Pages

Powered by Blogger.
1ST SEMESTER SUGGESTION 2 ND YEAR SUGGESTION 2ND SEMESTER 3RD SEMESTER BENGALI NOTES CU suggestion. EDUCATION NOTES ENGLISH COMPULSORY GBU Suggestion. HISTORY EUROPE & WORLD HISTORY NOTES POL SC NOTES SOCIOLOGY NOTES WBCS 2020

NANDAN DUTTA

A new approach for exam notes .

মনোবিজ্ঞান ও শিক্ষার সম্পর্ক। 



মনোবিজ্ঞান ও শিক্ষার সম্পৰ্ক আলোচনার ক্ষেত্রে জানা প্রয়োজন মনোবিজ্ঞান ও শিক্ষার অর্থ। মনোবিজ্ঞান হল মানুষের আচরণ সম্পর্কিত বস্তুনিষ্ঠ বিজ্ঞান। অর্থাৎ , মনোবিজ্ঞান হল আচরণ অধ্যয়নের বিজ্ঞান - যার সাহায্যে মানুষের আচরণের ব্যাখ্যা , নীতি নিয়ন্ত্রণ এবং ভবিষ্যৎ সম্পর্কে পূর্বাভাস দেওয়া যায়। 
অন্যদিকে শিক্ষা বলতে আমরা সেইসকল আচরণকে আয়ত্ত করা বুঝি , যেগুলি ব্যক্তি ও সমাজ উভয়ের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন। তাই , বলা যায় , ব্যক্তির আচরণ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে মানসিক ক্রিয়া , গতি - প্রকৃতি ও সূত্র নির্ধারণ করে মনোবিজ্ঞান। আর সেই আচরণের প্রয়োগমূলক দিক হল শিক্ষার বিষয়বস্তু। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।


১. শিক্ষার লক্ষ্য ও মনোবিজ্ঞান :- 
Adams এর কথায় '' The teacher teaches John Latin .'' - এই বাক্যটি থেকে শিক্ষা ও মনোবিজ্ঞানের সম্পর্ক ভালোভাবে বোঝা যায়। শিক্ষককে যেমন শিক্ষার বিষয়টি জানতে হবে তেমনি যাকে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে অর্থাৎ শিক্ষার্থীকেও জানতে হবে।  শিক্ষার্থীকে জানতে হলে প্রয়োজন মনোবিজ্ঞানের জ্ঞান।  শিক্ষার লক্ষ্য স্থির করাই শিক্ষাতত্ত্বের একমাত্র কাজ নয় ; এই লক্ষ্যকে বাস্তবায়িত করাও এর অন্যতম উদ্দেশ্য। এ ব্যাপারে শিক্ষামনোবিজ্ঞানের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।


২. শিক্ষার পাঠক্রম ও মনোবিজ্ঞান :- 
শিক্ষার লক্ষ্য নির্দিষ্ট হওয়ার পরবর্তী স্তর হল পাঠক্রম নির্ধারণ করা। পাঠক্রম নির্ধারণ করতে হবে শিক্ষার লক্ষ্যের দিকে নজর রেখে। আধুনিক শিক্ষার লক্ষ্য শুধুমাত্র বৌদ্ধিক বিকাশ নয় , শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীণ বিকাশ সাধন। সুতরাং পাঠক্রম হবে শিক্ষার্থীর সামগ্রিক বিকাশ সাধনের উপযোগী। শিক্ষাক্ষেত্রে পাঠ্যক্রমের এই বহুমুখিতা মনোবিজ্ঞানের ধারণার উপর নির্ভর করে। সেজন্য শিক্ষার্থীর বহুমুখী বিকাশ ও শিক্ষার লক্ষ্য পূরণের জন্য যে পাঠক্রম রচনার করতে হবে তার জন্য মনোবিজ্ঞানের জ্ঞান অপরিহার্য। 

৩. শিক্ষার পদ্ধতি , মূল্যায়ন ও মনোবিজ্ঞান :- 
পাঠক্রম রচনার পরেই আসে শিক্ষাপদ্ধতি। আধুনিক শিক্ষা পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীর সমস্ত ইন্দ্রিয়গুলিকে সক্রিয় করার চেষ্টা করা হয়। শিক্ষার্থী হবে শ্রোতা আর শিক্ষক হবেন পরিচালক - বর্তমানে এই তত্ত্বের অসাড়তা প্রমাণিত হয়েছে। শিক্ষককেন্দ্রিক পদ্ধতির পরিবর্তে বর্তমানে যে শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে - তার ভিত্তি হলো মনোবিজ্ঞান। শিক্ষার স্তর মূল্যায়নের আধুনিক ধারণা , কৌশল স্থিরকরণ এবং প্রয়োগ , তার তাৎপর্য নির্ণয় - ইত্যাদি সব ক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞানের ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। 

৪. শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীর মানসিক স্বাস্থ্য এবং মনোবিজ্ঞান :- 
মানসিক স্বাস্থ্য শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়ের পক্ষেই প্রয়োজন। অন্যথায় শিক্ষণ এবং শিখন কোনোটিই সার্থকভাবে সম্পন্ন হতে পারেনা। মানসিক স্বাস্থ্য কাকে বলে , মানসিক সু -স্বাস্থ্যের লক্ষণ গুলি কী  , কীভাবে সুস্থ মানসিক স্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়া যায় - ইত্যাদি সবই মনোবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয় - যা শিক্ষার ক্ষেত্রে বিশেষ প্রয়োজন। 

৫. মনোবিজ্ঞান এবং শিক্ষানির্দেশনা এবং পরামর্শদান :- 
শিক্ষা নির্দেশনা এবং পরামর্শদানের মাধ্যমেই হয় আধুনিক শিক্ষা বিস্তার। শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত শিক্ষা পরিকল্পনা রচনা , শিক্ষা সংক্রান্ত নানা তথ্য পরিবেশন করা , শিক্ষা সমস্যা সমাধান করা , বয়ঃসন্ধিক্ষণের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের পরামর্শদান , শিক্ষার্থীদের বৃত্তি পছন্দ বিকাশে সাহায্য করা - ইত্যাদি মনোবিজ্ঞানেরই অংশবিশেষ। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।


৬. ব্যতিক্রমী শিশুদের শিক্ষা :- 
ব্যতিক্রমী অর্থাৎ প্রতিভাসম্পন্ন , পিছিয়ে পড়া এবং বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধী শিশুদের বিশেষ ধরনের শিক্ষা প্রয়োজন। মনোবিজ্ঞানে এইসব শিশুদের কীভাবে চিহ্নিত করা যায় এবং এদের আচরণের বিভিন্ন দিক গুলি বিশদভাবে আলোচিত হয় - যা এদের শিক্ষাব্যবস্থা পরিকল্পনার জন্য বিশেষ প্রয়োজন। 

৭. শিক্ষা এবং মনোবিজ্ঞানের গবেষণা :- 
শিক্ষার বিকাশে মনোবিজ্ঞানের গবেষণা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।  শিক্ষাকে বিজ্ঞানভিত্তিক করার ক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞানের গবেষণার বিষয়ে অবদান দেখা যায়। মনোযোগ , স্মৃতি , শিখন , প্রেষণা , সাধারণ ক্ষমতা ইত্যাদি মানসিক প্রক্রিয়ার ওপর গবেষণালব্ধ ফল শিক্ষাব্যবস্থাকে উন্নত করতে সাহায্য করেছে এবং করছে। 

৮. বিদ্যালয় পরিচালনা এবংমনোবিজ্ঞান :- 
শিক্ষাব্যবস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো সুষ্ঠভাবে বিদ্যালয় পরিচালনা। বর্তমানে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে , ব্যবস্থাপনার মনস্তত্ত্ব প্রয়োগ করে বিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে আরও উৎকর্ষতা আনা যায়। বিদ্যালয়ের মানবসম্পদ , যেমন - শিক্ষক , ছাত্র , শিক্ষাকর্মী এবং অভিভাবকদের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে বিদ্যালয়ের কার্যাবলীগুলিকে সম্পন্ন করতে শিক্ষা ব্যবস্থাপনার মনস্তত্ত্বের নীতি প্রয়োগ করে বিদ্যালয় পরিচালনা আরো উন্নত করা যায়। 

৯. শ্রেণি ব্যবস্থাপনা এবং মনোবিজ্ঞান :- 
কীভাবে শ্রেণির কাজ শুরু হবে , শিক্ষার্থীদের প্রেষণা এবং মনোযোগ কীভাবে ধরে রাখা যায় , কীভাবে শ্রেণি শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করা যায় , শ্রেণিকক্ষে কীভাবে ব্যক্তিগত ও দলগত শিখনের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা যায় - ইত্যাদি ক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞানের বিভিন্ন নীতি প্রয়োগ করে শ্রেণিকক্ষ ব্যবস্থাপনার উৎকর্ষ সাধন করা যায়। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।



Share
Tweet
Pin
Share
1 comments

 মনোবিদ্যা ও শিক্ষাবিজ্ঞানের মধ্যে পার্থক্য :- 




এ বিষয়ে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই যে , শিক্ষার সঙ্গে মনোবিদ্যার সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর এবং অবিচ্ছেদ্য। প্রকৃতপক্ষে শিক্ষার অন্যতম ভিত্তি হল মনোবিদ্যা। শিক্ষার সঙ্গে মনোবিদ্যার এই সম্পর্ককে ভিত্তি করে শিক্ষা মনোবিদ্যা একটি পৃথক জ্ঞানের বিষয় বলে বিবেচিত হয়েছে। কিন্তু একথা মনে করলে ভুল করা হবে যে , শিক্ষাবিজ্ঞান ও মনোবিজ্ঞানের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। বস্তুতপক্ষে শিক্ষাবিজ্ঞান ও মনোবিজ্ঞানের মধ্যে কতগুলি মৌলিক পার্থক্য বিদ্যমান। যেমন - 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।


১. প্রকৃতিগত ক্ষেত্রে :- 
মনোবিদ্যা হল একটি বিষয়নিষ্ঠ বিজ্ঞান। 
কিন্তু শিক্ষাবিজ্ঞান একটি নিয়মনিষ্ঠ বিজ্ঞান। 

২. বিষয়বস্তু :- 
মনোবিদ্যার বিষয়বস্তু হল মানসিক প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ , নিয়ন্ত্রণ ও ভবিষ্যৎবাণীকরণ। 
কিন্তু শিক্ষাবিজ্ঞানের বিষয় হল আচরণ বিশ্লেষণ , নিয়ন্ত্রণ ও ভবিষ্যৎবাণীকরণ। 

৩. মৌলিকতা :- 
মনোবিদ্যা একটি মৌলিক বিজ্ঞান। 
কিন্তু শিক্ষাবিজ্ঞান মৌলিক বিজ্ঞান নয়। 

৪. বিশুদ্ধতা :- 
মনোবিজ্ঞান একটি শুদ্ধ বিজ্ঞান। 
শিক্ষা বিজ্ঞান একটি ব্যবহারিক বা প্রায়োগিক বিজ্ঞান। 

৫. সমাজ নিরপেক্ষতা :- 
মনোবিদ্যা স্থান , সমাজ  , ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি নিরপেক্ষ। 
কিন্তু শিক্ষাবিজ্ঞান দেশ , সমাজ ঐতিহ্য , সংস্কৃতি ইত্যাদি ভেদে পরিবর্তনসাপেক্ষ। 

৬. ব্যক্তির আচরণের দিক থেকে :- 
মনোবিদ্যার আলোচনার ক্ষেত্র কোনো মানুষের আচরণের মানসিক দিক যা অদৃশ্য থাকে। মানুষের মানসিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া অত্যন্ত সূক্ষ্ম এবং ইন্দ্রিয়গ্রাহ্যতার অতীত। 
কিন্তু শিক্ষাবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয় হল মানুষের আচরণের বাহ্যিক দিক। এটি ইন্দ্রিয় গ্রাহ্য।

 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।

Share
Tweet
Pin
Share
No comments

শিক্ষা - মনোবিদ্যার সংজ্ঞা দাও। শিক্ষা মনোবিজ্ঞানের প্রকৃতি ও পরিধি আলোচনা করো। 






শিক্ষা - মনোবিদ্যার সংজ্ঞা :- 


মনোবিদ স্কিনার এর মতে , শিক্ষামনোবিজ্ঞান হলো মনোবিজ্ঞানের সেই শাখা যা শিক্ষণ এবং শিখন  নিয়ে কাজ করে। 

জাড বলেছেন , জীবন বিকাশের বিভিন্ন স্তরের মধ্যে দিয়ে যাওয়া শিশুদের মধ্যে যেসব পরিবর্তন সংঘটিত হয় , সেই সব বিষয়ে বিজ্ঞানের যে শাখা আলোচনা করে তা হল শিক্ষা মনোবিজ্ঞান। 

কোলেসনিক বলেছেন , মনোবিজ্ঞানের যেসব তত্ত্ব ও নীতি শিক্ষাপ্রক্রিয়াকে ব্যাখ্যা করতে এবং উন্নত করতে সাহায্য করে , তাদের অনুশীলন হল শিক্ষামনোবিদ্যা। 

স্যান্ডিফোর্ড এর মতে , শিক্ষা মনোবিজ্ঞান হল ফলিত মনোবিজ্ঞানের একটি শাখা যা মনোবিজ্ঞানের নীতি গুলিকে শিক্ষাক্ষেত্রে প্রয়োগ করে। 

জাড বলেছেন , ব্যক্তির জন্ম থেকে প্রাপ্তবয়স পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরের বিকাশের বিজ্ঞানভিত্তিক আলোচনা হল শিক্ষামনোবিজ্ঞান। 

বার্নাড এর মতে , শিক্ষামনোবিজ্ঞান হলো মনোবিজ্ঞানের একটি শাখা যা শিক্ষা ও শিখন প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।


