শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে শিক্ষাগত নির্দেশনার কার্যাবলীগুলি আলোচনা কর।

by - August 02, 2022

শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে শিক্ষাগত নির্দেশনার কার্যাবলীগুলি আলোচনা কর।  

শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে শিক্ষাগত নির্দেশনার কার্যাবলী। 



শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে শিক্ষাগত নির্দেশনার কার্যাবলী। 

 
শিক্ষাগত নির্দেশনা শিক্ষার প্রতিটি স্তরে শিক্ষার্থীদের চাহিদা , যোগ্যতা ও সামর্থ্যের কথা মাথায় রেখে নির্দেশনা প্রদান করে। সাধারণতঃ শিক্ষার স্তরগুলিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায় - প্রাথমিক স্তর , মাধ্যমিক স্তর ও উচ্চমাধ্যমিক স্তর। শিক্ষাগত নির্দেশনা শিক্ষার প্রতিটি স্তরে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা প্রদান করে শিক্ষার মূল লক্ষ্যকে অর্জন করতে সহায়তা করে।  শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে শিক্ষানির্দেশনার কাজগুলি হল - 


(A) প্রাথমিক স্তরে শিক্ষাগত নির্দেশনার কার্যাবলী :- 


প্রাথমিক শিক্ষাস্তরটি প্রথম শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণী এবং ৬+ বছর বয়স থেকে ১৩+ বছর বয়স পর্যন্ত ধরা হয়। এর মধ্যে আবার প্রথম থেকে চতুর্থ বা পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত নিম্নপ্রাথমিক স্তর এবং পঞ্চম বা ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত উচ্চ প্রাথমিক স্তর। সমগ্র প্রাথমিক স্তরে শিক্ষাগত নির্দেশনার কার্যাবলীগুলি হল - 

(i) প্রতিটি শিক্ষার্থীর সঠিক শিক্ষার সূচনা করা। 
(ii) শিক্ষার প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহের বিকাশ ঘটানো। 
(iii) প্রতিটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রেষণামূলক বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় কর্মসূচি পরিচালনা করা। 
(iv) প্রাথমিক স্তরের পাঠক্রমের সঙ্গে শিক্ষার্থীকে সার্থকভাবে পরিচয় ঘটানো। 
(v) প্রাথমিক শিক্ষাকে সফল করে তুলতে বিভিন্ন শিক্ষা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এই শিক্ষা পরিকল্পনার সঙ্গে শিক্ষার্থীর পরিচিতি ঘটানো ও তাতে সার্থকভাবে অংশগ্রহণের জন্য উৎসাহিত করা। 
(vi) শিক্ষা প্রক্রিয়া চলাকালীন শিক্ষার্থীরা যে সকল সমস্যার সম্মুখীন হয় - সেই সমস্যাগুলিকে চিহ্নিত করে তা সমাধান করা। 
(vii) দুর্বল ও পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করে তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। 
(viii) শিক্ষার্থীর প্রক্ষোভমূলক আচরণের যথাযথ পরিচালনা করে প্রক্ষোভগুলিকে ইতিবাচক দিকে নিয়ে যাওয়া ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রক্ষোভমূলক সমস্যাগুলির সমাধান করা।  
(ix) শিক্ষার প্রতিটি বিষয়ের সঙ্গে শিক্ষার্থীর অভিযোজনে সহায়তা করা। 
(x) বিদ্যালয় ছুট বা ড্রপ - আউট সমস্যার কারণগুলি চিহ্নিত করে তা সমাধান করা। 
(xi) শিক্ষার পরবর্তী স্তরের জন্য শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত করে তোলা। 
(xii) উপযুক্ত সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী পরিচালনার মাধ্যমে শিক্ষার উদ্দেশ্যকে সম্পূর্ণতা প্রদান করা। 


(B) মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষাগত নির্দেশনার কার্যাবলী :- 


নবম ও দশম শ্রেণীকে মাধ্যমিক শিক্ষাস্তর বলা হয়। প্রতিটি শিক্ষার্থীর জীবনে এই শিক্ষাস্তর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণতঃ এই শিক্ষাস্তরের মধ্যেই শিক্ষার্থীদের বয়ঃসন্ধি ঘটে যার ফলে শারীরিক ও মানসিক ক্ষেত্রে বিপুল পরিবর্তন দেখা দেয় এবং অন্যদিকে ভবিষ্যৎ জীবন ও বৃত্তিমূলক চাহিদা এই স্তর থেকেই পূর্ণমাত্রায় বিকশিত হয়। মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষাগত নির্দেশনার কার্যাবলীগুলি হল - 

