Pages

Powered by Blogger.
1ST SEMESTER SUGGESTION 2 ND YEAR SUGGESTION 2ND SEMESTER 3RD SEMESTER BENGALI NOTES CU suggestion. EDUCATION NOTES ENGLISH COMPULSORY GBU Suggestion. HISTORY EUROPE & WORLD HISTORY NOTES POL SC NOTES SOCIOLOGY NOTES WBCS 2020

NANDAN DUTTA

A new approach for exam notes .

ন্যায়ের সংজ্ঞা দাও। ন্যায়ের প্রকৃতি - পরিধি আলোচনা কর। 

ন্যায়বিচার কাকে বলে ? ন্যায়বিচারের প্রকৃতি - পরিধি আলোচনা কর। 

ন্যায়ের ধারণা ও প্রকৃতি - পরিধি। 




ন্যায়ের ধারণা / সংজ্ঞা :- 


ন্যায় হল একপ্রকার আদর্শমূলক তত্ত্ব ; তাই ন্যায়ের সর্বজনগ্রাহ্য সংজ্ঞা নিরূপণ করা সহজসাধ্য নয়। ন্যায়বিচার মূলতঃ একটি নৈতিক ধারণা। এর মূল ভিত্তি হল যৌক্তিকতা , যথার্থতা ও ঔচিত্যমূলক বিষয়। তবে দেশ - কাল ভেদে ন্যায়ের ধারণার পরিবর্তন ঘটে। তাই ন্যায় হল একটি গতিশীল ধারণা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ ও সমাজের আদর্শ , রীতিনীতি , প্রথা ও সংস্কৃতি - ইত্যাদি সবকিছুরই পরিবর্তন ঘটে। যেহেতু ন্যায়ের ধারণাটি উপরোক্ত বিষয়গুলির সঙ্গে সম্পর্কিত তাই ন্যায়ের পরিবর্তন সাধিত হয়। 

অধ্যাপক বার্কার বলেছেন , ন্যায় হল সম্পূর্ণরূপে মূল্যবোধের সমষ্টি এবং ন্যায়ের মধ্যে অন্যান্য রাজনৈতিক মূল্যবোধগুলির সমাবেশ ঘটেছে। 

Institutes of Justinian এর মতে , সঠিক , সাধারণ ও সামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার একটি মানসিক অনুভূতি ও ইচ্ছাই হল ন্যায়। 

আর্নেস্ট বার্কার তাঁর Principles of Social and Political Theory শীর্ষক গ্রন্থে ন্যায় সম্পর্কে তাঁর ধারণা উপস্থাপন করেছেন। তিনি ন্যায়কে একটি সমন্বয়কারী শব্দ হিসাবে উল্লেখ করেছেন। ন্যায় শব্দটির বুৎপত্তিগত অর্থ বিশ্লেষণ করলে বার্কারের মতবাদের সত্যতা প্রমাণিত হয়। ন্যায় শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ হল Justice এবং এই শব্দটি এসেছে দুটি ল্যাটিন শব্দ Justus ও Justitia থেকে। এই শব্দগুলির অর্থ সংযোগসাধন ও সমন্বয়সাধন। সুতরাং একটি সুগঠিত ব্যবস্থার মধ্যে বিভিন্ন মূল্যবোধের সমন্বয় হল ন্যায়। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

ন্যায়ের প্রকৃতি - পরিধি :- 


ন্যায়ের প্রকৃতি - পরিধি বিষয়ে আলোচনা করতে হলে বিভিন্ন মতবাদ ও তত্ত্বের অবতারণা করতে হয়। যদিও ন্যায়ের প্রকৃতি ও পরিধি বিষয়ে একটি সর্বজনগ্রাহ্য তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করা কঠিন , তবু কয়েকটি তত্ত্বের উপস্থাপন করে ন্যায়ের প্রকৃতি ও পরিধি বিষয়ে আলোকপাত করা সম্ভব। যেমন - 

ন্যায় সম্পর্কিত প্রাচীন গ্রিক ধারণা :- 
ন্যায়ের প্রকৃতি সম্পর্কে প্রাচীন গ্রিক দর্শনে আলোচনার উল্লেখ পাওয়া যায়। পিথাগোরাসের দর্শনে ন্যায়কে বর্গসম ( Square number ) বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ন্যায় হল একটি সমন্বয়পূর্ণ ধারণা।আবার গ্রিক দার্শনিক প্লেটো তাঁর বিখ্যাত Republic গ্রন্থে ন্যায়কে অধিবিদ্যামূলক তত্ত্ব হিসাবে উপস্থাপন করেছেন। প্লেটোর মতে , রাষ্ট্রগঠনের প্রধান উপাদানগুলির মধ্যে ন্যায় হল অন্যতম। ব্যক্তি নিজের অবস্থানগত দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের ক্ষেত্রে অবাঞ্চিত রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ না করাই হল ন্যায়। 

রোমান আইনজ্ঞদের দৃষ্টিতে ন্যায়ের প্রকৃতি :- 
রোমান আইনজ্ঞদের মতে আইন হল ন্যায়ের প্রকাশ। ন্যায় হল ধর্ম ও পবিত্রতার সঙ্গে যুক্ত। আইনসঙ্গত ন্যায় সমাজে সার্বিক দিক দিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করে। সেন্ট অগাস্টাইনও ন্যায়কে ধর্ম ও পবিত্রতার সঙ্গে সংযুক্ত বলে উল্লেখ করেছেন। ন্যায় সমাজের নেতিবাচক শক্তিগুলিকে প্রতিহত করে সমাজে শান্তি , সমতা , স্বাধীনতা , মৈত্রী - ইত্যাদি বিষয়গুলির মধ্যে সমন্বয়সাধন করে। 

উপযোগিতাবাদের সাপেক্ষে ন্যায়ের প্রকৃতি :- 
উপযোগিতাবাদের সমর্থকেরা সামাজিক আদর্শগুলির সমন্বয়সাধনকারী হিসাবে ন্যায়কে বিশ্লেষণ করতে সম্মত নন। যেমন উপযোগীতাবাদের প্রধান সমর্থক ডেভিড হিউম সামাজিক আদর্শ হিসাবে ন্যায়ের ধারণাকে গুরুত্বহীন বলে দাবী করেছেন। তিনি ন্যায়ের পরিবর্তে চাহিদার যোগান ও উপযোগিতার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

সাবেকী উদারনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে ন্যায়ের প্রকৃতি :- 
সাবেকী উদারনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির অন্যতম প্রবক্তা আর্নেস্ট বার্কার ন্যায়কে Social Reality বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে , ন্যায় একদিকে সাম্য , মৈত্রী , স্বাধীনতা , সৌভাতৃত্ব ইত্যাদি বিষয়গুলির মধ্যে সমন্বয়সাধন করে এবং অন্যদিকে সমাজস্থ ব্যক্তিবর্গের ভিন্ন ভিন্ন দাবী - দাওয়ার মধ্যেও সামঞ্জস্যবিধান করে। 
সাবেকী উদারনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির অপর প্রবক্তা প্লেটো মনে করতেন , একমাত্র সমন্বয়সাধনের মাধ্যমেই ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা সম্ভব। অন্যের কাজে হস্তক্ষেপ না করে নিজের সামর্থ্য ও যোগ্যতা অনুসারে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের স্বাধীনতা প্রদান করে ন্যায়। 

আধুনিক উদারনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে ন্যায়ের প্রকৃতি :- 
নয়া উদারনীতি মতবাদের অন্যতম প্রবক্তা হলেন জন রুলস। ন্যায় সম্পর্কে তিনি আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গির অবতারণা করেন তাঁর A Theory of Justice গ্রন্থে। জন রুলসের মতে ন্যায়ের মূল ভিত্তি হল সমবন্টন। জন রুলস বলেছেন , ন্যায়ের অর্থ শুধুমাত্র সংখ্যাগরিষ্ঠের কল্যাণসাধন নয় ; ন্যায়বিচার সমাজস্থ সকল ব্যক্তিবর্গের কল্যাণের পথ প্রশস্ত করে। ন্যায়ের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে জন রুলস সমাজের দুর্বলতর মানুষের জন্য বিশেষ সুযোগ - সুবিধা প্রদানের কথা বলেছেন। 

জন রুলসের ধারণায় ন্যায়ের প্রধান - প্রধান নীতি :- 
জন রুলস ন্যায়ের তিনটি মূলনীতির কথা উল্লেখ করেছেন। সেগুলি হল - 
(ক) সমাজস্থ সকল ব্যক্তিবর্গের স্বাধীনতার অধিকার। 
(খ) সামাজিক মর্যাদা , সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার , সকল প্রকারের আইনগত অধিকার - ইত্যাদি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সমান সুযোগ সুবিধার উপস্থিতি। 
(গ) সমাজের দুর্বল ও পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর জন্য বিশেষ সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা। 

ন্যায়ের প্রকৃতি সম্পর্কে রবার্ট নোজিক - এর অভিমত :- 
ন্যায়ের প্রকৃতি বিষয়ে জন রুলসের মতবাদের বিরোধী মতবাদ পোষণ করেন রবার্ট নোজিক। রবার্ট নোজিক ন্যায়ের যে প্রকৃতি বিশ্লেষণ করেছেন - তা পদ্ধতিগত ন্যায়ের তত্ত্ব নামে পরিচিত। এই তত্ত্ব অনুসারে , রাষ্ট্র হবে সর্বাপেক্ষা কম শক্তিশালী ; সম্পত্তি ও মুনাফার উপর ব্যক্তির অধিকার সর্বদা প্রতিষ্ঠিত থাকবে। নাগরিকদের সম্পত্তি ও মুনাফার সমবন্টন নীতি অনুসরণ করে রাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করলে - তা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে।    

মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে ন্যায়ের প্রকৃতি :- 
মার্কসবাদীরা ন্যায় বলতে অর্থনৈতিক সাম্যের কথা বলেন। মার্কসবাদীদের মতে , সমাজে অর্থনৈতিক সাম্য ব্যতীত সাম্য , অধিকার , স্বাধীনতা , অধিকার - ইত্যাদি বিষয়গুলি অর্থহীন হয়ে পড়ে। তাই সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হতে পারে একমাত্র শোষণমুক্ত সাম্যবাদী সমাজে। একমাত্র অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সাম্য প্রতিষ্ঠিত হলেই সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সম্ভব। 

পরিশেষে বলা যায় , ন্যায় মূলতঃ সামাজিক আদর্শসমূহের সমন্বয়সাধনকারী হলেও তা ভিন্ন ভিন্ন স্থানে , ভিন্ন ভিন্ন সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে পরিবর্তিত হয়। কেননা , দেশ ও কালভেদে আদর্শসমূহের পরিবর্তন ঘটে। আধুনিক যুগে রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও রাষ্ট্রচিন্তার পরিবর্তনের ফলে সাম্যের ধারণার বিবর্তন ঘটেছে এবং যথার্থ সাম্য প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত হয়েছে।    

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো
    
Share
Tweet
Pin
Share
1 comments

স্বাধীনতার সংজ্ঞা দাও। স্বাধীনতার বিভিন্ন রূপগুলি সম্পর্কে লেখ। 

স্বাধীনতার সংজ্ঞা ও প্রকারভেদ। 

বিভিন্ন ধরণের স্বাধীনতা। 




স্বাধীনতার ধারণা / সংজ্ঞা :- 


ফরাসি বিপ্লব প্রসূত স্বাধীনতা , সাম্য ও মৈত্রী - এই তিনটি আদর্শকে মহান আদর্শরূপে বিবেচিত করা হয়। এক অর্থে স্বাধীনতা হল সকল প্রকার প্রতিবন্ধকতার অবসান। তবে স্বাধীনতা কখনোই অবাধ নয় , এর কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। 

স্বাধীনতার সংজ্ঞা প্রসঙ্গে ল্যাস্কি বলেছেন - স্বাধীনতা হল এমন একটি পরিবেশ যেখানে ব্যক্তিসত্তার পরিপূর্ণ বিকাশ সম্ভব। এই বাহ্যিক পরিবেশ তৈরী করে রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ। 

