বিভিন্ন ধরণের সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি সম্পর্কে আলোচনা কর।

by - March 30, 2024

বিভিন্ন ধরণের সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি সম্পর্কে আলোচনা কর। 

সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির প্রকারভেদ আলোচনা কর। 

সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির শ্রেণীভাগ কর। 




বিভিন্ন ধরণের সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি সম্পর্কে আলোচনা কর। 

সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির প্রকারভেদ আলোচনা কর। 

সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির শ্রেণীভাগ কর। 


১. শরীরচর্চামূলক কার্যাবলি :- 
বিদ্যালয়ে শরীরচর্চামূলক কার্যাবলির মূলতঃ দুটি উদ্দেশ্য থাকে - (ক ) শরীরচর্চা ও তার উপযোগিতা সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সচেতন করা , ও (খ ) শিক্ষার্থীদের শরীরচর্চামূলক কার্যাবলিতে অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত করা। বিদ্যালয়ে শরীরচর্চামূলক কার্যাবলির পরিচালনার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন খেলাধুলা ( ফুটবল , ক্রিকেট , ভলিবল , কাবাডি - ইত্যাদি ) , যোগব্যায়াম - ইত্যাদির আয়োজন করা হয়। এইসকল শরীরচর্চামূলক কার্যাবলিতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের দলগত কাজে অংশগ্রহণ , সহযোগিতার মনোভাব , প্রতিযোগিতামূলক মানসিকতা বৃদ্ধি , শৃঙ্খলাপরায়ণতা - ইত্যাদি ইতিবাচক আদর্শগুলি গড়ে ওঠে। 

২. সামাজিক কার্যাবলি :- 
বিদ্যালয়ে এমন কিছু সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি পরিচালনা করা হয় যেগুলির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সমাজ সচেতনতা , সামাজিকীকরণ ও সামাজিক মিথস্ক্রিয়া , সহযোগিতার মনোভাব - ইত্যাদি তৈরী হয়। এই সকল কার্যাবলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল - রক্তদান শিবির আয়োজন , বিভিন্ন রোগ সম্পর্কে সচেতনতা শিবির , প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষদের জন্য ত্রাণ সংগ্রহ ইত্যাদি। 

৩. পরিবেশ সংক্রান্ত কার্যাবলি :- 
পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং পরিবেশের কল্যানে আত্মনিয়োগ করা প্রতিটি শিক্ষার্থীর আবশ্যিক কর্তব্য। তাই বিদ্যালয়ে পাঠক্রমের সঙ্গে সঙ্গে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি পরিচালনার ক্ষেত্রেও পরিবেশের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। পরিবেশ সংক্রান্ত সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল - বৃক্ষরোপন কর্মসূচি পালন , বিদ্যালয় পরিচ্ছন্নতা অভিযান , শ্রেণীকক্ষ পরিচ্ছন্ন রাখা , প্লাস্টিক দূরীকরণ কর্মসূচি পালন - ইত্যাদি।


৪. সাক্ষরতা কর্মসূচি :- 
সমাজের প্রতিটি ব্যক্তিকে সাক্ষর করে তোলা রাষ্ট্র ও ব্যক্তির একটি আবশ্যিক কর্তব্য। সাক্ষরতা কর্মসূচির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করা হয় শিক্ষার আলো সমাজের প্রতিটি ব্যক্তির কাছে পৌঁছে দিতে। স্থানীয় অঞ্চলে নিরক্ষর মানুষের শিক্ষা সম্পর্কে সচেতন করে তোলা , যে সকল শিশু শিক্ষার আঙিনার বাইরে আছে তাদের শিক্ষায়তনে নিয়ে আসা - এই সকল কার্যাবলিতে শিক্ষার্থীদের নিযুক্ত করা হয়। 

৫. সহযোগিতামূলক কর্মসূচি :- 
বিদ্যালয়ে পালিত বিভিন্ন সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি শিক্ষার্থীদের মধ্যে সহযোগিতার মনোভাব গড়ে তোলে। এইসকল কার্যাবলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল - সামাজিক বিভিন্ন সেবামূলক কাজ , বিদ্যালয় পরিচ্ছন্ন রাখা , বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান , খেলাধুলা - ইত্যাদি। এইসকল কার্যাবলিগুলি সফল করতে শিক্ষার্থীদের একে অপরের সঙ্গে সহযোগিতার সম্পর্ক থাকা বাধ্যতামূলক। শিক্ষার্থী এই সকল কার্যাবলিগুলিকে সফল করে তোলার তাগিদে সহযোগিতামূলক আচরণ করে। 

