­
মনোবিজ্ঞান ও শিক্ষার সম্পর্ক। The relation between psychology and education. - NANDAN DUTTA

মনোবিজ্ঞান ও শিক্ষার সম্পর্ক। The relation between psychology and education.

by - June 29, 2021

মনোবিজ্ঞান ও শিক্ষার সম্পর্ক। 



মনোবিজ্ঞান ও শিক্ষার সম্পৰ্ক আলোচনার ক্ষেত্রে জানা প্রয়োজন মনোবিজ্ঞান ও শিক্ষার অর্থ। মনোবিজ্ঞান হল মানুষের আচরণ সম্পর্কিত বস্তুনিষ্ঠ বিজ্ঞান। অর্থাৎ , মনোবিজ্ঞান হল আচরণ অধ্যয়নের বিজ্ঞান - যার সাহায্যে মানুষের আচরণের ব্যাখ্যা , নীতি নিয়ন্ত্রণ এবং ভবিষ্যৎ সম্পর্কে পূর্বাভাস দেওয়া যায়। 
অন্যদিকে শিক্ষা বলতে আমরা সেইসকল আচরণকে আয়ত্ত করা বুঝি , যেগুলি ব্যক্তি ও সমাজ উভয়ের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন। তাই , বলা যায় , ব্যক্তির আচরণ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে মানসিক ক্রিয়া , গতি - প্রকৃতি ও সূত্র নির্ধারণ করে মনোবিজ্ঞান। আর সেই আচরণের প্রয়োগমূলক দিক হল শিক্ষার বিষয়বস্তু। 


১. শিক্ষার লক্ষ্য ও মনোবিজ্ঞান :- 
Adams এর কথায় '' The teacher teaches John Latin .'' - এই বাক্যটি থেকে শিক্ষা ও মনোবিজ্ঞানের সম্পর্ক ভালোভাবে বোঝা যায়। শিক্ষককে যেমন শিক্ষার বিষয়টি জানতে হবে তেমনি যাকে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে অর্থাৎ শিক্ষার্থীকেও জানতে হবে।  শিক্ষার্থীকে জানতে হলে প্রয়োজন মনোবিজ্ঞানের জ্ঞান।  শিক্ষার লক্ষ্য স্থির করাই শিক্ষাতত্ত্বের একমাত্র কাজ নয় ; এই লক্ষ্যকে বাস্তবায়িত করাও এর অন্যতম উদ্দেশ্য। এ ব্যাপারে শিক্ষামনোবিজ্ঞানের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 


২. শিক্ষার পাঠক্রম ও মনোবিজ্ঞান :- 
শিক্ষার লক্ষ্য নির্দিষ্ট হওয়ার পরবর্তী স্তর হল পাঠক্রম নির্ধারণ করা। পাঠক্রম নির্ধারণ করতে হবে শিক্ষার লক্ষ্যের দিকে নজর রেখে। আধুনিক শিক্ষার লক্ষ্য শুধুমাত্র বৌদ্ধিক বিকাশ নয় , শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীণ বিকাশ সাধন। সুতরাং পাঠক্রম হবে শিক্ষার্থীর সামগ্রিক বিকাশ সাধনের উপযোগী। শিক্ষাক্ষেত্রে পাঠ্যক্রমের এই বহুমুখিতা মনোবিজ্ঞানের ধারণার উপর নির্ভর করে। সেজন্য শিক্ষার্থীর বহুমুখী বিকাশ ও শিক্ষার লক্ষ্য পূরণের জন্য যে পাঠক্রম রচনার করতে হবে তার জন্য মনোবিজ্ঞানের জ্ঞান অপরিহার্য। 

৩. শিক্ষার পদ্ধতি , মূল্যায়ন ও মনোবিজ্ঞান :- 
পাঠক্রম রচনার পরেই আসে শিক্ষাপদ্ধতি। আধুনিক শিক্ষা পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীর সমস্ত ইন্দ্রিয়গুলিকে সক্রিয় করার চেষ্টা করা হয়। শিক্ষার্থী হবে শ্রোতা আর শিক্ষক হবেন পরিচালক - বর্তমানে এই তত্ত্বের অসাড়তা প্রমাণিত হয়েছে। শিক্ষককেন্দ্রিক পদ্ধতির পরিবর্তে বর্তমানে যে শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে - তার ভিত্তি হলো মনোবিজ্ঞান। শিক্ষার স্তর মূল্যায়নের আধুনিক ধারণা , কৌশল স্থিরকরণ এবং প্রয়োগ , তার তাৎপর্য নির্ণয় - ইত্যাদি সব ক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞানের ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। 

