মূল্যায়নের প্রকৃতি ও পরিধি। Nature and Scope of Evaluation.

by - July 25, 2022

মূল্যায়নের প্রকৃতি ও পরিধি। 

মূল্যায়নের প্রকৃতি ও পরিধি আলোচনা কর। 

Nature and Scope of Evaluation. (In Bengali)   



মূল্যায়নের প্রকৃতি ও পরিধি। 

মূল্যায়ন শব্দটির সাধারণ অর্থ হল মূল্য আরোপ করা। মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর গুণগত ও পরিমাণগত বিভিন্ন বৈশিষ্টের পরিমাপ করা যায়। শিক্ষা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর জীবনের বিভিন্ন দিকের পরিবর্তনের ফলে তার জীবনে যে নানাবিধ পরিবর্তন সাধিত হয় - তার সামগ্রিক পরিমাপের প্রক্রিয়া হল মূল্যায়ন। যেহেতু মূল্যায়ন শিক্ষার্থীর সামগ্রিক বৈশিষ্টের পরিমাপ করে তাই মূল্যায়নের পরিধি অত্যন্ত ব্যাপক। মূল্যায়ন সম্পর্কে বলা যেতে পারে - Evaluation is mental assessment with respect to some standard. বর্তমানে মূল্যায়নের পরিধি অত্যন্ত ব্যাপক এবং মূল্যায়ন শুধুমাত্র শিক্ষার্থীর বিকাশ বিচার না করে সমগ্র শিক্ষা পদ্ধতির প্রতিটি উপাদানের পরিমাপ ও বিশ্লেষণ করে থাকে। তাই মনোবিদ ওয়েসলি বলেছেন - Evaluation is the total and final estimate.   


মূল্যায়নের প্রকৃতি :- 

(i) মূল্যায়ন শুধুমাত্র পরিমাণগত পরিমাপ করে না ; তার সঙ্গে সঙ্গে গুণগত বিষয়গুলিরও পরিমাপ করে। 
(ii) মূল্যায়ন একটি ধারাবাহিক ও নিরবচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া। শিক্ষার্থীর জীবনের বিভিন্ন পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মূল্যায়ন প্রক্রিয়াও আবর্তিত হয়। 
(iii) মূল্যায়ন হল বিজ্ঞানসম্মত ও বিধিবদ্ধ পদ্ধতি। নির্দিষ্ট ও সুসংবদ্ধ পদ্ধতির মাধ্যমে মূল্যায়ন প্রক্রিয়া পরিচালনা করা হয়। 
(iv) মূল্যায়ন একটি জটিল প্রক্রিয়া। যেহেতু শিক্ষার্থীর জীবনের সর্বাঙ্গীন বিকাশের পরিমাপের জন্য মূল্যায়ন প্রক্রিয়া ব্যবহৃত হয় , তাই এটি জটিল। 
(v) মূল্যায়ন হল পরিবর্তনশীল প্রক্রিয়া। শিক্ষার্থীর জীবনের ভিন্ন ভিন্ন পরিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মূল্যায়ন প্রক্রিয়া পরিবর্তিত হয়। 
(vi) মূল্যায়নের উদ্দেশ্য ব্যাপক। কেননা মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিক্ষা প্রক্রিয়ার সামগ্রিক দিকের পরিমাপ ও বিশ্লেষণ করা হয়। 
(vii) মূল্যায়ন একটি ত্রিমুখী প্রক্রিয়া। এই তিনটি প্রধান দিক হল - শিক্ষার উদ্দেশ্য , শিক্ষামূলক অভিজ্ঞতা ও পরিমাপ কৌশল। 
(viii) প্রতিটি শিক্ষার্থীর চাহিদা ভিন্ন ভিন্ন। এই ভিন্ন ভিন্ন চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে মূল্যায়ন প্রক্রিয়া পরিচালিত হয়। 
(ix) মূল্যায়ন প্রক্রিয়া শিক্ষার্থীর শুধুমাত্র বিষয়কেন্দ্রিক বিকাশের দিকে গুরুত্ব না দিয়ে তার সামগ্রিক বিকাশ পরিমাপের উপর গুরুত্ব আরোপ করে। 
(x) বিভিন্ন স্তর , বিভিন্ন ধরণের পরীক্ষা ও অভীক্ষা - ইত্যাদি বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে মূল্যায়ন প্রক্রিয়া পরিচালিত হয়। 


মূল্যায়নের পরিধি :- 


১. শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যপূরণ :- মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিক্ষার মূল লক্ষ্যগুলি বাস্তবায়নের দিকে নজর দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীর সামগ্রিক বিকাশের পরিমাপ করে শিক্ষা প্রক্রিয়ার বিকাশকে ত্বরান্বিত করে। 

২. শিক্ষন শিখনে ব্যবহৃত পদ্ধতি , কৌশল ও উপকরণের যথার্থতা সম্পর্কে ধারণা প্রদান :- মূল্যায়ন প্রক্রিয়া শিক্ষন - শিখনে ব্যবহৃত পদ্ধতি , কৌশল ও উপকরণের যথার্থতা - ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা প্রদান করে। এর ফলে শিক্ষন শিখনের ভ্রান্তিগুলি দূর করে আদর্শ কৌশল গ্রহণ করা সম্ভব হয়। 

