সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির বিভিন্ন উদ্দেশ্যগুলি আলোচনা কর।

by - March 28, 2024

সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির বিভিন্ন উদ্দেশ্যগুলি আলোচনা কর। 

সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। 

সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক ও সমাজকেন্দ্রিক উদ্দেশ্যগুলি কী কী ? 



সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির বিভিন্ন উদ্দেশ্য :-

সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির উদ্দেশ্য বহুবিধ। সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির উদ্দেশ্যগুলিকে স্থির করার সময় শিশুর চাহিদা ও বিকাশ এবং সমাজের সঙ্গে শিশুর মিথস্ক্রিয়ার বিষয়টিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখা হয়। সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির উদ্দেশ্যগুলি হল -   

১. শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীন বিকাশ :- 
সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীন বিকাশের লক্ষ্যে পরিচালিত হয়। শিশুর দৈহিক , মানসিক , নৈতিক , জ্ঞানমূলক , বৃত্তিমূলক - বিভিন্ন চাহিদা পূরণের মাধ্যমে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি শিক্ষার্থীর বিকাশকে সম্ভব করে তোলে। বিদ্যালয়ে পরিচালিত বিভিন্ন সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি শিশুকে বৈচিত্রপূর্ণ অভিজ্ঞতার সুযোগ প্রদান করে ; ফলে শিশু সার্বিকভাবে জীবন ও সমাজের সঙ্গে পরিচিত হয়। 

২. সামাজিকীকরণ :- 
সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি শিশুর  যথার্থ সামাজিকীকরণের লক্ষ্যে পরিচালিত হয়। শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ের ভেতরে ও বাইরে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিতে অংশগ্রহণ করে এবং তার ফলে শিশু দগতভাবে কাজ করতে শেখে এবং বৃহত্তর সমাজ জীবনের সঙ্গে পরিচিত হয়। 

৩. গণতান্ত্রিক চেতনার বিস্তার :- 
সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীর অপর একটি উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণতান্ত্রিক চেতনার বিস্তার করা। শিক্ষার্থী সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীতে অংশগ্রহনের ফলে নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হয় , দলগতভাবে কাজ করার গুরুত্ব উপলব্ধি করে , সকলের সঙ্গে সমানভাবে ভিন্ন ভিন্ন কাজে অংশগ্রহণ করে - এইভাবে শিক্ষার্থীর মধ্যে গণতান্ত্রিক চেতনার উন্মেষ ঘটে। 


৪. সমাজ সেবামূলক মনোভাব গঠন :-
সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিগুলি সামাজিক পরিমন্ডলে পরিচালিত হয়। বেশ কিছু ধরণের সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি শিশুর মধ্যে সেবামূলক মনোভাব গঠনে সহায়তা করে। যেমন - ত্রাণকার্যের জন্য অর্থ সংগ্রহ , বিভিন্ন রোগ সম্পর্কে সচেতনতা শিবির , রক্তদান শিবির , দুঃস্থ ছাত্রদের মধ্যে  বিনামূল্যে পুস্তক বিতরণ - ইত্যাদি। 

৫. পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি :- 
সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীর একটি অন্যতম লক্ষ্য হল শিক্ষার্থীদের মধ্যে পরিবেশ সংক্রান্ত সচেতনতা বৃদ্ধি। বিদ্যালয় পরিষ্কার - পরিচ্ছন্ন রাখা , বৃক্ষরোপন কর্মসূচি পালন , প্লাস্টিক দূরীকরণ কর্মসূচি পালন , বাগান পরিচর্যা - ইত্যাদি সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির মাধ্যমে শিশুর মধ্যে পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরী হয়। 

৬. জাতীয়তাবোধ গঠন :- 
সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির অপর একটি উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীদের মধ্যে জাতীয়তাবোধ গঠন। বিদ্যালয়ে পালিত বিভিন্ন জাতীয় দিবস , মহাপুরুষ ও স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জন্মদিবস পালন - ইত্যাদি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষার্থী তার জাতীয় জীবন সম্পর্কে সরাসরি অবগত হতে পারে এবং তার মধ্যে জাতীয়তাবোধ জাগ্রত হয়। 

৭. আন্তর্জাতিকতাবোধ গঠন :- 
সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিগুলির মাধ্যমে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন ও তাদের কর্মসূচি এবং সেই কর্মসূচির গুরুত্ব - ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষার্থীদের অবগত করে তোলার চেষ্টা করা হয়। আন্তর্জাতিকতাবোধের জ্ঞান ব্যতীত কোনো শিক্ষার্থীর শিক্ষা সম্পূর্ণ হতে পারেনা। 

