমদানের বা '' বিষ্টি '' প্রথা প্রচলিত ছিল। 
(ঘ ) যুদ্ধ বা বৈদেশিক আক্রমণের সময় অতিরিক্ত কর বা '' মল্ল কর '' আদায় করা হত। 

এছাড়া , গুপ্তযুগে রাষ্ট্র ও গ্রামসভাগুলি যৌথভাবে জমির মালিকানা ভোগ করতেন এবং জমি হস্তান্তর করার ব্যাপারে রাষ্ট্রের সম্মতির প্রয়োজন হত। 

৭. স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন :- 
গুপ্তযুগে জনবহুল নগরসমূহে '' নিগম সভা '' নামে পরিচিত প্রতিষ্ঠান পৌর শাসনকার্য পরিচালনা করত । নগরশ্রেষ্ঠী , পুস্তাপান , স্বার্থবাহ - প্রভৃতি নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে '' নিগম সভা '' গঠিত হত। নগর শাসন ব্যবস্থার প্রধানকে '' পুরপাল '' বা '' নগর রক্ষক '' বলা হত। 
অন্যদিকে গ্রামগুলি ছিল অনেকক্ষেত্রে স্বয়ংশাসিত। ' গ্রামিক ' নামক কর্মচারী গ্রামের নেতৃস্থানীয়দের পরামর্শ অনুসারে গ্রামের যাবতীয় শাসনকার্য পরিচালনা করতেন। 

পরিশেষে বলা যায় , গুপ্তশাসনে কোনোরূপ মৌলিকতার নিদর্শন স্বীকার না করা হলেও তা প্রজাকল্যাণমূলক ছিল। তবে , ঐতিহাসিক রাখালদাস বন্দোপাধ্যায় গুপ্তশাসনের মৌলিকতা স্বীকার করেছেন। রাজারা সকল ক্ষমতার অধিকারী হয়েও স্বেচ্ছাচারী ছিলেন না। গুপ্ত শাসনপ্রণালী ছিল সুগঠিত ও সুনিয়ন্ত্রিত এবং কেন্দ্রীয় শাসন ছিল শক্তিশালী। ডক্টর মজুমদার গুপ্ত শাসনের উদারতা , সাধারণ মানুষের সমৃদ্ধি ও নৈতিক মূল্যবোধের উল্লেখ করেছেন।

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।      
                         

Share
Tweet
Pin
Share
No comments

পল্লব কারা ? পল্লবদের শিল্প , স্থাপত্য ও সাহিত্য সম্পর্কে আলোচনা করো। 

অথবা , ভারতের শিল্প , স্থাপত্য ও সাহিত্যে পল্লবদের অবদান আলোচনা করো। 




পল্লবদের শিল্প , স্থাপত্য ও সাহিত্য :- 

পল্লব রাজারা শিল্প , সাহিত্য , স্থাপত্য , ভাস্কর্য - ইত্যাদির পরম পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। দক্ষিণ ভারতে পল্লব স্থাপত্য ও ভাস্কর্য শিল্প সর্বাধিক প্রাচীন। দক্ষিণ ভারতীয় শিল্পরীতি পল্লবরাই সর্বপ্রথম প্রবর্তন করেন। Grousett এর মতে , পল্লবরা তাঁদের নিজস্ব স্থাপত্য শিল্প - রীতির সৃষ্টি করে দক্ষিণ ভারতীয় শিল্প রীতির ভিত্তি রচনা করেন। ( They created an architecture of their own which was to be the basis of all the styles of the South . ) 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।

পল্লব স্থাপত্যরীতি :- 

দুই ধরণের রীতি অনুসরণ করে পল্লবদের মন্দির - স্থাপত্য কলা গড়ে ওঠে - ( ক ) পাথর কেটে মন্দির নির্মাণ , ( খ ) সৌধ আকারের মন্দির নির্মাণ। পল্লব স্থাপত্য রীতির অপর বৈশিষ্ট হল রথ আকারে দেবালয়ের নির্মাণ। পল্লব শিল্পরীতিকে রাজাদের নামানুসারে চারটি পৃথক রীতিতে ভাগ করা যায় - 

১. মহেন্দ্র রীতি 
পল্লব রাজা মহেন্দ্রবর্মনের আমলে গড়ে ওঠে মহেন্দ্র রীতি। একেশ্বরনাথের মন্দির এই শিল্পরীতির নিদর্শন। পাহাড় কেটে বৌদ্ধ মন্দিরের অনুকরণে মন্দির নির্মাণ ছিল এই রীতির বৈশিষ্ট। 

২. নরসিংহবর্মন রীতি 
দ্বিতীয় নরসিংহ বর্মনের আমলে গড়ে ওঠে নরসিংহবর্মন রীতি। সমুদ্রতীরের মন্দিরগুলি এই রীতির নিদর্শন। কাঞ্চীর কৈলাসনাথ মন্দির এর শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। 

৩. রাজসিংহ রীতি 
রাজা রাজসিংহবর্মনের আমলে গড়ে ওঠে রাজসিংহ রীতি। মহাবলীপুরমের পুরো একটি পাহাড় কেটে পাঁচটি বধাকৃতি মন্দির নির্মিত হয়েছে। 

৪. অপরাজিত রীতি। 
রাজা প্রথম অপরাজিত বর্মনের আমলে গড়ে ওঠে অপরাজিত রীতি। এই রীতির প্রধান বৈশিষ্ট হল বিশালাকৃতি ও কারুকার্যের সংমিশ্রণ। এই শিল্পরীতির সাথে চোল শিল্পরীতির সাদৃশ্য দেখা যায়। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।


প্রথম মহেন্দ্রবর্মন :- দেবালয়ের সম্মুখে স্তম্ভের ওপর নির্মিত মন্ডপের প্রবর্তক ছিলেন মহেন্দ্রবর্মন। মহাবলীপুরমে এই ধরণের দশটি মন্ডপের নিদর্শন পাওয়া যায়। 

প্রথম নরসিংহবর্মন :- রথ ধরণের স্থাপত্যের প্রবর্তক ছিলেন প্রথম নরসিংহবর্মন। গুহা কেটে রথগুলি নির্মাণ করা হত। এদের সংখ্যা ছিল আট। এগুলির মধ্যে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য ছিল ধর্মরাজা রথ। রথগুলি বিভিন্ন নামে পরিচিত , যথা - দ্রৌপদী , অর্জুন , ভীম , ধর্মরাজা ও সহদেব। বৌদ্ধ চৈত্যের অনুকরণে ভীম , গণেশ ও সহদেব রথগুলি নির্মিত। কাঞ্চীর কৈলাসনাথের মন্দির ও মহাবলীপুরমের রথ মন্দিরগুলি ছিল পল্লব শিল্পের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। 

কাঞ্চীর অপরাপর মন্দিরগুলির মধ্যে ঐরাবতেশ্বর মন্দির বিশেষ উল্লেখযোগ্য। পাহাড় কেটে এই সকল মন্দিরগুলির নির্মাণকৌশল ও তাদের গঠনসৌন্দর্য আজও বিস্ময়ের বস্তু। স্মিথের ভাষায় , The Pallava school of architecture and sculpture is one of the most important and interesting of the Indian schools .'' 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।

পল্লব স্থাপত্যে দ্রাবিড় প্রভাব :- 

এই মন্দিরগুলিতে সর্বপ্রথম দ্রাবিড় শিল্পনীতির সাক্ষাৎ পাওয়া যায়।  দ্রাবিড় রীতির বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী প্রধান দেবগৃহ বা গর্ভগৃহ এর বিমানটি হতো পিড়ামিটের মতো এবং বহু তলে বিন্যস্ত।  প্রতিটি তল গর্ভগৃহের অনুরূপ এবং নিচের তলের তুলনায় অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র। মন্দিরের শীর্ষ দেশ গম্বুজ আকৃতি, শিল্প শাস্ত্রে যাকে বলে স্তুপ বা স্তুপিকা।  গর্ভগৃহের সামনে হলঘর নির্মাণ করা হতো, যাকে বলা হতো "মন্ডপ।"  সমগ্র বিন্যাসটির চারিদিকে উচ্চ দেওয়াল বেষ্টিত প্রাঙ্গন থাকতো| দেওয়ালের মধ্যে ছিল সুউচ্চতোরণ, যাকে বলা হতো গোপুরম। 

পল্লবদের সাহিত্যচর্চা ও সাহিত্য নিদর্শন :- 


সাহিত্যের ক্ষেত্রেও পল্লবরাজরা ছিলেন পরম পৃষ্ঠপোষক। তাঁদের আমলে কাঞ্চী শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রধান কেন্দ্র ছিল। ভারবি ও দন্ডি এই যুগের খ্যাতনামা সাহিত্যিক ছিলেন। পল্লবরাজ প্রথম মহেন্দ্রবর্মন নিজে সুসাহিত্যিক ছিলেন। তাঁর রচিত '' মত্তবিলাস প্রহসন '' গ্রন্থে শৈব ও বৌদ্ধ সন্যাসীদের প্রতি বিদ্রুপের আভাস পাওয়া যায়। 

কীরতার্জুনীয় গ্রন্থের রচয়িতা ভারবি ছিলেন সিংহবিষ্ণুর সভাকবি। অপর খ্যাতনামা সাহিত্যিক দন্ডির পৃষ্ঠপোষক ছিলেন নরসিংহবর্মন। ন্যায়ভাষ্য - গ্রন্থের রচয়িতা বাৎস্যায়ন ছিলেন কাঞ্চীর নাগরিক ও সুপ্রসিদ্ধ সংস্কৃত পন্ডিত। কাঞ্চী নগরের দেবালয়গুলিতে মহাভারতের নিয়মিত পাঠ খুবই জনপ্রিয় ছিল। সেইসঙ্গে কাঞ্চীর বিভিন্ন স্থানে বেদের নিয়মিত পঠন - পাঠন প্রচলিত ছিল। সুতরাং দেখা যায় যে , পল্লবদের আমলে জ্ঞানচর্চা সুপ্রসারিত ছিল এবং হিউয়েন সাং এর মতে , নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ধর্মপাল ছিলেন পল্লব রাজ্যের নিবাসী। দক্ষিণ ভারতের সাংস্কৃতিক ইতিহাসে পল্লবদের অবদান অস্বীকার করা যায় না। দক্ষিণ ভারতে আর্য - সংস্কৃতি প্রসারে পল্লবদের অবদান অনস্বীকার্য। এই যুগে দক্ষিণ ভারতে সংস্কৃত ভাষার বহুল প্রচলন হয় এবং কাঞ্চী ছিল সংস্কৃত চর্চার প্রধান কেন্দ্র। 