৩. পাঠক্রম সংক্রান্ত বিষয় :- শিক্ষার সামগ্রিক লক্ষ্য পূরণ করতে পাঠক্রম সম্পর্কে ধারণা অর্জন করা আবশ্যিক। মূল্যায়ন প্রক্রিয়া পাঠক্রমের যথার্থতা , উপযোগিতা ও আদর্শ পাঠক্রম সম্পর্কে আলোচনা করে। 

৪. শিক্ষার পরিবেশ সংক্রান্ত আলোচনা :- মূল্যায়ন আদর্শ শিক্ষার পরিবেশ সম্পর্কেও আলোচনা করে। আদর্শ শিক্ষার পরিবেশ গঠনের মাধ্যমে শিক্ষা প্রক্রিয়া যথার্থভাবে পরিচালনা করা সম্ভব। 

৫. শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীন বিকাশ :- মূল্যায়ন শুধুমাত্র শিক্ষার্থীর বিষয়কেন্দ্রিক বিকাশের কথা আলোচনা করে না ; এর পরিবর্তে মূল্যায়ন শিক্ষার্থীর জীবনের সর্বাঙ্গীন বিকাশ ও তার বৈশিষ্টগুলির পরিমাপ করে। 

৬. নির্দেশনা সংক্রান্ত আলোচনা :- মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতা , ক্ষমতা ও আগ্রহের পরিমাপ করা যায়। ফলে শিক্ষকের পক্ষে নির্দেশনা পরিচালনা সহজ হয়ে পড়ে। 

৭. শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ জীবন সংক্রান্ত আলোচনা :- মূল্যায়ন প্রক্রিয়া শিক্ষার্থীর আগ্রহ ও দক্ষতার পরিমাপ করে তার ভবিষ্যৎ পথনির্দেশ করে। ফলে শিক্ষার্থী উপযুক্ত নির্দেশনার মাধ্যমে জীবনের লক্ষ্যে উপনীত হতে পারে। 

৮. শিক্ষার্থীর বৃত্তিগত ও পেশাগত নির্দেশনা :- শিক্ষার্থীর বৃত্তিগত ও পেশাগত নির্দেশনা প্রদান করা মূল্যায়নের একটি প্রধান কাজ। বিভিন্ন অভীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন প্রক্রিয়া খুব সহজেই ব্যক্তির পেশাগত আগ্রহের দিকটির প্রতি নির্দেশ করতে পারে। 


৯. শিক্ষক সংক্রান্ত আলোচনা :- মূল্যায়নের সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করে শিক্ষকের দক্ষতা ও যোগ্যতার উপর। তাই মূল্যায়ন প্রক্রিয়া আদর্শ শিক্ষকের শিক্ষাগত ও ব্যক্তিগত দক্ষতা ও যোগ্যতা সম্পর্কে আলোচনা করে। 

১০. শিক্ষা ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত আলোচনা :- মূল্যায়ন প্রক্রিয়া শিক্ষা ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করে। শিক্ষা ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন উপাদান , শিক্ষন - শিখনে তাদের ভূমিকা , যথার্থ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি - ইত্যাদি সকল বিষয়েই মূল্যায়ন আলোচনা করে। 

১১. পরিমাপ কৌশল সংক্রান্ত আলোচনা :- শিক্ষার্থীর যথার্থ মূল্যায়ন করতে বিভিন্ন ধরণের পরিমাপ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এই সকল পরিমাপ পদ্ধতি , তাদের আদর্শ কৌশলগত বিষয় , উপযুক্ত পরিমাপ পদ্ধতি - ইত্যাদি বিষয়ে মূল্যায়ন আলোচনা করে। 

১২. গৃহীত তথ্যের তাৎপর্য বিশ্লেষণ :- বিভিন্ন পদ্ধতিতে মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যে সকল তথ্য সংগ্রহ করা হয় - মূল্যায়ন সেই সকল তথ্যগুলিকে বিচার বিশ্লেষণ করে উপযুক্ত পরিমাপের কাজে ব্যবহার করে। 

১৩. শিক্ষর্থীর দৈহিক , মানসিক ও সামাজিক অবস্থান নির্ণয় :- মূল্যায়ন শিক্ষার্থীর দৈহিক , মানসিক ও সামাজিক অবস্থান নির্ণয় করে তার সকল বৈশিষ্ট গুলির উপযুক্ত পরিমাপ করে এবং আদর্শ অভিযোজনে সাহায্য করে। 

১৪. শৃঙ্খলার আদর্শায়ন :- শিক্ষা ও শিক্ষন প্রক্রিয়া পরিচালনার ক্ষেত্রে শৃঙ্খলার উপযুক্ত মানদন্ড বিচার , তার প্রয়োগ পদ্ধতি - ইত্যাদি বিষয়ে মূল্যায়ন আলোচনা করে। 

১৫. মূল্যায়নের অন্তর্গত বিষয় :- মূল্যায়নের আলোচনার অন্তর্গত প্রধান বিষয়গুলি হল - শিক্ষার্থীর পারদর্শিতা , শিক্ষণের মূল্যায়ন , পাঠক্রমের মূল্যায়ন ও শিক্ষালয়ের মূল্যায়ন।


You May Also Like

0 comments