­
চোলদের সাংস্কৃতিক জীবন :- architecture and sculpture of cholas - NANDAN DUTTA

চোলদের সাংস্কৃতিক জীবন :- architecture and sculpture of cholas

by - July 29, 2021

চোলদের সাংস্কৃতিক জীবন :- 


চোলযুগের স্থাপত্য ও ভাস্কর্য শিল্পের বর্ণনা। 




প্রাচীন যুগে চোল সাম্রাজ্যের সাংস্কৃতিক জীবনের ইতিহাস ছিল গৌরবময়। শিল্প ও সাহিত্যে চোলরা ছিল খুবই উন্নত। এর মুলে ছিল প্রধানতঃ তিনটি কারণ - ( ক ) সাম্রাজ্যের প্রসার , (খ ) ধন সম্পদের প্রাচুর্য ও (গ)  চোল রাজাদের অকুন্ঠ পৃষ্ঠপোষকতা। সাম্রাজ্যের প্রসারের কারণে তাঞ্জোর , গঙ্গইকোন্ডচোলপুরম , কাঞ্চি - ইত্যাদি জনবহুল নগরী গড়ে ওঠে এবং তা নির্মাণের ব্যাপারে চোল রাজারাই ছিলেন প্রধান উদ্যোক্তা। একাধিক রাজধানী নির্মাণ করে চোলরাজারা অগণিত শিল্পী , কারিগর ও শ্রমিকের কর্মসংস্থান করে দিয়েছিলেন। রাজপ্রাসাদগুলি ছিল বৃহদাকার। এমনকি কোনো কোনো রাজপ্রাসাদ পঞ্চতল - সপ্ততল পর্যন্ত নির্মিত হয়েছিল। প্রধান অভিজাতরাও রাজপ্রাসাদতুল্য অট্টালিকায় বাস করতেন। এই যুগের সাহিত্যে চোলরাজাদের প্রাসাদ , মন্ত্রী ও ধনী বণিকদের সুরম্য অট্টালিকার বিবরণ পাওয়া যায়। যদিও সেগুলির অস্তিত্ব আজ আর নেই। 


মন্দির স্থাপত্য ও নির্মাণ রীতি :- 
চোল সাম্রাজ্যে মন্দির - স্থাপত্যকলার অপূর্ব বিকাশ ঘটে। পল্লবযুগে যে স্থাপত্যরীতি চালু হয়েছিল , চোলদের যুগে তা অধিকতর উৎকর্ষতা লাভ করে। চোল স্থাপত্যরীতি দ্রাবিড় শিল্পরীতি নামে পরিচিত ছিল। কেননা , এই শিল্পরীতি প্রধানতঃ দক্ষিণ ভারতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। এই শিল্পরীতির অন্যতম বৈশিষ্ট হল - প্রধান দেবালয়ের ওপর পরপর তল নির্মাণ। কোনো কোনো দেবালয় পাঁচ ও ছয় তল বিশিষ্ট ছিল। দেবগৃহের সম্মুখে থাকত স্তম্ভযুক্ত সুবৃহৎ কক্ষ। এগুলিকে মন্ডপ বলা হত। এই মন্ডপেই নৃত্য - গীত ও অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হত। দেবদাসীরাই সাধারণতঃ এই নৃত্যে অংশগ্রহণ করত। মন্দিরের দেওয়ালের মধ্যে সুউচ্চ তোরণ নির্মিত থাকত যা ' গোপুরম ' নামে পরিচিত ছিল। মন্দির প্রাঙ্গনের ভেতরে থাকত পুরোহিতদের বাসগৃহ , অতিথিশালা , যাত্রীনিবাস - ইত্যাদি। ব্যায়নির্বাহের জন্য মন্দিরগুলি নিষ্কর ভূমির উপস্বত্ব লাভ করত। বিত্তশালী ও ধনী বণিকরা উদার হস্তে মন্দিরে দান করতেন। চোল সাম্রাজ্যের কতকগুলি মন্দির এতটাই সমৃদ্ধ ছিল যে , মন্দিরের নামে ব্যবসা - বাণিজ্যও চলত। 