অপরদিকে হেগেল বলেছেন , আইনকে মান্য করাই হল স্বাধীনতা। 

বার্কার বলেছেন , রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা বা আইনগত স্বাধীনতা হল সকলের জন্য শর্তসাপেক্ষে স্বাধীনতা। 

মার্কসবাদীরা অবশ্য স্বাধীনতা সম্পর্কে ভিন্নমত পোষণ করেন। তাঁদের মতে স্বাধীনতা হল মানুষের পরিপূর্ণ ব্যক্তিত্বের বিকাশের সুযোগ এবং এজন্য প্রয়োজন সকল প্রকার আর্থিক শোষণ ও অসাম্যের অবসান। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

স্বাধীনতার বিভিন্ন রূপ / বিভিন্ন প্রকার স্বাধীনতা :- 


১. ব্যক্তিগত স্বাধীনতা :- 
ব্যক্তিগত স্বাধীনতা প্রত্যটির জন্ম হয় প্রাচীন গ্রিসের এথেন্সে। তাঁরা ব্যক্তিগত স্বাধীনতা বলতে বুঝতেন ব্যক্তির বাহ্যিক আচার - আচরণের ওপর সর্বপ্রকার নিয়ন্ত্রনহীনতা। প্রাচীন গ্রিসে এই ব্যক্তিগত স্বাধীনতার ধারণার মাধ্যমেই স্বাধীনতার বর্তমান ধারণাটি বিকাশলাভ করে। 

২. জাতীয় স্বাধীনতা বা সম্প্রদায়গত স্বাধীনতা :- 
প্রাচীন গ্রিকবাসীদের নিকট জাতীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রদায়গত স্বাধীনতা ছিল সমার্থক। অধ্যাপক বার্নস বলেছেন - সর্বপ্রকার স্বাধীনতার উন্নতির ভিত্তি হল জাতীয় স্বাধীনতা। জাতীয় স্বাধীনতা হল বহিঃশত্রুর নিয়ন্ত্রণবিহীনতা এবং জাতীয় স্বাধীনতা না থাকলে ব্যক্তিগত স্বাধীনতার অস্তিত্বও অর্থহীন হয়ে পড়ে। 

৩. স্বাভাবিক স্বাধীনতা :- 
স্বাভাবিক স্বাধীনতা তত্ত্বের প্রবক্তা হলেন রুশো। প্রাক - সামাজিক ও প্রাক - রাজনৈতিক যুগে মানুষ অবাধ স্বাধীনতা ভোগ করত। মানুষের উপর কোনোপ্রকার বাধানিষেধ আরোপিত ছিলনা। মানুষের এই স্বাধীনতাকেই স্বাভাবিক স্বাধীনতা বলা যেতে পারে। কিন্তু স্বাভাবিক স্বাধীনতা তত্ত্বের বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ হল - অবাধ ও নিয়ন্ত্রণবিহীন স্বাধীনতা মানুষকে স্বেচ্ছাচারী করে তোলে। 

৪. সামাজিক স্বাধীনতা :- 
সামাজিক আচার - আচরণ , রীতিনীতি , প্রথা - ইত্যাদি অনুসারে যে স্বাধীনতা সংরক্ষিত হয় - তা হল সামাজিক স্বাধীনতা। এইধরণের স্বাধীনতা নীতিবোধ ও সামাজিক বিবেক দ্বারা পরিচালিত হয়। কিন্তু সামাজিক স্বাধীনতার বিষয়টি আপেক্ষিক। কেননা প্রথা ও রীতিনীতির উপর ভিত্তি করে যে স্বাধীনতা গড়ে ওঠে তা কোনো কোনো সময় অমানবিক হয়ে উঠেছে - এমন নিদর্শনও লক্ষ্য করা যায় ; যেমন ভারতে একদা প্রচলিত সতীদাহ প্রথা , প্রাচীন গ্রিসে প্রচলিত ক্রীতদাস প্রথা - ইত্যাদি। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৫. নৈতিক স্বাধীনতা :- 
নৈতিক স্বাধীনতা নীতিবোধ ও নৈতিক চেতনার দ্বারা সংরক্ষিত ও পরিচালিত হয়। আদর্শবাদী রাষ্ট্রচিন্তবিদরা নৈতিক স্বাধীনতার প্রধান প্রবক্তা। নৈতিক স্বাধীনতা ব্যক্তির নীতিবোধকে স্বাধীনতা উপভোগের মানদন্ড হিসাবে বিবেচিত করে। 

৬. আইনগত স্বাধীনতা :- 
বর্তমানে সকল রাষ্ট্র ব্যবস্থাতেই আইনগত স্বাধীনতার অস্তিত্ব বর্তমান। এই ধরণের স্বাধীনতা আইন ও সংবিধান স্বীকৃত হয়। কোনো কোনো রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আইনগত স্বাধীনতাকে আইন ও সংবিধান কর্তৃক নিয়ন্ত্রণ বলেও মনে করেন। কেননা , রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় অবাধ স্বাধীনতা স্বৈরাচারিতার নামান্তর ; তাই মানুষের অবাধ গতিবিধির উপর আইনসঙ্গত নিয়ন্ত্রন আরোপ করা প্রয়োজন। আইনসঙ্গত স্বাধীনতার প্রকারভেদ সম্পর্কে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ ঐক্যমত্য না হলেও আইনগত স্বাধীনতাকে প্রধানতঃ তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন - 

৬(ক). ব্যক্তি স্বাধীনতা বা পৌর স্বাধীনতা :- 
ব্যক্তি স্বাধীনতা বা পৌর স্বাধীনতা হল সেই সকল স্বাধীন অধিকার যার দ্বারা ব্যক্তি তার ব্যক্তিসত্তার পরিপূর্ণ বিকাশ সাধন করতে পারে। এই সকল অধিকারের মধ্যে প্রধান হল - ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকার , ধর্মীয় অধিকার , বাক স্বাধীনতাও মতামত প্রকাশের অধিকার , স্বাধীনভাবে চলাফেরা করা ও বসবাসের অধিকার , সম্মিলিত হওয়ার অধিকার , পেশাগত অধিকার - ইত্যাদি। প্রতিটি গণতন্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় এই অধিকারগুলি আইন তথা সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত হয়। 

৬.(খ) রাজনৈতিক স্বাধীনতা :- 
রাজনৈতিক স্বাধীনতা ব্যতীত গণতন্ত্র অর্থহীন। রাজনৈতিক স্বাধীনতাগুলি মানুষকে রাষ্ট্রব্যবস্থায় অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেয়। রাজনৈতিক অধিকারগুলির মধ্যে প্রধান হল - নির্বাচিত হওয়ার অধিকার , নির্বাচনে অংশগ্রহণের অধিকার , সরকারি কার্যাবলীর সমালোচনার অধিকার , সরকারি চাকুরী গ্রহণের অধিকার ইত্যাদি। প্রতিটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে মানুষের রাজনৈতিক অধিকারগুলি স্বীকৃত। 

৬.(গ). অর্থনৈতিক স্বাধীনতা :-  
ল্যাস্কি - প্রমুখ রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ মনে করেন অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ব্যাতিত অন্য সকল প্রকার স্বাধীনতা অর্থহীন। মার্সবাদীরাও অর্থনৈতিক স্বাধীনতার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন। এপ্রসঙ্গে বার্কার যথার্থই বলেছেন , অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পরাধীন শ্রমিক রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কখনোই স্বাধীন হতে পারেননা। অর্থনৈতিক স্বাধীনতার অন্তর্ভুক্ত প্রধান অধিকারগুলি হল - যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মে অংশগ্রহণের অধিকার , অক্ষম ব্যক্তিদের রাষ্ট্র কর্তৃক প্রতিপালিত হওয়ার অধিকার , উপযুক্ত পারিশ্রমিক লাভের অধিকার , বার্ধক্যে আর্থিক নিরাপত্তার অধিকার , সর্বপ্রকার শোষণের হাত থেকে মুক্তির অধিকার - ইত্যাদি। 

পরিশেষে বলা যায় , উপরে আলোচিত ভিন্ন ভিন্ন ধরণের স্বাধীনতার মধ্যে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার বিষয়টি সর্বাধিক বিতর্কিত ও আলোচিত। কেননা , যেসকল রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ মুষ্টিমেয় পুঁজিপতিদের হাতে অর্পিত থাকে সেখানে সেখানে জনগণ কোনো স্বাধীনতাই সঠিকভাবে উপভোগ করতে পারেনা। একমাত্র মালিকানা ব্যবস্থার পরিবর্তন ও উৎপাদনশীলতার মালিকানা ক্ষেত্রে পরিবর্তন - অর্থনৈতিক স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে। তবে এই বিষয়টি সম্পর্কে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ একমত নন।     

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো     

Share
Tweet
Pin
Share
No comments

স্বাধীনতার রক্ষাকবচগুলি সম্পর্কে আলোচনা কর। 

স্বাধীনতার বিভিন্ন শর্তগুলি কী কী ? 



স্বাধীনতার রক্ষাকবচ :- 


প্রতিটি উদারনৈতিক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ব্যক্তিস্বাধীনতা রক্ষা করার জন্য যেসকল বিশেষ ব্যবস্থা বলবৎ থাকে - সেগুলিকেই বলে স্বাধীনতার রক্ষাকবচ। অধ্যাপক ল্যাস্কি এইসকল বিধিব্যবস্থাগুলিকে স্বাধীনতা রক্ষা করার ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন। প্রতিটি উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে স্বাধীনতার রক্ষাকবচগুলি গুরুত্বপূর্ণ , কেননা , এগুলি ছাড়া স্বাধীনতাকে যথার্থভাবে উপলব্ধি করা যায়না। 
স্বাধীনতা কখনোই অবাধ হতে পারেনা ; কেননা , অবাধ স্বাধীনতা স্বেচ্ছাচারিতার নামান্তর। তাই যথার্থ স্বাধীনতা বলতে আইনগত স্বাধীনতাকেই বলা হয়। আইন স্বাধীনতাকে সুনির্দিষ্ট করে ও পরিপূরক হিসাবে কাজ করে। আধুনিক উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে স্বাধীনতার রক্ষাকবচগুলি হল - 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

১. সাংবিধানিক বিধি - ব্যবস্থা ও মৌলিক অধিকার :-
সংবিধানে লিখিত মৌলিক অধিকারগুলিকে স্বাধীনতার প্রধান রক্ষাকবচ বলে অনেকে মনে করেন। মৌলিক অধিকার সংবিধানে লিপিবদ্ধ থাকলে জনগণ সেগুলির বিষয়ে সচেতন থাকে এবং মৌলিক অধিকার ক্ষুন্ন হলে আদালতের শরণাপন্ন হতে পারে। অপরদিকে রাষ্ট্র নাগরিকদের এইসকল মৌলিক অধিকার রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর থাকে। ভারতীয় সংবিধানে লিখিত কয়েকটি মৌলিক অধিকার হল - বাক স্বাধীনতা ও মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা , ধর্মীয় স্বাধীনতা - ইত্যাদি। মূলতঃ নাগরিকদের মৌলিক অধিকার তথা স্বাধীনতার উপর সরকারি হস্তক্ষেপকে প্রতিরোধ করতেই মৌলিক অধিকারগুলি লিপিবদ্ধ করা হয়। 

২. ক্ষমতা - স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়োগ :- 
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র , ফ্রান্স - ইত্যাদি রাষ্ট্রে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি অনুসরণ করা হয়েছে। ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি অনুসারে সরকারের তিনটি বিভাগ - আইন , শাসন ও বিচার - এই প্রতিটি বিভাগ পরস্পর নিরপেক্ষ থাকবে ; অর্থাৎ এক বিভাগ অপর বিভাগের কাজে হস্তক্ষেপ করবে না। কেননা এক বা একাধিক ব্যক্তিসমষ্টি যদি একাধিক বিভাগের ক্ষমতা অধিকার করেন - তাহলে সেই ক্ষমতা সেই ব্যক্তি বা ব্যক্তিসমষ্টিকে খুব সহজেই স্বৈরাচারী করে তুলতে পারে। এই সকল কারণে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি স্বাধীনতা রক্ষা করার অন্যতম রক্ষাকবচ। 