শিক্ষামনোবিজ্ঞানের প্রকৃতি :- 


১. প্রয়োগমূলক বিজ্ঞান :- 
মনোবিজ্ঞানের তত্ত্ব , নীতি , সূত্র ইত্যাদি শিক্ষাক্ষেত্রে প্রয়োগ করে শিক্ষাব্যবস্থাকে কার্যকরী ও উন্নত করাই হল শিক্ষা মনোবিজ্ঞানের কাজ , তাই শিক্ষামনোবিজ্ঞান একটি প্রয়োগমূলক বিজ্ঞান। শুধু তাত্ত্বিক জ্ঞান দানই নয় , তাত্ত্বিক জ্ঞানকে প্রয়োগ করে শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরও উন্নত ও কার্যকরী করতে চায়  শিক্ষামনোবিজ্ঞান। 

২. স্বতন্ত্র বিষয় :- 
আগে শিক্ষামনোবিজ্ঞান মনোবিজ্ঞানের একটি শাখা বলে বিবেচিত হত। বর্তমানে এটি একটি পৃথক বিষয় হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। আসলে , কোনো জ্ঞান সমষ্টি অন্ততপক্ষে তিনটি শর্ত সাপেক্ষে নিজেকে পৃথক বিষয় হিসেবে দাবি করতে পারে। (ক ) বিষয়টির পরিধি হবে যথেষ্ট বিস্তৃত। (খ ) বিষয়টির নিজস্ব সমস্যা থাকবে।  (গ ) বিষয়টির নিজস্ব পদ্ধতি থাকবে যার সাহায্যে তার সমস্যা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা বা গবেষণা করে সমাধানের পথ নির্দিষ্ট করে বিষয়টিকে আরও উন্নত করা সম্ভব হবে।  শিক্ষামনোবিজ্ঞান এই তিনটি শর্তই পূরণ করতে সক্ষম। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।


৩. গতিশীল বিষয় :- 
শিক্ষামনোবিজ্ঞানের আলোচনার বিষয়বস্তুগুলি স্থির নয় , গতিশীল। শিক্ষামনোবিজ্ঞানের ওপর প্রতিনিয়ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণার ফলে একদিকে যেমন নতুন তথ্য তত্ত্ব , নীতি , সূত্র আবিষ্কৃত হচ্ছে এবং তার প্রয়োগ ঘটছে ; অন্যদিকে তেমনই পুরনো তত্ত্ব ও নীতিসূত্র ও চিন্তাধারার পরিবর্তন ঘটছে যার ফলে শিক্ষামনোবিজ্ঞান আরও সমৃদ্ধ হয়ে উঠছে। 

৪. ব্যক্তি ও সমাজের পক্ষে কল্যাণকর :- 
শিক্ষামনোবিজ্ঞান সর্বদাই ব্যক্তি ও সমাজের কল্যাণের প্রতি দৃষ্টি দেয়। এজন্য এটি একটি আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান। শিক্ষামনোবিজ্ঞান ব্যক্তির সম্ভাবনাগুলির বিকাশের মাধ্যমে প্রত্যক্ষভাবে ব্যক্তির কল্যাণ সাধন করে। ফলে পরোক্ষভাবে সমাজের মঙ্গল সাধিত হয়। কারণ সমৃদ্ধ ও পূর্ণ মানুষই দেশ ও সমাজের সম্পদ। দেশ ও সমাজের সামগ্রিক বিকাশে এদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষামনোবিজ্ঞান ব্যক্তির আচরণ সংশোধন করে ব্যক্তির ও সমাজের মঙ্গল সাধন করে। 

৫. ব্যক্তি স্বাতন্ত্রের ওপর গুরুত্ব আরোপকারী :- শিক্ষামনোবিজ্ঞান ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়।  ব্যক্তিগত পার্থক্যের নীতিকে স্বীকার করে শিক্ষামনোবিজ্ঞান তার বিষয়গুলিকে বিশ্লেষণ করে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।


শিক্ষামনোবিজ্ঞানের পরিধি :- 

১. সহজাত মানসিক সামর্থ্য :- 
ব্যক্তি সহজাতভাবে কিছু মানসিক সামর্থ্য নিয়ে জন্মায়। যেমন -  বুদ্ধি , প্রক্ষোভ , স্মৃতি , কল্পনা , চিন্তন  ইত্যাদি। শিক্ষার ক্ষেত্রে এই সামর্থ্যগুলি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এগুলি সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান অর্জন ছাড়া কীভাবে এদের নিয়ন্ত্রণ এবং উন্নতকরণ করা যায় এবং শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর সার্থক প্রয়োগ করা যায় তা জানা সম্ভব নয়। তাই শিক্ষামনোবিজ্ঞানে এই সহজাত সামর্থ্যগুলি সম্পর্কে বিশদ আলোচনা থাকে। 

২. জীবন বিকাশের ধারা :- 
শিশুর জন্মগতসূত্রে প্রাপ্ত সামর্থ্যগুলি পুষ্টি , অনুশীলন এবং পরিবেশের সঙ্গে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে বিকাশ লাভ করে। এই বিকাশের যেমন একটি ধারা আছে তেমনি আছে অনুকূল পরিবেশ রচনার  ধারাও। শিক্ষামনোবিজ্ঞান শিশুর দৈহিক , মানসিক , প্রাক্ষোভিক বিকাশের ধারাগুলি আলোচনা করে এবং শিশুর যথাযথ বিকাশের জন্য যে পরিবেশের প্রয়োজন তার রূপরেখাও শিক্ষা মনোবিজ্ঞানে আলোচিত হয়। 

৩. ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য :- 
ব্যক্তিগত পার্থক্য একটি স্বাভাবিক ঘটনা। ব্যক্তিগত পার্থক্যের কারণ কী , কীভাবে এই পার্থক্যকে ভিত্তি করে শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলি ,যেমন পাঠক্রম , শিক্ষাদান পদ্ধতি , মূল্যায়ন প্রভৃতির বিচার বিবেচনা করা যায় তার আলোচনা শিক্ষামনোবিজ্ঞানের পরিধির অন্তর্ভুক্ত। 

৪. শিখন তত্ত্ব :- 
শিখন তত্ত্ব এবং তার প্রয়োগ শিক্ষামনোবিদ্যার অন্যতম আলোচ্য বিষয়। গতানুগতিক শিখনের পদ্ধতি হিসাবে উদ্দীপক প্রতিক্রিয়ার পরিবর্তে আধুনিক অপেক্ষাকৃত জটিল আচরণমূলক ও জ্ঞানমূলক তত্ত্ব শ্রেণিশিক্ষনে অধিকতর কার্যকরী বলে প্রমাণিত হয়েছে। জ্ঞানমূলক তত্ত্বে শিখনকে নির্মাণভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গিতে ব্যাখ্যা করা হয়েছে যা শিক্ষা শিখন প্রক্রিয়ার মধ্যে আমূল পরিবর্তন এনেছে। 

৫. শিক্ষণের ভিত্তি :- 
শিখনের ভিত্তিকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায় - জ্ঞানমূলক এবং অনুভূতিমূলক। বুদ্ধি , স্মৃতি এবং মনোযোগ জ্ঞানমূলক ভিত্তির অন্তর্ভুক্ত। অন্যদিকে প্রেরণা , মনোভাব এবং আগ্রহ অনুভূতিমূলক ভিত্তির অন্তর্ভুক্ত। অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা স্মৃতিতে সঞ্চিত হয় , প্রয়োজনবোধে যা আমরা স্মরণ করে প্রয়োগ করি। সঞ্চিত অভিজ্ঞতার সঙ্গে নতুন জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার সমন্বয়সাধন করাই হল শিখন। তাই , শিক্ষককে জানতে হবে কীভাবে পাঠলব্ধ বিষয় স্মৃতিতে সঞ্চিত হয় এবং কীভাবে সঞ্চয়ের বিলোপ ঘটলে পূর্বপঠিত বিষয়কে আমরা ভুলে যাই। স্মৃতি ছাড়া অন্যান্য জ্ঞানমূলক উপাদান , যেমন বুদ্ধি ও মনোযোগ এবং প্রেরণা , মনোভাব ও আগ্রহ প্রভৃতি শিখনের অনুভূতিমূলক উপাদানগুলি সম্পর্কে বিশদ তথ্য না জানলে উন্নত পাঠদানে শিক্ষকের ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। 

৬. শিক্ষা প্রযুক্তি :- 
শিক্ষা প্রযুক্তি কাকে বলে , কী ধরনের প্রযুক্তি শিক্ষাক্ষেত্রে কার্যকরী , কীভাবে শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রযুক্তির প্রয়োগ করা যায় - এসবই বর্তমানে শিক্ষামনোবিদ্যার গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।


৭. শ্রেণি ব্যবস্থাপনা :- 
সম্প্রতি শ্রেণি ব্যবস্থাপনা শিক্ষামনোবিদ্যার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। শিক্ষা - শিখন প্রক্রিয়াকে আরও কার্যকরী করে তুলতে শ্রেণিকক্ষে উদ্ভব ঘটা বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে শ্রেণি ব্যবস্থাপনার কৌশল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

৮. পরীক্ষা ও মূল্যায়ণ :- 
শিক্ষা প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তর হল পরীক্ষা ও মূল্যায়ণ। শিক্ষাকার্যক্রমের মধ্যে দিয়ে শিক্ষার্থী কতটুকু শিখল , প্রত্যাশিত মানে পৌঁছাতে সক্ষম হলো কি'না , না হলে কোথায় তার অসুবিধা , সেই অসুবিধা দূর করতে কী ধরনের সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা যায় প্রভৃতি শিক্ষামনোবিদ্যার আলোচ্য বিষয়। 

৯. প্রতিভা সম্পন্ন ও পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থী : - 
প্রতিভাসম্পন্ন ও পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের কীভাবে নির্দিষ্ট করা যায় , তাদের মনস্তত্ত্ব , কোন ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা তাদের জন্য উপযুক্ত , কেমন করে তাদের শেখানো যাবে প্রভৃতি বিষয়ে চিন্তাভাবনা গণতান্ত্রিক এবং কল্যাণকর রাষ্ট্রের পক্ষে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এটি শিক্ষামনোবিজ্ঞানে বিশদভাবে আলোচিত হয়। 

১০. পরিসংখ্যান :- 
বিজ্ঞানের সমস্ত ক্ষেত্রে রাশিবিজ্ঞানের প্রয়োগ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বস্তুত রাশি বিজ্ঞানের জ্ঞান ছাড়া শিক্ষার্থীদের অগ্রগতির সঠিক মূল্যায়ন সম্ভব নয়। তাই একজন শিক্ষকের পক্ষে পরিসংখ্যানের প্রয়োজনীয় জ্ঞান অপরিহার্য। 

১১. মানসিক স্বাস্থ্য :- 
মানসিক সুস্বাস্থ্য শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়ের পক্ষে প্রয়োজন। মানসিক স্বাস্থ্য কী , সুস্থ মানসিক স্বাস্থ্যের লক্ষণ গুলি কী কী , কীভাবে সুস্থ মানসিক স্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়া যায় , অপসংগতি কী , এর কারণ কী , অপসংগতি প্রতিরোধে কী ধরনের কর্মসূচি বিদ্যালয় নেওয়া যেতে পারে - এসব শিক্ষামনোবিদ্যার আলোচ্য বিষয়। 

১২. অভিযোজন প্রক্রিয়া :- 
সার্থক অভিযোজনই হল শিক্ষার লক্ষ্য। অভিযোজন কাকে বলে , কীভাবে অভিযোজন করা যায় , অভিযোজনের অনুকুল ও প্রতিকুল পরিবেশে কী  , শিক্ষাক্ষেত্রে অনুকূল পরিবেশ গড়ে তোলা এবং প্রতিকূল পরিবেশকে প্রতিরোধ করাও শিক্ষামনোবিদ্যার আলোচ্য বিষয়। 

১৩. শিক্ষা নির্দেশনা :- 
শিক্ষা নির্দেশনা কাকে বলে , শিক্ষানির্দেশনার আলোচ্য বিষয় , কীভাবে শিক্ষার্থী সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করা যায় , কীভাবে শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা পরিকল্পনা রচনা হয় - ইত্যাদি এবং সেক্ষেত্রে শিক্ষকের করণীয় কী কী , সে সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য শিক্ষা ও বৃত্তি নির্দেশনার অন্তর্ভুক্ত। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।

 
Share
Tweet
Pin
Share
No comments

হরপ্পা সভ্যতার নগর পরিকল্পনা সম্পর্কে আলোচনা কর। Discuss the general planning of the cities of Harappan Civilisation . 