কাঞ্চীর বিভিন্ন মন্ডপে মহাভারতের রীতিমত আবৃত্তি ও আলোচনা চলত। কুরুম নামক স্থানে ১০৮ টি পরিবার ছিল , তারা বেদ - চর্চায় সর্বদা নিমগ্ন থাকত। সংস্কৃত চর্চার সঙ্গে সঙ্গে তামিল ভাষা ও সাহিত্যের চর্চাও ছিল জনপ্রিয়। ত্রিয়াভালুভার রচিত ' তামিল কুরাল ' গ্রন্থটি ছিল জ্ঞানের এক বিরাট ভান্ডার।     

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।

Share
Tweet
Pin
Share
No comments

ভারতে কুষাণ শাসনের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব আলোচনা করো। 




ভারতের উত্তর পশ্চিম সীমান্তে পার্থিয়া বা পল্লবদের পরাস্ত করে কুষানরা উক্ত অঞ্চলে প্রাধান্য স্থাপন করে। ভারতীয় জনজীবনে কুষাণদের প্রভাব সম্পর্কে পুরাণ ও মহাকাব্যে কিছু উল্লেখ পাওয়া যায়। কুষাণদের আগমনে ভারতীয় সংস্কৃতি এক ভিন্ন মাত্রা লাভ করে। এই সময় থেকেই ভারতীয় সংস্কৃতি মিশ্র সংস্কৃতিতে রূপান্তরিত হয়। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে , মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের পর সমগ্র ভারত জুড়ে যে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিয়েছিল , কুষাণ সম্রাটরা সেই রাজনৈতিক অস্থিরতা দূর করেন এবং রাজশক্তিকে শক্তিশালী ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত করেন। 

The Kushana period marks as important approach in Indian History . - Dr Dinesh Chandra .

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।

কুষাণযুগ সম্পর্কিত ঐতিহাসিক উপাদান :- 
কুষাণ রাজত্বকাল সম্পর্কে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য উপাদান হল চৈনিক গ্রন্থাদি। চৈনিক গ্রন্থাদি থেকে ইয়ো - চি জাতির ভারত আগমনের বিবরণ পাওয়া যায়। কুষাণ আমলের মুদ্রা কুষাণ রাজাদের কালনিরূপন ( Chronology ) ও তাঁদের ধর্ম সম্পর্কে জানতে সাহায্য করে। যেমন - ( ক ) দ্বিতীয় কদফিসেসের মুদ্রা থেকে জানা যায় যে তিনি শিবের উপাসক ছিলেন। ( খ ) কণিষ্কের মুদ্রায় বহু দেবদেবীর ছবি থেকে প্রমাণিত হয় ধর্ম সম্পর্কে তিনি ছিলেন উদার। 

পান - কু রচিত ' প্রথম হান বংশের ইতিহাস ' , ফ্যান - ই রচিত ' হোউ - হান - সু ' , তোয়ান লিনের রচিত ' বিশ্বকোষ ' - প্রভৃতি চৈনিক গ্রন্থাদি কুষাণ বংশের ইতিহাস জানার প্রধান উপাদান।      
এছাড়াও , নাগার্জুন রচিত ' মধ্যমিকা সূত্র ' , অশ্বঘোষ রচিত ' বুদ্ধচরিত ' - ইত্যাদি গ্রন্থগুলি থেকেও কুষাণ সাম্রাজ্যের ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায়।   

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।

কুষাণদের রাজনৈতিক পরিচয় : - 
শক - পহ্লবদের পরে কুষাণরা ভারতে রাজ্য স্থাপন করেন। কুষাণদের মোট পাঁচটি শাখা সম্পর্কে জানা যায় - 1. হিউ - মি  , 2. কুই সাং  , 3. হি - থুম , 4. চুং - মো , 5. কাও - ফু। কিন্তু ভারতে কুষাণরা ইয়ো - চি নামে পরিচিত হয়ে যাযাবর জাতি হিসেবে ভারতে প্রবেশ করে। ইয়ো - চি দের আদিম বাসভূমি ছিল চিনের কান - সু প্রদেশ। 

অক্ষু - উপত্যকায় বসতি স্থাপন করার প্রায় একশো বছর পরে , প্রথম শতকে , কুষাণ নায়ক কুজুল কদফিসেস অন্যান্য শাখাগুলিকে ঐক্যবদ্ধ করে ' ওয়াং ' অর্থাৎ রাজা উপাধি ধারণ করেন। এইভাবে ভারতে কুষাণ সাম্রাজ্যের ভিত্তি রচিত হয়। 

রাজনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠা :- 
মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের পর ভারতের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এক অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। তীব্র রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা ভারতীয় ঐক্য বিনষ্ট করে। কিন্তু কুষাণ সম্রাটরা এই অনিশ্চয়তা দূর করে ভারতকে ঐক্যবদ্ধ করেন এবং শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত করেন। যেহেতু কুষাণ যুগে রাজনৈতিক অস্থিরতা দূর হয় , সেহেতু , এইযুগেই সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে এক নবযুগের সূচনা হয়। শিক্ষা , শিল্পকলা , স্থাপত্য , ধর্ম - ইত্যাদি সর্বক্ষেত্রে উৎকর্ষতার বিস্তার ঘটে। 
The age of the great Kushanas is of great cultural signification in the history of India . -  B. G. Gokhle . 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।

রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সমন্বয় :- 
কুষাণ যুগে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সমন্বয়ের ধারা দেশের সীমা অতিক্রম করে রোম , দক্ষিণ - পূর্ব এশিয়া ও দূরপ্রান্তে প্রসারিত হয়। কুষাণ সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠার মধ্যে দিয়ে মধ্য ও পশ্চিম এশিয়ার সঙ্গে ভারতীয় সভ্যতার মিলন ঘটে। ভারতীয় ঐতিহ্যের সঙ্গে কুষাণ সংস্কৃতির মেলবন্ধন এক উদার ও সমন্বয়ী সংস্কৃতির জন্ম দিয়েছিল। 
কুষাণ সংস্কৃতির মূল বৈশিষ্ট ছিল সাঙ্গীকরণ। বিভিন্ন ধর্ম - বর্ণের মানুষকে তারা একই সাম্রাজ্যভুক্ত করেছিল। ফলে , সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অংশের মধ্যে সমন্বয় সাধিত হয়। কুষাণ সাম্রাজ্যের অবসানের পরও সেই ধারা অব্যাহত থাকে। 

সাম্রাজ্যের বিস্তার :- 
কুষাণ বংশের সম্রাটগণ বিশেষ করে কণিষ্ক একের পর এক নতুন রাজ্য জয় করেন। 
(ক ) কলহন রচিত ' রাজতরঙ্গিনী ' গ্রন্থ থেকে জানা যায় , কাশ্মীর কুষাণ সাম্রাজ্যভুক্ত ছিল।           
(খ ) হিউয়েন সাং এর মতে , গান্ধার কুষাণ সাম্রাজ্যভুক্ত ছিল। 
(গ ) চিনা ও বৌদ্ধ মতে , অযোধ্যা , পূর্ব - ভারত , পাটলিপুত্র - ইত্যাদি কণিষ্কের সাম্রাজ্যভুক্ত ছিল। 
(ঘ ) আলবিরুনির মতে , আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ার বহু অঞ্চল কণিষ্কের সাম্রাজ্যভুক্ত ছিল। 
(ঙ ) শক - ক্ষত্রপ নহপানকে পরাজিত করে কণিষ্ক সৌরাষ্ট্র ও মালবের উপর আধিপত্য বিস্তার করেন। 
(চ ) তিনি মধ্য এশিয়ার কাশগড় , খোটান , ইয়ারখন্দ , সমরখন্দ - জয় করেন। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।

সাম্রাজ্যের পরিধি :- 
ভারতের এক বিরাট অংশে কুষাণরা রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারে সক্ষম হয়েছিলেন। কণিষ্কের সাম্রাজ্য উত্তরে কাশ্মীর থেকে দক্ষিণে বিন্ধ্য পর্বত ; পশ্চিমে সিন্ধুনদ থেকে পূর্বে বিহার পর্যন্ত প্রসারিত ছিল। ভারতের বাইরে অক্ষু উপত্যকা , কাবুল , কান্দাহার , বেলুচিস্তান , আফগানিস্তান - কণিষ্কের সাম্রাজ্যভুক্ত ছিল। তাঁর রাজধানী ছিল পুরুষপুর বা পেশোয়ার। 

বহির্বিশ্ব ও ভারতের সাংস্কৃতিক আদান - প্রদান :- 
কুষাণ আমলে ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতি বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। প্রথম কণিষ্ক মধ্য এশিয়ার কাশগড় , খোটান , চিন , জাপান প্রভৃতি দেশে ভারতীয় সংস্কৃতির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মধ্য এশিয়ায় ভারতীয় উপনিবেশের অস্তিত্ব আবিষ্কৃত হয়েছে। কুষাণ রাজাদের উদ্যোগেই মধ্য এশিয়ার উপজাতীয় মানুষ বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করে ভারতীয় সংস্কৃতির সংস্পর্শে আসতে পারে। কুষাণ সম্রাটদের উদ্যোগেই মধ্য ও পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক যোগাযোগ গড়ে ওঠে। 