৩. ক্ষমতা - বিকেন্দ্রীকরণ :- 
রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতা যদি কেবলমাত্র একটি কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে অর্পিত হয় - তাহলে সেখানে স্বাধীনতা খর্ব হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা শাসন - ব্যবস্থার বিভিন্ন অংশের মধ্যে বন্টিত হয়। এর ফলে কোনো একটি কর্তৃপক্ষ এককভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করতে পারে না ; ফলে নাগরিকদের স্বাধীনতার অধিকার সুরক্ষিত হয়। ল্যাস্কি ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরকে স্বাধীনতার অন্যতম রক্ষাকবচ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। 

৪. আইনের অনুশাসন :- 
অধ্যাপক ডাইসি প্রমুখ রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ আইনের অনুশাসনকে স্বাধীনতার অন্যতম রক্ষাকবচ বলে বর্ণনা করেছেন। আইনের অনুশাসন বলতে বোঝায় - (ক) আইন ও সংবিধানের প্রাধান্য , (খ) আইনের দৃষ্টিতে সাম্য , (গ) আইন কর্তৃক সকলের সমভাবে সংরক্ষিত হওয়ার অধিকার। উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আইনের অনুশাসন বলবৎ থাকে ; এর ফলে রাষ্ট্র বা সরকার নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের উপর হস্তক্ষেপ করে নাগরিক অধিকার ভঙ্গ করতে পারেনা। নাগরিকদের স্বাধীনতা আইন কর্তৃক সংরক্ষিত হলে প্রকৃত স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হয়। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৫. জনগণের প্রতিনিধিত্ব :- 
রাষ্ট্র ব্যবস্থায় জনগণের প্রতিনিধিত্ব স্বীকৃত হলে স্বাধীনতা সুরক্ষিত হয়। জনগণের প্রতিনিধিত্বে শাসন ক্ষমতার উৎস হল জনগণ। জনগণ কর্তৃক সরকার নির্বাচিত হয় এবং জনগণের ইচ্ছা - অনিচ্ছা ও আশা - আকাঙ্খাকে গুরুত্ব দিয়ে সরকার নীতি প্রণয়ন করতে বাধ্য হন। ফলে নাগরিক স্বাধীনতা অধিক মাত্রায় সুরক্ষিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 

৬. সরকারের দায়িত্বশীলতা :- 
সরকারের দায়িত্বশীলতা স্বাধীনতার একটি গুরুত্বপূর্ণ রক্ষাকবচ। সরকার জনগণের প্রতি দায়িত্বশীল থাকলে সরকারের পক্ষে স্বৈরাচারী হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। যেমন , ভারতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা যৌথভাবে জনগণ ও আইনসভার নিকট দায়িত্বশীল থাকে। এই  ধরণের রাষ্ট্র - ব্যবস্থায় নাগরিকদের স্বাধীনতা সুরক্ষিত হয়। 

৭. স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থা :- 
স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থা স্বাধীনতার অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ রক্ষাকবচ। মানুষের গণতান্ত্রিক ও মৌলিক অধিকারগুলি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমেই সংরক্ষিত হয় , ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয় , মানুষ তার ব্যক্তিস্বাধীনতা চরিতার্থ করতে পারে। তাই স্বাধীনতার অধিকার রক্ষার্থে প্রতিটি রাষ্ট্রে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থা বলবৎ থাকা উচিত। 

৮. জনমত :- 
জনমত হল স্বাধীনতার রক্ষাকবচগুলির মধ্যে একটি প্রত্যক্ষ উপাদান। স্বাধীনতার উপর যেকোনো ধরণের হস্তক্ষেপে জনমত প্রবলভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এই প্রতিরোধ স্বাধীনতা রক্ষার একটি শক্তিশালী উপাদান। রাষ্ট্র জনমতের বিরোধিতার ভয়ে জনবিরোধী নীতি গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকে। গ্রিক দার্শনিক পেরিক্লিস তাই সদাসতর্ক জনমতকে স্বাধীনতা রক্ষার মূলসূত্র হিসাবে দাবী করেছেন। নাগরিকেরা স্বাধীনতার রক্ষার প্রয়োজনে আন্দোলন - বিপ্লব - বিদ্রোহে অংশগ্রহণ করে। 

৯. গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা :- 
রাষ্ট্রব্যবস্থায় গণতান্ত্রিক কাঠামো স্বাধীনতা রক্ষা করার একটি অন্যতম প্রধান উপাদান। নির্বাচন , পদগ্রহন ও পদচ্যুতি , প্রশাসন পরিচালনা , স্বায়ত্তশাসন - ইত্যাদি ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক কাঠামো বলবৎ থাকলে জনগণ সরাসরি রাষ্ট্র ব্যবস্থায় অংশগ্রহন করতে পারে এবং নিজেদের স্বাধীনতা সুরক্ষিত করতে পারে। 

১০. সর্বজনীন শিক্ষা :- 
আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় সর্বজনীন শিক্ষাকে স্বাধীনতা রক্ষার অন্যতম রক্ষাকবচ হিসাবে মনে করা হয়। শিক্ষিত ও সচেতন জনগণ নিজেদের অদিকারগুলি সম্পর্কে সচেতন হতে পারেন এবং স্বাধীনতা ক্ষুন্ন হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন। সমাজে শিক্ষার অভাব স্বাধীনতাকে খর্ব করে। 

পরিশেষে বলা যায় , স্বাধীনতা রক্ষার উল্লিখিত রক্ষাকবচগুলি এক - একটি আনুষ্ঠানিক ও বিধিবদ্ধ মাধ্যম। এর সঙ্গে জড়িত থাকে আরো বহু সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়। রাষ্ট্র নাগরিকদের স্বাধীনতা রক্ষার্থে বদ্ধপরিকর থাকলেও জনগণের স্বাধীনতার অধিকার ক্ষুন্ন হলে জনগণকে বিচারবিভাগের দ্বারস্থ হতে হয় বা প্রতিবাদ ও বৈপ্লবিক আন্দোলনে সামিল হতে হয়।     

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো    
    
Share
Tweet
Pin
Share
No comments

সাম্য ও স্বাধীনতার সম্পর্ক। 

সাম্য ও স্বাধীনতা কীভাবে পরস্পর সম্পর্কিত - সে বিষয়ে আলোচনা কর। 




সাম্য ও স্বাধীনতার সম্পর্ক :- 


লর্ড অ্যাক্টন প্রমুখ রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ সাম্য ও স্বাধীনতাকে পরস্পরের পরিপন্থী বলে মনে করলেও বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গির বিচারে বলা যায় যে সাম্য ও স্বাধীনতা আদৌ একে - অপরের পরিপন্থী নয় ; তারা পরস্পরের পরিপূরক। সমাজে সমানাধিকার প্রতিষ্ঠিত না হলে স্বাধীনতা কখনোই তার পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটাতে পারেনা। কেননা , মানুষ স্বাধীনতার অধিকারগুলিকে চরিতার্থ করতে পারে তখনই যখন তার পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ সমাজে বিদ্যমান থাকে। তাই সাম্য ব্যতীত স্বাধীনতার অস্তিত্ব কল্পনা করা যায়না। বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে সাম্য ও স্বাধীনতার সম্পর্কের বিষয়টিকে আলোচনা করা যেতে পারে। যেমন - 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

১. প্রাচীন ও মধ্যযুগে সাম্য ও স্বাধীনতার সম্পর্কের স্বরূপ :- 
প্রাচীন ও মধ্যযুগে সাম্যের তুলনায় স্বাধীনতাকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হত। প্রাচীন রোম , গ্রিস , মিশর - ইত্যাদি সভ্যতায় ক্রীতদাস প্রথা চালু থাকায় সাম্যের তুলনায় স্বাধীনতার বিষয়টি অধিক গুরুত্বলাভ করেছিল। এইভাবে মধ্যযুগ পর্যন্ত সাম্যের গুরুত্ব উপেক্ষিত থেকে যায়। এমনকি , জন লক যে তিনটি স্বাভাবিক অধিকারের কথা বলেছিলেন - তার মধ্যেও সাম্যের অধিকার উল্লিখিত ছিলনা। কোনো কোনো প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় গ্রিক দার্শনিকগণ ক্রীতদাস প্রথার বিরোধিতা করে সাম্যের গুরুত্বের কথা তুলে ধরলেও তা রাজনৈতিক জীবনে বিশেষ গুরুত্ব পায়নি। 

২. সাম্য ও স্বাধীনতা পরস্পরের পরিপূরক :- 
১৭৭৬ সালে আমেরিকার অধিকারপত্র ঘোষণা এবং ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি বিপ্লব প্রসূত নাগরিকদের অধিকার ঘোষণায় সাম্য ও স্বাধীনতার পারস্পরিক গুরুত্বের কথা বলা হয়েছে। বিশেষ করে ফরাসি বিপ্লব প্রসূত তিনটি মহান আদর্শ ছিল - সাম্য , মৈত্রী ও স্বাধীনতা। এই চিন্তাধারার হাত ধরেই সাম্য ও স্বাধীনতার পারস্পরিক সম্পর্কের বিষয়টি আত্মপ্রকাশ করতে থাকে। এছাড়াও সাঁ সিমো , রবার্ট ওয়েন , মোরলি - প্রমুখের রাষ্ট্রনৈতিক চিন্তায় সাম্য ও স্বাধীনতার পারস্পরিক সম্পর্কের বিষয়টির উল্লেখ ছিল। 

৩. সাম্য ও স্বাধীনতা পরস্পরের পরিপন্থী :- 
সাম্য ও স্বাধীনতা পরস্পরের পরিপন্থী - এইরূপ দৃষ্টিভঙ্গির অন্যতম প্রধান প্রবক্তা ছিলেন লর্ড অ্যাক্টন। পরবর্তীকালে স্পেনসার , লেকি - প্রমুখেরাও লর্ড অ্যাকটনের পদাঙ্ক অনুসরণ করে সাম্য ও স্বাধীনতাকে পরস্পরের পরিপন্থী বলে প্রচার করেন। সাম্য নীতির প্রতিষ্ঠা - ধনবান , অভিজাত , রাজপরিবার , ধর্মযাজক - এই ধরণের ব্যক্তিবর্গের স্বার্থ ক্ষুন্ন করে - তাই তারাও সাম্যের বিরোধিতা করেন। লেকি তাঁর বিখ্যাত - Democracy and Liberty - গ্রন্থে গণতন্ত্রকে স্বাধীনতার বিরোধী বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি আরো বলেছেন সাম্য নীতির প্রতিষ্ঠা সমাজের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন শ্রেণীগুলির মধ্যে পারস্পরিক ভারসাম্য ও নির্ভরশীলতার চরম ক্ষতি করে। 

৪. ঊনবিংশ ও বিংশ শতকে সাম্য ও স্বাধীনতার সম্পর্কের ধারণার বিবর্তন :- 
ঊনবিংশ শতকে সাম্য ও স্বাধীনতার পারস্পরিক সম্পর্কের ধারণার বিবর্তন ঘটে। যেসকল রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের হাত ধরে এই পরিবর্তন ঘটে তাঁদের মধ্যে অন্যতম প্রধান ছিলেন জন স্টুয়ার্ট মিল। তিনি সাম্য ও স্বাধীনতাকে পরস্পরের পরিপূরক বলে দাবী করেন। তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করে বিংশ শতকে ল্যাস্কি , বার্কার - প্রমুখ রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ সাম্য ও স্বাধীনতাকে পরস্পরের পরিপূরক হিসাবে প্রচার করেন। দার্শনিক রুশোও অনুরূপ অভিমতের পক্ষে সওয়াল করেন। ল্যাস্কি বলেছেন - সাম্য ব্যতীত যথার্থ স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনা। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৫. ল্যাস্কির অভিমত :- 
ল্যাস্কি তাঁর A Grammar of Politics গ্রন্থে অর্থনৈতিক সাম্যকে স্বাধীনতার অন্যতম শর্ত ও উপাদান হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। তাঁর মতে , অর্থনৈতিক সাম্য ব্যতীত কখনোই প্রকৃত স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনা। অর্থনৈতিক সাম্য ব্যতীত রাজনৈতিক স্বাধীনতা ভিত্তিহীন। 
ল্যাস্কি সমাজে সাম্য ও স্বাধীনতার পারস্পরিক সহাবস্থানের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তাঁর মতে প্রকৃত স্বাধীনতা তখনই কার্যকর হবে যখন সামাজিক সংগঠন , রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান , সরকার পরিচালনা , নীতি নির্ধারণ - ইত্যাদি বিষয়গুলিতে জনগণের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে সাম্য নীতি প্রতিষ্ঠিত হবে। তাই ল্যাস্কি এমন এক সমাজের কথা বলেছেন যেখানে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সাম্য প্রতিষ্ঠিত থাকবে এবং ব্যক্তিগত সম্পত্তির অবলুপ্তি ঘটবে। 

