­
ইতালির ঐক্য আন্দোলনের পথে প্রধান বাধাগুলি কী ছিল ? - NANDAN DUTTA

ইতালির ঐক্য আন্দোলনের পথে প্রধান বাধাগুলি কী ছিল ?

by - April 29, 2025

ইতালির ঐক্য আন্দোলনের পথে প্রধান বাধাগুলি কী ছিল ? 

ইটালির ঐক্য আন্দোলনের সমস্যাগুলি কী ছিল ? 




ইটালির ঐক্য আন্দোলনের পথে প্রধান বাধাসমূহ :- 


ইতালির ইতিহাস অত্যন্ত ঘটনাবহুল। নেপোলিয়ন ইতালি জয় করেন এবং ঐক্যবদ্ধ ইতালি ও শক্তিশালী কেন্দ্রীভূত শাসন ব্যবস্থা প্রচলন করেন। কিন্তু , ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে ভিয়েনা সম্মেলনের মাধ্যমে ন্যায্য অধিকার নীতি প্রয়োগ করা হয় এবং ইতালিকে বহুখন্ডে বিভক্ত করা হয়। ফলে ফরাসি বিপ্লবের হাত ধরে ইতালিতে যে প্রগতিশীল ভাবধারা ও জাতীয়তাবাদী চেতনার প্রসার ঘটেছিল তা স্তিমিত হয়ে পড়ে। এরপর ম্যাৎসিনি ইতালিতে পুনরায় জাতীয়তাবাদী চেতনার জাগরণ ঘটান এবং ক্যাভুর ইতালির ঐক্য সম্পূর্ণ করেন। ইতালির ঐক্য স্থাপনের  পথে প্রধান বাধাগুলি ছিল - 

১. অস্ট্রিয়ার আধিপত্য :- 
১৮১৫ সালে ভিয়েনা সম্মেলনের মধ্যে দিয়ে সমগ্র ইউরোপ জুড়ে মেটারনিকের একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। মেটারনিখ ছিলেন প্রগতিশীল ভাবধারা , গণতন্ত্র , উদারনীতি - ইত্যাদির প্রবল বিরোধী। তিনি সমগ্র ইউরোপ জুড়ে পুরাতনতন্ত্র ও রক্ষনশীলতা বজায় রাখতে চেয়েছিলেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি সমগ্র ইউরোপ জুড়ে একাধিক দমনমূলক নীতি প্রয়োগ করেন। অস্ট্রিয়ার এই দমনমূলক নীতি ইতালির জাতীয়তাবাদী চেতনা , অখন্ড রাষ্ট্র স্থাপনের স্বপ্ন - ইত্যাদিকে প্রবলভাবে নস্যাৎ করে দেয়। 

২. উগ্র প্রাদেশিকতা :- 
ভিয়েনা সম্মেলন ও মেটার্নিকের তীব্র করাঘাতে ইতালি বহু খন্ডে বিভক্ত হয়ে পড়ে। বহুধাবিভক্ত ইতালির বিভিন্ন প্রদেশগুলির মধ্যে আঞ্চলিক বিভিন্নতা ছিল। প্রাথমিক পর্যায়ে এই প্রদেশগুলি নিজ নিজ আঞ্চলিক স্বার্থ সুরক্ষা করতেই অধিক প্রয়াসী ছিল। প্রদেশগুলির এই উগ্র প্রাদেশিকতা ইতালির ঐক্য আন্দোলনের পথে ছিল একটি প্রধান অন্তরায়। 


৩. ধর্ম সংক্রান্ত বিষয় :- 
ভিয়েনা সম্মেলনের মাধ্যমে পোপ তাঁর হৃত ক্ষমতা ফিরে পেলেও আধুনিক ও প্রগতিশীল ভাবধারার প্রতি পোপ শ্রদ্ধাশীল ছিলেন না। যেহেতু পোপের রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ধর্মীয় অধিকারের ভিত্তিতে ; তাই এই ধর্মীয় ভিত্তি ইতালির ঐক্যের পথে একটি অন্তরায় ছিল। পোপ আধুনিক ভাবধারাগুলিকে গ্রহণ না করলেও নিজ ক্ষমতা বজায় রাখতে পুরাতনতন্ত্র বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর ছিলেন। 

৪. বৈদেশিক শাসন :- 
ভিয়েনা সম্মেলনের পরবর্তীকালে ইটালির সার্ডিনিয়া - পিডমন্ট ব্যতীত অন্যান্য সকল প্রদেশে বৈদেশিক শক্তির শাসন প্রতিষ্ঠিত ছিল। এমনকি , সার্ডিনিয়া - পিডমন্টের রাজা ভিক্টর ইম্যানুয়েল ছিলেন রাজতন্ত্র ও পুরাতনতন্ত্রের সমর্থক। অন্যদিকে মোডেনার শাসনকর্তা ফরাসি বিপ্লব প্রসূত উদারনৈতিক আদর্শগুলোকে প্রতিহত করতে সক্রিয় ছিলেন। এই পরিস্থিতিতে ঐক্যবদ্ধ ইতালির আত্মপ্রকাশ কোনোভাবেই সম্ভব ছিলনা। 