শিল্প ও সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষকতা :- 
কণিষ্ক শিল্প ও সাহিত্যের একজন বড় পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তাঁর আমলে বহু উৎকৃষ্ট গ্রন্থাদি রচিত হয়। তাঁর রাজসভায় বহু পন্ডিত ব্যক্তি অবস্থান করতেন। যেমন - '' বুদ্ধচরিত '' এর রচয়িতা অশ্বঘোষ , বৈজ্ঞানিক নাগার্জুন , চরক - প্রমুখ। এই যুগেই রচিত হয়েছিল  বুদ্ধচরিত , সূত্রালঙ্কার , বজ্রসূচি , মহাভিভাষ্য  - ইত্যাদি জ্ঞানসমৃদ্ধ গ্রন্থগুলি। এই সকল মনীষী ও তাঁদের রচনা সাহিত্য ক্ষেত্রে এক যুগান্তর এনেছিল।    
কণিষ্কের আমলে শিল্প - স্থাপত্য উৎকৃষ্টতার শিখরে পৌঁছেছিল। এই যুগে গ্রিক - রোমান - বৌদ্ধ শিল্পকলার এক অপূর্ব সংমিশ্রণ ঘটেছিল যা '' গান্ধার শিল্প '' নামে পরিচিত। অমরাবতী , কৃষ্ণা প্রভৃতি নদীর উপত্যকায় প্রাপ্ত স্থাপত্য স্থাপত্য ও ভাস্কর্যের নিদর্শন , মথুরায় প্রাপ্ত কণিষ্কের মস্তকবিহীন মূর্তি , তক্ষশীলা ও কাশ্মীরের নিকটে কণিষ্কপুর প্রভৃতি নগর - সে যুগের স্থাপত্য ও ভাস্কর্য শিল্পের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন বলে বিবেচিত হয়। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।
 
Share
Tweet
Pin
Share
No comments

চোলদের সাংস্কৃতিক জীবন :- 


চোলযুগের স্থাপত্য ও ভাস্কর্য শিল্পের বর্ণনা। 




প্রাচীন যুগে চোল সাম্রাজ্যের সাংস্কৃতিক জীবনের ইতিহাস ছিল গৌরবময়। শিল্প ও সাহিত্যে চোলরা ছিল খুবই উন্নত। এর মুলে ছিল প্রধানতঃ তিনটি কারণ - ( ক ) সাম্রাজ্যের প্রসার , (খ ) ধন সম্পদের প্রাচুর্য ও (গ)  চোল রাজাদের অকুন্ঠ পৃষ্ঠপোষকতা। সাম্রাজ্যের প্রসারের কারণে তাঞ্জোর , গঙ্গইকোন্ডচোলপুরম , কাঞ্চি - ইত্যাদি জনবহুল নগরী গড়ে ওঠে এবং তা নির্মাণের ব্যাপারে চোল রাজারাই ছিলেন প্রধান উদ্যোক্তা। একাধিক রাজধানী নির্মাণ করে চোলরাজারা অগণিত শিল্পী , কারিগর ও শ্রমিকের কর্মসংস্থান করে দিয়েছিলেন। রাজপ্রাসাদগুলি ছিল বৃহদাকার। এমনকি কোনো কোনো রাজপ্রাসাদ পঞ্চতল - সপ্ততল পর্যন্ত নির্মিত হয়েছিল। প্রধান অভিজাতরাও রাজপ্রাসাদতুল্য অট্টালিকায় বাস করতেন। এই যুগের সাহিত্যে চোলরাজাদের প্রাসাদ , মন্ত্রী ও ধনী বণিকদের সুরম্য অট্টালিকার বিবরণ পাওয়া যায়। যদিও সেগুলির অস্তিত্ব আজ আর নেই। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।

মন্দির স্থাপত্য ও নির্মাণ রীতি :- 
চোল সাম্রাজ্যে মন্দির - স্থাপত্যকলার অপূর্ব বিকাশ ঘটে। পল্লবযুগে যে স্থাপত্যরীতি চালু হয়েছিল , চোলদের যুগে তা অধিকতর উৎকর্ষতা লাভ করে। চোল স্থাপত্যরীতি দ্রাবিড় শিল্পরীতি নামে পরিচিত ছিল। কেননা , এই শিল্পরীতি প্রধানতঃ দক্ষিণ ভারতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। এই শিল্পরীতির অন্যতম বৈশিষ্ট হল - প্রধান দেবালয়ের ওপর পরপর তল নির্মাণ। কোনো কোনো দেবালয় পাঁচ ও ছয় তল বিশিষ্ট ছিল। দেবগৃহের সম্মুখে থাকত স্তম্ভযুক্ত সুবৃহৎ কক্ষ। এগুলিকে মন্ডপ বলা হত। এই মন্ডপেই নৃত্য - গীত ও অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হত। দেবদাসীরাই সাধারণতঃ এই নৃত্যে অংশগ্রহণ করত। মন্দিরের দেওয়ালের মধ্যে সুউচ্চ তোরণ নির্মিত থাকত যা ' গোপুরম ' নামে পরিচিত ছিল। মন্দির প্রাঙ্গনের ভেতরে থাকত পুরোহিতদের বাসগৃহ , অতিথিশালা , যাত্রীনিবাস - ইত্যাদি। ব্যায়নির্বাহের জন্য মন্দিরগুলি নিষ্কর ভূমির উপস্বত্ব লাভ করত। বিত্তশালী ও ধনী বণিকরা উদার হস্তে মন্দিরে দান করতেন। চোল সাম্রাজ্যের কতকগুলি মন্দির এতটাই সমৃদ্ধ ছিল যে , মন্দিরের নামে ব্যবসা - বাণিজ্যও চলত। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।

নিদর্শন :- 
খ্রিস্টীয় অষ্টম শতাব্দীতে কাঞ্চীপুরমে পল্লব আমলে কৈলাসনাথের মন্দির - স্থাপত্য দ্রাবিড় শিল্প - রীতির প্রথম নিদর্শন। এই শিল্পরীতির সর্বোৎকৃষ্ট নিদর্শন হল প্রথম রাজরাজ কর্তৃক নির্মিত তাঞ্জোরের বৃহদীশ্বর মন্দির। ' গঙ্গইকোন্ডচোলপুরম ' চোলযুগের মন্দির স্থাপত্যের অপর এক উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত। এর সুউচ্চ বুরুজের (Tower ) নির্মাণ - কৌশল আজও বিস্ময় জাগায়। এই বুরুজের আকৃতি পিরামিডের মতো এবং এর উচ্চতা হল ১৯০ ফুট। এই মন্দির তের - তল বিশিষ্ট। ' গঙ্গইকোন্ডচোলপুরম ' মন্দিরটি প্রসঙ্গে পার্সি ব্রাউন এর মন্তব্য হল - This tower is a touch - stone of Indian architecture as a hole . । 

অধ্যাপক নীলকণ্ঠ শাস্ত্রীর মতে , এটি ছিল তামিল স্থাপত্যকলার এক শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। 

সামাজিক প্রভাব :- 
চোলরাজাগণ কর্তৃক পার্শ্ববর্তি অঞ্চল থেকে লুন্ঠিত সম্পদ আহরণ করে এই সকল মন্দির নির্মাণের ব্যায়ভার মেটানো হত। মন্দিরগুলিতে দেবতা ও দেবতাদের অনুচরদের মূর্তি ছাড়াও মানব - জীবনের নানা দিক প্রসঙ্গে সুন্দর সুন্দর মূর্তিও নির্মিত হয়েছিল। এইভাবে ধর্মের সঙ্গে পার্থিব জীবনের নানাদিকের সুন্দর সামঞ্জস্য মন্দির স্থাপত্যে দেখা যায়। এককথায় বলা যায় , মন্দিরগুলি ছিল সেইযুগের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের প্রাণকেন্দ্র। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।

চোলদের নির্মিত সেচ - খালগুলির গঠনও তামিল স্থাপত্য - শিল্পের অপর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। নতুন রাজধানী  গঙ্গইকোন্ডচোলপুরমের সংলগ্ন রাজা প্রথম রাজেন্দ্র চোল কর্তৃক নির্মিত কৃত্রিম হৃদটিও চোল চোল স্থাপত্য শিল্পের অপর উৎকৃষ্ট নিদর্শন। এটির দৈর্ঘ্য ছিল ষোলো মাইল এবং এর সাথে একাধিক খাল যুক্ত ছিল। 

ভাস্কর্য শিল্প :- 
চোল আমলে দক্ষিণ ভারতে ভাস্কর্যশিল্পের অভূতপূর্ব উৎকর্ষের পরিচয় পাওয়া যায়। চোলদের ভাস্কর্যশিল্পে উৎকৃষ্টতার শ্রেষ্ঠ নিদর্শন হল শ্রবণবেলগোলায় গোমতেশ্বরের বিরাট মূর্তি। ভাস্কর্যের ক্ষেত্রে এক বিশেষ দিক ছিল মূর্তিনির্মাণ। এর চরম বিকাশ দেখা যায় নটরাজের মূর্তি নির্মাণে। চোল আমলের নটরাজের ব্রোঞ্জ মূর্তিগুলি আজও বিস্ময়ের সৃষ্টি করে। 

সাহিত্য :- 
চোলরাজারা সাহিত্যেরও পরম পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। খ্রিস্টীয় একাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ পর্যন্ত কম্বনের যুগকে তামিল সাহিত্যের সুবর্ণযুগ বলা হয়। অনুমিত হয় যে , কম্বন কোনো এক চোলরাজার সভাকবি ছিলেন। অট্টকুট্টন ও পুগালেন্ডি প্রমুখ পন্ডিতগণ অন্যান্য নৃপতিদের সভাকবিদের সঙ্গে কম্বনের সাহিত্যিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার অনেক কিংবদন্তী প্রচলিত আছে।     

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।

Share
Tweet
Pin
Share
No comments

চোলদের সামুদ্রিক কার্যকলাপ :- 




ভারতীয় রাষ্ট্রগুলির মধ্যে চোলরাই সামুদ্রিক শক্তির প্রয়োজনীয়তা যথাযথভাবে উপলব্ধি করেছিল। পানিকর - এর ভাষায় , The only Indian State which had a proper appreciation of sea power was the Chola Empire  । চোল সম্রাটদের সামুদ্রিক নীতির ফলশ্রুতি হল নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে নৌঘাঁটির প্রতিষ্ঠা ও মালয়ের উপকূল অঞ্চলে প্রভুত্বের প্রতিষ্ঠা। 