৬. মার্কসবাদীদের অভিমত :- 
সাম্য ও স্বাধীনতার পারস্পরিক সম্পর্ক বিষয়ে ল্যাস্কি ও মার্কসবাদীরা অভিন্ন মনোভাব পোষণ করেন। মার্কসবাদীদের মতে , সমাজে সাম্য ও স্বাধীনতা একে অপরের অস্তিত্বের জন্য অপরিহার্য। সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠিত না হলে রাষ্ট্র হয়ে উঠবে শ্রেণি শোষণের যন্ত্র এবং রাষ্ট্রযন্ত্রকে কাজে লাগিয়ে একশ্রেণির মানুষ অপর শ্রেণিকে শোষণ করবে। তাই মার্কসবাদীরা শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজ গঠনের কথা বলেন। ল্যাস্কির মতোই মার্কসবাদীরাও সাম্যকে স্বাধীনতার প্রধান শর্ত বলে দাবী করেছেন।  

৭. বার্কারের অভিমত :- 
বার্কার শোষণমুক্ত সমাজের পক্ষে সাম্য ও স্বাধীনতা উভয়কেই গুরুত্বপূর্ণ বলে করেন। বার্কার মানবজীবনে ও সমাজজীবনে স্বাধীনতাকে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন। তিনি মনে করেন মানুষের অন্তর্নিহিত সত্তার পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য স্বাধীনতা একান্ত অপরিহার্য এবং এই স্বাধীনতাকে যথার্থভাবে উপলব্ধি করতে গেলে সাম্য অপরিহার্য। সাম্য ব্যতীত স্বাধীনতার অস্তিত্ব সম্ভব নয়। বার্কার তাঁর Principles of Social and Political Theory গ্রন্থে সাম্য ও স্বাধীনতার সমন্বয়সাধনের কথা বলেছেন। 

৮. R. H. Tawney র অভিমত :- 
সাম্য ও স্বাধীনতা উভয়ই আইনগত ধারণামাত্র। সাম্য কখনোই স্বাধীনতার পরিপন্থী হতে পারেনা। স্বাধীনতা রাষ্ট্র কর্তৃক আইনের দ্বারা সংরক্ষিত হয়। রাষ্ট্র সমাজে প্রচলিত বিশেষ সুযোগ সুবিধার অবসান ঘটিয়ে সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠা করে। কেবলমাত্র সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থাতেই সাম্য ও স্বাধীনতার যথার্থ সহাবস্থান সম্ভব হতে পারে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সাম্য নীতি প্রতিষ্ঠিত না হলে সামাজিক , রাজনৈতিক - প্রভৃতি সকল প্রকার স্বাধীনতা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। 

পরিশেষে বলা যায় যে , সাম্য ও স্বাধীনতা কখনোই পরস্পরের বিরোধী নয় ;তারা পরস্পরের সহায়ক। প্রতিটি উদারনৈতিক - গণতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সাম্য ও স্বাধীনতার সহাবস্থান লক্ষ্য করা যায়। মানুষের পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য সমাজে প্রয়োজন স্বাধীনতা এবং স্বাধীনতার পূর্বশর্ত হল সাম্য।      

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো                      

Share
Tweet
Pin
Share
No comments

সামাজিক সংগঠন কাকে বলে ? সামাজিক সংগঠনের বৈশিষ্টগুলি লেখ। 

সামাজিক সংগঠনের সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট। 




সামাজিক সংগঠনের ধারণা / সংজ্ঞা :- 


সমাজস্থ ব্যক্তিবর্গ সকলেই নিজেদের প্রয়োজন পূরণের জন্য একে - অপরের উপর নির্ভরশীল এই প্রয়োজনগুলি বিবিধ ও বহুমুখী। প্রয়োজনগুলি মূলতঃ তিন প্রকার - জৈবিক , মানসিক ও সামাজিক। এই প্রয়োজনগুলি পূরণের উদ্দেশ্যে মানুষ সামাজিক সংগঠন তৈরী করে। সামাজিক সংগঠনগুলি মানুষের এইসকল প্রয়োজন পূরণ করে। এই সামাজিক সংগঠনগুলি মানুষ নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে কৃত্রিমভাবে সামাজিক সংগঠনগুলি তৈরী করে। 

চার্লস হর্টন কুলি বলেছেন , মানুষের পারস্পরিক নির্ভরশীলতার ক্রিয়া - প্রতিক্রিয়ার ফলাফল হিসাবে সামাজিক সংগঠনের জন্ম হয় এবং সামাজিক সংগঠনগুলি পারস্পরিক ক্রিয়া - প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে মানুষের প্রয়োজন পূরণ করে থাকে। 

জনসন বলেছেন , সমাজস্থ ব্যক্তিবর্গের মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরশীলতা বর্তমান এবং তাদের চাহিদা বহুমুখী। এই বহুমুখী চাহিদা পূরণের উদ্দেশ্যে সামাজিক আন্তঃক্রিয়ার ফল হিসাবে সামাজিক সংগঠনের জন্ম হয়। 

অগাস্ট কোঁত বলেছেন , মানুষ তার নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য পূরণের তাগিদে '' সাধারণ সামাজিক চুক্তি '' দ্বারা সামাজিক সংগঠনগুলির জন্ম দেয়। 

এমিল ডুরখেইম বলেছেন , সামাজিক সংগঠনগুলি নীতি ও মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়। 

সমাজতাত্ত্বিকগণ প্রদত্ত সংজ্ঞা থেকে একথা বলা যায় যে , সামাজিক সংগঠনগুলি মানুষের প্রয়োজন পূরণের তাগিদে কৃত্রিমভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। সামাজিক সংগঠনগুলি রাজনৈতিক , সামাজিক , অর্থনৈতিক , শিক্ষামূলক , ধর্মীয় - ইত্যাদি বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে। সামাজিক সংগঠনের উৎকৃষ্ট উদাহরণ হল - বিদ্যালয় , ব্যাংক , মন্দির - মসজিদ - ইত্যাদি। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

সামাজিক সংগঠনের বৈশিষ্ট :- 


১. নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যকেন্দ্রিক :- 
প্রতিটি সামাজিক সংগঠন নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করেই গঠিত হয়। মানুষের নির্দিষ্ট প্রয়োজন পূরণ করাই হল সামাজিক সংগঠনগুলির প্রধান উদ্দেশ্য। সামাজিক সংগঠনগুলি মানুষের প্রয়োজন পূরণ করতে না পারলে তার অস্তিত্ব অর্থহীন হয়ে পরে। 

২. সদস্যদের পারস্পরিক নির্ভরশীলতা ও সহযোগিতা :- 
সামাজিক সংগঠনগুলিতে অংশগ্রহণকারী সদস্যদের পারস্পরিক নির্ভরশীলতা ও সহযোগিতার মাধ্যমেই সামাজিক সংগঠনগুলি তার উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে সফল হয়। সদস্যদের সহযোগিতা ব্যতীত সামাজিক সংগঠন অচল হয়ে পড়ে। 

৩. ঐক্যমত :- 
সামাজিক সংগঠনের সদস্যদের ঐক্যমত্যতা সহযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টি করে। ঐক্যমত্যতার ভিত্তিতেই সামাজিক সংগঠনের সদস্যরা নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার তাগিদে সহযোগী হিসাবে ভূমিকা পালন করে। 

৪. সামাজিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যম :- 
সামাজিক সংগঠনগুলি সমাজ নিয়ন্ত্রনের মাধ্যম হিসাবে কাজ করে। প্রতিটি সামাজিক সংগঠনের কিছু নির্দিষ্ট রীতিনীতি ও নিয়ম থাকে। এই সকল রীতিনীতি ও নিয়ম সমাজের ব্যক্তিবর্গের উপর প্রযুক্ত হয়। এইভাবে সামাজিক সংগঠনগুলি সামাজিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যম হয়ে ওঠে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৫. নির্দিষ্ট কর্মপদ্ধতি :- 
প্রতিটি সামাজিক সংগঠন পরিচালিত হয় নির্দিষ্ট কর্ম - পদ্ধতি দ্বারা। সংগঠনের সদস্য ও সাধারণ মানুষ সকলেই নির্দিষ্ট পদ্ধতির মাধ্যমেই তাদের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করে। সামাজিক সংগঠনগুলির কর্ম পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রথাগত কর্ম পদ্ধতি ছাড়া অন্য কোনো পদ্ধতি অবলম্বন করাকে অবৈধ বলে মনে করা হয়। 

৬. সংখ্যা :- 
সকল সমাজে এক ধরণের সামাজিক সংগঠন একই সংখ্যায় থাকেনা ; স্থান - কালভেদে সামাজিক সংগঠনগুলির সংখ্যার তারতম্য লক্ষ্য করা যায়। যেমন ভারতের মত জনবহুল দেশে বিদ্যালয়ের সংখ্যা আর নাউরু , ঘানা - ইত্যাদি ক্ষুদ্র দেশগুলিতে বিদ্যালয়ের সংখ্যা কখনো এক হতে পারেনা। 

৭. মর্যাদাগত পার্থক্য :- 
সমাজে বিভিন্ন ধরণের সামাজিক সংগঠন থাকে। কিন্তু কর্মপরিধি , সংস্কৃতি , কাজের ধরণ - ইত্যাদির পরিপ্রেক্ষিতে সামাজিক সংগঠনগুলির মর্যাদার ক্ষেত্রে তারতম্য ঘটে। যেমন , রামকৃষ্ণ মিশনের সামাজিক মর্যাদা ও একটি ছোট্ট এলাকার উন্নয়ন সমিতির মধ্যে মর্যাদার বিস্তর পার্থক্য আছে ; যদিও উভয়ের উদ্দেশ্যই এক। 

৮. শ্রম - বিভাজন :- 
সমাজে অবস্থিত সকল সামাজিক সংগঠন এক প্রকারের হয়না। ভিন্ন ভিন্ন ধরণের সামাজিক সংগঠন ভিন্ন ভিন্ন উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করে গঠিত হয়। এর ফলেই সামাজিক সংগঠনগুলির মধ্যে শ্রম বিভাজনের ধারণাটি সুস্পষ্টরূপে ফুটে ওঠে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৯. প্রকৃতি :- 
প্রতিটি সামাজিক সংগঠনের কাজের ধরণ তার প্রকৃতি নির্ধারণ করে। যেমন রেডক্রস সোসাইটির মূল কাজ হল রক্তদান শিবির আয়োজন করা ও সমাজে রক্তের অভাব পূরণ করা ; অর্থাৎ রেডক্রস সোসাইটি হল একটি জনস্বাস্থ্য ও জনকল্যাণমূলক সংগঠন। আবার বিদ্যালয়ের মূল কাজ হল সাক্ষরতার প্রসার ঘটানো , তাই বিদ্যালয়গুলি হল শিক্ষামূলক সামাজিক সংগঠন। 