৪. শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীর মানসিক স্বাস্থ্য এবং মনোবিজ্ঞান :- 
মানসিক স্বাস্থ্য শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়ের পক্ষেই প্রয়োজন। অন্যথায় শিক্ষণ এবং শিখন কোনোটিই সার্থকভাবে সম্পন্ন হতে পারেনা। মানসিক স্বাস্থ্য কাকে বলে , মানসিক সু -স্বাস্থ্যের লক্ষণ গুলি কী  , কীভাবে সুস্থ মানসিক স্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়া যায় - ইত্যাদি সবই মনোবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয় - যা শিক্ষার ক্ষেত্রে বিশেষ প্রয়োজন। 

৫. মনোবিজ্ঞান এবং শিক্ষানির্দেশনা এবং পরামর্শদান :- 
শিক্ষা নির্দেশনা এবং পরামর্শদানের মাধ্যমেই হয় আধুনিক শিক্ষা বিস্তার। শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত শিক্ষা পরিকল্পনা রচনা , শিক্ষা সংক্রান্ত নানা তথ্য পরিবেশন করা , শিক্ষা সমস্যা সমাধান করা , বয়ঃসন্ধিক্ষণের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের পরামর্শদান , শিক্ষার্থীদের বৃত্তি পছন্দ বিকাশে সাহায্য করা - ইত্যাদি মনোবিজ্ঞানেরই অংশবিশেষ। 


৬. ব্যতিক্রমী শিশুদের শিক্ষা :- 
ব্যতিক্রমী অর্থাৎ প্রতিভাসম্পন্ন , পিছিয়ে পড়া এবং বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধী শিশুদের বিশেষ ধরনের শিক্ষা প্রয়োজন। মনোবিজ্ঞানে এইসব শিশুদের কীভাবে চিহ্নিত করা যায় এবং এদের আচরণের বিভিন্ন দিক গুলি বিশদভাবে আলোচিত হয় - যা এদের শিক্ষাব্যবস্থা পরিকল্পনার জন্য বিশেষ প্রয়োজন। 

৭. শিক্ষা এবং মনোবিজ্ঞানের গবেষণা :- 
শিক্ষার বিকাশে মনোবিজ্ঞানের গবেষণা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।  শিক্ষাকে বিজ্ঞানভিত্তিক করার ক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞানের গবেষণার বিষয়ে অবদান দেখা যায়। মনোযোগ , স্মৃতি , শিখন , প্রেষণা , সাধারণ ক্ষমতা ইত্যাদি মানসিক প্রক্রিয়ার ওপর গবেষণালব্ধ ফল শিক্ষাব্যবস্থাকে উন্নত করতে সাহায্য করেছে এবং করছে। 

৮. বিদ্যালয় পরিচালনা এবংমনোবিজ্ঞান :- 
শিক্ষাব্যবস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো সুষ্ঠভাবে বিদ্যালয় পরিচালনা। বর্তমানে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে , ব্যবস্থাপনার মনস্তত্ত্ব প্রয়োগ করে বিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে আরও উৎকর্ষতা আনা যায়। বিদ্যালয়ের মানবসম্পদ , যেমন - শিক্ষক , ছাত্র , শিক্ষাকর্মী এবং অভিভাবকদের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে বিদ্যালয়ের কার্যাবলীগুলিকে সম্পন্ন করতে শিক্ষা ব্যবস্থাপনার মনস্তত্ত্বের নীতি প্রয়োগ করে বিদ্যালয় পরিচালনা আরো উন্নত করা যায়। 

৯. শ্রেণি ব্যবস্থাপনা এবং মনোবিজ্ঞান :- 
কীভাবে শ্রেণির কাজ শুরু হবে , শিক্ষার্থীদের প্রেষণা এবং মনোযোগ কীভাবে ধরে রাখা যায় , কীভাবে শ্রেণি শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করা যায় , শ্রেণিকক্ষে কীভাবে ব্যক্তিগত ও দলগত শিখনের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা যায় - ইত্যাদি ক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞানের বিভিন্ন নীতি প্রয়োগ করে শ্রেণিকক্ষ ব্যবস্থাপনার উৎকর্ষ সাধন করা যায়। 



You May Also Like

1 comments