প্রথম রাজরাজ চোলের আমলে সামুদ্রিক তৎপরতার সূত্রপাত :-  

চোল - রাজ প্রথম রাজরাজের সময় থেকেই চোলদের সামুদ্রিক তৎপরতা শুরু হয় বলা যায়। তিনিই সর্বপ্রথম চোল নৌশক্তি গড়ে তোলেন। সেই সময় কেরল , সিংহল ও পান্ড্য রাজারা পশ্চিম ভারতের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্মিলিতভাবে নিয়ন্ত্রণ করতেন। এই সময় কেরল রাজাদের সমর্থনে আরব বণিকরাও পশ্চিম ভারতে ব্যবসা বাণিজ্য করত। এই অবস্থায় পশ্চিম - ভারতের ব্যবসা - বাণিজ্যে কেরল , সিংহল ও পান্ড্যদের আধিপত্য ধ্বংস করতে প্রথম রাজরাজ অগ্রসর হন। তাঁর নৌশক্তির প্রথম সাফল্য হল চের বা কেরল নৌ - শক্তির ধ্বংস সাধন এবং এরপর পান্ড্যরাজ অমরভুজঙ্গ চোলদের হাতে বন্দী হন।

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।

 দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আরবদের বাণিজ্যিক তৎপরতা সম্বন্ধেও চোলরা যথেষ্ট অবহিত ছিল। এদের প্রতিযোগিতা ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে নৌশক্তি মালাবার আক্রমণ করে তা দখল করে নেয়। কিছুদিন পরে প্রথম রাজরাজ মালদ্বীপের ওপর নৌ - আক্রমণ চালিয়ে তা দখল করে নেন। সেই সময় মালদ্বীপ ছিল আরব বণিকদের এক অন্যতম বাণিজ্যকেন্দ্র। সরাসরি আরবদের ব্যবসা-বাণিজ্য ধ্বংস করতে ব্যর্থ হলেও প্রথম রাজরাজ সিংহলের ওপর নৌ - অভিযান পরিচালনা করে রাজধানী অনুরাধাপুর বিধ্বস্ত করেন এবং চোলরা অনুরাধাপুর থেকে রাজধানী পোলোনারুভায় স্থানান্তরিত করেন। 

রাজেন্দ্র চোলের আমলে নৌ - শক্তির উৎকর্ষতা :- 

প্রথম রাজরাজ নৌশক্তির ভিত্তি রচনা করেছিলেন কিন্তু তার আরও সম্প্রসারণ ঘটে তাঁর  পুত্র প্রথম রাজেন্দ্র চোলের আমলে। তিনি এক বিশাল নৌ-বাহিনী নিয়ে বঙ্গোপসাগর অতিক্রম করে পেন্ড , আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ দখল করেন। এরপর তিনি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় নৌ - অভিযানে লিপ্ত হন। তাঁর সর্বাধিক নৌ কৃতিত্ব হল ১০২৫ খ্রিস্টাব্দে সুমাত্রার বিরুদ্ধে নৌ - অভিযান। এই অভিযানে সুমাত্রার শৈলেন্দ্র বংশীয় রাজা বিজয়তুঙ্গবর্মন চোলদের হাতে বন্দী হন এবং সুমাত্রার একাংশ চোল সাম্রাজ্যভুক্ত হয়।

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।

চোল হ্রদ :- 
বৃহত্তর ভারতে এর পূর্বে কোনো ভারতীয় নৃপতি এই কৃতিত্ব অর্জন করতে পারেননি। প্রথম রাজেন্দ্র চোলের পৃষ্ঠপোষকতায় দক্ষিণ ভারত এবং ব্রহ্মদেশ ও মালয় উপদ্বীপের মধ্যে সামুদ্রিক ও বাণিজ্যিক তৎপরতা বেশ কিছুদিন অব্যাহত ছিল। প্রকৃতপক্ষে চোলদের নৌশক্তির প্রাধান্যের ফলেই বঙ্গোপসাগর '' চোল - হ্রদ '' - এ ( Chola Lake ) পরিণত হয় এবং চোলদের ভয়ে সিংহল , সুমাত্রা ও বৃহত্তর ভারতের অন্যান্য দেশ সর্বদাই সন্ত্রস্ত থাকত।চোলদের সামুদ্রিক প্রাধান্যের ফলে কিছুদিন বৃহত্তর ভারতীয় দেশগুলিতে ভারতীয় সামরিক তৎপরতা ও ব্যবসা-বাণিজ্য নিরাপদ থাকে। 

চিনের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক :- 
চোলরাজাদের শাসনকালে ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্যে করমন্ডল উপকূল গুরুত্ব অর্জন করে। এখান থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও চিনের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। রাজরাজ চোলের সময়ে ( ৯৮৫ - ১০১৪ খ্রিস্টাব্দ ) মামাল্লাপুরম ছিল প্রধানতম বন্দর। শীঘ্রই নাগপট্টম  বাণিজ্যিক বন্দর হিসেবে খ্যাতি লাভ করে। চীনের সুং বংশের ইতিহাস থেকে জানা যায় যে , চোল রাজ্য থেকে ১০১৫ খ্রিস্টাব্দে চিনে বাণিজ্যিক দৌত্য পাঠানো হয়। চিনে সুং বংশের নেতৃত্বে এশিয়ায় সামুদ্রিক বাণিজ্যে চিনের প্রভাব বৃদ্ধি পায় এবং এশিয়ার দুই প্রান্তে অবস্থিত চিনা ও আরবীয় বাণিজ্যের মধ্যে যোগসূত্র রচনা করেছিল ভারতবর্ষ। রাজরাজের পুত্র রাজেন্দ্র চোলের আমলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও চিনের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও ঘনীভূত হয়। পরবর্তীকালে চোল রাজাদের মধ্যে প্রথম কুলোতুঙ্গ - এর আমলে ব্রহ্মদেশের সঙ্গে দক্ষিণ ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। 

পরিশেষে বলা যায় , চোল রাজাদের সামুদ্রিক কার্যকলাপের মূল উদ্দেশ্য কি ছিল - সে বিষয়ে মতভেদ রয়েছে।  জর্জ স্পেন্সার মনে করেন , চোলেরা সম্পদ লুণ্ঠনের উদ্দেশ্যেই নৌ বাহিনী গঠন করেন এবং সামুদ্রিক অভিযানের নীতি গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু এই অভিমত সমর্থনযোগ্য নয়। মূলত বাণিজ্যিক স্বার্থেই চোল রাজারা আগ্রাসী সামুদ্রিক অভিযান নীতি অনুসরণ করেছিলেন। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।
Share
Tweet
Pin
Share
No comments

চোল বংশের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্রাট কে ছিলেন ? শাসক ও বিজেতা হিসেবে তাঁর কৃতিত্ব আলোচনা করো। 


অথবা , 

শাসক ও বিজেতা হিসেবে প্রথম রাজেন্দ্র চোল - এর কৃতিত্ব আলোচনা করো। 




প্রথম রাজেন্দ্র চোল :- 


চোল - রাজ রাজরাজের যোগ্যপুত্র ও উত্তরাধিকারী প্রথম রাজেন্দ্র চোল ছিলেন চোল বংশের সর্বশ্রেষ্ঠ নরপতি। তাঁর শাসনকাল ব্যাপ্ত ছিল ১০১৪ থেকে ১০৪৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। তিনি ' গঙ্গইকোন্ড চোল ' বা 'উত্তম চোল ' নামেও পরিচিত ছিলেন। স্বাধীনভাবে রাজত্বকাল শুরু করার পূর্বেই যুবরাজ হিসেবে তিনি শাসনকার্যে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা অর্জন করেছিলেন। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।

সিংহাসনারোহনের কিছুদিনের মধ্যেই তিনি সমগ্র সিংহল চোল - সাম্রাজ্যভুক্ত করেন। ১০১৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি চের বা কেরল ও পান্ড্যদের ওপর নিজের আধিপত্য স্থাপন করেন এবং নিজ পুত্র রাজাধিরাজ চোলকে এই রাজ্যগুলির শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন। পশ্চিমী চালুক্যদের সঙ্গেও তিনি যুদ্ধে লিপ্ত হন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চালুক্যরাজ দ্বিতীয় জয়সিংহ চোল আক্রমণ প্রতিহত করতে সমর্থ হন। 

রাজেন্দ্র চোলের রাজ্যবিস্তার শুধুমাত্র দক্ষিণ ভারতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। রাষ্ট্রকূটদের মতো তিনি দক্ষিণ ভারত বিজয় সম্পন্ন করে উত্তর - ভারত অভিযানে অগ্রসর হন। তিনি পূর্ববঙ্গের গোবিন্দচন্দ্র , পশ্চিমবঙ্গের মহীপাল ও দক্ষিণবঙ্গের রণসুরকে পরাজিত করেন। পূর্ব - ভারতে সামরিক জয়লাভের স্মৃতিরক্ষার্থে তিনি ' গঙ্গইকোন্ড ' উপাধি ধারণ করেন। তিনি তাঁর শক্তিশালী নৌবহরের সাহায্যে নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ ও মালব জয় করে অবিস্মরণীয় কীর্তি অর্জন করেন। বাংলাদেশ থেকে ফেরার পর তিনি 'গঙ্গইকোন্ড চোলপুরম ' নামে এক নতুন রাজধানী স্থাপন করেন। 

এছাড়াও রাজেন্দ্র চোল চিন সাম্রাজ্যের সাথে মিত্রতা স্থাপন করেন এবং একাধিকবার চিন - সম্রাটের নিকট দূত প্রেরণ করেন। 

রাজেন্দ্র চোলের সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য কৃতিত্ব ছিল সুমাত্রার শৈলেন্দ্র বংশের বিরুদ্ধে নৌ - অভিযান। অষ্টম শতাব্দীতে সুমাত্রার শৈলেন্দ্র - সাম্রাজ্য অত্যন্ত প্রবল হয়ে ওঠে। পূর্ব - এশিয়ার হিন্দু রাজবংশগুলির মধ্যে শৈলেন্দ্র বংশ ছিল সকলের অন্যতম। আরব লেখকদের মতে , সেই যুগে শৈলেন্দ্র রাজাদের মতো শক্তিশালী ও সমৃদ্ধশালী রাজা কেউ ছিলেন না।

 এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।

একাদশ শতাব্দীতে চোলরাজ রাজেন্দ্র চোলের সাথে শৈলেন্দ্র বংশের সংঘর্ষ ঘটে। যদিও প্রথম দিকে এই দুই রাজাদের মধ্যে সম্পর্ক ভালোই ছিল। চিনের সঙ্গে বাণিজ্য সংক্রান্ত ব্যাপারে দুই রাজাদের মধ্যে সংঘর্ষের সূচনা হয়। ১০২৫ খ্রিস্টাব্দে রাজেন্দ্র চোল একটি শক্তিশালী নৌ - বাহিনী শৈলেন্দ্র রাজ্যের বিরুদ্ধে প্রেরণ করেন। শৈলেন্দ্ররাজ বিজয়োতুঙ্গবর্মন পরাজিত হয়ে বন্দী হন। এর ফলে শৈলেন্দ্র সাম্রাজ্যের কিছু অংশ চোলদের হস্তগত হয়। কোনো ভারতীয় নৃপতি ইতিপূর্বে পূর্ব - ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জে এইরূপ সামরিক সাফল্য অর্জন করতে পারেন নি।      

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো। 

Share
Tweet
Pin
Share
No comments

কণিষ্কের কৃতিত্ব :- 


কণিষ্কের সিংহাসনারোহনকাল :-   
কণিষ্কের সিংহাসনারোহন কাল সম্পর্কে ঐতিহাসিক মহলে মতভেদ রয়েছে। যেমন - 
(i)  ফ্লিটের মতে , কণিষ্ক কদফিসেস রাজাদের পূর্বেই রাজত্ব করেছিলেন এবং তিনিই ৫৮ শকাব্দের প্রবর্তক।
(ii) কণিষ্কের মুদ্রায় রোমান মুদ্রার প্রভাব লক্ষ্য করা যায় এবং এই মুদ্রা খ্রিস্টীয় প্রথম শতাব্দীতে প্রবর্তিত হয়। কদফিসেস রাজারা যে রোমান অনুকরণে স্বর্ণমুদ্রার প্রচলন করেছিলেন - সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। সুতরাং , কদফিসেস রাজাদের পরেই কণিস্ক সিংহাসনারোহন করেছিলেন - একথা বললে ভুল করা হবে না। 
(iii) ভান্ডারকরের মতে , কণিষ্ক ২৭৮ খ্রিস্টাব্দে সিংহাসনারোহন করেন। 
(iv) মার্শাল ও স্মিথের মতে , কণিষ্ক ১২৫ খ্রিস্টাব্দে সিংহাসনারোহন করেন। 
(v) তবে , টমাস ও র‍্যাপশন , ডক্টর বি এন মুখোপাধ্যায় প্রমুখ ঐতিহাসিকদের মতামত অধিকতর গ্রহণযোগ্য। তাঁদের মতে , কণিষ্ক ৭৮ খ্রিস্টাব্দে সিংহাসনারোহন করে একটি সম্বৎ প্রচলন করেন। এই সম্বৎ ' শকাব্দ ' নামে পরিচিত। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।

১. সাম্রাজ্যবিস্তার :- 
কণিষ্কের সিংহাসনারোহনের সময় আফগানিস্তান , সিন্ধুর এক বিরাট অংশ , পাঞ্জাব এবং পার্থিয়া ও ব্যাকট্রিযার কিয়দংশ কুষাণ সাম্রাজ্যভুক্ত ছিল। কণিষ্ক বহু রাজ্য জয় করে এক বিশাল সাম্রাজ্যের অধিপতি হন। তিনি কাশ্মীর জয় করে তা নিজ সাম্রাজ্যভুক্ত করেন। কলহন রচিত রাজতরঙ্গিনী থেকে জানা যায় , কাশ্মীরে তিনি কণিষ্কপুর নামে একটি শহরের পত্তন করেন। 
চৈনিক ও তিব্বতীয় কিংবদন্তী অনুসারে কণিষ্ক মগধ আক্রমণ করে পাটলিপুত্র দখল করেন। 
কণিষ্কের মুদ্রা থেকে জানা যায় , গাজীপুর ও গোরখপুর পর্যন্ত তাঁর রাজ্য প্রসারিত ছিল। এছাড়াও কণিষ্ক পার্থিয়ার রাজাকেও পরাজিত করেছিলেন। 
হিউয়েন সাং - এর বিবরণী থেকে জানা যায় যে , গান্ধার কণিষ্কের রাজ্যভুক্ত ছিল এবং তাঁর রাজধানী ছিল পুরুষপুর বা পেশোয়ার। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।

২. চিনের সাথে যুদ্ধ :- 
ভারতের বাইরে কণিষ্ক চিন সাম্রাজ্যের সাথেও যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। তিনি তুর্কিস্থানের অন্তর্গত কাশগড় , খোটান ও ইয়ারকন্দ জয় করেন। কিন্তু , চিন সম্রাট হো - তি - র রাজত্বকালে চিন সেনাপতি পান - চাও - এর নিকট কণিষ্ক পরাজিত হন। এর কিছুকাল পরে কণিষ্ক অপমানের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য চিন সাম্রাজ্য আক্রমণ করেন এবং চিন সম্রাটের এক পুত্রকে প্রতিভুস্বরূপ নিজ রাজ্যে নিয়ে আসেন। হিউয়েন সাং এর বিবরণীতে এই ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায়। 

৩. বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ ও ধর্মীয় উদারতা :- 
বৌদ্ধ গ্রন্থ থেকে জানা যায় , কণিষ্ক বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ছিলেন। এর পূর্বে তিনি বহু দেব দেবীতে বিশ্বাসী ছিলেন। তাঁর পূর্ব প্রচারিত মুদ্রাগুলিতে এর প্রমান পাওয়া যায়। সম্ভবতঃ সিংহাসনারোহনের কিছুকাল পরেই তিনি বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেন। কেননা , তাঁর পরবর্তী মুদ্রাগুলিতে বুদ্ধের মূর্তি দেখতে পাওয়া যায়। অনেকের মতে , বৌদ্ধ দার্শনিক অশ্বঘোষের প্রভাববশতঃ কণিষ্ক বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন।   
বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করলেও কণিষ্ক অন্য ধর্মের প্রতিও শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। তাঁর মুদ্রায় গ্রিক , পারসিক - প্রভৃতি দেব - দেবীর মূর্তি অঙ্কিত দেখতে পাওয়া যায়। 

৪. বৌদ্ধ ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রসার :- 
কণিষ্ক পুরোনো বৌদ্ধ মঠগুলির সংস্কারসাধন করেন। বহু নতুন বৌদ্ধ বিহার প্রতিষ্ঠা করেন। বৌদ্ধ ভিক্ষুদের ভরণপোষণের জন্যও তিনি প্রচুর অর্থ ব্যয় করেন। পেশোয়ারে তিনি একটি বিশাল বৌদ্ধমঠ স্থাপন করেন। এই মঠটি সেই যুগে বৌদ্ধ সংস্কৃতির প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল। 
কণিষ্কের পৃষ্ঠপোষকতায় বৌদ্ধ ধর্ম মধ্য - এশিয়া ও চিনে প্রচারিত হয়েছিল। তিনি গান্ধার শিল্পের পরম পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তাঁর আমলে ভাস্কর ও চিত্রশিল্পীরা বৌদ্ধধর্মের প্রসারে সহায়তা করেন। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।

৫. মহাযান ও হীনযান বৌদ্ধ ধর্মমত :- 
কণিষ্কের সময় বৌদ্ধ সমাজ ' মহাযান ' ও ' হীনযান ' - এই দুটি সম্প্রদায়ে বিভক্ত হয়ে পরে। কণিষ্ক গান্ধার বা জলন্ধরে চতুর্থ বা শেষ বৌদ্ধ সঙ্গীতি আহ্বান করেন। বসুমিত্র ও অশ্বঘোষ এই সঙ্গীতির পরিচালনা করেন। এই সভায় বৌদ্ধ গ্রন্থাদি পুনর্বিবেচিত হয় এবং ত্রিপিটকের ওপর অসংখ্য টীকা প্রস্তুত করা হয়। এইগুলি একত্রে '' মহাভিভাষ্য '' নামে পরিচিত হয়। বৌদ্ধ দর্শন সম্পর্কে মহাভিভাষ্য গ্রন্থটি একটি অমূল্য সম্পদ। 

৬. শিল্প ও সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষকতা :- 
কণিষ্ক শিল্প ও সাহিত্যের একজন বড় পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তাঁর আমলে বহু উৎকৃষ্ট গ্রন্থাদি রচিত হয়। তাঁর রাজসভায় বহু পন্ডিত ব্যক্তি অবস্থান করতেন। যেমন - '' বুদ্ধচরিত '' এর রচয়িতা অশ্বঘোষ , বৈজ্ঞানিক নাগার্জুন , চরক - প্রমুখ। এই যুগেই রচিত হয়েছিল  বুদ্ধচরিত , সূত্রালঙ্কার , বজ্রসূচি , মহাভিভাষ্য  - ইত্যাদি জ্ঞানসমৃদ্ধ গ্রন্থগুলি। এই সকল মনীষী ও তাঁদের রচনা সাহিত্য ক্ষেত্রে এক যুগান্তর এনেছিল।    
কণিষ্কের আমলে শিল্প - স্থাপত্য উৎকৃষ্টতার শিখরে পৌঁছেছিল। এই যুগে গ্রিক - রোমান - বৌদ্ধ শিল্পকলার এক অপূর্ব সংমিশ্রণ ঘটেছিল যা '' গান্ধার শিল্প '' নামে পরিচিত। অমরাবতী , কৃষ্ণা প্রভৃতি নদীর উপত্যকায় প্রাপ্ত স্থাপত্য স্থাপত্য ও ভাস্কর্যের নিদর্শন , মথুরায় প্রাপ্ত কণিষ্কের মস্তকবিহীন মূর্তি , তক্ষশীলা ও কাশ্মীরের নিকটে কণিষ্কপুর প্রভৃতি নগর - সে যুগের স্থাপত্য ও ভাস্কর্য শিল্পের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন বলে বিবেচিত হয়। 

