সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষা ও ব্যাপক অর্থে শিক্ষার মধ্যে পার্থক্যগুলো আলোচনা কর।

by - February 08, 2024

সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষা ও ব্যাপক অর্থে শিক্ষার মধ্যে পার্থক্যগুলো আলোচনা কর। 

সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষা ও ব্যাপক অর্থে শিক্ষার মধ্যে পার্থক্য। 




সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষা ও ব্যাপক অর্থে শিক্ষার মধ্যে পার্থক্যগুলো আলোচনা কর। 

সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষা ও ব্যাপক অর্থে শিক্ষার মধ্যে পার্থক্য। 

সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষা ও ব্যাপক অর্থে শিক্ষার মধ্যে পার্থক্যগুলি নিম্নরূপ :- 

১. অর্থগত দিক :- 
সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষা হল মূলতঃ পুঁথিগত শিক্ষা যা হল কিছু তত্ত্ব ও তথ্যের সমন্বয়। সাধারণতঃ বিদ্যালয় শিক্ষাকে সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষা বলা হয়। 
কিন্তু ব্যাপক অর্থে শিক্ষা হল বিদ্যালয়ের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থী তার সমাজ , পরিবেশ ও সংস্কৃতি থেকে যা কিছু শেখে। 

২. লক্ষ্যগত দিক :- 
সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষার মূল লক্ষ্য হল শিক্ষার্থীকে কিছু সাধারণ ও বিশেষ কৌশল ও জ্ঞান আয়ত্ত্ব করানো। অন্যদিকে ব্যাপক অর্থে শিক্ষার মূল লক্ষ্য হল শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীন উন্নয়ন ও বাস্তব জীবনের সঙ্গে অভিযোজন ঘটানো। 

৩. ব্যাপ্তি :- 
সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষা বিদ্যালয় জীবনের মধ্যে সীমাবদ্ধ। বিদ্যালয়ের মধ্যেই সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষা শুরু হয় এবং বিদ্যালয়েই শেষ হয়। 
কিন্তু ব্যাপক অর্থে শিক্ষা শিক্ষার্থীর জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত পরিচালিত হয়। শিক্ষার্থী সারাজীবন ধরে নিজ পরিবেশ ও সমাজ থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন করে। 

৪. বিষয়গত পার্থক্য :- 
সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষার মূল বিষয় হল তত্ত্ব ও তথ্য। 
কিন্তু ব্যাপক অর্থে শিক্ষার ক্ষেত্রে তত্ত্ব ও তথ্যের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থী ব্যবহারিক ও প্রাসঙ্গিক জ্ঞান অর্জন করতে পারে। 

৫. শিক্ষকের ভূমিকা :- 
সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষকের ভূমিকা হল মূলতঃ পুঁথিগত জ্ঞান বিতরণ করা। এক্ষেত্রে শিক্ষক পাঠক্রম ও শিক্ষার্থীর মধ্যে সেতুবন্ধনের কাজ করেন। 
কিন্তু ব্যাপক অর্থে শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষকের ভূমিকা থাকে গৌণ। এখানে শিক্ষক বড়জোর সহায়কের ভূমিকা পালন করতে পারেন। ব্যাপক অর্থে শিক্ষার বহু ক্ষেত্রে শিক্ষক উপস্থিতি অর্থহীন হয়ে পড়ে। 

৬. শিক্ষণ পদ্ধতিগত ক্ষেত্রে পার্থক্য :- 
সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষণ পদ্ধতি মূলতঃ মৌখিক নির্দেশনা , বক্তব্য উপস্থাপন , পরীক্ষণ - ইত্যাদি পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। 
কিন্তু ব্যাপক অর্থে শিক্ষার ক্ষেত্রে সেরকম কোনো পদ্ধতি অনুসরণের বিষয়টি অপ্রাসঙ্গিক। শিক্ষার্থী - নিজ চাহিদা ও সামর্থ্য অনুযায়ী আত্মসক্রিয়তার দ্বারা জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জন করে। 


