Pages

Powered by Blogger.
1ST SEMESTER SUGGESTION 2 ND YEAR SUGGESTION 2ND SEMESTER 3RD SEMESTER BENGALI NOTES CU suggestion. EDUCATION NOTES ENGLISH COMPULSORY GBU Suggestion. HISTORY EUROPE & WORLD HISTORY NOTES POL SC NOTES SOCIOLOGY NOTES WBCS 2020

NANDAN DUTTA

A new approach for exam notes .

জার্মানির ঐক্য আন্দোলনের পথে প্রধান বাধাগুলি কী ছিল ? 




জার্মানির ঐক্য আন্দোলনের পথে প্রধান বাধা / অন্তরায় :- 


১৬৪৮ খ্রিস্টাব্দে ওয়েস্টফ্যালিয়ার সন্ধির মাধ্যমে জার্মানিকে প্রায় দুশোটি ছোট ছোট খন্ডে বিভক্ত করা হয়। এরপর নেপোলিয়নের সময়কালে তিনি বহুধাবিভক্ত জার্মানিকে ৩৯ প্রদেশে বিভক্ত করেন। কিন্তু এই সময় অস্ট্রিয়ার প্রাধান্য , মেটারনিকের রক্ষণশীল নীতি - ইত্যাদি কারণে জার্মানির ঐক্য সম্ভব ছিলনা। জার্মানির ঐক্য প্রতিষ্ঠার পথে প্রধান বাধা বা অন্তরায়গুলি ছিল নিম্নরূপ। 

১. ভিয়েনা সম্মেলন :- 
ভিয়েনা সম্মেলনে নেপোলিয়ন কর্তৃক নির্ধারিত পূর্বেকার ৩৯ টি প্রদেশেই জার্মানিকে বিভক্ত রাখা হয়। কিন্তু প্রত্যেক জার্মান রাজ্যের স্বতন্ত্রতা বজায় থাকায় জার্মানির সার্বিক ঐক্য প্রতিষ্ঠা সম্ভব ছিল না। ৩৯ টি জার্মান প্রদেশের স্বতন্ত্রতা বজায় থাকলেও প্রতিটি প্রদেশে অস্ট্রিয়ার আধিপত্য বজায় থাকে। এছাড়াও , জার্মান প্রদেশগুলির ওপর বুন্ড রাষ্ট্রমন্ডলের কর্তৃত্ব বজায় ছিল। তাই বলা যেতে পারে  ভিয়েনা সম্মেলন পরোক্ষভাবে জার্মানির ঐক্য প্রতিষ্ঠার পথে ছিল প্রধান অন্তরায়। 

২. অস্ট্রিয়ার প্রাধান্য :- 
মেটারনিখ ঐক্যবদ্ধ জার্মানিকে অস্ট্রিয়া তথা সমগ্র ইউরোপের পক্ষে বিপজ্জনক বলে মনে করতেন। যেহেতু ভিয়েনা সম্মেলনের পর থেকে সমগ্র ইউরোপে অস্ট্রিয়ার প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয় , তাই মেটারনিকের দমনমূলক নীতিগুলি ছিল জার্মান ঐক্য প্রতিষ্ঠার পথে অপর একটি অন্তরায়। ঐক্যবদ্ধ জার্মানির আদর্শ মেটারনিকের কাছে ছিল একটি অপবিত্র আদর্শ [ An infamous object ] । 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৩. রাজনৈতিক অগ্রগতির অভাব :- 
যেহেতু বহুধাবিভক্ত জার্মান রাজ্যগুলির স্বতন্ত্রতা বজায় ছিল , সেহেতু প্রতিটি জার্মান প্রদেশ মনে করত যে তারা স্বাধীন। এছাড়াও তৎকালীন সময়ে জার্মানরা রাজনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে অর্থনীতি , কৃষি , শিল্প , বাণিজ্য - ইত্যাদি নিয়েই অধিক ব্যাস্ত ছিল। রাজনীতিবিদ ও জার্মান নেতারা জার্মানির ঐক্য প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে ভিয়েনা সম্মেলনের সমালোচনায় অধিক উৎসাহী ছিলেন। 

৪. আদর্শগত মতভেদ :- 
জার্মানির জাতীয়তাবাদী নেতাদের মধ্যে আদর্শগত দ্বন্দ্ব ছিল জার্মানির ঐক্য প্রতিষ্ঠার পথে একটি প্রধান বাধা। কেই কেউ স্টেইন হ্যাপসবার্গ রাজতন্ত্রের অধীনে জার্মান সাম্রাজ্য গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন ; আবার কেউ কেউ প্রাশিয়ার অধীনে জার্মানির ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। আবার কেউ কেউ গণতান্ত্রিক জার্মান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষপাতী ছিলেন। জার্মান নেতৃবর্গের এইরূপ আদর্শগত মতভেদ সম্পর্কে কার্ল মার্কস বলেছেন - Thus German unity was in itself a question big with disunion and discord. । 

৫. প্রাদেশিকতা ও বিচ্ছিন্নতাবাদ :- 
জার্মান রাষ্ট্রগুলির মধ্যে ভাষাগত ও জাতিগত কোনো ভেদাভেদ না থাকলেও তাদের মধ্যে আঞ্চলিকতা ও প্রাদেশিকতা প্রবলভাবে বজায় ছিল। বিশেষ করে ব্যাভেরিয়া , স্যাক্সনি - ইত্যাদি প্রদেশগুলির প্রবল আঞ্চলিকতাবাদ জার্মান ঐক্যের স্বপ্নকে প্রতিহত করে। তারা অখন্ড জার্মান রাষ্ট্রের তুলনায় নিজেদের স্বতন্ত্রতা বিষয়ে অধিক উৎসাহী ছিল। 

৬. ধর্মীয় মতভেদ :- 
সমগ্র জার্মান রাষ্ট্রগুলির উত্তরাংশে প্রোটেস্ট্যান্ট মতবাদ এবং দক্ষিণ অংশে ক্যাথলিক মতবাদ প্রচলিত ছিল। এই দুই মতাদর্শের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল প্রবল। তাই জার্মানির ঐক্য স্থাপনের পথে অন্তরায় হিসাবে ধর্মীয় মতভেদকে অস্বীকার করা যায়না। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৭. বৈদেশিক প্রভাব :- 
অস্ট্রিয়া ও প্রাশিয়া জার্মান রাষ্ট্রসংঘের অন্তৰ্ভুক্ত হলেও যেহেতু উভয় প্রদেশে জার্মান ছাড়াও আরো বহু জাতিগোষ্ঠীর অস্তিত্ব বজায় ছিল - তাই অস্ট্রিয়া ও প্রাশিয়া একটি জার্মান জাতিভিত্তিক রাষ্ট্রের অংশীদার হতে অসম্মত হয়। এছাড়া ফেডারেল ডায়েট - এ অ-জার্মান প্রাধান্য ছিল প্রবল। এছাড়াও জার্মান রাষ্ট্রসংঘের অন্তর্গত হলস্টেইন প্রদেশে ডেনমার্কের প্রভুত্ব বজায় ছিল। এইসকল বৈদেশিক বিষয়গুলি জার্মান ঐক্যের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। 

৮. ডায়েটের দুর্বলতা :- 
জার্মানির বিভিন্ন প্রদেশগুলির মধ্যে পারস্পরিক ঈর্ষা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে ডায়েটের পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা সম্ভব ছিল না। এই তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে কোনো সিদ্ধান্তেই ডায়েট একটি সার্বিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারত না। ফলে ডায়েটের এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে মেটারনিখ সমগ্র জার্মান রাষ্ট্র জুড়ে নিজ আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত করেন। 

৯. উদারনৈতিক আন্দোলনগুলির ব্যর্থতা :- 
জার্মানিতে কিছু উদারনৈতিক ও প্রগতিশীল আন্দোলন শুরু হলেও জার্মানির ঐক্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সেগুলি যথেষ্ট ছিল না। গেটে , শিলার প্রমুখ দার্শনিকগণ জার্মান জাতীয়তাবাদকে উজ্জীবিত করেন। এছাড়া ফরাসি বিপ্লবের আদর্শগত প্রভাব জার্মান জাতীয়তাবাদীদের বিশেষভাবে উৎসাহিত করে। কিন্তু জাতীয়তাবাদীদের মধ্যেও পারস্পরিক দ্বন্দ্ব বজায় ছিল। কেউ কেউ রাজতন্ত্রের অধীনেই গণতান্ত্রিক আদর্শগুলি প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন ; আবার কেউ কেউ সমগ্র জার্মানির রাষ্ট্রীয় ঐক্যের কথা বলেন। 

১০. কার্লসবাড ডিক্রি :- 
জার্মানিতে ফরাসি বিপ্লব হতে উদ্ভুত সকল প্রকার প্রগতিশীল ও উদারনৈতিক চিন্তাধারার প্রসার রোধ করতে মেটারনিখ বদ্ধপরিকর ছিলেন। কেননা , মেটারনিখ ভালোভাবেই জানতেন জার্মানিতে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হলে অস্ট্রিয়ার প্রাধান্য বিনষ্ট হবে। তাই মেটারনিখ বহু প্রতিক্রিয়াশীল নীতি প্রবর্তন করেন - যার মধ্যে কার্লসবাড ডিক্রি হল অন্যতম। এই নির্দেশিকার মাধ্যমে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উদারনৈতিক ভাবধারার কণ্ঠরোধ করা হয়। সংবাদপত্রের স্বাধীনতাও কেড়ে নেওয়া হয়।  

১১. ফ্র্যাঙ্কফুর্ট পার্লামেন্টের ব্যর্থতা :- 
জার্মানির ঐক্য সাধনের উদ্দেশ্য নিয়ে ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে ৫৮৬ জন জার্মান প্রতিনিধিকে নিয়ে ফ্র্যাঙ্কফুর্ট পার্লামেন্ট গঠিত হয়। এর পরের বছর ফ্র্যাঙ্কফুর্ট পার্লামেন্টের সিদ্ধান্ত অনুসারে প্রাশিয়ার রাজা চতুর্থ ফ্রেডরিখ উইলিয়ামকে জার্মানির শাসন ক্ষমতা গ্রহণ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু ফ্রেডরিখ উইলিয়াম তা প্রত্যাখ্যান করেন। প্রকৃতপক্ষে ফ্র্যাঙ্কফুর্ট পার্লামেন্টে জনসাধারণের ইচ্ছা প্রতিফলিত হয়নি। কেননা এতে কৃষক , শ্রমিক - ইত্যাদি শ্রেণীর কোনো প্রতিনিধি ছিল না এবং বিভিন্ন রাজ্যের প্রতিনিধিদের মধ্যে মতবিরোধ ছিল।     

সুতরাং অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উভয় প্রকার  অন্তরায়গুলি অখন্ড জার্মান রাষ্ট্রের আদর্শকে দৃঢ়ভাবে প্রতিহত করেছিল। এর ফলে ব্যাহত হয় সর্ব-জার্মানবাদ। তবে ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের পর পরিস্থিতির পরিবর্তন হয় এবং জার্মানির ভাগ্যাকাশে বিসমার্কের উত্থান ঘটে। বিসমার্কের নেতৃত্বে মাত্র তিনটি যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে ( ডেনমার্কের বিরুদ্ধে যুদ্ধ , অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ও ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ) জার্মানি ঐক্যবদ্ধ হয়।   

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো 
Share
Tweet
Pin
Share
No comments

ইতালির ঐক্য আন্দোলনের পথে প্রধান বাধাগুলি কী ছিল ? 

ইটালির ঐক্য আন্দোলনের সমস্যাগুলি কী ছিল ? 