৬. বৌদ্ধিক ও জ্ঞানমূলক কার্যাবলি :- 
পাঠক্রমের সঙ্গে সঙ্গে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিগুলিও শিক্ষার্থীর বৌদ্ধিক ও জ্ঞানমূলক বিকাশে সহায়তা করে। এইসকল শিক্ষামূলক কার্যাবলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল - বিতর্কসভা আয়োজন , ক্যুইজ প্রতিযোগিতা , প্রবন্ধ প্রতিযোগিতা , বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা সভা আয়োজন - ইত্যাদি। 

৭. সৃজনশীল কার্যাবলি :- 
প্রতিটি শিক্ষার্থীর মধ্যে সৃজনশীলতা বিদ্যমান। শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতাকে উৎসাহিত করতে বিদ্যালয়ে বিভিন্ন সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির আয়োজন করা হয়। যেমন - বিদ্যালয় পত্রিকা , দেওয়াল পত্রিকা , বিভিন্ন ধরণের হাতের কাজ ও কর্মশিক্ষা , বিজ্ঞান প্রদর্শনী - ইত্যাদি। 

৮. আত্মপ্রকাশমূলক কার্যাবলী :- 
প্রতিটি শিক্ষার্থীর মধ্যে কিছু সুপ্ত প্রতিভা লুকিয়ে থাকে। বিভিন্ন সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আত্মপ্রকাশের সুযোগ দেওয়া হয়। এইসকল আত্মপ্রকাশমূলক কার্যাবলিগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল - নৃত্য ও সঙ্গীত , অভিনয় , সাহিত্য চর্চা , NCC , NSS , বিজ্ঞান প্রদর্শনী , হস্তশিল্প প্রদর্শনী , বিভিন্ন খেলাধুলা - ইত্যাদি। 


৯. সাংস্কৃতিক কার্যাবলি :- 
শিক্ষা হল সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। তাই শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাংস্কৃতিক সঞ্চালনের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়। এইসকল সাংস্কৃতিক কার্যাবলিগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল - বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা দিবস পালন , বিভিন্ন মনীষীদের জন্মদিবস পালন , বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস পালন , বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান - ইত্যাদি। 

১০. স্বায়ত্তশাসনমূলক কার্যাবলি :- 
বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের স্বায়ত্তশাসনমূলক কার্যাবলী বলতে বোঝায় - যে সকল কার্যাবলি শিক্ষার্থীরা নিজেরাই পরিচালনা করে। এইসকল কার্যাবলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল - বিদ্যালয়ের বিভিন্ন সমবায় সমিতি পরিচালনা , হোস্টেল পরিচালনা , বিদ্যালয় কর্তৃক আরোপিত বিভিন্ন অনুষ্ঠান পরিচালনা - ইত্যাদি। 

১১. কুসংস্কার দূরীকরণ সংক্রান্ত কর্মসূচি :- 
কুসংস্কার জীবনের একটি অভিশাপ। শিক্ষার একটি প্রধান উদ্দেশ্য হল কুসংস্কারমুক্ত সমাজ গঠন। তাই প্রতিটি শিক্ষার্থীর কুসংস্কারমুক্ত মানসিকতা গঠন করা প্রয়োজন। এই উদ্দেশ্যে বিদ্যালয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজন করা হয়। যেমন - যেসকল বিষয়ে সমাজে বিভিন্ন কুসংস্কার প্রচলিত আছে , সেই সকল বিষয়ে সচেতনতামূলক শিবির আয়োজন ; যেমন - কুকুরে কামড়ালে কী করণীয় , ভূতে পাওয়া রোগীর ক্ষেত্রে কী করণীয় - ইত্যাদি। 

১২. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার সংক্রান্ত কার্যাবলী :- 
আধুনিক জীবনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মানুষের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই প্রতিটি শিক্ষার্থীকে বিজ্ঞান মনস্ক করে তোলার চেষ্টা করা হয় ও প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার শেখানো হয়। এই সংক্রান্ত যেসকল সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি পরিচালনা করা হয় - সেগুলি হল - বিদ্যালয়ে কমপিউটার ক্লাশ , ওভার হেড প্রজেক্টরের মাধ্যমে পঠন - পাঠন , ইন্টারনেটের ব্যবহার - ইত্যাদি।  

You May Also Like

0 comments