হরপ্পা সভ্যতার নগর পরিকল্পনা


যথেষ্ট সাক্ষ্য - প্রমানের অভাব , সিন্ধু উপত্যকা ও হরপ্পায় প্রাপ্ত লিপিগুলির যথাযথ পাঠোদ্ধারের অভাব - ইত্যাদি কারণে সিন্ধু সভ্যতা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে শুধুমাত্র প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানের উপর নির্ভর করে হরপ্পার নগরজীবন সম্পর্কে আলোচনা করা যেতে পারে। তবে , এ প্রসঙ্গে বলা যেতে পারে , সিন্ধুলিপি পাঠোদ্ধার না হলে সিন্ধু সভ্যতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে না। 
‘’ It is impossible at the present state of our knowledge to come to any definite conclusion .’’ 
( The Vedic Age ) 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।


তবে সামগ্রিক তথ্য প্রমানের ভিত্তিতে বলা যেতে পারে , হরপ্পা সভ্যতার অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রেই উন্নত নগরজীবনের বিকাশ ঘটেছিল বলে প্রমান পাওয়া যায়। এই সভ্যতার অন্যতম নগরগুলি ছিল - হরপ্পা , মহেঞ্জোদারো , কালিবঙ্গান , চানহুদারো , কোটদিজি , আলমগিরপুর , রংপুর , বানওয়ালি , লোথাল , সুরকোটরা , রোজদি - প্রভৃতি। প্রায় পাঁচ হাজার বছর পূর্বে বিকশিত হওয়া এই সভ্যতায় উন্নত রাস্তাঘাট , ঘরবাড়ি , পয়ঃপ্রণালী , স্নানাগার , শস্যাগার   প্রভৃতির নির্মাণ ও উন্নত নির্মাণ কৌশল উন্নত নগর সভ্যতার পরিচয় বহন করে। 
ঐতিহাসিক মার্টিমার হুইলার মনে করেন যে , হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো নগর দুটি নির্মাণকালে সংগঠকরা নগর পরিকল্পনায় যথেষ্ট দক্ষতা অর্জন করেছিলেন। নগর পরিকল্পনার প্রধান দিকগুলি ছিল ----

প্রতিটি নগরের জীবনযাত্রাগত সাদৃশ্য :-
হরপ্পার বিভিন্ন নগরগুলিতে সমাজ ও সংস্কৃতি মোটামুটি একই ধরণের ছিল। বিভিন্ন নগরগুলির মধ্যে যথেষ্ট দূরত্ব থাকলেও নগরগুলির পরিকল্পনা , গঠন রীতি , জীবনযাত্রা প্রণালী - প্রভৃতির মধ্যে যথেষ্ট সাদৃশ্য দেখা যায়। নগরের রাস্তাঘাটের নকশা , ঘরবাড়ি ও অট্টালিকা , পরিষ্কার - পরিছন্নতার দিকে নজর , ওজন ও পরিমাপ ব্যবস্থা - সবই প্রতিটি নগরেই প্রায় একই ধরণের ছিল। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।


সাধারণ নগর পরিকল্পনায় পূর্ববর্তী নগরের ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা :-
মহেঞ্জোদাড়োতে নয়টি স্তরে ঘর বাড়ির নিদর্শন পাওয়া গেছে। বন্যার ফলে বা অন্য কোনো কারণে অট্টালিকাগুলি ধ্বংস হয়ে গেলে সেইস্থানে অনুরূপ অট্টালিকা তৈরী করার রীতি ছিল। হাজার - হাজার বছর ধরে নগর নগর দুটির রাজপথের পরিকল্পনা একই ছিল। একথা অনস্বীকার্য যে , মেসোপটেমিয়ার সাথে যোগাযোগ থাকা স্বত্বেও সিন্ধুবাসী মেসোপটেমিয়ার উন্নত সাংস্কৃতিক কলাকৌশল গ্রহণে উৎসাহী ছিল না। এখানেই সিন্ধুবাসীদের রক্ষনশীলতা ও ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধার পরিচয় পাওয়া যায়।     

পয়ঃপ্রণালী ও রাস্তাঘাট :- 
বাড়ির ভিতর থেকে পয়ঃপ্রণালীর মাধ্যমে জল নিষ্কাশন করে সদর রাজপথের বৃহৎ নর্দমায় ফেলার সুবন্দোবস্ত ছিল। বাড়ীর জঞ্জাল ফেলার জন্য বড় বড় আবর্জনা কুন্ড থাকত। প্রতিটি স্নানাগারে জল নিষ্কাশনের জন্য পোড়া মাটির নল ব্যবহৃত হত। নগর দুটি পরিস্কার রাখার জন্য হাজার হাজার বছর পূর্বে সিন্ধু নাগরিকেরা যে কতটা সচেতন ছিলেন - তার সুস্পষ্ট প্রমান পাওয়া যায়। 

হরপ্পা সভ্যতার প্রধান রাস্তাগুলি শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। রাস্তাগুলি ছিল প্রশস্ত , সোজা ও পরিছন্ন। রাস্তাগুলি ৯ থেকে ৩৪ ফুট পর্যন্ত চওড়া ছিল। প্রধান রাস্তা থেকে একাধিক সরু গলিপথ বেরিয়ে আসত। রাস্তাগুলি সম্পূর্ণ নগরকে বিভিন্ন বর্গাকার বা আয়তাকার ক্ষেত্রে বিভক্ত থাকত। রাস্তা নির্মাণে চুন , সুরকি , পাথর প্রভৃতি ব্যবহার করা হত। রাস্তার দুপাশে বাঁধানো ফুটপাত , ডাস্টবিন ও আলোর ব্যবস্থা ছিল।

   

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।


অট্টালিকা ও অন্যান্য ঘরবাড়ি নির্মাণ :- 
অধিকাংশ অট্টালিকাগুলি পোড়া ইঁট দ্বারা নির্মিত ছিল। একতল ও বহুতল বাড়িগুলির দেওয়াল ছিল মসৃন। প্রতিটি আবাসিক গৃহে উন্মুক্ত অঙ্গন , কূপ , স্নানাগার , জানালা এবং গৃহগুলি প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত ছিল। গৃহ নির্মাণের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ইঁটগুলি সাধারণতঃ দুই ধরণের হত - রোদে শুকানো ইঁট ও পোড়ানো ইঁট। ইঁটগুলি পাতলা ও ছোট আকৃতির হত। প্রতিটি বাড়িতে প্রবেশের জন্য গলিপথ থাকত। বাড়িগুলির রাস্তার দিকে কোনো দরজা - জানলা থাকতো না। শহরে অসংখ্য দ্বিতল বাড়ি ছিল। মনে করা হয় যে , আয়তাকার উঁচু স্থানের বাড়িগুলিতে প্রভাবশালী ধনী ব্যাক্তিরা এবং নীচু স্থানের বাড়িগুলিতে সাধারণ মানুষ বসবাস করত। ঐতিহাসিক গর্ডন চাইল্ড মনে করেন যে , হরপ্পার পৌর শাসকেরা সম্ভবতঃ গৃহনির্মাণ সংক্রান্ত আইন কানুন মেনে চলতেন। 

স্নানাগার :-
মহেঞ্জোদারোর দুর্গ অঞ্চলে ১৮০ দীর্ঘ ও ১০৮ ফুট প্রশস্ত একটি বিরাট বাঁধানো স্নানাগারের নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে। এর জলাশয়টি ৩৯ ফুট লম্বা , ২৩ ফুট চওড়া এবং ৮ ফুট গভীর। স্নানাগারটিতে ওঠানামার জন্য দুদিক থেকে সিঁড়ির ব্যবস্থা ছিল। গ্রীষ্ম ও শীতকালে প্রয়োজন অনুসারে এখানে ঠান্ডা ও গরম জলের ব্যবস্থা করা হত। জলাশয়ের একপাশে কয়েকটি ছোট ছোট ঘর ছিল। সম্ভবতঃ স্নানের পর পোশাক পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে এই ঘরগুলি ব্যবহার করা হত বলে ডক্টর রামশরণ শর্মা অভিমত দিয়েছেন। 

একটি প্রশস্ত প্রাঙ্গনের মধ্যভাগে স্নানাগারটি অবস্থিত। স্নানার্থীদের জন্য একটি উচ্চ মঞ্চ ছিল। অনুমান করা হয় যে , স্নানাগারটি কোনো ধর্মীয় উদ্দেশ্যে ছিল এবং এর ছোট ছোট কক্ষগুলি ছিল প্রধান পুরোহিতের আবাস। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।


শস্যাগার ও তার নিদর্শন :-
হরপ্পা সহ বেশ কয়েকটি শহরে শস্যাগারের নিদর্শন পাওয়া গেছে। হরপ্পার শস্যাগারটি ২০০/ ১৫০ বর্গফুট উঁচু একটি ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। শস্যাগারটির পাশে শ্রমিকদের বস্তির মতো ঘর ছিল। শস্যাগারটি হরপ্পা সভ্যতায় সম্পদের ওপর রাষ্ট্রীয় মালিকানার ইঙ্গিত বহন করে। ঐতিহাসিক এ এল ব্যাসাম এই শস্যাগারকে বর্তমানকালের রাষ্ট্রীয় ব্যাঙ্ক এর সাথে তুলনা করেছেন। এখানে আপৎকালীন সময়ের জন্য খাদ্যশস্য মজুত থাকত। স্যার মর্টিমার হুইলার মনে করেন যে , পঞ্চম শতকের আগে পৃথিবীর অন্য কোথাও এত বড় শস্যাগারের নিদর্শন মেলেনি।   

নগরদুর্গ :-
মহেঞ্জোদারোয় ৪০ ফুট উঁচু একটি ঢিপির ওপর একটি দুর্গের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছে। উঁচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরা দুর্গটি নগরের নিরাপত্তার উদ্দেশ্যে নির্মিত হয়েছিল বলে মনে করা হয়। ঐতিহাসিকগণ মনে করেন যে , দুর্গ অঞ্চলের বাড়িগুলিতে শাসকশ্রেণীর লোকজন বসবাস করত। কেউ কেউ মনে করেন যে , এই নগরদুর্গ আসলে ছিল এই সভ্যতার পুরোহিত শাসকের রাজপ্রাসাদ। 

পৌর শাসনব্যবস্থা :-
সিন্ধু অধিবাসীদের জল নিকাশী ব্যবস্থা , জঞ্জাল দূরীকরণ ইত্যাদি দেখে মনে হয় নগর দুটিতে সুগঠিত পৌর ব্যবস্থা ছিল এবং এর দৃষ্টান্তও ছিল অভাবনীয়। রোমানদের পূর্বে কোনো প্রাচীন সভ্যতায় সিন্ধুবাসীদের পৌর সংস্থার মত উন্নত কোন সংস্থা ছিল বলে প্রমান পাওয়া যায়নি। 

ঐতিহাসিকেরা মনে করেন , হরপ্পা সভ্যতায় সম্ভবতঃ একটি সুপরিকল্পিত কেন্দ্রীয় পৌর শাসনব্যবস্থার অস্তিত্ব ছিল। রাস্তাঘাট , ঘরবাড়ি , ওজন ও মাপ ব্যবস্থা প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ে হরপ্পা সভ্যতার বিভিন্ন নগরগুলিতে সাদৃশ্য লক্ষ্য করে বিভিন্ন পন্ডিত অনুমান করেন যে , একই সভ্যতায় একটি সুপরিকল্পিত কেন্দ্রীভূত পৌর ব্যবস্থার অস্তিত্ব ছিল। এই পৌর ব্যবস্থাই বিভিন্ন শহরে একই ধরণের পৌর ব্যবস্থা চালু করেছিল। 
ঐতিহাসিক এস কে সরস্বতী বলেছেন যে , এই সাদৃশ্য থেকে বোঝা যায় যে এখানে একটি শক্তিশালী ও কেন্দ্রীভূত কর্তৃপক্ষের অস্তিত্ব ছিল যারা বিস্তৃত এই অঞ্চলের মানুষের জীবন ও রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করত। 
সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুসারে ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট নির্মাণ , রাস্তার ধারে ভূগর্ভস্থ পয়ঃপ্রনালীগুলি চালু রাখা , নিয়মিত ডাস্টবিনগুলি পরিষ্কার রাখা প্রভৃতি কাজগুলি সম্পাদনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই সুদৃঢ় পৌর ব্যবস্থার অস্তিত্বের প্রয়োজন ছিল বলে ঐতিহাসিকগণ মনে করেন। 

ঐতিহাসিক ষ্টুয়ার্ট পিগট মনে করেন যে , সিন্ধু সভ্যতার মতো বহুদূর বিস্তৃত সভ্যতার পরিচালনার জন্য হয়তো হরপ্পা ও মহেঞ্জোদাড়োতে দুটি রাজধানী বা শাসনকেন্দ্র থাকলেও শাসক হয়তো একজনই ছিলেন। 

এছাড়াও , সিন্ধু সভ্যতার বিভিন্ন শহরগুলিতে নর্দমার সঙ্গে অনেক ম্যানহোল যুক্ত ছিল। এগুলির ওপরে ঢাকনা বসানো থাকত এবং ঢাকনা খুলে নিয়মিত এগুলি পরিষ্কার করা হত। ঐতিহাসিক ডক্টর আর এস শর্মার মতে , পৃথিবীর আর কোনো প্রাচীন সভ্যতা হরপ্পার মতো স্বাস্থ্য ও পরিছন্নতার বিষয়ে এতটা গুরুত্ব দেয়নি।  

  

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।




Share
Tweet
Pin
Share
No comments

মৌর্যত্তর যুগের সাংস্কৃতিক উৎকর্ষতা সম্পর্কে আলোচনা করো। Discuss the cultural excellence of the post-Mauryan era.




মৌর্যত্তর যুগের সাংস্কৃতিক উৎকর্ষতা :-


ইউরোপীয় ঐতিহাসিকরা বলে থাকেন মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের পর প্রায় দু'শতাব্দী ধরে উত্তর ভারতে গ্রিক , কুষাণ প্রভৃতি বৈদেশিক জাতির শাসন চলেছিল। কিন্তু এই অনুমান সত্য নয়। বরং বলা যায় , গ্রিক ও কুষাণদের অনেকেই ভারতীয় রীতিনীতি গ্রহণ করে ও ভারতীয় ধর্মে দীক্ষিত হয়। শক ও পল্লবদের সম্পর্কেও একই কথা বলা যায়। মৌর্যত্তর যুগের সাংস্কৃতিক উৎকর্ষতা ভারতীয় সংস্কৃতির ইতিহাসকে মহিমান্বিত করেছিল। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।



বিভিন্ন বৈদেশিক জাতির আগমনের ফলে এক বিরাট সাংস্কৃতিক সমন্বয় :-
মৌর্যত্তর যুগে বিভিন্ন বৈদেশিক জাতি ভারতে প্রবেশ করে ভারতীয় সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে এক অপূর্ব সমন্বয় ঘটায়। গ্রিক , শক , পল্লব , কুষাণ ছাড়াও এই যুগে রোম ও চীনের সঙ্গেও ভারতের বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক যোগাযোগ ঘটে। দক্ষিণ ভারতের অর্থনীতিতে রোমের ব্যবসা - বাণিজ্য প্রভাব বিস্তার করে। কিন্তু উত্তর ভারতে রোম ও গ্রিসের প্রভাব পড়েছিল শিল্পের ক্ষেত্রে। এই সংস্পর্শের ফলে উত্তর ভারতে কারুশিল্প ও বৌদ্ধধর্মের ক্ষেত্রে এক বিবর্তন ঘটে। বৌদ্ধ ধর্মের মধ্যে দিয়েই গ্রিকরা ভারতীয় সমাজে প্রবেশ করে। গ্রিকরা ভারতীয় ভাষাও গ্রহণ করেছিল। 
দীর্ঘকালব্যাপী এই সংস্পর্শের ফলে ইউরোপীয় গ্রন্থাদিতেও ভারতের বিস্তারিত বিবরণ উল্লিখিত আছে। যেমন - স্ট্রাবো রচিত '' ভূগোল '' , প্লিনি রচিত ''প্রাকৃতিক ইতিহাস '' , পেরিপ্লাস রচিত '' ইরিথ্রিয়া '' ইত্যাদি। এই যুগের ধর্ম , দর্শন , সাহিত্য , শিল্পকলা - সবকিছুতেই সমন্বয়ের নিদর্শন পাওয়া যায়। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।