ইটালির ঐক্য আন্দোলনের পথে প্রধান বাধাসমূহ :- 


ইতালির ইতিহাস অত্যন্ত ঘটনাবহুল। নেপোলিয়ন ইতালি জয় করেন এবং ঐক্যবদ্ধ ইতালি ও শক্তিশালী কেন্দ্রীভূত শাসন ব্যবস্থা প্রচলন করেন। কিন্তু , ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে ভিয়েনা সম্মেলনের মাধ্যমে ন্যায্য অধিকার নীতি প্রয়োগ করা হয় এবং ইতালিকে বহুখন্ডে বিভক্ত করা হয়। ফলে ফরাসি বিপ্লবের হাত ধরে ইতালিতে যে প্রগতিশীল ভাবধারা ও জাতীয়তাবাদী চেতনার প্রসার ঘটেছিল তা স্তিমিত হয়ে পড়ে। এরপর ম্যাৎসিনি ইতালিতে পুনরায় জাতীয়তাবাদী চেতনার জাগরণ ঘটান এবং ক্যাভুর ইতালির ঐক্য সম্পূর্ণ করেন। ইতালির ঐক্য স্থাপনের  পথে প্রধান বাধাগুলি ছিল - 

১. অস্ট্রিয়ার আধিপত্য :- 
১৮১৫ সালে ভিয়েনা সম্মেলনের মধ্যে দিয়ে সমগ্র ইউরোপ জুড়ে মেটারনিকের একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। মেটারনিখ ছিলেন প্রগতিশীল ভাবধারা , গণতন্ত্র , উদারনীতি - ইত্যাদির প্রবল বিরোধী। তিনি সমগ্র ইউরোপ জুড়ে পুরাতনতন্ত্র ও রক্ষনশীলতা বজায় রাখতে চেয়েছিলেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি সমগ্র ইউরোপ জুড়ে একাধিক দমনমূলক নীতি প্রয়োগ করেন। অস্ট্রিয়ার এই দমনমূলক নীতি ইতালির জাতীয়তাবাদী চেতনা , অখন্ড রাষ্ট্র স্থাপনের স্বপ্ন - ইত্যাদিকে প্রবলভাবে নস্যাৎ করে দেয়। 

২. উগ্র প্রাদেশিকতা :- 
ভিয়েনা সম্মেলন ও মেটার্নিকের তীব্র করাঘাতে ইতালি বহু খন্ডে বিভক্ত হয়ে পড়ে। বহুধাবিভক্ত ইতালির বিভিন্ন প্রদেশগুলির মধ্যে আঞ্চলিক বিভিন্নতা ছিল। প্রাথমিক পর্যায়ে এই প্রদেশগুলি নিজ নিজ আঞ্চলিক স্বার্থ সুরক্ষা করতেই অধিক প্রয়াসী ছিল। প্রদেশগুলির এই উগ্র প্রাদেশিকতা ইতালির ঐক্য আন্দোলনের পথে ছিল একটি প্রধান অন্তরায়। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৩. ধর্ম সংক্রান্ত বিষয় :- 
ভিয়েনা সম্মেলনের মাধ্যমে পোপ তাঁর হৃত ক্ষমতা ফিরে পেলেও আধুনিক ও প্রগতিশীল ভাবধারার প্রতি পোপ শ্রদ্ধাশীল ছিলেন না। যেহেতু পোপের রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ধর্মীয় অধিকারের ভিত্তিতে ; তাই এই ধর্মীয় ভিত্তি ইতালির ঐক্যের পথে একটি অন্তরায় ছিল। পোপ আধুনিক ভাবধারাগুলিকে গ্রহণ না করলেও নিজ ক্ষমতা বজায় রাখতে পুরাতনতন্ত্র বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর ছিলেন। 

৪. বৈদেশিক শাসন :- 
ভিয়েনা সম্মেলনের পরবর্তীকালে ইটালির সার্ডিনিয়া - পিডমন্ট ব্যতীত অন্যান্য সকল প্রদেশে বৈদেশিক শক্তির শাসন প্রতিষ্ঠিত ছিল। এমনকি , সার্ডিনিয়া - পিডমন্টের রাজা ভিক্টর ইম্যানুয়েল ছিলেন রাজতন্ত্র ও পুরাতনতন্ত্রের সমর্থক। অন্যদিকে মোডেনার শাসনকর্তা ফরাসি বিপ্লব প্রসূত উদারনৈতিক আদর্শগুলোকে প্রতিহত করতে সক্রিয় ছিলেন। এই পরিস্থিতিতে ঐক্যবদ্ধ ইতালির আত্মপ্রকাশ কোনোভাবেই সম্ভব ছিলনা। 

৫. মেটারনিকের তীব্র দমননীতি :- 
মেটারনিখ তাঁর তীব্র দমনমূলক নীতির মাধ্যমে সমগ্র ইউরোপে ফরাসি বিপ্লব প্রসূত উদারনৈতিক ভাবধারাগুলিকে প্রতিহত করতে চেয়েছিলেন। তাই যখনই কোনো উদারনৈতিক ভাবধারা বা জাতীয়তাবাদের প্রসার ঘটত , মেটারনিখ তাঁর তীব্র দমননীতির মাধ্যমে তা প্রতিহত করতেন।   

৬. নেতৃত্বের অভাব :- 
বহু সমস্যায় জর্জরিত ইতালির ঐক্য সাধনের জন্য প্রয়োজন ছিল দক্ষ ও সুযোগ্য নেতৃত্বের। কিন্তু ম্যাৎসিনির আবির্ভাবের পূর্বকাল পর্যন্ত ইতালির ঐক্যসাধনের জন্য কোনো উল্লেখযোগ্য নেতৃত্বের আবির্ভাব ঘটেনি - যা ছিল ইতালির ঐক্য সাধনের পথে একটি প্রধান অন্তরায়।

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৭. আদর্শগত দ্বন্দ্ব :- 
আদর্শগত দ্বন্দ্বও ছিল ইতালির ঐক্য সাধনের পথে একটি বড় বাধা। একদিকে , ম্যাৎসিনি ছিলেন রাজতন্ত্র বিরোধী এবং প্রজাতন্ত্র ও উদারনৈতিক ভাবধারার সমর্থক। অন্যদিকে ক্যাভুর ছিলেন প্রজাতন্ত্রের ঘোর বিরোধী এবং রাজতন্ত্রের সমর্থক। আবার গ্যারিবল্ডি প্রজাতন্ত্রের সমর্থক হলেও সক্রিয় অভ্যুত্থানে বিশ্বাস করতেন। এছাড়া , বৈদেশিক সাহায্য গ্রহণের ব্যাপারেও ম্যাৎসিনি ও ক্যাভুরের মধ্যে মতাদর্শগত বিরোধ দেখা যায়। 

৮. জনসমর্থনের অভাব :- 
প্রজাতন্ত্রের আদর্শ ও জাতীয়তাবাদী ভাবধারা কেবলমাত্র শিক্ষিত , মধ্যবিত্ত ও শহুরে বুর্জোয়াদের মধ্যেই প্রসারিত হয়েছিল। গ্রামীণ ইতালি , কৃষক ও অন্যান্য শ্রেণীর মানুষেরা জাতীয়তাবাদী আদর্শগুলি সম্পর্কে উদাসীন ছিলেন। তাই জনসমর্থনের অভাব ছিল ইতালির ঐক্য স্থাপনের পথে একটি অন্তরায়। 

৯. অস্ট্রিয়ার সামরিক ক্ষমতা :- 
অস্ট্রিয়া ছিল সামরিক ক্ষমতার দিক দিয়ে ইটালির তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী। তাই ইতালির পক্ষে কোনভাবেই অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে গিয়ে জাতীয়তাবাদের প্রসার ঘটানো সম্ভব হয়নি। এছাড়া মেটারনিখ তন্ত্রের সফলতার যুগে মেটারনিখ প্রায় সমগ্র ইউরোপীয় সামরিক শক্তিকেই অস্ট্রিয়ার স্বার্থে ব্যবহার করেছিলেন। 

১০. জুলাই বিপ্লবের ব্যর্থতা :- 
জুলাই বিপ্লবের সূচনা সমগ্র ইউরোপের জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ও উদারপন্থী ভাবধারা প্রসারের ক্ষেত্রে ব্যাপক আশার সঞ্চার করেছিল। কিন্তু জুলাই বিপ্লবের পর প্রজাতন্ত্রের অসারতা মানুষ উপলব্ধি করে। সমগ্র শাসনতন্ত্রকে  বুর্জোয়ারা নিজ স্বার্থে ব্যবহার করে ; ফলে সাধারণ মানুষের স্বার্থ উপেক্ষিত হয়। তাই জুলাই বিপ্লবের ব্যর্থতা জাতীয়তাবাদীদের হতাশ করে। 

পরিশেষে বলা যায় , জুলাই বিপ্লবের ব্যর্থতা জাতীয়তাবাদীদের হতাশ করলেও ফ্রেব্রুয়ারি বিপ্লবের পরবর্তী সময়কাল ইতালির ঐক্য স্থাপনের পক্ষে সহায়ক হয় এবং ম্যাৎসিনি ও ক্যাভুরের সুযোগ্য নেতৃত্বে ইতালির ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়।     

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো  
Share
Tweet
Pin
Share
No comments

জার্মানির ঐক্য আন্দোলনে বিসমার্কের ভূমিকা। 




জার্মানির ঐক্য আন্দোলনে বিসমার্কের ভূমিকা। 

অটো ভন বিসমার্ক ছিলেন ঐক্যবদ্ধ জার্মানি প্রতিষ্ঠার মূল কান্ডারি। সুদীর্ঘ আট বছর প্রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী এবং দীর্ঘ প্রায় কুড়ি বছর জার্মানির প্রধানমন্ত্রী থাকার সময়কালে তিনি জার্মানির ঐক্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করেন। ইতিপূর্বে উদারনৈতিক পথে জার্মানির ঐক্য সাধনের প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল ; কিন্তু তা সফল হয়নি। তাই উদারনৈতিক আন্দোলনের পরিবর্তে বিসমার্ক কঠোর '' রক্ত ও লৌহ '' নীতি গ্রহণ করেন। তারপর ডেনমার্কের সঙ্গে যুদ্ধ , অস্ট্রিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ , ফ্রান্সের সঙ্গে যুদ্ধ - ইত্যাদি বিভিন্ন যুদ্ধের মাধ্যমে বিসমার্ক জার্মানিকে ঐক্যবদ্ধ করেন। 

১. বিসমার্কের আদর্শগত অবস্থান :- 
আদর্শগত দিক দিয়ে বিসমার্ক কঠোর অবস্থানের পক্ষপাতী ছিলেন। তিনি ছিলেন রাজতন্ত্রের সমর্থক। তাই তিনি চেয়েছিলেন প্রাশিয়ার রাজশক্তির অধীনে জার্মানিকে ঐক্যবদ্ধ করতে। এছাড়া তৎকালীন জার্মানির রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে গণতন্ত্রের পরিবর্তে স্বৈরতন্ত্রকেই তিনি শ্রেয় বলে মনে করেছিলেন। তাই জার্মানির ঐক্য দৃঢ় ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত করতে তিনি রক্ত ও লৌহ নীতি গ্রহণ করেন। 

২. ডেনমার্কের সঙ্গে যুদ্ধ :- 
১৮৬৩  সালে স্লেজভিগ ও হলস্টিন প্রদেশে এক রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়। বিসমার্ক এই সমস্যাকে জার্মানির ঐক্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন। কেননা , হলস্টিনের অধিবাসীরা ছিল অধিকাংশ জার্মান। আবার অন্যদিকে জার্মানরা মনে করতেন স্লেজভিগ ছিল হলস্টিনের অন্তর্গত। বিসমার্ক স্লেজভিগ ও হলস্টিন উভয় প্রদেশকেই জার্মানির অন্তর্ভুক্ত করার দাবী জানান। এরপর প্রাশিয়া ও অস্ট্রিয়ার যৌথবাহিনী ডেনমার্ককে পরাজিত করে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৩. গ্যাস্টিনের সন্ধি ১৮৬৫:- 
ডেনমার্ক যুদ্ধে পরাজিত হলেও স্লেজভিগ ও হলস্টিন প্রদেশের অধিকার নিয়ে প্রাশিয়া ও অস্ট্রিয়ার মধ্যে বিরোধ তৈরী হয়। এরপর ১৮৬৫ সালে অস্ট্রিয়া ও প্রাশিয়ার মধ্যে গ্যাস্টিনের সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়। এই সন্ধি দ্বারা স্লেজভিগ প্রাশিয়ার অধিকারে এবং হলস্টিন অস্ট্রিয়ার অন্তর্গত হয়। এছাড়া , অর্থের বিনিময়ে অস্ট্রিয়া হলস্টিনের অন্তর্গত লাউয়েনবার্গ অঞ্চল প্রাশিয়াকে ছেড়ে দেয়। কূটনৈতিক দিক দিয়ে গ্যাস্টিনের সন্ধি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা , এই সন্ধির আবহেই বিসমার্ক অস্ট্রিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু করেন। 

৪. অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি :- 
গ্যাস্টিনের সন্ধিকে বিসমার্ক মনে করতেন - to paper over the cracks অর্থাৎ কাগজ দ্বারা ফাটল বন্ধ করা। গ্যাস্টিনের সন্ধির আবহে বিসমার্ক উপলব্ধি করেন জার্মানির ঐক্য সাধনে অস্ট্রিয়ার সঙ্গে ভবিষ্যতে যুদ্ধ অনিবার্য। তাই কূটনৈতিকভাবে প্রাশিয়াকে শক্তিশালী করে তোলার জন্য তিনি বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। যেমন - 
(ক ) ফরাসি সম্রাট তৃতীয় নেপোলিয়নকে বেলজিয়াম বা রাইন অঞ্চল প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফ্রান্সের সমর্থন লাভ করেন। 
(খ ) ইতালিকে ভেনেসিয়া প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ইতালিকে নিজ পক্ষে টেনে আনেন। 
(গ ) পোল্যান্ডের বিদ্রোহ দমন করতে রাশিয়াকে সাহায্য করে তিনি রাশিয়ার সমর্থন লাভ করেন। 

৫. স্যাডোয়ার যুদ্ধ :-
এরপর বিসমার্ক জার্মান রাষ্ট্র-সংঘ থেকে নিজেদের প্রতিনিধি প্রত্যাহার করে অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। প্রাশিয়া ফ্রান্স , ইতালি ও রাশিয়ার সমর্থনলাভ করে এবং ব্যাভেরিয়া , স্যাক্সনি ও অন্যান্য ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগুলি অস্ট্রিয়াকে সমর্থন জানায়। তবে প্রাশিয়ার সম্মিলিত সামরিক শক্তি ছিল অস্ট্রিয়ার তুলনায় অধিক শক্তিশালী। এরপর ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে স্যাডোয়ার যুদ্ধে মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে অস্ট্রিয়া পরাজিত হয়। স্যাডোয়ার যুদ্ধের মূল গুরুত্ব ছিল এই যে স্যাডোয়ার যুদ্ধের ফলে সমগ্র জার্মান সাম্রাজ্য প্রাশিয়ার অধীনস্থ হয়। 