৭. রাজনৈতিক ঐক্য স্থাপন :- 
কণিষ্কের সাম্রাজ্য পশ্চিমে খোরাসান থেকে পূর্বে বিহার এবং উত্তরে খোটান থেকে দক্ষিণে কোঙ্কন পর্যন্ত প্রসারিত ছিল। কণিষ্কের পূর্বে কোনো ভারতীয় নৃপতি মধ্য - এশিয়ার এক বিস্তীর্ণ অঞ্চলে কখনো সাম্রাজ্য বিস্তার করতে পারেনি। এছাড়া , মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের পর যে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল তা দূর করে কণিষ্ক ভারতের এক বিরাট অংশে রাজনৈতিক ঐক্য ও অখন্ডতা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। 

৮. বিদেশে ভারতীয় সংস্কৃতির প্রসার :- 
অশোকের অসমাপ্ত কার্য কণিষ্ক সমাপ্ত করেন। ভারতের বাইরে রাজ্যজয়ের ফলে মধ্য ও পূর্ব এশিয়ায় ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতি প্রসার লাভ করে। কণিষ্কের পৃষ্ঠপোষকতায় মহাযান বৌদ্ধ ধর্মমত তিব্বত , চিন ও জাপানে প্রসারিত হয়। জাতিগত ও দেশগত ব্যবধান থাকা সত্ত্বেও ভারতের সঙ্গে মধ্য এশিয়ার অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে যোগসূত্র রচিত হয়। 

পরিশেষে বলা যায় , মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের পর ভারতের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে যে অরাজকতা দেখা দিয়েছিল কণিষ্ক তা দূর করে এক অখন্ড সাম্রাজ্য স্থাপন করেন এবং তার সাথে সাথে কণিষ্কের নেতৃত্বে তৎকালীন ভারতবর্ষ শিল্প , সাহিত্য , ধর্ম - ইত্যাদি সমস্ত ক্ষেত্রেই উৎকর্ষতার শিখরে পৌঁছেছিল। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।


Share
Tweet
Pin
Share
No comments

প্রাথমিক শিক্ষা বিষয়ে হান্টার কমিশনের সুপারিশ। 



1882 খ্রিস্টাব্দের 3 ফেব্রুয়ারী তদানীন্তন ভাইসরয় লর্ড রিপন তাঁর কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য স্যার উইলিয়াম উইলসন হান্টার - কে সভাপতি নিযুক্ত করে প্রথম ভারতীয় শিক্ষা কমিশন বা হান্টার কমিশন গঠন করেন। 1854 - 1882 পর্যন্ত এদেশে প্রাথমিক প্রাথমিক শিক্ষার প্রসার অত্যন্ত ধীরগতিতে হওয়ায় হান্টার কমিশন প্রাথমিক শিক্ষার ওপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করে। কমিশনের মতে , প্রাথমিক শিক্ষা হল জনশিক্ষা সম্প্রসারণের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। তাই প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ সম্পর্কে কমিশন কতকগুলি মূল্যবান সুপারিশ উপস্থাপন করেন। সুপারিশগুলি হল - 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।

১. শিক্ষানীতি :- 
(i) প্রাথমিক শিক্ষা একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ শিক্ষাস্তর হিসেবে বিবেচিত হবে। এটিকে কখনোই মাধ্যমিক শিক্ষাক্রমের প্রস্তুতিপর্ব হিসেবে গণ্য করা চলবে না। 
(ii) প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য হবে দেশের জনগণের জন্য ন্যুনতম শিক্ষার ব্যবস্থা করা। 
(iii) দেশের যেসব ক্ষেত্রে নিরক্ষর ব্যক্তিদের নিয়োগ করার ব্যবস্থা চালু আছে , সেইসকল ক্ষেত্রে ন্যুনতম শিক্ষিতদের নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে। এতে প্রাথমিক শিক্ষা বিস্তারের কাজ অনেক বেশি সহজ হবে। 
(iv) প্রাথমিক শিক্ষার অগ্রগতি ও প্রসারের প্রতি সরকারকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। 

২. প্রাথমিক শিক্ষার প্রশাসন :- 
(i) প্রাথমিক শিক্ষার দায়িত্ব ও পরিচালনার ভার জেলা বোর্ড ও মিউনিসিপ্যাল বোর্ডগুলির ওপর ন্যাস্ত থাকবে। 
(ii) এই ধরণের স্বায়ত্তশাসনমূলক প্রতিষ্ঠানগুলি নিজ নিজ এলাকায় একটি করে শিক্ষাবোর্ড গঠন করে তার ওপর নতুন বিদ্যালয় স্থাপন করার এবং দেশীয় বিদ্যালয়গুলিকে সাহায্য করার দায়িত্ব প্রদান করবে।(iii) সরকার পরিচালনাধীন প্রাথমিক বিদ্যালগুলির দায়িত্বও এই শিক্ষাবোর্ড গ্রহণ করবে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।

৩. আর্থিক সুপারিশ :- 
(i) প্রত্যেক জেলাবোর্ড এবং মিউনিসিপ্যাল বোর্ডকে প্রাথমিক শিক্ষার জন্য একটি পৃথক তহবিল গঠন করতে হবে। 
(ii) স্থানীয় এবং প্রাদেশিক রাজস্ব থেকে প্রাপ্ত অর্থের একটা বড় অংশ প্রাথমিক শিক্ষার জন্য ব্যয় করতে হবে। 
(iii) শিক্ষাখাতে বরাদ্দ অর্থের ওপর প্রাথমিক শিক্ষার অগ্রাধিকার ও অধিকতর দাবি থাকবে। 
(iv) সরকারকেও শিক্ষাখাতের সামগ্রিক বরাদ্দের অর্থ থেকে এক - তৃতীয়াংশ প্রাথমিক শিক্ষার জন্য বরাদ্দ করতে হবে। 
(v) বিদ্যালয় পরিদর্শন ও নর্মাল স্কুল পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় খরচ প্রাদেশিক সরকারকে বহন করতে হবে। 
(vi) দরিদ্র ছাড়া অন্যান্যদের কাছ থেকে বেতনগ্রহনের ব্যবস্থা করতে হবে। 
(vii) পরীক্ষার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে বিদ্যালগুলিকে অনুদান দিতে হবে। 

৪. পাঠক্রম সংক্রান্ত সুপারিশ :- 
(i) প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার মাধ্যম হবে আঞ্চলিক ভাষা বা মাতৃভাষা। 
(ii) প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার পাঠক্রম সারা ভারতে এক ধরণের হবে না। বরং বিষয়বস্তু নির্বাচনের সময় স্থানীয় মানুষের প্রয়োজনের দিকে দৃষ্টিনিক্ষেপ করতে হবে। 
(iii) প্রাথমিক স্তরের পাঠক্রমে থাকবে দেশীয় গণিত , হিসাবশিক্ষা , জরিপ , ভৌতবিজ্ঞান , স্বাস্থ্য বিজ্ঞান , শিল্পকলা , কৃষিবিজ্ঞান - ইত্যাদি বিষয়সমূহ। 
(iv) বিদ্যালয়গুলির জন্য পাঠ্যপুস্তক নির্বাচনের ব্যাপারে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বা পরিচালকবৃন্দকে স্বাধীনতা দান করতে হবে। 
(v) প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের দৈহিক , মানসিক ও চারিত্রিক বিকাশের জন্য খেলাধুলা , ব্যায়াম , স্কুল ড্রিল - ইত্যাদি বিষয়গুলিকে পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। 

৫. শিক্ষক - শিক্ষন সংক্রান্ত সুপারিশ :- 
(i) প্রাথমিক শিক্ষার উন্নতিকল্পে শিক্ষক - শিক্ষন ব্যবস্থা সম্প্রসারণের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।  
(ii) শিক্ষক - শিক্ষনের জন্য সারা দেশে বহু সংখ্যক নর্মাল স্কুল স্থাপন করতে হবে। প্রাদেশিক সরকারগুলোকে এর ব্যয়ভার ও দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।

প্রাথমিক শিক্ষা সম্পর্কিত হান্টার কমিশনের সুপারিশগুলির মূল্যায়ন :- 


১. কমিশন তাঁর রিপোর্টে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাকে জনসাধারণের জন্য প্রয়োজনীয় ন্যুনতম শিক্ষা হিসেবে বিবেচনা করার সুপারিশ করেছিল। এটিকে বাধ্যতামূলক করার বিষয়ে স্পষ্ট ইঙ্গিত না দিলেও , প্রাথমিক শিক্ষা যে জনকল্যাণের জন্য বিশেষে প্রয়োজন , তা পরোক্ষভাবে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছিল। 

২. কমিশন প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাকে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ স্তর হিসেবে সংগঠিত করার সুপারিশ করেছিল। আজ যেকোনো উন্নয়নশীল দেশে প্রাথমিক শিক্ষাকে স্বয়ংসম্পূর্ণ স্তর হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। 

৩. কমিশন প্রাথমিক শিক্ষার পরিচালনার ভার স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠানের ওপর অর্পণ করার সুপারিশ করেছিল। এই নীতিটিও বর্তমানে বিভিন্ন দেশে অনুসৃত হচ্ছে। আমাদের দেশে কোনো কোনো রাজ্যে - যেমন - পশ্চিমবঙ্গ , ত্রিপুরা , কেরালা ইত্যাদি রাজ্যে পঞ্চায়েত ও পৌরসভাগুলির হাতে একেবারে নীচু স্তরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির পরিচালনার জন্য বেশ কিছু দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে। 

৪. কমিশন প্রাথমিক শিক্ষার পাঠক্রমকে সমাজের প্রয়োজনের সঙ্গে যুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছিল। এই নীতিটিও আধুনিককালের শিক্ষাবিদরা সমর্থন করেন। 

৫. শিক্ষক - শিক্ষণ ও বিদ্যালয় পরিদর্শন বিষয়ে কমিশন যে মূল্যবান সুপারিশ করেছিল , আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় সেগুলিও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। 

এককথায় বলা যায় , বর্তমানে আমাদের দেশের প্রাথমিক শিক্ষায় যেসকল নীতি অনুসৃত হয় , তার মধ্যে অনেককগুলি নীতিই হান্টার কমিশনে অন্তর্ভুক্ত ছিল।   

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।        
   
Share
Tweet
Pin
Share
No comments

হান্টার কমিশন :- 



১. কবে হান্টার কমিশন গঠিত হয় ? 