১০. প্রকারভেদ :- 
সামাজিক সংগঠনগুলি প্রকৃতিগত দিক দিয়ে দুই প্রকারের হয়ে থাকে ; যথা - বিধিবদ্ধ ও অবিধিবদ্ধ সামাজিক সংগঠন। যেসকল সামাজিক সংগঠনগুলি সাধারণ উদ্দেশ্য নিয়ে তৈরী হয়না ; নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে কৃত্রিমভাবে তৈরী হয় - সেগুলিকে বলে বিধিবদ্ধ সামাজিক সংগঠন। যেমন , বিদ্যালয়। 
আবার , অবিধিবদ্ধ সামাজিক সংগঠনগুলি হল সাধারণ উদ্দেশ্যযুক্ত এবং এগুলি স্বাভাবিকভাবে সৃষ্টি হয়। যেমন - বন্ধুত্বের সম্পর্ক , একজন ব্যক্তির সঙ্গে অপর ব্যক্তির সাধারণ মানবিক সম্পর্ক - ইত্যাদি। 

১১. বিশ্বজনীন :- 
সামাজিক সংগঠনগুলি বিশ্বজনীন। বিশ্বের প্রতিটি সমাজেই সামাজিক সংগঠনের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। প্রতিটি সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে মানুষ নিজ উদ্দেশ্যগুলিকে পূরণ করে। তাই প্রতিটি সমাজে সামাজিক সংগঠনের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক। 

১২. পরিবর্তনশীল :- 
সামাজিক সংগঠনগুলি চরিত্র , প্রকৃতি ও কর্মপদ্ধতি পরিবর্তনশীল। যেমন , গত কয়েক দশকে বৈবাহিক সংগঠনের চরিত্রের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। এছাড়াও বিদ্যালয়গুলিতে পঠন - পাঠন পদ্ধতি বিগত দশকের তুলনায় অনেকটাই পরিবর্তিত হয়েছে। 

পরিশেষে বলা যায় , সমাজে সামাজিক সংগঠনের উপস্থিতি ছাড়া সমাজ অচল হয়ে পড়বে , মানুষের উদ্দেশ্য ও চাহিদাগুলি পূরণ হবেনা। সামাজিক সংগঠনগুলিই সমাজকে সচল রাখে এবং সামাজিক বিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো
         
Share
Tweet
Pin
Share
No comments

সাম্যের প্রকৃতি - পরিধি আলোচনা কর। 



সাম্যের প্রকৃতি ও পরিধি। 


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ১৭৭৬ এবং ফরাসি বিপ্লব প্রসূত মানবাধিকারের ঘোষণা ১৭৮৯ - এই দুটি মহান ঐতিহাসিক ঘোষণাপত্রেই সাম্যের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়। সাম্য বলতে সাধারণ মানুষের ব্যক্তিত্ব বিকাশের ক্ষেত্রে উপযোগী সকল প্রকার অনুকূল পরিবেশ রচনা এবং সমাজ ও রাষ্ট্র কর্তৃক প্রাপ্ত সকল প্রকার সুযোগ সুবিধার সমতাকে বোঝায়। বস্তুতঃপক্ষে মানুষের অধিকার , স্বাধীনতা ও সাম্য - এই তিনটি বিষয় পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত ; একটির অনুপস্থিতি অন্যগুলিকেও অর্থহীন করে তোলে। সাম্যের চরিত্র বা প্রকৃতিকে কয়েকটি দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচনা করা যেতে পারে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

বিশেষ সুযোগ সুবিধার অনুপস্থিতি :- 
সাম্যের আদর্শ সমাজে অবস্থানকারী সকল প্রকার ব্যক্তির সমান সুযোগ সুবিধার কথা বলে এবং বিশেষ ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বিশেষ সুযোগ সুবিধার কথা অস্বীকার করে। এ প্রসঙ্গে ল্যাস্কির অভিমত বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। ল্যাস্কির মতে , সাম্য বলতে কখনোই সকলের জন্য সমান ব্যবস্থাকে বোঝায় না ; সাম্য হল সমাজ ও রাষ্ট্র হতে প্রাপ্ত সুযোগ সুবিধাগুলির সমবন্টন। সমাজ ও রাষ্ট্র কর্তৃক প্রদত্ত এই সুযোগ সুবিধাগুলি যদি কোনো বিশেষ ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর হাতে কেন্দ্রীভূত হয় , তাহলে সাম্যের আদর্শ অর্থহীন হয়ে পড়বে। তাই সাম্য সকল প্রকার পক্ষপাতিত্ব বর্জন করাকে বোঝায়। 

সুযোগ সুবিধার সমবন্টন ও পর্যাপ্ত সুবিধা প্রদান :- 
একটি সাম্যবাদী সমাজ নাগরিকদের অধিকার ভোগের ক্ষেত্রে সমান সুযোগের ব্যবস্থা করে। কিন্তু নাগরিকদের সকলেই একই বৈশিষ্ট ও প্রকৃতির অধিকারী হয়না। তাই রাষ্ট্র ও সমাজ কর্তৃক প্রদত্ত্ব অধিকারগুলির সুব্যবহার যে সকলেই করবে - এমন কোনো কথা নেই। সাম্যের অধিকারগুলিকে সৎ উদ্দেশ্য ও অসৎ উদ্দেশ্য উভয়ভাবেই কাজে লাগানো যেতে পারে ; তবে এর দায় রাষ্ট্র বা সমাজের নয়। রাষ্ট্র বা সমাজ শুধুমাত্র নাগরিকদের সর্বোচ্চ বিকাশের আদর্শ পরিবেশ রচনা করে। 

আদিম সমাজে সাম্য :- 
আদিম সমাজ প্রকৃতিগতভাবে সাম্যবাদী ছিল। সেখানে উৎপাদিত ফসল ও প্রাকৃতিক সম্পদের কোনো ব্যক্তিমালিকানা ছিলনা। ফলে অধিকারভোগী ও অধিকারবিহীন - কোনো শ্রেণীরই অস্তিত্ব ছিলনা। নারীরাও সকল প্রকার সুযোগ সুবিধার সমান অধিকারিণী ছিলেন। কিন্তু কালক্রমে ব্যক্তিগত মালিকানার উদ্ভবের ফলে আদিম সমাজে সাম্যের ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং সমাজে অধিকারভোগী ও অধিকারবিহীন শ্রেণীর উদ্ভব ঘটে। 

সামন্ততান্ত্রিক সমাজে সাম্য :- 
সামন্ততান্ত্রিক সমাজে বৈষম্যের চিত্রটি স্পষ্টরূপে ধরা পড়ে। সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থায় উৎপাদন প্রক্রিয়ার দুটি মুখ্য উপাদান ছিল - ক্রীতদাস ও মালিক। ক্রীতদাস , কৃষক ও খেটে খাওয়া মানুষেরা সমাজের সকল প্রকার অধিকার ও সাম্য থেকে বঞ্চিত ছিল। তারা শোষিত হত মালিক বা সামন্তশ্রেণী কর্তৃক। মালিকদের স্বার্থেই সমগ্র উৎপাদন ব্যবস্থা পরিচালিত হত। তাই সামন্ততান্ত্রিক সমাজে ও রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সাম্যের প্রকাশ ছিল ক্ষীণ এবং সকল অধিকার মালিক ও শাসকেরা ভোগ করতো। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

পুঁজিবাদী সমাজে সাম্য :- 
তবে পরবর্তীকালে পুঁজিবাদী সমাজে কোনো কোনো ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ও সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠিত হয়। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র , ব্রিটেন , ফ্রান্স ও ভারতে সাম্য নীতি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়। তবে এর কারণ ছিল ভিন্ন। পুঁজিবাদী শক্তির সঙ্গে সামন্ততান্ত্রিক শক্তির বিরোধ বাঁধলে পুঁজিবাদী শক্তি সাধারণ মানুষের সমর্থনলাভের উদ্দেশ্যে সাম্যের আদর্শগুলোকে গ্রহণ করে। তবে পুঁজিবাদী সমাজে মালিক শ্রেণী নিজেদের স্বার্থেই সাম্য নীতিগুলিকে গ্রহণ করে। যেখানেই শ্রমিক বা সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাদের স্বার্থের সংঘাত সৃষ্টি হয়েছে , সেখানে পুঁজিবাদী শ্রেণী সাম্যের অধিকারগুলিকে অস্বীকার করতে দ্বিধাবোধ করেনি। পুঁজিবাদী সমাজে অর্থনতিক সাম্য প্রতিষ্ঠিত না থাকায় আইনের দৃষ্টিতে সাম্য প্রহসনে রূপান্তরিত হয়ে পড়ে।    

গণতান্ত্রিক সমাজে সাম্য :- 
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ও সমাজে সাম্যের অধিকারগুলি তুলনামূলকভাবে অধিক সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গণতান্ত্রিক সমাজে জাতি - লিঙ্গ - ধর্ম - সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থান - ক্ষমতা নির্বিশেষে সকলকে সমান অধিকার প্রদান করা হয়েছে। আইনের অনুশাসন ও আইনের দৃষ্টিতে সাম্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আইনের চোখে সকলেই সমান এবং সকলেই আইন কর্তৃক সমভাবে সংরক্ষিত হন। উদাহরণ হিসাবে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সার্বিক প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকারের স্বীকৃতির কথা বলা যায়।

উদারনৈতিক সমাজতান্ত্রিক সমাজে সাম্য :- 
প্রকৃত সাম্য একমাত্র উদারনৈতিক সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে প্রতিষ্টিত হতে পারে। সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে প্রভুত্বকারী বিশেষ কোনো শ্রেণীর সুযোগ - সুবিধা স্বীকৃত হয়না। এই ব্যবস্থায় রাষ্ট্রীয় নীতি কখনোই পুঁজিপতিদের স্বার্থে প্রণীত হয়না এবং আইনগত সাম্য প্রকৃত অর্থে প্রতিষ্ঠিত হয়। সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে অর্থনৈতিক সাম্য প্রতিষ্ঠিত থাকায় সাম্য - স্বাধীনতা - সৌভাতৃত্ব বিকশিত হতে পারে এবং সকলে নিজের ব্যক্তিসত্তার পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটাতে পারে। 

মার্কসীয় দৃষ্টিতে সাম্য :-     
মার্কসবাদীরা মনে করেন ধনবৈষম্যমূলক ও শ্রেণীবিভক্ত সমাজে প্রকৃত সাম্যের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকারের বিলোপসাধনের মাধ্যমে সাম্য প্রতিষ্ঠা সম্ভব। তাই মার্কসবাদীরা সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলেন। সমাজতান্ত্রিক সমাজে শোষণমূলক সকল উপাদানগুলোকে সর্বোচ্চ স্তরে নিয়ন্ত্রণ করার ফলে নাগরিকদের অধিকার ও স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হয়। লেনিন সমাজ থেকে সর্বপ্রকার বৈষম্যের অবসানের কথা বলেছেন। 

ল্যাস্কির মতে সাম্য :- 
ল্যাস্কি তাঁর A Grammar of Politics এবং Liberty in Modern State - গ্রন্থদুটিতে সাম্যের ধারণা বিশ্লেষণ করেছেন। ল্যাস্কির মতে , সমাজে ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তির ভিন্ন ভিন্ন ক্ষমতা ও দক্ষতা , আগ্রহ - চাহিদা ও সামর্থ্য বর্তমান। তাই সবার জন্য সমান সুযোগ - সুবিধার অস্তিত্ব থাকা অনভিপ্রেত। সকলেই যে রাষ্ট্র ও সমাজ কর্তৃক প্রদত্ত সুযোগ - সুবিধার সদ্ব্যবহার করবে - এমনটা নয়। তাই রাষ্ট্র ব্যবস্থা এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যাতে সকলে নিজের নিজের যোগ্যতা ও সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটাতে পারে। 

বার্কারের মতে সাম্য :-  
বার্কার তাঁর Principles of Social and Political Theory - গ্রন্থে সাম্যের ধারণা ও নীতি সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। বার্কারের মতে আইনগত সাম্য হল এমন এক ধরণের ব্যবস্থা যাতে রাষ্ট্র তার নাগরিকদের সুযোগ - সুবিধা প্রদানের সময় কোনোপ্রকার বৈষম্য করে না ; একজন ব্যক্তি রাষ্ট্র কর্তৃক যেসকল সুযোগ সুবিধা প্রাপ্ত করেন ; তা অন্য সকলেও যাতে প্রাপ্ত করতে পারে - সেবিষয়ে লক্ষ্য রাখা হয়। বার্কার বৈধ বা আইনগত সাম্যকেই প্রকৃত সাম্য বলে মনে করেন। 