৬. প্রাগের সন্ধি :- 
অবশেষে প্রাগের সন্ধি দ্বারা স্যাডোয়ার যুদ্ধের অবসান হয়। প্রাগের সন্ধির শর্তগুলি ছিল - 
(ক ) প্রাশিয়ার নেতৃত্বে উত্তর-জার্মান ইউনিয়ন গঠিত হবে। 
(খ ) মেইন নদীর দক্ষিণের রাষ্ট্রগুলি নিজেদের রাষ্ট্রসঙ্ঘ গঠন করবে। 
(গ ) জার্মান রাষ্ট্রসঙ্ঘ থেকে প্রাশিয়া নিজেকে সরিয়ে নেয়। 
(ঘ ) ইতালি ভেনেসিয়া অঞ্চল লাভ করে। 
(ঙ ) যুদ্ধের জন্য অস্ট্রিয়া প্রাশিয়াকে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকবে। 
(চ ) উত্তর জার্মানির হ্যানোভার , ফ্রাঙ্কফুর্ট , ন্যাসো - ইত্যাদি অঞ্চলগুলি প্রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত হবে। 
(ছ ) স্লেজভিগ ও হলস্টিন উভয় প্রদেশই প্রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত হবে। 

৭. ফ্রান্সের সঙ্গে যুদ্ধ :- 
গ্যাস্টিনের সন্ধি ও প্রাগের সন্ধি দ্বারা উত্তর জার্মানি ঐক্যবদ্ধ হলেও দক্ষিণ জার্মানিতে ফ্রান্সের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত ছিল। অতঃপর বিসমার্ক ফ্রান্সের সঙ্গে যুদ্ধের গুরুত্ব উপলব্ধি করেন। প্রাশিয়াতে শাসন ক্ষমতা ছিল হোহেনজোলার্ন রাজবংশের হাতে। ফ্রান্স মনে করত হোহেনজোলার্ন রাজবংশের অধীনে প্রাশিয়া ও স্পেন - উভয়ের ক্ষমতা এলে তা হবে ফ্রান্সের রাজনৈতিক স্বার্থের পরিপন্থী। তাই ফ্রান্স কখনোই চায়নি যে স্পেনের সিংহাসনে হোহেনজোলার্ন রাজবংশের প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠিত হোক। এই উদ্দেশ্যে ফ্রান্স প্রাশিয়ার বিরোধিতা করতে থাকে এবং প্রাশিয়া ও ফ্রান্সের যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে ওঠে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৮. বিসমার্কের ষড়যন্ত্র :- 
এই পরিস্থিতে বিসমার্ক প্রবল কূটনৈতিক দক্ষতার পরিচয় দেন। তিনি প্রাশিয়ার অর্থ ও নিজ প্রভাব খাটিয়ে স্পেনের রানী ইসাবেলাকে সিংহাসন ত্যাগ করতে বাধ্য করেন। স্পেনের পার্লামেন্টকে বিসমার্ক নিজ করায়ত্ত করেন এবং স্পেনের পার্লামেন্ট হোহেনজোলার্ন বংশের যুবরাজ লিওপোল্ডকে স্পেনের সিংহাসনে আরোহণের প্রস্তাব দেয়। এই ঘটনায় ফ্রান্সে প্রবল চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। 

৯. এমস টেলিগ্রাম :- 
এই পরিস্থিতিতে ফ্রান্স অস্ট্রিয়ার স্মরণাপন্ন হয় এবং অস্ট্রিয়ার সম্রাট তৃতীয় নেপোলিয়নের আদেশে কাউন্ট বেনেদিতি নামক এক দূতকে প্রাশিয়ার সম্রাট প্রথম উইলিয়ামের নিকট প্রেরণ করেন। প্রথম উইলিয়াম এইসময় এমস শহরে বিশ্রামরত অবস্থায় ছিলেন। কাউন্ট বেনেদিতি প্রাশিয়ার সম্রাট প্রথম উইলিয়ামের নিকট মুচলেখা দাবী করেন যে স্পেনের সিংহাসনে প্রাশিয়ার উত্তরাধিকার প্রতিষ্টিত হবেনা। কিন্তু প্রথম উইলিয়াম প্রস্তাবে সম্মত হলেও মুচলেখা দিতে অস্বীকার করেন। কাউন্ট বেনেদিতি এই ঘটনা টেলিগ্রামের মাধ্যমে বিসমার্ককে জানান। 

১০. সেডানের যুদ্ধ :- 
সুচতুর বিসমার্ক সেই টেলিগ্রামের কিছু অংশ পরিবর্তন করে তা সংবাদপত্রে প্রকাশ করেন। টেলিগ্রামের অর্থ সম্পূর্ণ পাল্টে গিয়ে তার অর্থ হয় যে - প্রাশিয়ার সম্রাট প্রথম উইলিয়াম ফরাসি রাষ্ট্রদূতকে অপমানিত করে তাড়িয়ে দিয়েছেন। এই ঘটনা ফ্রান্সে প্রবল প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে এবং ফ্রান্স প্রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। সামরিক শক্তির দিক দিয়ে প্রাশিয়া ও ফ্রান্সের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য ছিল। কেননা , ইতিপূর্বে বিসমার্ক কূটনীতির মাধ্যমে ইউরোপে ফ্রান্সকে মিত্রহীন করে তুলেছিলেন। এছাড়া , ব্যাভেরিয়া ও অন্যান্য দক্ষিণের রাজ্যগুলি ফ্রান্সকে ছেড়ে প্রাশিয়ার পক্ষে যোগদান করে। ফলে যুদ্ধে ফ্রান্সের পরাজয় ছিল অবশ্যম্ভাবী। 

১১. ফ্র্যাঙ্কফুর্টের সন্ধি ১৮৭১ :- 
অবশেষে ফ্র্যাঙ্কফুর্টের সন্ধি দ্বারা সেডানের যুদ্ধের অবসান ঘটে। ফ্র্যাঙ্কফুর্টের সন্ধিতে স্থির হয় - 
(ক ) ফ্রান্স জার্মানিকে মেটজ (Metz), আলসেস ও নোরেন ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। 
(খ ) যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ হিসাবে ৫০০ কোটি ফ্রাঁ প্রাশিয়াকে দিতে বাধ্য হয়। 
(গ ) ক্ষতিপূরণের অর্থ শোধ না হওয়া পর্যন্ত জার্মান সেনাবাহিনী ফ্রান্সের বিভিন্ন অংশে মোতায়েন থাকবে বলে স্থির হয়। 

১২. সম্পূর্ণ ঐক্যবদ্ধ রাষ্ট্র হিসাবে জার্মানির আত্মপ্রকাশ :- 
বিসমার্কের অসাধারণ বিচক্ষণতা ও কূটনৈতিক দক্ষতায় মাত্র তিনটি যুদ্ধের মাধ্যমে সমগ্র জার্মানির ঐক্য সাধন করেন। ডেনমার্কের সঙ্গে যুদ্ধের পর গ্যাস্টিনের সন্ধি দ্বারা স্লেজভিগ অঞ্চল প্রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত হয় ; অস্ট্রিয়ার সঙ্গে স্যাডোয়ার যুদ্ধের পর প্রাগের সন্ধি দ্বারা উত্তর জার্মানি ঐক্যবদ্ধ হয় ; ফ্রান্সের সঙ্গে সেডানের যুদ্ধের পর ফ্র্যাঙ্কফুর্টের সন্ধি দ্বারা সমগ্র দক্ষিণ জার্মানি ঐক্যবদ্ধ হয় এবং প্রাশিয়ার সম্রাট প্রথম উইলিয়ামকে জার্মানির চ্যান্সেলর হিসাবে ঘোষণা করা হয়।   

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো   
Share
Tweet
Pin
Share
No comments

ইতালির ঐক্য আন্দোলনে কাউন্ট ক্যাভুরের ভূমিকা। 



ইতালির ঐক্য আন্দোলনে কাউন্ট ক্যাভুরের ভূমিকা। 


কাউন্ট ক্যাভুর ছিলেন ইতালির ঐক্য আন্দোলনের একজন বাস্তববাদী নেতৃত্ব। ইতিপূর্বে ম্যাৎসিনি যে প্রজাতন্ত্রিক আদর্শের বীজ বপন করেছিলেন , ক্যাভুর সম্পূর্ণ ভিন্নপথে গিয়ে নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্রের সমর্থক ছিলেন। ক্যাভুর বিশ্বাস করতেন বৈদেশিক সাহায্য ছাড়া ইতালি অস্ট্রিয়ার পরাধীনতা থেকে মুক্তি পাওয়া কোনোভাবেই ইতালির পক্ষে সম্ভব নয়। ম্যাৎসিনি ইতালিবাসীকে জাতীয়তাবাদে দীক্ষিত করেছিলেন ঠিকই ; কিন্তু ইতালির ঐক্য বাস্তবে সম্পন্ন করেছিলেন ক্যাভুর। তাই ঐতিহাসিক ফিলিপস বলেছেন - Cavour was the maker of modern Italy.   । 

১. ক্যাভুরের মতাদর্শ ও নীতি :- 
ক্যাভুর ম্যাৎসিনির প্রজাতান্ত্রিক আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন না। তিনি ছিলেন নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্রের সমর্থক। ক্যাভুর মনে করতেন ইতালিতে প্রজাতান্ত্রিক ভাবাদর্শের বিকাশ ঘটলে ইতালির রাজতান্ত্রিক ঐক্য ব্যাহত হবে এবং ইতালির ঐক্যের স্বপ্ন চরিতার্থ হবেনা। তাই ক্যাভুর পিডমন্ট রাজবংশের অধীনে ইতালিকে ঐক্যবদ্ধ করার কর্মসূচি গ্রহণ করেন। 
এছাড়া , অস্ট্রিয়ার পরাধীনতা থেকে মুক্তি পেতে তিনি বৈদেশিক শক্তির সাহায্য গ্রহণের পক্ষপাতী ছিলেন। কেননা , তৎকালীন সময়ের বাস্তবতা ছিল এই যে - ইতালি সামরিক শক্তির দিক দিয়ে কোনোভাবেই অস্ট্রিয়ার সমকক্ষ ছিল না। ক্যাভুরের এই মতাদর্শ স্পষ্টরূপে প্রমাণ করে যে তিনি ছিলেন Real Politik বা বাস্তববাদী রাজনীতিতে বিশ্বাসী।     

২. কর্মপন্থা :- 
ইতালির ঐক্য আন্দোলনের ক্ষেত্রে ক্যাভুরের ভূমিকার ইতিহাস আলোচনা করলে কর্মপন্থার দিক দিয়ে মূলতঃ পাঁচটি নীতির সমাবেশ চোখে পড়ে। এই পাঁচটি কর্মপন্থা হল - 
(i) পিডমন্টের রাজশক্তির অধীনে ইতালির ঐক্য সাধন করা। 
(ii) শাসনতান্ত্রিক ও অর্থনৈতিক সংস্কার। 
(iii) ইতালির সমস্যাকে আন্তর্জাতিক দরবারে উপস্থাপন করে আন্তর্জাতিক সহায়তা লাভ করা। 
(iv) অস্ট্রিয়ার পরাধীনতা থেকে মুক্তিলাভ করে নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা। 
(v) আইনের সাম্য প্রতিষ্ঠা করে একটি আদর্শ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৩. ক্রিমিয়ার যুদ্ধ ও ফ্রান্স এবং ইংল্যান্ডের সমর্থন লাভ :- 
ক্রিমিয়ার যুদ্ধ চলাকালীন তিনি পিডমন্টের সেনাবাহিনীকে ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের পক্ষে নিয়োজিত করেন। এর পেছনে ক্যাভুরের মূল উদ্দেশ্য ছিল ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের মত উদারনৈতিক রাষ্ট্রগুলির সহায়তালাভ।    ক্রিমিয়ার যুদ্ধের পর ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে প্যারিসের শান্তি সম্মেলনে ইতালির সমস্যাকে যথার্থভাবে তুলে ধরতে ক্যাভুর সক্ষম হন। ইতালির সমস্যার যথাযথ সমাধান না হলে তা ইউরোপীয় ঐক্যের পক্ষেও বিপজ্জনক হয়ে উঠবে - একথা তিনি ইউরোপীয় উদারনৈতিক শক্তিগুলিকে মেনে নিতে বাধ্য করেন। 

৪. প্লোমবিয়ার - এর চুক্তি ১৮৫৮ :- 
ফরাসি সম্রাট তৃতীয় নেপোলিয়ন প্রজাতন্ত্রের  প্রতি বিদ্বেষভাবাপন্ন ছিলেন কেননা তিনি নিজে ফ্রান্সে প্রজাতন্ত্র ধ্বংস করেছিলেন ; তাই তিনি ক্যাভুরের রাজতান্ত্রিক আদর্শের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। এছাড়াও তৃতীয় বৈদেশিক নীতির প্রধান লক্ষ্য ছিল ইউরোপে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনগুলিকে সহায়তা করে ভিয়েনা চুক্তি সম্পূর্ণভাবে ভেঙে ফেলা। অন্যদিকে ক্যাভুর ফরাসি সম্রাট তৃতীয় নোপোলিয়নের সাহায্যলাভের প্রত্যাশী ছিলেন। ফলে ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে তৃতীয় নেপোলিয়ন ও ক্যাভুরের মধ্যে প্লোমবিয়ার - এর চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এতে স্থির হয় - 
(i) পিডমন্ট অস্ট্রিয়া কর্তৃক আক্রান্ত হলে তৃতীয় নেপোলিয়ন সামরিক সাহায্য প্রদান করবেন। 
(ii) লোম্বার্ডি , ভেনেসিয়া ও পোপের রাজ্যের কিছু অংশ পিডমন্টের সঙ্গে যুক্ত করা হবে। 
(iii) স্যাভয় ও নিস নেপোলিয়নকে প্রদান করা হবে। 
(iv) নেপলস ও সিসিলিতে বুরবোঁ রাজতন্ত্র বহাল থাকবে। 
(v) টাস্কানি ও পোপের রাজ্যের বড় অংশ নিয়ে মধ্য ইতালি গঠন করা হবে। 