মৌর্যত্তর যুগের সাহিত্যিক উৎকর্ষতা :-
মৌর্যত্তর যুগে সাহিত্যের ক্ষেত্রে এক অপূর্ব উন্নতি লক্ষ্য করা যায়। এই যুগেই নাগার্জুন , অশ্বঘোষ , পতঞ্জলি , চরক , মনু , যাজ্ঞবল্ক্য , কালিদাস - প্রমুখ মনীষীদের আবির্ভাব হয়। এই যুগেই সর্বশ্রেষ্ঠ পালি গ্রন্থ '' মিলিন্দ পঞ্চহো '' রচিত হয়। এই যুগে বহু বৌদ্ধ গ্রন্থকারদের আবির্ভাব হয়। তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন অশ্বঘোষ। তিনি ছিলেন কণিষ্কের সমসাময়িক। অশ্বঘোষ রচিত - বুদ্ধচরিত , বজ্রসূচি , সূত্রালংকার - ইত্যাদি বিশেষ উল্লেখযোগ্য। 

এছাড়াও নাগার্জুন রচনা করেন প্রথম মহাযান সূত্র '' শত সহস্রিকা প্রাজ্ঞ পারমিতা '' নামক গ্রন্থটি। '' মাধ্যমিক সূত্র '' গ্রন্থটিও তাঁর রচনা। অপরদিকে কালিদাস রচিত '' মালবিকাগ্নিমিত্রম '' , চরক রচিত আয়ুর্বেদশাস্ত্র '' চরক সংহিতা '' , মনু রচিত '' মনু সংহিতা '' , যাজ্ঞবল্ক্য রচিত '' যাজ্ঞবল্ক্য স্মৃতি '' - প্রভৃতি গ্রন্থাদি অনন্তকাল ধরে ভারতীয় জ্ঞানভান্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।



শিল্পকলা ও শিল্পক্ষেত্রে উৎকর্ষতা :-
মৌর্যযুগে ভারতীয় শিল্পকলা যে উৎকর্ষতা লাভ করেছিল - তা পরবর্তী যুগেও অব্যাহত ছিল এবং অনেক ক্ষেত্রে তা অধিকতর উৎকর্ষতা লাভ করেছিল। মৌর্য যুগের পতনের পর চার - পাঁচ শত বছরের মধ্যে ভারতের বিভিন্ন স্থানে অগণিত গুহা মন্দির ও গুহা আবাস তৈরী হয়। বৌদ্ধ ধর্মকে কেন্দ্র করেই মৌর্য পরবর্তী যুগে স্থাপত্য ও ভাস্কর্য শিল্পের বিকাশ ঘটে। এই যুগের ধর্মীয় স্থাপত্যের নিদর্শন হল বৌদ্ধ স্তুপ ও বৌদ্ধ গুহামন্দির। স্তুপের চারদিকে  রেলিং বা বেষ্টনী থাকত। এই বেষ্টনীগুলির মধ্যে সর্বাপেক্ষা প্রাচীন হল ভারুত স্তুপের বেষ্টনী। সম্ভবতঃ খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকে এটি রচিত হয়েছিল। 

এই যুগেই সাঁচি স্তূপটির সংস্কার করা হয় এবং তা সম্প্রসারিত হয়। পশ্চিম দাক্ষিণাত্যের গুহা মন্দির গুলি এই যুগের শিল্পকলার উৎকৃষ্ট নিদর্শন। এই সকল মন্দিরের প্রবেশদ্বার ও এর ভিতরের প্রকোষ্ঠগুলি আজও বিস্ময়ের উদ্রেক করে। মৌর্য পরবর্তী যুগের বৃহৎ গুহাগুলি যথা - ভাজা , চেদশা , কোন্দন , জুনার , নাসিক , অজন্তা , ইলোরা , উদয়গিরি - প্রভৃতি স্থানের গুহাগুলি অসাধারণ শিল্প নৈপুণ্য ও রুচির সাক্ষ্য বহন করে। তাছাড়া বিভিন্ন স্তুপের প্রবেশদ্বারগুলিও উন্নত শিল্পচর্চার এক উৎকৃষ্ট নিদর্শন। যেমন - সাঁচি স্তুপের কারুকার্যময় প্রবেশদ্বার। 

মথুরা শিল্পরীতি :-
মৌর্যত্তর যুগে স্থাপত্য শিল্পের অঙ্গ হিসেবেই ভাস্কর্য শিল্পের বিকাশ ঘটে। প্রথমদিকে পাথরের পরিবর্তে কাঠ ও হাতির দাঁতের খোদাই করা নকশার কাজে ভাস্কররা অধিক দক্ষ ছিল। কিন্তু খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতক থেকে পাথরের ওপর খোদাই করার রীতি প্রচলিত হয়। এই প্রসঙ্গে অমরাবতী ও দাক্ষিণাত্যের গুহাগুলির দৃষ্টান্ত দেওয়া যায়। মথুরায় জৈনদের পৃষ্ঠপোষকতায় বেলে পাথরের ওপর খোদাই করার কাজ জনপ্রিয়তা অর্জন করে। মথুরা শিল্পরীতি কুষাণদের পৃষ্ঠপোষকতায় সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে এবং মথুরার সন্নিকটে কুষাণ রাজাদের কিছু খোদিত মূর্তি আবিষ্কৃত হয়েছে। গান্ধার শিল্পের তুলনায় মথুরার শিল্পরীতিতে মৌলিকতার পরিচয় পাওয়া যায়। কুষাণ নৃপতিদের মূর্তিগুলি মথুরা শিল্পরীতি অনুসারে নির্মাণ করা হয়েছিল। 

গান্ধার শিল্পরীতি :-
মৌর্যত্তর যুগে গ্রিক ও রোমান শিল্পরীতি ভারতে প্রবেশ করে। উত্তর পশ্চিম সীমান্তে গ্রিকরা প্রায় তিনশত বছর রাজত্ব করে। এর ফলে এই অঞ্চলের শিল্পীরা বিদেশি শিল্পরীতি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এক নতুন শিল্পরীতি প্রবর্তন করে। এটি গান্ধার শিল্প নামে পরিচিত। মানুষের যথার্থ প্রতিকৃতি নির্মাণ করা ছিল এই শিল্পরীতির প্রধান বৈশিষ্ট। বুদ্ধ প্রতিমার দেহ গঠন বাহ্যত গ্রিক রীতির অনুকরণে হলেও এতে ভারতীয় ভাবাদর্শসম্মত মহাপুরুষের মহাপুরুষের সর্ববিধ লক্ষণও বর্তমান। শকদের আমলে গান্ধার শিল্পের সূচনা হলেও তা কুষাণদের আমলে বিকশিত হয়ে ওঠে। গান্ধার শিল্পরীতি অনুসরণ করেই বুদ্ধের অসংখ্য প্রতিকৃতি নির্মিত হয়েছিল। গান্ধার শিল্পে মহাযান বৌদ্ধ ধর্মমতের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। গান্ধার শিল্পরীতির দ্বারা মথুরা ও অমরাবতী শিল্পরীতি প্রভাবিত হয়েছিল ঠিকই কিন্তু এই শিল্পরীতি ভারতের অন্তর্দেশে প্রবেশ করতে পারেনি। কিন্তু চীন , জাপান , কোরিয়া , মঙ্গোলীয়া - ইত্যাদি দেশেও গান্ধার শিল্পরীতি যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।



ধর্মীয় উদারতা : বহু ধর্মের অবস্থান ও সমন্বয় :-
মৌর্য পরবর্তীকালে মিনান্দার , কণিষ্ক প্রমুখ বিদেশাগত নৃপতিরা বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। এই সময় বৌদ্ধ ধর্মের রূপান্তর ঘটে। এই যুগে বুদ্ধ ''দেবতা'' , '' দেবতিদেব '' রূপে পূজিত হন। ধ্যানমগ্ন বুদ্ধ ও বোধিসত্ত্বের ব্যাপক প্রচলন এই যুগেই শুরু হয়। মৌর্য যুগে '' হীনযান '' মত জনপ্রিয় ছিল ; কিন্তু এই যুগে '' মহাযান '' ধর্মমত জনপ্রিয় ও প্রবল হয়ে উঠেছিল। নাগার্জুনকোন্ডা -র অনুশাসনলিপি থেকে জানা যায় যে , এই যুগের বৌদ্ধ ধর্মমত প্রচারকেরা কাশ্মীর , চীন , তোসালি , গান্ধার , বঙ্গ , সিংহল সহ পূর্ব ও পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বৌদ্ধ ধর্মমতকে জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন। 

মৌর্যত্তর যুগে জৈন ধর্মও যথেষ্ট বিস্তার লাভ করেছিল। মহাবীরের ধর্মীয় শিক্ষার ব্যাপারেও মতভেদের উদ্ভব হয়। জৈনরা শ্বেতাম্বর ও দিগম্বর - এই দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এই যুগে জৈন ধর্মাবলম্বীরা মগধ থেকে ধীরে ধীরে মথুরা , উজ্জয়িনী ও সৌরাষ্ট্রে চলে আসে। এদের অপর এক দল কলিঙ্গে চলে যায় ও কলিঙ্গরাজ খারবেলের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করে। দক্ষিণ ভারতে জৈনদের প্রধান কেন্দ্র ছিল মহীশুর ও তামিল অঞ্চল। 

মৌর্যত্তর যুগে ব্রাক্ষ্মণ্য ধর্ম অপরিবর্তিত থাকে। এই সময় থেকে ব্রাক্ষ্মণ্য ধর্মে যে সকল  বৈশিষ্টের সূচনা হয় পরবর্তীকালে তাই হিন্দুধর্ম নামে পরিচিতি লাভ করে। যাগ - যজ্ঞ ও অনুষ্ঠান সর্বস্ব ধর্মের গুরুত্ব ক্রমেই হ্রাস পায়। ঈশ্বর ও ভক্তের মধ্যে ব্যাক্তিগত সম্পর্ক স্থাপনের আদর্শ ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। শৈব ও বৈষ্ণবদের মধ্যে একেশ্বরবাদের আদর্শ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। পরবর্তীকালে হিন্দুধর্মে ভক্তিবাদের প্রসার এক গুরুত্বপূর্ণ বিবর্তন। 

মৌর্যত্তর যুগে ধর্মের ক্ষেত্রে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট হল ধর্ম সম্বন্ধে উদারতা ও বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে সম্প্রীতি। এই যুগে ধর্ম বিরোধের কোনো প্রমান পাওয়া যায়নি। 

শিক্ষা ক্ষেত্রে উৎকর্ষতা :-
শিক্ষা ক্ষেত্রেও ভারত এইযুগে অনগ্রসর ছিল না। রাওয়ালপিন্ডির অনতিদূরে অবস্থিত তক্ষশীলা নগরটি শিক্ষা ও সংস্কৃতির একটি প্রধান কেন্দ্র ছিল। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল ছাড়াও চীন , গ্রিস , ইরান , মিশর - প্রভৃতি দেশ থেকে বহু শিক্ষার্থী শিক্ষালাভের জন্য তক্ষশীলায় আসতেন। তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ে বেদ , ব্যাকরণ , দর্শন , চিকিৎসাশাস্ত্র , সাহিত্য ও শিল্প - ইত্যাদি বিবিধ বিষয়ে শিক্ষাদান করা হত। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম ছাত্র ও শিক্ষক হিসাবে পাণিনি , কাত্যায়ন , পতঞ্জলি , জীবক , চাণক্য - প্রমুখের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এছাড়া , কণিষ্কের রাজধানী পুরুষপুর বা পেশোয়ার বৌদ্ধ ধর্মশাস্ত্র শিক্ষার একটি অন্যতম কেন্দ্র ছিল। 

বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের সংস্পর্শে আসার ফলে এইযুগে জ্যোতিষ শাস্ত্র ও চিকিৎসাশাস্ত্র যথেষ্ট অগ্রগতি লাভ করে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে চরক ও সুশ্রুতর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই যুগে ভেষজ বিদ্যাও অভাবনীয় উন্নতি লাভ করে। এই যুগে ধর্মশাস্ত্র রচনার ক্ষেত্রেও বিশেষ তৎপরতা দেখা যায়। সামগ্রিক ভাবে মৌর্য পরবর্তী যুগ ভারতীয় শিক্ষা - সংস্কৃতির ক্ষেত্রে নানাবিধ বৈপ্লবিক রূপান্তর নিয়ে এসেছিলো যা পরবর্তী কালে ভারতীয় সমাজ গঠনের উপাদান রূপে কাজ করে।      

   

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।


                   
   

Share
Tweet
Pin
Share
No comments

মৌর্য যুগের শিল্পকলার পরিচয় দাও। Discuss on the art and craft of Mauryan Era .




