শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্যের সমর্থনে বিভিন্ন যুক্তি দাও।

by - February 17, 2024

শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্যের সমর্থনে বিভিন্ন যুক্তি দাও।  



শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্যের সমর্থনে বিভিন্ন যুক্তি :- 

শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্যের সমর্থনে বিভিন্ন যুক্তিগুলি হল নিম্নরূপ - 

১. ব্যক্তিতান্ত্রিক শিক্ষা কেবলমাত্র ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে। ফলে একজন নির্দিষ্ট শিক্ষার্থীর পক্ষে সুপ্ত সম্ভাবনাগুলির পরিপূর্ণ বিকাশ সম্ভব। শুধুমাত্র ব্যক্তিতান্ত্রিক শিক্ষা প্রচলিত হলে প্রত্যেক শিক্ষার্থী তার দৈহিক , মানসিক , প্রাক্ষোভিক - ইত্যাদি বিভিন্ন চাহিদাগুলি যথার্থভাবে চরিতার্থ করতে পারে। শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্য শিক্ষার্থীকে আদর্শ মানুষ হিসাবে গড়ে তুলতে ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করতে সহায়তা করে। শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্য শিক্ষার্থীর জীবনকে সার্থক করে তোলে। 

২. জীববিজ্ঞানীগণ দাবী করেন , প্রত্যেক মানুষ পৃথক পৃথক সত্তা নিয়ে পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করে। দৈহিক , মানসিক ইত্যাদি সকল সামর্থ্যের দিক দিয়েই পরস্পর পরস্পরের চেয়ে ভিন্ন। শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্য ব্যক্তির এই ভিন্নতার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে এবং ভিন্ন ভিন্ন দক্ষতার বিকাশে সহায়তা করে। যেহেতু সকল ব্যক্তি পরস্পর পরস্পরের তুলনায় ভিন্ন - তাই শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্যই সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য। 


৩. প্রকৃতিবাদীরাও শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্যকেই গ্রহণযোগ্য বলে মনে করেন। প্রকৃতিবাদীদের মতে প্রত্যেক ব্যক্তি পৃথিবীতে জন্মগ্রহন করে সম্পূর্ণ নিষ্কলুষ অবস্থায়। কিন্তু সামাজিকীকরণের হাত ধরে ব্যক্তি সমাজ থেকে বিভিন্ন বিচ্যুতিমূলক আচরণ আয়ত্ত করে। তাই , প্রকতিবাদীরা সমাজকে বাদ দিয়ে শুধুমাত্র ব্যক্তিতান্ত্রিক শিক্ষাকেই সমর্থন করেছেন। 

৪. মনোবিদগণও শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্যকেই অধিক গ্রহণযোগ্য বলে মনে করেন। তাঁদের মতে , প্রত্যেকে ব্যক্তির মনোজগৎ একে - অপরের চেয়ে আলাদা। তাই সকলকে একই সঙ্গে সমাজতান্ত্রিক শিক্ষা প্রদান করলে ব্যক্তির যথার্থ বিকাশ কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তাই মনোবিদরা শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্যকেই সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করেন। 

৫. স্বামী বিবেকানন্দের মতে , প্রত্যেক মানুষ ব্রহ্মসত্তার অধিকারী। তাই শিক্ষার লক্ষ্য হল সেই পরমসত্তার সঙ্গে পার্থিব ব্যক্তির পরিচয় ঘটানো। সেই পরমজ্ঞান লাভ করাই হল শিক্ষার ও ব্যক্তিজীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য। তাই স্বামী বিবেকানন্দ সহ অন্যান্য ভাববাদীগণ শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্যের সমর্থনেই যুক্তি প্রদান করেছেন। 

৬. বাস্তববাদী তথা প্রয়োগবাদীরাও শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্যকেই সমর্থনযোগ্য বলে মনে করেন। তাঁদের মতে , সমাজ তথা মানব সভ্যতার প্রগতি ও উন্নয়ন ঘটেছে কতিপয় বিশিষ্ট ব্যাক্তিবর্গের মাধ্যমে। বিজ্ঞান , সাহিত্য , সমাজ সংস্কার , ধর্ম সংস্কার , প্রযুক্তি - ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষ আজ পর্যন্ত যা যা উন্নতি করেছে তা সবই ঘটেছে কিছু বিশেষ দক্ষতা সম্পন্ন মানুষের হাত ধরে। তাই শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্যই সমর্থনযোগ্য। 

৭. শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্যের সমর্থনে অপর একটি যুক্তি হল - প্রকৃত ও আদর্শ ব্যক্তিদের হাত ধরেই গড়ে ওঠে আদর্শ সমাজ। সমাজের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলি দক্ষ ও গতিশীল মানুষের দ্বারা পরিচালিত হয় এবং সামাজিক পরিবর্তন সাধিত হয়। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় , ১৭৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লবের সংগঠনের ক্ষেত্রে ফ্রান্সের দার্শনিকদের ভূমিকা ছিল সর্বাধিক। এছাড়াও ইউরোপ ও বাংলার ধর্ম সংস্কার ও নবজাগরণের ক্ষেত্রেও কিছু প্রগতিশীল মানুষের ভূমিকা ছিল সর্বাধিক। 

পরিশেষে বলা যায় , শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্য যেহেতু ব্যক্তিকেন্দ্রিক সেহেতু ব্যক্তি এক্ষেত্রে নিজের সুপ্ত সম্ভাবনাগুলির সর্বাধিক বিকাশের উপযুক্ত সুযোগ লাভ করে। অবশ্য আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় এককভাবে ব্যাক্তিতান্ত্রিক শিক্ষা গ্রহণ করা হয়নি।   

You May Also Like

0 comments