৫. অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ :- 
ফরাসি সম্রাট তৃতীয় নেপোলিয়নের সঙ্গে প্লোমবিয়ার - এর চুক্তির পর ক্যাভুর অস্ট্রিয়া অধিকৃত লোম্বার্ডি ও ভেনেসিয়া অঞ্চলে অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন। অস্ট্রিয়া ক্ষিপ্ত হয়ে ক্যাভুরকে চরমপত্র পাঠালে ক্যাভুর তা অগ্রাহ্য করেন। এরপর অস্ট্রিয়া পিডমন্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলে প্লোমবিয়ার - এর চুক্তি অনুসারে তৃতীয় নেপোলিয়ন ফরাসি বাহিনীকে পিডমন্টের পক্ষে নিয়োজিত করেন। ম্যাজেন্টা ও সলফেরিনোর যুদ্ধে অস্ট্রিয়া পরাজিত হয় এবং ফরাসি বাহিনী লোম্বার্ডি দখল করে। ফলে সমগ্র ইতালি জুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। 

৬. ভিল্লাফ্রাঙ্কার সন্ধি :- 
ম্যাজেন্টা ও সলফেরিনোর যুদ্ধে অস্ট্রিয়া পরাজিত হলেও ফরাসি সম্রাট তৃতীয় নেপোলিয়ন হঠাৎ অস্ট্রিয়ার সঙ্গে ভিল্লাফ্রাঙ্কার সন্ধি সাক্ষর করেন। এই সন্ধির দ্বারা ফ্রান্স অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ বন্ধের কথা ঘোষণা করে। ইতালিকে অস্ট্রিয়ার হাত থেকে মুক্ত করার আশা স্তিমিত হয়ে পড়ে। ভিল্লাফ্রাঙ্কার সন্ধির শর্তগুলি ছিল - 
(i) ফ্রান্স অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করবে না। 
(ii) লোম্বার্ডি পিডমন্টের সঙ্গে যুক্ত হবে। 
(iii) ভেনেসিয়া অস্ট্রিয়ার অধীনেই থাকবে। 
(iv) ইতালিতে স্থিতাবস্থা বজায় থাকবে। 
ভিল্লাফ্রাঙ্কার সন্ধি ছিল ইতালীয় জাতীয়তাবাদের প্রতি তৃতীয় নেপোলিয়নের বিশ্বাস ঘাতকতা। কিন্তু পিডমন্টের সম্রাট বাস্তবতা বিচার করে ভিল্লাফ্রাঙ্কার সন্ধির শর্তগুলি মেনে নেন। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৭. মধ্য ইতালির সংযুক্তি :- 
ইতিমধ্যে মধ্য ইতালির অন্তর্গত টাস্কানি , মেডোনা - ইত্যাদি অঞ্চলগুলিতে অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে গণ আন্দোলন শুরু হয়। তবে এই আন্দোলন ছিল ম্যাৎসিনির প্রজাতান্ত্রিক ভাবাদর্শের দ্বারা প্রভাবিত। এই সকল অঞ্চলের মানুষ পিডমন্টের সঙ্গে সংযুক্তির দাবী জানায়। ক্যাভুরের নিয়মতান্ত্রিক আদর্শের পরিপন্থী হলেও ক্যাভুর এই সুযোগকে কাজে লাগাতে চেয়েছিলেন। তিনি স্যাভয় ও নিস ফ্রান্সকে ছেড়ে দিয়ে মধ্য ইতালির অবশিষ্ট রাজ্যগুলিকে পিডমন্টের সঙ্গে যুক্তকরণের ক্ষেত্রে তৃতীয় নোপোলিয়নের সমর্থন আদায় করেন। এরপর গণভোট দ্বারা মধ্য ইতালির রাজ্যগুলি পিডমন্টের সঙ্গে যুক্ত হয়। 

৮. গ্যারিবল্ডি ও প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা :- 
দক্ষিণ ইতালিতে বুরবোঁ অপশাসনের বিরুদ্ধে কৃষক আন্দোলন শুরু হলে ইটালির জাতীয়তাবাদী নেতা গ্যারিবল্ডি ১০৯০ জনের এক গেরিলা বাহিনীর সাহায্যে সিসিলি থেকে বুরবোঁ সেনাদের বিতাড়িত করেন। কৃষকেরা তাঁকে মুক্তিদাতা বলে মনে করে। এরপর নেপলসে একই ঘটনার পুনরাবর্তন ঘটে এবং নেপলস থেকেও বুরবোঁ সেনাদল বিতাড়িত হয়। এরপর ইতালিতে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গ্যারিবল্ডি রোম অভিযানের পরিকল্পনা করেন। 
গ্যারিবল্ডির এই ঘোষণার ফলে ক্যাভুর সমস্যায় পড়েন। কেননা , গ্যারিবল্ডি ছিলেন ম্যাৎসিনির প্রজাতান্ত্রিক আদর্শে বিশ্বাসী। গ্যারিবল্ডির  অভিযানের ফলে রোমে যদি প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হত - তাহলে তা ঐক্যবদ্ধ ইতালি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ইতিবাচক হত না। 

৯. দক্ষিণ ইটালির সংযুক্তি :- 
উক্ত পরিস্থিতিতে প্রবল বিচক্ষণ ক্যাভুর তৃতীয় নেপোলিয়নকে বোঝাতে সমর্থ হন যে ইউরোপীয় স্থিতাবস্থা ও ঐক্য বজায় রাখতে রোম , নেপলস ও সিসিলিকে অবিলম্বে পিডমন্টের সঙ্গে যুক্ত করা উচিত। তৃতীয় নেপোলিয়নের সমর্থন পেয়ে পিডমন্টের রাজা ভিক্টর ইম্যানুয়েল রোম বাদ দিয়ে পোপের অধিকৃত রাজ্য দখল করে নেপলসে উপস্থিত হন। 
এই পরিস্থিতিতে গ্যারিবল্ডি যুদ্ধের পক্ষপাতী ছিলেন না এবং সিসিলি ও নেপলস - এর অধিকার তিনি ছেড়ে দেন। ফলে সিসিলি ও নেপলস পিডমন্টের সঙ্গে সংযুক্ত হয়। 

১০. অবশিষ্ট ইতালির সংযুক্তি :- 
ইতালির পূর্ণাঙ্গ ঐক্যবদ্ধরূপ ক্যাভুর নিজের জীবদ্দশায় প্রত্যক্ষ করে যেতে পারেনি। ১৮৬১ সালে পিডমন্টের সম্রাট ভিক্টর ইম্যানুয়েল ইটালির রাজা হিসাবে ভূষিত হন। ১৮৬৩ সালে ভেনেসিয়া ইতালির সঙ্গে যুক্ত হয়। ১৮৭০ সালে ফরাসি সেনাদলকে রোম থেকে বিতাড়িত করা হয়। এই পরিস্থিতিতে ভিক্টর ইম্যানুয়েল রোম অধিকার করেন এবং রোমকে ইতালির রাজধানী হিসাবে ঘোষণা করেন। এইভাবে ইতালির ঐক্য সম্পূর্ণ হয়। 

পরিশেষে বলা যায় , ম্যাৎসিনি ইতালিবাসীর ভাবজগতে জাতীয়তাবাদের যে বীজ বপন করেছিলেন তাকে পূর্ণাঙ্গ বৃক্ষরূপে গড়ে তোলেন কাউন্ট ক্যাভুর। তাই ক্যাভুরকে প্রকৃত অর্থে আধুনিক ইতালির জনক বলা হয়। ইতালির ঐক্যবদ্ধকরণে ক্যাভুরের ভূমিকা সম্পর্কে ঐতিহাসিক লিপসন বলেছেন - He lived long enough to create the Italy and to earn the undying gratitude of the Italian people. 
তবে গর্ডন ক্রেইগ - প্রমুখ ঐতিহাসিকগণ ক্যাভুরের কর্মপন্থাকে প্রবলভাবে সমালোচনা করেছেন। কেননা , ক্যাভুর ম্যাৎসিনির গণতান্ত্রিক আদর্শগুলি বিসর্জন দিয়েছিলেন। এছাড়া , ডেভিড  থমসন , গ্রেনভিল - প্রমুখ ঐতিহাসিকগণ ক্যাভুরকে নব্য ইতালির প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে কৃতিত্ব দিতে চাননি। তাঁরা ক্যাভুরকে কেবলমাত্র বাস্তববাদী রাজনীতিবিদ হিসাবে কৃতিত্ব দেওয়ার পক্ষপাতী। 
তবে , কিছু সমালোচনা স্বত্তেও একথা অনস্বীকার্য যে আধুনিক ইতালির গঠনে ক্যাভুরের ভূমিকা তাৎপর্যপূর্ণ।  

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো  
Share
Tweet
Pin
Share
No comments

ইতালির ঐক্য আন্দোলনে জোসেফ ম্যাৎসিনির ভূমিকা। 




ইতালির ঐক্য আন্দোলনে জোসেফ ম্যাৎসিনির ভূমিকা। 


ইতালির ঐক্য আন্দোলনে জোসেফ ম্যাৎসিনির ভূমিকা প্রসঙ্গে ঐতিহাসিক গ্রেনভিল মন্তব্য করেছেন - ''The intellectual apostle of republican unity.'' । শৈশবকাল থেকেই তিনি ছিলেন দেশপ্ৰেমে উদ্বুদ্ধ। তিনি জনগণের সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করতেন এবং তার সঙ্গে এও বিশ্বাস করতেন ইতালি থেকে অস্ট্রিয়ার শাসন দূর করতে কোনো বিদেশি শক্তির সহায়তা প্রয়োজন নেই। শুধুমাত্র দেশের যুবসম্প্রদায় ঐক্যবদ্ধভাবে অস্ট্রিয়ার হাত থেকে ইতালিকে স্বাধীনতা প্রদান করতে সক্ষম। 

১. ম্যাৎসিনির ভাবাদর্শ :- 
ম্যাৎসিনি এক স্বাধীন ও অখন্ড ইতালির স্বপ্ন দেখতেন। প্রথমদিকে ম্যাৎসিনি কার্বনারী নামক বিপ্লবী সমিতিতে যোগদান করেন। এরপর ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে পিডমন্টের বিদ্রোহে জড়িত থাকার অপরাধে নির্বাসিত করা হয়। মাতৃভূমি থেকে বিতাড়িত হলেও তিনি দেশের সকল ঘটনার খবর রাখতেন। এই সময়কালে তিনি ইতালির মুক্তি আন্দোলনের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেন। তিনি বিশ্বাস করতেন ইতালির ঐক্যের জন্য সর্বপ্রথম দরকার জনসাধারণের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনা। 

২. ভাবজগতে আলোড়ন :- 
ঐক্যবদ্ধ ইতালির আদর্শ জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে তিনি ব্যাপক প্রচারাভিযান করেন। এমনকি তিনি সাদা , সবুজ ও লাল রঙে রঞ্জিত ইতালির জাতীয় পতাকা প্রবর্তন করেন। এই পতাকার একদিকে গণতন্ত্র , সাম্য ও মানবতা এবং অন্যদিকে স্বাধীনতা ও ঐক্য - ইত্যাদি শব্দ লেখা ছিল। স্বভাবতই এই পতাকা ইতালিবাসীর মধ্যে দারুন প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। এছাড়াও ইতালিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হলে অস্ট্রিয়াকে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে ইতালি থেকে বিতাড়িত করতে হবে - এমন ঘোষণা করেন। এজন্য তিনি ইতালির যুবসমাজকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৩. ইয়ং ইতালি :- 
১৮৩২ খ্রিস্টাব্দে ম্যাৎসিনি ইয়ং ইতালি দল গঠন করেন। অস্ট্রিয়ার হাত থেকে ইতালির স্বাধীনতা অর্জন ও ঐক্যবদ্ধ ইতালির প্রতিষ্ঠা - এই ছিল ম্যাৎসিনির মূল লক্ষ্য। এজন্য তিনি ইয়ং ইটালির সদস্যদের আহ্বান করেন যে , শুধুমাত্র অস্ট্রিয়ার হাত থেকে স্বাধীনতা অর্জন নয় , ইয়ং ইতালি দলের মূল লক্ষ্য হবে ঐক্যবদ্ধ ইতালির প্রতিষ্ঠা। এজন্য তিনি দলের সদস্যদের কাছে গণ - অভ্যুত্থান ও গেরিলা যুদ্ধের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। তিনি ইয়ং ইতালি দলের সদস্যদের জাতীয়তাবাদী শিক্ষায় শিক্ষিত করেন সদস্যদের সমগ্র ধ্যান - জ্ঞান জুড়ে শুধুমাত্র ইতালির সেবার কথা বলেন। তিনি বলতেন - Never rise in any other name than that of Italy and of all Italy.  । ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের পূর্বে ইয়ং ইতালি দলের সদস্যসংখ্যা ছিল প্রায় ৬০০০০  । 