মৌর্য যুগের শিল্পকলার পরিচয়


মৌর্য যুগে ভারতে শুধুমাত্র রাজনৈতিক ও শাসনতান্ত্রিক ঐক্যই প্রতিষ্ঠিত হয় নি ; এর সঙ্গে সঙ্গে এক উন্নত মানের শিল্পকলার পরিচয় পাওয়া যায়। মৌর্য শাসকদের প্রশাসনিক দক্ষতা ব্যবসা - বাণিজ্য ও শিল্পের প্রসারে সহায়ক হয়। মৌর্য যুগের শিল্প সংস্কৃতির উন্নতি সমকালীন ভারতকে এক মর্যাদাপূর্ণ স্থান প্রদান করে। 
ঐতিহাসিক কে এম পানিক্করের ভাষায় - ‘’ The century and a half of Maurya rule witnessed a growth of civilisation , arts and culture which entitled India to rank among the greatest countries of the time .’’ 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।


ধর্মশাস্ত্র , অর্থশাস্ত্র , বাৎসায়নের কামসূত্র , মেগাস্থিনিস ও ফা হিয়েনের রচনা থেকে মৌর্য যুগের শিল্পকলা সম্পর্কে জানতে পারা যায়। ভারতের বিভিন্ন স্থানে নির্মিত অশোকের স্তম্ভগুলি , ভারুত ও সাঁচি স্তুপ , গয়ার সন্নিকটে আজিবক গুহাগুলি , চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য ও অশোকের প্রাসাদ - মৌর্য যুগের ভাস্কর্য শিল্পের উৎকৃষ্ট নিদর্শন। অশোকের নির্মিত স্তুপ ও স্তম্ভগুলি সুক্ষ্ম শিল্পে নৈপুণ্য ও উন্নত রুচির সাক্ষ্য বহন করে। এক - একটি অখন্ড পাথর দিয়ে স্তম্ভগুলি নির্মিত। নন্দনগড় , এলাহাবাদ , রুমিনদেই , সারনাথ - ইত্যাদি স্থানে বহু স্তম্ভ আবিষ্কৃত হয়েছে। এদের কারুকার্য ও মসৃণতা আজও ইউরোপীয় শিল্পীদের নিকট বিস্ময়কর রয়েছে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।


সারনাথের স্তম্ভশীর্ষে নির্মিত পশুমূর্তি ভাস্কর্য শিল্পের অপূর্ব নিদর্শন। স্তম্ভশীর্ষের পশুমূর্তিগুলির সহজ ও স্বাভাবিকতা দেখে স্মিথ মন্তব্য করেছেন যে , এরূপ ভাস্কর্যের নিদর্শন অন্য কোনো দেশে একান্তই বিরল ; এতে আদর্শ ও বাস্তবের এক অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছে। সারনাথ স্তম্ভের শিল্পনৈপুণ্য লক্ষ্য করে  স্যার জন মার্শাল মন্তব্য করেছেন , এর ক্ষোদাইকার্য ও রচনাভঙ্গি উৎকৃষ্ট এবং প্রাচীন জগতে এর চেয়ে উৎকৃষ্ট ভাস্কর্য শিল্প কোথাও সৃষ্ট হয়নি। 

অশোকের আমলে বহু স্তুপ ও গুহামন্দির নির্মিত হয়েছিল। স্তূপগুলির মসৃণতা আজও বিস্ময়কর বস্তুরূপে পরিগণিত। এগুলি পাথর বা ইষ্টক নির্মিত। কোথাও কোথাও স্তূপগুলি পাথরের বেষ্টনি বা রেলিং দ্বারা পরিবেষ্টিত। প্রত্যেকটিতেই একটি বা দুটি করে কারুকার্য খচিত প্রবেশদ্বার রয়েছে। ভারত ও আফগানিস্তানে অশোক মোট ৮৪০০০ স্তুপ নির্মিত করেছিলেন। Havell এর মতে , ভারুত ও সাঁচীর স্তূপগুলির ভাস্কর্য শিল্পে অনার্য ও আর্য প্রভাবের এক অপূর্ব সংমিশ্রণ দেখা যায়। 

মৌর্যযুগে নির্মিত নগর ও রাজপ্রাসাদগুলি উন্নত স্থাপত্য শিল্পের সাক্ষ্য বহন করে। মেগাস্থিনিসের বিবরণী থেকে জানা যায় যে , নদী ও সমুদ্রের কাছে শহর ও গৃহগুলি কাষ্ঠনির্মিত ছিল। অভ্যন্তর অঞ্চলের গৃহগুলি ইষ্টকনির্মিত ছিল। চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের কাষ্ঠনির্মিত প্রাসাদ দেখে মেগাস্থিনিস আশ্চর্য হয়েছিলেন। এখানে অনেকগুলি বৃহৎ তোরণ ও স্তম্ভ ছিল এবং মেঝেগুলি কাষ্ঠনির্মিত ছিল। অনেকে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের প্রাসাদে পারসিক প্রভাব লক্ষ্য করেছেন। অশোকের প্রস্তরনির্মিত প্রাসাদটি ফা - হিয়েনকে বিস্ময়াভূত করেছিল। কিন্তু এই প্রাসাদগুলি বর্তমানে সম্পূর্ণ ধ্বংসপ্রাপ্ত। এগুলির সামান্য কিছু অংশ আবিষ্কৃত হয়েছে এবং এরমধ্যে একশত স্তম্ভযুক্ত একটি বিরাট কক্ষের নিদর্শন পাওয়া গেছে। 

চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের পাটলিপুত্রের প্রাসাদ ও অশোকের প্রাসাদ :-
মেগাস্থিনিসের বিবরণী থেকে জানা যায় - মৌর্য যুগে পাটলিপুত্রে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের রাজপ্রাসাদ ছিল কাষ্ঠের সূক্ষ্ম কারুকার্য দ্বারা সমৃদ্ধ। এই রাজপ্রাসাদটির সাথে ইরানের বিখ্যাত রাজপ্রাসাদটির তুলনা করা যায়। এতে অনেকগুলি তোরণ ছিল এবং মেঝে ছিল কাষ্ঠের নির্মিত। এছাড়া স্তম্ভগুলিতে স্বর্ণ ও রৌপ্যের কারুকার্য খচিত নিদর্শন ছিল সত্যই চিত্তাকর্ষক।   
এছাড়া সম্রাট অশোক একটি প্রাসাদ নির্মাণ করেন যা ছিল বিশালাকার এবং সৌন্দর্য মন্ডিত প্রস্তর দ্বারা নির্মিত। পাথরগুলির দর্পনের ন্যায় মসৃণতা ফা - হিয়েনকে চমকৃত করেছিল। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।


অশোক স্তম্ভ :-
সম্রাট অশোকের আমলের শিল্পকলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিদর্শন হল অশোকস্তম্ভ। ভারতীয় সম্রাটদের মধ্যে অশোকই সর্বপ্রথম পাথর কেটে স্তম্ভ নির্মাণের আয়োজন করেন। এক একটি অখন্ড পাথর দিয়ে স্তম্ভগুলি নির্মিত ছিল। সারনাথে প্রাপ্ত শিলাস্তম্ভটি ছিল মৌর্য স্থাপত্যের গৌরবের এক উৎকৃষ্ট নিদর্শন। এখানে স্তম্ভলিপির শীর্ষভাগে থাকা সিংহমূর্তিগুলি শিল্পীর উৎকৃষ্ট দক্ষতার সাক্ষ্য বহন করে। স্তম্ভশীর্ষে হাতি , ঘোড়া , বৃষ ও সিংহ - এই চারটি প্রাণীর মূর্তি রয়েছে। এর উপরে চারটি সিংহমূর্তি অবস্থিত। এগুলি '' ধর্মচক্র '' নামে পরিচিত। এই নিদর্শনটি উৎকৃষ্টতা , মানবতা , গাম্ভীর্য , গৌরব - ইত্যাদির প্রতীক। স্বাধীনোত্তরকালে ভারত সরকার এটিকেই জাতীয় প্রতীক হিসেবে চয়ন করেছেন।       


মৌর্য শিল্পে পারসিক ও গ্রীক প্রভাব :-
ইউরোপীয় ঐতিহাসিক ও প্রত্নতত্ববিদগণ যথা , জন মার্শাল , মসিয়েঁ স্যানহার্ত প্রমুখের মতে , অশোকের পাটলিপুত্র নগরের প্রাসাদ , সারনাথের প্রাসাদ , সারনাথ স্তম্ভশীর্ষের সিংহমূর্তি প্রভৃতিতে পারসিক ও গ্রীক প্রভাব অনুসৃত হয়েছিল। জন মার্শালের মতে , পারসিক ও গ্রীক শিল্পরীতি ভারতীয় শিল্পীরা সম্পূর্ণভাবে আত্মস্থ করেছিল। কিন্তু ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ববিদ ও স্থাপত্যবিদগণ যথা , কে এম পানিক্কর , ডক্টর তারাপদ এবং স্থাপত্য বিশারদ শ্রী শরৎচন্দ্র - প্রমুখের মতে , অশোকের স্থাপত্য পরিকল্পনার মধ্যে পারসিক বা গ্রীক প্রভাব ছিল না। এর মধ্যে আর্য ও অনার্য প্রভাবের এক অপূর্ব সংমিশ্রণ দেখা যায়। Havell ও এই মত সমর্থন করেন। ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ববিদদের মতে , বৈদেশিক শিল্পরীতি ভারতীয় শিল্পরীতিকে প্রভাবিত করার পরিবর্তে ভারতীয় শিল্পরীতি মধ্য এশিয়া , চীন - প্রভৃতি স্থানে বিশেষ রেখাপাত করেছিল। 

মৌর্য শিল্পে বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাব :-
সম্রাটবা অশোকের সময় থেকে তুর্কিদের আগমনকাল পর্যন্ত দীর্ঘ সময় ধরে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে যে শিল্পকলা গড়ে উঠেছিল তা বৌদ্ধ ও জৈন ধর্ম দ্বারা প্রভাবিত ছিল। মৌর্য শাসনকালে ভারতের বিভিন্ন স্থানের বহু বৌদ্ধ সংঘারাম , স্তুপ , স্তুপের আবেষ্টনী ( রেলিং ) , তোরণ , চৈত্য - ইত্যাদি নির্মিত হয়েছিল। সম্রাট অশোক কর্তৃক নির্মিত সাঁচীর বৃহৎ স্তূপটি , এর আবেষ্টনী ও তোরণ বৌদ্ধ স্থাপত্য শিল্পের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। ভারুত স্তুপের আবেষ্টনী এবং সাঁচি স্তুপের আবেষ্টনী ও তোরণগুলিতে বুদ্ধের জীবন ও বৌদ্ধ ধর্ম সংক্রান্ত বহু উপাখ্যান নিপুণভাবে ক্ষোদিত রয়েছে। বস্তুতঃ মৌর্য শিল্প বৌদ্ধ ধর্ম দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত ছিল - একথা বলা যেতে পারে।        

    

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।

  

Share
Tweet
Pin
Share
No comments

নব্য প্রস্তর যুগের বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো। Discuss the different features of Neolithic Age .




নব্য প্রস্তর যুগ ও তার বিবিধ বৈশিষ্ট :-


প্রেক্ষাপট ও সময়কাল :-
সুদূর অতীত থেকে শুরু করে ইতিহাসের লিখিত উপাদানের প্রাপ্তি কালের পূর্ব পর্যন্ত সময়কালকে প্রাগৈতিহাসিক যুগ বলা হয়। মানুষ প্রথম থেকে বিভিন্ন ধরণের পাথরের হাতিয়ার ব্যবহার করে খাদ্যের সংস্থান করত। তাই এই যুগকে প্রস্তর যুগ বলা হয়। বিভিন্ন প্রত্নতত্ত্ববিদগণ পাথরে নির্মিত হাতিয়ারের ক্রমোন্নতি লক্ষ্য করে প্রস্তর যুগ কে তিনটি ভাগে ভাগ করেছেন যথা - (১) প্রাচীন প্রস্তর যুগ (২) মধ্য প্রস্তর যুগ ও (৩) নব্য প্রস্তর যুগ। নব্য প্রস্তর যুগের শেষে মানুষ ধাতুর ব্যবহার শুরু করে। তারা সর্বপ্রথম তামা এবং এর কিছুকাল পর ব্রোঞ্জ ধাতুর ব্যবহার শেখে। তাই নব্য প্রস্তর যুগের পরবর্তী সময় কাল হলো তাম্র প্রস্তর যুগ। 

মধ্য প্রস্তর যুগের পরবর্তী নব্য প্রস্তর যুগের কালসীমা  হলো আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১০০০০ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৫০০০ অব্দ। তবে ভারতে এ যুগের সূচনা হয় দেরিতে ৬০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। বালুচিস্তানের মেহেরগড় সভ্যতায় ৬০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে বা তার কিছু আগে নব্য প্রস্তর যুগের সূচনা হয় বলে ঐতিহাসিক ডি পি আগরওয়াল অভিমত দিয়েছেন। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।



হাতিয়ার ও তার বৈপ্লবিক অগ্রগতি :-
এই যুগের হাতিয়ারগুলিতে ধারাবাহিক বিবর্তনের ছাপ সুস্পষ্ট। হাতিয়ারগুলিতে ধারাবাহিক বিবর্তনের ছাপ স্পষ্ট। হাতিয়ারগুলি এসময় যথেষ্ট তীক্ষ্ণ , মসৃণ ও উন্নত হয়ে ওঠে। এ যুগে মাটি খুঁড়ে বীজ বপন বা আগাছা পরিষ্কারের জন্য নতুন ধরনের যন্ত্রপাতির উদ্ভাবন ঘটে। ফসল কাটার জন্য এ সময় তৈরি হয় কাস্তে। এছাড়া কুলো , হামানদিস্তা , শিলনোড়া , জাঁতা , হাতুড়ি , বাটালি , নেহাই - প্রভৃতি যন্ত্রপাতির উদ্ভব এ যুগেই শুরু হয়। এযুগে প্রাচীন প্রস্তর যুগের হাতকুঠারের অভাবনীয় উন্নতি ঘটে। এ সময় কুঠারের সামনের দিকটি অনেক বেশি তীক্ষ্ণ এবং কাঠের হাতলযুক্ত হয়। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কৃষিকাজ এবং পশু শিকারের জন্য উন্নত হাতিয়ারের প্রয়োজনীয়তাও বৃদ্ধি পায়। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।



কৃষির সূচনা :- 
নব্য প্রস্তর যুগের মানুষ কৃষিকাজের কৌশল আবিষ্কার করে এবং স্থায়ীভাবে এক জায়গায় বসবাস শুরু করে। ফলে খাদ্য সংগ্রহকারী থেকে এই যুগে মানুষ খাদ্য উৎপাদনকারী তে পরিণত হয়। পূর্বে খাদ্য ও আশ্রয়ের নিশ্চয়তা না থাকায় প্রকৃতিতে মানুষ ছিল বড়ই অসহায়। কিন্তু নব্য প্রস্তর যুগে কৃষির আবিষ্কারের ফলে মানুষের সেই অনিশ্চয়তা দূর হয়। সুতরাং নব্য প্রস্তর যুগের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো কৃষির আবিষ্কার। এর ফলে মানুষের যাযাবর বৃত্তির অবসান ঘটে। ফসল মজুদ রাখার জন্য প্রয়োজন ছিল পাত্রের। তাই বলা যায় কৃষিকাজ পাত্র নির্মাণকে পরোক্ষভাবে উৎসাহিত করেছিল। মৃৎ শিল্পের সূচনা হয়েছিল এই ভাবেই। ভারতীয় উপমহাদেশে বালুচিস্তানের মেহেরগড়ের মানুষ প্রথম কৃষিকাজ শুরু করেছিল। কৃষিজ ফসলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল যব , গম , ভুট্টা , খেজুর ইত্যাদি। তুলোর  চাষে মেহেরগড় - এর কৃষকেরা অভ্যস্ত ছিল। 