৭. শিক্ষার্থীর ভুমিকাগত ক্ষেত্রে পার্থক্য :- 
সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষায় শিক্ষার্থীর ভূমিকা কেবলমাত্র নিষ্ক্রিয় শ্রোতার। শিক্ষক কর্তৃক আরোপিত জ্ঞান অর্জন ছাড়া তার এখানে বিশেষ কিছু করার থাকেনা। 
কিন্তু ব্যাপক অর্থে শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান অর্জনের সময় সক্রিয় থাকে এবং নিজ প্রয়োজন অনুসারে শিখন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে। 

৮. পাঠক্রমের পার্থক্য :- 
সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষার ক্ষেত্রে বিদ্যালয়গুলিতে কেবলমাত্র কিছু নির্দিষ্ট বিষয়ে পঠন পাঠন করা হয়। শিক্ষার্থী নিজ পাঠক্রমের বাইরে সেরকম কিছু শেখবার সুযোগ পায়না। 
কিন্তু ব্যাপক অর্থে শিক্ষার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনো পাঠক্রম থাকে না। শিক্ষার্থীর পারিপার্শ্বিক পরিবেশ , সমাজ ও সংস্কৃতি সবকিছুই পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত। 

৯. শিক্ষার সংস্থাগত পার্থক্য :- 
সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষার মূলতঃ দুটি প্রধান সংস্থা - বিদ্যালয় ও পরিবার। 
কিন্তু ব্যাপক অর্থে শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর সামগ্রিক পরিবেশ , বিদ্যালয় , পরিবার , দূরদর্শন , সংবাদপত্র , ধর্মীয় সংস্থা - সবকিছুই শিক্ষার সংস্থা।       

১০. শৃঙ্খলাগত পার্থক্য :- 
সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী ও বিদ্যালয়ের শৃঙ্খলার উপর অত্যন্ত গুরুত্ব আরোপ করা হয়। এক্ষেত্রে শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয় ও কঠোরভাবে বাহ্যিক শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। 
কিন্তু ব্যাপক অর্থে শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী আত্ম - শৃঙ্খলার দ্বারা প্রেরিত হয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করে। 

১১. উপকরণগত পার্থক্য :- 
সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষার ক্ষেত্রে শ্রেণীকক্ষে ব্ল্যাক - বোর্ড , বইপত্র , ক্যাটালগ - ইত্যাদি সাধারণ উপকরণ ব্যবহার করা হয়। 
কিন্তু ব্যাপক অর্থে শিক্ষার ক্ষেত্রে উপকরণগত কোনো নির্দিষ্ট বাধ্যবাধকতা নেই। শিক্ষার্থী এক্ষেত্রে তার প্রয়োজন অনুসারে শিক্ষা - উপকরণ ব্যবহার করতে পারে। 

১২. শিক্ষার্থীর জীবনে প্রভাব :- 
সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষা শিক্ষার্থীকে বৃত্তি অর্জনে , প্রথাগত শিখন অর্জনে এবং তাত্ত্বিক জ্ঞান অর্জনে সহায়তা করে। মূলতঃ লিখতে পারা , পড়তে পারা গণিত ও যুক্তি নির্ণয়ের ক্ষমতা - ইত্যাদি 3 R এর জ্ঞান শিক্ষার্থী সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষার মাধ্যমে পেতে পারে।  
কিন্তু ব্যাপক অর্থে শিক্ষা শিক্ষার্থীকে 3 R এর জ্ঞানের পাশাপাশি পেশাগত দক্ষতা অর্জন , প্রক্ষোভিক বিকাশ , সাংস্কৃতিক মিথস্ক্রিয়া , সামাজিকীকরণ ইত্যাদি 7 R এর জ্ঞান অর্জনে সহায়তা করে। 

পরিশেষে বলা যায় , সংকীর্ণ ও ব্যাপক অর্থে শিক্ষা উভয়ই শিক্ষার্থীর জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে কারো ভুমিকাকেই ছোট বা বড় করে দেখা উচিত নয়। উভয়ই শিক্ষার্থীর জীবনে সদর্থক বিকাশের ভূমিকা পালন করে।  


You May Also Like

0 comments