৪. ইয়ং ইতালি পত্রিকা :- 
ইয়ং ইতালি দলের মুখপত্রের নাম ছিল ইয়ং ইতালি। এই পত্রিকা ইতালিতে প্রচন্ড জনপ্রিয় ছিল। ইয়ং ইতালি পত্রিকার মাধ্যমেই সমগ্র ইতালি জুড়ে ভাবজগতে এক বিপ্লবের ভিত রচিত হয়। ইয়ং ইতালি পত্রিকার মাধ্যমে ম্যাৎসিনি বৈপ্লবিক ভাবাদর্শ প্রচার করতেন যা ইতালির জনমানসে এক আলোড়ন সৃষ্টি করে। 

৫. ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের প্রভাব :- 
ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের সাফল্য ইটালির ঐক্য আন্দোলনকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। ম্যাৎসিনি ইয়ং ইটালি দলকে ব্যাপকভাবে উদ্বুদ্ধ করেন। ফলে সমগ্র ইতালি জুড়ে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন বৈপ্লবিক আকার ধারণ করে। প্রথমে বিদ্রোহ শুরু হয় রোমে। বিদ্রোহের তীব্রতায় ভীত হয়ে পোপ পলায়ন করতে বাধ্য হন এবং রোম ও তাস্কানি - তে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। 

৬. প্রজাতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের মেলবন্ধন :- 
ম্যাৎসিনি প্রজাতান্ত্রিক নীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন ঠিকই ; কিন্তু তাঁর মধ্যে সমাজতান্ত্রিক ভাবাদর্শেরও সমর্থক ছিলেন। তবে মার্কসবাদী আদর্শের পরিবারে তিনি জ্যাকোবিন সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী ছিলেন। ইতালিতে স্বল্পকালের যে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় তাতে তিনি দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ , ন্যূনতম মজুরি , ধর্মনিরপেক্ষতা - ইত্যাদি প্রগতিশীল সংস্কার সাধন করেন। 

৭. ভবিষ্যৎ বৈপ্লবিক আন্দোলনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন :- 
রোমে স্থাপিত প্রজাতন্ত্র স্বল্পস্থায়ী হয় ঠিকই , কিন্তু ম্যাৎসিনি তাঁর আদর্শের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ বৈপ্লবিক আন্দোলনের পটভূমি প্রস্তুত করে যান। তাঁর আদর্শের প্রভাবেই ইটালির বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলন শুরু হয়। ম্যাৎসিনির শিষ্য ক্যাভুর সেই আন্দোলনের সঙ্গে বৈদেশিক শক্তির সাহায্য নিয়ে অভ্যুত্থান ঘটান। অপর শিষ্য গ্যারিবল্ডি দক্ষিণ ইতালি জয় করেন 

৮. নব্য ইতালির প্রাণপুরুষ :- 
ম্যাৎসিনি জীবনের অনেকটা সময় নির্বাসনে কাটিয়েছিলেন। ফলে তাঁর পরিকল্পনাগুলো খুব একটা সফল হয়নি। তিনি রোমে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করলেও ফরাসি সেনার আক্রমণে তার পতন ঘটে। কিন্তু তা স্বত্তেও বলতে হয় ম্যাৎসিনি ছিলেন নব্য ইতালির প্রাণপুরুষ। মধ্য ইতালি ও দক্ষিণ ইতালির সংযুক্তিকরণ একমাত্র ম্যাৎসিনির ভাবাদর্শের ফলেই সম্ভব হয়েছে বলে ঐতিহাসিক গ্রেনভিল মনে করেন।  

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো  
Share
Tweet
Pin
Share
No comments

মেটারনিকের সাফল্যের কারণগুলি আলোচনা কর।  




মেটারনিকের সাফল্যের কারণ :- 


ইউরোপের ইতিহাসে ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দের ভিয়েনা সম্মেলনের পর থেকে ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে ফেব্রুয়ারি বিপ্লব পর্যন্ত সময়কাল মেটানিকের যুগ নামে পরিচিত। মেটারনিখ তাঁর অসামান্য ব্যক্তিত্ব , রাজনৈতিক দূরদৃষ্টিতা , কূটনৈতিক জ্ঞান - ইত্যাদির সাহায্যে প্রায় তিন দশক ধরে সমগ্র ইউরোপ জুড়ে রক্ষনশীলতা ও পুরাতনতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এর পেছনে তাঁর মূল উদ্দেশ্য ছিল ইউরোপীয় রাজনীতিতে অস্ট্রিয়ার প্রাধান্য ও একাধিপত্য প্রতিষ্ঠা এবং ফরাসি বিপ্লব প্রসূত উদারনৈতিক ভাবধারাকে প্রতিহত করা। যদিও ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে রাজতন্ত্রের অবসান ঘটে এবং এর সঙ্গে সঙ্গে মেটারনিখ তন্ত্রেরও পতন ঘটে ; তবুও বলা যায় , ভিয়েনা কংগ্রেস থেকে শুরু করে ফেব্রুয়ারি বিপ্লব পর্যন্ত তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনিই ছিলেন ইউরোপীয় রাজনীতির প্রধান নিয়ন্ত্রক। মেটারনিকের সাফল্যের কারণগুলি হল - 

১. রাজনৈতিক দূরদৃষ্টিতা :- 
মেটারনিখ ছিলেন প্রখর রাজনৈতিক দূরদৃষ্টিসম্পন্ন। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন ফরাসি বিপ্লব প্রসূত প্রগতিশীল ভাবধারা ইউরোপের স্থিতিতাবস্থার পক্ষে বিপজ্জনক। তাই তিনি ছিলেন রক্ষনশীলতা ও পুরাতনতন্ত্রের প্রধান প্রতিনিধি। তাই মেটারনিখ খুব  সহজেই বিভিন্ন রাজপরিবার , রাজতন্ত্রের সমর্থকদের সমর্থন লাভ করেন। ফলে মেটারনিখ সফলভাবে তাঁর নীতিগুলি বাস্তবায়ন করতে পারেন। 

২. কূটনৈতিক ক্ষমতা :- 
মেটারনিখ উপলব্ধি করেছিলেন ইউরোপীয় রাজনীতিতে অস্ট্রিয়ার প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করতে হলে সমগ্র ইউরোপীয় রাজনীতিকে একসূত্রে বেঁধে ফেলতে হবে। তৎকালীন সময়ে ফ্রান্স সহ অন্যান্য ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলি বিপ্লবের ফলে দুর্বল হয়ে পড়েছিল। মেটারনিখ এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে রাজতন্ত্রের সমর্থকদের ঐক্যবদ্ধ করে অস্ট্রিয়ার প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করেন। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৩. বিগ ফোর - এর সদস্য হিসাবে বিশেষ মর্যাদা :- 
নেপোলিয়নের পতনের পর অস্ট্রিয়া , প্রাশিয়া , রাশিয়া ও ইংল্যান্ডকে নিয়ে গড়ে ওঠে বিগ ফোর। অস্ট্রিয়া ছিল এই বিগ ফোর এর প্রধান শক্তি। ফলে অস্ট্রিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ইউরোপীয় রাজনীতিতে মেটারনিখ বিশেষ মর্যাদা লাভ করেন। ইউরোপীয় রাজনীতিতে তাঁর আদর্শ , নীতি ও কূটনৈতিক সিদ্ধান্তগুলি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করা হত। 

৪. রাজতন্ত্রের সমর্থনলাভ :- 
মেটারনিখ ভিয়েনা সম্মেলনের ন্যায্য অধিকার নীতির মাধ্যমে নেপোলিয়ন পূর্ববর্তী ইউরোপের সকল বৈধ রাজবংশগুলির সিংহাসন লাভের স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। ফলে ইউরোপীয় সকল রাজশক্তি মেটারনিখকে রাজতন্ত্রের রক্ষাকর্তা হিসাবে মনে করে। এইভাবে ইউরোপীয় প্রায় সকল রাজবংশগুলির সমর্থন লাভ করে মেটারনিখ ইউরোপীয় রাজনীতিতে অদ্বিতীয় হয়ে উঠেছিলেন। 

৫. স্থিতাবস্থার প্রতি সমর্থন :- 
ফরাসি বিপ্লবের মাধ্যমে প্রগতিশীল ভাবধারার বিকাশ ঘটলেও বহু ঘটনা এমনও ছিল যেগুলি বিপ্লবের প্রতি এক শ্রেণীর মানুষকে বীতশ্রদ্ধ করে তুলেছিল। ফরাসি বিপ্লবের পর ডাইরেক্টরি ও কনসুলেটের শাসন এবং তারপর নেপোলিয়নের সাম্রাজ্যবাদ - কোনোকিছুই মানুষের আশা - আকাঙ্খাকে চরিতার্থ করতে পারেনি। তাঁরা মেটারনিকের স্থিতাবস্থা রক্ষার নীতিকে সমর্থন জানিয়েছিলেন। 

৬. যাজকতন্ত্রের সমর্থনলাভ :- 
ফরাসি বিপ্লবের পর যাজকদের ক্ষমতা বহুলাংশে কমে যায় , চার্চের সম্পত্তি যাজকদের হস্তচ্যুত হয়। এরপর নেপোলিয়নের সময়কালে যাজকদের ক্ষমতা আরও সংকুচিত হয়। ফলে ভিয়েনা সম্মেলনের পর পুরাতনপন্থী মেটারনিকের পক্ষে যাজকদের সমর্থন পেতে সমস্যা হয়নি। 

৭. নেপোলিয়নের পতনে মেটারনিকের ভূমিকা :- 
নেপোলিয়নের পতনে মেটারনিকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ফলে নেপোলিয়নের পতনের পর মেটারনিকের রাজনৈতিক দক্ষতা ইউরোপীয় রাজনীতিতে প্রশংসিত হয়। এছাড়া নেপোলিয়নের পতনের ফলে ইউরোপীয় রাজনীতিতে নেতৃত্বের যে শূন্যতা তৈরী হয় , মেটারনিখ সহজেই তা পূরণ করতে সমর্থ হয়েছিলেন। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৮. প্রবল ব্যক্তিত্বের অধিকারী :- 
মেটারনিখ ছিলেন প্রবল ব্যক্তিত্বের অধিকারী। এছাড়াও তিনি ছিলেন  সুবক্তা। ফলে নিজের নীতি ও আদর্শ সম্পর্কে ইউরোপীয় রাজন্যবর্গের সমর্থনলাভের ক্ষেত্রে তাঁর এই গুণটি ছিল বিশেষভাবে কার্যকরী। তাঁর রাজনৈতিক দক্ষতা , জ্ঞান , বিশ্লেষণ ক্ষমতা - ইত্যাদি ব্যক্তিগত গুণগুলি মেটারনিককে নেতৃত্বের মর্যাদায় উন্নীত করেছিল। 

৯. বৈবাহিক সম্পর্ক :- 
মেটারনিখ অস্ট্রিয়ার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী কাউন্ট কৌণিক এর পৌত্রীর সঙ্গে বৈবাহিকসূত্রে আবদ্ধ হয়েছিলেন। ফলে খুব সহজেই অস্ট্রিয়ার রাজনীতিতে প্রভাবশালী নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পেরেছিলেন।      

১০. শক্তি সাম্য নীতির সফল প্রয়োগ :- 
মেটারনিকের একটি প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলির মধ্যে শক্তি ক্ষেত্রে সমতা আনা। এই উদ্দেশ্যে তিনি ভিয়েনা সম্মেলনের মধ্যে দিয়ে সমগ্র ইউরোপের পুনর্বিন্যাস করেন। ফলে ইউরোপে শক্তিসাম্য প্রতিষ্ঠিত হয়। ফলে বৈপ্লবিক ভাবাদর্শগুলি প্রতিরোধ করা সম্ভব হয় এবং ইউরোপীয় রাজনীতিতে অস্ট্রিয়ার প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়। 

১১. ভিয়েনা সম্মেলনের নিয়ন্ত্রক হিসাবে ভূমিকা :- 
নেপোলিয়নের পতনের পর ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনা নগরীতে ভিয়েনা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে বিভিন্ন বিজয়ী রাষ্ট্র এবং পরাজিত ফ্রান্সের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকলেও প্রধান নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় ছিলেন অস্ট্রিয়ার প্রধানমন্ত্রী মেটারনিখ। ফলে স্বভাবতই ইউরোপীয় রাজনীতিতে ভিয়েনা সম্মেলনের পরবর্তীকালে ইউরোপীয় রাজনীতিকে পরিচালনার অধিকার মেটারনিকের হাতে চলে আসে। 

১২. বৈপ্লবিক ভাবাদর্শ প্রতিরোধ :- 
মেটারনিখ সফলভাবে সমগ্র ইউরোপ জুড়ে ফরাসি বিপ্লব প্রসূত প্রগতিশীল ও বৈপ্লবিক ভাবধারাগুলির প্রতিরোধ করেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি বহু প্রতিক্রিয়াশীল নীতি ও কর্মসূচি গ্রহণ করেন। সমগ্র ইউরোপকে তিনি এক পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করেন। করেন ফ্রান্স সহ সমগ্র ইউরোপে বিপ্লব প্রতিহত হয় এবং মেটারনিকের অধিনায়কত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। 