পশুপালন :- 
নব্য প্রস্তর যুগের মানুষেরা কৃষির প্রয়োজনে পশু পালন করতে শুরু করে। পশুকে কৃষিজমিতে কাজে লাগিয়ে কৃষি উৎপাদন যথেষ্ট বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়। পরিবহণের কাজেও পোষ মানানো পশুকে কাজে লাগানো শুরু হয়। এই সময় দক্ষিণ এশিয়ায় হাতি ও মহিষকে এবং জর্ডনে  কুকুর ও ছাগলকে প্রতিপালন করা শুরু হয়। মনে করা হয় মানুষ সর্বপ্রথম কুকুরকে পোষ মানিয়েছিল। তারপর গরু , মোষ , ভেড়া , ছাগল ইত্যাদি পুষতে থাকে। 

স্থায়ী বসতি নির্মাণ :- 
নব্য প্রস্তর যুগে কৃষির আবিষ্কারের ফলে মানুষ নির্দিষ্ট কোন অঞ্চলে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। ফলে মানুষের যাযাবর জীবনের অবসান ঘটে। এসময় বন্য পশুর দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার ভয় মানুষের অনেকটা কমে যায়। তারা এ যুগের শেষ দিকে কুটির বা গৃহনির্মাণ করতে শুরু করে। কুটির তৈরির জন্য তারা গাছের ডালপালা , লতাপাতা , ঘাস প্রভৃতি ব্যবহার করত। এই বসতি অঞ্চল ক্রমে গ্রামে পরিণত হয়। কোথাও কোথাও এই গ্রামগুলিকে কেন্দ্র করে নগর গড়ে ওঠার সম্ভাবনা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।  

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।



সমাজ জীবন ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার সূচনা :- 
নব্য প্রস্তর যুগে সংঘবদ্ধ জীবন আবশ্যিক হয়ে পড়েছিল। কারণ কৃষিকাজ ও পশুপালন সংঘবদ্ধভাবেই সম্ভব। পৃথিবীর প্রাচীনতম সামাজিক সংগঠন হলো পরিবার। কৃষিভিত্তিক সামাজিক - অর্থনৈতিক জীবন টিকিয়ে রাখার জন্য সমাজে চালু হয় শ্রমবিভাজন। নারী ও পুরুষেরা  নিজেদের মধ্যে শ্রম ভাগ করে নিতে শুরু করে। পুরুষেরা হাতিয়ার ও যন্ত্রপাতি বানাত , পশু পালন করত , ঘরবাড়ি বানাত - ইত্যাদি। শিকারি জীবনে তখনও সম্পূর্ণ ছেদ পড়েনি। শিকারের কাজ পুরুষেরাই করত। নারীরা গৃহস্থালির কাজকর্মের পাশাপাশি কৃষি কাজে বড় ভূমিকা নিত। তাছাড়া মৃৎপাত্র তৈরীর ও বস্ত্রবয়ন প্রভৃতি কাজ নারীরা করত। 

নগর সভ্যতা গড়ে ওঠার পুর্বে পৃথিবীতে রাষ্ট্রীয় কাঠামো প্রতিষ্ঠার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। পূর্বে মানুষের যাযাবর বৃত্তির জন্য কোনো গোষ্ঠীর নেতার পদটি সর্বদা স্বল্পস্থায়ী হতো। কিন্তু নব্য প্রস্তর যুগের মানুষ যাযাবর জীবন ছেড়ে নির্দিষ্ট অঞ্চলে স্থায়ীভাবে বসতি গড়ে তুললে কোনো গোষ্ঠীর নেতা বা দলপতির পদটি স্থায়িত্ব লাভ করে। উর্বর কৃষি জমি দখল ও অন্যান্য কারণে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ হত। সংঘর্ষে জয়লাভের প্রয়োজনে দলনেতারা তাদের গোষ্ঠীর ওপর বিভিন্ন নিয়ম-কানুন চাপিয়ে দিতেন। এভাবে একটি প্রশাসনিক পরিকাঠামো গড়ে উঠেছিল। নব্য প্রস্তর যুগেই রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে ওঠার একটি পটভূমি তৈরি হয়েছিল বলে অনেক ঐতিহাসিক মনে করে থাকেন। 

চাকার ব্যবহার ও অন্যান্য অগ্রগতি :-
কৃষির আবিষ্কারের ফলে নব্য প্রস্তর যুগে মানুষ পর্যাপ্ত খাদ্য সংস্থান করতে সক্ষম হলে তাদের খাদ্যের জন্য আর বিশেষ চিন্তা করতে হতো না। এর ফলে অবসরকালে মানুষ নিজেদের চিন্তা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন দিকের অগ্রগতির সুযোগ পায়। এই সময় মানুষ আগুনের  নানাবিধ ব্যবহার , চাকার আবিষ্কার , মৃৎশিল্প , যানবাহন তৈরি , নৌকায় পাল লাগানো , গৃহনির্মাণ , পাথর সাজিয়ে ডেলমেন নামক সমাধি নির্মাণ - প্রভৃতি করতে শেখে। এই যুগের শেষের দিকে মানুষ ধাতুর ব্যবহার করতে শেখে।   এককথায় অন্যান্য প্রস্তর যুগের তুলনায় নব্য প্রস্তর যুগের অগ্রগতি ও প্রাপ্তি ছিল অনেক বেশি। নব্য প্রস্তর যুগের এই অভাবনীয় অগ্রগতি লক্ষ্য করে গবেষক গর্ডন চাইল্ড একে '' নব্য প্রস্তর যুগের বিপ্লব '' বলে অভিহিত করেছেন। এককথায় নব্য প্রস্তর যুগের স্থায়িত্বকাল পুরাতন প্রস্তর যুগের তুলনায় অনেক কম হলেও নব্য প্রস্তর যুগের অগ্রগতি ও ব্যাপ্তি ছিল অনেক বেশি। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।



নব্য প্রস্তর যুগের বিপ্লব :- 
এ যুগে কৃষি-সহ বিভিন্ন বিষয়ে যেসব অগ্রগতি লক্ষ্য করা গিয়েছিল সেগুলির গভীর বিশ্লেষণ করে বিখ্যাত ঐতিহাসিক গর্ডন চাইল্ড সেগুলিকে সেসময়ের মানুষের অগ্রগতির স্বাভাবিক ধারা বলে মানতে পারেননি। পূর্ববর্তী যুগ গুলির তুলনায় অনেক কম সময়ে নব্য প্রস্তর যুগে যে অভাবনীয় অগ্রগতি ঘটেছিল তাকে গর্ডন চাইল্ড '' নব্য প্রস্তর যুগের বিপ্লব '' বলে অভিহিত করেছেন। 

অর্থনৈতিক জীবন :- 
নব্য প্রস্তর যুগের মানুষের অর্থনৈতিক ভিত্তি ছিল কৃষি ও পশুপালন। হাতিয়ারের উন্নতির ফলে এই সময় কৃষি উৎপাদন যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়। উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সমাজে বিনিময় প্রথার প্রচলন ঘটে। সমাজে ক্রমে শ্রম বিভাজনের সূত্রপাত ঘটে। পুরুষ ও নারীর মধ্যেই এই শ্রম বিভাজন দেখা যায়। পুরুষদের কাজ ছিল হাতিয়ার তৈরি , পশুপালন ও ঘরবাড়ি তৈরি। অন্যদিকে নারীদের কাজ ছিল গৃহকার্য , সন্তান পালন , কৃষিকাজ , বস্ত্র উৎপাদন , মৃৎপাত্র তৈরি , ঝুড়ি তৈরি - প্রভৃতি। 
এক কথায় বলা যায় , নব্য প্রস্তর যুগের শ্রমবিভাজন এর সূচনা ভবিষ্যৎ ভারতীয় সমাজের অর্থনীতিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল এবং নব্য প্রস্তর যুগের কৃষি ও পশুপালনের ভিত্তি বহুদিন যাবৎ অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পেরেছিল এবং আজও ভারতের অর্থনীতির প্রধান স্তম্ভ হল কৃষি। 

শিল্পকলা :- 
নব্য প্রস্তর যুগের মানুষ প্রতীকী চিহ্নযুক্ত ছবি আঁকতো , যা আগেকার যুগের চিত্রাঙ্কন থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এশিয়ার বিভিন্ন প্রত্নক্ষেত্র এবং মিশরে আবিষ্কৃত মৃৎপাত্রের গায়ের  অলংকরণ থেকে ওই সময়কার অলংকরণ শিল্পের পরিচয় পাওয়া যায়। এই সময় মানুষ মাতৃকাদেবীর মূর্তি গড়েছিল। ঈজিয়ান সভ্যতার অন্তর্গত ক্রীট - এ ওই  ধরনের মূর্তির ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছে। ওই সময়কার মানুষ প্রাকৃতিক শক্তিকে জয় করতে পারেনি , যে কারণে ওই শক্তিকে তারা ভয় পেত। তাই তারা প্রাকৃতিক শক্তির পূজারি হিসেবে পরিচিত হয়েছিল। 

অস্তিত্বের নিদর্শন :- 
ভারতের মেহেরগড় সভ্যতা নব্য প্রস্তর সংস্কৃতির অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। এছাড়া ইরাকের জারমো ও হাসুনা , জর্ডনের জেরিকো , দক্ষিণ মেসোপটেমিয়া , আনাতোলিয়া মালভূমি , সুইজারল্যান্ড , বর্তমান পাকিস্তানের অন্তর্গত বালুচিস্তান , ভারতের বিহার , উড়িষ্যা ও দাক্ষিণাত্যের বিভিন্ন স্থানে নব্য প্রস্তর যুগের সংস্কৃতির নিদর্শন পাওয়া গেছে। 

নব্য প্রস্তর যুগের গুরুত্ব :- 
প্রাচীন যুগের ইতিহাসে এবং ইতিহাসের বিবর্তন সমাজ জীবনের বিবর্তনে নব্য প্রস্তর যুগের কিছু বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। যেমন 
A .এ যুগের হাতিয়ার গুলি অভাবনীয় উন্নতি সম্ভব হয়। তার কার্যকারিতা বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। 
B. নব্য প্রস্তর যুগে মানুষ চাষবাস করতে শেখে। এর ফলে মানুষের জীবনধারার যথেষ্ট উন্নতি সম্ভব হয়। 
C. এ যুগের মানুষ বিভিন্ন পশুকে পোষ মানাতে আরো দক্ষ হয় এবং তাদের সঠিকভাবে কাজে লাগাতে শেখে। 
D. নব্য প্রস্তর যুগে মানুষ স্থল ও জলপথে যাতায়াতের ক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রগতি ঘটায়। 
E. কৃষি ও পশুপালনের মাধ্যমে নব্য প্রস্তর যুগে স্বচ্ছলতা আছে। তার ফলে নতুন নতুন আবিষ্কার সম্ভব হয়। যেমন - গৃহনির্মাণ , চাকা তৈরী , নৌকা তৈরি , লাঙল তৈরি প্রভৃতি।
F. এ যুগে মানুষ গোষ্ঠীবদ্ধ হয়ে উপজাতীয় ধরণের সমাজ গড়ে তোলে। 
G. সামাজিক সংগঠন হিসাবে পরিবার ব্যবস্থার উদ্ভব ঘটে। 
H. এই সমাজে পেশাভিত্তিক বিভিন্ন শ্রেণীর উদ্ভব ঘটে। 
I.নব্য প্রস্তর যুগে মানুষের মধ্যে সামাজিক সম্পর্ক ও  বিনিময় প্রথার ব্যাপকতার ফলে ভাব - বিনিময়ের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পায়। এর ফলে ক্রমে ভাষার উন্নতি ঘটে। 
J. এ যুগে বিভিন্ন প্রতীকের সাহায্যে চিত্রাঙ্কন করা হতো। এগুলি লিখন পদ্ধতির আবিষ্কারের প্রাথমিক প্রয়াস বলে মনে করা হয়। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।




Share
Tweet
Pin
Share
No comments

তাম্র প্রস্তর সংস্কৃতির বর্ণনাসহ এই যুগের বৈশিষ্ট্য গুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো। 

Discuss the different features of Chalcolithic Age .  