(i) মাধ্যমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের অবগত করে তোলা। 
(ii) শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে সেগুলিকে বিশ্লেষণ করা এবং ভবিষ্যতের প্রয়োজনের জন্য সেগুলিকে সংরক্ষণ করা। 
(iii) বৃত্তিমূলক বিষয়গুলিকে শিক্ষার্থীর সামনে তুলে ধরা এবং শিক্ষা ও বৃত্তির সম্পর্ক বিষয়ে শিক্ষার্থীর জ্ঞানের বিকাশ ঘটানো। 
(iv) সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীকে যথার্থভাবে পরিচালনা করা। উপযুক্ত সামাজিকীকরণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে ভবিষ্যতের আদর্শ নাগরিক হিসাবে গড়ে তোলা। 
(v) শিক্ষার্থীদের আগ্রহ , সামর্থ্য ও যোগ্যতা অনুযায়ী পাঠক্রম চয়ন করতে সহায়তা করা। উপযুক্ত পাঠক্রম শিক্ষার্থীর প্রেষণা অনুযায়ী বিকাশে সহায়তা করে। 
(vi) বিভিন্ন পাঠক্রম এবং তার সঙ্গে বৃত্তির সম্পর্কটি শিক্ষার্থীর সামনে তুলে ধরে তার অভিযোজন ঘটানো। 
(vii) দুর্বল ও পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থিদের দুর্বলতার দিকগুলি চিহ্নিত করা এবং তাদের জন্য বিশেষ বা বিকল্প শিক্ষা পরিকল্পনা গ্রহণ করা। 
(viii) শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রক্ষোভমূলক আচরণকে উপযুক্ত পথে পরিচালনা করা। 
(ix) শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রেষণামূলক আচরণের বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা গ্রহণ করা। 
(x) বয়ঃসন্ধির বিভিন্ন সমস্যাগুলি সম্পর্কে এবং তাদের সমাধানসূত্রগুলি শিক্ষার্থীর সামনে তুলে ধরে তাকে যথার্থ আচরণের দিকে ধাবিত করা। প্রয়োজনে যৌন শিক্ষার ব্যবস্থা করা। 
(xi) শিক্ষার্থীরা যাতে ভবিষ্যৎ জীবনে উপযুক্ত বৃত্তির যোগ্যতা অর্জন করতে পারে - সে বিষয়ে উপযুক্ত পরিকল্পনা গ্রহণ করা। এছাড়াও বৃত্তিমূলক জগতের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সাধারণ পরিচিতি ঘটানো। 
(xii) শিক্ষার্থীদের সামনে উচ্চ শিক্ষার বিভিন্ন দিক ও সুযোগগুলি তুলে ধরা - যাতে শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা সম্পর্কে তথ্যসমৃদ্ধ হতে পারে। 

(C) উচ্চমাধ্যমিক স্তরে শিক্ষাগত নির্দেশনার কার্যাবলী :- 


একাদশ ও দ্বাদশ - এই দুটি শ্রেণীকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর বলা হয়। এই স্তর ভবিষ্যত জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই স্তর থেকেই শিক্ষার পাঠক্রমের বিশেষীকরণ শুরু হয়। তাই এই স্তরে উপযুক্ত পাঠক্রম চয়ন করা ভবিষ্যত জীবনে সফলতার জন্য অপরিহার্য। উচ্চমাধ্যমিক স্তরে শিক্ষা নির্দেশনার কার্যাবলীগুলি হল - 

(i) পাঠক্রমের বিভাগীয়করণের বিষয়টি শিক্ষার্থীর সামনে স্পষ্ট করে তোলা। এই বিষয়ে কোনোরূপ অস্পষ্টতা শিক্ষার্থীর জীবনে গভীর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই এক্ষেত্রে শিক্ষা নির্দেশনাকে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। 
(ii) শিক্ষার্থীকে পাঠক্রম নির্বাচনে সহায়তা করা। উপযুক্ত পাঠক্রম শিক্ষার্থীর জীবনকে পরিপূর্ণ করে তুলতে পারে ও শিক্ষার উদ্দেশ্য সার্বিকভাবে পূরণ করতে পারে। তাই শিক্ষা নির্দেশনা বিভিন্ন ধরণের পাঠক্রম সম্পর্কে তথ্য প্রদান করে পাঠক্রম চয়নের কাজে শিক্ষার্থীকে সহায়তা করে। 
(iii) বৃত্তিমূলক শিক্ষার বিভিন্ন দিকগুলি শিক্ষার্থীর সামনে উন্মোচন করা। বিভিন্ন কোর্স , প্রতিষ্ঠান , সুযোগ - সুবিধা - ইত্যাদি সম্পর্কে তথ্য প্রদান করা শিক্ষা নির্দেশনার অন্যতম কাজ। 
(iv) বৃত্তিগত ক্ষেত্রে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প ও সুযোগ সুবিধাগুলি শিক্ষার্থীর সামনে তুলে ধরা। 
(v) উচ্চশিক্ষা সম্পর্কে ধারণা প্রদান করা। উচ্চ শিক্ষার বিভিন্ন কোর্স , প্রতিষ্ঠান - ইত্যাদি সম্পর্কে শিক্ষার্থীকে অবগত করে তোলা। 
(vi) বিভিন্ন বৃত্তিমূলক ও পেশাদারি কোর্স - যেমন - ডাক্তারি , ইঞ্জিনিয়ারিং , ITI , IIT , পলিটেকনিক , সাংবাদিকতা , শিক্ষকতা - ইত্যাদি সম্পর্কে শিক্ষার্থীকে অবগত করে তোলা। 
(vii) উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী যাতে সঠিক অভিযোজন করতে পারে সেজন্য নির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করা। 
(viii) বহু শিক্ষার্থী বিভিন্ন কারণে প্রথাগত উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়। সেজন্য দূরশিক্ষা , মুক্তশিক্ষা - ইত্যাদি সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের তথ্য প্রদান করা। 
(ix) দুর্বল ও পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করা।   
(x) শিক্ষার্থীকে তার দুর্বলতাগুলি সম্পর্কে অবহিত করে সেই দুর্বলতাগুলি কাটিয়ে ওঠার জন্য উপযুক্ত পথনির্দেশ করা। 
(xi) শিক্ষার্থীকে ভবিষ্যত জীবনের জন্য উপযুক্ত করে গড়ে তোলা। এর মূলত দুইটি দিক রয়েছে - বৃত্তিগত ক্ষেত্র ও উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্র। উভয় ক্ষেত্রেই শিক্ষার্থীর আদর্শ অভিযোজন ঘটানো হল শিক্ষা নির্দেশনার প্রধান কাজ। 


You May Also Like

0 comments