পরিশেষে বলা যায় , মেটারনিখ দৃঢ় ভিত্তিতে রক্ষনশীলতা ও পুরাতনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করলেও বিপ্লব ও বৈপ্লবিক ভাবাদর্শগুলিকে উপেক্ষা করে তিনি চরম ভুল করেছিলেন। ফলে অচিরেই ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে বুরবোঁ রাজতন্ত্রের পতন ঘটে এবং ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের মাধ্যমে জুলাই রাজতন্ত্রের পতনের সঙ্গে সঙ্গে মেটারনিখ ব্যবস্থার অবলুপ্তি ঘটে।     

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো    
Share
Tweet
Pin
Share
No comments

ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের ব্যর্থতার কারণ। 




ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের ব্যর্থতার কারণ :- 


১৮৪৮ সালের  ফেব্রুয়ারি ফ্রান্স তথা সমগ্র ইউরোপে বিপুল প্রত্যাশার জন্ম দিয়েছিল। ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের ফলে একদিকে যেমন রাজতন্ত্রের পতন ঘটে অন্যদিকে ফরাসি প্রগতিশীল ভাবাদর্শগুলি নতুন করে আত্মপ্রকাশ করে। কিন্তু ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের যে পরিবর্তনগুলি সংগঠিত হয় , সেগুলি বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের সকল সাফল্য ছিল সাময়িক। আসলে ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে যে দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র স্থাপিত হয় তার ভিত্তি ছিল দুর্বল। ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের পতনের কারণগুলি ছিল - 

১. দুর্বল প্রজাতন্ত্র :- 
ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের মাধ্যমে ফ্রান্সে অর্লিয়েন্স রাজতন্ত্রের পতন ঘটে এবং দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র জন্ম নেয়। কিন্তু দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্রের ভিত মজবুত ছিল না। কেননা , কেবলমাত্র প্যারিস ও ও তার পার্শ্ববর্তি অঞ্চলের নাগরিকেরই প্রজাতন্ত্রের আদর্শের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন। সমগ্র ফ্রান্সের গ্রামাঞ্চলগুলিতে এর প্রভাব ছিল নগন্য। প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলেও ফ্রান্সের কৃষকেরা প্রত্যক্ষভাবে লাভবান হননি। তাই গ্রামাঞ্চলের মানুষ ছিলেন দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র সম্পর্কে উদাসীন। 

২. প্রজাতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক মতাদর্শের মতবিরোধ :- 
দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রজাতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক মতাদর্শের মধ্যে মতবিরোধ শুরু হয়। লা মার্টিন প্রমুখ প্রজাতান্ত্রিকরা ফ্রান্সে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেই সন্তুষ্ট ছিলেন। কিন্তু লুই ব্ল্যাঙ্ক প্রমুখ সমাজতান্ত্রিকরা শ্রমিকের অধিকার , ধন বন্টন , কর্মসংস্থান - ইত্যাদি প্রগতিশীল সংস্কারের দাবী জানালে উভয় মতাদর্শের মধ্যে তীব্র মতবিরোধ তৈরী হয় এবং লুই ব্ল্যাঙ্ককে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ করা হয়। এরপর লুই ব্ল্যাঙ্কের নেতৃত্বে সমাজতন্ত্রীরা শ্রমিকদের সংগঠিত করে বিদ্রোহ শুরু করলে প্রজাতান্ত্রিক সেনাপতি ক্যাভিগন্যাক প্রায় দশ হাজার শ্রমিককে হত্যা করে বিদ্রোহ দমন করেন। ফলে ফরাসি প্রজাতন্ত্রে শ্রমিকদের অধিকার বিলুপ্ত হয় এবং পাতি বুর্জোয়াদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৩. কর্মহীন শ্রমিকদের বিক্ষোভ :- 
শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে জাতীয় শ্রম শিবির স্থাপন করা হয়। কিন্তু সেখানে কর্মসংস্থানের পরিবর্তে শ্রমিকদের ২ ফ্রাঁ করে ভাতা দেওয়ার প্রকল্প চালু করা হয়। এতে শ্রমিকদের মধ্যে সন্তোষ দানা বাঁধে। সমাজতান্ত্রিকরা অভিযোগ করতে থাকে যে , শ্রমিকদের এইভাবে কর্মসংস্থানের পরিবর্তে ভাতা প্রদান করে সরকার শ্রমিকদের ভিক্ষুকে পরিণত করতে চায়। কিন্তু সমাজতান্ত্রিকদের সেই দাবী সম্পর্কে প্রজাতন্ত্রীরা ছিলেন উদাসীন। ফলে শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ আরো তীব্র হয়। 

৪. প্রজাতান্ত্রিক দলের প্রতিক্রিয়াশীল নীতি :- 
ফরাসি পার্লামেন্টের নির্বাচনে প্রজাতন্ত্রীদল বিপুল ভোটে জয়লাভ করলে তারা সংস্কারমূলক বিভিন্ন কর্মসূচিগুলিকে বাতিল করে এবং সমতন্ত্রীদের সকল গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পদ থেকে অপসারিত করে। এমনকি জাতীয় শ্রম শিবির বন্ধ করে দিলে শ্রমিকরা বিপ্লবের পথ বেছে নেয়। 

৫. গৃহযুদ্ধ :- 
উক্ত পরিস্থিতিতে শ্রমিকরা প্যারিসের রাস্তা অবরোধ করে এবং প্রজাতন্ত্রী সেনাপতি ক্যাভিগন্যাক প্রায় দশ হাজার শ্রমিককে হত্যা করে বিদ্রোহ দমন করেন। এর ফলে প্রজাতন্ত্রী সরকার - কৃষক , শ্রমিক ও সাধারণ মানুষের সমর্থন হারায় ; প্রজাতন্ত্রের রক্তাক্ত হাত মানুষকে প্রজাতন্ত্র বিরোধী করে তোলে ; এছাড়া এই গৃহযুদ্ধের ফলে শিল্প , ব্যবসা ও অভ্যন্তরীণ শান্তি - শৃঙ্খলা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। 

৬. অর্থনৈতিক সংকট :- 
গৃহযুদ্ধ , ব্যবসা - বাণিজ্যে মন্দা , কৃষি উৎপাদনে ব্যর্থতা - ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে প্রজাতান্ত্রিক সরকারের সামনে অর্থনৈতিক সংকট উপস্থিত হয়। অর্থনৈতিক সংকটের বিষয়টি প্রকাশ্যে চলে এলে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রজাতান্ত্রিক সরকারের দুর্বলতা প্রকট হয়ে ওঠে এবং প্রজাতান্ত্রিক সরকার শীঘ্রই জনসমর্থন হারিয়ে ফেলে। 

৭. কৃষকদের উপর কর আরোপ :- 
অর্থনৈতিক সংকট থেকে মুক্তি পেতে প্রজাতান্ত্রিক সরকার উপায়ান্তর না দেখে অর্থনৈতিক সংস্কার করতে বাধ্য হয়। কিন্তু অর্থনৈতিক সংস্কারের নামে কৃষকদের উপর নতুন করে করের বোঝা চাপানো হয়। অন্যদিকে কৃষকেরা পূর্ব হতেই ছিল দরিদ্র ও অধিকার বঞ্চিত। তাই তাঁরা এই বাড়তি কর প্রদান করতে অসম্মত হন। ফলে পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে ওঠে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৮. কর্মপন্থা সংক্রান্ত মতানৈক্য :- 
এছাড়া প্রজাতান্ত্রিক সরকারের মধ্যেও কর্মপন্থা বিষয়ে মতানৈক্য প্রবল ছিল। ফ্রান্সের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে কোন পন্থা অবলম্বন করা হবে - তা স্থির করতে তাঁরা অপরাগ ছিলেন। অনেকগুলি পরস্পরবিরোধী চিন্তাদর্শ সামনে আসে। একদল ফ্রান্সে সার্ডিনিয়া - পিডমন্টের রাজার অধীনে ফ্রান্সে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন ; অপর এক দল পোপের নেতৃত্বে ফ্রান্সে ধর্মরাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। আবার অন্যদিকে কেউ কেউ সাধারণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পক্ষপাতী ছিলেন। এই পরস্পর বিরোধী মতাদর্শ দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্রকে আরো সংকটজনক পরিস্থিতিতে নিয়ে যায়। 

৯. সামরিক শক্তির প্রভাব :- 
সামরিক শক্তি উদারনৈতিক বিপ্লব গুলিকে দমন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রাজতন্ত্র বিরোধী কোনো বিদ্রোহেই সামরিক শক্তি যোগদান করেনি। অস্ট্রিয়ার সমগ্র সামরিক বাহিনী অস্ট্রিয়ার সম্রাটের প্রতি অনুগত ছিল। এছাড়াও প্রাশিয়ার সামরিক বাহিনীও রাজার প্রতি অনুগত ছিল। ফলে , ইউরোপীয় প্রতিক্রিয়াশীল ও পরিবর্তনকামী বিদ্রোহগুলিকে দমন করতে সামরিক বাহিনীকে কাজে লাগানো হয়। 

১০. রাষ্ট্রপতি পদে লুই নেপোলিয়নের নির্বাচন ও দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্রের অবসান :- 
এরপর রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে নেপোলিয়ন বোনাপার্টের বংশধর লুই নেপোলিয়ন বিপুল ভোটে প্রজাতন্ত্রী দলের প্রার্থী ক্যাভিগন্যাক-কে পরাজিত করেন। লুই নেপোলিয়ন প্রজাতন্ত্রের আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন না। ফলে তিনি ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দের ২ রা ডিসেম্বর পার্লামেন্ট ভেঙে দেন এবং বিপুল জনপ্রিয়তা থাকায় তিনি খুব সহজেই দ্বিতীয়বারের জন্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। 
 
একদিকে মানুষ প্রজাতান্ত্রিক শাসনের দুর্বলতা ও অকর্মণ্যতা লক্ষ্য করে প্রজাতন্ত্রের প্রতি বীতশ্রদ্ধ ছিলেন , অন্যদিকে লুই নেপোলিয়ন ছিলেন নেপোলিয়ন বোনাপার্টের বংশধর। ফলে ফ্রান্সের মানুষের নিকট তিনি গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠেন। সাধারণ মানুষ প্রজাতন্ত্র অপেক্ষা স্থিতিশীল সরকার কামনা করেছিল। অন্যদিকে কৃষকরা মনে করেছিল , লুই নেপোলিয়ন তাঁদের অধিকার ও সম্পত্তি রক্ষা করবেন। এছাড়া নেপোলিয়ন বোনাপার্টের গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় লুই নোপোলিয়ন ফিরিয়ে আনবেন - সাধারণ মানুষ এমনটা আশা করেছিলেন। এরপর ১৮৫২ খ্রিস্টাব্দের ২ রা ডিসেম্বর লুই নেপোলিয়ন দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্রের অবসান ঘোষণা করেন এবং এর সঙ্গে সঙ্গে ফেব্রুয়ারি বিপ্লব ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।   

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো     
Share
Tweet
Pin
Share
No comments

ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের গুরুত্ব , প্রভাব ও ফলাফল। 




ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের গুরুত্ব , প্রভাব ও ফলাফল :- 

১৮৪৮ এর ফেব্রুয়ারি বিপ্লব ফ্রান্স তথা সমগ্র ইউরোপের ইতিহাসে ছিল একটি যুগান্তকারী এবং সুদূরপ্রসারী প্রভাব বিস্তারকারী ঘটনা। ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের ফলে ফ্রান্সে স্বৈরতন্ত্র ও রাজতন্ত্রের অবসান ঘটে। অর্লিয়েন্স বংশীয় রাজা লুই ফিলিপ গণআন্দোলনের চাপে ভীত হয়ে ইংল্যান্ডে পলায়ন করেন। সমাজতন্ত্রী (রিপাবলিকান ) ও প্রজাতন্ত্রীরা লা - মার্টিনের নেতৃত্বে ১৮৪৮ সালের ২৬শে ফেব্রুয়ারি ফ্রান্সে সাধারণতন্ত্র ঘোষণা করে। এই ঘটনা ফ্রান্সে '' দ্বিতীয় সাধারণতন্ত্র '' নামে পরিচিত। 
ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের ফলাফলকে দুইভাবে আলোচনা করা যেতে পারে - 
(ক ) ফ্রান্সে ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের প্রভাব এবং 
(খ ) ইউরোপে ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের প্রভাব। 

(ক ) ফ্রান্সে ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের প্রভাব :- 


১. সর্বসাধারণের ভোটাধিকারের স্বীকৃতি :- 
ইতিপূর্বে অষ্টাদশ লুইয়ের আমলে কেবলমাত্র ৩০০ ফ্রাঁ কর প্রদানকারী ব্যক্তিদের ভোট প্রদানের অধিকার ছিল। তারপর ১৮৩০ সালে জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে লুই ফিলিপ ২০০ ফ্রাঁ কর প্রদানকারী ব্যক্তিদের ভোট প্রদানের অধিকারের স্বীকৃতি প্রদান করেন। তৎকালীন সময়ে সমগ্র ফ্রান্সে মাত্র তিন লক্ষ মানুষের ভোটাধিকার ছিল। কিন্তু ১৮৪৮ সালে ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের মাধ্যমে সার্বজনীন ভোটাধিকার স্বীকৃত হয়। 