1882 খ্রিস্টাব্দের 3 ফেব্রুয়ারি। 

২. কার নেতৃত্বে হান্টার কমিশন গঠিত হয় ? হান্টার কমিশনের সভাপতি কে ছিলেন ? 

1882 খ্রিস্টাব্দে তদানীন্তন ভাইসরয় লর্ড রিপন তাঁর কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য স্যার উইলিয়াম উইলসন হান্টার - এর নেতৃত্বে হান্টার কমিশন গঠন করেন। 
হান্টার কমিশনের সভাপতি ছিলেন স্যার উইলিয়াম উইলসন হান্টার। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।

৩. হান্টার কমিশন কেন গঠিত হয় ? 

অথবা , হান্টার কমিশনের উদ্দেশ্যগুলি কী ছিল ? 


হান্টার কমিশন গঠনের উদ্দেশ্য :- 
হান্টার কমিশনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলি ছিল - 
(i) উডের ডেসপ্যাচে ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতির জন্য যেসব সুপারিশ করা হয়েছিল , সেগুলি কতখানি কার্যকরী হয়েছে - তা দেখা এবং কার্যকরী না হয়ে থাকলে , তার কারণ অনুসন্ধান করা এবং তাকে কীভাবে কার্যকরী করা যায় - সে সম্পর্কে প্রয়োজনীয় সুপারিশ করা। 

(ii) জনশিক্ষা প্রসারের কাজ কী কী কারণে ব্যাহত হচ্ছে - তা অনুসন্ধান করা। 

(iii) জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থায় সরকার পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলির অবস্থা কী হবে , বেসরকারি প্রচেষ্টার প্রতি সরকার কী নীতি গ্রহণ করবে , এইসব বিষয় অনুসন্ধান করে প্রয়োজনীয় সুপারিশ বা মতামত ব্যক্ত করা। 

(iv) সরকারি আর্থিক অনুদান আরও প্রসারিত করার জন্য প্রয়োজনীয় নীতি নির্ধারণ করা। 

(v) বিদ্যালয়গুলিতে ধর্মশিক্ষা দানের ক্ষেত্রে কোন নীতি গৃহীত হবে - সে সম্পর্কে পরামর্শদান করা। 

(vi) মিশনারিদের দ্বারা পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পর্যবেক্ষণ করে , আগামী দিনে মিশনারিদের ভূমিকা কী হবে - সে সম্পর্কে পরামর্শ দান করা। 

(vii) প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করা। 

(viii) বেসরকারি বিদ্যালয়গুলির ক্ষেত্রে অনুদান বরাদ্দের জন্য নীতি প্রণয়নের বিষয়ে পরামর্শ দান করা।   

এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন - উচ্চশিক্ষা বা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা সম্পর্কে পর্যালোচনা করার দায়িত্ব এই কমিশনের এক্তিয়ারের বাইরে ছিল।   

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।

৪. হান্টার কমিশনের দুজন ভারতীয় সদস্যের নাম লেখ। 

আনন্দমোহন বসু , মহারাজ যতীন্দ্রমোহন ঠাকুর , ভূদেব মুখোপাধ্যায় , জাস্টিস কে তেলাং , সৈয়দ মামুদ - প্রমুখ। 

৫. হান্টার কমিশন কবে রিপোর্ট পেশ করেন ? 

1883 খ্রিস্টাব্দে ( গঠিত হওয়ার আট মাস পর ) । 

৬. হান্টার কমিশন মোট কটি প্রস্তাব পেশ করেন ? 

হান্টার কমিশন সরকারের কাছে 222 টি প্রস্তাব পেশ করেন। 

৭. হান্টার কমিশনের রিপোর্ট বা প্রতিবেদনটি কত পৃষ্ঠার ছিল ? 

হান্টার কমিশনের প্রতিবেদনটি 600 পৃষ্ঠার ছিল। 

৮. ভারতের প্রথম শিক্ষা কমিশন কোনটি ? 

ভারতের প্রথম শিক্ষা কমিশন হল হান্টার কমিশন 1882  ।  

৯. স্বাধীন ভারতের প্রথম শিক্ষা কমিশন কোনটি ? 

স্বাধীন ভারতের প্রথম শিক্ষা কমিশন হল রাধাকৃষ্ণন কমিশন বা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশন ( 1948 ) । 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।

Share
Tweet
Pin
Share
No comments

1854 খ্রিস্টাব্দে স্যার চার্লস উডের ডেসপ্যাচ - এর সুপারিশ সমূহ :- 




1813 খ্রিস্টাব্দের চার্টার অ্যাক্টে ভারতীয় জনগণের শিক্ষার বিস্তারের জন্য কোম্পানির তহবিল থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বরাদ্দের ব্যবস্থা করা হলেও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি পরিচালিত সরকার শিক্ষাকে সঠিক অর্থে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব হিসেবে মেনে নেয়নি। ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে ধীরে ধীরে অর্থ বরাদ্দের পরিমাণ বাড়লেও , কোনো সুনির্দিষ্ট নীতি অনুসরণ করে শিক্ষাব্যবস্থা পরিচালিত হয়নি। উডের ডেসপ্যাচেই সর্বপ্রথম একটি সুসংগঠিত সরকারি শিক্ষানীতির আভাস পাওয়া যায়। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।


১. শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য :- 
(i) ভারতীয় জনগণের মধ্যে পাশ্চাত্য জ্ঞানের বিস্তার ঘটানোই হল এদেশের শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য। এই পাশ্চাত্যজ্ঞান হবে ভারতের জনগণের কাছে আশীর্বাদস্বরূপ। 
(ii) এই শিক্ষার অপর একটি উদ্দেশ্য হবে , ভারতের জনগণের বুদ্ধির বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে তাদের নৈতিক চরিত্র গঠনে সহায়ক হয়ে ওঠা। 
(iii) এই শিক্ষা ভারতের জনগণকে শ্রম ও পুঁজি বিনিয়োগের ফলাফল বুঝতে এবং দেশজ প্রাকৃতিক সম্পদের অর্থনৈতিক গুরুত্ব উপলব্ধি করতে সাহায্য করবে। এই শিক্ষার বিকাশ ঘটলে কোম্পানি আগামীদিনে ভারতবাসীর মধ্যে থেকে দক্ষ ও বিশ্বস্ত কর্মী পাবে। 
(iv) এই শিক্ষার আর একটি উদ্দেশ্য হবে - ভারত থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করে ইংল্যান্ডের শিল্পের বিকাশ ঘটানো এবং ভারতবাসীর মানসিকতাকে এরকমভাবে গড়ে তোলা যাতে ভারতের বাজারে ইংল্যান্ডে উৎপন্ন পণ্যসামগ্রীর অফুরন্ত চাহিদা সৃষ্টি হয়। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।


২. শিক্ষার বিষয়বস্তু :- 
উডের ডেসপ্যাচে প্রাচ্যশিক্ষার গুরুত্বকে স্বীকার করা হলেও , বলা হয়েছে প্রাচ্য বিজ্ঞান ও দর্শন অজস্র ভুলে ভরা। তাই প্রাচ্য বিজ্ঞান ও দর্শনের পরিবর্তে পাশ্চাত্য কলা , বিজ্ঞান , দর্শন ও সাহিত্যই হবে ভারতবাসীর কাছে শিক্ষার বিষয়বস্তু। 

৩. শিক্ষার মাধ্যম ও ভাষা শিক্ষা :- 
উডের ডেসপ্যাচে শিক্ষার মাধ্যম এবং ভাষা শিক্ষা বিষয়ে অত্যন্ত মূল্যবান নির্দেশ দান করা হয়। ভারতীয় জনগণ যাতে ইউরোপীয় জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে ইংরেজী ও দেশীয় ভাষা - উভয়ই ব্যবহার করতে পারে - সে প্রসঙ্গে ডেসপ্যাচে নির্দিষ্টভাবে নির্দেশ উল্লেখ করা হয়েছে। 

৪. শিক্ষাবিভাগ স্থাপন :- 
উডের ডেসপ্যাচে কোম্পানির অন্তর্ভুক্ত পাঁচটি প্রদেশে একটি করে সরকারি শিক্ষা বিভাগ স্থাপনের সুপারিশ করা হয়। ওই পাঁচটি বিভাগ হল - বাংলা , বোম্বাই , মাদ্রাজ , পাঞ্জাব ও উত্তর-পশ্চিম প্রদেশ।  সুপারিশে আরও উল্লেখ করা হয় - ওই শিক্ষা বিভাগগুলোর প্রধান হবেন Director of Public Instruction বা সংক্ষেপে DPI  । DPI কে সাহায্য করার জন্য তার অধীনে একদল পরিদর্শক ( Inspectors )  নিযুক্ত থাকবেন। এই বিভাগ প্রত্যেক প্রদেশের শিক্ষার অগ্রগতি সম্পর্কে প্রাদেশিক সরকারের নিকট বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ করবেন। 

৫. বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন :- 
উডের ডেসপ্যাচের দ্বিতীয় প্রস্তাবে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের গুরুত্বকে তুলে ধরা হয়েছিল। বলা হয়েছিল , ওই বিশ্ববিদ্যালয়গুলি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের আদর্শে স্থাপিত হবে। কলকাতা , বোম্বাই এবং মাদ্রাজে একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে। ওই বিশ্ববিদ্যালয়গুলির পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন একজন আচার্য এবং একজন উপাচার্য এবং কয়েকজন সরকার মনোনীত সদস্যের দ্বারা গঠিত ''সিনেট।'' 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।


৬. স্তরবিন্যস্ত শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়ন :- 
উডের ডেসপ্যাচে স্তরবিন্যস্ত শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়নের সুপারিশ করা হয়। এই সুপারিশে বলা হয় - স্তরবিন্যস্ত শিক্ষাব্যবস্থার চূড়ায় থাকবে বিশ্ববিদ্যালয় ও তার অধীনস্থ মহাবিদ্যালয়সমূহ। মাঝে থাকবে হাই স্কুল শিক্ষা তথা মাধ্যমিক শিক্ষা এবং সর্বনিম্ন স্তরে থাকবে প্রাথমিক শিক্ষা। 

