প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষা কী ? প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য আলোচনা কর।

by - September 26, 2022

প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষা কী ? প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য আলোচনা কর। 

প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষার ধারণা , লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। 




প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষা :- 

প্রথাগত শিক্ষা শুরু হওয়ার পূর্ববর্তী স্তর হল প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষা। সাধারণতঃ পাঁচ বা ছয় বছরের পূর্বে যে ধরণের শিক্ষা দেওয়া হয় - তা'ই হল প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা। মূলতঃ নার্সারি , কিন্ডারগার্টেন , ক্রেশ - এইসকল বিদ্যালয়ে প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষা প্রদান করা হয়। প্রথাগত শিক্ষার পূর্ব - প্রস্তুতি হিসাবে শিশুকে উপযুক্ত করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষা পরিচালিত হয়। 
ইতিপূর্বে প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষা প্রথাগত শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত ছিল না ; পারিবারিক পরিসরের মধ্যে শিশুদের শৈশবকালীন শিক্ষা প্রদান করা হত। কিন্তু পরবর্তীকালে আধুনিক শিক্ষা চিন্তার বিস্তার , শিক্ষামূলক গবেষণা , আর্থ - সামাজিক কারণ , সর্বজনীন শিক্ষার বিস্তার - ইত্যাদি কারণে প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষা প্রথাগত শিক্ষার অঙ্গ হিসাবে সংযোজিত হয়েছে। বর্তমানে প্রথাগত প্রাথমিক শিক্ষা শুরুর পূর্বে ৩-৪ বছরের প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষা পরিচালিত হয়। 


প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য :- 

প্রথাগত শিক্ষার পূর্বে শিশুকে প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার পেছনে একাধিক উদ্দেশ্য বর্তমান। যেমন - 

১. শিশুদের মধ্যে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গঠন :- শৈশবে শিশুদের মধ্যে অভিযোজনের প্রক্রিয়া অতি দ্রুত সংগঠিত হয়। তাই এই বয়সে শিশুদের মধ্যে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গঠন করার ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল - টয়লেটের অভ্যাস , পরিচ্ছন্নতার অভ্যাস , পোশাক পরিধানের অভ্যাস , খাদ্যগ্রহণের অভ্যাস , বিদ্যালয় জীবনের সঙ্গে পরিচিত হওয়া - ইত্যাদি। 

২. সামাজিকীকরণের বিকাশ :- প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে শিশু সর্বপ্রথম বাড়ির বাইরে এবং পরিবারের নিরাপত্তা ও স্নেহছায়ার বাইরে সমাজ জীবনের অংশ হিসাবে নিজেকে মেলে ধরে। তাই এই বয়সে শিশুদের সামাজিকতার বিকাশ ঘটানো অপরিহার্য। সমাজ স্বীকৃত আদব - কায়দা গড়ে তোলা , অন্যদের অধিকার ও সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে সচেতন ও সহানুভূতিশীল করে তোলা - ইত্যাদি প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য। 

৩. প্রক্ষোভমূলক বিকাশ :- প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে শিশুদের প্রক্ষোভিক বিকাশের প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়া হয়। শিশুদের নিজেদের আবেগ ও অনুভূতি সম্পর্কে বুঝতে , সেগুলিকে প্রকাশ ও নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করা হয়। শিশুদের মধ্যেকার প্রক্ষোভিক বৈশিষ্টগুলিকে সুনিয়ন্ত্রিত উপায়ে নির্দেশনা ও পরামর্শদানের মাধ্যমে উপযুক্ত পথে পরিচালিত করা হয়। 

৪. কৃষ্টিমূলক বিকাশ :- প্রতিটি শিশুর মধ্যে নান্দনিক বোধ বর্তমান। প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে শিশুদের সেই নান্দনিক বোধকে বিকশিত ও উৎসাহিত করার চেষ্টা করা হয়। বিভিন্ন ধরণের হাতের কাজ , খেলাধুলা , বাগান - পরিচর্যা , গান ও কবিতা আবৃত্তি , নাচ - ইত্যাদি কার্যাবলী শিশুর কৃষ্টিমূলক বিকাশে সহায়ক হয়ে ওঠে। 

৫. পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা গঠন :- বর্তমানে পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়গুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার প্রথম স্তর থেকে পরিবেশের পাঠ শিশুকে পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠতে সাহায্য করে। প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষাস্তরে পরিবেশের সাধারণ পাঠ , পারিপার্শ্বিক পরিবেশের পরিচিতি , পরিবেশের উপাদান গুলির গুরুত্ব - এইসকল বিষয়ে শিশুদের মধ্যে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা হয়। 


৬. মানসিক বিকাশ :- প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষাস্তরে শিশুদের মানসিক বিকাশের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়। পঠন - পাঠন ও বিভিন্ন কার্যে অংশগ্রহণ , প্রক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ , সৃজনশীলতার বিকাশ - ইত্যাদি যথার্থভাবে ঘটছে কি'না - সেবিষয়ে বিশেষ দৃষ্টি রাখা হয়। এজন্য বিভিন্ন ধরণের হাতের কাজ , খেলাধুলা , গান ও কবিতা আবৃত্তি , গল্প শোনা - ইত্যাদি কার্যাবলী শিশুদের মানসিক বিকাশে সহায়ক হয়ে ওঠে। 

৭. ভাষাগত বিকাশ :- প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষা স্তরেই শিশু প্রথম ভাষার সঙ্গে পরিচিত হয়। এই স্তরে মূলতঃ মাতৃভাষার উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়। অক্ষরজ্ঞান , শব্দের সঙ্গে পরিচিত হওয়া ও শব্দ গঠন করতে শেখা , শব্দ ভান্ডার বৃদ্ধি , শব্দের সঠিক উচ্চারণ ক্ষমতা - ইত্যাদি ভাষাগত দক্ষতা বৃদ্ধি ঘটানোর চেষ্টা করা হয়। প্রাক - প্রাথমিক স্তরে ভাষাগত দক্ষতার বিকাশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কেননা , ভাষাগত বিকাশ যথাযথ না হলে শিক্ষার পরবর্তী স্তরে সমস্যা দেখা দেবে। 

৮. আগ্রহ ও কৌতুহলের বিকাশ :- প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে শিশুরা বিভিন্ন বিষয়ে কৌতূহলী হয়ে থাকে। তারা বিভিন্ন প্রশ্নের মাধ্যমে সেই কৌতূহলকে প্রকাশ করে। বিদ্যালয়ের শিক্ষক - শিক্ষিকাগন তাদের প্রশ্নের যথাযথ উত্তর প্রদানের মাধ্যমে তাদের কৌতূহলের নিরসন করে থাকেন। একটি বিষয়ে কৌতূহল নিরসনের পর শিশুরা অপর একটি বিষয়ে কৌতূহলী হয়ে পড়ে। 

৯. অঙ্গ সঞ্চালনের দক্ষতার বিকাশ :- প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে শিশুর যথার্থ অঙ্গ সঞ্চালন ক্ষমতা বৃদ্ধি করা একটি অন্যতম উদ্দেশ্য। নির্দিষ্ট কার্যে নির্দিষ্ট অঙ্গ প্রয়োগ এবং তার যথাযথ সঞ্চালন , পেশীসমূহের যথার্থ সঞ্চালন দক্ষতার বৃদ্ধি - ইত্যাদি হল প্রাক - প্রাথমিক শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য।   


You May Also Like

0 comments