২. জাতীয় রক্ষীবাহিনীর পুনর্বিন্যাস :-
ইতিপূর্বে ফ্রান্সের জাতীয় রক্ষীবাহিনী কেবলমাত্র বুর্জোয়াদের দ্বারা গঠিত ও পরিচালিত ছিল। কিন্তু ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের মাধ্যমে ফ্রান্সে দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলে জাতীয় রক্ষীবাহিনীর গণতন্ত্রিতকরণ সম্পন্ন হয় তাতে যোগদানের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের সমানাধিকার স্বীকৃত হয়। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৩. প্রজাতান্ত্রিক সংবিধান রচনা :- 
ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে ফ্রান্সে প্রজাতান্ত্রিক সংবিধান রচিত হয়। এর ফলে ফ্রান্সের আইনসভার গঠন ও ক্ষমতা এবং শাসন ব্যবস্থা প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়। আইনবিভাগের সকল সদস্য জনগণের ভোটে সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হবেন এবং রাষ্ট্রপতি নাগরিকদের দ্বারাই নির্বাচিত হবেন - এমনটা স্থির করা হয়। 

৪. এককক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা স্থাপন :- 
ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের মাধ্যমে ফ্রান্সে প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকার স্বীকৃত হয় এবং ৭৫০ জন সদস্যের এককক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা স্থাপিত হয়। এই সকল সদস্যই সরাসরি জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হবেন। নির্বাচিত আইনসভার মেয়াদ স্থির করা হয় চার বছর। এছাড়া রাষ্ট্রপতির কার্যকালও চার বছরের জন্য স্থির করা হয়। 

৫. রাজতন্ত্রের অবসান :- 
ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের মাধ্যমে দীর্ঘদিনের রাজতান্ত্রিক শাসনের অবসান ঘটে। ইতিপূর্বে ফরাসি বিপ্লবের সময়কালে বুরবোঁ রাজবংশ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিল। তারপর ভিয়েনা সম্মেলনের মধ্যে দিয়ে বুরবোঁ শাসনতন্ত্র পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে জুলাই বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে বুরবোঁ রাজতন্ত্রের পতন ঘটলেও অর্লিয়েন্স বংশের লুই ফিলিপ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। কিন্তু ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের মাধ্যমে লুই ফিলিপের জুলাই রাজতন্ত্রের পতন ঘটে এবং ফ্রান্সে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। 

৬. জাতীয় কর্মশালা :- 
ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের পর প্রজাতান্ত্রিক সরকার দ্বারা ফ্রান্সে জাতীয় কর্মশালা বা ন্যাশনাল ওয়ার্কশপ গঠিত হয়। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল সাধারণ মানুষদের কর্মসংস্থান ও শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠা। গৃহীত নীতির ভিত্তিতে শ্রমিকরা ১০ ঘন্টার বেশি কাজ করবেন না বলে স্থির হয়। এছাড়াও সকলের জন্য কর্মের অধিকার স্বীকৃত হয়। 

৭. বুর্জোয়াদের ক্ষমতার অবসান :- 
ইতিপূর্বে ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে জুলাই বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে জুলাই রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলেও আইনবিভাগ ও শাসন বিভাগের সকল ক্ষমতা বুর্জোয়াদের হাতেই ন্যাস্ত ছিল। বুর্জোয়ারা রাষ্ট্রযন্ত্রকে নিজ স্বার্থে ব্যবহার করতে শুরু করলে সাধারণ মানুষের স্বার্থ উপেক্ষিত হয়। কিন্তু ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের মাধ্যমে ফ্রান্সে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলে বুর্জোয়াদের সকল প্রকার রাজনৈতিক ও বিশেষ ক্ষমতার অবসান ঘটে এবং সকল ক্ষমতা সাধারণ মানুষের হাতে অর্পিত হয়।  

৮. ভূমিদাস প্রথার অবসান :- 
ফ্রান্সে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নাগরিকের অধিকার সুরক্ষিত হয়। এর ফলে ফ্রান্সে এবং ফ্রান্সের উপনিবেশগুলোতে ভূমিদাস প্রথার অবসান ঘটে এবং লক্ষাধিক মানুষ দাসত্ব থেকে মুক্তিলাভ করেন।   

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৯. পাতি - বুর্জোয়া শ্রেণীর ক্ষমতা দখল :- 
প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর ফ্রান্সে প্রজাতান্ত্রিক ও সমাজতন্ত্রীদের মধ্যে আদর্শগত সংঘাত শুরু হয়। প্রজাতন্ত্রীরা ফ্রান্সে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেই সন্তুষ্ট ছিলেন। কিন্তু সমাজতন্ত্রী লুই ব্ল্যাঙ্ক প্রমুখেরা কর্মের অধিকার সুনিশ্চিতকরণ , ধনবন্টন - ইত্যাদির মাধ্যমে ফ্রান্সে অর্থনৈতিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পক্ষপাতী ছিলেন। ফলে লুই ব্ল্যাঙ্ক প্রমুখ সমাজতন্ত্রীদের মন্ত্রীসভা থেকে অপসারণ করা হয়। তারপর সমাজতন্ত্রীরা শ্রমিকদের সংগঠিত করে বিদ্রোহ শুরু করলে প্রজাতান্ত্রিক সেনাপতি ক্যাভিগন্যাক প্রায় দশ হাজার শ্রমিককে হত্যা করে বিদ্রোহ দমন করেন। ফলে ফরাসি প্রজাতন্ত্রে শ্রমিকদের অধিকার বিলুপ্ত হয় এবং পাতি বুর্জোয়াদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। 

১০. মেটারনিখ ব্যবস্থার অবসান :- 
১৮৪৮ এর ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফল হল মেটারনিখ ব্যবস্থার অবসান। নেপোলিয়নের পতনের পর ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সুদীর্ঘ সময়কাল অস্ট্রিয়ার প্রধানমন্ত্রী প্রিন্স মেটারনিখ সমগ্র ইউরোপ জুড়ে রক্ষনশীলতা ও পুরাতনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়াশীল নীতি গ্রহণ করেন। তাঁর নেতৃত্বে ভিয়েনা সম্মেলনের নীতিগুলি সমগ্র ইউরোপ জুড়ে কার্যকর করা হয়। কিন্তু ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে রাজতন্ত্রের উচ্ছেদ ঘটলে মেটারনিখ উপায়ান্তর না দেখে ইংল্যান্ডে আশ্রয় গ্রহণ করেন। ফলে মেটারনিখ তন্ত্রের অবসান ঘটে। 

(খ ) ইউরোপে ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের প্রভাব। 


১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে ফেব্রুয়ারি বিপ্লব সমগ্র ইউরোপ জুড়ে বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহের জন্ম দেয়। যেহেতু তৎকালীন সময়ে ফ্রান্স ছিল সমগ্র ইউরোপের ঝটিকাকেন্দ্র , তাই ফ্রান্সে ঘটে যাওয়া যেকোনো ঘটনাই ইউরোপে তার প্রভাব বিস্তার করত। এপ্রসঙ্গে মেটারনিখ বলেছিলেন - When France catches cold, Europe sneezes. 
ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের প্রভাব হিসাবে সমগ্র ইউরোপ জুড়ে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া ও ঘটনাপ্রবাহ দেখা যায়। যেমন - 

(i). অস্ট্রিয়া :- ফ্রান্সে রাজতন্ত্রের অবসান ও মেটারনিখ ব্যবস্থার পতনের সঙ্গে সঙ্গে অস্ট্রিয়ার মিলান , ভেনিস , হাঙ্গেরি , ভিয়েনা - ইত্যাদি প্রদেশে গণ আন্দোলন শুরু হয়। ছাত্র ও বুদ্ধিজীবিদের দ্বারা পরিচালিত এই আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে। ফলে অস্ট্রিয়ার সম্রাট বাধ্য হয়ে উদারনৈতিক শাসন ব্যবস্থার ঘোষণা করে পদত্যাগ করেন। এই ঘটনার পর লন্ডন টাইমস পত্রিকায় লেখা হয় - The last beam of the old system has given way.   

(ii). বোহেমিয়া :- বোহেমিয়া ছিল অস্ট্রিয়া সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত। স্বাধীনতার দাবীতে চেক ও শ্লাভ জাতিগোষ্ঠী আন্দোলন শুরু করে। শেষ পর্যন্ত অস্ট্রিয়ার সম্রাট স্বাধীন চেক রাষ্ট্রের ঘোষণা করেন। 

(iii). হাঙ্গেরি :- হাঙ্গেরিতে গণআন্দোলনের নেতা ছিলেন লুই কুসুথ। হাঙ্গেরির ম্যাৎসিনি নামে পরিচিত লুই কুসুথের প্রবল বেক্তিত্ব ও তীব্র গণআন্দোলনের চাপে অস্ট্রিয়ার সম্রাট সকল দাবী মেনে নিতে বাধ্য হন। 

(iv). জার্মানি :- জার্মানিতে ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের তীব্র প্রভাব পড়ে। তীব্র গণ আন্দোলন বেডেন , প্রাশিয়া , ব্রান্সউইক - ইত্যাদি অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। ফ্র্যাঙ্কফুট পার্লামেন্ট অনুষ্ঠিত হয় এবং ঐক্যবদ্ধ জার্মানি গঠনের লক্ষ্যে প্রাশিয়ার রাজা চতুর্থ ফ্রেডারিক উইলিয়ামকে ঐক্যবদ্ধ জার্মানির সম্রাটপদ গ্রহণের জন্য আহ্বান জানানো হয়। ঐক্যবদ্ধ জার্মান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যটি আরও একধাপ এগিয়ে যায়। উদারনীতিবাদ জার্মানির সর্বত্র জয়লাভ করে। 

(v) ইটালি :- ইটালিতে ম্যাৎসিনির নেতৃত্বে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। এছাড়াও ভেনিস শহরেও প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। অন্যদিকে পিডমন্ট - সার্ডিনিয়ায় ব্যাপক গণআন্দোলনের ফলে সেখানে উদারনৈতিক সংবিধান প্রবর্তিত হয়।   

(vi) ডেনমার্ক :- প্রবল উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক আন্দোলনের চাপে ডেনমার্কের রাজা সপ্তম ফ্রেডারিক সংবিধান সভা আহ্বান করেন। 

(vii) ইংল্যান্ড :- ইংল্যান্ডে ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের প্রভাবে চার্টিস্ট আন্দোলন তীব্রতর হয়। এছাড়াও ইংল্যান্ডে এক তীব্র সশস্ত্র আন্দোলন শুরু হয় ইয়ং আয়ারল্যান্ড দলের নেতৃত্বে। 

পরিশেষে বলা যায় , ১৮৪৮ সালের ইতিবাচক প্রভাবগুলি খুব বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। ফ্রান্স সহ অন্যান্য রাষ্ট্রগুলিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল , সমাজতন্ত্রী ও প্রজাতন্ত্রী ভাবাদর্শের সংঘাত , রাজতন্ত্রের পুনরুত্থান - ইত্যাদি কারণে ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের সুফলগুলি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। তবুও ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের গুরুত্বকে কোনোভাবেই অস্বীকার করা যায়না। কেননা , ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের ফলে একদিকে যেমন প্রতিক্রিয়াশীল ভিয়েনা চুক্তি সম্পূর্ণরূপে বাতিল হয় ; অন্যদিকে সমগ্র ইউরোপ জুড়ে জাতীয়তাবাদ প্রসারিত হয়।   

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো  
Share
Tweet
Pin
Share
No comments

জুলাই রাজতন্ত্র কাকে বলে ? জুলাই রাজতন্ত্রের পতনের কারণগুলি আলোচনা কর। 




জুলাই রাজতন্ত্র :- 


১৮৩০ খ্রিস্টাব্দের জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে রাজা দশম চার্লস সিংহাসনচ্যুত হন এবং অর্লিয়েন্স বংশীয় লুই ফিলিপ ফ্রান্সের সিংহাসনে বসেন। লুই ফিলিপের রাজত্বকাল স্থায়ী ছিল ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের সময়কাল পর্যন্ত। জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে লুই ফিলিপ ফ্রান্সের সিংহাসন অধিকার করেছিলেন। তাই তাঁর রাজত্বকালকে '' জুলাই রাজতন্ত্র '' বলা হয়। 

১৮৩০ খ্রিস্টাব্দের ৩০ শে জুলাই থেকে পরবর্তী ১৮ বছর জুলাই রাজতন্ত্র বা লুই ফিলিপের শাসনকাল ফ্রান্স তথা ইউরোপের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়কালে জনগণের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় , সম্রাটের ঈশ্বরপ্রদত্ত ক্ষমতা যুক্তিহীন ও ভ্রান্ত বলে প্রমাণিত হয় , ২৫ বছর বয়সী সকল নাগরিকের ভোটাধিকার স্বীকৃত হয় , আইন ও শাসন বিভাগে অভিজাত ও রাজার পরিবর্তে উচ্চ বুর্জোয়াদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয় - ইত্যাদি। 
তবে , ১৮৪৮ সালে ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের মাধ্যমে জুলাই রাজতন্ত্র ও লুই ফিলিপের পতন ঘটে।