৭. চুঁইয়ে পড়া নীতির সমালোচনা :- 
উডের ডেসপ্যাচে শিক্ষার চুঁইয়ে পড়া নীতির কঠোর সমালোচনা করা হয় এবং সরকার যাতে অধিক পরিমাণে জনশিক্ষার প্রচারের দায়িত্ব গ্রহণ করে , সে বিষয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়। এছাড়া উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে মাধ্যম হিসেবে ইংরেজিকে প্রাধান্য দেওয়া হলেও মাতৃভাষার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্বকে স্বীকার করা হয়। পাশ্চাত্য জ্ঞান-বিজ্ঞান প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রে ইংরেজির পাশাপাশি মাতৃভাষার সাহায্য গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। 

৮. শর্তসাপেক্ষে অর্থ সাহায্যের ব্যবস্থা :- 
উডের ডেসপ্যাচে বেসরকারি বিদ্যালয়সমূহকে উৎসাহদানের উদ্দেশ্যে শর্তসাপেক্ষে ''Grant - in aid'' প্রথা প্রবর্তনের সুপারিশ করা হয় .বলা হয় , অর্থ সাহায্য নিতে আগ্রহী বিদ্যালয়গুলিকে নিম্নলিখিত শর্ত গুলি মেনে চলতে হবে - 
(i) বিদ্যালয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হবে। 
(ii) বিদ্যালয়ের পরিচালন কমিটির আইনানুগভাবে নির্বাচিত হবে। 
(iii) বিদ্যালয় পরিদর্শকের নির্দেশ অনুসারে বিদ্যালয়ের কাজ চালাতে হবে। 
(iv) বিদ্যালয়ের ছাত্রদের কাছ থেকে সামান্য পরিমাণ হলেও বেতন আদায় করবে। 
(v) শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা , শিক্ষার মান ও ফলাফল উন্নত করতে হবে। 

৯ শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা :- 
চার্লস উড তাঁর ডেসপ্যাচে এদেশের শিক্ষকদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের জন্য নর্ম্যাল স্কুল প্রতিষ্ঠা এবং প্রশিক্ষণ গ্রহনকালে তাদের বৃত্তি দানের সুপারিশ করেন। 

১০. বৃত্তিশিক্ষার ব্যবস্থা :- 
উডের ডেসপ্যাচে সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি আইন , চিকিৎসাশাস্ত্র , কারিগরি ও প্রযুক্তিবিদ্যা প্রভৃতি বৃত্তিমূলক শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলনের সুপারিশ করা হয়। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।


১১. স্ত্রী শিক্ষার প্রসার :- 
স্যার চার্লস উডের মতে , এদেশে স্ত্রীশিক্ষার প্রসার ঘটেনি ; অথচ উপযুক্ত স্ত্রীশিক্ষার প্রসার ছাড়া জনশিক্ষার অগ্রগতি সম্ভব নয়। তাই উডের ডেসপ্যাচে অধিক সংখ্যায় বালিকা বিদ্যালয় স্থাপনের সুপারিশ করা হয়। বালিকাদের চারিত্রিক মাধুর্য ও ব্যক্তিত্বের বিকাশের উপযোগী পৃথক পাঠক্রম প্রণয়নের কথাও বলা হয়। 

১২. সংখ্যালঘুদের শিক্ষা :- 
মুসলমান রাজশক্তিকে পরাস্ত করে , ভারতে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তাই এদেশের মুসলমান সম্প্রদায়ের ইংরেজ বিদ্বেষ ছিল প্রবল। এই বিদ্বেষের কারণে মুসলমানরা ইংরেজ প্রবর্তিত শিক্ষায় কোনো আগ্রহ প্রকাশ করেনি। ফলে তারা আধুনিক শিক্ষার দিক থেকে অনেকখানি পিছিয়ে পড়েছিল।  এই অবস্থার উন্নতি ঘটনার জন্য উডের ডেসপ্যাচে মুসলমানদের জন্য পৃথক শিক্ষাব্যবস্থা করে তোলার সুপারিশ করা হয়। 

১৩. পাঠ্যপুস্তক রচনা :- 
উডের ডেসপ্যাচে , প্রাথমিক স্তরে এবং আংশিকভাবে মাধ্যমিক স্তরে মাতৃভাষার মাধ্যমে পঠন-পাঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়। ভারতে শিক্ষার বিষয়বস্তু হিসেবে পাশ্চাত্য দর্শন ও বিজ্ঞানকে নির্বাচিত করা হয়। তাই শিক্ষার্থীদের কাছে সহজে পৌঁছানোর জন্য উডের ডেসপ্যাচে পাশ্চাত্য দর্শন ও বিজ্ঞানের ইংরেজিতে লেখা বইগুলিকে দেশীয় ভাষায় অনুবাদের জন্য সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।

Share
Tweet
Pin
Share
No comments

Differences between Resume and  curriculum vitae ( C.V. ) 



What is a Resume ? 


Nowadays a resume is one of the most needed document to introduce ourselves . A resume is a summary of one’s identification, qualification and intended career path. It is a formal arrangement of one’s personal inventory. In other words, resume can be defined as a written statement that includes a person’s personal data, education and employment background, etc. It is also known as curriculum vitae , qualifications document  or qualification brief . It acts as an advertisement for a person’s qualifications and stimulates the potential employers to call the person to the interview.

What is a  curriculum vitae ( C.V.) 


CV stands for curriculum vitae . In the US, Canada, and Australia, a CV is a document used for academic purposes. The US academic CV outlines every detail of scholarly career. In other countries, CV is an equivalent of an American resume. One can use it when to apply for jobs.

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।

Differences between Resume and  curriculum vitae ( C.V. ) 


The differences between a resume and a CV include the document’s length and the ability to customize layout options. Additionally, the region and career path of the individual must be taken into account when deciding which is appropriate to use. See more on how they differ below.

1. Length: While most people strive to keep their resume as concise as possible, ideally only one to two pages, a CV can run several pages in length. That’s because a CV includes more information than a resume.

2. Experience/career type: Often, CVs are used by people in academic roles. We may have a CV if we are currently applying to or have graduated from a master’s or doctoral program or if we work as a professor or researcher at an academic institution.

3. Ability to customize: A CV is a static document that does not change. We may add new information to a CV throughout our professional career but the information will not change based on where we are applying. A resume, on the other hand, is often tailored to highlight specific skills or experiences relevant to the position or industry.

4. Geography: In other regions of the world, such as the U.K., New Zealand and parts of Europe, employers use the term CV to describe both CV and resume-style documents. They don’t use the term '' resume'' at all. In South Africa, Australia and India, the terms CV and resume are often used interchangeably. However, in the U.S., a resume and CV are two distinctly different types of documents.

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।
Share
Tweet
Pin
Share
No comments
Newer Posts
Older Posts

Followers

Pages

  • Home
  • Privacy Policy
  • Disclaimer
  • CONTACT ME
  • About Me

Contact Form

Name

Email *

Message *

About me

Hallow viewers , myself Nandan Dutta [Subhankar Dutta], reside at Maheshpur,Malda.
I made this website for the students of B.A. courses under Gour Banga University. Here you can get suggestions of different subjects like HISTORY , SOCIOLOGY , POLITICAL SCIENCE & EDUCATION.
In future I will add MCQ sections of those subjects.


Categories

  • 1ST SEMESTER SUGGESTION (1)
  • 2 ND YEAR SUGGESTION (1)
  • 2ND SEMESTER (1)
  • 3RD SEMESTER (8)
  • BENGALI NOTES (21)
  • CU suggestion. (1)
  • EDUCATION NOTES (141)
  • ENGLISH COMPULSORY (16)
  • GBU Suggestion. (7)
  • HISTORY EUROPE & WORLD (46)
  • HISTORY NOTES (68)
  • POL SC NOTES (68)
  • SOCIOLOGY NOTES (72)
  • WBCS 2020 (1)

recent posts

Blog Archive

  • August 2025 (4)
  • May 2025 (3)
  • April 2025 (20)
  • March 2025 (12)
  • February 2025 (8)
  • November 2024 (5)
  • October 2024 (2)
  • September 2024 (2)
  • June 2024 (2)
  • March 2024 (6)
  • February 2024 (4)
  • October 2023 (5)
  • May 2023 (5)
  • April 2023 (1)
  • December 2022 (1)
  • November 2022 (13)
  • September 2022 (2)
  • August 2022 (7)
  • July 2022 (29)
  • June 2022 (10)
  • May 2022 (25)
  • April 2022 (24)
  • March 2022 (16)
  • February 2022 (19)
  • January 2022 (21)
  • December 2021 (46)
  • November 2021 (5)
  • October 2021 (6)
  • September 2021 (5)
  • August 2021 (41)
  • July 2021 (43)
  • June 2021 (31)
  • May 2021 (7)
  • April 2021 (1)
  • July 2020 (1)
  • June 2020 (3)
  • April 2020 (1)
  • November 2019 (1)
  • July 2019 (1)
  • June 2019 (1)
  • May 2019 (1)
  • April 2019 (2)
  • January 2019 (1)

Pages

  • Home
  • 2nd SEM ভাষাতত্ত্ব :
  • বাংলা উপভাষা
  • দ্বিতীয় পুলকেশীর কৃতিত্ব
  • ভারতীয় সংবিধানে বর্ণিত সাম্যের অধিকারগুলি আলোচনা করো।
  • হর্ষবর্ধনের কৃতিত্ব আলোচনা করো। তাকে কি উত্তর পথনাথ বলা যায় ?
  • ভারতীয় সংবিধানের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য :-
  • উদারনীতিবাদ : সংক্ষিপ্ত ধারণা :-
  • চোল শাসনব্যবস্থা :-
  • গুপ্তযুগ সুবর্ণযুগ সম্পর্কিত আলোচনা।
  • ৬. উদাহরণসহ মধ্যযুগের বাংলাভাষার কয়েকটি বৈশিষ্ট আল...
  • 1. Marxism
  • আধুনিক বাংলা ভাষা ও তার বৈশিষ্ট।
  • Discuss the career and achievements of Samudragupta .
  • ভাষাতত্ত্ব

Created with by ThemeXpose | Distributed by Blogger Templates