৮. অবসরযাপনের শিক্ষা প্রদান :- 
শিক্ষার্থী তার অবসর সময় কীভাবে ইতিবাচকভাবে অতিবাহিত করতে পারে - সে বিষয়ে শিক্ষা প্রদান করা সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীর অপর একটি উদ্দেশ্য। ইতিবাচক অবসরযাপন শিক্ষার্থীদের মধ্যে গঠনমূলক মনোভাব বৃদ্ধি করে। 

৯. দৈহিক বিকাশ :- 
মানবজীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হল তার স্বাস্থ্য। সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি একদিকে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করে এবং দিকে বিভিন্ন খেলাধূলার মাধ্যমে শিশুর মধ্যে শরীরচর্চা বিষয়ে আগ্রহী করে তোলে। 


১০. মানসিক ও বৌদ্ধিক বিকাশ :- 
সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি বিভিন্ন বৈচিত্রময় পরিস্থিতি শিক্ষার্থীদের উপহার দেয়। খেলাধূলা , সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান , পরিবেশ ও সমাজ সম্পর্কে সচেতনতা , বিতর্ক , ক্যুইজ , সেমিনার - ইত্যাদি বৈচিত্রময় পরিস্থিতি সামগ্রিক দিক দিয়ে শিক্ষার্থীর মানসিক ও বৌদ্ধিক বিকাশে সহায়তা করে। 

১১. বৃত্তিমূলক চেতনার বিকাশ :- 
সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির মাধ্যমে শিক্ষার্থীর বৃত্তিমূলক চেতনার বিকাশে সহায়তা করা হয়। কাজের গুরুত্ব , দলগতভাবে কাজ করতে শেখা , কোনো কাজকে হীনদৃষ্টিতে না দেখা - ইত্যাদি আদর্শগুলি সহপাঠক্রমের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সঞ্চালন করা হয়। 

১২. শৃঙ্খলাবোধের বিকাশ :- 
বিদ্যালয়ে পালিত সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিগুলির সাফল্য নির্ভর করে শৃঙ্খলার উপর। সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি পরিচালনার সময় শিক্ষার্থীদের শৃঙ্খলাবোধের উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীদের মধ্যে শৃঙ্খলাবোধের বিকাশ ঘটানো হল সহপাঠক্রমের একটি অন্যতম উদ্দেশ্য। 

১৩. সৃজনশীলতার বিকাশ :- 
বিদ্যালয়ে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি পালনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতার বিকাশের সুযোগ দেওয়া হয়। স্কুল ম্যাগাজিন , দেয়াল পত্রিকা , সংগীত , নৃত্য , চিত্রাঙ্কন , কর্মশিক্ষা - ইত্যাদি সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটে। 

১৪. জ্ঞানমূলক বিকাশ :- 
শিক্ষার্থীদের জ্ঞানমূলক বিকাশ ঘটানোও সহপাঠক্রমের একটি অন্যতম উদ্দেশ্য। বিদ্যালয়ে পালিত হওয়া বিশেষ কিছু সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি শিক্ষার্থীদের জ্ঞানমূলক বিকাশে সহায়তা করে। যেমন - ক্যুইজ কনটেস্ট , বিতর্ক , আবৃত্তি - ইত্যাদি। 

১৫. ইতিবাচক ও গঠনমূলক মনোভাবের গঠন :- 
সহপাঠক্রমের বৈচিত্র , সাংস্কৃতিক - সৃজনশীল ও সামাজিক দিকগুলি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইতিবাচক ও গঠনমূলক মনোভাবের জন্ম দেয়। যার ফলে শিক্ষার্থী নিজের জীবন ও পরিচিত সমাজের মধ্যেও সেই গঠনমূলক আদর্শকে ছড়িয়ে দিতে পারে। 
 
১৬. সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশ :-  
যথার্থভাবে পরিচালিত সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি শিক্ষার্থীদের মধ্যে সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশে সহায়তা করে। সহপাঠক্রম শিক্ষার্থীদের অপ - সংস্কৃতি , উশৃঙ্খলতা , আদর্শহীনতা - ইত্যাদি থেকে দূরে রাখে। সহপাঠক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থী সংস্কৃতির আদর্শমানকে অনুভব করতে পারে। 

এছাড়াও সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির অন্যান্য উদ্দেশ্যগুলি হল - 
(ক ) শিক্ষার্থীর আত্মপ্রকাশের সুযোগ করে দেওয়া। 
(খ ) শিক্ষার্থীদের মধ্যে সহযোগিতামূলক মনোভাব বৃদ্ধি করা। 
(গ ) শিক্ষার্থীদের প্রাক্ষোভিক বিকাশকে তরান্বিত করা। 
(ঘ ) শিক্ষার্থীদের আদর্শ চরিত্র গঠন - ইত্যাদি।  


You May Also Like

0 comments