৫. মেটারনিকের তীব্র দমননীতি :- 
মেটারনিখ তাঁর তীব্র দমনমূলক নীতির মাধ্যমে সমগ্র ইউরোপে ফরাসি বিপ্লব প্রসূত উদারনৈতিক ভাবধারাগুলিকে প্রতিহত করতে চেয়েছিলেন। তাই যখনই কোনো উদারনৈতিক ভাবধারা বা জাতীয়তাবাদের প্রসার ঘটত , মেটারনিখ তাঁর তীব্র দমননীতির মাধ্যমে তা প্রতিহত করতেন।   

৬. নেতৃত্বের অভাব :- 
বহু সমস্যায় জর্জরিত ইতালির ঐক্য সাধনের জন্য প্রয়োজন ছিল দক্ষ ও সুযোগ্য নেতৃত্বের। কিন্তু ম্যাৎসিনির আবির্ভাবের পূর্বকাল পর্যন্ত ইতালির ঐক্যসাধনের জন্য কোনো উল্লেখযোগ্য নেতৃত্বের আবির্ভাব ঘটেনি - যা ছিল ইতালির ঐক্য সাধনের পথে একটি প্রধান অন্তরায়।


৭. আদর্শগত দ্বন্দ্ব :- 
আদর্শগত দ্বন্দ্বও ছিল ইতালির ঐক্য সাধনের পথে একটি বড় বাধা। একদিকে , ম্যাৎসিনি ছিলেন রাজতন্ত্র বিরোধী এবং প্রজাতন্ত্র ও উদারনৈতিক ভাবধারার সমর্থক। অন্যদিকে ক্যাভুর ছিলেন প্রজাতন্ত্রের ঘোর বিরোধী এবং রাজতন্ত্রের সমর্থক। আবার গ্যারিবল্ডি প্রজাতন্ত্রের সমর্থক হলেও সক্রিয় অভ্যুত্থানে বিশ্বাস করতেন। এছাড়া , বৈদেশিক সাহায্য গ্রহণের ব্যাপারেও ম্যাৎসিনি ও ক্যাভুরের মধ্যে মতাদর্শগত বিরোধ দেখা যায়। 

৮. জনসমর্থনের অভাব :- 
প্রজাতন্ত্রের আদর্শ ও জাতীয়তাবাদী ভাবধারা কেবলমাত্র শিক্ষিত , মধ্যবিত্ত ও শহুরে বুর্জোয়াদের মধ্যেই প্রসারিত হয়েছিল। গ্রামীণ ইতালি , কৃষক ও অন্যান্য শ্রেণীর মানুষেরা জাতীয়তাবাদী আদর্শগুলি সম্পর্কে উদাসীন ছিলেন। তাই জনসমর্থনের অভাব ছিল ইতালির ঐক্য স্থাপনের পথে একটি অন্তরায়। 

৯. অস্ট্রিয়ার সামরিক ক্ষমতা :- 
অস্ট্রিয়া ছিল সামরিক ক্ষমতার দিক দিয়ে ইটালির তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী। তাই ইতালির পক্ষে কোনভাবেই অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে গিয়ে জাতীয়তাবাদের প্রসার ঘটানো সম্ভব হয়নি। এছাড়া মেটারনিখ তন্ত্রের সফলতার যুগে মেটারনিখ প্রায় সমগ্র ইউরোপীয় সামরিক শক্তিকেই অস্ট্রিয়ার স্বার্থে ব্যবহার করেছিলেন। 

১০. জুলাই বিপ্লবের ব্যর্থতা :- 
জুলাই বিপ্লবের সূচনা সমগ্র ইউরোপের জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ও উদারপন্থী ভাবধারা প্রসারের ক্ষেত্রে ব্যাপক আশার সঞ্চার করেছিল। কিন্তু জুলাই বিপ্লবের পর প্রজাতন্ত্রের অসারতা মানুষ উপলব্ধি করে। সমগ্র শাসনতন্ত্রকে  বুর্জোয়ারা নিজ স্বার্থে ব্যবহার করে ; ফলে সাধারণ মানুষের স্বার্থ উপেক্ষিত হয়। তাই জুলাই বিপ্লবের ব্যর্থতা জাতীয়তাবাদীদের হতাশ করে। 

পরিশেষে বলা যায় , জুলাই বিপ্লবের ব্যর্থতা জাতীয়তাবাদীদের হতাশ করলেও ফ্রেব্রুয়ারি বিপ্লবের পরবর্তী সময়কাল ইতালির ঐক্য স্থাপনের পক্ষে সহায়ক হয় এবং ম্যাৎসিনি ও ক্যাভুরের সুযোগ্য নেতৃত্বে ইতালির ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়।     

You May Also Like

0 comments