পরিশেষে বলা যায় , বর্তমান বিশ্বে প্রচলিত সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থাগুলিতে যথার্থ ও প্রকৃত সাম্য প্রতিষ্ঠা কখনোই সম্ভব নয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রাষ্ট্রযন্ত্র এক শ্রেণীর মানুষের বা গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করতে উদ্যোগী থাকে এবং সাধারণের স্বার্থ উপেক্ষিত হয়। এজাতীয় ব্যবস্থায় প্রকৃত সাম্য প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। আবার প্রতিটি রাষ্ট্রে আইনগত সাম্যের কথা বলা হলেও বাস্তবে শাসক , পুঁজিবাদী , ক্ষমতাশালী - ইত্যাদি শ্রেণীর মানুষদেরকেই রাষ্ট্রের সকল অধিকার ভোগ করতে দেখা যায় , সাধারণ মানুষের স্বার্থ সেখানে উপেক্ষিত থেকে যায়।   

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো     
 
Share
Tweet
Pin
Share
1 comments

সংস্কৃতির সংজ্ঞা দাও। সংস্কৃতির বৈশিষ্টগুলি আলোচনা কর। 

সংস্কৃতির সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট। 

সংস্কৃতির বিভিন্ন উপাদানগুলি সম্পর্কে আলোচনা কর। 




সংস্কৃতির সংজ্ঞা / সংস্কৃতির ধারণা :- 


সংস্কৃত শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ Culture শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ Colere থেকে ; এর অর্থ কর্ষণ করা। একজন শিশু ছোটবেলা থেকে যা কিছু শেখে তার প্রায় সবকিছুই রপ্ত করে। এরপর অনুশীলনের দ্বারা শিশু সেই অভিজ্ঞতাকে আচার - আচরণের অঙ্গ করে তোলে। তাই সংকীর্ণ অর্থে সংস্কৃতি হল অভিজ্ঞতালাভ ও অনুশীলনের মাধ্যমে আয়ত্ত্ব করা বিষয়। 
আবার জার্মান ভাষায় সংস্কৃতি অর্থে Kultur শব্দটি ব্যবহার করা হত। এর অর্থ সুন্দর যাত্রা , ঘর , সাহিত্য ও অন্যান্য ভালো উপাদান। এটি হল সংস্কৃতির ব্যাপক অর্থ। এই অর্থে মানুষের জীবনের সবকিছুই সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত। 

ই বি টেলর বলেছেন , সমাজের সদস্য হিসাবে প্রতিটি মানুষ সমাজ থেকে জ্ঞান , বিশ্বাস , শিল্পকলা , নৈতিকতা , রীতিনীতি , আইন ও প্রথা , লোকাচার - লোকনীতি - ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়গুলি সম্পর্কে অবহিত হয় ও অভিজ্ঞতালাভ করে। এই সকল উপাদানের জটিল সমষ্টি হল সংস্কৃতি। 

ম্যাথু আরনল্ড বলেছেন , সংস্কৃতি হল পরিপূর্ণতা। মানব সমাজের সামগ্রিক দিক সংস্কৃতির মাধ্যমেই পরিচালিত ও আবর্তিত হয়।  

ম্যালিনস্কি বলেছেন , সংস্কৃতি হল মানুষের উদ্দেশ্য পূরণের একটি মাধ্যম। 

ম্যাকাইভার বলেছেন , আমরা যা , তা'ই হল সংস্কৃতি। 

লিনটন বলেছেন , সংস্কৃতি হল আচার - আচরণের সমষ্টি। 

উপরোক্ত বক্তব্যগুলিকে বিশ্লেষণ করলে বলা যায় , সংস্কৃতি এমন একটি বিষয় যা মানুষ সমাজ থেকে আয়ত্ত্ব করে , যা ব্যক্তিগত নয় - সর্বজনীন এবং যা মানুষের শিক্ষা - দীক্ষা , আচার - ব্যবহার , রীতিনীতি , প্রথা , লোকাচার , আনন্দ - উৎসব , সাধারণ জীবনযাত্রা - ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়র পরিচয় বহন করে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

সংস্কৃতির বৈশিষ্ট / সংস্কৃতির উপাদান :- 


১. মানুষের প্রয়োজনভিত্তিক :- সংস্কৃতির বিভিন্ন উপাদানগুলি মানুষের প্রয়োজনে রচিত হয়। যেসকল উপাদান মানুষের প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয়না , সেগুলি সাংস্কৃতিক উপাদানরূপে বিবেচিত হয়না। মানুষ নির্দিষ্ট অভাবের পরিপ্রেক্ষিতে নির্দিষ্ট উপাদানগুলোকে সংস্কৃতির উপাদান হিসাবে গ্রহণ করে। 

২. বস্তুগত ও অবস্তুগত উপাদান :- সংস্কৃতির উপাদানগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা যায় - বস্তুগত ও অবস্তুগত উপাদান। বিদ্যালয় , অফিস , মন্দির - ইত্যাদি হল বস্তুগত উপাদান। অন্যদিকে অবস্তুগত উপাদানগুলি হল মানসিক। অবস্তুগত উপাদানগুলির মধ্যে প্রধান হল - আদর্শ , নীতি , মূল্যবোধ , ধারণা , কল্পনা - ইত্যাদি। 

৩. ভিন্ন ভিন্ন সমাজে সাংস্কৃতিক ভিন্নতা :- বর্তমান পৃথিবীর ভিন্ন ভিন্ন সমাজে সাংস্কৃতিক ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। প্রতিটি সমাজের ধর্মবিশ্বাস , রীতিনীতি , আদর্শ - ইত্যাদি ভিন্ন ভিন্ন প্রকৃতির হয়। তাই ভিন্ন ভিন্ন সমাজে সংস্কৃতির স্বতন্ত্রতা লক্ষ্য করা যায়। 

৪. সংস্কৃতিগত প্রলক্ষণ :- প্রতিটি মানব সমাজে কিছু সংস্কৃতিগত প্রলক্ষণ থাকে। মানুষের নিজেদের প্রয়োজন পূরণের উদ্দেশ্যে এই প্রলক্ষণগুলি গড়ে ওঠে। যেমন খাদ্যের প্রয়োজনে রন্ধন প্রক্রিয়া , বিচারের প্রয়োজনে বিচারের প্রক্রিয়া - ইত্যাদি। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৫. জন্মগত নয় :- সংস্কৃতি কখনোই ব্যক্তির জন্মগত নয় ; এটি শিক্ষা ও অনুশীলনের দ্বারা ব্যক্তি রপ্ত করে। একটি শিশু সমাজে জন্মানোর পর সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংস্কৃতির উপাদানগুলোকে অভ্যাসে পরিণত করে। 

৬. সংস্কৃতি একটি সামাজিক বিষয় :- সংস্কৃতি বিষয়টি সামাজিক ; ব্যক্তিগত নয়। একজন মানুষ সামাজিক পরিবেশের মধ্যেই সংস্কৃতির উপাদানগুলোকে আয়ত্ত্ব করে ও অনুশীলনের মাধ্যমে সেগুলিকে নিজের আচার আচরণের অংশ করে তোলে। 

৭. পরিবর্তনশীল :- সংস্কৃতি দেশ ও কাল ভেদে পরিবর্তনশীল। সমাজের বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সংস্কৃতিরও বিবর্তন ঘটে। মানুষ প্রয়োজনীয় উপাদান বা বিষয়গুলোকে গ্রহণ করে ও অপ্রয়োজনীয় বিষয়গুলিকে বর্জন করে। আবার প্রয়োজনে নতুন নতুন সাংস্কৃতিক উপাদান সৃষ্টি করে। তাই সংস্কৃতি পরিবর্তনশীল। 

৮. প্রবহমান :- সংস্কৃতি একটি প্রবহমান বিষয় এবং তা প্রজন্ম হতে প্রজন্ম প্রবাহিত হতে থাকে। সংস্কৃতির বিষয়গুলি কখনোই স্থির নয়। 

৯. বিশ্বাস ও মনোভাব :- বিশ্বাস ও মনোভাব হল সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সমাজে বসবাসকারী সকল মানুষ সামাজিক উপাদানগুলির সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া ঘটায় এবং এই মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমেই ব্যক্তিবর্গের সামাজিক বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে বিশ্বাস ও নির্দিষ্ট মনোভাব তৈরী হয়। 

১০. নীতি ও মূল্যবোধের সহাবস্থান :- মানুষের সাংস্কৃতিক জীবনে নীতি ও মূল্যবোধের পারস্পরিক সহাবস্থান লক্ষ্য করা যায়। নীতি ও মূল্যবোধ সংস্কৃতির ভিত্তি রচনা করে। আদর্শ জীবন ও সমাজ গঠনের লক্ষ্যে মানুষ সমাজে প্রচলিত নীতি ও মূল্যবোধগুলোকে অনুসরণ করে এবং এর মধ্যে দিয়েই সংস্কৃতি সংরক্ষিত হয়। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

১১. প্রতীক ও সংকেত :- কোনো - কোনো সংস্কৃতির বিভিন্ন উপাদানগুলোকে প্রতীক বা সংকেত দ্বারা উপস্থাপনের রীতি প্রচলিত আছে। এছাড়াও কোনো বস্তুর অবস্থান বোঝাতে , বিশেষ কোনো নির্দেশ বোঝাতে - প্রতীক বা সংকেত ব্যবহার করা হয়। এই প্রতীক বা সংকেতগুলি সামাজিক আদান - প্রদান ও যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে ব্যবহৃত হয় এবং মূল্যবোধের উপস্থাপক হিসাবেও কাজ করে। 

১২. সামাজিকীকরণ :- সংস্কৃতির একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল সামাজিকীকরণ। মানুষ সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই সংস্কৃতির উপাদানগুলির সঙ্গে পরিচিত হয় ও তাদের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া ঘটায়। প্রচলিত সংস্কৃতিকে এক প্রজন্ম থেকে অপর প্রজন্মে সঞ্চারিত করে সামাজিকীকরণ। 

১৩. নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য :- প্রতিটি সাংস্কৃতিক উপাদানের নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য বর্তমান। উদ্দেশ্যবিহীন সাংস্কৃতিক উপাদান মানুষ বর্জন করে। যেসকল উপাদান মানুষের প্রয়োজন পূরণ করে ; কেবলমাত্র সেই সকল উপাদানগুলিই সাংস্কৃতিক উপাদান হিসাবে গৃহীত হয়। 

১৪. অতিযান্ত্রিক বিষয় : - হার্বার্ট স্পেনসার সংস্কৃতিকে একটি অতিআঙ্গিক ও অতিযান্ত্রিক বিষয় বলে উল্লেখ করেছেন। কোনো একটি বস্তুগত উপাদানকে ভাবগত উপাদানের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। যেমন , কোনো দেশের জাতীয় সংগীত শুধুমাত্র একটি গান বা সংগীত নয় ; তার সঙ্গে জড়িত থাকে আবেগ , জাতীয়তাবোধ , দেশপ্রেম - ইত্যাদি। 

১৫. সমাজ নিয়ন্ত্রণ :- সামাজিক নিয়ন্ত্রণের একটি অপরিহার্য উপাদান হল সংস্কৃতি। সমাজে প্রচলিত সংস্কৃতি মানুষের বিচারবুদ্ধিকে প্রভাবিত করে এবং আচার - আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে সামাজিক নিয়ন্ত্রক হিসাবে ভূমিকা পালন করে। 

১৬. সংস্কৃতি একটি অবিধিবদ্ধ বিষয় :- সাধারণতঃ সাংস্কৃতিক বিষয়গুলির কোনো লিখিত ভিত্তি থাকেনা। তবে সমাজে প্রচলিত সাংস্কৃতিক বৈশিষ্টের মধ্যে কিছু কিছু বিধিবদ্ধ আইনে সংযুক্ত করা হলেও সংস্কৃতির বেশিরভাগ উপাদানগুলি হল প্রথা ভিত্তিক। তাই সংস্কৃতি একটি অবিধিবদ্ধ বিষয়। 