জুলাই রাজতন্ত্রের পতনের বিভিন্ন কারণগুলি হল - 


১. লুই ফিলিপের জনপ্রিয়তা হ্রাস :- 
জুলাই বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে ফরাসি জনসাধারণের মধ্যে তীব্র আশা - আকাঙ্খা তৈরী হয়। কিন্তু লুই ফিলিপ ছিলেন জনসাধারণের সেই সকল আশা - আকাঙ্খার প্রতি তীব্রভাবে উদাসীন। বিপ্লব প্রসূত রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক কাঠামোতে সেরূপ কোনো পরিবর্তন হয়নি এবং পার্লামেন্টে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে আদর্শগত সংঘাত - রাষ্ট্রের চলনশক্তি শ্লথ করে তুলেছিল। ফলে যে তীব্র জনপ্রিয়তা সিংহাসনারোহণকালে লুই ফিলিপ অর্জন করেছিলেন - মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই তা ধূলিস্যাৎ হয়ে পড়ে। 

২. ভ্রান্ত পররাষ্ট্রনীতি :- 
অর্লিয়েন্স বংশের রাজত্বকাল অনেকটা নির্ভর করছিল দৃঢ় পররাষ্ট্রনীতির উপর। কিন্তু লুই ফিলিপ সেরূপ কোনো দৃঢ় পররাষ্ট্র নীতি গ্রহণ করতে পারেননি। ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে প্যারিস ছিল বিপ্লবের ঝটিকাকেন্দ্র। প্রগতিশীল ভাবধারা ইউরোপ জুড়ে যে প্রবল আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল তার ফলে - বেলজিয়াম স্বাধীনতা ঘোষণা করে , পোল্যান্ড রাশিয়ার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে , জার্মানি ও ইতালিতেও গণ - আন্দোলন শুরু হয়। কিন্তু লুই ফিলিপের নিষ্ক্রিয়তা ও বিচ্ছিন্নতা ফ্রান্সের গতিশীলতা রুদ্ধ করে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৩. অভ্যন্তরীণ নীতির ব্যর্থতা :-
ফরাসি জনসাধারণ লুই ফিলিপের অভ্যন্তরীণ নীতিগুলির প্রতিও বীতশ্রদ্ধ ছিলেন। দুই মন্ত্রী - শেতোব্রিয়া (Chateaubriand) ও থিয়ার্স একের পর এক প্রতিক্রিয়াশীল নীতি প্রবর্তন করেন। এই সকল দমনমূলক নীতির ফলে জনগণের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ সঞ্চারিত হয়। কিন্তু জনগণের সেই অসন্তোষের প্রতি লুই ফিলিপ ছিলেন সম্পূর্ণরূপে উদাসীন। তাই লুই ফিলিপের পররাষ্ট্র নীতির মত তাঁর অভ্যন্তরীণ নীতিও ছিল সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ। 

৪. বুর্জোয়া শ্রেণীর প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা :- 
১৮৩০ খ্রিস্টাব্দের জুলাই বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে ফ্রান্সের আইনবিভাগ ও শাসনবিভাগে অভিজাত সম্প্রদায় ও রাজার পরিবর্তে বুর্জোয়া শ্রেণীর প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়। অন্যভাবে বলা যায় , লুই ফিলিপের সমগ্র রাজত্বকাল জুড়ে সকল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ক্ষমতা ছিল বুর্জোয়াদের হাতে। এই বুর্জোয়া শ্রেণী রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে ফ্রান্সের প্রগতি ও জনকল্যাণের পরিবর্তে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে। বুর্জোয়া প্রতিনিধিরা দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ দরিদ্র কৃষক , শ্রমিক ও অন্যান্য তৃতীয় শ্রেণীর মানুষদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু প্রতিক্রিয়াশীল নীতি প্রবর্তন করে। ফলে দেশের সাধারণ মানুষদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সঞ্চারিত হয়। 

৫. ভোটাধিকার সংক্রান্ত বিরোধ :- 
জুলাই বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে ২৫ বছর বয়সী সকল নাগরিকের ভোটাধিকার স্বীকৃত হয়। কিন্তু শীঘ্রই সকল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অধিকারী বুর্জোয়া সম্প্রদায় নিজেদের স্বার্থে সম্পত্তির ভিত্তিতে ভোটাধিকারের নীতি প্রবর্তন করেন। ফলে ফ্রান্সের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হন। 

৬. বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলির আদর্শগত সংঘাত :- 
জুলাই বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে অর্লিয়েন্স বংশের রাজতান্ত্রিক শাসনের সূচনা ঘটলেও লুই ফিলিপের প্রতি কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের সমর্থন ছিল না। রাজনৈতিক দল ও রাজতন্ত্রের মধ্যে আদর্শগত সংঘাত ছিল তীব্র। যেমন , বুরবোঁ রাজবংশের সমর্থকগণ জুলাই রাজতন্ত্র ও লুই ফিলিপের ক্ষমতালাভকে অন্যায্য বলে ঘোষণা করেন , ফ্রান্সের সাধারণতন্ত্রী দল ( রিপাবলিকান ) মনে করেছিল লুই ফিলিপ উদারপন্থী নীতি গ্রহণ করে জাতীয়তাবাদ ও গণতন্ত্রের প্রসার ঘটাবেন , বোনাপার্টিস্ট দল নেপোলিয়নের গৌরবময় শাসনকালের সঙ্গে তুলনা করে লুই ফিলিপের শাসনকালকে ঘৃণ্য ও দুর্বল বলে দাবী করেন। এইভাবে রাজনৈতিক দলগুলির পারস্পরিক সংঘাত জুলাই রাজতন্ত্রের পতনকে অনিবার্য করে তোলে।

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৭. সমাজতন্ত্রী দলের ( রিপাবলিকান ) বিরোধিতা :- 
সমাজতন্ত্রী দলের নেতা লুই ব্ল্যাঙ্ক ( Louis Blanc ) সমাজতন্ত্রী আদর্শের সমর্থনে রাজতন্ত্রের তীব্র বিরোধিতা করতে থাকেন। তিনি লুই ফিলিপের রাজতন্ত্রকে ধনীদের দ্বারা গঠিত , ধনীদের জন্য ও ধনীদের দ্বারা পরিচালিত সরকার বলে কটাক্ষ করেন। তিনি লুই ফিলিপের সরকারকে প্রতিক্রিয়াশীল ও জনবিরোধী বলে প্রচার করেন। তাই লুই ব্ল্যাঙ্ক রাজতন্ত্রের পতন ঘটিয়ে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার আহ্বান করেন। 

৮. শিল্পবিপ্লবের প্রভাব :- 
শিল্প বিপ্লবের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে ইউরোপের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে অনেক পরিবর্তন আসে। পুঁজিপতিদের হাতে অভূতপূর্ব অর্থের সমাগম হয়। কিন্তু শ্রমিক শ্রেণী ছিল শোষিত ও বঞ্চিত। তাঁদের মজুরি ছিল কম এবং জীবনযাত্রা ছিল অত্যন্ত নিম্নমানের। এই পরিস্থিতিতে লুই ব্ল্যাঙ্ক ও অপর সমাজতন্ত্রী নেতা সেন্ট সাইমন শ্রমিকদের সংগঠিত করেন। তাঁরা প্রচার করেন শ্রমিকের অধিকার সুনিশ্চিত করার একমাত্র পথ হল রাজতন্ত্রের অবসান। 

৯. অর্থনৈতিক নীতির ব্যর্থতা :- 
জুলাই রাজতন্ত্রের পতনের অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল লুই ফিলিপের অর্থনৈতিক নীতির ব্যর্থতা। প্রকৃতপক্ষে , কোনো প্রগতিশীল অর্থনৈতিক সংস্কার সাধনের ক্ষেত্রে লুই ফিলিপ ছিলেন সম্পূর্ণ উদাসীন। অধিকারভোগী বুর্জোয়ারা যেসকল অর্থনৈতিক নীতি প্রবর্তন করতেন তা কেবলমাত্র নিজেদের স্বার্থে ; ফ্রান্সের সাধারণ জনগণ তাতে উপকৃত হতেন না। এরপর ১৮৪০ থেকে ১৮৪৪ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে সমগ্র ইউরোপ জুড়ে তীব্র খরা দেখা দেয়। এর ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর মূল্য মানুষের নাগালের বাইরে চলে যায়। কিন্তু এই পরিস্থিতিতেও লুই ফিলিপ কোনো প্রগতিশীল আর্থিক নীতি প্রবর্তন করেননি। 

১০. ফেব্রুয়ারি বিপ্লব (১৮৪৮) ও জুলাই রাজতন্ত্রের পতন :- 
উপরোক্ত বিভিন্ন পরিস্থিতির জন্য ফ্রান্সে আরেকটি বিপ্লব অনিবার্য হয়ে পড়েছিল। সংস্কারপন্থী ও প্রজাতন্ত্রীরা তীব্রভাবে সংস্কারের দাবী জানাতে থাকলে গিজো - মন্ত্রিসভা তাতে অসম্মতি জানায়। তাতে সংস্কারপন্থীরা ক্ষিপ্ত হয়ে এক বিরাট সমাবেশের আহ্বান জানায়। সরকার এই জনসভাকে বেআইনি বলে ঘোষণা করলেও প্রচুর মানুষ তাতে যোগদান করেন। ফলে ভীত হয়ে লুই ফিলিপ গিজো - মন্ত্রিসভাকে পদচ্যুত করেন। এই পরিস্থিতিতে সংস্কারপন্থীরা যখন গিজোর বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছিলেন তখন পুলিশের গুলিতে ২৩ জন আন্দোলনকারী নিহত হন। এই খবর ফ্রান্সে দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়ে এবং সর্বত্র মানুষ অস্ত্র হাতে রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। নিরুপায় লুই ফিলিপ ইংল্যান্ডে পলায়ন করেন ও আশ্রয় গ্রহণ করেন। 
এরপর সমাজতন্ত্রী ও সংস্কারপন্থীরা মিলিতভাবে ফ্রান্সের রাজতন্ত্রের অবসান ঘোষণা করে লা মার্টিনের নেতৃত্বে ১৮৪৮ সালের ২৬শে ফেব্রুয়ারি ফ্রান্সে সাধারণতন্ত্র ঘোষণা করেন। এইভাবে জুলাই রাজতন্ত্রের পতন সম্পূর্ণ হয়।    

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো  
Share
Tweet
Pin
Share
No comments
Newer Posts
Older Posts

Followers

Pages

  • Home
  • Privacy Policy
  • Disclaimer
  • CONTACT ME
  • About Me

Contact Form

Name

Email *

Message *

About me

Hallow viewers , myself Nandan Dutta [Subhankar Dutta], reside at Maheshpur,Malda.
I made this website for the students of B.A. courses under Gour Banga University. Here you can get suggestions of different subjects like HISTORY , SOCIOLOGY , POLITICAL SCIENCE & EDUCATION.
In future I will add MCQ sections of those subjects.


Categories

  • 1ST SEMESTER SUGGESTION (1)
  • 2 ND YEAR SUGGESTION (1)
  • 2ND SEMESTER (1)
  • 3RD SEMESTER (8)
  • BENGALI NOTES (21)
  • CU suggestion. (1)
  • EDUCATION NOTES (141)
  • ENGLISH COMPULSORY (16)
  • GBU Suggestion. (7)
  • HISTORY EUROPE & WORLD (46)
  • HISTORY NOTES (68)
  • POL SC NOTES (64)
  • SOCIOLOGY NOTES (72)
  • WBCS 2020 (1)

recent posts

Blog Archive

  • May 2025 (3)
  • April 2025 (20)
  • March 2025 (12)
  • February 2025 (8)
  • November 2024 (5)
  • October 2024 (2)
  • September 2024 (2)
  • June 2024 (2)
  • March 2024 (6)
  • February 2024 (4)
  • October 2023 (5)
  • May 2023 (5)
  • April 2023 (1)
  • December 2022 (1)
  • November 2022 (13)
  • September 2022 (2)
  • August 2022 (7)
  • July 2022 (29)
  • June 2022 (10)
  • May 2022 (25)
  • April 2022 (24)
  • March 2022 (16)
  • February 2022 (19)
  • January 2022 (21)
  • December 2021 (46)
  • November 2021 (5)
  • October 2021 (6)
  • September 2021 (5)
  • August 2021 (41)
  • July 2021 (43)
  • June 2021 (31)
  • May 2021 (7)
  • April 2021 (1)
  • July 2020 (1)
  • June 2020 (3)
  • April 2020 (1)
  • November 2019 (1)
  • July 2019 (1)
  • June 2019 (1)
  • May 2019 (1)
  • April 2019 (2)
  • January 2019 (1)

Pages

  • Home
  • 2nd SEM ভাষাতত্ত্ব :
  • বাংলা উপভাষা
  • দ্বিতীয় পুলকেশীর কৃতিত্ব
  • ভারতীয় সংবিধানে বর্ণিত সাম্যের অধিকারগুলি আলোচনা করো।
  • হর্ষবর্ধনের কৃতিত্ব আলোচনা করো। তাকে কি উত্তর পথনাথ বলা যায় ?
  • ভারতীয় সংবিধানের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য :-
  • উদারনীতিবাদ : সংক্ষিপ্ত ধারণা :-
  • চোল শাসনব্যবস্থা :-
  • গুপ্তযুগ সুবর্ণযুগ সম্পর্কিত আলোচনা।
  • ৬. উদাহরণসহ মধ্যযুগের বাংলাভাষার কয়েকটি বৈশিষ্ট আল...
  • 1. Marxism
  • আধুনিক বাংলা ভাষা ও তার বৈশিষ্ট।
  • Discuss the career and achievements of Samudragupta .
  • ভাষাতত্ত্ব

Created with by ThemeXpose | Distributed by Blogger Templates