তাম্র - প্রস্তর সংস্কৃতির পরিচয় ও বৈশিষ্ট :-   

সভ্যতার উষালগ্নে ধারাবাহিক মানব সভ্যতার উন্নতির পথে এক বিশেষ অগ্রগতির মাধ্যম হলো ধাতুর ব্যবহার। ধাতুর মধ্যে তামা মানুষের কাছে সহজলভ্য হয়েছিল এবং জটিল ধাতুবিদ্যা ছাড়া সাধারণ অভিজ্ঞতার মাধ্যমে তামা গলিয়ে বিভিন্ন হাতিয়ার মানুষ তৈরি করতে শিখেছিল। তাই সভ্যতার যে যুগে মানুষ পাথরের পাশাপাশি তামার আসবাব ও হাতিয়ার তৈরি ও ব্যবহার করত - তাকে তাম্র প্রস্তর যুগ বা Chalcolithic Age বলা হয়। ( গ্রিক শব্দ Cholkos অর্থাৎ তামা এবং Lithos অর্থাৎ পাথর ) অবশ্য প্রথমদিকে মানুষ খনি থেকে তামার আকরিক সংগ্রহের পদ্ধতি জানত না। তারা পাথরের সঙ্গে লেগে থাকা তামার আকরিক সংগ্রহ করে এবং তা উত্তপ্ত করে কাঁচা তামা সংগ্রহ করত। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।


সময়কাল :-
আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৫০০০ থেকে ৩০০০ অব্দ পর্যন্ত পৃথিবীতে তাম্র প্রস্তর যুগের অস্তিত্ব ছিল। মনে করা হয় , ৫০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ বা তার পরবর্তীকালে সুমেরের মানুষরা সর্বপ্রথম খনিজ তামার ব্যবহার শুরু করে। পরবর্তীকালে ৩০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এশিয়া , আফ্রিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন অংশে তামার ব্যবহার যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়। আমেরিকায় তামার ব্যবহার শুরু হয় আরো অনেক পরে। 

তামার ব্যবহার ও তার সুবিধা :-
তামার ব্যবহার শুরু হলে মানব সভ্যতার ইতিহাসে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে যায়। হাতিয়ার তৈরিতে তামা ব্যবহারের কিছু সুবিধা ছিল। পাথরের তুলনায় তামার হাতিয়ার অনেক বেশী মজবুত হত। তামাকে আগুনে গলিয়ে  বিভিন্ন আকারের হাতিয়ার তৈরি করা যেত। এই হাতিয়ার পাথরের তুলনায় অনেক বেশি ধারালো ও তীক্ষ্ণ হয়। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।


ব্রোঞ্জের ব্যবহার :- 
তামার ব্যবহার সর্বত্র সমান ছিল না। তাছাড়া তামার মত নরম ধাতু দিয়ে উন্নত হাতিয়ার ও টেকসই আসবাব তৈরি করা যাচ্ছিল না। তাই প্রয়োজন মেটাতে আমার সঙ্গে টিন  মিশিয়ে নতুন সংকর ধাতু ব্রোঞ্জ আবিষ্কৃত হয়। ব্রোঞ্জের হাতিয়ারগুলো তামার হাতিয়ারের থেকে আরও অনেক মজবুত , ধারালো ও উন্নত হয়ে ওঠে। এইজন্য তাম্র প্রস্তর যুগের পরবর্তী কাল '' তাম্র ব্রোঞ্জ যুগ '' নামে পরিচিত। তবে পশ্চিম এশিয়ার ব্রোঞ্জ তৈরির কৌশল আবিষ্কার ও ব্রোঞ্জের ব্যবহার হয় আনুমানিক চার হাজার থেকে তিন হাজার পাঁচশ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। 

হাতিয়ার তৈরিতে অগ্রগতি :-
তামার তুলনায় ব্রোঞ্জ অধিক কঠিন , দীর্ঘস্থায়ী ও এর ক্ষয় কম হওয়ায় সহজেই এই ধাতু মানুষকে আকৃষ্ট করে। তাই ব্রোঞ্জ যুগ ছিল দীর্ঘস্থায়ী ও গ্রহণযোগ্য। ব্রোঞ্জ উদ্ভাবনের পরে বিভিন্ন আকৃতিবিশিষ্ট কুঠার , কাটারি , তলোয়ার , টাঙ্গি ইত্যাদি তৈরি করা হয়। তাম্র ব্রোঞ্জ যুগের হাতিয়ারের   একটা বড় অংশ ছিল যুদ্ধাস্ত্র। আঘাত করা এবং  আত্মরক্ষা উভয় ধরনের ব্রোঞ্জ অস্ত্র পাওয়া যায়। যেমন- ব্রোঞ্জের বর্ম , শিরস্ত্রাণ , তলোয়ার , বর্ষা , তির - ইত্যাদি। এর থেকে মনে করা হয় এই যুগে মানুষের মনে শান্তি ছিল না এবং তাদেরকে বিভিন্ন কারণে সংঘর্ষের জন্য প্রস্তুত থাকতে হত। 


কৃষির উন্নতি :-
তাম্র প্রস্তর সংস্কৃতির অপর একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট হল এ সময় মানুষ স্থায়ী কৃষিজীবী এবং খাদ্য উৎপাদনকারীতে পরিণত হয়েছিল। তাই নব্য প্রস্তর যুগের তুলনায় কৃষিকাজ আরও উন্নত হয়। পশুর টানা কাঠের লাঙল , ব্রোঞ্জের কাস্তে ব্যবহার করা হয়। জমি পরিষ্কারের জন্য ব্রোঞ্জের কুঠার ও কাটারি ব্যবহার করা হত। মাছ শিকারের জন্য হারপুন বা বঁড়শিও ব্রোঞ্জ দিয়ে তৈরি করা হত। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।


অন্যান্য ক্ষেত্রে অগ্রগতি :-
তাম্র প্রস্তর যুগে ধাতুর ব্যবহারের ফলে উন্নত কুঠার , তলোয়ার , বর্শা , তিরের ফলা , লাঙল প্রভৃতির যথেষ্ট অগ্রগতি ঘটে। গৃহস্থালির প্রয়োজনীয় বিভিন্ন সামগ্রী তৈরী হতে থাকে। কাঠের ব্যবহারে সময় যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়। কাঠ  দিয়ে নৌকা ও ঘরবাড়ি তৈরি হতে থাকে। কুমোরের চাকা এ যুগে আরও উন্নত হলে মৃৎশিল্পের যথেষ্ট অগ্রগতি ঘটে। বস্ত্র উৎপাদনের জন্য তাঁতের প্রচলন বৃদ্ধি পায়। রান্নার কাজে ধাতুর পাত্রের ব্যবহার শুরু হলে মানুষের খাদ্যাভাসে যথেষ্ট পরিবর্তন আসে। 

নগর সভ্যতার সূচনা :-
তাম্র প্রস্তর যুগে কৃষিজীবী মানুষ বিভিন্ন নদীর তীরে বসতির প্রসার ঘটায়। নদীর তীরে উর্বর কৃষি জমিতে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি , জমিতে জল সেচের সুবিধা , নদী থেকে মাছ ধরার সুবিধা , নদী পথে যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনের সুবিধা -  প্রভৃতির ফলে বিভিন্ন নদী উপত্যকা অঞ্চলের জনঘনত্ব যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়। ক্রমে এইসব অঞ্চলে নগরজীবন প্রতিষ্ঠিত হয়। ভারতে হরপ্পা সভ্যতা এরূপ  নগর সভ্যতার অন্যতম উদাহরণ। 

পুরুষের প্রাধান্য :- 
কৃষিজমিতে লাঙল ব্যবহার করা , পশু পালন করা ও কৃষিকাজে পশুকে ব্যবহার করা - প্রভৃতি কাজে শারীরিক শক্তির বিশেষ প্রয়োজন ছিল। ফলে এসব কাজের তাম্র প্রস্তর যুগের মেয়েদের তুলনায় পুরুষের ভূমিকা বিশেষভাবে বৃদ্ধি পায়। এসময় থেকে জীবন জীবিকার ক্ষেত্রে পুরুষের প্রাধান্য স্থাপিত হয় এবং সামাজিক কর্তৃত্বের বিষয়ে মেয়েরা ক্রমশ পিছিয়ে পড়তে থাকে। ক্রমে ক্রমে সমাজের সব ক্ষেত্রে পুরুষের প্রাধান্য স্থাপিত হয়। 

খাদ্য ও বাসস্থানের ক্ষেত্রে পরিবর্তন :-
তাম্র প্রস্তর যুগের মানুষ খাদ্য ও বাসস্থান এর চাহিদা পূরণ করে নতুনভাবে এবং আরও উন্নততর ভাবে করতে শেখে।  বসতি এলাকা গড়ে তোলে। গাছের গুড়ি , পাতা ও খড়ের  ছাউনি দেওয়া ঘর প্রথমে তৈরি করে। পরে কাঁচা বা পোড়া   ইটের বাড়ি তৈরি করা হয়। খাদ্যশস্যের উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে খামার , উঠান পরিচর্যা , শস্য সংরক্ষণের জন্য পাত্র তৈরি বা কক্ষ বিশিষ্ট ইঁটের শস্যাগার নির্মাণ ও ভবিষ্যৎ খাদ্য সঞ্চয় করতে শেখে। রান্নার কাজে ধাতুর পাত্রের ব্যবহার শুরু হলে মানুষের খাদ্যাভ্যাসে যথেষ্ট পরিবর্তন আসে। 

পরিবহন ব্যবস্থায় চাকার ব্যবহার :-
তাম্র প্রস্তর সভ্যতার গতি আনে কাঠের ও ধাতুর চাকা। যানবাহন ও মাটির পাত্র তৈরিতে চাকার ব্যবহার শুরু হয়। চাকার ব্যবহার করে সুমের ও মেসোপটেমিয়াতে ৩০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে চাকাওয়ালা গাড়ি , যুদ্ধরথ , যাত্রীবাহী গাড়ির  প্রচলন হয়েছিল। ২৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সিন্ধু উপত্যকায় চাকার ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়। চাকার ব্যবহার থেকে মৃৎশিল্পে মানুষের দক্ষতা লক্ষ্য করা যায়। 

ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতি :-
তাম্র প্রস্তর যুগের জীবিকায় কৃষি , পশুপালনের সঙ্গে সঙ্গে বাণিজ্যের প্রচলন ও আধিক্য লক্ষ্য করা যায়। নদী উপত্যকায় গুদাম নির্মিত হয়। আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে দূরদেশে যাতায়াতের জন্য বাণিজ্যতরী ব্যবহৃত হত। গাছের গুড়ি দিয়ে নৌকা ও বাণিজ্যতরি নির্মিত হত। এই যুগেই সর্বপ্রথম নদী তীরবর্তী অঞ্চলে বাজার গড়ে ওঠে। বিভিন্ন গোষ্ঠীর মানুষ তাদের উৎপাদিত দ্রব্য বেচাকেনার জন্য এই বাজারে এসে জড়ো হত। 

অস্তিত্বের নিদর্শন :-
ভারত , মেসোপটেমিয়া , এশিয়া মাইনর , মিশর , গ্রিস প্রভৃতি স্থানে তাম্র - ব্রোঞ্জ যুগের সূত্রপাত ঘটে। ভারতের মেহেরগড় সভ্যতায় ৪৩০০ - ৩৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে তামা গলাবার পদ্ধতি চালু ছিল বলে প্রমান পাওয়া গেছে। অবশ্য এ যুগে এসব স্থানে তামা বা ব্রোঞ্জের ব্যবহার শুরু হলেও প্রথমদিকে তামার পাশাপাশি পাথরের ব্যবহারও চলতে থাকে। কেননা , তামা বা ব্রোঞ্জ ধাতু পাথরের মত সহজলভ্য ছিল না বা এসব ধাতু নিষ্কাশন করে তা দিয়ে হাতিয়ার তৈরির প্রক্রিয়া মোটেই সহজ ছিল না। 

পরিশেষে বলা যায় , তামা আবিষ্কারের ফলে  মানবসভ্যতার ইতিহাসে যুগান্তকারী পরিবর্তন দেখা যায়। পাথরের অস্ত্রের তুলনায় তামার তৈরী অস্ত্র অনেক বেশি ধারালো ও তীক্ষ্ণ হওয়ায় তাম্র প্রস্তর যুগে মানবসমাজে অভাবনীয় উন্নতি ঘটে। ভারতে তাম্রাশ্মীয় গ্রাম সভ্যতার বিকাশ ঘটে। বোলান নদীর তীরে অবস্থিত মেহেরগড় ছিল তাম্রাশ্মীয় সভ্যতার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। পুরাতত্ত্ববিদ গ্রেগরি পোসেল বলেছেন - '' ভারতের তাম্রাশ্মীয় সভ্যতাই পৃথিবীতে প্রাচীনতম। ''   

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।


Share
Tweet
Pin
Share
No comments

সাতবাহন বংশের শ্রেষ্ঠ সম্রাট কে ছিলেন ? তাঁর কৃতিত্ব আলোচনা কর। 
অথবা , শাসক ও বিজেতা হিসেবে গৌতমীপুত্র সাতকর্ণীর সাফল্য ও কৃতিত্ব আলোচনা কর। 




শাসক ও বিজেতা হিসেবে গৌতমীপুত্র সাতকর্ণীর সাফল্য ও কৃতিত্ব


মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের পর এই ধ্বংসপ্রাপ্ত সাম্রাজ্যের উপর কয়েকটি রাজ্য গড়ে ওঠে। যথা - উত্তর ভারতের শুঙ্গ রাজ্য , উড়িষ্যার খারবেলের রাজ্য এবং পশ্চিম ও দক্ষিণ ভারতের সাতবাহন রাজ্য। এদের মধ্যে সাতবাহন সাম্রাজ্য বিস্তার ও স্থায়িত্বের দিক দিয়ে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করেছিল। ডক্টর হেমচন্দ্র রায়চৌধুরী মনে করেন যে , খ্রিষ্টপূর্ব প্রথম শতকে সাতবাহন রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু , স্মিথ প্রমুখ ঐতিহাসিকগণ মনে করেন যে , খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতক থেকেই বিশেষতঃ ২৩৫ খ্রিষ্টপূর্ব থেকে ২২৫ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত সাতবাহন রাজবংশ বিদ্যমান ছিল। এই রাজবংশের শ্রেষ্ঠ নরপতি ছিলেন গৌতমীপুত্র সাতকর্ণী। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।


( A ) সাতবাহন বংশ সম্পর্কিত ঐতিহাসিক বিতর্ক :-
সাতবাহন বংশ সম্পর্কে ঐতিহাসিক বিতর্ক রয়েছে। তবে কয়েকটি সূত্র থেকে গৌতমীপুত্রের রাজত্বকাল নির্ণয় করা সম্ভব হয়েছে। তিনি নহপানের সমসাময়িক ছিলেন এবং তাঁকে তিনি চূড়ান্তভাবে পরাজিত করেছিলেন। এই ঘটনাটি ১২৪ - ১২৫ খ্রিষ্টাব্দে ঘটে বলে মনে করা হয়। তার কারণ এর পর নহপানের অস্তিত্বের কোনো প্রমান পাওয়া যায় না। আরও মনে করা হয় যে গৌতমীপুত্রের রাজত্বের অষ্টাদশ বৎসরে তিনি নহপানকে পরাজিত করেন। সুতরাং , ১০৬ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর রাজত্ব শুরু হয়েছিল। তাঁর শেষ লেখাটি তাঁর রাজত্বকালের চতুর্বিংশ বৎসরে রচিত হয়েছিল। সম্ভবতঃ তখন তিনি পঙ্গু হয়ে পড়েছিলেন। কারণ এই লেখাটি গৌতমী বলশ্রীর সঙ্গে যুক্তভাবে রচিত হয়েছিল। সুতরাং , তাঁর রাজত্বকাল ১০৬ থেকে ১৩০ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে ধরা যেতে পারে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।