১৭. সংস্কৃতি একটি অন্তঃসম্পর্কিত বিষয় :- প্রথা , লোকাচার , লোকনীতি , রীতিনীতি , আদর্শ - ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ের সম্মিলিত রূপ হল সংস্কৃতি। আবার উক্ত বিষয়গুলি সংস্কৃতির মাধ্যমেই পারস্পরিক সংযোগ রক্ষা করে। 

১৮. অভিযোজনের সহায়ক :- সংস্কৃতি ব্যক্তিমানবের অভিযোজনের সহায়ক হিসাবে কাজ করে। মানুষ সমাজে জন্মগ্রহণ করে এবং সংস্কৃতির মাধ্যমেই পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধান করে এবং সংস্কৃতির উপাদানগুলি ব্যক্তিবর্গের অভিযোজনের সহায়ক হয়ে ওঠে। 

পরিশেষে বলা যায় , ব্যপক অর্থে সংস্কৃতি প্রসঙ্গে ম্যাকাইভার যথার্থই বলেছেন - আমরা যা , তা'ই আমাদের সংস্কৃতি। সংস্কৃতি সমাজের একপ্রকার বাহ্যিক প্রকাশ এবং কোনো একটি সমাজে সংস্কৃতি দীর্ঘস্থায়ী হলে তা ঐতিহ্যে পরিণত হয়।     

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো                      

Share
Tweet
Pin
Share
No comments

সাম্যের প্রকারভেদ / বিভিন্ন প্রকার সাম্য :- 

সাম্যের প্রকারভেদ আলোচনা কর।  

বিভিন্ন প্রকার সাম্য সম্পর্কে আলোচনা কর। 

সাম্যের বিভিন্ন ধরণ। 




সাম্যের প্রকারভেদ / বিভিন্ন প্রকার সাম্য :- 


১. স্বাভাবিক সাম্য :- 
স্বাভাবিক সাম্য তত্ত্বের একজন অন্যতম প্রবক্তা হলেন রুশো। তাঁর মতে , মানুষ স্বাধীন হয়েই জন্মায় ; কিন্তু সর্বত্র সে পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়ে পড়ে। রুশো ছাড়াও স্বাভাবিক সাম্য তত্ত্বের অন্যান্য প্রবক্তাগণ হলেন সিসেরো ও পলিবিয়াস। স্বাভাবিক সাম্যের তত্ত্বের মূলকথা হল - মানুষ জন্ম থেকেই স্বাধীন এবং সম অধিকার সম্পন্ন। তাদের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকেনা। 
কিন্তু বর্তমানে স্বাভাবিক সাম্য তত্ত্বের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ একাধিক সমালোচনা করেন। যেমন - জন্ম থেকেই সকল মানুষ দৈহিক , মানসিক , কর্মক্ষমতা এবং সামাজিক অবস্থানগতভাবে সমান হয়না।তাই আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ স্বাভাবিক সাম্য বলতে সকল প্রকার বিশেষ সুযোগ সুবিধার অবসানের তত্ত্ব প্রচার করেন। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

২. সামাজিক সাম্য :- 
সমাজস্থ ব্যক্তিবর্গের মধ্যে জাতিগত , বর্ণগত , লিঙ্গগত , অর্থনৈতিক , সামাজিক অবস্থানগত - ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে পার্থক্য বর্তমান। সামাজিক সাম্য তত্ত্বের অন্যতম প্রবক্তা হলেন বার্কার। তিনি সামাজিক সাম্য বলতে বুঝিয়েছেন সাংস্কৃতিক , সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সমান অধিকারের প্রতিষ্ঠাকে। প্রাচীন সামন্ততান্ত্রিক সমাজ ও দাস সমাজে সামাজিক সাম্যের অস্তিত্ব ছিল না। যেমন আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের সামাজিক অধিকারের ক্ষেত্রে বিস্তর পার্থক্য ছিল ; ভারতে জাতিগতভাবে নিম্নবর্গের কোনো অধিকার ছিলনা। কিন্তু পরবর্তীকালে আমেরিকার মানবাধিকার ঘোষণাপত্র , ফরাসি বিপ্লব - ইত্যাদি ঘটনাপ্রবাহের মাধ্যমে সামাজিক সাম্যের ধারণাটি বিকাশলাভ করে। তবে বর্তমানেও যে সামাজিক সাম্য সম্পূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে - তা কিন্তু নয়। একমাত্র শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থাতেই সামাজিক সাম্য সম্পূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। 

৩. আইনগত সাম্য :- 
সাম্যের ধারণাগুলির মধ্যে সর্বাধিক প্রচলিত ও গ্রহণযোগ্য ধারণা হল আইনগত সাম্য। আইনের দৃষ্টিতে সমতা এবং আইন কর্তৃক সকলের সমভাবে সংরক্ষিত হওয়ার অধিকার - হল আইনগত সাম্যের মূল বক্তব্য। আইনগত সাম্যের ধারণা অনুসারে সমাজে অবস্থানকারী প্রতিটি ব্যক্তি জাতি - ধর্ম - বর্ণ - লিঙ্গ - সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থান - ক্ষমতা ও পদমর্যাদা নির্বিশেষে সাধারণ আইন দ্বারা সমভাবে নিয়ন্ত্রিত ও সংরক্ষিত হবেন। 

৪. রাজনৈতিক সাম্য :- 
রাজনৈতিক সাম্য হল জাতি - ধর্ম - বর্ণ - সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থান - ক্ষমতা ও পদমর্যাদা নির্বিশেষে সকলের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সমভাবে অংশগ্রহণের সুযোগ। রাজনৈতিক সাম্য দ্বারা সকল মানুষ রাজনীতিতে অংশগ্রহণের অধিকার , নির্বাচনে অংশগ্রহণের অধিকার , নির্বাচিত হওয়ার অধিকার , ভোট প্রদানের অধিকার , জনমত সাপেক্ষে শাসন ব্যবস্থায় অংশগ্রহনের অধিকার - ইত্যাদি অধিকার লাভ করে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৫. অর্থনৈতিক সাম্য :- 
অর্থনৈতিক সাম্য হল সেই ধরণের ব্যবস্থা যার মাধ্যমে সমাজে বসবাসকারী সকল শ্রেণীর মানুষ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সমান সুযোগ - সুবিধা লাভ করে। অর্থনৈতিক সাম্য তত্ত্বের মূল প্রবক্তা হলেন মার্কসবাদীরা। মার্কসবাদীদের মতে , সমাজে অর্থনৈতিক সাম্য প্রতিষ্ঠিত না হলে অন্য সকল অধিকার ও স্বাধীনতা অবাস্তব ও অর্থহীন। মার্কসবাদীরা মনে করেন সমাজে অর্থনৈতিক সাম্য ব্যতীত সমাজ ও রাষ্ট্র শোষণযন্ত্রে পরিণত হয়। মার্কসবাদীরা অসাম্যের উপর প্রতিষ্ঠিত ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে বিলোপ করার পক্ষপাতী। ল্যাস্কি বলেছেন - যে সমাজে আমার প্রতিবেশীরা না খেয়ে থাকে সেই সমাজে পর্যাপ্ত আহার গ্রহণের অধিকার আমার নেই। 

৬. ব্যক্তিগত সাম্য :- 
সমাজে অবস্থানকারী সকল ব্যক্তি যখন রাজনৈতিক , সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে সমান সুযোগ ও অধিকার লাভ করে - তখন তাকে বলে ব্যক্তিগত সাম্য। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য ধনবৈষম্যমূলক সমাজে কখনোই পূর্ণাঙ্গরূপে ব্যক্তিগত সাম্য প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনা ; কেননা ধনবৈষম্যমূলক সমাজ সর্বদা প্রভুত্বকারী শ্রেণীর স্বার্থ রক্ষা করে। সমাজে ব্যক্তিগত সাম্য ব্যক্তির অন্তর্নিহিত সত্তার বিকাশের মূল শর্ত হিসাবে বিবেচিত হয়। এই তত্ত্ব অনুসারে আইন ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা সকলের সমান বিকাশের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ রচনা করে। 

৭. আন্তর্জাতিক সাম্য :- 
আন্তর্জাতিক সমস্যাসমূহের আলোচনামূলক সমাধান , জাতির আত্মনিয়ন্রণের অধিকার - ইত্যাদির ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয় সম্মিলিত UNO বা জাতিপুঞ্জ। সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সনদের ২(১) নং ধারায় জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ও সকল রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বকে স্বীকার করা হয়েছে। 
বর্তমান পৃথিবীতে ক্ষুদ্র -বৃহৎ , ক্ষমতাশালী - ক্ষমতাহীন , সম্পদশালী - সম্পদহীন - ইত্যাদি সকল ধরণের রাষ্ট্রেরই অবস্থান লক্ষ্য করা যায়। এই সকল রাষ্ট্রগুলি আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে আন্তর্জাতিক সাম্যের অবতারণা করা হয়। 

পরিশেষে বলা যায় , আইনগত সাম্যের তত্ত্বটিকে বাদ দিয়ে অন্যান্য সকল প্রকার সাম্য তাত্ত্বিক বা অবিধিবদ্ধ ; কেবলমাত্র আইনগত সাম্যের অধিকার প্রদানে রাষ্ট্র অঙ্গীকারাবদ্ধ। রাজনৈতিক সাম্য ও আন্তর্জাতিক সাম্য অবশ্য আইনগত সাম্যের অন্তর্গত। যদিও প্রকৃত অর্থে সাম্য কোনো রাষ্ট্রেই প্রতিষ্ঠিত নেই ; কেবলমাত্র শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজেই প্রকৃত সাম্য প্রতিষ্ঠা সম্ভব।     

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো            

Share
Tweet
Pin
Share
No comments

সামাজিকীকরণের বিভিন্ন মাধ্যমগুলি সম্পর্কে লেখ। 

সামাজিকীকরণের বিভিন্ন উপাদান। 




সামাজিকীকরণের মাধ্যম :- 


সামাজিকীকরণ হল একটি বহুউপাদানবিশিষ্ট প্রক্রিয়া। সমাজতাত্ত্বিক কিংসলে ডেভিস সামাজিকীকরণের মাধমগুলিকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন - কর্তৃত্বমূলক ও অকর্তৃত্বমূলক। সামাজিকীকরণের কর্তৃত্বমূলক মাধ্যমগুলি হল সেইসকল মাধ্যম যেগুলি ব্যক্তি বা শিশুর উপর কর্তৃত্ব আরোপ করে ; যেমন - বাবা - মা , শিক্ষক , রাষ্ট্র - ইত্যাদি। অন্যদিকে অকর্তৃত্বমূলক মাধ্যমগুলি হল সেইসকল মাধ্যম যেগুলি শিশুর উপর কর্তৃত্ব আরোপ করেনা ; যেমন - বন্ধুগোষ্ঠী , গণমাধ্যম - ইত্যাদি। 
সামাজিকীকরণের বিভিন্ন মাধ্যমগুলি নিম্নরূপ - 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

১. পরিবার :- 
সামাজিকীকরণের মাধ্যমগুলির মধ্যে পরিবারকে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমরূপে বিবেচিত করা হয়। প্রতিটি শিশু জন্মগ্রহণের পর থেকে তার পরিবারের মধ্যেই বেড়ে ওঠে। সমাজ ও রাষ্ট্র জীবনের ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে বিস্তর পার্থক্য থাকলেও পারিবারিক সম্পর্কের বিষয়টি সাধারণতঃ সকল পরিবারে একই ধরণের হয়ে থাকে। শিশুর প্রথম শিক্ষা শুরু হয় তার মায়ের কাছ থেকে এবং তারপর পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের কাছ থেকে। সামাজিক নিয়ম - কানুন , রীতিনীতি ,আদব - কায়দা , প্রথা - এই সমস্তকিছুর শিক্ষা শিশু পায় তার পরিবারের কাছ থেকেই। সেই কারণেই পরিবারকে সামাজিকীকরণের প্রধান ও প্রাথমিক মাধ্যম বলা হয়ে থাকে। 

