নির্দেশনার প্রধান প্রধান নীতিগুলি সম্পর্কে আলোচনা কর।

by - July 19, 2022

নির্দেশনার প্রধান প্রধান নীতিগুলি সম্পর্কে আলোচনা কর।

নির্দেশনার মৌলিক নীতিসমূহ।  

নির্দেশনায় অনুসৃত নীতিগুলি কী কী ? 

Principles of Guidance. (In Bengali).  



নির্দেশনার প্রধান প্রধান নীতিসমূহ :- 


ব্যক্তিজীবনে প্রতিটি বয়স স্তরে নির্দেশনার প্রয়োজন। নির্দেশনার মাধ্যমে ব্যক্তি সমস্যার স্বরূপ উপলব্ধি করতে ও সমস্যার সমাধান করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। বিভিন্ন ধরণের নির্দেশনা কয়েকটি মৌলিক নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। নির্দেশনার প্রধান ও মৌলিক নীতিগুলি হল - 

১. নিরপেক্ষতার নীতি :- সমস্যার প্রতিবিধান ও প্রতিরোধ করতে নির্দেশনা প্রক্রিয়া পরিচালিত হয়। এক্ষেত্রে নির্দেশনা প্রদানে নিযুক্ত ব্যক্তি তাঁর ব্যক্তিগত চিন্তা - ভাবনা , আদর্শ - ইত্যাদির পরিবর্তে ব্যক্তির সমস্যা ও তার সমাধানের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ নির্দেশনা প্রদান করবেন - এমনটা হওয়াই কাম্য। 

২. সামগ্রিকতার নীতি :- নির্দেশনা প্রক্রিয়ায় ব্যক্তির আংশিক সত্তা ও সমস্যার পরিবর্তে সামগ্রিক সত্তা ও সমস্যার উপর জোর দেওয়া হয়। সামগ্রিকভাবে ব্যক্তিকে এবং তার সমস্যাকে উপলব্ধি করে নির্দেশনা প্রদান করা হয়। 

৩. ব্যক্তির চাহিদা পরিতৃপ্তির নীতি :- নির্দেশনা প্রক্রিয়া সামগ্রিকভাবে পরিচালিত হয় ব্যক্তির চাহিদাকে কেন্দ্র করে। নির্দেশনা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যক্তির সমস্যা সমাধান বা তার ভিন্ন ভিন্ন চাহিদার পরিতৃপ্তিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। 

৪. পার্থক্যের নীতি :- মানুষের বয়সসীমার বিভিন্ন স্তরে সমস্যা ও চাহিদার ক্ষেত্রে পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। ব্যক্তির শৈশব , কৈশোর , যৌবন ও বার্ধক্য - প্রতিটি স্তরে সমস্যা ও চাহিদার পার্থক্য রয়েছে। নির্দেশনা প্রক্রিয়ায় ব্যক্তির এই বিভিন্ন স্তরের চাহিদার পার্থক্যগুলিকে গুরুত্ব সহকারে বিচার করা হয়। 


৫. স্বাধীনতার নীতি :- ব্যক্তি যদি তার সমস্যাকে যথার্থভাবে উপস্থাপন না করতে পারে - তাহলে নির্দেশনা প্রক্রিয়ার মৌলিক উদ্দেশ্য ব্যর্থ হবে। তাই ব্যক্তিকে তার সমস্যা নির্দ্বিধায় উপস্থাপন করার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ রচনা করা হয় এবং ব্যক্তির সঙ্গে আলাপ আলোচনার ক্ষেত্রে স্বাধীনতার নীতি গৃহীত হয়। 

৬. অপসংগতি দূরীকরের নীতি :- সামাজিক , অর্থনৈতিক , রাজনৈতিক - ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে ব্যক্তি বিভিন্নরকম অপসঙ্গতিমূলক আচরণে অভ্যস্থ হয়ে পড়েন। নির্দেশনার প্রধান নীতি হল ব্যক্তির মধ্যে থাকা সেই অপসঙ্গতিমূলক আচরণগুলিকে দূর করা। 

৭. ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের নীতি :- প্রতিটি ব্যক্তির সমস্যা ও চাহিদা ভিন্ন ভিন্ন। নির্দেশনা প্রক্রিয়া পরিচালনার সময় ব্যক্তির চাহিদা , ক্ষমতা , প্রবণতা , আগ্রহ - ইত্যাদি বিষয়গুলির উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। 

৮. নিরবচ্ছিন্নতার নীতি :- নির্দেশনা একটি নিরবচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া। ব্যক্তি জীবনের প্রতিটি স্তরে নির্দেশনা প্রক্রিয়া প্রয়োজন হয়। তাই ব্যক্তির জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত নির্দেশনা প্রক্রিয়া পরিচালনা করা হয়। 

৯. পারস্পরিক ক্রিয়া - প্রতিক্রিয়ার নীতি :- নির্দেশনা প্রক্রিয়া কখনই একমুখী নয়। নির্দেশনা পরিচালনার সময় ব্যক্তির ইচ্ছা - অনিচ্ছা , আগ্রহ , সামর্থ - ইত্যাদি বিষয়গুলির উপর পরিচালক গুরুত্ব আরোপ করেন। তারপর পারস্পরিক আলোচনা ও পরামর্শের মাধ্যমেই নির্দেশনা প্রক্রিয়া পরিচালিত হয়। 

১০. সর্বজনীনতার নীতি :- শুধুমাত্র সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তির প্রতি নির্দেশনা পরিচালিত হয়না ; নির্দেশনার প্রধান নীতি হল প্রতিকার ও প্রতিরোধ , তাই সকল ব্যক্তির উপর নির্দেশনা পরিচালনার নীতি গৃহীত হয় যা সকলের জীবনে এক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। 


১১. বিদ্যালয় ও পরিবার কেন্দ্রিক নীতি :- নির্দেশনা প্রক্রিয়ায় শিক্ষক ও অভিভাবকগণের বিশেষ ভূমিকা থাকে। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ও সমস্যার সমাধান ও ব্যক্তিত্ব গঠনের ক্ষেত্রে উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। কোনো বিশেষ সমস্যার সমাধানে যদি শিক্ষক ও অভিভাবক ব্যর্থ হন - তখন সেই সমস্যাটিকে উপযুক্ত দক্ষ ব্যক্তির দৃষ্টিগোচর করা হয়। 

১২. নমনীয়তার নীতি :- ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের প্রতি নির্দেশনা প্রক্রিয়া পরিচালনার সময় প্রয়োজন অনুসারে নমনীয়তার নীতি গৃহীত হয়। 

১৩. মর্যাদার নীতি :- নির্দেশনা পরিচালনার সময় পরিচালক ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বা তার সমস্যাকে যথেষ্ট মর্যাদার সঙ্গে গ্রহণ করেন। এর ফলে ব্যক্তি নির্দেশনাগুলির প্রতিও শ্রদ্ধাশীল হয়ে ওঠে। 

১৪. সহযোগিতার নীতি :- নির্দেশনা প্রক্রিয়ায় নির্দেশক নির্দেশনা গ্রহণকারীর সহায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। ব্যক্তির সমস্যাকে উপলব্ধি করে তার জন্য উপযুক্ত সমাধানসূত্রের নির্দেশ প্রদান করতে পারেন। এইভাবে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে নির্দেশনা পরিচালিত হয়।       



You May Also Like

0 comments