( B ) গৌতমী বলশ্রীর শিলালিপি :- 
গৌতমীপুত্র সাতকর্ণীর মাতা গৌতমী বলশ্রীর শিলালিপিতে তাঁর রাজত্বকালের ও রাজ্য জয়ের বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায়। এই শিলালিপিতে গৌতমীপুত্র সাতকর্ণীকে গোঁড়া ব্রাক্ষ্মণ এবং শক , যবন (গ্রীক ) ও পল্লবদের উচ্ছেদকারী বলে বর্ণনা করা হয়েছে। এছাড়া উক্ত শিলালিপিতে তাঁকে উত্তর কোঙ্কন , সৌরাষ্ট্র , অবন্তী - প্রভৃতি রাজ্যের অধীশ্বর বলা হয়েছে। 


( C ) সাম্রাজ্যের বিস্তার :-
সাতকর্ণী মহারাষ্ট্র ও পার্শ্ববর্তী প্রদেশসমূহ পুনরুদ্ধার করে সাতবাহন বংশের লুপ্ত গৌরব পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেন। মহারাষ্ট্র পুনরুদ্ধার তাঁর প্রধান কৃতিত্ব হলেও একমাত্র কৃতিত্ব নয়। নাসিক প্রশস্তিতে তিনি যে অঞ্চলগুলি শাসন করতেন তাদের নামের বিস্তৃত তালিকা রয়েছে। এই নামগুলি হল আসিক (মহারাষ্ট্র ) , মূলক ( পৈথানের পার্শ্ববর্তী অঞ্চল ) , সুরথ ( কাথিয়াবার ) , বিদর্ভ (বেরার ) , আকর ( পূর্ব মালব ) এবং অবন্তী ( পশ্চিম মালব ) । এছাড়া এই প্রশস্তিতে গৌতমীপুত্রকে বিন্ধ্য পর্বত থেকে মলয় পর্বত পর্যন্ত এবং পূর্বঘাট পর্বতমালা থেকে পশ্চিমঘাট পর্বতমালা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চলের অধিপতি বলা হয়েছে। 

ডক্টর রায়চৌধুরীর মতে , এই তালিকায় অন্ধ্র ও দক্ষিণ কোশলের নাম নেই। কিন্তু লেখ ও হিউ এন সাঙ এর বিবরণী থেকে জানা যায় যে , এই দুটি অঞ্চল কোনো না কোনো সময়ে সাতবাহন সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। গৌতমীপুত্র দাবী করেছেন যে , তাঁর  সৈন্যদল আরব সাগর , ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগরের জল পান করেছিল।
 
এছাড়া , ডক্টর কে . গোপালাচারী বলেছেন যে , গৌতমীপুত্রের অধিকৃত স্থান সমূহের মধ্যে মহেন্দ্র - র উল্লেখ আছে। এ থেকে কলিঙ্গ ও অন্ধ্র তাঁর সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল - তার প্রমান পাওয়া যায়। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।


( D ) শক - যবন - পল্লব ধ্বংসকারী :-
নাসিক প্রশস্তিতে গৌতমীপুত্রকে শক , যবন ও পল্লবদের ধ্বংসকারী বলে বর্ণনা করা হয়েছে। যোগাল থেম্বিতে প্রাপ্ত মুদ্রা থেকে শকদের সঙ্গে তাঁর সংগ্রামের কথা জানা যায়। সেখানে নহপানের যে অসংখ্য মুদ্রা পাওয়া গেছে তা থেকে দেখা যায় যে , তার দুই - তৃতীয়াংশই গৌতমীপুত্র কর্তৃক পুনর্মুদ্রিত হয়েছিল। এথেকে স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে , নহপান গৌতমীপুত্রের নিকট পরাজিত হয়েছিলেন। গৌতমীপুত্রের এই সাফল্য সাতবাহনদের উচ্চাশাকে অতিক্রম করেছিল। এই জয়ের ফলেই গৌতমীপুত্র অলুপ , সুরাষ্ট্র , আকর , অবন্তী - ইত্যাদি স্থানগুলি লাভ করেন। এই জয়লাভের দ্বারাই উত্তর দাক্ষিনাত্য এবং পশ্চিম ও মধ্য ভারতের অংশবিশেষ বিদেশী শাসনমুক্ত হয়েছিল। এই   জয়লাভকে চিহ্নিত করার জন্য গৌতমীপুত্র নাসিকে একটি নগর নির্মাণ করেন এবং শকদের অনুকরণে '' রাজরাজ '' এবং '' মহারাজ '' উপাধি গ্রহণ করেন। 

( E ) পুলুময়ীর বিবাহ : রাজনৈতিক দূরদর্শিতার পরিচায়ক :- 
গৌতমীপুত্র তাঁর জীবনের শেষদিন পর্যন্ত সাফল্য লাভ অব্যাহত রেখেছিলেন - এরূপ মনে করার কোনও কারণ নেই। শক বংশের পতনের পর কর্দমাক শক গোষ্ঠী চষ্টনের নেতৃত্বে লুপ্ত ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের জন্য এগিয়ে আসেন। তিনি সম্ভবতঃ উজ্জয়িনী তাঁর সাম্রাজ্যভুক্ত করতে পেরেছিলেন। চষ্টনের পর মহাক্ষত্রপ রুদ্রদামনের সাতবাহনদের বিরুদ্ধে শকদের সাফল্যের পরিচয় পাওয়া যায়। এই বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে গৌতমীপুত্র তাঁর অন্যতম পুত্র বশিষ্ঠ পুত্র পুলুমায়ীর সঙ্গে রুদ্রদামনের কন্যার বিবাহ দেন। এই বিবাহ সাতকর্ণীর বাস্তব রাজনীতি জ্ঞানের পরিচায়ক। 

( F ) ধর্মীয় উদারতা :-
গৌতমীপুত্র ব্রাম্মণ্যধর্মের পৃষ্ঠপোষক হওয়া সত্ত্বেও বৌদ্ধদের প্রতি উদার মনোভাব গ্রহণ করেন। নাসিক প্রভৃতি স্থানের অধিবাসীদের তিনি ভূমি ও গুহা দেন করেন। ডক্টর গোপালাচারী বলেছেন যে , তাঁর ধর্মীয় উদারতার নীতির ফলে গৌতমীপুত্র অপর ধর্মাবলম্বীদের সমর্থন লাভ করেছিলেন এবং তার সাম্রাজ্যকে সাফল্যের সাথে পরিচালনা করতে সহায়তা করেছিল। 

( G ) শাসন ব্যাবস্থায় দক্ষতার পরিচয় :-
ডক্টর গোপালাচারীর মতে , গৌতমীপুত্রের শাসনের ভিত্তি ছিল শাস্ত্রীয় বিধান ও মানবতাবোধ। তাঁর রাজস্ব ব্যবস্থায় এই বোধ প্রতিফলিত হয়েছিল। গৌতমীপুত্রের সরকারী দলিল ও ব্যাক্তিগত নথিপত্র থেকে তাঁর সময়কার শাসন ব্যবস্থার কথা জানতে পারা যায়। তিনি তাঁর পূর্বসূরীদের প্রচলিত শাসন ব্যবস্থাকেই মোটামুটি অক্ষুন্ন রাখেন।                 
শাসক সাতকর্ণী শাসন ব্যবস্থায় সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী ছিলেন এবং দৈবস্বত্ব অনুসারে রাজ্যশাসন করতেন। রাজা নিজেই সৈন্য পরিচালনা করতেন। শাসনকার্যের সুবিধার জন্য - '' মহার্তক '' , '' মহাআর্যক '' , ''ভান্ডারগারিক '' , '' মহামাত্র '' , '' নিবন্ধকার '' - প্রভৃতি উপাধিধারী কর্মচারী নিযুক্ত করেন। 

( H ) কর ব্যবস্থা ও ব্যবসা বাণিজ্য :- 
কর প্রথা দ্বারা রাজস্ব আদায় হত ; কিন্তু কর কখনোই উচ্চহারে ধার্য হত না। রাজার খাস সম্পত্তি ও জমির উপর কর , লবণের একচেটিয়া ব্যবসা এবং বিচারালয় প্রদত্ত অর্থ রাজস্বের উৎস ছিল। সাতকর্ণীর আমলে বৈদেশিক বাণিজ্য উন্নতি লাভ করে। এছাড়াও তাঁর আমলে ভারত ও পাশ্চাত্য দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল। রাজধানী পৈথান ছিল বিশিষ্ট বাণিজ্য কেন্দ্র। 

( I ) সমাজ সংস্কার : ব্রাক্ষ্মণ্য শ্রেণীর প্রাধান্য স্থাপন :-
গৌতমীপুত্র সাতকর্ণী যে শুধু সুযোদ্ধা-ই ছিলেন তাই নয় , সমাজ সংস্কারক হিসেবেও তাঁর খ্যাতি ছিল। তিনি সকল বর্ণের স্বার্থরক্ষা করতে যত্নবান ছিলেন। কিন্তু বর্ণ সংমিশ্রনের ঘোর বিরোধী ছিলেন। নাসিক প্রশস্তি অনুসারে তিনি ক্ষত্রিয়দের দর্প চূর্ণ করে ব্রাক্ষ্মণদের শ্রেষ্ঠত্ব স্থাপন করেছিলেন। তিনি ছিলেন প্রজাকল্যাণমূলক শাসক। 


পরিশেষে বলা যায় ,  রাজনৈতিক দিক দিয়ে গৌতমীপুত্র সাতকর্ণীর অবদান ছিল দু - ধরণের - একদিকে বৈদেশিক শক্তিকে প্রতিহত করে নিরাপত্তা বিধান ও অন্যদিকে বিভিন্ন আঞ্চলিক শক্তিকে প্রতিহত করে সাতবাহন রাজ্যের সম্প্রসারণ।   
শাসক ও বিজেতা হিসেবে গৌতমীপুত্র সাতকর্ণী বিশেষ সাফল্য অর্জন করেছিলেন। প্রথম সাতকর্ণীর মৃত্যুর পর শক আক্রমণের ফলে সাময়িকভাবে সাতবাহন বংশের গৌরব ম্লান হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু গৌতমীপুত্র সাতকর্ণী এই লুপ্ত গৌরব পুনরুদ্ধার করেছিলেন। এটিকেই ঐতিহাসিকরা গৌতমীপুত্রের সর্বাধিক গৌরবময় কৃতিত্ব বলে দাবী করেছেন। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো।


Share
Tweet
Pin
Share
No comments
Newer Posts
Older Posts

Followers

Pages

  • Home
  • Privacy Policy
  • Disclaimer
  • CONTACT ME
  • About Me

Contact Form

Name

Email *

Message *

About me

Hallow viewers , myself Nandan Dutta [Subhankar Dutta], reside at Maheshpur,Malda.
I made this website for the students of B.A. courses under Gour Banga University. Here you can get suggestions of different subjects like HISTORY , SOCIOLOGY , POLITICAL SCIENCE & EDUCATION.
In future I will add MCQ sections of those subjects.


Categories

  • 1ST SEMESTER SUGGESTION (1)
  • 2 ND YEAR SUGGESTION (1)
  • 2ND SEMESTER (1)
  • 3RD SEMESTER (8)
  • BENGALI NOTES (21)
  • CU suggestion. (1)
  • EDUCATION NOTES (141)
  • ENGLISH COMPULSORY (16)
  • GBU Suggestion. (7)
  • HISTORY EUROPE & WORLD (46)
  • HISTORY NOTES (68)
  • POL SC NOTES (68)
  • SOCIOLOGY NOTES (72)
  • WBCS 2020 (1)

recent posts

Blog Archive

  • August 2025 (4)
  • May 2025 (3)
  • April 2025 (20)
  • March 2025 (12)
  • February 2025 (8)
  • November 2024 (5)
  • October 2024 (2)
  • September 2024 (2)
  • June 2024 (2)
  • March 2024 (6)
  • February 2024 (4)
  • October 2023 (5)
  • May 2023 (5)
  • April 2023 (1)
  • December 2022 (1)
  • November 2022 (13)
  • September 2022 (2)
  • August 2022 (7)
  • July 2022 (29)
  • June 2022 (10)
  • May 2022 (25)
  • April 2022 (24)
  • March 2022 (16)
  • February 2022 (19)
  • January 2022 (21)
  • December 2021 (46)
  • November 2021 (5)
  • October 2021 (6)
  • September 2021 (5)
  • August 2021 (41)
  • July 2021 (43)
  • June 2021 (31)
  • May 2021 (7)
  • April 2021 (1)
  • July 2020 (1)
  • June 2020 (3)
  • April 2020 (1)
  • November 2019 (1)
  • July 2019 (1)
  • June 2019 (1)
  • May 2019 (1)
  • April 2019 (2)
  • January 2019 (1)

Pages

  • Home
  • 2nd SEM ভাষাতত্ত্ব :
  • বাংলা উপভাষা
  • দ্বিতীয় পুলকেশীর কৃতিত্ব
  • ভারতীয় সংবিধানে বর্ণিত সাম্যের অধিকারগুলি আলোচনা করো।
  • হর্ষবর্ধনের কৃতিত্ব আলোচনা করো। তাকে কি উত্তর পথনাথ বলা যায় ?
  • ভারতীয় সংবিধানের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য :-
  • উদারনীতিবাদ : সংক্ষিপ্ত ধারণা :-
  • চোল শাসনব্যবস্থা :-
  • গুপ্তযুগ সুবর্ণযুগ সম্পর্কিত আলোচনা।
  • ৬. উদাহরণসহ মধ্যযুগের বাংলাভাষার কয়েকটি বৈশিষ্ট আল...
  • 1. Marxism
  • আধুনিক বাংলা ভাষা ও তার বৈশিষ্ট।
  • Discuss the career and achievements of Samudragupta .
  • ভাষাতত্ত্ব

Created with by ThemeXpose | Distributed by Blogger Templates