২. শিক্ষা - প্রতিষ্ঠান :- 
শিক্ষা - প্রতিষ্ঠান হল সামাজিকীকরণের একটি বিধিবদ্ধ মাধ্যম। প্রাথমিক পর্যায়ে পারিবারিক শিক্ষার পর একজন শিশু বিদ্যালয় জীবনে প্রবেশ করে। বিদ্যালয় জীবনে শিশু বিধিবদ্ধভাবে সামাজিকীকরণের বিষয়টিকে আয়ত্ত করে। বিদ্যালয় সামগ্রিক সমাজের ক্ষুদ্র সংস্করণ। তাই একজন শিশুর সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিদ্যালয় জীবনে শিশুর সামাজিকীকরণ ঘটে পাঠক্রম ও সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীকে কেন্দ্র করে। শৃঙ্খলাবদ্ধতা , নিয়মানুবর্তিতা , শিক্ষক ও গুরুজনদের প্রতি শ্রদ্ধার মনোভাব , নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষমতা , পাঠের প্রতি মনোযোগী হওয়া , প্রতিযোগিতামূলক মানসিকতা - ইত্যাদি সামাজিক বিষয়গুলির সঙ্গে পরিচিত হয় ও দক্ষ হয়ে ওঠে। এইভাবে শিক্ষা - প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সামাজিকীকরণ ঘটে। 

৩. গণমাধ্যম :- 
গণমাধ্যম হল সমাজের আয়না স্বরূপ। সমাজে ঘটে চলা বিভিন্ন ঘটনা , সমাজের পরিবর্তন ও বিবর্তন , সরকারি নীতি , শিক্ষা - সাহিত্য ও সংস্কৃতি - ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় সমাজস্থ মানুষের নিকট পরিবেশন করে। শিশুর মধ্যে সামাজিকীকরণের বিকাশের ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ গণমাধ্যমগুলি হল - রেডিও , দূরদর্শন , সংবাদপত্র এবং আধুনিক কালে ডিজিটাল সামাজিক মাধ্যম বা সোশ্যাল নেটওয়ার্ক। এইসকল গণমাধ্যমগুলির মাধ্যমে শিশু তার পারিপার্শ্বিক , জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনের সঙ্গে পরিচিত হয় ও সেই সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করে। গণমাধ্যমগুলি জনমত গঠনের ক্ষেত্রে এবং চিন্তাজগতে গভীর প্রভাব বিস্তার করতে পারে। 

৪. রাষ্ট্র - ব্যবস্থা :- 
রাষ্ট্র - ব্যবস্থার মূলতঃ তিনটি বিভাগ - আইন , শাসন ও বিচার। এই তিন বিভাগের মাধ্যমে রাষ্ট্র তার নাগরিকদের উপর বিভিন্ন বাধানিষেধ আরোপ করে ও নাগরিকদের নিয়ন্ত্রণ করে। এই নিয়ন্ত্রণ অবশ্য ইতিবাচক ; কেননা রাষ্ট্র নাগরিকদের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের মাধ্যমে নাগরিকদের পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলে। প্রতিটি শিশু রাষ্ট্র - ব্যবস্থার অন্তর্গত একজন সদস্য হিসাবে রাষ্ট্রীয় প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে এবং সমাজের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া সংগঠিত হয়। এইভাবে রাষ্ট্র ব্যবস্থা শিশুর সামাজিকীকরণে সহায়তা করে। 

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো

৫. সমবয়সী ও বন্ধুগোষ্ঠী :- 
পরিবার , শিক্ষা প্রতিষ্ঠান , রাষ্ট্র - এইসকল বিধিবদ্ধ ও কর্তৃত্বমূলক মাধ্যমগুলি ছাড়া শিশুর সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে তার সমবয়সী ও বন্ধুগোষ্ঠী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সমাজতাত্ত্বিক Piaget শিশুর সঙ্গে তার সমবয়সী বা বন্ধুগোষ্ঠীকে সর্বাধিক গণতান্ত্রিক বলে মন্তব্য করেছেন। বন্ধুগোষ্ঠীর সঙ্গে শিশুর সম্পর্ক হয় সহজ - সরল ও অবাধ। শিশু এখানে খোলামেলাভাবে মিশতে পারে। বিভিন্ন কর্মে বন্ধুগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ , তাদের কথাবার্তা ইত্যাদি শিশুকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। 

৬. ধর্মীয় রীতিনীতি ও প্রতিষ্ঠান :- 
প্রতিটি মানুষের জীবনে ধর্মের প্রভাব অতি গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের আচার - আচরণ , সমাজ ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া , চিন্তা - ভাবনা , আদর্শ - ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় ধর্মের দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়। ধর্মের বিভিন্ন প্রথা , রীতিনীতি , আচার - অনুষ্ঠান , বিধি - নিয়ম , উপদেশ ও অনুশাসন ব্যক্তির সামাজিক ভূমিকা নির্ণয় করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও বিভিন্ন ধর্মবিশ্বাস ( যেমন দেবতার অস্তিত্ব , পাপ - পুণ্যের বোধ - ইত্যাদি ) শিশুর সামাজিকীকরণে প্রত্যক্ষভাবে প্রভাব বিস্তার করে। 

৭. সাহিত্য :- 
বিভিন্ন গ্রন্থ , পত্র - পত্রিকা , সাময়িক পত্র ও অন্যান্য মাধ্যমে সাহিত্য প্রকাশিত হয়। প্রতিটি সাহিত্যিক রচনায় কবি বা লেখকের জীবনবোধ , দর্শন ও সমাজচেতনা প্রকাশিত হয়। এই চেতনা পাঠকের মধ্যেও সঞ্চারিত হয়। পাঠকবর্গ সাহিত্যপাঠের মধ্যে দিয়ে সমাজের চালচিত্র ও বিভিন্ন রূপ সম্পর্কে অবগত হতে পারেন। এছাড়াও গ্রন্থপাঠ মানুষের ব্যক্তিত্ব ও চরিত্রে গভীর প্রভাব বিস্তার করে। সাহিত্যের মাধ্যমে মানুষ সমাজে প্রচলিত ধ্যান - ধারণা , রীতি - পদ্ধতি - ইত্যাদির সঙ্গে পরিচিত হতে পারে। 

৮. বিভিন্ন প্রকার আদর্শ :- 
প্রতিটি শিশু নিজ জীবনে বহু মহাপুরুষ ও কর্মবীরদের আদর্শ দ্বারা প্রভাবিত হয়। মহাপুরুষদের বাণী ও কর্মবীরদের জীবনকাহিনী সাধারণ মানুষকে অনুপ্রাণিত করে। সমাজ জীবনে প্রায় প্রতিটি শিশুই শিক্ষার মাধ্যমে বা বড়দের বলা গল্পের মাধ্যমে - এই সকল মহাপুরুষদের আদর্শ সম্পর্কে অবগত হন। এই সকল আদর্শ ব্যক্তিজীবনে ও সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে গভীর প্রভাব বিস্তার করে। 

৯. কর্মজগৎ :- 
শৈশব ও শিক্ষাজীবন শেষ করে মানুষ কর্মজগতে প্রবেশ করে। এই কর্মজগৎ মানুষের সামাজিকীকরণের একটি প্রত্যক্ষ মাধ্যম। মানুষ তার যোগ্যতা ও দক্ষতা অনুযায়ী উৎপাদনশীলতার সঙ্গে যুক্ত হয়। কর্মক্ষেত্রে মানুষ সমাজকে পরিপূর্ণভাবে উপলব্ধি করতে পারে এবং সেইমত নিজেদের আচার - আচরণের গতিপ্রকৃতি নির্ধারণ করতে পারে। 

পরিশেষে বলা যায় , সামাজিকীকরণের মাধ্যমগুলি এককভাবে সামাজিকীকরণ ঘটায় না ; সবগুলি মাধ্যম সম্মিলিতভাবে ক্রিয়া - প্রতিক্রিয়া ঘটায় ও সামাজিকীকরণ সংগঠিত করে। সামাজিকীরণের মাধ্যমগুলি দেশ - কালভেদে মোটামুটি একই রকম থাকে। ভিন্ন ভিন্ন মাধ্যমগুলি ব্যক্তির উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেললে ব্যক্তির জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটে ; আবার এর উল্টোটাও দেখা যায়। সামাজিকীকরণের মাধ্যমগুলি মূলতঃ ব্যক্তিজীবনে তাদের ব্যক্তিত্ব ও আচার - আচরণের গতি - প্রকৃতি নির্ধারণ করে।      

এই ওয়েবসাইটের সমস্ত প্রশ্নোত্তরের তালিকা / সূচীপত্রের জন্য এখানে CLICK করো   
    
Share
Tweet
Pin
Share
No comments
Newer Posts
Older Posts

Followers

Pages

  • Home
  • Privacy Policy
  • Disclaimer
  • CONTACT ME
  • About Me

Contact Form

Name

Email *

Message *

About me

Hallow viewers , myself Nandan Dutta [Subhankar Dutta], reside at Maheshpur,Malda.
I made this website for the students of B.A. courses under Gour Banga University. Here you can get suggestions of different subjects like HISTORY , SOCIOLOGY , POLITICAL SCIENCE & EDUCATION.
In future I will add MCQ sections of those subjects.


Categories

  • 1ST SEMESTER SUGGESTION (1)
  • 2 ND YEAR SUGGESTION (1)
  • 2ND SEMESTER (1)
  • 3RD SEMESTER (8)
  • BENGALI NOTES (21)
  • CU suggestion. (1)
  • EDUCATION NOTES (141)
  • ENGLISH COMPULSORY (16)
  • GBU Suggestion. (7)
  • HISTORY EUROPE & WORLD (46)
  • HISTORY NOTES (68)
  • POL SC NOTES (64)
  • SOCIOLOGY NOTES (72)
  • WBCS 2020 (1)

recent posts

Blog Archive

  • May 2025 (3)
  • April 2025 (20)
  • March 2025 (12)
  • February 2025 (8)
  • November 2024 (5)
  • October 2024 (2)
  • September 2024 (2)
  • June 2024 (2)
  • March 2024 (6)
  • February 2024 (4)
  • October 2023 (5)
  • May 2023 (5)
  • April 2023 (1)
  • December 2022 (1)
  • November 2022 (13)
  • September 2022 (2)
  • August 2022 (7)
  • July 2022 (29)
  • June 2022 (10)
  • May 2022 (25)
  • April 2022 (24)
  • March 2022 (16)
  • February 2022 (19)
  • January 2022 (21)
  • December 2021 (46)
  • November 2021 (5)
  • October 2021 (6)
  • September 2021 (5)
  • August 2021 (41)
  • July 2021 (43)
  • June 2021 (31)
  • May 2021 (7)
  • April 2021 (1)
  • July 2020 (1)
  • June 2020 (3)
  • April 2020 (1)
  • November 2019 (1)
  • July 2019 (1)
  • June 2019 (1)
  • May 2019 (1)
  • April 2019 (2)
  • January 2019 (1)

Pages

  • Home
  • 2nd SEM ভাষাতত্ত্ব :
  • বাংলা উপভাষা
  • দ্বিতীয় পুলকেশীর কৃতিত্ব
  • ভারতীয় সংবিধানে বর্ণিত সাম্যের অধিকারগুলি আলোচনা করো।
  • হর্ষবর্ধনের কৃতিত্ব আলোচনা করো। তাকে কি উত্তর পথনাথ বলা যায় ?
  • ভারতীয় সংবিধানের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য :-
  • উদারনীতিবাদ : সংক্ষিপ্ত ধারণা :-
  • চোল শাসনব্যবস্থা :-
  • গুপ্তযুগ সুবর্ণযুগ সম্পর্কিত আলোচনা।
  • ৬. উদাহরণসহ মধ্যযুগের বাংলাভাষার কয়েকটি বৈশিষ্ট আল...
  • 1. Marxism
  • আধুনিক বাংলা ভাষা ও তার বৈশিষ্ট।
  • Discuss the career and achievements of Samudragupta .
  • ভাষাতত্ত্ব

Created with by ThemeXpose | Distributed by Blogger Templates