নিদর্শন :- 
খ্রিস্টীয় অষ্টম শতাব্দীতে কাঞ্চীপুরমে পল্লব আমলে কৈলাসনাথের মন্দির - স্থাপত্য দ্রাবিড় শিল্প - রীতির প্রথম নিদর্শন। এই শিল্পরীতির সর্বোৎকৃষ্ট নিদর্শন হল প্রথম রাজরাজ কর্তৃক নির্মিত তাঞ্জোরের বৃহদীশ্বর মন্দির। ' গঙ্গইকোন্ডচোলপুরম ' চোলযুগের মন্দির স্থাপত্যের অপর এক উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত। এর সুউচ্চ বুরুজের (Tower ) নির্মাণ - কৌশল আজও বিস্ময় জাগায়। এই বুরুজের আকৃতি পিরামিডের মতো এবং এর উচ্চতা হল ১৯০ ফুট। এই মন্দির তের - তল বিশিষ্ট। ' গঙ্গইকোন্ডচোলপুরম ' মন্দিরটি প্রসঙ্গে পার্সি ব্রাউন এর মন্তব্য হল - This tower is a touch - stone of Indian architecture as a hole . । 

অধ্যাপক নীলকণ্ঠ শাস্ত্রীর মতে , এটি ছিল তামিল স্থাপত্যকলার এক শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। 

সামাজিক প্রভাব :- 
চোলরাজাগণ কর্তৃক পার্শ্ববর্তি অঞ্চল থেকে লুন্ঠিত সম্পদ আহরণ করে এই সকল মন্দির নির্মাণের ব্যায়ভার মেটানো হত। মন্দিরগুলিতে দেবতা ও দেবতাদের অনুচরদের মূর্তি ছাড়াও মানব - জীবনের নানা দিক প্রসঙ্গে সুন্দর সুন্দর মূর্তিও নির্মিত হয়েছিল। এইভাবে ধর্মের সঙ্গে পার্থিব জীবনের নানাদিকের সুন্দর সামঞ্জস্য মন্দির স্থাপত্যে দেখা যায়। এককথায় বলা যায় , মন্দিরগুলি ছিল সেইযুগের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের প্রাণকেন্দ্র। 


চোলদের নির্মিত সেচ - খালগুলির গঠনও তামিল স্থাপত্য - শিল্পের অপর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। নতুন রাজধানী  গঙ্গইকোন্ডচোলপুরমের সংলগ্ন রাজা প্রথম রাজেন্দ্র চোল কর্তৃক নির্মিত কৃত্রিম হৃদটিও চোল চোল স্থাপত্য শিল্পের অপর উৎকৃষ্ট নিদর্শন। এটির দৈর্ঘ্য ছিল ষোলো মাইল এবং এর সাথে একাধিক খাল যুক্ত ছিল। 

ভাস্কর্য শিল্প :- 
চোল আমলে দক্ষিণ ভারতে ভাস্কর্যশিল্পের অভূতপূর্ব উৎকর্ষের পরিচয় পাওয়া যায়। চোলদের ভাস্কর্যশিল্পে উৎকৃষ্টতার শ্রেষ্ঠ নিদর্শন হল শ্রবণবেলগোলায় গোমতেশ্বরের বিরাট মূর্তি। ভাস্কর্যের ক্ষেত্রে এক বিশেষ দিক ছিল মূর্তিনির্মাণ। এর চরম বিকাশ দেখা যায় নটরাজের মূর্তি নির্মাণে। চোল আমলের নটরাজের ব্রোঞ্জ মূর্তিগুলি আজও বিস্ময়ের সৃষ্টি করে। 

সাহিত্য :- 
চোলরাজারা সাহিত্যেরও পরম পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। খ্রিস্টীয় একাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ পর্যন্ত কম্বনের যুগকে তামিল সাহিত্যের সুবর্ণযুগ বলা হয়। অনুমিত হয় যে , কম্বন কোনো এক চোলরাজার সভাকবি ছিলেন। অট্টকুট্টন ও পুগালেন্ডি প্রমুখ পন্ডিতগণ অন্যান্য নৃপতিদের সভাকবিদের সঙ্গে কম্বনের সাহিত্যিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার অনেক কিংবদন্তী প্রচলিত আছে।     


You May Also Like

0 comments